স্বাস্থ্যই সকল ব্যবসার মূল

রেজওয়ান এর ছবি
লিখেছেন রেজওয়ান (তারিখ: বুধ, ২৫/০৫/২০১১ - ২:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকায় সচলায়তনের প্রাণভোমরা নজরুল দম্পতির সৌজন্যেই বেশীর ভাগ সচলাড্ডা হয়। এই প্রথা ভাঙ্গতেই সিদ্ধান্ত নিলাম ৯ই মে আমার বাসায় একটি ছোটখাট আড্ডা জমাব সচলদের নিয়ে। সব প্রস্তুতি শেষ করতে করতে পারিবারিক এক অসুস্থতা বাগড়া বসাল। আমার শাশুড়ি সপ্তাহ দুই ধরে খাবারে রুচি হচ্ছিল না বলে খুব দুর্বল হয়ে পড়ায় বিভিন্ন ডাক্তার দেখানোর পর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল যে ওনাকে স্কয়্যার হাসপাতালে এক পাকস্থলীর চিকিৎসকের তত্বাবধানে ভর্তি করা হবে। সেই মোতাবেক ৮ই মে সকালে তাকে ভর্তি করানোর জন্যে উদ্যোগ নিলে বলা হল বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সিটের জন্যে। সেদিন সকালে ভর্তি হলে হয়ত গল্পটি অন্যরকম হত।

কিন্তু বিধাতা আমাদের জন্যে অনেক অভিজ্ঞতা জমা করে রেখেছিলেন।

সেদিনই তিনি গোসল করতে গিয়ে বাথরুমে পড়ে যান এবং তার পা ভাঙ্গে ও মাথা ফেটে যায়। এর পর গত দুই সপ্তাহেরও বেশী ধরে তিনটি হাসপাতাল ও গণ্ডা দুয়েক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে বোঝাপড়া করে যে অভিজ্ঞতা হল তাতে বাংলাদেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বাস্থ্য সেবার চিত্র সম্পর্কে একটি ধারনা পাওয়া যায়।

অ্যাম্বুলেন্স পর্ব:

আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি যে ওনার পা ভেঙ্গেছে - কিন্তু প্রচণ্ড ব্যাথায় উনি দাড়াতে পারছিলেন না বা পা ভাঁজ করতে পারছিলেন না। তাই অ্যাম্বুলেন্স ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। স্কয়্যারের ইমার্জেন্সির নাম্বারটিতে অনেক চেষ্টা করেও না পাওয়ায় কয়েকশ গজ দুরের হোটেল থেকে রুপান্তরিত হাসপাতালটিতে গেলাম। সামনে গোটা চারেক অ্যাম্বুলেন্স দাড়িয়ে থাকতে দেখে উদ্বেগ কমল। অ্যাম্বুলেন্স চাইতেই বলল কোথা থেকে আসবেন।

: কাছেই বাসা - তবে আমরা স্কয়্যারে নিয়ে যাব।
: না আমাদের হাসপাতালে না আনলে আমরা অ্যাম্বুলেন্স দেব না।
: আমি তো ভাড়া দেব।
: এই অ্যাম্বুলেন্স আমাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্যে।

সময় চলে যাচ্ছে দেখে বাড়ি ফিরে একটি গাড়ির পেছনের সিটে লম্বা করে শুইয়ে ওনাকে নিয়ে গেলাম।

কেবিন পর্ব:

ওনাকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাবার পর জানা গেল যে কোমরের নীচ থেকে তার পা ভেঙ্গেছে - তবে মাথার আঘাতটি গুরুতর নয়। মাথায় চারটে সেলাই আর পায়ে ট্র্যাকশন ব্যান্ডেজ দিয়ে ছেড়ে দেবার আগে ইমার্জেন্সীর ডাক্তাররা বুদ্ধি দিলেন দ্রুত একটি সিট যোগাড় করতে - কারন ওনার পায়ের অপারেশন লাগবে আর অনেকদিন থাকতে হবে। তদবির কালচারে গা ভাসিয়ে ততক্ষণে আমরা বরাদ্দ পেলাম উচ্চমূল্যের একটি ডিলাক্স কেবিন। আমাদের সৌভাগ্য যে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়েছিলাম কারন পরবর্তী কয়েক দিন অবস্থানের সময়ও আমাদের কাঙ্খিত সাধারণ কেবিনের দেখা মেলে নি।

নার্স পর্ব:

স্কয়্যার হাসপাতাল প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত ও প্রফেশনাল একটি হাসপাতাল। কিন্তু বাঙ্গালীরা সেবা ক্ষেত্রে অতটা প্রফেশনাল না এটা প্রমাণ করতে সেরকম কিছু নার্স জুটল আমাদের কপালে।

১)
: একটি বাটি দিন রুগী বমি করবে

: (রুগীর জন্যে আনা খাবারের ঢাকনা উপুর করে) এটাতেই করুন এখন - বমির বোল এই ফ্লোরে আর নাই।

২)
: রুগীর শরীর খারাপ লাগছে - একটু মাথাটা মুছিয়ে দিন না কাইন্ডলি।

: আপনারাই মুছিয়ে দেন - আমার ডিউটি শেষ এখন।

৩) ইমার্জেন্সী বাটন টেপার পাঁচ মিনিট পরেও নার্সের দেখা না পেয়ে তাকে ডাকতে গেলে
: আপনারা এত দেরী করছেন কেন? রুগীর শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে।

: এইটাতো কার্ডিয়াক ফ্লোর আর আমি শুধু একা আছি। আপনাদের অর্থপেডিক্সের ডিউটি ডাক্তারতো বারো তলায় আছে - ডেকে আনছি - অপেক্ষা করেন একটু।

ডাক্তারদের রোগ নির্ধারণ পর্ব:

মাকে ভর্তি করা হল এক বিশেষজ্ঞ হাড়ের ডাক্তারের তত্বাবধানে (যাকে আমরা চিনি না)। রুগীর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের প্রাথমিক ধারণা দিলেন একজন ডিউটি ডাক্তার। তবে অনেক প্রশ্নের উত্তরই ছিল স্যার রাতে আসবেন উনিই বিস্তারিত জানাবেন। সেইদিন রাতে তিনি আসেননি। রাতে মার কাশি ও অনেক শ্বাস কষ্ট হয় কিন্তু সঠিক চিকিৎসা তিনি পান নি।

পরের দিন সকালে আমি এদের অফিসে গিয়ে খুব রাগারাগি করলাম। বললাম ডাক্তার না থাকলে বলেন আমরা অন্য হাসপাতালে যাই। দশটার দিকে জানানো হলো স্যার স্কয়্যারেই আউটডোরের রুগী দেখেন। সেখানে গিয়ে অনুরোধ করেন। সেখানে যেতেই জানলাম উনি রাউন্ডে বেরিয়েছেন। বো টাই লাগানো ফিটফাট ডাক্তারটি বললেন যে তার অপারেশন লাগবে হাড়ের - জটিল কিছু না তবে ইলেকট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্স আছে শরীরে সেটা ঠিক করতে বেশ কয়েকদিন লাগবে। আর শরীরে রক্ত কম (মাথা কেটে অনেক রক্ত ঝড়েছিল) তাই রক্ত দেয়া লাগবে।

তিনি কিডনি, মেডিসিন ইত্যাদি বেশ কিছু কনসালট্যান্টকে রেফার করে বললেন ওনারা রুগীকে তৈরি করে দিলেই আমি অপারেশন করব। এরপর শুরু হল বিভিন্ন ডাক্তারের আগমন এবং আমাদের রোগের ইতিহাস বারংবার বর্ণনা করার নাটক।

১)
: ওনার ডায়বেটিস কবে থেকে?
: ওনার তো ডায়াবেটিস নেই।
: কিন্তু ফাস্টিং গ্লুকোজ ১৪ কেন? শেষ কবে করিয়েছেন টেস্ট?
: এইতো মাস দুয়েক আগে। কেন বেশি সেতো আপনি ভাল বলতে পারবেন (ওনাকে গ্লুকোজ স্যালাইন দেয়া হয়েছিল)।

২)
: ওনার কিডনির সমস্যার জন্যে কোন ঔষধ খাচ্ছেন কি?
: কিডনির সমস্যা?
: হ্যা জানেন না? ক্রিটেনিন লেভেল খুব হাই। কিডনির টেস্ট শেষ কবে করিয়েছিলেন?
: ওনার হাইপার টেনশন ছাড়া আর কোন বড় অসুখ নেই।

লক্ষ্য করা হল যে বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা দেয় না - মূল অর্থপেডিক্স এর ডাক্তারের কাছে উপদেশ হিসেবে পেশ করে। এরপর সেটার প্রতিফলন হয় উনি যখন পরদিন তার রাউন্ডে আসে তখন। ইতিমধ্যে ওনার শ্বাস নিতে অসুবিধাটি বাড়ে এবং অক্সিজেন দেয়া হয়। আমাদের ক্রনিক অর্গান ফেইলিউর ইত্যাদি গালভরা শব্দ দিয়ে ভয় ও দেখানো হয়। আমরা তখন এক চেনা অর্থোপেডিক্সের ডাক্তারের শরণাপন্ন হই যার পরামর্শে পপুলার হাসপাতালে ওনাকে স্থানান্তর করি।

রক্তদান পর্ব:

রক্তের জন্যে ফেসবুকে আবেদন করেছিলাম। কিছু সাড়াও পেয়েছি। পরে আত্মীয়ের মধ্যে থেকে দুইজন এগিয়ে আসেন। স্কয়্যার আবার দাতাদের (উচ্চমূল্যের) ১৮টি টেস্ট করে ম্যাচিং করিয়েই রক্ত দেয়া অনুমোদন করে - নাহলে তাদের ব্লাড ব্যাংক থেকে বিক্রি করে। আমাদের প্রথম রক্তদাতা ত্রিশ বছরের একজন যুবক - রক্তদানের পরের দিন তার হাতে লম্বা করে কালশিরা পরে গেল। আমরা যারপরনাই বিব্রত হলাম এবং জানলাম যে রক্ত ওরা নেয় একটি মেশিনের মাধ্যমে - যেটিতে অ্যালার্ম বাজার পরও কোন অ্যাটেন্ডেন্ট ছিল না বলে রক্ত ব্যাগ থেকে উপচে পুনরায় শরীরে গিয়ে এমন হতে পারে।

আইসিইউ পর্ব:

পপুলারে আসার পর দিন যানা যায় যে ওনার নিউমোনিয়া হয়েছে এবং খুব সম্ভবত এটি হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া - অর্থ্যাৎ স্কয়্যার থেকেই হয়েছে রুগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত থাকার কারনে (অথচ সেখানকার ডাক্তাররা সেটা ধরতে পারে নি)। ওনার শ্বাস কষ্ট বাড়লে তাকে ১৩ তারিখ আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আবার একগাদা টেস্ট করা হয় এবং বলা হয় ওনার হয়েছে প্রাণঘাতি এআরডিএস (অ্যাকোয়ার্ড রেস্পিটরী ডিসট্রেস সিনড্রোম) যেটি বেশ কিছু কারনেই হতে পারে। রুগীর ইলেক্ট্রোলাইটের সমস্যা কেটে গিয়ে শরীরের অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও ফুসফুসের অবস্থা ও অক্সিজেন ডিপেন্ডেন্সি অপরিবর্তিত থাকে। এই অবস্থায় অ্যানেস্থেসিস্ট অস্ত্রোপচারে রাজী না হলে ভাঙ্গা পায়ের চিকিৎসা আরও অনিশ্চিত হয়ে যায়।

১৫ তারিখে তার সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট আসে এবং বলা হয় যে টিউমার জাতীয় কিছু দেখা গেছে তার ফুসফুসে এবং ক্যান্সার কিনা নিশ্চিত করার জন্যে বায়োপসী আর ব্রন্কোস্কপি করা লাগবে।

আমরা সবাই ভেঙ্গে পড়ি - এবং মনে হয় নির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ধারণের আগে এরকম বলাটা মূল শোষক সিস্টেমেরই একটি অংশ। আমরা বিদেশে অবস্থানরত এক আত্মীয় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হই। তিনি বলেন যে যদি তার ক্যান্সার হয়েও থাকে এখন এই শারীরিক অবস্থায় কোন চিকিৎসা দেয়া যাবে না। ডাক্তারদের উচিৎ তার ফুসফুসের সমস্যা নির্মূল করে আইসিইউ থেকে বের করে আনা এবং পরে ক্যান্সার নির্ধারনের পদক্ষেপ নেয়া।

জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম পর্ব:

ইতিমধ্যে এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মতামত দেন যে রুগীর সচেতনতা আছে বলে আইসিইউতে রাখা ঠিক হচ্ছে না - তাকে হাই কেয়ার বা সেরকম ইউনিটে রাখা উচিৎ। কারন আইসিউতে ঢোকা রুগীদের মধ্যে বাঁচার চান্স ৫০:৫০ এবং প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। এটি রুগীর উপর প্রভাব ফেলে এবং সত্যিকার অর্থেই মাও হাল ছেড়ে দেয় এই সময়। তবুও তাকে ব্যয়বহুল আইসিইউতেই রাখা হয় এবং অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হতে থাকে এবং শরীর থেকে পর্যাপ্ত কার্বন ডাই অক্সাইড বের করতে পারছিলেন না তিনি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তখন লাইফ সাপোর্টের কথা বললেও পপুলারের ডিউটি ডাক্তাররা উপদেশ দেন যে বাইপ্যাপ মেশিন নামে একটি মেশিন আছে যেটির মাধ্যমে নল না ঢুকিয়ে এই অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব। সেটি ভাড়ায় যোগাড় করা হত নাকি আগে। তবে আমাদের এই দরকারের সময়ে সেটি পাওয়া সম্ভব হয় না।

তখন আমাদের কাছে হাসপাতালের প্রশাসন থেকে অদ্ভুত এক উপদেশ আসে। যেহেতু হাসপাতাল যোগাড় করতে পারছে না - আমরা মেশিনটি কিনে দিতে পারি। মেশিনটির মূল্য ২লাখ থেকে আড়াই লাখের মধ্যে। আমার আর কোন অনুভূতি তখন কাজ করে না। আমাদের আত্মীয় ডাক্তারটি সুদুর বিদেশ থেকে চিৎকার করে বলে তোরা কোথায় গেছিস? বের হ ওখান থেকে - জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি নেই আবার কোন মুখে রুগীকে কিনতে বলে। আমরা লজ্জা - আত্মসম্মানের মাথা খেয়ে হাসপাতালকে পুনরায় অনুরোধ করি কোথাও থেকে যোগাড় করতে -কারন রুগীকে এই অবস্থায় নড়াতে চাচ্ছিলাম না। পরদিন সন্ধ্যায় অবশেষে মেশিনটি আসে কিন্তু ততক্ষণে মার অবস্থা আরও অবনতির দিকে - তাকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে দিয়ে দেয়া হয়।

ডাক্তারদের নৈতিকতা পর্ব:

ওনাকে লাইফ সাপোর্টে দেবার আগেই আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড বসানোর কথা বলেছিলাম। আমরা দুজনের নাম প্রস্তাব করি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কয়েকজনের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে তাদের অধিকাংশই বোর্ডে আসতে রাজী হয় না। এদের একজনকে ব্যক্তিগত অনুরোধ করলে তিনি জানান যে তিনি বোর্ডে আসতে না পারলেও একবার এসে রোগী দেখে যাবেন। নিশ্চয়ই ৫ মিনিটে এক হাজার টাকা উপার্জন আর আধা ঘন্টায় দুই হাজার টাকা আয়ের মধ্যে ফারাক আছে।

অবশেষে মাকে ল্যাব এইডে নেয়া হয় - মূলত উন্নত যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসার আশায়। সেখানে অবশেষে মেডিক্যাল বোর্ড আজ বসে এবং আমি ডাক্তার প্রতি ২ হাজার টাকা করে হাতে নিয়ে বাইরে দাড়িয়ে থাকি। এটা নাকি হাসপাতালের নিয়ম যে বাইরে থেকে ডাক্তার আসলে সেই বিল হাসপাতালের মূল বিলের সাথে যোগ হবে না - রুগী ক্যাশে আলাদা দেবে। এর সাথে আয়কর ফাঁকি বা অন্য কিছুর সম্পর্ক আছে কিনা জানি না তবে আমার বুদ্ধিতে কুলোয় না। আমি এই সিস্টেমের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছি। এনারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সিটি গা্ইডেড বায়োপসী আর ব্রন্কোস্কপী করা হবে কারন তারা বুঝতে পারছেন না রুগীর নিউমোনিয়া, যক্ষা না ক্যান্সার। সেই অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা হবে।

না মাসে পাঁচ লাখ টাকা বেতনের এইসব ডাক্তারের কাছে বাস্তব জগৎটি ধরা পরে না। চোখের সামনে দেখা অ্যাক্সিডেন্টের পর আইসিউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা সিটি কর্পোরেশনের এক ময়লার ট্রাক ড্রাইভারের আত্মীয়দের কথোপকথন:

: রুগীর অবস্থা কিরকম?
: ভাল না, বাঁচার চান্স খুবই কম।
: ওনার গলার থিকা নল কবে খুলবেন?
: এটা খুললেতো উনি নিজে শ্বাস নিতে পারবেন না মারা যাবেন। রাখতে হবে।
: শুনছি যে অনেক খরচ।
: হ্যা লাইফ সাপোর্টে থাকলে ৪০০০০-৫০০০০ টাকা খরচ হয় প্রতিদিন।
: তাইলে তো পারুম না।
: এইটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।

কয়েক ঘন্টা পরে:
: আমাদের রুগীকে ছাড়বেন কবে।
: এরকম করেন কেন? রুগী মরতেও তো সময় লাগে।

প্রতিকার কোথায়:

সময় এসেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভাববার। জীবনের, স্বজনের প্রতি আমাদের ভালবাসা, দায়িত্ববোধ ও অনুরাগের সুযোগ নিয়ে মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্যে এক শ্রেণীর স্বাস্থ্য বেনিয়া তৎপর। সরকারী স্বাস্থ্য সেবা সেই শূন্যস্থান পুরণের মত অবস্থায় নেই। প্রতিবেশী ভারতে হেল্থ ইনস্যুরেন্সের চল বাড়ছে বিজ্ঞাপনে দেখলাম। আমাদের দেশে হেল্থ ইন্স্যুরেন্স কই?

আমার শাশুড়ীকে লাইফ সাপোর্টে দেবার পর উনি কথা বলতে পারেন না আর। কিন্তু ইশারায় অনেক বলেন। যেমন ল্যাব এইডে স্থানান্তর করার আগে উনি হাত জোড় করে কাকুতি মিনতি করছিলেন ওনাকে বাসায় নিয়ে যেতে। হাত গালে দিয়ে দেখালেন যে উনি একটু শুতে চান। ওনাকে আশ্বাস দিয়েছিলাম ওখান থেকে নিয়ে যাব। কিন্তু নিয়ে তুললাম মুদ্রার ওপিঠ আরেকটি হাসপাতালে। এখন তিনি অভিমানে ফ্যালফ্যাল করে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আর অনুভুতি শুন্য আমরা আমাদের মাকে এইসব বেনিয়াদের হাতে ফেলে রেখে দায়িত্ব পালন করি। খাই দাই অফিস করি। ভেবেও দেখি না - ওই বেডে আমিও একদিন হয়ত থাকব এমনই ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

ছবি: 
10/07/2007 - 4:15am

মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কিছু বলার নেই। বলে বিশেষ লাভ হবে বলেও মনে হয় না...

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রু (অতিথি)  এর ছবি

উনার দ্রুত আরোগ্য লাভ কামনা করি। খুব অসহায় লাগে। হেলথ ইন্সুরেন্স খুব জরুরী। ডাক্তার, নার্সদের আচরন নিয়ে কী বলা যায় ভাবছি।

অপছন্দনীয় এর ছবি

হেলথ ইন্স্যুরেন্স দিয়েও কি কিছু হবে? ডাক্তার - নার্সদের দায়িত্ববোধ না থাকলে ইন্স্যুরেন্স থাকুক বা না-ই থাকুক, কোনকিছু কি পাল্টাবে?

স্কোয়ারের আউটডোরে আমার অভিজ্ঞতা খারাপ নয়, বলা উচিত বাংলাদেশের যতগুলো হাসপাতালে ঘুরেছি তার মধ্যে সবচেয়ে প্রফেশন্যাল ব্যবহার এখানেই পেয়েছি। ইনডোরে তাহলে এই অবস্থা! অবশ্য আউটডোরেও একটা ব্যাপার আছে, আমার কাজ সব সময়েই ছিলো "কর্পোরেট হেলথ স্ক্রিনিং"-এ। ওখানে ব্যাপার হয়তো অন্যরকম হয়, ব্যাংকের মত।

অপছন্দনীয় এর ছবি

ওনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

থাউক
নিজের অভিজ্ঞতাগুলা আর বল্লাম না

অতিথি ১ এর ছবি

পড়তে পড়তে তো আমারই মনে হলো যে ওদেরকে হাতের সুখ মিটিয়ে মেরে আসি। আপনি মাথা ঠান্ডা রাখলেন কিভাবে আপনিই ভালো জানেন।

অতিথি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

..........................

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

tanjim এর ছবি

......সত্যি বলতে কি এতো অনাচার আর রোগীর দুর্গতি দেখে নিজে ডাক্তার হয়েও রাগে-দুঃখে দেশ ছেড়েছি বছর দেড়েক আগে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়ে খুবই অসহায় লাগছে। দেশে যদি কোন কারণে যাই আর এই অবস্থায় পড়ি, তাহলে আমার (এবং পরিবারের) অবস্থা ঐ ময়লার ট্রাক ড্রাইভারের চেয়ে কোন অংশে ভালো হবে না। (হতাশার ইমো)

সময় এসেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভাববার। জীবনের, স্বজনের প্রতি আমাদের ভালবাসা, দায়িত্ববোধ ও অনুরাগের সুযোগ নিয়ে মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্যে এক শ্রেণীর স্বাস্থ্য বেনিয়া তৎপর।

দায়িত্বটা যাদের নেয়ার কথা তারা আছে র‍্যাবকে বাঁচাতে, নয়তো শেয়ার কেলেংকারদের বাঁচাতে। আপনার আমার দাম তো শুধু একটা ভোটের-- তাও ৫ বছর পরপর। নেকস্ট টাইম সুযোগ পেলে এদের জুতা উপহার দিবো।

নৈষাদ এর ছবি

উনার দ্রুত আরোগ্য লাভ কামনা করি।

খুব জানতে ইচ্ছে হয় উন্নত দেশগুলিতে চিকিৎসাসেবা কিভাবে নিশ্চিত করা হয়। আমার কাছে চিকিৎসার মত একটা ব্যাপারে 'রেভিনিউ ম্যাক্সিমাইজেশন' বিজনেস মডেলটা বেশ উদ্ভুতই মনে হয়। ডাক্তারদের যদি 'রেভিনিউ টার্গেট' থাকে অথবা 'রেভিনিউ শেয়ারিং মডেলের' মধ্যে কাজ করতে হয়, এবং সর্বোপরি এগুলি তত্ত্ববধায়নের জন্য কোন রেগুলেটরি বডি না থাকে তবে এদেশে এগুলি হতে বাধ্য।

হেল্থ ইন্সিওরেন্স আমাদের দেশে কিছু কিছু ফর্মে অবশ্যই আছে। তবে এর ব্যাপকতা বাড়লে হয়ত একটা চেক এন্ড ব্যালান্স আসতে পারে। (ইন্সিওরেন্স কোম্পানি গুলি নিজের স্বার্থেই চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের শুধু রেভিনিউ ম্যাক্সিমাইজেশনের ব্যাপারটাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবে।)

নাশতারান এর ছবি

আমরা আর মানুষ নাই

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রেজওয়ান, আপনার শাশুড়িকে নিয়ে ২০১১ সালের অভিজ্ঞতা আমার শ্বশুরকে নিয়ে ২০০৬ সালের অভিজ্ঞতায় কী অসম্ভব মিল সেটা না বললে বোঝাতে পারবো না। সেসব লেখার মতো মানসিক অবস্থা আমার হবে না, তাই লিখলাম না। তবে কামনা করি আমাদের ক্ষেত্রে পরিণতিটা যেমন হয়েছিলো আপনাদের ক্ষেত্রে যেনো তা না হয়।

বাইপ্যাপ মেশিনটার দাম নাকি ৮২৫ ডলার। আর সেটি নাকি সারা দেশে আছে মাত্র একটি, ইউনাইটেড হাসপাতালে। মাত্র ছয় দিন আগে এটি যথাসময়ে যোগাড় করা, এটির ব্যবহার নিয়ে যে হেনস্থা নিজের চোখে দেখলাম তা বলার মতো না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই চিত্রটা স্কয়ারের মতো হাসপাতালে আশা করিনি। আমরা ...গ্রামের মানুষ। শহরের বড় হাসপাতাল বলতে বুঝি স্কয়ার, ল্যাবএইড, এপোলো। ঢাকা গেলে বেচে যাবো, এই ভরসায় থাকি আমরা। কিন্তু আপনার কথা শুনে তো ভয়ই পেলাম।

স্কয়ারকে বিশ্বমানের বলে দাবী করা হয়। পয়সাটা বিশ্বমানের তাতে কোন সন্দেহ না থাকলেও সেবাটা দেশীয় সংস্কৃতি বহন করছে সেটা বুঝতে পারলাম।

আমার এক আত্মীয় এপোলোর চারটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন নানান সময়। বাংলাদেশ, কোলকাতা, দিল্লি, মাদ্রাজ। শেষমেষ মাদ্রাজেই সঠিক চিকিৎসা মিললো। একই হাসপাতাল বাংলাদেশ কোলকাতার মানের সাথে মাদ্রাজের মানের আকাশপাতাল ফারাক। তাহলে সমস্যা কি বাঙালীদের জীনের মধ্যে?

আরো কয়েক বছর আগে হাসপাতালে এরকম বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবার পর আমি একটা বানীতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলাম। বাংলাদেশে অসুস্থ হওয়াও একটা ব্যয়বহুল অপরাধ। এসব হাসপাতাল রোগীকেও মারে, রোগীর চিকিৎসা ব্যয় দিয়ে রোগীর পরিবারকেও আধমরা করে দেয়। সেই বিশ্বাসটা আরো দৃঢ় হলো।

চিকিৎসা শুরুর আগে যে কোন হাসপাতালকে বলতে চাই- ভাই, সস্তায় মরতে চাই।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রোহান এর ছবি

আমার ছেলের জন্ম স্কয়ারে। খালি প্যান্ট কোট পড়িয়ে স্মার্টনেস দেখালেই তো আর নার্সিং হয় না, এত্তোবড় একটা হাসপাতালের গাইনী বিভাগের নার্স গাইনী পেশেন্ট ডিল করার নুন্যতম জ্ঞান রাখে না, এমনকি একজন নতুন মা এর ব্রেষ্ট ফিডিং টেকনিক গুলো জানাতে নুন্যতম সাহায্যও করে নাই। তারপর বাচ্চা দ্বিতীয় দিনে মায়ের দুধ ঠিকমতো পাচ্ছিলোনা, আমরা বললাম বাইরের কিছু দিবো কিনা, নিউট্রিশনিষ্ট না করে গেলেন। পরদিন সকালে আরেক চাইল্ড স্পেশালিষ্ট এসে আমারে বকাঝকা করে গেলো বাচ্চাকে বাইরের কিছু দিচ্ছিনা কেনো। তিন দিনের দিন একটা জন্ডিস টেষ্ট করে, বিলিরুবিন কিছু বেশী ছিলো, বাচ্চাও হলদে হয়ে দুর্বল হয়ে গেলো। আমাকে এনআইসিইউ থেকে ডেকে নিয়ে গেলো, একজন এসিসট্যান্ট প্রফেসর লেভেলের ডাক্তার চিটাগাং এর টানে আমাকে যা বললেন তার মর্মার্থ হলো - আপনার বাচ্চার ভয়ংকর জন্ডিস হয়েছে, লিভারের ফাংশনালিটিতেও অনেক সমস্যা মনে হচ্ছে। আজ বিকালের মাঝেই আমরা তাকে এনআইসিউ তে শিফট করে দুইদিন ফটো থেরাপি ও স্যালাইন দিবো, এই দুদিন আর কিছু খেতে দেওয়া হবে না, তারপর তার ব্লাড কালচার করে আমরা বলতে পারবো সমস্যা কোথায়। এইটা একটা পাঁচদিনের প্যাকেজ, প্যাকেজ প্রাইস এতো টাকা (উনচল্লিশ না চল্লিশ হাজার টাকার মতো খুব সম্ভবত)। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনাদের জানাচ্ছি, উনি বললেন বেশী দেরী করে ফেললে বাচ্চার হেলথের কোনো গ্যারান্টি আমরা দিতে পারবো না আগেই বলে দিচ্ছি। প্রথমবার বাবা হবার অভিজ্ঞতা নেওয়া একজনের জন্য এই কথাগুলো যতোটা রূঢ়ভাবে বলা যায় সেভাবেই বলেছিলো। এক কলিগের দুলাভাই হলিফ্যামিলীর ডাক্তার, উনারে ফোন দিলাম উনি হেসে বললো আরে ব্যাটা এইটা ফিজিওলজিকাল জন্ডিস তিন দিনের সব পোলাপাইনেরই হয়, বাসায় নিয়ে ভোর আর বিকালের রোদ রেগুলার লাগাও এমনিতেই চলে যাবে। আমি মোবাইলে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলাম, আবার গেলাম এনআইসিউতে, বললাম ভাই এইটা ফিজিওলজিকাল জন্ডিস হলে ফটোথেরাপীটা কেবিনে দেন, তিনদিনের বাচ্চা মা ছাড়া হাতে স্যালাইন দিয়ে এইখানে কেমনে থাকবে, আমারে বলে কি জন্ডিস সেইটা আমরা বুঝবো আপনি কি ডাক্তার নাকি।

আমি গেলাম ল্যাবএইডে, পিজির এক প্রফেসরের কাছে, উনি বললেন বাচ্চা কান্নাকাটি, নড়াচড়া সবকিছু ঠিক থাকলে নিওন্যাটাল জন্ডিস তেমন কিছু না, তারপরেও সন্দেহ থাকলে এইখানে আনেন, বাচ্চা মা এক কেবিনেই থাকবে, কেবিনেই দেড় দুদিন ফটো থেরাপী দিয়েন। সন্ধ্যায় পিচ্চিরে অনেক ঝামেলার পরে ঐখান থেকে বের করে নিয়ে ল্যাবএইডে নিয়ে গেলাম, দুইদিনের ফটোথেরাপী আর কিছু না, কোনো স্যালাইন ফ্যালাইন না, কোনো মেডিকেশন না। দুইদিনের মাথায় বাসায় নিয়ে গেলাম।

সিজারের সাথে ফটোথেরাপীর নামে পাঁচদিনের প্যাকেজ, এইটা আমার পরিচিত অনেকের অভিজ্ঞতায় আছে, স্কয়ারের জঘন্য বিজনেস ট্রিকস এর একটা।

tanjim এর ছবি

এইটা খুব কমন ট্রিক্স............রোগীকে ICU,HDU,CCu নিয়ে গিয়ে ফ্যামিলিকে চাপ দিয়ে টাকা বের করান...আর কিছু না পেলে স্যালাইন ঝুলিয়ে দিয়ে ২ দিন বসিয়ে রাখবে

রু (অতিথি) এর ছবি

প্যাকেজের ব্যাপারটা বুঝলাম না। অসুস্থ অবস্থাতো তিন কি ছয় দিন মেপে থাকে না। তাহলে চিকিতসার ক্ষেত্রে দিন নির্দিষ্ট করা যায় কীভাবে?

শামীম এর ছবি

বাবার মৃত্যূর আগের তিনদিন মনে পড়ে গেল। হায়রে ডাক্তার আর হাসপাতাল!

এম্বুলেন্সের জন্য কিছু সার্ভিস আছে। শমরিতা হাসপাতালের পাশে, আলিফ এম্বুলেন্স সার্ভিস - বেশ ভাল সার্ভিস মনে হয়েছিল।

নিজেদের জন্য হোমিওপ্যাথি -- এর ঔষধ তৈরী হয় আমেরিকা আর জার্মানিতে, মূল ডেভেলপমেন্ট জার্মানিতে, ব্রিটেনের রানীর চিকিৎসা চলে এটাতে, তাও পাবলিক কেন জানি এটারে পাত্তা দেয় না!!

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রাগ ইমন  এর ছবি

কিছু সত্য কথা ঃ
১। যতদিন পর্যন্ত ডাক্তার ও হাসপাতালের শাস্তি না হবে, প্রতিটা wrongful treatment এর জন্য , ততদিন পর্যন্ত কিছু ডাক্তার (ইন্টার্ন বা নিচু লেভেলের ত্যানা, যারা আমার মত, তারা ছাড়া) GODই থাকবেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও এই রকমই থাকবে।
২। যতদিন পর্যন্ত সকলে সিস্টেমের কাছে নিজেদের সঁপে দিয়ে "আল্লাহ বিচার করবে" বলে সান্তনা পেতে থাকবেন, ততদিন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই রকমই থাকবে।
৩। যতদিন আমরা মেনে নিতে থাকবো আর অল্টারনেটিভ হিসেবে পরিবারের কাউকে ডাক্তার হতে বলবো, ততদিন একটি পাতাও বদলাবে না।

ডাক্তার, হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে বলতাম- কিন্তু সেইটা ততোধিক দুর্নীতিপূর্ণ আর ব্যয়বহুল ব্যবস্থা বিধায় মড়ার উপর খাড়ার ঘা নিতে বলতে চাই না।

তাহলে সমাধান?

১। শর্ট টার্মে , নিজেরা বাঁচার জন্য আপাতত পারিবারিক ডাক্তারের মনিটরিং এ থাকা।

২। আর লং টার্মে, কিছু অস্ত্র নিন এবং ডাক্তারদের গুলি করে মেরে ফেলা শুরু করুন। তরুণ কিছু আইনজীবী যদি আইনগত ভাবে লড়তে চান, সুস্বাগতম । তবে, পরিস্থিতি যেখানে এসে ঠেকেছে, তাতে কিছু ডাক্তারের মরাটা জরুরী। তাতে যদি টনক নড়ে!

নিজের এবং পরিবারের অনেকের পেশা ডাক্তারী জেনেও কথাটা বললাম। কারণ নিজের চোখে দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে কি ভাবে স্রেফ অবহেলা করে মানুষ মেরে ফেলা হয় সরকারী হাসপাতালে (প্রাইভেটের অভিজ্ঞতা নাই)। সি এম এইচের ডাক্তার (নিজের আত্মীয়) ওষুধের সাইড ইফেক্ট না পড়ে এপ্লাই করার কারণে নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু। মাসলের অষুধ নার্স ভেইনে দেওয়ার কারণে সুস্থ মানুষ মরে গেলো, অপর নার্স প্রমাণ সরিয়ে ফেললেন ( এইটাও পরিচিত নার্সের কাছ থেকে জানা) ।
এ কথা সত্যি যে আমাদের অনেক টেকনলজি হাতের কাছে নাই। কিন্তু তারপরেও অনেক মৃত্যুর কারণ টেকনলজি নয়, কারণ হলো আমরা (ডাক্তাররা, নার্স, হাসপাতাল) জানি, আমাদের কিছু হবে না।

অনেক অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়, অনেক ভালো ডাক্তার নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। কিন্তু , প্রশ্ন হলো , এইটা তাকে করতে হবে কেন? কেন মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছা কিংবা ব্যক্তিগত চরিত্রের উপর চিকিৎসার মান নির্ভর করবে? কেন, জবাব্দিহিতা থাকবে না? ৯৯ জন ফোকটে বেঁচে গেল, এইটা জরুরী নয়। ১ জন কেন মরলো, এইটার জবাবদিহিতা , কারণ অনুসন্ধান ও শাস্তি বিধান জরুরী।

হাসপাতালে কাজ করার সময় এই সব অরাজকতা ঠেকানোর একটা চেষ্টা করেছিলাম। তাতে করে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মীদের গালি আর আন্দোলনের তোড়ে এবং দলীয় ছাত্র রাজনীতিবিদদের % খাওয়ার লালসার কাছে হেরে গেছি। এই সিস্টেমের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত ভাবে সৎ থাকাও একটা কঠিন লড়াই।

পরিশেষে, রোগীর সাথে ব্যবহার একটা বিরাট ব্যাপার। বাংলাদেশের মানুষ মৃত্যুও বড় সহজে মেনে নেয়। খালি যদি একটু ভালো ব্যবহার তারা পেত! কিন্তু,
- সরকারী হাসপাতালে কেউ কথাই বলবে না
- প্রাইভেটে কেউ সত্যি কথা বলবে না
(যাদের পরিচিত ডাক্তাররা মানুষ ভালো, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এইখানে সিস্টেমের দোষ ফোকাস করা হয়েছে, ব্যতিক্রমী ব্যক্তিদের কথা অন্য ইস্যু)

মারদিয়া এর ছবি

কিছুদিন আগে আমার বড় বোনের বাচ্চা হল স্কয়ারে। আমদের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অফিসিয়াল প্যাকেজ অনুযায়ী রিলিজের দিন এসে বল্ল বেবীর বিলিরুবিন কম(১৭),ফটোথেরাপী দিতে হবে।আমরা বললাম বাসায় নিয়ে রোদে দিব।এটা নাকি অরা পারবে না।মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশী! এরপর NICU তে ২ দিন রেখে ছাড়লো।বিশ্বাস করবেন না, প্রতিবার ন্যাপী বদলানোর জন্য চার্জ নিয়েছে,ন্যাপির দামেরও পরে। আমার নিজের বাচ্চার বিলিরুবিন এর চে কম ছিল।৩/৪ দিন রোদে দিয়েছি, ঠিক হয়ে গেছে।৬৫হাজারের প্যাকেজে ১লাখ ১৫ হাজার আদায় করে ছেড়েছে। এর চেয়ে তো গ্রামের মহিলারা আরামে আছে। এক বছর পর পর বাচ্চা হয় আর ৩ দিন পর থেকে ধান সিদ্ধ করার মত কাজ করা শুরু করে!!

মারদিয়া এর ছবি

কিছুদিন আগে আমার বড় বোনের বাচ্চা হল স্কয়ারে। আমদের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অফিসিয়াল প্যাকেজ অনুযায়ী রিলিজের দিন এসে বল্ল বেবীর বিলিরুবিন কম(১৭),ফটোথেরাপী দিতে হবে।আমরা বললাম বাসায় নিয়ে রোদে দিব।এটা নাকি অরা পারবে না।মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশী! এরপর NICU তে ২ দিন রেখে ছাড়লো।বিশ্বাস করবেন না, প্রতিবার ন্যাপী বদলানোর জন্য চার্জ নিয়েছে,ন্যাপির দামেরও পরে। আমার নিজের বাচ্চার বিলিরুবিন এর চে কম ছিল।৩/৪ দিন রোদে দিয়েছি, ঠিক হয়ে গেছে।৬৫হাজারের প্যাকেজে ১লাখ ১৫ হাজার আদায় করে ছেড়েছে। এর চেয়ে তো গ্রামের মহিলারা আরামে আছে। এক বছর পর পর বাচ্চা হয় আর ৩ দিন পর থেকে ধান সিদ্ধ করার মত কাজ করা শুরু করে!!

sanjida এর ছবি

এরা মানুষের জীবন বাঁচাবে????no offence..but Doctor(90%) দের আমি খুব বেশি hate করি..মানুষের জীবন নিয়ে যা-তা করার পরও এরা বেশ পবিত্র একটা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে..এদের মুখ ভড়ে গালিও দেয়া যায় না..profession টাই এত Nobel!!

অস্পৃশ্যা এর ছবি

আপনার লেখাটা যখন পড়তে শুরু করি তখন একবারও ভাবিনি শেষের দিকে এসে আপনার শ্বাশুড়ির অবস্থা এত খারাপ হয়ে যাবে! এ সময় তারা কি যে অসহায় হয়ে পড়েন, এক নানুকে অসুস্থতার সময় দেখেছি, আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি, তাই একটু আঁচ করতে পারি। কেমন দেশে পড়ে আছি জানি না! আমাদের কি কিচ্ছু করার নেই?

ডাঃ সফদার এর ছবি

ইউএসএ এর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র দেখেছিলাম এখানে...
http://www.imdb.com/title/tt0386032/
এটাতে বিশ্বের অন্যান্য কিছু দেশেরও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র আছে।

আমিও সুযোগ পাইলেই দেশের বাইরে চলে যাব ভাবছি, দেখি দেশপ্রেমের জয় হয়কিনা।

Kalyan এর ছবি

ভয়াবহ, চিন্তা করেই হাত পা পেটের মদ্ধে ঢুকে যাচ্ছে। সেই সাথে রাগে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলছে। এই অবস্থা আমারো হতে পারে যেকোনো সময়। তাহলে তো সরকারী হাস্পাতালে জাওয়াই ভালো? বেসরকারী হাস্পাতালে যেয়ে লাভটা কি??

tanjim এর ছবি

বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না......ঢাকা মেডিক্যালের নোংরা বারান্দায় শুইয়ে আমরা এর চেয়ে ভাল মানের চিকিৎসা দিয়েছি

MIU পাঠক এর ছবি

দিন কে দিন এত এত সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে অথচ সমাধানের কোনো চেষ্টাই করা হচ্ছে না! মন্তব্য করতে করতে ক্লান্ত!
আমরা সবাই একই গোয়ালের গরু, সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে "মাইরের উপর রাখা"! তবে যে হারে জনগণ নুপুন্ক্শুক হয়ে যাচ্ছে এই ওষুধ প্রয়োগ করবে কে?
আমার জানতে ইচ্ছা করে, আমাদের দেশের ডাক্তাররা অসুস্থ হলে কোথায় চিকিত্সা করেন?

miraz এর ছবি

ami peshai akjon doctor. amar mar hat venge giachilo. operation korate hoi. amar oviggotao more or less same. asholai system ar akta change dorkar.

medical college gulate natun doctor ra sheba dite udgrib thake, othocho senior ra fakibajite besto thake. so folafol polapangula koiekdin por fakibaj hoye jai.

specialized hospital gulate shob desise khub seriously nia patient ar manoshikotake venge daya hoi. take bola hoi apni ja korben tatai mara jaben.

privet clinic gulate nurse name kotogula onoviggo mohilake chakri dewa hoi. jader shebar manoshikotao nai, icca o nai. duty doctor ke pray kono khomota dewa hoi na. consultant e shob shidhanto nen, onek somoi rogi na dekhai.

amo akjon doctor hoye o ai desh ar chikitsha babosthai hotash.

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতি। আমার বাংলাদেশের হাসপাতালে ছোটো খাটো অভিজ্ঞতা আছে। যদিও কোনোটাই এমন সিভিয়ার নয়। তবুও আপনাদের দুর্ভোগ অনুধাবন করতে পারছি।

তবে গতবছর আমার স্ত্রী এবং বাবার জন্য আমেরিকার হাসপাতালে প্রচুর দৌড়াতে হয়েছে আমাকে। অসম্ভব খরচ ছাড়া আর সব কিছু ভালো এখানে। সময় করে একবার লিখবার ইচ্ছা রাখি।

মেম্বরের ভায়রা ভাই এর ছবি

গতবছর আমার স্ত্রী এবং বাবার জন্য আমেরিকার হাসপাতালে প্রচুর দৌড়াতে হয়েছে আমাকে। অসম্ভব খরচ ছাড়া আর সব কিছু ভালো এখানে।

বলো কী! জর্মনদেশে তো চিত্র পুরাই ভিন্ন। কালা হও, ধলা হও, ময়না হও, গুলাবী হও— হাসপাতালে একই সেবা পাবা। অন্তত এই একটা জায়গায় কোনো হাদুমপাদুম নাই। আর নতুন মা'দের বেলায় তো কোনো কথাই নাই। তাঁরা ভিআইপি সম্মান/অগ্রাধিকার পান এখানে। তা তিনি যে কোনো ন্যাশনালিটিরই হোন না কেনো! আর খরচের পয়সা? কোনো চিন্তা নাই। পয়সা দিবে গৌরী সেন।

বাবুবাংলা এর ছবি

আমেরিকায় হেলথ রিফর্ম নিয়ে এতো হইচই হয়—শুনেন নাই? বিশ্বমানের ডাক্তার, বিশ্বমানের স্বাস্থ্য প্রযুক্তি সবই আছে। টাকা ঢালতে পারলে কিংবা ভালো ইন্স্যুরেন্স থাকলে সবই পাবেন। আর সেটা না থাকলে হয় চিকিৎসা নাই কিংবা আধমরা হবার পর ইমার্জেন্সী রুমই শেষ ভরসা।

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রাগ ইমন  এর ছবি

পয়সা দিবে গৌরী সেন।

ঠিক বুঝলাম না, এমন ভুল তথ্য কেন দেন? জার্মানীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অর্থায়ন কি ভাবে হয়, কে টাকা দেয়, একটু খোঁজ নিলেই তো জানতেন এই গৌরী সেনরা আসলে কে! ইউরোপের প্রায় প্রতিটা উন্নত দেশে হেলথ ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক। তার মানে সারা দেশের প্রতিটা নাগরিক বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতি মাসে যেই টাকাটা সরকারের কাছে জমা করে, সেই টাকা থেকে এমন মাতৃসেবা পাওয়া যায়।

আর নতুন মা'দের বেলায় তো কোনো কথাই নাই।

এর কারণটাও অর্থনৈতিক, নৈতিক নয়। ইউরোপের দেশ গুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই কম। কিছু দেশে নেগেটিভ। বাচ্চা লালন পালনের খরচ চরম বেশি বলে মানুষ বাচ্চা নিতে চায় না। ফলে, দেশে দেশে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে যেমন বয়স্ক (৬৫+) মানুষের সংখ্যা বা অন্য ভাবে ঘুরিয়ে বললে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে অবসর গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে- অপরদিকে এই ব্যয়বহুল বয়স্ক জনগোষ্ঠিকে লালন পালনের জন্য কর্মজীবী তরূন তরুণির সংখ্যা (জন্মহারের কারণে) কমে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে মাথা ভারী (বয়স্ক) সমাজ নিয়ে যাতে বিপদে পড়তে না হয়, এই জন্য মায়েদের এত খাতির। বাচ্চা নিলে টাকা পাওয়া, উপহার পাওয়া ইত্যাদি এই অর্থনৈতিক ভরাডুবি ঠেকানোর চেষ্টা মাত্র।

আমাদের দেশে প্রতি মিনিটে ৬-৭টা বাচ্চা জন্মায়। তাই মায়ের কোন দাম নাই। দেশ ভর্তি কিলবিল করছে ১৬ কোটি মানুষ। তাই মানুষের জীবনের কোন দাম নাই। ভায়া, সব শেষে ঐ সব কিছুর মূলে ঘুরে ফিরে "ইকোনমিক্স"। মুদ্রার এই পিঠটাও মনে রাখা দরকার।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

স্পট অন।
বেতনের ১৪% হেলথ ইন্সুরেন্সে যায়। বাচ্চার জন্য টাকা পাওয়ার কেসও তাই। তবে বাচ্চা মানুষ করার ব্যয়ও অনেক।

ওভারঅল, জার্মানির হেলথ কেয়ার সিস্টেমে আমি সন্তুষ্ট। অপেক্ষাকৃত কম খরচের দেশ হিসেবে এদের সিস্টেম মারাত্মক রকমের এফিশিয়েন্ট।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

রাগ ইমনের সাথে একমত শুয়োরের বাচ্চাদেরকে খুন করা ছাড়া উপায় নেই। তারা মানুষের জীবন নিয়ে ঠ্যাক দেয়, তাদেরকেও ঠ্যাক দেয়া শুরু করতে হবে।

সাধারণ রোগে ডাক্তারের কাছে না যাওয়াই ভালো, গিয়ে কোনো লাভ হয় না, সর্দি-কাশি-জ্বর-মাথাব্যথায় এমনিতেই ওষুধ লাগে না। বড়ো ধরনের রোগে সাথে সাথে বিদেশে যান। আর যারা ভুক্তভোগী আল্লার নামে কয়েকটা লাশ ফেলে দেন, নিদেন পক্ষে আজীবন পঙ্গু করে দেন, খবরের পাতায় আসুক। বেশি কিছু লাগবে না, নিজে না পারলে রাব, পুলিশ বা সন্ত্রাসীদেরকে কিছু টাকা দিয়ে দেন, কাজ হওয়া উচিত। বাকি হারামজাদাগুলো কয়েকদিন হরতাল ধর্মঘট করবে, পাত্তা দিয়েন না, আমরা শালার জনগণ এমনিতেও মরছি, অমনিতেও মরছি।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

বাবুবাংলা এর ছবি

চিকিৎসকের ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় পেশাগত অবহেলা আমাদের অসহায়ত্বকে বড় করে তুলে ধরে। অবশ্য পেশাগত এমন অবহেলা কোন ক্ষেত্রে নাই? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আর্মি, পুলিশ, বাস ড্রাইভার, দোকানদার- কে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে ছাড়ে? আমরা আমাদের সবচেয়ে দুর্বল সময়ে ডাক্তারের মুখোমুখি হই বলে ডাক্তার আর হাসপাতালের অবহেলা আমাদের সবচেয়ে বেশী আঘাত করে।

শর্টকার্ট কোন সমাধান নাই।
সামাজিক-অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত না করে শুধু স্বাস্থ্যবীমা চালু করে দিলেই সমাধান নাই।
বীমা কোম্পানীও ডাক্তার-হাসপাতালের মত সাক্ষাৎ যম হয়ে দেখা দিতে পারে।

চাই শিক্ষা--দেশ জুড়ে লক্ষ কোটি সংবেদনশীল মানুষ।
বৈধ-অবৈধ যে পথেই আসুক, চাই আকাশ ছোঁয়া দেশীয় পুঁজি।
পুঁজির স্বার্থ রক্ষায় এক সময় দরকার হবে আইনের শাষন, দরকার হবে পেশাদারিত্ব।
আমাদের এই অসহায়ত্বের মধ্য দিয়েই সময় এগিয়ে যাবে।
যে দেশে যে সময়ে বসবাস করছেন, কষ্টসাধ্য এই পরিবর্তনের ঘানি টেনে নেয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই।

মায়ের সুস্থতা কামনা করি। পরিবারের সবার জন্য সমবেদনা।
মায়ের ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি তীব্র করে তুলুক আমাদের পরিবর্তনের প্রয়াস।

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

Jamshed এর ছবি

পড়ে খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতালে আমার অভিজ্ঞতা ভালো. পারলে ওনাকে ওখানে নিয়ে যান

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

রেজওয়ান ভাই, পড়লাম, মন খারাপ করলাম। আর সান্তনা দিলাম না।
কী বলবো? বাংলাদেশের ডাক্তার আর সেবা পদ্ধতি নিয়ে গত ১২ বছরে মেলা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেগুলা আর বললে একই কথা রিপিট করা হবে। তবে এর মাঝেই খুব ভালো সেবা আর ডাক্তারের দেখাও পেয়েছি।
আমাদের এখানে কোন ডাক্তার ভুলেও আপনাকে অন্য ডাক্তারের কাছে রেফার করতে চাবে না, যদি সমস্যা হয়ে থাকে কিডনির আর আপনি গিয়ে থাকেন হার্ট স্পেশালিস্টের কাছে, তাও!

তবে একটা কথা বলি, একটা জিনিস দেখেছি, যেকোন এমারজেন্সীতে আগে উচিত সরকারী জায়গায় নেয়া। আমাদের দেশে ডাক্তারের মাথাপিছু রোগী অনেক বেশি, ডাক্তারের বেতন অন্যসব কর্মকর্তাদের মতোই কম। কাজেই তাদের মেজাজ ও ব্যবহার চাইলেও ভালো রাখার উপায় আছে কিনা সেই সন্দেহ লাগে।

তাও, সরকারী জায়গায়, বিশেষ করে মেডিকাল কলেজের হাসপাতালে ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা অনেক অনেক বেশি। নার্স ও হসপিটাল স্টাফদেরো। আরো একটা প্লাস পয়েন্ট হলো মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে সব সময়ে ইন্টার্নরা থাকে।
তবে পারলে অবশ্যই পরিচিত ডাক্তার নিয়ে যাওয়া, বা ঐখানে দাঁড়ায়ে হম্বিতম্বি করার জন্যে কারো থাকা দরকার, তাহলে হাসপাতালের দালালেরা অত সুবিধা করতে পারে না। আর কেবিন-বেড ইত্যাদির ব্যবস্থা হয়, যদি অ্যাভেইলএবল থাকে আরকি। তাও সরকারী হাসপাতালের মেঝের সেবাও এইসব খান্দানি ফ্যাকমের জায়গা থেকে ভালো!

আমার নবীন ডাক্তার বন্ধুদেরকে দেখছি, এদের উপরে কী রকম চাপ যায়। আর কী অসীম ধৈর্য্যশক্তির পরীক্ষা তারা দিয়ে চলে সরকারী জায়গায় পলিটিকাল আর প্রফেশনাল চাপের মুখে। কিন্তু ওরা অনেকেই হতাশ হয়ে যেতে গিয়েও হয় না, বলে নাকি এভাবেই করতে হবে। তাদের ডেডিকেশন দেখে মনে হয় যে নাহ, দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান একসময়ে ঠিক হবে ইনশা-আল্লাহ। কিন্তু সংখ্যার তুলনায় ডাক্তার নার্স এত অপ্রতূল যে শত শত রোগী হ্যান্ডেল করতে গিয়ে তাদের ব্যবহারও খারাপ হয়ে যাওয়া দেখে স্বাভাবিক লাগে! আমাদের অনেক অনেক ডাক্তার প্রয়োজন, আর ডাক্তারের থেকেও বেশি দরকার নার্স! আর সরকার নার্সদের ট্রেইনিং।

ইন্ডিয়ায় দেখেছি একটা জিনিস, ফ্যাকমের এসি প্যাথলজি সেন্টার বা হাসপাতাল না থাকলেও ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা আর আচরণ ভালো। ওদের এখানে জবাবদিহিতা করতে হয়। আমাদের এখানে সেই জবাবদিহিতা চাওয়ারো কোন ফোরাম নাই। করতে দেবে না। আমাদের এখানে ডাক্তাররা পলিটিক্স করেন।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ডাক্তারদের ওপর চাপের কারণ ২০% রোগীর সংখ্যা, ৮০% তাদের দ্বারা সৃষ্ট সিস্টেম। অনেক রোগেই মূলত কোনো ওষুধ দরকার হয় না। আমাদের ডাক্তাররা ভুল ওষুধ খাইয়ে রোগটাকে আরো কম্প্লিকেটেড করে, তখন আরো চাপ বাড়ে, পয়সা বাড়ে। টেস্টের ক্ষেত্রে টু দ্য পয়েন্ট থাকে না, যেসব টেস্ট দরকার নেই, তাও ধরিয়ে দেয়, নোতুন নোতুন রোগ আবিষ্কার করে। এই পোস্টেই তার উদাহরণ আছে। [আগের বার দেশে গিয়ে আমার কাঁধ ব্যথার জন্য যে ব্লাড টেস্ট দিয়েছিলো, তার রেজাল্ট অনুসারে আমার কিডনি আরো বছর দশেক আগে গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা। ডাক্তার অবশ্য জিনিসটা বুঝেছিলেন, টেস্ট রিপিট করতে দিয়েছিলেন বাড়তি টাকা ছাড়া।] এভাবে নোতুন নোতুন রোগ আবিষ্কারের ধাক্কা তো ডাক্তারকেই সামলাতে হবে। হাসি

তবে এটা সামলিয়ে তার তেমন লস নাই, যতো ধাক্কা, ততো টাকা। সর্দির রোগীকে কিডনি ফেইলিওরের কেসে ফাঁসাতে পারলে যেখানে শুধু ডাক্তার ফি ৩০০-৪০০ টাকায় কাজ শেষ হতো, সেখানে অন্তত লাখ পাঁচেক নামিয়ে ফেলা যায়।

সেবাও দেয়া হয় না সঙ্গত কারণে। সেবা পেলে রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, ভালো ব্যবহার পেলে রোগী সহজে টাকা খসাতে রাজি নাও হতে পারে, রোগের প্রকৃত অবস্থা জানলেও একই কেস। রোগী = অপহৃত, ডাক্তার = অপহরণকারী, টার্গেট মুক্তিপণ, যতো চাপ, ততো লাভ - এভাবে ধরলে কারণটা বুঝা সহজ হয়।

এখানে আরেকটা কমন জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, রোগের সম্পর্কে বেশি প্রশ্ন করলে ডাক্তাররা উত্তর না দিয়ে কার ডাক্তারি সার্টিফিকেট আছে, সেটা দেখিয়ে দেয়। এটার ব্যাখ্যা সোজাসাপটা। অ্যাবস্ট্রাক্ট লেভেলে একটা কল্পিত রোগাবস্থা বলা যায়; কিন্তু গল্পের পুরা চেইন কমপ্লিট করার জন্য যে পরিমাণ এফোর্ট দিতে হয়, তা উনাদের সামর্থের বাইরে। সুতরাং, ঝাড়ি মেরে বাজিমাত।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

খবর এর ছবি
ojroninad এর ছবি

আমার ভাই এর রোগ ধরতে না পেরে শুওরের বাচ্চাগুলা বলছিল যে ওর মানসিক সমস্যা আছে। সলিমুল্লার একটা কুত্তার বাচ্চা নিউরোসার্জন আছে। ওইটা এই কথা বলছিল। মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করে অনেক টাকা আদায় করছে। প্রতিদিন এক মিনিট এর জন্য আসতো আর একটা করে নতুন মেডিসিন দিয়ে যেত। তবে সলিমুল্লার আরেক মেডিসিন এর ডাক্তার ওর ট্রিটমেন্ট করে ভালো করেছিল। ঊনি পপুলার এ বসেন। আমাকে বলেছিলেন পপুলার এ ভর্তি না করে যাতে সলিমুল্লাতে ভর্তি করি, রোগ ধরতে না পারা পর্যন্ত ঊনি কোন ফী নেননি। সলিমুল্লায় ভর্তি করে পরে আমার ভাই ভাল হয়েছিল।

মুহাম্মাদ হক এর ছবি

এ বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার হবার সময় এসেছে। শুধু সচলায়াতন নয়, সব পাঠকদের মাঝে এ তথ্য ছড়িয়ে দিন, এবং আসুন ... রাজনীতির জন্য রাজপথে না নেমে সমাজকে বাঁচাতে রাজপথে নামি।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

খুব প্রয়োলনীয় একটি পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ। আশা করি আপনার আত্বীয় ভালো হয়ে যাবেন, ইনশাল্লাহ।

মাহবুব  এর ছবি

আর ও দিন সামনে বাকী অাছে । যখন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কিনে মেডিকেলে চান্স পাওয়ারা পুরা ডাক্তার হবে তখন । তারা ডাক্তার না হওয়া পর্যন্ত যা আছে তাকেই উপর ওয়ালার আশির্বাদ ধরে নিতে হবে ।আশির্বাদ ই যখন এই , সামনে না জানি কি .............

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।