পকেট কাটার অর্থনীতি-৬

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০৫/২০১১ - ৫:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১০. কালো টাকা - সাদা টাকা

কয়েকটি চরিত্র কল্পনা করা যাক। এরা বাস্তবের কেউ না হলেও এমন মানুষদের গল্প আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। এগুলোর সত্যতা কখনো প্রমাণ করা যায় না। কখনো-সখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এমন কাউকে গ্রেফতার করলেও তাদের অপরাধ মোটামুটি অপ্রমাণিত থেকে যায়, ফলে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তিও হয় না।

কল্পনা-১:

আফসান বাহ্‌রাম একজন বড় ব্যবসায়ী। নানা ধরনের জিনিষ আমদানী করে দেশের বাজারে বিক্রি করা তার কাজ। আফসান সাহেব সৎ লোক নন্‌। আমদানী করার ক্ষেত্রে তিনি সরকারকে যে সব কায়দায় ঠকানো সেগুলো হচ্ছেঃ

১. যে বস্তু আনেন সেটার আমদানী শুল্ক উচ্চ হলে সেটাকে অন্য এমন এক বস্তু বলে ঘোষণা দেন যার আমদানী শুল্ক কম। (যেমন, চিনিকে লবন ঘোষণা দেয়া)
২. প্রথম পন্থা অবলম্বন করা না গেলে আমদানীকৃত বস্তুর বর্ণনা ঠিকই ঘোষণা দেন; কিন্তু তার মূল্য কম ঘোষণা দেন। (যেমন, ১০০ টাকা/কেজি দামের জিনিষের মূল্য ৫০ টাকা/কেজি ঘোষণা দেয়া)
৩. দ্বিতীয় পন্থা অবলম্বনের কালে যদি দেখা যায় আমদানীকৃত বস্তুটি প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শনের (Pre-Shipment Inspection) আওতায় পড়ে বা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ঐ বস্তুটির রেকর্ডেড মূল্য উচ্চ, তাহলে তিনি আমদানীকৃত বস্তুর পরিমাণ কম ঘোষণা করেন। (যেমন, এক ডজন জিনিষকে একটি বা এক সেট ঘোষণা দেয়া)

এই অসদুপায়গুলো অবলম্বন করতে গিয়ে তিনি আরো একটি বেআইনী কাজ করেন সেটি হচ্ছে মানি লন্ডারিং। উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিতেই তার আমদানী ঋণপত্রে (Import Letter of Credit) প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখাতে হয়। ফলে পণ্যটির রফতানীকারক প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের অবশিষ্ট মূল্য হুণ্ডি আকারে তৃতীয় কোন দেশ হতে টিটি’র (Telegraphic/Wire Transfer) মাধ্যমে অথবা রফতানীকারকের দেশেই তাকে নগদে পরিশোধ করতে হয়। এই মানি লন্ডারিং-এ বিদেশ থেকে অর্জিত আমাদের আয়ের (রফতানী আয় অথবা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স) একটা বড় অংশ ব্যয়িত হয়ে যায়। বাংলাদেশ আমদানী নির্ভর দেশ বলে এই অঙ্কটা বিশাল এবং এর প্রকৃত তথ্য কারো কাছে নেই। আফসান বাহ্‌রামকে ঠিক সরাসরি মানি লন্ডারিং ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী বলা যায় না, তবে তিনি এর গ্রাহক সুতরাং এই ক্ষেত্রে তারও দায় আছে। তিনি এই পর্যন্ত আমদানীর ক্ষেত্রে যা করলেন সেটা হচ্ছে সরকারকে আমদানী শুল্ক ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য শুল্ক ও করাদি যেমন, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরী শুল্ক, আমদানী পর্যায়ের মূসক, আগাম আয় কর, প্রাক-জাহাজীকরণ ব্যয়, আগাম ট্রেড মূসক কম দিলেন। অর্থাৎ পরোক্ষ ভাবে তিনি জনগণের আয় (রাজস্ব) নিজের পকেটস্থ করলেন। তার এই বেআইনী আয়টি কে কালো টাকা বলা যায়।

আফসান বাহ্‌রাম তার এই কালো টাকা নিজ নামে বা বেনামে আবার নানা রকম ব্যবসায়; যেমন আমদানী, শেয়ার বাজার, জমি/ফ্ল্যাট কেনা-বেচা ইত্যাদি ব্যবসায় খাটান। তার বাড়ির কোন এক গোপন জায়গায় বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ রাখা আছে বিপদ-আপদের কথা ভেবে। দশ-বারোটা ব্যাংকে সেভিংস অ্যাকাউন্টে, এফডিআর হিসাবে থাকা টাকাও কম নয়। তিনি নিজে ও পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত বিদেশে বেড়াতে যান। বিদেশী জিনিষ ছাড়া দেশী কোন জিনিষ তিনি বা তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন না। বিলাসবহুল জীবন তার, কিন্তু আয়কর দেন নামে মাত্র। বোধগম্য কারণেই তার আয়করের ফাইলে কালো টাকার কোনো উল্লেখ থাকেনা।

কল্পনা-২:

কালু ব্যাপারী আদি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। নানা ধরনের জিনিষ স্থানীয় ভাবে নিজের ফ্যাক্টরী বা সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরীতে উৎপাদন করে স্থানীয় ভাবেই বিপনন করেন। কালু ব্যাপারীর চেহারা-সুরত যাই হোক না কেন, তিনিও সৎ লোক নন্‌। তার ব্যবসায়ে তিনি সরকারকে যে সব কায়দায় ঠকান সেগুলো হচ্ছেঃ

১. পণ্য উৎপাদনের জন্য তিনি যেসব কাঁচামাল (Raw Materials) বা অন্তর্বর্তী পণ্য (Intermediate Goods) বিনা শুল্কে আনেন তার একাংশ তিনি উচ্চ মূল্যে খোলা বাজারে বেচে দেন।
২. পণ্য উৎপাদনের ব্যয় উচ্চ হারে দেখিয়ে বাড়তি আয়ের উপর আয়কর দেন না।
৩. পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ কম দেখিয়ে বাড়তি উৎপাদিত পণ্যের উপর মূসক দেন না।

এভাবে কালু ব্যাপারী আমদানী শুল্ক-করাদি, আয়কর ও মূসক ফাঁকি দিয়ে যে টাকা বাড়তি আয় করলেন সেটা কালো টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই তার আয়করের ফাইলে কালো টাকার কোনো উল্লেখ থাকেনা। কিন্তু এই টাকা তিনি কী করেন? কালু ব্যাপারী যখন তরুণ তখন তার বাবা একদিন তাকে একটি প্রবাদ বাক্য শুনিয়েছিলেন, “মাটি খাঁটি, স্বর্ণে আধা আর কাপড়-চোপরে গাধা”। বাবার কথা তিনি আজো ভোলেননি। তাই বাড়তি এই আয় তিনি ব্যয় করেন নামে-বেনামে জমি-বাড়ি কিনতে। তার নিজের স্ত্রী, মেয়েরা বা ছেলের বউয়েরা কারণে-অকারণে নতুন নতুন ডিজাইনের স্বর্ণের গহনা বানায়। এতে কিছুটা গজগজ করলেও মনে মনে তিনি খুশিই হন। তবে পরিবারের কেউ দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে চাইলে, দামী জামা-কাপড়, দামী গাড়ি বা ইলেক্‌ট্রনিকস কিছু কিনতে চাইলে তিনি চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেন।

কল্পনা-৩:

গণ্ডেরিরাম বাটপারিয়া আসলে কোন দেশের নাগরিক তা বলা মুশকিল। তার এই দেশের পাসপোর্ট ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, আমেরিকা’র পাসপোর্টও আছে। এই সবগুলো দেশেই তার বাড়ি আর হাবিজাবি নানা ব্যবসা আছে। তবে এসব ব্যবসা লোক দেখানো। তার মূল ব্যবসা হচ্ছে চোরাচালান। বাংলাদেশ থেকে নানা জিনিষ ভারতে-বার্মায় পাঠানো আর ঐসব দেশ থেকে নানা জিনিষ বাংলাদেশে পাঠানো তার কাজ। হুণ্ডি ব্যবসায়ে তার বিনিয়োগও বিপুল পরিমাণ, তার নেটওয়ার্কও দুনিয়াব্যাপী বিস্তৃত। এর পাশাপাশি কখনো কখনো হিউম্যান ট্রাফিকিং-এর সাথেও তিনি জড়িত থাকেন। গণ্ডেরিরামের দৃশ্যমান ব্যবসায়ের আয় প্রায় কিছুই না। তার আয়ের প্রায় সবটাই বেআইনী - কালো টাকা। লোকে বলে গণ্ডেরিরাম আজকাল নাকি বাংলা সিনেমা, প্যাকেজ নাটক এগুলো বানানোর জন্য অজ্ঞাত-অখ্যাত লোকদের টাকা দেন। সেসব নাটক-সিনেমা নাকি দু-চার-দশ জনে না দেখলেও গণ্ডেরিরাম সেসবে বিরাট লাভ করেছেন এমনটা ঘোষণা দেন। সেই লাভের উপর কর দিয়ে সেই টাকা নাকি আবার অন্য বৈধ ব্যবসায়ে খাটান। এগুলোর সত্যতা কারো জানা নেই। তবে সে যাই হোক, গণ্ডেরিরামের আয়করের ফাইলে তার মূল ব্যবসাগুলোর কোনো উল্লেখ থাকা সম্ভব না। তাই সেগুলোর উপর কোনো করও তিনি দেন না। গণ্ডেরিরাম তার আয়ের সিংহভাগই দেশের বাইরে পাচার করে দেন। সেটা যে কোন দেশ তা কেউ বলতে পারেনা।

কল্পনা-৪:

ঈসা ইবনে আবসার একজন রহস্যময় ব্যক্তি। তার দৃশ্যমান যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেখানে কোনো কাজকর্ম হয় বলে কেউ জানে না। তবু সেখানে প্রচুর স্টাফ আছেন, তারা নিয়মিত বেতনও পান। ঈসা আসলে দেশে নেশাকারক ড্রাগস আমদানী ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। বলাই বাহুল্য, ঈসার ব্যবসায়ের প্রায় পুরোটাই অবৈধ। লোকে বলে মিডিয়াকে দখল করার জন্য তিনি নাকি আজকাল বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল খোলা আর দৈনিক পত্রিকা বের করার দিকে ঝুঁকছেন। তার পরিকল্পনা হচ্ছে এই দুই ব্যবসায়ে বিরাট লাভ দেখিয়ে তার অবৈধ আয়ের একাংশকে বৈধ করা। তাছাড়া এর মাধ্যমে তিনি নিজের একটা ক্লিন ইমেজও দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে পারবেন। ঈসার আয়করের ফাইলেও তার মূল ব্যবসাগুলোর কোনো উল্লেখ থাকা সম্ভব না। তাই সেগুলোর উপর কোনো করও তিনি দেন না। তার আয়ের সিংহভাগই পশ্চিম ইউরোপের ছোট একটি দেশের এক ব্যাংকে অজানা এক নামের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। দেশে তিনি মোটামুটি ধনীর জীবন যাপন করলেও তার জীবন যাপন আসলে কী মানের সেটা বোঝা যায় তিনি বিদেশ গেলে। চলাচলের জন্য নিজস্ব বিমান থাকা, অনেকগুলো দেশের অভিজাততম এলাকায় প্রাসাদোপম বাড়ি থাকা, অসম্ভব দামী গাড়ি চড়া, দুনিয়ার নামকরা ক্যাসিনোতে এক রাতে হাজার হাজার ডলারের জুয়া খেলা - এই সবের গল্প বাজারে প্রচলিত আছে। এগুলো হয়তো সত্য, হয়তো যতোটা বলা হয় সত্যটা তার চেয়ে বেশি।

কল্পনা-৫:

আ জা মো এহসান একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। সরকারের নানা ক্রয়-বিক্রয়, প্রকল্প-ব্যয়, লাইসেন্স-অনুমোদন, টেন্ডার-কোটেশন ইত্যাদি থেকে কমিশন-উৎকোচ খেয়ে তিনি টাকার কুমীরে পরিণত হয়েছেন। বোধগম্য কারণে তার আয়কর ফাইলে তার মাসিক বেতন ছাড়া অন্য কোনো আয়ের উল্লেখ থাকে না। শোনা যায় ঢাকা সহ আরো কয়েকটা শহরে তার বেনামে কয়েকটা বাড়ি আছে। ছেলে-মেয়েরা বিদেশে ব্যয়বহুল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করে। স্ত্রী ও সন্তানেরা অন্য একটি দেশের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট। স্ত্রী বছরের ছয়মাস সেই দেশে থাকেন। সেই দেশে বিরাট ভিলা কিনেছেন। তিনিও বছরে এক-আধবার সেখানে যান। শোনা যায় তিনি অচিরেই স্বেচ্ছা অবসরে যাবেন। তারপর রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন, তার তিন বছর পর একটা বড় দল থেকে মনোনয়ন কিনে সংসদ সদস্য হবার খায়েশ তার। মনোনয়ন কেনার জন্য দশ-বিশ কোটি টাকা ব্যয় করা তার জন্য কিছুই না।

উপরের কল্পনাগুলোতে একটা বিষয়ে সবার মিল আছে। সেটা হচ্ছে আয়কর ফাঁকি দেয়া। আয়কর ফাঁকি দেয়ায় সরকারের সরাসরি রাজস্ব আয়ের ক্ষতি হয়, অর্থাৎ জনগণ তাদের প্রাপ্য জাতীয় আয় থেকে বঞ্চিত হয়। আফসান বাহ্‌রাম আমদানী শুল্ক-করাদি ও মূসক ফাঁকি দেয়ায় রাজস্ব আয়ের ক্ষতি হয়। কালু ব্যাপারীও আমদানী শুল্ক-করাদি ও মূসক ফাঁকি দেয়ায় রাজস্ব আয়ের ক্ষতি হয়। গণ্ডেরিরাম বাটপারিয়া, ঈসা ইবনে আবসার আর আ জা মো এহসানের মূল আয়ই অবৈধ। তারাও শুল্ক-করাদি ফাঁকি দিয়ে রাজস্ব আয়ের ক্ষতি করছেন। তাছাড়া এদের পাঁচ জনের কেউ কেউ নিশ্চিত ভাবে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে ব্যাঙ্ক তথা আমানতকারীদের আয় নিজেদের পকেটে ভরছেন।

রাষ্ট্র তথা জনগণের আয়ের অর্থ এভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো এই লোকগুলি তাদের আয়কৃত কালো টাকার একাংশ কিন্তু দেশেই বিনিয়োগ করছেন। নামে-বেনামে জমি কিনে, গহনা বা অন্য জিনিষ কিনে, বেনামী ব্যবসায়ে খাটিয়ে কর ফাঁকি দিলেও সেটা দেশের অর্থনীতিতেই যোগ হচ্ছে। তাদের আয়কৃত বাকি টাকা যেটা বিদেশে পাচার করা হয় বা বিদেশে ব্যয় করা হয় সেটা কেবল দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে না। তাদের কালো টাকার যে অংশ দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে সেটা আয়ের উৎস ঘোষণাজনিত কারণে ও শুল্ক-করাদি ফাঁকি দেবার কারণে তাদের আয়কর ফাইলে দেখানো হয় না। একই ভাবে তাদের বিদেশে পাচার করা টাকা আয়ের উৎস ঘোষণাজনিত কারণে, শুল্ক-করাদি ফাঁকি দেবার কারণে এবং বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনার জটিলতার কারণে তাদের আয়কর ফাইলে দেখানো হয় না। বিদেশে পাচার করা টাকা কিন্তু ঐ দেশের অর্থনীতিতে ঠিকই যোগ হয়ে যাচ্ছে।

এই পর্যন্ত যা বলা হলো তাতে সরকার উদ্যোগী হলে এই লোকগুলির আয়ের উৎস ও আয়ের পরিমাণ যাচাই করলে তাদের কাছ থেকে যথাযথ শুল্ক-করাদি আদায় করা ও তাদের অন্যায়ের জন্য তাদেরকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব। বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে আমরা বুঝি এই সম্ভাব্যতা মোটামুটি কেতাবী কথা, বাস্তবে তা প্রায় অসম্ভব। এই জন্য প্রায় প্রতি বছর জাতীয় বাজেট প্রণয়নের সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হবে কিনা সেটা নিয়ে গরম আলোচনা হয়।

প্রশ্ন করা যেতে পারে এদের কাছ থেকে উচ্চ হারে কর নিয়ে তাদের কালো টাকা সাদা করতে দিলে অসুবিধাটা কোথায়? তাতে তো সরকারের রাজস্ব ক্ষতি পূরণ হয়ে যাবার কথা। উত্তরটা হচ্ছে আসলে তা হয় না। কালো টাকার যে অংশ দেশে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করা হয়ে গেছে সেটা দেশের অর্থনীতির অংশই হয়ে গেছে। বাড়তি কর আদায় করলেও সেক্ষেত্রে অর্থনীতিতে নতুন কোন টাকা যোগ হচ্ছে না। বরং একটা বেআইনী ব্যাপারকে জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে জাতীয় নৈতিকতার মান নামিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং সৎ নাগরিকদের অবমাননা করা হচ্ছে। গত বছরের বাজেটে বলা হয়েছিলো বৈধ ব্যবসায়ের কর ফাঁকি দেয়া আয়কে সাদা করা যাবে, অবৈধ ব্যবসায়ের নয়। আপাত দৃষ্টিতে এটিকে মন্দের ভালো মনে হলেও ব্যাপারটার নৈতিকতার মান একই প্রকার নীচ থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া উচ্চ আমদানী শুল্ক-কর (৯০% আমদানী শুল্ক-করও আছে) ফাঁকি দেয়া আয় ২৫%-৩০% জরিমানা (কর) দিয়ে সাদা করলেও সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মাত্র ১০% কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, যেখানে একজন বৈধ আয়ের মানুষকে ২৫% পর্যন্ত আয়কর দিতে হয়। এই ধরনের ব্যবস্থা রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়েরই শুধু ক্ষতি করেনা নৈতিকতা ও আইন মানার প্রবনতাকে ধ্বংস করে সাধারণ মানুষকে অপরাধপ্রবন করে তোলে।

নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা, পুরাতন শিল্পের মেরামত, আধুনিকায়ন ও সংস্কার, স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগ ও ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় খাতে অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছিলো তাতে গত এক বছরে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার চেয়েও কম। যে কেউ বুঝবেন সরকারের ঘোষণাতে কাজের কাজ হয়েছে খুবই কম। এতে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠাতে টাকা বিনিয়োগ হয়েছে খুবই কম। পুরাতন শিল্প সংস্কারের ঘোষণাটি একটি আই-ওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারী মার্কেটে বিনিয়োগ, জমি-ফ্ল্যাট ক্রয় ইত্যাদি মূলত অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ। সুতরাং এই অনৈতিক সুবিধাটি বাস্তবে দেশের অর্থনীতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

ইদানিং দেশের তারল্য সঙ্কট কাটানোর জন্য ও শেয়ার বাজারকে চাঙা করার জন্য আগামী বাজেটেও কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেবার কথা আলোচিত হচ্ছে। অথচ তারল্য সঙ্কট কীভাবে হলো এবং তা কাটানোর স্বাভাবিক উপায়গুলো কী সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে খুবই কম। আগামী বাজেটে এই অজুহাতে আবারো কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দিলে সেটাও অব্যাহত রাজস্ব ক্ষতি ও নৈতিকতার অবক্ষয়কে বাড়াবে।

বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে কালো টাকার মালিক কতো জন, তাদের মোট কালো টাকার পরিমাণ কতো সেটার কোন হিসেব কারো কাছে নেই। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেটার কিঞ্চিত আভাস পাওয়া গিয়েছিলো। তাতে যা বোঝা গেছে তাতে দেশের মোট কালো টাকা দিয়ে দেশের বৈদেশিক ঋণ শোধ, পদ্মা সেতুর মতো কয়েক ডজন সেতু বানানো, সব জেলা সদরে যাবার মতো এক্সপ্রেস হাইওয়ে বানানো বা দশ-বারোটা পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানো কোনো ব্যাপারই না। এই টাকাগুলো উদ্ধার করার জন্য বাজেটে ঘোষণা দিয়ে কালো টাকাকে সাদা করার নানা কায়দা-কানুন আসলে কালো টাকার মালিকদের পক্ষেই যায়। তাতে রাজস্ব ক্ষতি কমে না, কালো টাকা আয়ের প্রবনতাও হ্রাস পায় না। মাঝখান থেকে জনগণের পকেট কাটা একই গতিতে চলতে থাকে।


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

ঠিক আছে।

নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা, পুরাতন শিল্পের মেরামত, আধুনিকায়ন ও সংস্কার, স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগ ও ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় খাতে অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছিলো তাতে গত এক বছরে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার চেয়েও কম।

- একদিন এক সরকারী আমলার সাথে কথা হয়েছিল। তিনি ‘কালোকে সাদার’ যুক্তি হিসাবে এই হাজার কোটির কথাও বললেন (সরকারের যা পাওয়া গেল, তাতেই লাভ)। নৈতিকতার দিকটা একেবারেই বুঝানো গেল না।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল সেটার কিঞ্চিত আভাস পাওয়া গিয়েছিলো।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই শেষ-করতে-না-পারা অপরিকল্পিত দূর্নীতিদমনের প্রচেষ্টাতে আরেকটা ক্ষতি হয়েছে, কালো টাকার বড় অংশ বায়রে চলে গেছে/চলে যায়, যেটা অন্ততপক্ষে দেশে থাকলে অর্থনীতিতে যোগ হত। (স্যারেরা আর সিকিওর ফিল করেনা)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. নৈতিকতার কথাটা যদি নাও ধরা হয় তাহলেও কতো টাকার প্রকৃত রাজস্ব ক্ষতি স্বীকার করে এই এক হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেলো? তস্করকে বিচার করে জেলে দিয়ে, সম্পত্তি ক্রোক করে চোরাই মাল উদ্ধার করাটা আইনসঙ্গত ছিলো। তার বদলে কী করা হলো? চোর বাবাজীকে বলা হলো, "কিছুমিছু দিয়ে যা বাপ, তোকে আর চোর বলবোনা।"

২. সে আর বলতে! স্যারেরা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা উঠিয়ে দেবার জন্য খোলামেলা বক্তব্য দেয়া শুরু করেছেন। এর মানে এই না যে উনারা গণতন্ত্র অন্তপ্রাণ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার কোঁৎকা যেনো খেতে না হয়, টাকা-পয়সাগুলো যেনো নিরাপদে থাকে সেটাই আসল কথা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাংলাদেশের কোনো পরিকল্পনাতেই এখন দীর্ঘমেয়াদের ছাপ নাই... সব কিছুই চলছে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে। এগুলোর ফল কী হবে আর কোথায় দাঁড়াবে তা কেউ দেখে না, ভাবে না... অবস্থা খুবই খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

না, আমরা টিকে যাবো। এই রকম অবস্থাতে আমরা ক্রমাগত অভিযোজিত হতে হতে টিকে যাবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উল্লম্ফনজনিত ঘ্যাঁচাং!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ক্রাক কমাণ্ডো  এর ছবি

হুম সত্যি বলতে কি এই ধরনের লোকেদেরকেই আশেপাশে দেখি সর্বদা, বাংলাদেশে সমাজ ৭০ ৮০ দিকেও যেমন এই শ্রেণীটাকে ঘৃণ্যা করত এখন আর করে না বরং তাদের এই সাফল্য পারলে অণুকরনে অতি আগ্রহী।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৬০-৭০: ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদকে নির্বাচন করার জন্য টাকা দেয়, রাজনীতিবিদ সেটা দিয়ে মাস্তানকে ভাড়া করে নির্বাচনে জেতে। সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদের ব্যাপারে বিরক্ত, ব্যবসায়ীর ব্যাপারে উদাসীন, মাস্তানকে ঘৃণার চোখে দেখে। সাধারণদের কেউ কেউ তবু রাজনীতিবিদ হবার কথা ভাবে।

৮০-৯০: ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদকে টাকা দেয় তবে নির্বাচনটা নিজেই করে, ব্যবসায়ী সেটা দিয়ে মাস্তানকে ভাড়া করে নির্বাচনে জেতে। সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদের ব্যাপারে ক্ষিপ্ত, ব্যবসায়ীকে ঘৃনা করে, মাস্তানকে ভয়ের চোখে দেখে। সাধারণদের কেউ কেউ ব্যবসায়ী হবার কথা ভাবে।

৯০-০০: মাস্তান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আর রাজনীতিবিদের কাছ থেকে সমর্থন নিয়ে নিজেই নির্বাচন করে জেতে। সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদের গোনায় ধরে না, ব্যবসায়ীকে এড়িয়ে চলে, মাস্তানের ব্যাপারে আতঙ্কিত। সাধারণদের কেউ কেউ মাস্তান হবার কথা ভাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

যে চরিত্রগুলার কথা বললেন, তারা যে কেউই যে রাজনীতির কালারে রঞ্জিত না, সেটা খেয়াল করেন। সংসদের ৩০০ টা সিটে কে কে এইরকম লতায় পাতায় বা খুল্লানখুল্লা বর্নচোরা না, এই গবেষনাটা কয়েক ঘন্টার চাইতে দীর্ঘ হবেনা। ঘটনা হইল দেশে কোন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আর বাকী নাই। আগাপাশতলা পুরাটাই এখন একটা কনগ্লোমারেট। এখানে উচু পদ মানেই উচু বোনাস। পার্থক্য হল বিদেশে এইসব বোনাস কোম্পানীর একাউন্ট ঘুরে আসে, বাংলাদেশ ইঙ্ক এর উচু অফিসারেরা নিজেরাই নিজেদের বোনাসের ব্যাবস্থা করে নিয়েছেন। এলাকা বাজার ও পণ্যের বিচারে একটু কামড়াকামড়ি রয়ে গেছে, কিন্তু যেদিকে এগুচ্ছে, মনে হয় একটা ভারসাম্যে পৌছে গেছে।

থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার আকারের পুঁজিবিয়োগ না ঘটলে এই ভারসাম্য কাটার যথেষ্ট কারন দেখিনা।

নৈষাদ এর ছবি

এই নেক্সাসের ভারসাম্যের ব্যাপারটা ঠিক।

থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার আকারের পুঁজিবিয়োগ না ঘটলে এই ভারসাম্য কাটার যথেষ্ট কারন দেখিনা।

বুঝিনি।

দুর্দান্ত এর ছবি

ডট কম ধামাকা সামাল দিতে আমেরিকান ট্রেজারী আর আই এম এফ এর ইন্দোনেশিয়া/কোরিয়া/থাইল্যান্ডের থেকে পাইকারী পুজিবিয়োগের ঘটনার কথা বলছি। মিডিয়া দেখি ক্লিন্টন/লুইন্সকি কিন্তু আড়ালে যে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমেরিকা তার নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে এশিয়ায় খাটানো তার ডলার (সেটা আবার তার নিজের না, চীন থেকে ভাড়ায় পাওয়া) ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। তখন সেই ভাড়ার ডলারে গড়া দক্ষিন এশিয়ার রিয়েল এস্টেট বুম মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই বিশাল পুজিবিয়োগের ধকল ইন্দোনেশিয়ার ম পৃথিবীর বৃহত্তম এল এন জি রপ্তানীকারক হবার পরেও সামাল দিতে পারেনি, কারন দুঃখের কতা তাদের এল এন জির বিনিময়ে ইয়েন ছাড়া কিছু আসছিল না। সেই বাজারে ইয়েনের অবস্থার কথা কি সেটা তো জানেন।
সুহার্তো ও সেই সাথে ইন্দোনেশিয়ায় 'নেক্সাস ভারসাম্য' এর একটা বড় অংশ ধসে পড়ে, কারন দেশে রয়ে যাওয়া তাদের সম্পদের পাহাড় যে ডলারের জাহাজে চেপে বিদেশে চলে যেত, সেই জাহাজ আর তাদের সম্পদের ভার সইতে পারছিলনা। সাধারন মানুষ রুপাইয়া দিয়ে চাল/শাক খেতে পারলেও মার্সেডেস আর শ্যানেল কেনা যাচ্ছিলনা।
পুজিবিয়োগ বলতে এইটাই বোঝাচ্ছিলাম।

নৈষাদ এর ছবি

ঠিকাছে। চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ইন্দোনেশিয়ার গল্পটা আরেকটু বিস্তারিতভাবে (আলাদা পোস্ট হতে পারে) আসা দরকার। এখানে একটু বিতর্কের অবকাশ আছে। আর থাইল্যান্ডের গল্পটা কীভাবে একই হিসাবে পড়ে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

থাইল্যান্ডের প্রসংগ পুজিবিয়োগের আকার বোঝাতে এসেছে। তবে তাতে ওদের রাজনীতিতে অনুসরণীয় পরিবর্তন এসেছে, এটা বলা যায়না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই চরিত্রগুলোর কাছে রাজনীতি একটা "টুল" বা "মিনস্‌"। এদের রাজনৈতিক চরিত্র আছে, তবে এরা যুথবদ্ধ রাজনীতির অংশ নয়। অসম্ভব আত্মকেন্দ্রিকতার জন্য এরা রাজনৈতিক সংগঠনের অংশ হতে পারেনা। তিনশ'+পঁয়তাল্লিশ তৈরি হওয়াটা একটা ব্যবসায়িক প্রসেসের মতো। তাই বিভিন্ন পর্যায়ে এই পাঁচটি কল্পনার কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও লতা-পাতা-শেকড় কিছু একটা জড়াবেই। তাছাড়া উপরে "ক্রাক কমাণ্ডো"র মন্তব্যের জবাবে একটা কালচিত্র দিয়েছি, সেটা অনুযায়ী সবর্ণেই তারা এখন তিনশ পঁয়তাল্লিশে বিদ্যমান।

দেশে কিছু কিছু বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে কাছ থেকে দেখে খুব অবাক হই। ওগুলোর আগা-পাশ-তলা জুড়ে নিজেদের ভেতরেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে গেছে সেটা দেখে অবাক হই। তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে যেনো শুধু টিকেই নেই, বছর বছর আবার বাড়েও। দেশ আর ঐ প্রতিষ্ঠান এক একটা মডেল আর প্রোটোটাইপ।

কামড়াকামড়িটা ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হতো। থাইল্যান্ডের গল্পটা একেবারেই ভিন্ন। সেখানে গ্রাম-শহরের বৈষম্য অসম্ভব রকম। ভৌগলিক কারণ আর জাতিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য অনেক অঘটনই সেখানে ঠেকে আছে।

বড় আকারের পুঁজির বিনিয়োগ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিলোপ সময়ের সাথে সাথে ঘটবে। মার্জার আর অ্যাকুইজিশনের কালচার এখনো গড়ে উঠেনি সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার জন্য, অথচ এটা জরুরী হয়ে পড়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিঅজ্ঞ হিসেবে আমার কাছে লেখা ভালো লাগলো। বরাবরের মতোই হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অর্থনীতি যে আমি জানি সেটা তো না। স্বল্প আয়ের মানুষ আমি, তাই "আমার দশ রূপেয়া কে লিলো" জাতীয় ভয়টা সব সময় কাজ করে। সেই ভয় থেকেই এই উপলদ্ধিগুলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নিবিড় এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাশতারান এর ছবি

ঈসা ইবনে আবসারকে খুব চেনা চেনা ঠেকলো। [বানান- ইদানীং, প্রবণতা]

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কল্পনার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। কোনো প্রকার কাকতাল অনুভূত হলে তার দায় পাঠকের।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

১. ১০০% কালো টাকার মালিকেরা সবচেয়ে ভালো আছেন। তাদের কোন ট্যাক্স ফাইলই নেই। কোন ঝামেলাও নেই। কেউ এদের খোঁজখবরও রাখে না। যে কোন দরকারে একটা ট্যাক্স ফাইল খুলে সেটা আবার বন্ধ করতে হাজার পাচেক খরচ করলেই চলে। ওয়ানটাইম টিন নম্বরের মজার ব্যবস্থা আছে বাংলাদেশে।

২. ৫০% কালো টাকা ৫০% সাদা টাকার মালিকেরা খানিকটা ঝামেলায় থাকলেও। কালো টাকা দিয়ে কর অফিস কিনে নিতে পারে। এদের ট্যাক্স ফাইল আছে। কিন্তু ট্যাক্স ফাইলের রক্ষনাবেক্ষণের জন্য এদের পোষ্য কর কর্মচারীগন নিয়োজিত থাকেন। এদের বেশীরভাগ শিল্পপতির তালিকায় আছেন। দেশের সকল সেলিব্রেটি শিল্পপতি এই তালিকায়।

৩. ১০০% সাদা টাকার মালিকেরা সবচেয়ে গলদঘর্ম হন। এরা ট্যাক্স দেয় বেশী, কিন্তু ট্যাক্স অফিসে এদের দৌড়ঝাপ হয়রানিও বেশী। কারণ সাদা টাকার আত্মবিশ্বাসে এরা ট্যাক্স অফিসে কোন টাকা খরচ করতে চান না। তাই এদের প্রতি বিরূপ সরকারী কর্মচারীগন। এরা প্রায় সবাই চাকুরীজীবি, কর্মস্থলেই এদের কর কর্তন করা হয়।

৪. উপরোক্ত তিনটা পরিস্থিতি বিবেচনায়, ১০০% কালো টাকার মালিকদের সুবিধাই বেশী। সুতরাং কর না দেয়া অর্থের পরিমান দেশে বাড়তে থাকবে এতে আশ্চর্যের কি আছে?

৫. আমি ৩ নং গোত্রের করদাতা। আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধু ২ নং গোত্রের করদাতা। হিসেব করে দেখা গেছে সে আমার এক দশমাংশ কর দেয় যদিও তার আয় আমার দশগুন। ব্যবসায়ীদের ৫০ ভাগও যদি সত্যিকারের করের আওতায় আসে দেশের রাজস্ব আয় কমপক্ষে তিনগুন বাড়বে।

৬. ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং টিন নম্বরকে একই লাইনে সুপারগ্লু দিয়ে আটকে দিতে পারলে কালো টাকা যাদুঘরে ঢুকে যেতো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নীড়দা, ১০০% কালো টাকার মালিকেরা অন্য সব কারণে যে দৌড়ের উপর থাকেন তাতে তারা ভালো আছেন এমনটা বলা যায় না। ওয়ানটাইম টিনের ব্যাপারটি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। অবশ্য এরা ট্যাক্স-টিন এগুলোর ধার ধারেন না। অসৎ ট্যাক্স ইন্সপেক্টরদের কাছে এরা খুবই প্রিয় মানুষ।

কালো টাকার সাথে যাদের কম-বেশি সাদা টাকা থাকে তারাই বাজেটে টাকা ধৌতকরণের পক্ষে থাকেন। অসৎ ট্যাক্স কর্মকর্তা আর দক্ষ ট্যাক্স আইনজীবি এদের কাছের মানুষ। তাই তাদের যা কিছু ভোগান্তি সেটা পকেটের উপর দিয়ে যায়।

১০০% সাদা টাকার মালিকরা “যস্মিন দেশে যদ্যাচার” নীতি পালন করলেই ঝামেলা এড়াতে পারেন। এক শ্রেণীর ট্যাক্স আইনজীবি আছেন যারা আপনার মুশকিল আসান করে দেবার জন্য সদা প্রস্তুত আছেন। রেটগুলো ফিক্সড এবং নির্ধারিত মাত্রার। এইটুকু মেনে নিলেই সব ফক্‌ফকা।

আমাদের দেশে কর বিভাগ, কাস্টমস বিভাগ সাধারণ মানুষকে তস্কর, অপরাধী ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না। সাধারণ মানুষের সাথে তাদের ব্যবহারও অধিকাংশ সময়ে তাই মোটেই ভদ্রজনোচিত নয়। তাছাড়া এই বিভাগগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি থাকায় সাধারণ মানুষ হয়রানী ও অর্থনাশের ভয়ে কর প্রদানে অনীহ হয়। একটি স্বাধীন দেশের উপযুক্ত মানসিকতার কর ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে এবং কর প্রদান করলে সাধারণ মানুষ কী কী প্রত্যক্ষ সুবিধা পেতে পারে সেটা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে লোকে কর দেবে না।

সরকার করের সীমা বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর উদ্যোগ নেয়, অথচ কর আদায়ের efficiency বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ কম। এই উদ্যোগ নিলে বিদ্যমান করকাঠামোতেই রাজস্ব আয় বহুগুণ বাড়তে পারে।

একজন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাঙ্ক নির্বিশেষে একাউন্ট নম্বর, টিন, বিন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ভোটার নম্বর, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, অপারেটর নির্বিশেষে মোবাইল নম্বর, এসপি নির্বিশেষে ই-মেইল আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে রোল/রেজিস্ট্রেশন নম্বর একই হলে এবং ভ্যারিফিকেশন-অথেনটিকেশন ইত্যাদির জন্য স্বাক্ষরের পরিবর্তে বুড়ো আঙুলের ছাপ নিতে পারলে শুধু কালো টাকা কেনো অনেক ধরনের দুর্নীতিই বন্ধ হয়ে যাবে। এর জন্য একটা ন্যাশনাল ডাটাবেস থাকতে হবে। সেখানে সবার জিন ম্যাপিং থাকতে হবে, ডশিয়ে’ থাকতে হবে। সেটা নিয়মিত আপডেট করতে হবে। সবাইকে ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সব জায়গায় সেই কার্ড পাঞ্চ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

guest_writerআদু ভাই এর ছবি

চিন্তিত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আদু ভাই, চিন্তার কী আছে? দশজনের যে পরিণতি আপনার-আমারও সেই একই পরিণতি হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার চিন্তা ভাবনা ভালো লেগেছে পান্ডবদা। দেখি এইবার বাজেটে কী হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ফাহিম, যদি একটু লক্ষ করেন তাহলে একটা সরকারের পাঁচ বছর শাসনামলের কোন বছর বাজেট কী রকম হবে সেটা সহজেই বুঝতে পারবেন। শুরুর দিকের বছরে বড় আকারের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, মাঝের দিকে করের আনুভূমিক সম্প্রসারণ, শেষের দিকে থোক টাকার বরাদ্দ বৃদ্ধি এসব থাকে। তাছাড়া ভোটের রাজনীতির নিয়ামকগুলো যেভাবে পরিবর্তিত হয় সেই অনুসারে করের হ্রাস-বৃদ্ধি, বিশেষ সুবিধা প্রদান, উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ এইসব পরিবর্তিত হতে থাকে। মধ্যবর্তী সময়গুলোতে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচন কখন গ্রামে হচ্ছে আর কখন শহরে হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করে জরুরী প্রকল্পগুলো কখন কোথায় হবে।

যে দেশে বাজেট ঘোষিত হবার দুই দিন আগেই সরকারী দল ব্যানার ছাপায়ঃ

"গরীব মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের সহায়ক গণমুখী বাজেটের জন্য সরকারকে অভিনন্দন"

আর বিরোধী দলও বাজেট ঘোষিত হবার দুই দিন আগেই ব্যানার ছাপায়ঃ

"গরীব মারা বাজেট মানি না"

সেখানে বাজেট প্রণয়ন, তার উপর আলোচনা, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ এর সবগুলো বড় তামাশার অংশ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা!
পুরো সিরিজটা সময় নিয়ে পড়তে হবে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।