নারী পাচারকারী চক্র এবং আমার অভিজ্ঞতা

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৯/২০১১ - ৭:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২৫ আগস্ট, ২০১১

সন্ধ্যা হয়েছে, মাঠ থেকে খেলে মাত্রই হোস্টেলের রুমে ঢুকেছি দেখলাম মুঠোফোন বাজছে, কিছুটা বিরক্তি নিয়েই অপরিচিত নাম্বারটা ধরলাম, ওপাশ থেকে লোকাল ইন্টেলিজেন্স এর পরিচিত এক অফিসারের গলা শোনা গেলো, কেমন আছি, কিরকম চলছে এই বৃত্তান্তের ধকল কাটিয়ে চিন্তা করছি কখন আসল কথায় আসবে, তখনি বলে উঠলেন, আমাদের এখানে তিনজন ইলিগ্যাল ইমিগ্রান্ট ধরা পড়েছে, তারা নাকি বাংলাদেশ থেকে এসেছে, তার উপরে তিনজনই নারী, তাদের ভাষা এখানে কেও বুঝতে পারছেনা, তাই পুলিশ কাজ এগোতে পারছেনা, লোকাল ইন্টেলিজেন্স এর পরিচিত হলাম আমি, তাই আমাকে বললেন সাথে যেতে, ভাষা বুঝে তাদের তদন্তে সাহায্য করতে হবে| আমি ভাবলাম ভাষা বোঝা না হয় হলো, কিন্তু দেশের বাইরে এসে পুলিশের ঝামেলায় না জড়ালেই হলো| সাত পাঁচ ভেবে বলে দিলাম পরের দিন সকালে চলে যাবো অফিসে| রাতে জিনিসটা নিয়ে কয়েকবার ভেবেও এটা মাথায় এলোনা, দেশ থেকে এত দূরে ভারতের উত্তরপ্রদেশে মেয়েগুলো এলো কি করে???

২৬ আগস্ট, ২০১১

পরের দিন সকালে গিয়ে কাজ হলোনা, আবার দুপুরে যেতে হলো, বসে রইলাম তার অফিসে কতক্ষণ, এরপর বললেন যেতে হবে প্রধান থানাতে, বাইকে চেঁপে চললাম তার সাথে, ঈদ এর মাত্র কদিন বাকি, বাজারে প্রচন্ড ভিড়, লোকজন কেনাকাটা করছে, এলাহাবাদের চক বাজারের ভেতরে কোতয়ালি থানা, সেদিন ছিলো শুক্রবার, ঈদ উপলক্ষে এরমধ্যেই অজস্র পুলিশ মোতায়েন করা, গিয়ে ঢুকলাম তদন্তকারী অফিসারের রুমে, দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে ভালই দৌড়ের উপরে আছেন ভদ্রলোক, আমাদের নিয়ে গেলেন পাশের বিল্ডিঙ্গের ডিআইজি এর দপ্তরে, তখনি লক্ষ্য করলাম অল্প বয়সী তিনটা মেয়ে বসে আছে, সাথে মহিলা পুলিশ, ডিআইজি তখন বাইরের ডিউটিতে, আমাদের বলা হলো বসতে, প্রচন্ড গরমে বাইরের ঘরে বসে আছি, মেজাজ খারাপ হতে লাগলো, সাহায্য করতে এসে কি বিশ্রী অবস্থা, এরই মধ্যে অফিসার কয়েকবার এসে অনুরোধ করে গেলেন না যাওয়ার জন্য, তারপর ঘন্টা তিনেক পরে একই সাথে ডিআইজি, মেজিস্ট্রেট, এসপি আরও বড়কর্তারা এসে হাজির, ডাক পড়লো আমার ভিতরে, মেজিস্ট্রেট তদন্তকারী কর্মকর্তা আর একজন লেখককে নিয়ে বসলেন, আমাকে বললেন মেয়েদের একে একে সবাইকে নিজের নাম-ঠিকানা পরিচয় থেকে শুরু করে বিস্তারিত ঘটনা জিজ্ঞেস করতে, ভালো করে মেয়েগুলোকে লক্ষ্য করলাম, দেখেই বোঝা যাচ্ছে, খুবই কম বয়স, ততক্ষণে জেনে গেছি তিনজনকেই বাংলাদেশ থেকে এখানে এনে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল, চরম অত্যাচারের পর এরা কোনভাবে পুলিশের হাতে ধরা পরে নারী নিকেতন এ আসে|

তিনজনকেই একে একে জিজ্ঞেস করলাম সব কিছু, খুঁটিনাটি অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার পরে মোটামুটি বক্তব্য দাড়ালো একই রকম-(নাম-পরিচয় ও ঠিকানা প্রকাশ করছিনা)

"তিনজনই ঢাকার কোনো গার্মেন্টস বা স্পিনিং কারখানায় কাজ করতো, এদের সবাইকেই অল্প পরিচিত অন্য আরেকজন মেয়ে ভালো কাজ দাওয়ার নাম করে নিজের বাসায় নিয়ে যায়, তারপর খাবারের সাথে ওষুধ মিশিয়ে দাওয়া হয়, অজ্ঞান অথবা নেশা অবস্থায় তিনজনকেই বর্ডার পার করানো হয়, তারপর সেখান থেকে কোলকাতা, সেখানে একজন মহিলার বাসায় এদের রাখার পরে, সুবিধেমতো আবার ওষুধের প্রয়োগ করে ট্রেনে করে এদের নিয়ে আসা হয় এলাহাবাদে, এখানে একজন একজন করে তিনজনকেই বিভিন্নভাবে নিয়ে এসে বিক্রি করে দাওয়া হয় পতিতালয়ে, সেখানে একজন মহিলার অধীনে অনেকদিন ছিলো, জোর করে প্রতিদিন ১০-১২ এর অধিক মানুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে বাধ্য করা হত, সকাল ৮ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো এই অত্যাচার| আর কথা না শুনতে চাইলে মারধর তো আছেই| ২ জনের বয়স ১৮ এবং একজনের ১৭ বলে জানালো ওরা|"

কথাগুলো ওদের মুখ থেকে শুনে চলেছি, এদিকে একের পর এক কাগজে কলম চালাচ্ছি, জবানবন্ধি তৈরী করছি, কিন্তু একসময় সত্তি মনে হলো কেও যেনো কানে গরম শিশা ঢেলে দিচ্ছে, পুলিশের পুরো জেরাটা করতে হচ্ছে আমাকে, সাথে উঠে আসছে অত্যাচারের বর্ণনা, একসময় মনে হলো না এলেই হয়তো ভালো করতাম| ততক্ষণে বেশ কয়েকদফা জবানবন্ধি নেওয়া হয়ে গেছে, মেজিস্ট্রেট চলে গেলেন কাগজে সই করে, আমাকে বলে গেলেন শেষ পর্যন্ত বসে সব কাগজে সই করে, জবানবন্দি যাচাই করে সবার টিপসই নিয়ে, আবার জবানবন্দি গুলোকে হিন্দিতে রূপান্তর করে দিয়ে যেতে| এরই মধ্যে মহিলা পুলিশের থেকে জানতে পারলাম, অনেক সাহস করে এদের মধ্যে একজন, কারো মাধ্যমে ফোনে খবর দেয় থানাতে, তার খবরের ভিত্তিতেই পুলিশ হানা দেয়, উদ্ধার করে এই তিনজনকে| এদিকে কাজ চলছে, মাঝে মাঝে মেয়েগুলো দু-চারটা কথা আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, তাদের বার বার একই প্রশ্ন, ঈদ এর আগে বাড়ি যেতে পারবে তো?? আমি কি উত্তর দিবো বুঝতে পারলামনা, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন পাশে বসে থাকা এসপি, বললেন কি হয়েছে, প্রশ্ন শোনার পরে তিনিও চুপ করে রইলেন, তারপরে আমতা আমতা করে বললেন, কি আর বলা যাবে বলো, এই কেস তো আমাদের হাতের না, ইন্টারপোল তারপর দু দেশের এম্বাসীর হাতে চলে যাবে এরপরে| জেনেও মিথ্যে বললাম, বললাম ওদের হয়ে যাবে, ঈদের আগেই যাবে দেশে, চিন্তা করোনা| তখন বুঝলাম কখনো কখনো মিথ্যে বলাটা আসলেই কষ্টের কাজ| ততক্ষণে আমি চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে পালানোর, প্রায় ৬ ঘন্টা ধরে বসে আছি এখানে| তারপর ঘন্টা সাতেক পরে একগাদা কাগজে সই করে, সব কাজ শেষ করে বের হলাম| তার আগে ওখানে বসে বসে শুনেছি পালের গোদাদের ধরার জন্য ঐদিন রাতেই পুলিশের হানা দাওয়ার প্ল্যান| শুনে এলাম তিনজনকেই এখানের আইনি কাজ শেষ হলে দিল্লি পাঠানো হবে, তখন দুই দেশের মধ্যে আইনি কাজ চলবে হস্তান্তরের| অদ্ভুত একটা ঘোরের মধ্যে বের হয়ে এলাম| পিছনে রেখে এলাম কিছু উত্সুক চেহারা, আর দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে চলা তিনটি মানুষ|

ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে আটটা ছুই ছুই করছে, সারাদিনে পেটে সরকারী চা ছাড়া কিছুই পড়েনি, এর মধ্যে ফেরত এলাম লোকাল ইন্টেলিজেন্স এর অফিসে, কথা হচ্ছিলো কিছু অফিসারের সাথে, সেখান থেকে বের হয়ে এলো আরও কিছু তথ্য, ভারতীয় বর্ডার সংলগ্ন দেশ গুলো থেকে টাকার লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয় অনেক মেয়ে, এনে বিক্রি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন শহরে, বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়, ভালো চাকরি বা ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে, তারপর এনে বিক্রি করে দেওয়া হয় পতিতালয়ে| এছাড়াও বিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে মেয়ে শিশু জন্মের পরে হত্যা করা হয়, সেখানে মেয়ে সংখ্যায় এতই কম যে পুরুষদের বিয়ে হচ্ছেনা, তাই বাংলাদেশের বর্ডার সংলগ্ন জায়গাগুলো থেকে গরিব পরিবারের মেয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে মোটা টাকা দিয়ে, তাদের কে একই সাথে একাধিক পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো ৪/৫ জন পুরুষের সাথেও থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে, এরকম অনেক মেয়ে পালিয়ে আসতে যেয়ে খুন হয়ে যায়| এক অফিসার বললেন যারা পালাতে সক্ষম হয় তাদের ফেরত দিতে গেলে দেখা যায় তাদের পরিবারই খুশিনা, দারিদ্রের এমনি কষ্ট যে নিজের সন্তান ফিরে আসলেও টাকা আর পাবেনা এই দুঃখ থেকে যায়| সবার চোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে এই চক্র, তারপরও কোনো পদক্ষেপ নেই|

ইন্টেলিজেন্সের অফিস থেকে ফেরত আসছি আর মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, এতদিন পত্রিকার পাতায় কিংবা টিভিতে এরকম খবর অনেক দেখতাম, দেখতে দেখতে অভ্যেস হয়ে যাওয়ায় চোখ এড়িয়েও যেত, কিন্তু আজকের এই অভিজ্ঞতার পর পুরো সমাজ ব্যেবস্থাটাই একটু অন্যরকম লাগছে| নারী অপহরণ এবং নির্যাতনের এরকম ভয়াবহ রূপ সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা অনেকদিন দুঃস্বপ্নের ভেতরে তাড়া করে ফিরবে| দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হওয়া সত্তেও দেশের নারী পাচার রোধে কতটুকু অগ্রসর হয়েছে আইন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়|

মানুষ পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ শক্ত হাতে দমন করা প্রয়োজন| নারী পাচার ও নারী নির্যাতন রোধে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচার ও সমাজ সচেতনতা খুবই জরুরি| আমাদের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশগুলোতে দারিদ্রের কবলে আক্রান্ত পরিবারগুলো থেকে মেয়েদের পাচার হয়ে যাওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়, দেশের অজস্র সমস্যার সাথে এই বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখাটা একান্তই জরুরি| মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত রোধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ ও সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম গুলোতে নিয়মিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোর কার্যক্রম জরুরি| শুধু ভারতেই নয় কিছুদিন আগে চাকরির নামে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ গুলোতে যৌনদাসী হিসেবে পাচার হয়ে যাওয়া মেয়েদের কাহিনীও নজরে এসেছে| শুধু সরকার নয়, সভ্য সমাজের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই কর্তব্য নারী পাচার এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো|

"সেই তিনটি মেয়ে কোথায় ঈদ করলো কোনদিনও আর জানা হবেনা|"


মন্তব্য

guest_writer এর ছবি

আপনার এই লেখাটা বাংলাদেশের কোনো পত্রিকাতে দেয়া যায় কিনা একটু দেখুন, প্লিজ।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, পত্রিকায় লেখা দেয়ার ব্যাপারে খুব একটা ধারণা নেই, আর কত লেখাই তো ছাপা হচ্ছে তাতে খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছে কি??

সচলে কোনো পোস্টে মন্তব্য করার সময় যদি guest_writer একাউন্ট ব্যাবহার করেন তাহলে মন্তব্যের নিচে আপনার নাম এবং ইমেল ঠিকানা দিয়ে ইচ্ছা করলে আপনি পরিচয় দিতে পারেন| হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

guest_writer এর ছবি

খুব পরিবর্তন না হলেও হয়ত কোনোদিন কারো কানে যাবে, হয়ত কোনোদিন কেউ কিছু করবে। আপনিইত লিখেছেন, একদিন ভোর হবেই। আমিও বিশ্বাস করি, একদিন ভোর হবেই।

দুঃখিত, আমার নাম দেয়া হয়নি আগে।

পড়াচোর।

অরফিয়াস এর ছবি

আপনার মতই ভোর হবার প্রত্যাশায় আমিও রইলাম ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

ওই মেয়েগুলোর খবরাখবর আপনি যদি পুনর্বার নেন, তাহলে ভালো হয়। সচলায়তন কম্যুনিটিকে বলছি, ওদের ফেরত আনার ব্যাপারে কোন সম্মিলিত উদযোগ কি নেয়া যায়না? কি ধরণের আইনি ব্যাপার্স্যাপারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, তা অবশ্য জানা নেই।

অরফিয়াস এর ছবি

এসব ব্যাপারে খবর সংগ্রহ করাটা একটু ঝামেলার কারণ রাজ্যসরকারের কাছ থেকে যখন ব্যাপারটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চলে যায় তখন আসলে কেসটা আর এখানকার পুলিশের হাতে থাকেনা| আর শুধু তাই নই, মেয়েগুলোর ক্ষেত্রে অপহরণ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন সহ অনেকগুলো কেস একসাথে চলবে, ব্যাপারটায় আইনি প্যাচটা একটু গভীর, এটা বাংলাদেশের এম্বাসীকে সাহায্য করতে হবে, তারপর তাদের থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো নারী পুনর্বাসন সংস্থার সাহায্যের জন্য যেতে পারে| আর শুধু তিনটি মেয়ে নয়, অসংখ্য মেয়ের ক্ষেত্রেই ঘটনা গুলো চোখের আড়ালে ঘটে চলেছে|

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আইয়ান হারশী আলির একটা বই পড়েছিলাম। ওখানে অনুবাদক হিসেবে তার ভূমিকা বলা ছিলো। অনুবাদক হিসেবে নান বিপদ আপদের কথা জানতে পারতেন তিনি, কিন্তু কোনো সাহায্য করতে পারতেন না। দুঃখজনক।

অরফিয়াস এর ছবি

জীবনে প্রথমবার অনুবাদক হিসেবে কাজ করার ধাক্কাটা সামলাতে ভালই সময় লাগবে... মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ

সীমান্তে তো এত কড়াকড়ি, এদেরকে পাচার করতে পারে কী করে, বাঁহাতের লেনদেন ছাড়া?

অরফিয়াস এর ছবি

নারী পাচারকারী চক্রের ক্ষমতা সম্পর্কে সাধারণের ধারণা খুবই সীমিত, আমি ধারাবাহিক ভাবে কিছু লেখা দেয়ার চিন্তা করছি, সীমান্ত হোক আর যে পথেই হোক এদের ক্ষমতা প্রচন্ড, আর এদের সাথে হাত মিলিয়ে আছে অনেকেই, তাই শুধু বাঁহাতের লেনদেনই না এতে যথেষ্ট গভীর একটি চক্র কাজ করে চলেছে ..

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অপছন্দনীয় এর ছবি

মন খারাপ

অরফিয়াস এর ছবি

মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রুমঝুমা এর ছবি

নির্বাক!!!! জানি কিছুই করতে পারবনা এদের জন্য কোনদিন!!

অরফিয়াস এর ছবি

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা অসহায়, তবু নিজের সাধ্যের ভেতরে হয়তো চেষ্টা করা যায় ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

আশালতা এর ছবি

এইরকম লেখাগুলো পড়ে নিস্ফল আক্রোশে দাঁত কিড়মিড় করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনা। এত অসহায় লাগে। আমরা আমাদের সুবিধামত সমাজটাকে এরকম অনেক সিস্টেমে সাজিয়ে নিয়েছি। ওই লোকগুলো যারা পাচারের সাথে জড়িত তারা কিন্তু কোন ভিনগ্রহের প্রাণী নয়, আমাদেরই সমাজের মানুষ। আর যারা তাদের থেকে সুবিধা নিচ্ছে তারাও।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অরফিয়াস এর ছবি

সমাজটা খুবই ঠুনকো কিছু বন্ধনের উপর তৈরী, মানুষের ব্যাক্তিগত স্বার্থের উপর ভিত্তি করে তা ক্ষণে ক্ষণে বদলায়, নারী পাচার পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অপরাধ হলেও এটা নিয়ে দেশে প্রচারণা কতটুক?? নারীদের অবৈধ ভাবে ব্যাবহার করা থেকে শুরু করে সাধারণ জীবনে নারীদের হেনস্তা করা এই কাজগুলো যারাই করছে তারা আপনার আমার আশেপাশেই ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘুরে বেরাচ্ছে....

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খুবই দুঃখজনক। মন খারাপ

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অরফিয়াস এর ছবি

দুঃখজনক এবং সাথে সাথে চরম হতাশাজনক... মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

যুমার এর ছবি

'অজ্ঞান অথবা নেশার ঘোরে সীমান্ত পার করানো হয়'-বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না।
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ফালানীকে গুলি করে কাঁটাতারের সাথে ঝুলিয়ে রাখতে পারে আর তিন-তিনটি মেয়ে(আপনার-আমার জানার বাইরে সংখ্যাটি অনেক) সীমানা পেরিয়ে যায় ঘোরের মধ্যে!
বর্ডারে চেকিং সিস্টেমটা তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে শিথিলযোগ্য!

অরফিয়াস এর ছবি

এখানে প্রশ্নটা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নয়, প্রশ্নটা নারী পাচারকারী চক্রের, এদের ক্ষমতা আমাদের ধারণার বাইরে, এদের সাথে শুধু সীমান্তরক্ষী বাহিনীই না জড়িয়ে আছে অনেক উচ্চপদস্থ, তাই চেকিং পদ্ধতিটা এদের জন্য প্রযোজ্য নয়, আর এভাবেই কিন্তু আন্তর্জাতিক ভাবে নারী পাচারকারী চক্র কাজ করে চলেছে, আর আমি মেয়েগুলোর জবানবন্ধি তুলে ধরেছি, হয়তো এদের কাওকে ভালো কাজ দেবার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে, তবে লক্ষনীয় ছিলো যে তিন জনের জবানবন্ধিতেই একই ব্যাক্তির নাম বার বার এসেছে তার মানে একটি নির্দিষ্ট চক্র এই ঘটনার সাথে জড়িত, আর আমার অভিজ্ঞতা থেকে চেকিং সম্পর্কে এতটুকু বলতে পারি সীমান্তের কোনো কোনো জায়গা দিয়ে অনায়াসে হেটে পার হওয়া যায় যেখানে কোনো চেকিং নেই, আর কিছু কিছু জায়গায় মাত্র ২০০-৩০০ টাকা দিলেই পার হওয়া যায় নির্বিঘ্নে, সীমান্তের সম্পর্কে যেসব খবর গুলো আমাদের চোখে পরে তার বাইরেও অনেক খবর থেকে যায়, প্রতিদিন চলছে স্মাগলিং কিন্তু সে সম্পর্কিত কয়টা খবর চোখে পরে??

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

যুমার এর ছবি

অরফিয়াস,ধন্যবাদ আপনাকে এরকম গুরুত্ববহ একটা লেখার জন্য।আপনার উত্তরে সীমান্ত চোরাচালান ও পাচার
বিষয়ক কিছু তথ্য দিয়েছেন।নারী পাচারের জন্য পাচারকারীরা নিশ্চয়ই কিছু সেইফ রুট ব‌্যবহার করে থাকে,আপনার জানা থাকলে অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করবেন।ধারাবাহিকভাবে লিখুন,ভালো থাকবেন।
সেই হতভাগা মেয়ে তিনটির কি কোন হদিস পেলেন?
পরিবর্তন সহসা হবে না নিশ্চয়ই তবে পাচারের হার একটুও যদি কমে তাওতো কিছু হল!

অরফিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও, মেয়ে তিনজনের আর খোঁজ নেওয়া হয়নি, হয়তো কিছুদিন পরে খোঁজ নিবো, পরিবর্তন সহসা না হলেও হওয়াটা দরকার, সুস্থ সময়ের প্রত্যাশায় ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই কাজটা চলছেতো চলছেই। থামার কোন লক্ষন নেই। এ থেবে বাঁচার রাস্তাটা কি?

অরফিয়াস এর ছবি

নারীকে ভোগ পণ্য হিসেবে ব্যাবহারের ইতিহাসটা পুরনো, সমাজের সৃষ্টির শুরু থেকেই মনে হয় এটা চলে আসছে, থামার জন্য মানসিকতা পরিবর্তন ও কঠিন আইন জরুরি, কিন্তু সেটা সম্ভব কি?

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

স্পর্শ এর ছবি

অজ্ঞান অবস্তায় তিনজন মানুষকে সীমান্ত পার করেছে! তার মানে বড় কোনো গাড়িতে করেই করেছে এটা। কী অদ্ভুত!

এদের জন্য খারাপ লাগছে খুব।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অরফিয়াস এর ছবি

গাড়ি কিংবা নৌযান ব্যাবহার সম্ভব, কিংবা পণ্য বোঝাই গাড়িও ব্যাবহার করা হয়ে থাকতে পারে....

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

চরম উদাস এর ছবি

ভয়ঙ্কর! আপনার লেখাগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। আপনি লিখে যান। এইসব শুনে কিছুই হয়তো করতে পারবোনা, তবুও মনে হয় সবার জানা দরকার।

অরফিয়াস এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ, যতদিন কলম চালাতে পারবো আশা রাখি লোকচক্ষুর অন্তরালের অজানা বিষয়গুলো নিয়ে লিখে যাবো ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লেখার জন্য ধন্যবাদ।
কিছু করার নেই। যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করব।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অরফিয়াস এর ছবি

ভুলে গেলে চলবে কি??? নিজেকে আড়াল করে রাখতে তো সবাই চায়...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পুরনো 'গল্প', তারপরেও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা একটু অধিক নাড়া দেয়...

এই লেখাটা কোন সংবাদপত্রে স্থান পাওয়া দরকার।

অরফিয়াস এর ছবি

চোখের সামনে দেখা ঘটনাগুলো আসলেই ভোলা কষ্টকর, তারপরও সমাজের কিছু আসল ছবি চোখের সামনে আসলে নিজের অস্তিত্ব কিছুটা হলেও নাড়া খায় ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রানা মেহের এর ছবি

কী ভয়ংকর!
যতটুকু দেখেছি, বিচার চলার মধ্যবর্তী সময়ে মেয়েগুলো আরো কয়েকদফা নির্যাতিত হয়।
কে জানে কী আছে এই তিনটা মেয়ের ভাগ্যে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অরফিয়াস এর ছবি

হুমম এটাও ঘটে, আশা করবো সেরকম কিছু এদের ভাগ্যে জুটবেনা ...

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

 তাপস শর্মা  এর ছবি

ভয়ঙ্কর অনুভূতি। ভীষণ খারাপ লাগছে। সবার মত আমারও কিছু করার থাকেনা। কিন্তু এটুকুই বলতে পারি এই ধরনের বহু ঘটনা আমি ঘটতে দেখেছি। সময়ে প্রতিবাদও করেছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে। বাট অভারল কিছুই করতে পারিনি, পত্রিকায় দুকলম চালানো ছাড়া। রাষ্ট্র শক্তি যতদিন না সক্রিয় হচ্ছে ততদিন এই ধরনের ঘটনা আটকানো যাবেনা। গরিব দেশ গুলিতেতো ভয়ানক অবস্থা। যৌন শোষণ এখন নিত্যদিনের রোজনামচা ।
দরকার সচেতনতা। পাশাপাশি - ভাত চাই ভাত, ভাত !!! পেটের জ্বালা যে বড্ড ভয়ানক???????
--------------------------------------------------------------------------------

“সব অভিমান আকাশের চেনা চেনা
সবার জন্য সুদিন কি আসবেনা
উত্তর চেয়ে আকাশ পেতেছে কান
আমিও বেধেছি আমার প্রেমের গান।”

তিথীডোর এর ছবি

মন খারাপ

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ফাহিম হাসান এর ছবি

মন খারাপ ও ভয়াবহ বিষাদে ছেয়ে গেল মন।

বন্দনা এর ছবি

কেন যেন সব কষ্ট, অপমান, যন্ত্রনা আমাদের মেয়েদেরই। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।জানিনা কবে এই অসহায় অবস্থা থেকে মেয়েরা বের হয়ে আসতে পারবে।

অরফিয়াস এর ছবি

মন খারাপ

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।