বাঙালির আত্মপরিচয় কী? এ এক চিরন্তন প্রশ্ন। পুরানো কথা আবার বলা, তবু বলছি একারণে যে, বাঙালিত্ব আমাদের জীবনের বড় অংশ, তবু আত্মপরিচয়ের সংকটে থাকে বাঙালিরা সবসময়।
পরিচিত অনেকেই গর্ব করে বলতে থাকেন, সুদূর ইরান থেকে তাঁদের পূর্ব পুরুষ এসেছিলেন বাংলায়, তাঁরা ঐ সব ইরানীদের বংশধর। খেয়াল করে দেখার চেষ্টা করি, কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও ইরানীদের চেহারার কোনো ধাঁচ দেখিনা, তখন প্রশ্ন জাগে, ইরানী বংশের পরিচয় দেয়া এঁরা কতটুকু ইরানী, জীনগতভাবে? ১%? ২%? ৩০%?
নিজের দিকে তাকানোটা খুব সহজ, তাই চেহারার নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করার চেষ্টা করি। আমার দাদাবাড়ির গ্রামের সবার নাক প্রচন্ড খাড়া, দেখে বোঝা যায় নাকের অংশটি হয়তো বা পশ্চিম দিকের কারো থেকে আসা। গায়ের রঙ আবার শ্যামলা, বাংলার আদিবাসীদের থেকে আসা। উচ্চতা দেখে বোঝা ভার - পশ্চিম এশীয়দের অনেকের চাইতে খাটো, আবার দ্রাবিড় বংশোদ্ভূতদের চাইতে লম্বা। চোখের গড়নে কার প্রভাব, বলা ভার, কেননা পূর্ব এশীয়দের মতো ছোট না, আবার পশ্চিম এশীয়দের মতো আয়তলোচনও না।
আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে প্রিয় শহর চট্টগ্রামে। উপকুলের শহর বলে এখানে আরব রক্তের মানুষ প্রচুর। পথে ঘাটে অনেককেই দেখেছি, চোখ মুখের ধাঁচে আরব প্রভাব। আবার একই পরিবারে আরব চেহারা, আর বর্মী (মগ) চেহারার মিশ্রনও রয়েছে।
পদ্মা মেঘনা যমুনার সঙ্গমস্থলে গড়ে ওঠা এই প্রচন্ড উর্বর এলাকাটা দুনিয়ার সব মানুষকেই টেনে এনেছে এখানে। বাঙালিরা তাই বিভিন্ন জাতির নৃতাত্ত্বিক প্রভাবে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব তো পাইনি, বাঙালিরা নিজেরা কী মনে করে, নিজের পরিচয় সম্পর্কে? আমরা কি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ আগে, নাকি বাঙালি আগে? ভারতীয় বা বাংলাদেশী আগে, নাকি বাঙালি আগে? আরব, ইয়েমেন, ইরান থেকে আগত রাজপুরুষ অথবা সেনানী, নাকি খাঁটি বাংলার জলে ভেজা চাষীর, মাঝির, জেলের বংশধর? কেনো আত্মপরিচয় নিয়ে বাঙালিদের এই সংকট?
(ছবিটি ইংরেজি উইকিপিডিয়ার Bengali people ভুক্তি থেকে নেয়া, ফটো কোলাজ)
মন্তব্য
বাঙালীর আবার অন্যপরিচয় আছে নাকি?
-----------------------
বিবাদহীন, নির্ভেজাল কলমবাজ
বাঙালি ছাড়া আর কোন পরিচয় এইমুহুর্তে দ্ব্যর্থহীনভাবে নেই। কারন আমরা নানা জায়গা থেকে আসা নানা রকম লোকের মিশ্রনে উদ্ভুত।
@ফাহা, শেষ অংশে যে প্রশ্নটা রেখেছি, কাউকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঙালি বলার আগে অন্য যেকোনো পরিচয় চলে আসবে। এই আত্মপরিচয় নিয়ে দ্বিধাই আমাদের বড় একটা সংকট।
----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম
@উৎস, জীনগত পরীক্ষার লিংকের জন্য ধন্যবাদ। দেখি শ খানেক ডলার জমিয়ে ফেলে আমিও করাবো এটা।
----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম
আত্মপরিচয় নিয়ে দ্বিধা বাঙালির সবচেয়ে বড় অসুখ। যেটা থাকা অনুচিত। এজন্যই বলেছি, বাঙালীর আবার অন্যপরিচয় আছে নাকি?
-----------------------
বিবাদহীন, নির্ভেজাল কলমবাজ
ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন!
সংকর জাতির আত্মপরিচয় খুজতে যাওয়াটা দুরূহ!
সংস্কৃতি আর ধর্ম মাঝখান থেকে হাতাহাতি করছে শিকড় হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
প্রবাসী বাঙালিদের অনুষ্ঠানে শুধুই শুনি ইংরেজির ছড়াছড়ি। অর্কুটে বাঙালিদের নামে খোলা অনেক গ্রুপে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা দেখি। সামহয়ারইনে অনেক ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের পোস্ট দেখি। তাতে আজকাল বাঙালিদের বাঙালিত্বের প্রতি আকর্ষণ নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম
অপেক্ষা কর। ফরহাদ মজহারীয়রা নিশ্চয়ই নতুন কিছু আনবে...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বলতে চাই আমি বাঙ্গালি, ভাবতে চাই আমি বাংলায় ভাসি। তবে মন জানে মনে বাঙ্গালিয়ানা আদৌ কতটুকু। কষ্ট, লজ্জা, আর দৈন্যটুকু ওখানেই স্পষ্ট।
ইশতিয়াক রউফ
বাঙালী পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। অর্কুটে ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। বাঙালী গ্রুপগুলোতে ভারতীয় আর পাকিস্থানি (মুক্তিযুদ্ধের কমিউনিটিগুলোতে) -দের উতপাত অসহনীয়। অনেকদিন সক্রিয় ছিলাম এদেরকে নিরস্ত করতে। পরে ব্যস্ততার জন্য অর্কুটে যা্ওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
অর্কুটে রান্না বান্না জাতীয় গ্রুপ বাদে সব ক্র্যাপ । অর্কুট ইন্ডিয়াতে এতো পপুলার হবার কারন কি ?
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
জানি না, এটা এক রহস্য। মাইস্পেস ও ফেসবুক যেরকম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সেরকম অর্কুট দখল করে নিয়েছে ব্রাজিলীয় ও ভারতীয় বাজার। অর্কুটে প্রায় ৬০% সদস্য ব্রাজিলীয়। ভারতীয়রাও প্রচুর। বাংলাদেশ গ্রুপে এদের দৌরাত্ম এবং ট্রোলিং বেড়ে গেছিলো এতোই, এখন মডারেট করে কেবল বাংলাদেশী সদস্যদেরই ওখানে ঢুকতে দেই।
----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম
আমি একজন সম্পূর্ণ বাঙ্গালী।
আমার পূর্ব-পুরুষরা নিম্নবর্নের হিন্দু ( ডোম-চাঁড়াল) ছিল।
পরে কনভার্টেড মুসলিম। তবে এখনো পূর্ব-পুরুষের সকল
দোষ-গুণ দেদীপ্যমান ।
ধর্মের সাবানে খেয়ে আমাদের বাঙ্গালীত্ব মুছে নাই।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ডোম-চাঁড়াল কিংবা ধীবর ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট এসেছে আমাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে।প্রথম থেকেই এই জনপদের মানুষদের উপর রাজত্ব করেছে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষজন।
আর্যরা এখানে এসেছে বহিরাগত হিসেবে,অথচ ইমিগ্রান্ট হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেনীর মানুষ না হয়ে তারাই বরং সমাজে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদেরকে করেছে দ্বিতীয় শ্রেনীর লোক।
তারপর যতো সূফী দরবেশ এসেছেন,তারা আমাদের ধর্মান্তরিত করে নিজেরা ধর্মগুরু সেজে বসেছেন।
তাই এখানে বহিরাগতদের সাথে নিজের পরিচয় জুড়ে দিলে নিজেদেরকে এক শ্রেনী উপরে তোলা যায়।এটাই আমাদের ইরানি ফিরানী হওয়ার মূল কারন।
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...
আরিফ ভাইয়ের এই কথাটাতে দুঃখ পেলাম।
এটা ঠিক, অনেক ভন্ড পীর-দরবেশ সেজে নিরীহ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করেছিল, করছে, করবে। তাই বলে সবাইকে ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া ঠিক বলে মনে করি না। ধর্মান্ধদের ঘৃণা করা মানে তো ধর্মপ্রচারকদের উপহাস করা নয়।
ফেরারী ফেরদৌস
হুমম।
সব মিলিয়ে আত্মপরিচয়ের সংকট।
------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
প্রথমে ছিলাম বাঙালি, তারপরে একজন বানাইলো বাংলাদেশী, এখনও তো মনে হয় মুসলামান বানায় ফেলবে।
---------------------------------
যত বড়ো হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা,
আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা॥
আত্মপরিচয় নিয়ে সংকটের বোধ সম্ভবত আরো বাড়ে অন্যান্য জাতির তীব্র জাতীয়তাবাদী প্রকাশে। ভারতীয়দের মধ্যে এ ব্যাপারটা আছে, পাকিস্তানিদের সম্পর্কে বিশদ জানিনা, অল্প কিছু পাকিস্তানিকে দেখে মনে হয়েছে, একজন পাকিস্তানি নিজেকে উঁচু দরের মুসলমান এবং আরেকজনকে নিচু দরের মুসলমান প্রতিপন্ন করতে আনন্দ পায়।
কিন্তু অন্যান্য জাতির মধ্যে এই জাতীয়তাবাদী গন্ধ বা নেশনেরোমোন (কয়েন করলাম) বেশ তীব্রভাবেই ছড়ায়। মুখে না বললেও তার আচরণে সেটা ফুটে ওঠে। এসব প্রকাশের মুখে একজন বাঙালি হিসেবে কিছুটা সংকটের মুখে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও একজন মারাঠা বা একজন পাঞ্জাবী মাথা উঁচু করে নিজের মারাঠা বা পাঞ্জাবী পরিচয় নিয়ে কথাবার্তা বলতো। বহু জাতির সমন্বয়ে গড়া ভারতে ঢালাও ভাবে ভারতীয় নেশনেরোমোন বিকিরণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, প্রকাশটা মাঝে মাঝে উৎকটও হয়ে পড়ছে। দেশে প্রবাসে নানাভাবে এই প্রকাশ দেখে দেখে বাঙালির মধ্যে আত্মপরিচয়ের এ প্রকাশ নিয়ে সংকট আত্মপরিচয়ের সংকটের দিকেও চলে যেতে পারে।
ইশতিয়াক রউফ একটা পোস্ট করেছে, পড়লাম, তাতে জাতি হিসেবে আমাদের ছাপ আঁকার ব্যাপারটা উঠে এসেছে। আমরা যে বাঙালি, এবং সবার আগে বাঙালি, তা কিভাবে প্রকাশ করবো? ভাংরা নেচে, গজল গেয়ে, পরের পেছনে কাঠি দিয়ে? আত্মপরিচয় নিয়ে সংশয়ের বোধ কেটে গেলেও সে পরিচয়ের সশব্দ প্রকাশ (আদৌ জরুরি না হলেও পিয়ার প্রেশারের মুখে জরুরি বলে বোধ হতে পারে) এর পদ্ধতি নিয়ে সংকটবোধ জেগে ওঠাটা সহজ।
নিজেদের চেহারা আঁকার সময় আমাদের। নানা ভেজালে এতদিন ধরে এ কাজে ঠিকমতো হাত দেয়া হয়নি। তবে সময় বেশিদিন থাকবে না। আমরা চুপ করে বসে থাকলে অন্য কেউ এসে নিজের খুশি মতো আমাদের চেহারা এঁকে দিয়ে যাবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
রাগীব ভাই, আমাদের বাঙালীর আত্মপরিচয়ে সংকট নেই। সংকট সৃষ্টি করেছে তারাই যাদের জন্ম-পরিচয়ে আমরাও সন্দিহান, সেই আব্দুল হাকিম-এর মতো- যে জন বঙ্গেত জন্মে...
রণদীপম বসু
নতুন মন্তব্য করুন