রসে-বশে -০২

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: রবি, ০৭/০৩/২০১০ - ২:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দোহাইঃ এটা কোন ধারাবাহিক লেখা নয়। একই ধরণের লেখার জন্য প্রতিবার নতুন নতুন নাম খোঁজার ঝামেলা এড়াতে শিরোনামের পরে ক্রমবাচক সংখ্যা বসানো হয়েছে। অনিয়মিত এই সিরিজের প্রত্যেকটি লেখা মাসুদ রানার মত স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাঠকের পক্ষে আমার “নতজানু মনন, অপচিত মেরুদণ্ড” সিরিজের সাথে এই সিরিজের মিল পাওয়া আশ্চর্যের কিছু না।

গত বিশ বছরে অনেকগুলো ব্যাপার আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। আমরা জানি কেউ সরকারে থাকলে তাদের দল আমাদের উপর চোটপাট করবে, বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে; ক্ষমতায় থাকা আর তাদের কাছের লোকজন দুর্নীতি করবে, ব্যাপক লুটপাট করবে। এমনকি ক্ষমতার পাঁচ বছরের মধ্যে কোন্‌ বছরে কোন্‌ ধরণের দুর্নীতি হবে তাও আমরা জেনে গেছি। আমরা জানি, কখন নতুন ব্যাংক-বীমা পারমিশান পাবে, কখন ফ্ল্যাট-প্লট বরাদ্দ হবে, কখন একনেকে আজগুবী সব প্রকল্প পাশ হবে, কখন বাজেটে নানা প্রকল্পে থোক টাকা বরাদ্দ হবে।

আমরা জানি, এই সময় কালে রেডিও-টিভি-সভায় সরকার কী বলবে, কোন কোন সাংবাদিক আর সংবাদপত্র সরকারের পক্ষে যাবে, কারা বিপক্ষে বলবে, কারা শুরুতে আর কারা শেষে ডিগবাজী দেবে। আমরা এগুলোতে আর অবাক হই না। আমরা অবাক হই না যখন এবারের নির্বাচনে আগের সরকারী দলের ভরাডুবী হয়, আরো পাঁচ বছর পর এবারের ভূমিধ্বস বিজয়ীরা ভূপাতিত হয়। আমরা এতেও অবাক হই না যখন সরকার তার যাবতীয় অক্ষমতার জন্য পূর্ববর্তীদের ঢালাও দোষারোপ করে, পূর্ববর্তীদের হামলা-মামলা করে দৌড়ের উপর রাখে। আমরা জানি কখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো কাদের দখলে যাবে, কখন কাকে চাঁদা দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। আমরা আরো জানি মাঝে মাঝেই উত্তর পাড়া থেকে কেউ কেউ এসে জেহাদী জোশে দুর্নীতি রোধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। মানবতা, গণতন্ত্র, লজ্জাবোধ, মূল্যবোধ তখন ধুলায় লুটাবে।

আমরা এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের কোন কিছুতেই কিছু যায় আসে না। সরকারের ভাষ্যকে সবাই যখন সচরাচর অসত্য বলে জানেন, সরকারের ফিরিস্তিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন, সরকারের আশ্বাসে যখন কেউ আস্থা স্থাপন করেন না তখন সরকারের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা থাকেনা, নৈতিক ভিত্তিও থাকেনা। প্রায়ই দেখা যায় আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সাথে কিছু কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন। অনেকের বিরূদ্ধে দেশবিরোধী ভয়ঙ্কর সব ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কথাও জানা যাচ্ছে। এতে দেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই তার সাথে সরকার নামক প্রতিষ্ঠানটির ক্রেডিবিলিটি শূন্যের কোঠায় ঠেকছে। মানুষ জানে এখন যারা দুর্নীতিগ্রস্থদের বিচার করছে আগামীতে তারাও একই ধরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে।

তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই বেহাল দশায় আমরা বিচলিত হই না। আমরা জানি এই ব্যবস্থাটা এমনই। কিন্তু আমরা এর কোন বিকল্প ভাবতে চাইনা, অমন কোন চেষ্টাও আমাদের নেই। আমরা জানি, রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রটি দেশের সিংহভাগ মানুষের পক্ষে নয়, বরং অনেকাংশেই লুটেরা চরিত্রের। এখানে পাঁচশ টাকা ঋণ করলে নাকের নথ বা ঘরের টিন খুলে নেয়া হবে, কিন্তু হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না দিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়ানো যায়, মাতব্বরী করা যায়। এখানে ব্যাংকে টাকা রাখলে টাকা বাড়েনা, বরং এই চার্জ সেই চার্জের নামে টাকা কেটে কেটে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীর তহবিলকে শূন্য করে দেয়া হয়। এখানে ডাক্তার, আইনজীবি বা কনসালটেন্টদের ফী দিলে রশিদ পাওয়া যায়না। এখানে কর আদায়ে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টার চেয়ে করের নতুন ক্ষেত্রে আবিষ্কার করা আর করের হার বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

রাষ্ট্র যখন ভিন্ন কোন রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে, আমরা জানি সেসব চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে আমাদের চেয়ে প্রতিপক্ষের জন্য অধিক লাভজনক হবে। আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা অবাস্তব সব প্রস্তাব নিয়ে কোমর বেঁধে লড়ব যার শেষে আমাদের কপালে কিছুই জুটবেনা। আমরা কিনতে গেলে ঠকি, বেচতে গেলেও ঠকি। বিদেশে আমাদের সাথে অন্যায় আচরণ করা হলেও আমরা মাথা নিচু করেই থাকি, মেনে নেই।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা যখন দেশের বিদ্যমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখায় আমরা তখনও চুপ। এতে নিরীহ মানুষের প্রানহানী হলেও আমাদের মুখে রা নেই। রাষ্ট্রের নিবর্তনমূলক চরিত্রের পরিবর্তনের ব্যাপারে আমাদের কোন ভাবনা নেই। আমরা দেশ নিয়ে ভাবিনা, ইতিহাস নিয়ে ভাবিনা, রাষ্ট্র নিয়ে ভাবিনা, দেশের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবিনা, সবার লাভ নিয়ে ভাবিনা।

তাহলে আমরা কী নিয়ে ভাবি? আমরা বড্ড আত্মকেন্দ্রিক। ভাবি কোনটাতে একান্ত নিজের কিছু লাভ হবে। কী করলে লাভের ভাগ আর কাউকে দিতে হবেনা। দেশের বা দেশের ইমেজ নিয়ে ভাবার চেয়ে আমরা নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবতে বেশি ভালোবাসি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থ উদ্ধার করার চেয়ে নিজের ক্ষুদ্রতর লাভই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা “নিজে বাঁচলে বাপের নাম” বলতে পারে তাদের কাছে দেশ-জাতি বহুদূরের ব্যাপার।

আমরা কোন রকম ঝামেলায় যেতে চাইনা, ঘরে বসে বা রেষ্টুরেন্টে বসে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে চাই। জীবনে এক আধবার একটা মানব-বন্ধন বা নিরব প্রতিবাদ ধরণের কর্মসূচীতে গেলে সেই গল্প নাতি-নাতনিকে পর্যন্ত বলব। আর গল্প বলার এত বিষয় থাকতে নিজে গল্প হতে যাব কেন? আমরা রসে-বশে থাকব, মধু খাব, কিলও খাব কিন্তু রা কাড়বনা ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্তনা আমার মধুটা অন্যে চেটে খায়। আবার রা করতে গেলে সেই রা-এর জোরও খুবই কম হয়। আমাদের হাত-পায়ের মত আমাদের কন্ঠও রসস্থ।

খুব আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে, এই স্বার্থপর মানুষগুলোর এক প্রজন্ম আগের মানুষগুলো নিজেদের জান বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল! মাত্র এক প্রজন্মে একটা মুক্তিযোদ্ধার জাত তেলাপোকার জাত হয়ে যায় কীভাবে!


মন্তব্য

পুতুল এর ছবি

আরেকটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু করবেটা কে!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কারো বিপ্লবতো কেউ করে দেয়না বস্‌, যাদের বিপ্লব তাদেরই করতে হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব আশ্চর্য লাগেএই ভেবে যে, এই স্বার্থপর মানুষগুলোর এক প্রজন্ম আগের মানূষগুলো নিজেদের জান বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল! মাত্র এক প্রজন্মে একটা মুক্তিযোদ্ধার জাত তেলাপোকার জাত হয়ে যায় কীভাবে!

এইখানে আমার একটা একান্ত ব্যক্তিগত মতামত আছে। বাঙালিরা হুজুগে জাতি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়জন বুঝে যুদ্ধে গিয়েছে, আর কয়জন না জেনে-বুঝে গিয়েছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা কি এটা চিন্তা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর যেটা হবে, তা হল নিজের দেশের পরিচিত মানুষদের হাতে শোষিত হবে? মনে হয় না। তাদের সামনে একটা লক্ষ্য ছিল, দেশকে স্বাধীন করতে সবাই ঝাঁপিয়ে পরেছে, আমাদেরও যাওয়া উচিত। আর কিছু মানুষ গিয়েছিল, তাদের আত্মীয়দের হত্যার প্রতিশোধস্পৃহায়, আর একটা অংশ গিয়েছিল পুরো পরিস্থিতি বুঝে।
কিন্তু, যারা মূল পরিকল্পনা করেছিলেন, সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের খুব দুর্ভাগ্য তাদের আমরা বেশিদিন পাইনি। নিজের দেশে তারা নিজের ভাইদের হাতে নিহত হন। আর সাথে সাথে দেশের যে সোনালী স্বপ্ন দেখে নেতারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের স্বপ্নের রক্তাক্ত সমাধি।
এরপর যারা থাকলেন, তারা সুযোগসন্ধানী হয়ে পরলেন। নিজের আখের গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন, আর আমরা সাধারণ জনগণ পরে পরে থেকে মার খেতে লাগলাম সবক্ষেত্রে। চোখের সামনে উন্নয়নের মূলো ঝুলিয়ে নেতারা পাঁচ বছর পর পর ভোট নামের অমূল্য বস্তুটি নিয়ে যান আর নিজের উন্নয়নে নিয়োজিত হন।
তার ফাঁকে আমরা যদি কোন ভালো কিছুর পরিকল্পনা করি, তাতেও এসে বাগড়া বসায় আমদের প্রভুরা এডিবি'র মুখোশের আড়ালে। নিজেদের মূলধনে একটা সেতুও তৈরি করা যাবে না। এ দেশ থেকে ঋণ নিতে হবে, ঐ দেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনতে হবে। সেতু থেকে যে টোল উঠবে, সেটা ঐ দেশই নিয়ে যাবে, আমরা পাবো কাঁচকলা। এ প্রস্তাবে আমরা, জনগণের ভাবনার কোন অবকাশই নেই। নেতারা পাঁচতারা হোটেলে ঠান্ডা হাওয়ায় খেতে খেতে একটা আনকোরা গাড়ির চাবি হাতে পান, আর একটা চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে আমাদের দেশটাকে ভিন্ন একটা কোম্পানির হাতে বিকিয়ে আসেন। এভাবেই চলছে দেশ।

লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।

- মুক্ত বয়ান

হাসিব এর ছবি

বাঙালিরা হুজুগে জাতি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়জন বুঝে যুদ্ধে গিয়েছে, আর কয়জন না জেনে-বুঝে গিয়েছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।

বলেন কি! তার মানে বলতে চাইছেন কিছু লোক অস্ত্র হাতে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলো হুজুগে বা কিছু না বুঝেই ?

অতিথি লেখক এর ছবি

নাহ। তা বলতে চাই নাই। বলতে চাইছি, কয়জন পুরো ব্যাপারটা বুঝে অংশগ্রহণ করেছিল, সেটার কথা।
তখন যারা নেতৃত্বে ছিলেন, তাদের অনুপ্রেরণায়, বিজাতীয় শাসকের শোষণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে, নিজের একটা দেশের দাবিতে তখন যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু, পরবর্তিতে কি হবে, সেটা নিয়ে কয়জনে ভেবেছিলো?
তখন কি কেউ এটা ভেবেছিল, আমরা আসলে পাকিস্তানি শাসকের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশি শাসকের হাতে শোষিত হবো? মনে হয় না।
আমার পয়েন্টটা হল, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সবাই ভেবেছি নিজের একটা অস্তিত্ব, নিজের একটু মাটি। কিন্তু, অর্থনৈতিক মুক্তি; সেটার কথা আমরা কেউ আসলে ভাবিনি।

[অবস্থানটা ঠিক পরিস্কার হল কিনা বুঝতেছি না।]

- মুক্ত বয়ান

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তখন শ্লোগান ছিলো একটাই, "বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো"।

এই স্বাধীন করার বছর কুড়ি পরে গণতান্ত্রিক সরকার এসে জায়গা-জমি-টাকা-কড়ি নিয়ে পরষ্পর কামড়া-কামড়ি করবে, এই চিন্তা তো স্বভাবতঃই তখন কারো মাথায় আসার কথা না। পরের ভাবনা ভাবা তখন সময়ের দাবী ছিলো না, সময়ের দাবী ছিলো যুদ্ধে যাওয়া এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করা। সমাপ্ত।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধূগোদা, ঠিক এই কথাগুলোই বলতে চাইছিলাম। সময়ের দাবি মেটাতে সবাই অংশগ্রহণ করেছিলো। এবং তারই ফলশ্রুতিতে আমরা এই দেশটা পেয়েছি।
এরপর যারা দেশটাকে একটা সুসংহত অবস্থানে পৌছে দেবার মত ছিলেন, তাদের কেউই সময় পেলেন না। না তাজউদ্দিন, না বঙ্গবন্ধু। রয়ে গেলো যারা, তারা এখন লুটেপুটে খাচ্ছে।

স্বাধীন করার বছর কুড়ি পরে গণতান্ত্রিক সরকার এসে জায়গা-জমি-টাকা-কড়ি নিয়ে পরষ্পর কামড়া-কামড়ি করবে, এই চিন্তা তো স্বভাবতঃই তখন কারো মাথায় আসার কথা না।

এটা তখন কেউ দু:স্বপ্নেও ভাবতে পারছে বলে মনে হয়না।

- মুক্ত বয়ান

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আপনার সাথে সহমত, মুক্ত বয়ান। বাঙালী অত্যন্ত আবেগপ্রবণ জাতি, আমাদের ক্ষেত্রে আপনার এই বিশ্লেষণ অনেকটাই প্রযোজ্য মনে হয়।

ফারাবী

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

- মুক্ত বয়ান

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তারা মুক্তিযুদ্ধকে কী বলে জানেন? "গণ্ডগোল"! এই গণ্ডগোলের মানে হচ্ছে দুই দলে মারামারি-কাটাকাটি করেছিল যেখানে দু'দলেরই কম-বেশি দোষ আছে। গণ্ডগোলের শেষে একদল জিতেছিল। এখন গণ্ডগোল নাই, তাই গণ্ডগোল নিয়ে কথা তোলারও দরকার নাই, সব চুকে বুকে গেছে।

"এইখানে আমার একটা একান্ত ব্যক্তিগত মতামত আছে। বাঙালিরা হুজুগে জাতি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়জন বুঝে যুদ্ধে গিয়েছে, আর কয়জন না জেনে-বুঝে গিয়েছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ"।

এই রকমের থিয়োরী দেখলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের "গণ্ডগোল থিয়োরী"র কথা মনে হয়। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, জান বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। আর সেটাকে বোঝা না বোঝার ফেরে ফেলে তাকে প্রশ্নের বাণও মারা হল! কে সেই অর্জুন?

হুজুগে পড়ে মানুষ মজার কাজ করতে যেতে পারে। নিজের জান খোয়ানোর কাজেও যে মানুষ হুজুগে পড়ে নেমে যেতে পারে তাও জানলাম। তাও এক জন দুই জন না লাখে লাখে। এ'থেকে এ'ও বুঝলাম বাঙালী যদি ভালো জানতো-বুঝতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধে জড়াত না।

ভাগ্যিস আমার পিতার প্রজন্ম জানতেন-বুঝতেন কম। তাইতো তাঁরা হুজুগে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছিলেন। তাঁরা বেশি বুদ্ধিমান হলে আজ আমাদের কী দশা হত?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মন্তব্যটা এইরকম বির্তকিত হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারি নাই। আমার কথার মূল ব্যাপারটা আমি পরিস্কার করতে পারি নাই, সেটা আমার ব্যর্থতা। আর, ভূলগুলা ধরিয়ে দেবার জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। পরবর্তীতে এইরকম আর বোকার মত মন্তব্য আর করবো না।

এক এক করে বলি। মুক্তিযুদ্ধকে যারা গন্ডগোল বলে সে ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চায় বা, সে সময়কালে করা অন্যায়গুলোকে ধামাচাপা দিতে চায়, তাদেরকে আমরা চিনি। তাদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা এমনই নির্লজ্জ জাতি, নিজেদের পিতৃহত্যার বিচার করতে আমাদের ২ বার ক্ষমতায় আসতে হয়, থাক তো অন্যদের কথা, যারা জাতির পিতাকে অস্বীকার করে।
তাই, আমরা এখনো সেই সময়ের কথা তুলি, বার বার তুলি, সেই সময়ের বরাহদের বিচার চাই। অথবা সোজা কথায় বললে, "বরাহশিকারে যেতে চাই"।

আমার থিয়োরীটা ভাইয়া একটা লাইনে কেন্দ্রীভূত ছিল না। পুরো ব্যাপারটা আসছে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এখনো মুক্ত হতে না পারার আক্ষেপ থেকে। এখানেই বোঝাবুঝির কথাটা বলছিলাম, "আমরা আসলে ভিনদেশী শোষকের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশি শোষকের হাতে পরছি। আর বার বার পরে পরে মার খাচ্ছি। গরীব গরীবই থেকে যাচ্ছি, ধনীর গোষ্ঠী তাদের ভান্ডার আরো সমৃদ্ধ করছে।"

পুরো ব্যাপারটা ঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করতে পারার জন্যে আবারও দু:খিত।

- মুক্ত বয়ান

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাদের পরবর্তী ব্যর্থতাগুলোকে জায়েজ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধকে হুজুগে কাণ্ড বলার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। তখন যা হইছিলো, তা ঠিকই ছিলো।

আপনার কথাও যদি সত্য মানি, তাইলে তখন তিনখান হুজুগ ছিলো।
১) যুদ্ধ করা
২) শরণার্থী হওয়া
৩) রাজাকার হওয়া
তো এই তিন হুজুগে তখনকার বিচারে সবচেয়ে নিরাপদ ছিলো রাজাকার হওয়া, তারপরের নিরাপদ শরণার্থী হওয়া। এই দুটো বাদ দিয়ে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নামছে, তারা হুজুগের ধার ধারে নাই।

মুক্তিযুদ্ধে হুজুগের কোনো জায়গা নাই। যারা যুদ্ধ করছে আর যারা বিরোধীতা করছে, সবাই জেনে বুঝে বিশ্বাস থেকেই করছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পরবর্তী ব্যর্থতাগুলোকে জায়েজ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধকে হুজুগে কাণ্ড বলার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। তখন যা হইছিলো, তা ঠিকই ছিলো।

আপনার কথায় আমার বক্তব্যের ভুলটা বুঝতে পারলাম। আরো পরিস্কার করে বললে তখন আমার কথার টোনটা বুঝতে পারতেন। আমি দু:খিত, ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি।

তবে, ২নং আর ৩নং টা হুজুগ ছিল না। একটা ছিল বাধ্যবাধকতা, আর পরেরটা ছিল সুবিধাবাদী মতবাদ আর, পা চাটা অনুসারিত্বের প্রমাণ।

- মুক্ত বয়ান

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা রসে-বশে থাকব, মধু খাব, কিলও খাব কিন্তু রা কাড়বনা ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্তনা আমার মধুটা অন্যে চেটে খায়। আবার রা করতে গেলে সেই রা-এর জোরও খুবই কম হয়। আমাদের হাত-পায়ের মত আমাদের কন্ঠও রসস্থ।

যা বলেছেন। আমরা হলাম অভ্যস্ততার দাসানুদাস। যা দরকার তা হল সমস্যার মূল খুঁজে তাকে উতপাটন করা। না হলে আসলে বকে লাভ নেই। আমরা সবাই জানি সিস্টেমেই গন্ডগোল, এরপরও কারো মধ্যে কোন ততপরতার আভাস নেই। দুঃখজনক। এই যে আমরা সমস্যাটা বুঝছি, অতিব্যস্ত হচ্ছি, দোষী-সাব্যস্ত করছি- তারাই বা কি করছি? কিছুই না, কেউ বলছে আর আমরা তাতে গরম গরম কথায় হয়ত সায় দিয়ে যাচ্ছি। সবাই ধ্যানী হতে চায়, কর্মীর আর খোঁজ নেই।

ফারাবী

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কথার ফুলঝুরি নয়, দরকার আলোচনা করার। আলোচনা না করলে কর্মকৌশলটা কীভাবে ঠিক হবে? আর প্রতিবাদটাও হওয়া উচিত। নয়তো কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সেটাও সবার কাছে স্পষ্ট হবেনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

বিশ বছরে গা-সওয়া হয়েছে বলছেন? প্রক্রিয়াটা কি তার প্রায় দেড় যুগ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়নি?

বিপ্লব করতে গেলে যে ক্রিটিক্যাল ম্যাস লাগে, সেটার জড়ো হওয়াটা কিছু মুষ্টিমেয় লোককে খুশী রেখে বন্ধ করা বা ধীরগতির করে দেয়া যায়। আর তারপরও যারা বিপ্লব ঘটানোর মত মানুষ, তারা নিজেরাই পালিয়ে গিয়ে বিদ্যমান সিস্টেমের জন্য কাজটাকে সহজ করে দেয়।

তাছাড়া জাগতিক নিয়মকানুনও পাল্টে গেছে। আগে মুরুব্বিদের কাছে শুনতাম, বড় মানুষ হতে হবে কারণ, ওই নিজের আখের গুছানো লোকেরা আখেরে ভালো থাকে না। দুর্নীতিবাজ বা ঘুষখোরের ছেলেমেয়েরা মানুষ হয় না, এইসব। আজকাল কিন্তু দেখবেন আখের গোছানো লোকজন সবাই ভালোই থাকে, তাদের ছেলেমেয়েরাও দিব্যি মহামানব হয়ে ওঠে। যেহেতু তাতে ব্যক্তিগত, পরিবারগত এবং ঘনিষ্ঠতার সীমারেখার মধ্যে কোন সমস্যা হচ্ছে না, কারও মাথায় "ঠাডা"ও পড়ছে না, দেশ-জাতির স্বার্থ নিয়ে ভাবার দরকারটা কি?

নচিকেতার গান আছে না একটা, এই বেশ ভালো আছি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধর্ম্মপুত্র, উতরাই বেয়ে নামাটা কখনো পরবর্তী চরাইতে ওঠার প্রস্তুতি, আবার কখনো অতলে হারিয়ে যাবার শুরু। আগের দেড় যুগে আমরা আসলে কী করেছি পরের দুই যুগ বা তার বেশি সময় ধরে সেটাই প্রত্যক্ষ করছি।

এই দেশে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবার মত সামর্থ্য যাদের আছে তাদের চরিত্র থেকে সামন্ততান্ত্রিক অবশেষ উপড়ে ফেলতে না পারলে অন্যকে খুশি রাখার বা নিজে পালিয়ে যাবার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। ছোট বা স্থানীয় পর্যায়ে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডগুলোর চর্চা সম্ভাব্য নেতৃত্বদানকারী মানুষগুলোর এই মানসিক বিকাশ লাভে সাহায্য করে। এই মানুষগুলোর রাজনীতিবিমুখতা বা সংগঠনের সাথে অসংশ্লিষ্টতা বা বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা কাঙ্খিত বিপ্লবেকে কেবল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকেই ঠেলে দেয়।

কেন ভালো কাজ করবো? কেন খারাপ হবোনা? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হয় "নয়তো তাতে স্বর্গসুখ মিলবেনা", তাহলে মানুষ ক্রমাগত খারাপই হবে। কারণ, পরম করুণাময় দুর্বৃত্তকে ক্ষমা করার পথও খোলা রেখেছেন। কিন্তু স্বর্গসুখের তোয়াক্কা না করে নিজের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের দীর্ঘমেয়াদী কল্যানের কথা মানুষ যখন ভাবতে শিখবে তখন মানুষের খারাপ হবার, খারাপ করার প্রবনতাও কমবে। ভালো কাজের নৈতিক ভিত্তিটা সেখানেই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

একটা ব্যখ্যা দিতে চাই এই নির্লিপ্ততার। জাতি হিসাবে বাংলাদেশের নাগরিকেরা উদ্দেশ্যবিহীন। কি করব কেন করব সেটা যেখানে স্পষ্ট নয় সেখানে আদর্শিক মেরুকরনের দরুন সাধারন নাগরিকদের মধ্যে একধরনের দ্বিধা কাজ করে। আদর্শবাদের সাথে কায়েমি স্বার্থের মিশ্রন সাধারনের মধ্যে আস্থাহীনতার জন্ম দেয়। আদর্শ বা মতামত মানুষের পরিচয়ের মাত্রাগুলিকে যদি দাবিয়ে না দেয়, তখনই কেবল সেখানে আস্থার চারা গজাতে পারে, নাহলে না। আপনি যে পর্যবেক্ষন দিচ্ছেন সেখানে সবক্ষেত্রেই আমরা একটা দুর্বল রাষ্ট্রকে দেখতে পাই। আমার টার্গেট সেখানেই। কোথাও যদি শূরু করতে হয় সেখানেই যাব। কিছু সহজ উদাহরন দিতে চাইঃ

চিত্র ১
ড়্যাবকে কেন বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের আশ্রয় নিতে হচ্ছে? স্বভাবতই এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারের এর মাধ্যমে স্বিকার করেই নিচ্ছে যে এখানকার বিচার ব্যবস্থাকে ম্যনিপুলেট করা যায় তাই বিচার ব্যবস্থাকে বাইপাস করার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে এই ক্রসফায়ার। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা মানুষের মনে তৈরি হবার রাস্তাটাকে সরকার দুইলেন থেকে চার লেনে উন্নীত করেছে এই ব্যবস্থায়। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোকে টিকিয়ে রাখাটা আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের স্বার্থেই। কারন বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে গেলে রাজনীতি আর লাভজনক থাকে না। দুঃখজনক ব্যপার হল এই দেশে জাতির জনকের বিচারের জন্য আওয়ামিলীগকে দুইবার ক্ষমতায় আসতে হয়। আর আমরা ধরেই নিয়েছি বিচার ব্যবস্থার শক্তি নেই এই হত্যার বিচার করে। যেখানে জাতির জনকের হত্যার বিচারের জন্য তার কন্যাকে দুইবার ক্ষমতায় আসতে হয় সেখানে একজন দুর্বল নাগরিকের মৃত্যুর বিচার কিভাবে হবে? সেক্ষেত্রে এই দেশের নাগরিক হিসাবে আমার আপনার দেশের বা রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা আসার সুযোগ কেমন?

চিত্র ২
আওয়ামি লীগ এইবার ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নোমানি নামে একজন শিবির ক্যাডার খুন হয়। আনুমান করি সে হয়ত একজন সিরিয়াল কিলার বা পাশবিকতার একটা খুব ঘৃন্য পূর্ব ইতিহাস আছে তার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের। কিন্তু খবরের কাগজ বা প্রচার মাধ্যমে এটাকে সামনে আনা হয়নি। কিন্তু একজন ক্যাডারের বা একজন খুনীর নাগরিক অধিকার কি? তাকে একটা ফেয়ার ট্রায়াল দেয়া যায়নি কেন? তখন সংবাদ প্রচার মাধ্যমে এই হত্যাকে মোটামুটি ইগনোর করা হয়। প্রথমালোর সংবাদে আহত হবার খবর এসেছিল (বা এরকম কিছু একটা; অন্যকোন একটা পত্রিকা থেকে নৃশংস হত্যাকান্ডের কথা জানা গেল), কিন্তু হত্যার ব্যপারটাকে একরকম পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে হয়ত নোমানির মৃত্যুতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, হয়ত সঙ্গত কারনেই। কিন্তু আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতাম যদি নোমানির শাস্তি হত বিচারালয়ে। এরপর কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে সেই নোমানির সমগোত্রীয়রাই হত্যা করে (বলাবাহুল্য আমার কাছে এই ঘটনাটা কিছুটা প্রেডিক্টেবলই ছিল, যেমন প্রেডিক্টেবল ছিল নোমানির মত কারুর হত্যার শিকার হওয়া)। স্বভাবতই এই হত্যার পর সরকারের সচেতনতার পারদ অনেক উপরে উঠেছে। কারন এটা হচ্ছে আসলে খুন, আর আগেরটা ছিল বরাহশিকার। এরপর হাজার হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কাছাকাছি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নিরীহ ছাত্রের মৃত্যু হচ্ছে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা'। এই যে তিনটি হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করলাম এখানে হত্যাকারি আর হত্যার শিকারের পরিচয় বিচার প্রক্রিয়াকে যেভাবে প্রভাবিত করল সেখান থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি সম্পর্কে কি অনুমান করা যায়?

হয়ত বলতে পারেন নোমানিকে নিয়ে কেউ ত আপত্তি তুলল না আমি কেন তুলছি, নিশ্চই নোমানি আমার খালাত ভাই। তাহলে কিছু করার নেই আমার। আমি জানি এই আর্গুমেন্ট হয়ত আক্রমনের সূচনা করতে পারে, কিন্তু বলতেত হবে কাউকে না কাউকে। নোমানি বা তাদের নেতারা কেন বরাহ এবং শিকারের টার্গেট সেটা প্রমানের জন্য সময়ে যুক্তি আবেগ ইত্যাদির মিশ্রন আসে, কিন্তু বরাহশিকার কি কায়দায় হবে? নোমানি বা তাদের নেতারা যেই বিচারে বরাহ সেই বিচারে তাকে যে বা যারা হত্যা করল তারা কি 'বরাহ' থেকে ভাল কিছু? একটু কি বুঝিয়ে বলবেন কেন বা কেন নয়? একটু কি আমাকে বুঝতে সাহায্য করবেন রাষ্ট্রকে দুর্বল রেখে বরাহশিকার হলে সেটার গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবার কোন ভয় আছে কিনা? কেউ কি আমাকে বলতে পারেন যদি নোমানির হত্যা বরাহশিকার হয় তাহলে তার প্রতিশোধ কে কি বলা যায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই ছেলেটাকে হত্যা করা হল সে ছাত্রলীগ করে না বলে আর তাকে ছাত্রলিগের গন্ডগোলে মারা যেতে হয়েছে বলে সেটা বিচ্ছিন ঘটনা (বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদলের গন্ডগোলে মারা গেলে হয়ত তাই হত)। যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র শক্তিশালি হয় সেখানেত তথাকথিত বরাহদের বিচার অবধারিত হবার কথা, কিন্তু পাশাপাশি বরাহশিকারিরাও (প্রতিকী শিকারের কথা বলছিনা, ভুল বুঝবেননা) কিন্তু সেখানে বিচারের মুখিমুখি হবেন এটাই কি সমস্যা? খেয়াল কইরা!

আপনাকে বিব্রত করে থাকলে দুঃখিত পান্ডবদা। আমরা বেশির ভাগই আসলে 'নিরাপদ ব্লগার' থাকতে চাই আমার হয়ত তেমনটা হওয়া হয়ে উঠল না। নাই বা হল! সবাই কি সব কিছু হতে পারে? সমস্যা হল দশজনের চেয়ে এখনো নিজেরে বেশি ডরাই। আমার ভেতরে নিজেকে চোখ রাঙানো একটা সত্ত্বা আছে তাকে মেরে ফেলতে চাইনা। ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

নোমানি পর্যন্ত যেতে হয় না, কিছুদিন আগেই ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের হাতে ছাত্রমৈত্রীর এক ছেলে মারা গেছে রাজশাহীতে। কিন্তু আপনার কচি দিলে নোমানির জন্যে শোকই বরাদ্দ। অন্য উদাহরণ নিতান্তই তুশ্চু ঠ্যাকে। নোমানির খালাতো ভাইও হয়তো আপনার মতো চোট পায়নি বুকে।

আর ক্ষমতার হয়তো এটাই দোষ। শিবিরের সালেহীর হাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর নির্মমভাবে খুন হন, কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে না। নিম্ন আদালত অন্য সবাইকে সাজা দেয়, সালেহীকে ছেড়ে দেয়। রাষ্ট্র আর বিচার নিয়ে হাউ হাউ কান্নাকাটি করা কুম্ভীরের দল এই প্রসঙ্গগুলো চুপচাপ কার্পেটের নিচে চাপা দিয়ে রাখে। কারণ যে কোনো মূল্যেই জামাতশিবিরকে একটা বৈধ দল হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

রাষ্ট্র আর সরকারের সমালোচনা করার জন্যে যে ছাগুবান্ধব হতে হয়, সেটা আপনার কমেন্ট না পড়লে বোঝা যায় না।

আল্লাহ ছাগুদের ভেস্ত নসিব করুন। বরাহদল যুগ যুগ জীয়ে। য়ামীন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

স্পর্শ এর ছবি

রিয়াজ সাহেবের একেই মনে হয় বলে- ধান ভানতে 'শিবির' গীত।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনের সমস্যা কী রে ভাই? সেই কবে থেকেই বুঝার চেষ্টা করতেছি, ধরতেই পারতেছি না। জামাত-শিবিররে কুত্তা, শিয়াল কিংবা বরাহ বা শুয়োর বললে আপনি ছ্যাঁৎ করে উঠেন ক্যান?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অত হতাশ হন কেন স্যার
মাইরটা এখনও টলারেবল রেঞ্জে আছে বলেই ঠিকমতো গায়ে লাগছে না আমাদের তাই রেস্টুরেন্টে গলা ঝেড়ে বাড়ি গিয়ে একটা ঘুম দিতে পারি

ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বোধহয় আমাদের আরেকটু বেশি মাইর খাওয়ার দরকার আছে

হয়ে যাবে
আশা করা যায় আগামী বিশ বছরের মধ্যে হাড্ডিগুড্ডি গুড়া হয়ে যাবার পর শুধু চামড়া নিযে আমরা আবার দাঁড়াতে পারব

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রেগুলার যদি মাইর খান তাহলে আপনার মাইর খাবার টলারেন্স লিমিটটাও কিন্তু বেড়ে যাবে। তাতে গলা ঝাড়ুন আর নাই ঝাড়ুন বাড়ি ফিরে ঘুমাতে অসুবিধা হবেনা।

আরো বেশি মাইর খেতে থাকলে শরীরটা ব্রুসলীর শরীরের মত হয়ে যাবে - সব আঘাতই তখন গা সওয়া হয়ে যাবে।

আর আগামী বিশ বছরে সব হাড্ডিগুড্ডি গুড়া হয়ে গেলে গায়ের চামড়াটাতো হাড্ডির গুড়ার বস্তা হয়ে যাবে। বস্তা কবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্যার?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বোহেমিয়ান এর ছবি

রসে বশে লেখা দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম হাসির লেখা বোধহয় মন খারাপ
কিন্তু যা লিখলেন মন খারাপ
সত্যকথন ।

মাত্র এক প্রজন্মে একটা মুক্তিযোদ্ধার জাত তেলাপোকার জাত হয়ে যায় কীভাবে!

সে দিন পত্রিকায় একজন পাঠক এর কমেন্ট ছিল এই রকম , সংসদের কোটি টাকা শুধু এয়ার কণ্ডিশনিং এই ব্যয় হয়, সেই টাকাটা তারা খরচ করছেন অশ্লীল আলাপ করার জন্য!

আমাদের এই তেলাপোকার জাত হবার পেছনে আমার প্রধান কারণ যেটা মনে হয় সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক সচতেনতার অভাব । আমাদের রাজনৈতিক চেতনা গুলো কিভাবে আসছে? তৈরি হয়?
আমার প্রজন্মের কথা বলি যাদের জন্ম আশির দশকের মাঝামাঝি । ফেইসবুকে এদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গায় লেখা পলিটিক্স ঘৃণা করি , কেউ বা দেয় নি... ।
ইতিহাস পরিবর্তন , নাম পরিবর্তন ...এই সব কারণে দিন কে দিন রাজনৈতিক সচতেনতার পরিমাণ কমছে । কেউ কেউ যাও রাজনৈতিক কথা বার্তা বলে তাও বাবা/মা বড়দের কাছ থেকে বায়াসড হয়ে আসে। মুক্ত চিন্তা করে না । বই পত্র নেট ঘেটে দেখতে আগ্রহী না । ভাবছি আমাদের প্রজন্মের যখন নেতৃত্ব দেবার সময় আসবে তখন কি হবে? যারা হল দখলের/চাঁদাবাজির জন্য ছাত্র রাজনীতি করে তারাই চালিয়ে যাবে তাদের জয়যাত্রা?

__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনাকে হতাশ করার জন্য দুঃখিত। এটা আপনার অনভিজ্ঞতার জন্য হয়েছে। এই অধমের কোন একটি লেখাও যিনি আগে পড়েছেন তাতে তিনি জেনে যান যে একে দিয়ে আর যাই হোক "হাসির লেখা" কোনদিনই হবেনা।

রাজনীতি নিয়ে আপনি যা বললেন সে ব্যাপারে কিছু কথা একবার বলেছিলাম আমারই একটা পুরনো লেখায় (শিরোনামঃ রাজনৈতিক সংগঠন কেন করব?)। সেটা আর সেটার মন্তব্যে বিদগ্ধ পাঠকদের কথাগুলো ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন। আমার নিজের ব্লগেরই শুরুর দিকে পোস্টটা আছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

লেখার প্রতিটি শব্দের সাথে অক্ষরে অক্ষরে একমত। কিন্তু পাণ্ডবদা, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পরিত্রাণের আংশিক উপায় উপরে ধর্ম্মপুত্রকে বলেছি। তবে এটাই শেষ কথা নয়। আপনারা সবাই আলোচনা করুন, দেখবেন সঠিক উপায়টা বের হয়ে আসবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্বাধীন এর ছবি

কিন্তু পাণ্ডবদা, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

আমারো একই প্রশ্ন পাণ্ডব'দা। আমরা কিন্তু সমস্যা গুলো বেশ ভালো ভাবেই চিহ্নিত করতে পেরেছি এই বিশ বছরে। এটাকেই পাওয়া ধরে এবার সমাধান খুঁজার পালা এবং সেটা এই প্রজন্মকেই করতে হবে। আমি এটাও বলি যদি তার জন্য নুতন নেতৃত্ব, নুতন দল গঠন প্রয়োজন হয় তবে সেটার প্রক্রিয়াও শুরু করা উচিত। সময় নষ্ট করার মত সময় আর নেই। এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়েছে ইতিহাস বিকৃতির কারণে। চলুন সম্ভাব্য সমাধান গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করি। কোথাও হতে তো শুরু করি..।।...।।...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একদম ঠিক, স্বাধীন! আলোচনাটা শুরু করাটা জরুরী, কূটতর্ক না করে আলোচনাটা চালিয়ে নেয়াটাও জরুরী।

সামরিক শাসকেরা যখন নিজেদের অপকর্ম হালাল করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে তখন বলে যে, "সাংবিধানিক শুন্যতা দূর করার জন্য এটা দরকার"। আমার প্রশ্ন, "অসাংবিধানিক কাজটা কে করেছিল? কেন করেছিল, যে এখন সংবিধান কাটা-ছেঁড়া করতে হবে"? একইভাবে পূর্ব নেতৃত্বের করা ভুলগুলোর দায় নতুন কর্মীরা কেন নেবেন? এর জন্য ইতিহাসকেই বা কেন কাটা-ছেঁড়া করতে হবে বা পরীক্ষিত তত্ত্বের ভুল ব্যাখ্যা দিতে হবে? এর জন্য যদি নতুন সংগঠন করতে হয় তবে তাই হোক। নেতা ঈশ্বর নন্‌ যে তার ভ্রান্তির সমালোচনা করা যাবেনা। সংগঠন ধর্ম নয় যে তার নীতি-কৌশলে সংস্কার করা যাবেনা বা নতুন সংগঠন গড়া যাবেনা।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

..................................................
.....................
.......................................

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

স্পর্শ এর ছবি

এই দহন, এই বেদনা ছড়িয়ে পড়ুক সকল প্রাণে। তাতেই মুক্তি।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ফাহিম এর ছবি

বস লেখা হইসে একটা। অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছা করতেসে... থাক। হতাশা বাড়াতে ইচ্ছা করে না...

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

গানটার কথা মনে হলোঃ

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।