গল্প প্রচেষ্টা-১১

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: শনি, ০৭/০৫/২০১১ - ২:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“What is Hecuba to him, or he to Hecuba, that he would weep for her?” - William Shakespeare, Act 2, Scene 2, Hamlet

****************************************************************************************

ইশরাতের মতো মেয়ের পক্ষে হানিফের মতো ছেলেকে পাত্তা দেবার কোনো কারণ ছিল না। বিশেষ পাত্তা সে দেয়ওনি। শুধু মাঝে-মধ্যে এক-আধটু করুণা করেছিল মাত্র। কোনটা ‘করুণা করা’ আর কোনটা ‘সুযোগ দেয়া’ সেটা বোঝার ক্ষমতা হানিফের থাকার কথা না, তাই হানিফ যা কিছু নিয়েছে প্রসাদ ভেবে নিয়েছে।

ইশরাতকে তুলনা করা যেতে পারে খাপখোলা তলোয়ারের সাথে - স্লিম, ঝকঝকে, ধারালো। তার অ্যাকাডেমিক রেকর্ড খুব উজ্জ্বল নয়, তবে ফেলনাও নয়। তার ঔজ্জ্বল্য তার ব্যক্তিত্বে, মাদকতাময় সৌন্দর্যে, সাংগঠনিক গুণে, মঞ্চ-কাঁপানো পারফর্ম্যান্সে। নাড়ুগোপাল বললে যে ছবিটা মনে ফুটে ওঠে হানিফ হচ্ছে তাই। তাতে কি! সে ইশরাতকে ভালোবাসে। সেটা মোহ-মুগ্ধতা নয়, ভালোবাসা। ইশরাত কি সে’কথা জানতো? সম্ভবত না। হানিফের পক্ষে সে’কথা জানানো সম্ভব ছিলো না, সে চেষ্টা করার সাহসও তার ছিলো না। তবু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বছরে ইশরাত যখন পরিবারের পছন্দে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রভাষক মিরাজ সাহেবকে বিয়ে করে বসলো সে তখন অঝোর ধারায় কেঁদেছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বা তার মেসবাড়িতে এই কাঁদা সম্ভব ছিলোনা, সন্ধ্যায় পার্কের নির্জন কোনে বসে সে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলো। স্নাতক পর্যায় শেষ হতে না হতে ইশরাত বিদেশে অধ্যয়নরত স্বামীর কাছে চলে গেলে সে তার আর কোনো খোঁজ পায়নি।

উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গমন, সরকারী বা বহুজাতিক কোম্পানীতে চাকুরী অথবা ব্যবসা করা এর কোনটাই যে হানিফের কপালে নেই সেটা যখন স্থির হয়ে গেছে তখন এক আড্ডায় সাবেক সহপাঠীর কাছে ইশরাতের খোঁজ পাওয়া গেলো। জানা গেলো, বছর দুই হয় সে এই শহরেই আছে। ব্যক্তিত্বের সংঘাতের জন্য হোক, দু’জনের যে কারো তৃতীয় কারো সাথে সম্পর্কের কারণে হোক অথবা অন্য কোন কারণে তার বিয়েটা টেকেনি। ইশরাতের সাপেক্ষে একটু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে সে আবার বিয়ে করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। এ’ধরনের পরিস্থিতিতে তার আবার বিয়ে না করার কথা। তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী এমন লোকের সংখ্যা কম ছিলোনা। কিন্তু নিজ অভিজ্ঞতায় সে বুঝেছিল তার জন্য ঠিক মানুষ পাওয়াটা সহজ নয়, তাই পাণিপ্রার্থীদের দলকে সে নিরাশ করছিলো। এই সুযোগে হানিফ একবার সাহস করে এতদিন মনে জমানো কথাটা তাকে বলে ফেলে। ইশরাত বললো, “আচ্ছা, ভেবে দেখবো”।

হানিফ ভেবেছিলো ইশরাত সত্যি সত্যি তার প্রস্তাব বিবেচনা করবে। কিন্তু বৈষয়িক দিক দিয়ে অসফল হানিফের সাথে গাঁটছড়া বাঁধার ইচ্ছে ইশরাতের ছিলো না। তবু একদিন এক দুর্বল মুহূর্তে সে হানিফের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলো। এ’ঘটনায় হানিফ আকাশে ওড়া শুরু করলো। তার যাবতীয় কাজের লক্ষ্য অনতিবলম্বে ইশরাতকে বিয়ে করাতে গিয়ে ঠেকলো। মুহূর্তের দুর্বলতায় দেয়া কথাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা ও মানসিকতা ইশরাতের ছিলো; পালটা যুক্তিগুলোও শানানো ছিলো - শুধু সেগুলো হানিফকে শোনানোর সুযোগটা দরকার ছিলো। এক প্রবাসী গবেষক ভদ্রলোকের বিবাহ ও নিজ দোষে বিবাহ-বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতা ছিলো। তাই তার কাছে যত দ্রুত সম্ভব আরেকটি বিয়ে এবং সেখানে স্ত্রীর ইচ্ছাতে নিজেকে সমর্পণের ব্যাকুলতা ছিলো। এমন স্বামী ইশরাতের বিবেচনায় আদর্শ হবার কথা। ভদ্রলোক পাত্রীর সন্ধানে দেশে আসতে নিজস্ব মহলে ইশরাতের খোঁজ পেয়ে গেলেন। ইশরাতও হানিফকে দেয়ার জন্য শানানো যুক্তিগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা না করেই গবেষক ভদ্রলোককে বিয়ে করে আবার দেশ ত্যাগ করলো।

****************************************************************************************

“আর, রামলোচন রায় উকিল, তাহার বিশেষ করিয়া সুরবালারই স্বামী হইবার কোনো জরুরি আবশ্যক ছিল না; বিবাহের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাহার পক্ষে সুরবালাও যেমন ভবশংকরীও তেমন," - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একরাত্রি, গল্পগুচ্ছ


মন্তব্য

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

উপর-নিচে কোটেশন না থাকলে ক্ষতি কি?

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ওটা ঋণ স্বীকার বস্‌। অবশ্য এই দুই জনের কাছে ঋণ স্বীকার না করলেও ক্ষতি ছিলো না। নূন্যতম পড়া-শোনা করা মানুষ জানেন চিন্তার কোন অংশটুকু কার কাছ থেকে পাওয়া। তবু রেফারেন্সগুলো না দিয়ে পারলাম না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাত্যকি. এর ছবি

আপনার এই স্ট্রেইট ড্রাইভ গল্পগুলো বেশ লাগে।
(স্ট্রেইট ড্রাইভ মানে গল্পে প্যাঁচঘোচ নাই, থাকলেও লেখক এমনভাবে লিখে যে মনে হয়, আরে এইটা কোন ব্যাপার হইলো?)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ সাত্যকি।

এক বিকালে এক ডাক্তার আমাকে ডেকে বললেন, "দেখুন আজ সকালেই আপনার রোগীর brain death হয়েছে। এখন আপনারা অনুমতি দিলে life support খুলে নেবো।" বাস্তবে যা হয়, তা এমন straight drive-ই হয়। আমার মতো যারা গল্প লেখার প্রচেষ্টা করে তাদের চিন্তা বাস্তবের ঘটনাবলীর বাইরে বেশি দূর যেতে পারে না - তাই আপনাদের কাছে অমন মনে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জি.এম.তানিম এর ছবি

চমৎকার!

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রু (অতিথি)  এর ছবি

ভালো লেগেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

দুইটা কোটেশানই দারুণ। গল্পটা ভালো লেগেছে, তবে একটু শুকনো মনে হল। আপনার সরল গল্প বেশ লাগে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। দুই কোটেশনের চাপে গল্পে কোন রস আর দাঁড়াতে পারেনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটা এক্সপেরিমেন্ট ছিলো কি ?? উপরে-নীচে কোটেশন আর অণুগল্পের গতি সেটাই বলে আমাকে...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এক্সপেরিমেন্ট তো অবশ্যই। কোটেশনে বলা পংক্তিগুলো মনে পড়াতে মাথায় গল্পটা তৈরি হচ্ছিলো। ফাহিমের বলা রস বা আরো কিছু মেদ-মজ্জা যোগ করা যেতো হয়তো তবে সেটা জোর করে টানা বলে মনে হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিকেত এর ছবি

বেশ অদ্ভূত লাগল পড়তে--

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনেক তো হইল। এইবার গল্পগুলার নাম দেন। আর খুব দরকার মনে হইলে 'গল্প প্রচেষ্টা' বিনয়টা ট্যাগে ঢুকায়া দেন। নাকি?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নামছাড়া গল্প দেখতে আমারও খারাপ লাগে। যাকগে, সিরিজের নাম এটাই রাখবো কারণ "গল্প প্রচেষ্টা" ব্যাপারটা বিনয় নয় - বাস্তবতা। তবে এখন থেকে গল্পগুলোর নাম দেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি1 এর ছবি

স্বভয়েই অনিন্দ্য ভাইয়ার সাথে সহমত জানালাম। কারণ আমি গল্পের গ'ও জানিনা, তারপরও 'গল্প প্রচেষ্টা' লেখা থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। পাছে আপনি রুষ্ট হন। তাই সরাসরি গল্প ট্যাগ ঝুলিয়ে কীসব অখাদ্যকে হালালের সাহসে নেমেছি ইদানিং। আপনার আর সব 'গল্প প্রচেষ্টা' থেকে এটা একটু অন্য রকম লাগলো। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্প প্রচেষ্টা ব্যাপারটা আমার ট্রেডমার্ক নয় - আমার অবস্থার নির্দেশক। সেটা যদি আপনার অবস্থারও নির্দেশক হয় তাহলে আপনার গল্পের ট্যাগে সেটা লাগিয়ে দিন। কোনো অবস্থাতেই লেখা বা পোস্ট করা বন্ধ করবেন না।

অন্য রকম লাগলো মানে কী? ভালো বা খারাপ নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

অনেক তো হইল। এইবার গল্পগুলার নাম দেন।

একমত।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস্‌, উপরে অনিন্দ্যকে কী বলেছি দেখেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সত্য একটা ঘটনা মনে পড়লো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মনে পড়লে বলে ফেলেন। আপনার নিজের ঘটনা না তো! সেটা হলে আমি কিন্তু নকল করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যাবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ভালো লেগেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বিনয় বাদ্দেন। গল্পের নাম দ্যান। দেঁতো হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিনয় ও নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে অনিন্দ্যকে ব্যাখ্যা করেছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মণিকা রশিদ এর ছবি

একটানে পড়ে ফেললাম!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। অনেকদিন হয় আপনার সাড়াশব্দ নেই, খুব ব্যস্ত নাকি?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

না, হানিফ তো দেখি আচ্ছা বেকুব!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

গল্প ভাল লেগেছে।

স্লিম, ঝকঝকে, ধারালো…। বিদেশে অধ্যয়নরত…/গবেষক ভদ্রলোক…।

ভাল ভাল…।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ বস্‌। আপনার "ভাল ভাল ..." বলার টোনে একটু অন্য রকম গন্ধ পাচ্ছি - ব্যাপার কী?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ব্যাপার আর কিছুই না পাণ্ডব'দা, সঙ্গ দোষে টাইটানিক ভাসে। মহামান্য ধুগো ভালো হয়ে গেলেও নৈষাদ'দা 'দুষ্টু' হয়ে গেছে! মন খারাপ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এইটা পড়ে 'একরাত্রির' কথা মনে পড়ল। ছোটগল্পগুলো এমন যে ভিতরে ঢুকে বসে আছে। আপনি রেফারেন্স না দিলে খচখচ করতো--কোথায় এরকম-গল্প-পড়েছি-টাইপের খচখচ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বুদ্ধিমান পাঠক যে এই গল্প পড়ে আপনার মতো এমন অবস্থায় পড়তে পারেন সেটা ভেবেই আমি রেফারেন্সগুলো দিয়ে দিয়েছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

বর্ণনা ভালো লেগেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ কবি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

এরপর হানিফ কী করল?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হানিফের নতুন গল্প কখনো লেখা হলে জানতে পারবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এই গল্পটির সবচেয়ে উজ্জ্বল দিকটি হলো অল্পকটি রেখার টানেই চমৎকার চরিত্রসৃষ্টি। দেখা যাচ্ছে লেখক শুরুতে 'হ্যামলেট' ও শেষে 'একরাত্রি' হতে দুটি আপাতঃ সমার্থক বাক্যবন্ধের ব্যবহার দেখিয়েছেন। তাই ধরে নেয়াটাই স্বাভাবিক যে, লেখক পাঠকদের ভাবনাকে একটি অভিন্ন খাতেই প্রবাহিত করতে চেয়েছেন এবং গল্পসমাপ্তির পরও যাতে করে ভাবনাগুলো এলোমেলো ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে লেখক ছিলেন সচেতন। এমনটি স্বভাবতই পাঠকদের উদ্ধৃতাংশে বর্ণিত চরিত্রগুলোকে গল্পে বর্ণিত চরিত্রগুলোর সাথে মেলাতে উৎসাহী করবে। সংক্ষিপ্ত পরিসরের গল্পে (সচেতনভাবেই 'অণু' কিম্বা 'পরমাণু' বলছি না) কনফিক্ট ও ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টি এড়াবার ক্ষেত্রে এটি একটি যুতসই টেকনিক হিশেবে আদৃত হতে পারে। তবে এর ব্যবহার হওয়া চাই সুচিন্তিত। নইলে পাঠকের বিভ্রান্ত হবার অবকাশ থাকে। গল্পের চরিত্রগুলোর সাথে বাক্যবন্ধের চরিত্রগুলোর হয়তো মিল আছে, কিন্তু এই মিল পুরো 'হ্যামলেট' কিম্বা 'একরাত্রি' জুড়ে যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তবেই গোল বাঁধে। একরাত্রির 'রামলোচন' একটি গৌণ ও স্থবির চরিত্র, কিন্তু আলোচ্য গল্পে 'ইশরাত' কোনভাবেই একটি গৌণ চরিত্র নয়, অন্ততঃ তাঁকে ঘিরেই তো ঘটনাবলী আবর্তিত হতে দেখি। তাই মনে হয়, লেখকের স্বকীয়তা ও কুশলী প্রক্ষেপণ আমাদের গল্পের চরিত্রগুলোকে পুনরাধ্যয়নে প্রবৃত্ত করে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. এই এক্সপেরিমেন্টের সবচে' বিপদজনক দিক হচ্ছে, পাঠক যদি গোটা হ্যামলেট বা গোটা একরাত্রিকে মাথায় নিয়ে গল্পটা পড়েন। উদ্ধৃত অংশগুলো আসলে এক একটা পূর্ণ বাক্যও নয়। একরাত্রির উদ্ধৃতিটা এখানে শেষ হয়েছে একটা কমা'তে। পূর্ণ বাক্যগুলো এই গল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নয় একেবারেই।

২. উইলিয়াম শেক্সপীয়ার বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাক্যাংশও কীভাবে একটা গোটা কাহিনীকে বর্ণনা করতে পারে সেটা আমাকে প্রায়ই বিস্মিত করে। এই দুই জনের সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই প্রেক্ষিত থেকে বলা দুটি বাক্যাংশ আমার গল্পের একটি গতিধারা ঠিক করে দিয়েছে মাত্র। তবে সেগুলোই যে পুরো গল্প নয় সেটা স্পষ্ট। পাঠককে মোটামুটি একটা পথের নিশানা দেখাতে চাইলেও তার চিন্তার স্বাধীনতাটুকু ঠিকই থাকছে। উপরে কৌস্তুভ হানিফের পরিণতি জানতে চেয়েছেন - এটা তার চিন্তার স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ।

৩. হানিফ কোন বিচারেই হ্যামলেটের নায়ক বা একরাত্রির নায়ক নয়। তবে হানিফ ইশরাতকে সুরবালার মতো করে ভাবতেই পারে। চিন্তার জগতে দাঁড়িওয়ালা বুড়ার আক্রমণ ঠেকানো একজন বাঙ্গালীর পক্ষে কঠিন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।