রক্তে আঙুরলতা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০৮/২০১২ - ৩:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফ্রান্সের সীমান্ত ঘেঁষে ইতালীর উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ কুনিও। এই প্রদেশে লাঙ্গে পর্বতমালার পাদদেশের একটি গ্রাম সান্তো স্তেফানো বেলবো। লাঙ্গে পর্বতের উপরে এক কালে দেবতাদের প্রধান - আকাশ আর বজ্রের দেবতা জুপিটারের মন্দির বানানো হয়েছিল। জুপিটারের পূজারীরা স্বধর্ম ত্যাগ করলে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর গড়ে ওঠে বেনেডিক্টাইন কনভেন্ট। সান্তো স্তেফানো বেলবো’র মানুষ নিজেদের ধর্ম পরিবর্তন করলেও মূল পেশার পরিবর্তন করেননি। প্রাচীন কাল থেকে লাঙ্গে পর্বতমালা অঞ্চল আঙুর চাষ আর আঙুরের রস থেকে বানানো মদের জন্য বিখ্যাত। এখানকার স্পার্কলিং হোয়াইট ওয়াইন ‘মোসকাতো দো আস্‌তি’ পানরসিকদের পছন্দের পানীয়।

অনুচ্চ লাঙ্গে পর্বতমালা, তার পাদদেশের আঙুরের বাগান আর সেখানে কাজ করা, মানবেতর জীবনযাপন করা আঙুরচাষীদের দেখে কেউ কেউ সারা জীবন ধরে তাদের কাছে ফিরে গেছেন বার বার। লিখে গেছেন লাঙ্গে পর্বতমালার সৌন্দর্য আর তার দুই সন্তান আঙুর বাগান এবং আঙুরচাষীদের নিয়ে। অমন একজন কবি-সাহিত্যিক হচ্ছেন বেপ্পে ফেনোগলিও। যার লেখার মূল বিষয় দুটো - লাঙ্গে পর্বতমালা ও তার অধিবাসীরা এবং ইতালীর পার্টিজান যুদ্ধ। তার লেখার আঙ্গিক দুটো - দিনপঞ্জী আর মহাকাব্য। রক্তে আঙুরলতা থাকলেও এই লেখাটি ৪০ বছর ১১ মাস ১৭ দিন বেঁচে থাকা বেপ্পে ফেনোগলিও-কে নিয়ে নয়, লেখাটি অমন আরেকজন - ৪১ বছর ১১ মাস ১৮ দিন বেঁচে থাকা সেজারে পাভেযে-কে নিয়ে। পাভেযের লেখার আঙ্গিক বেপ্পের মতো দুটো নয়, তাঁর অনায়াস পদচারণা ছিল কবিতা, উপন্যাস আর ছোটগল্পে। তাঁর লেখার বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য থাকলেও সেখানে একটা বিষয় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। সেটার কথা একটু পরে বলবো।

সান্তো স্তেফানো বেলবো পাভেযে পরিবারের ‘দেশের বাড়ি’। এখানে তার পিতা জন্মেছেন, ১৯০৮ সালে তিনিও এখানে জন্মেছেন। এটি তাদের গ্রীষ্মাবকাশস্থল, তাই প্রায় প্রতি বছরই তাদের পরিবার এখানে এসেছেন। পাভেযের বয়স যখন ৬ তখন তার পিতা মারা যান, ততক্ষণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। পিতার মৃত্যু তার জীবনকে বেশি প্রভাবিত করেনি। তার পরিবার সান্তো স্তেফানো বেলবো থেকে তুরিনে চলে আসলে তিনি শিক্ষালাভের সুযোগ পান প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অগুস্তো মন্তে’র কাছে। মতের ও মনের মিলের জন্য অগুস্তো মন্তে যে দু’জন মানুষের খুব কাছাকাছি ছিলেন তাদের একজন হচ্ছেন পিয়েরো গবেত্তি আর অন্যজন আন্তোনিও গ্রামসী। এরপর আর বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না পাভেযের দার্শনিক ও রাজনৈতিক জগতটা কোন ঘরাণায় গড়ে উঠেছে। স্কুল জীবনে পাভেযে দীর্ঘদিন প্লুরিসিতে ভুগেছেন, প্রিয় বন্ধুর আত্মহত্যার শোক সহ্য করেছেন, কৈশোরের প্রেম ভেঙে যাবার কষ্ট পেয়েছেন। শরীর আর মনের ওপর এই ভাঙা-গড়ার খেলা পাভেযে সারা জীবন সহ্য করেছেন।

২৪ বছর বয়সে পাভেযে তুরিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করেন ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতার ওপর অভিসন্দর্ভসহকারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন লিওনে গিনযবার্গকে যিনি একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা। এই পর্যায়ে পাভেযে মার্কিন আর ব্রিটিশ উভয় প্রকার ইংরেজী সাহিত্য অনুবাদে মন দেন আর তিনা পিজ্জার্দো’র সাথে এক অস্থির প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন ‘কর্কশকন্ঠী নারী’ শিরোনামে পত্রগুচ্ছ। তিনা কমিউনিস্ট পার্টিতে জড়িত থাকায় তার সাথে সম্পর্ক রাখার অপরাধে পাভেযে ফাসিস্ত সরকারের সন্দেহের তালিকায় পড়ে যান। ২৮ বছর বয়সে তাকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। কয়েকমাস পর বিচারে তার অপরাধ লঘু প্রমাণিত হলে তাকে আয়োনিয়ান সাগরের তীরে দক্ষিণ ইতালীর ক্যালেব্রিয়া প্রদেশের ব্রাঙ্কালিওনেতে নির্বাসন দণ্ড দেয়া হয়। এক বছর পর তুরিনে ফিরে এসে পাভেযে দেখেন তিনাকে উদ্দেশ্য করে লেখা কবিতাগুলো আপাতত জলে গেছে - তিনা অন্য এক লোককে বিয়ে করে ফেলেছে। এ’সময় জীবিকার জন্য পাভেযে স্টেইনবেকের ‘দ্য বিগ মানি’ আর ‘অভ মাইস অ্যান্ড মেন’ অনুবাদ করেন। পরে নিয়মিত রোজগারের আশায় জুলিও ইনাওদি’র বামপন্থী প্রকাশনা সংস্থাতে সম্পাদক-অনুবাদকের কাজে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি আবার কবিতা লেখা শুরু করেন যা পরবর্তীতে ‘লাভোরারে স্তান্‌সা’ (কঠোর শ্রম) নামের কাব্যসংকলন হিসেবে প্রকাশিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে রোমে থাকাকালীন সময়ে ফাসিস্ত সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য পাভেযের ডাক পরে। ফাসিস্তদের হয়ে যুদ্ধ করা এড়ানোর জন্য অ্যাজমার দোহাই দিয়ে সামরিক হাসপাতালে ছয় মাস কাটিয়ে তিনি তুরিনে ফিরে আসেন। কিন্তু ততোদিনে নাৎসী জার্মান বাহিনী তুরিন দখল করে ফেলেছে। পাভেযের সাঙ্গীসাথীদের বেশির ভাগ পালিয়ে গিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। পাভেযেও তুরিনের পূর্ব দিকে আলেসান্দ্রিয়া প্রদেশের সেরালোঙ্গা ‘দ ক্রেয়া এলাকায় পালিয়ে যান। নাৎসী আর ফাসিস্তদের আক্রমণের মুখে মনফেরাতোর কনভেন্টে আশ্রয় নেন। পরে সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন। পাভেযে তুরিন থেকে পালিয়ে গেলেও বাকীদের মতো অস্ত্রহাতে কখনো প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন নি। যুদ্ধে অংশ নিতে না পারার কারণ স্পষ্ট নয়, এটা নিয়ে তার অনুশোচনা কতটুকু ছিল সেটাও স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধে শেষে তুরিনে ফিরে দেখেন অনেক প্রিয় মুখই চিরতরে হারিয়ে গেছে। জেইমে পিন্তোর মার্কিনীদের পেতে রাখা মাইনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছেন, লুই রো’কে ফাসিস্তরা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে, জেসপার পায়েত্তা সন্মূখযুদ্ধে মরেছেন। এই শোক আর হারানোর বেদনা কথা ফুটে ওঠে তার এ’সময়ে রচিত ‘পৃথিবী ও মৃত্যু’র কবিতাগুলোতে। শোকাহত পাভেযে একবার ভাবেন সবার থেকে দূরে চলে যাবেন, কিন্তু পেরে ওঠেন না। বরং তিনি ইতালীর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন আর পার্টির মুখপত্র লা ইউনিতা’তে কাজ করা শুরু করেন। এ’সময়টাতে পাভেযে দু’হাতে লিখে গেছেন, বন্ধুত্ব হয় কথাসাহিত্যিক ইতালো কালভিনো আর সিলভিও মিচেলি’র সাথে। কিন্তু পার্টি তাকে রোমে বদলী করায় এই সুসময়টা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তুরিনের জীবন আর বন্ধুদের কাছে বিচ্ছিন্নতার বাইরে পার্টির কর্মকাণ্ডে অনাস্থায় পাভেযে আবার গভীর বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। তাই রোম বাসকে তিনি দেখেছেন নির্বাসন হিসেবে। পার্টির কর্মক্ষেত্রে পরিচয় হয় রোমে জন্মানো সিসিলিয়ান কবি বিয়াঙ্কা গারুফি’র সাথে। এক সাথে কাজ করতে করতে, গ্রীক সাহিত্য আর মনোবিশ্লেষণ নিয়ে আলাপ করতে করতে পাভেযে আর বিয়াঙ্কা পরস্পরের প্রেমে পড়ে যান। এই সম্পর্ক নানা টানাপোড়েন আর দোলাচলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে শেষে ভেঙে গেলেও এর ফলাফল চমৎকার। দু’জনে মিলে ‘ফুকো গ্রান্দে’ (দাবানল) নামে একটা উপন্যাস লেখেন, আর তাদের আলাপচারিতার ওপর ভিত্তি করে পাভেযে রচনা করেন ‘দায়ালোঘি কন লিউকো’ (লিউকো’র সাথে কথোপকথন)-এর কবিতাগুলো। বিয়াঙ্কার পরবর্তীকালের রচনায়ও পাভেযের গভীর প্রভাব লক্ষণীয়। ১৯৪৬-এ পাভেযে আবার তুরিনে ফিরে যান।

তুরিনে ফিরে যাবার পরের চার বছর পাভেযের সাহিত্য জীবনের সবচে’ ব্যস্ত সময় কেটেছে। তার জীবনের এই সময়টা নিয়ে, এই সময়ে রচিত সাহিত্য নিয়ে, সাহিত্যিক বন্ধুদের নিয়ে দীর্ঘ রচনা লেখা যেতে পারে। ১৯৪৯ সালের একেবারে শেষে সপ্তাহখানেকের জন্য পাভেযে একবার রোমে যান। তখন সেখানে এক বন্ধুর বাসায় আমেরিকান অভিনেত্রী ডোরিস ডোলিং-এর সাথে আগত তার বোন কন্সট্যান্স ডোলিং-এর সাথে পাভেযের পরিচয় হয়। পাভেযে কন্সট্যান্সের প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু ইতালীয় অভিনেতা আন্দ্রিয়া চেচ্চি’র প্রেমে মগ্ন কন্সট্যান্স পাভেযেকে ফিরিয়ে দেন। কন্সট্যান্স তুরিনে বেড়াতে গেলে সেখানে আবার তাদের দেখা হয়। দু’জনে একসাথে সারভিনিয়াতে বেড়াতে যান। পাভেযে আবারও কন্সট্যান্সকে প্রেম নিবেদন করেন এবং কন্সট্যান্স আবারও তা ফিরিয়ে দেন।

আমেরিকান মডেল-অভিনেত্রী কন্সট্যান্স ডোলিং অভিনেত্রী হিসেবে এমন আহা মরি কেউ নন্‌। তার অভিনীত হলিউডি মুভির সংখ্যা সম্ভবত দশটিও নয়। তার ক্যারিয়ারের মূল সময়টাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলায় মুভিগুলো বিশেষ আলোচিত হতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে কন্সট্যান্স তার বোন ডোরিসের সাথে স্যুটিং-এর জন্য ইতালীতে যান এবং সেখানেই ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। অথচ তার সাথে ইতালীর কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জন্মেছেন নিউ ইয়র্কে, বেড়ে উঠেছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। কন্সট্যান্স সাকুল্যে তিন বছরের মতো ইতালীতে ছিলেন। অভিনয় করেছেন ছয়-সাতটা অনুল্লেখযোগ্য ইতালীয় মুভিতে। পাভেযের শেষ উপন্যাস ‘লা লুনা এ ই ফালো’ (চাঁদ ও উৎসবাগ্নি) কন্সট্যান্সকে উৎসর্গ করা। পাভেযের শেষের দিকের কবিতা ‘মৃত্যু এসে তোমার চোখ দিয়ে আমাকে দেখবে’ কন্সট্যান্সকে ভেবে লেখা।

কন্সট্যান্স কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত পাভেযে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হন। তবে পাভেযের আগের লেখা থেকে বোঝা যায় প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়াটাই পাভেযের হতাশার একমাত্র কারণ নয়। পুনর্গঠিত দেশে পার্টি কাঙ্খিত বিপ্লবের পথ থেকে বিচ্যুতিও তাকে ক্ষুদ্ধ করেছে। প্রশান্তির জন্য এই সময়ে পাভেযে বার বার ছুটে গেছেন লাঙ্গে-তে। সেখানে সাময়িক প্রশান্তি হয়তো মিলেছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয়নি। শেষে নিজেই স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করে ফেলেন ১৯৫০-এর ২৭শে অগাস্ট বিপুল পরিমাণ বার্বিচুরেট গলাধকরণ করে।

জীবনানন্দ দাশ পাভেযের ৯ বছর আগে জন্মেছিলেন, বেঁচেওছিলেন পাভেযের চেয়ে ৪ বছর বেশি। কিন্তু কাল বিচারে তাদেরকে একই প্রজন্ম বলা যায়। কাব্যবিশারদরা এদের দু’জনকে হয়তো আধুনিক আর রোমান্টিক বা নিওরোমান্টিক ঘরাণাতে ফেলবেন, তবে আমার মতো কবিতার আমপাঠকদের কাছে দু’জনের কবিতার বিষয়বস্তুতে যে প্রচণ্ড সাদৃশ্যটা চোখে পড়ে সেটা ‘মৃত্যু’। দু’জনের অনেক কবিতাতেই আমরা ছত্রে ছত্রে মৃত্যুকে দেখতে পাই। পাভেযে তো কোথাও কোথাও সরাসরি আত্মহত্যার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন। তাদের কবিতার আঙ্গিকেও মিল দেখা যায়, সেটা হয়তো তারা সমসাময়িক বলে। তাদের রচনার আঙ্গিক নিয়ে কিছু বলবো না, কারণ আমি পাভেযে পড়েছি ইংরেজী অনুবাদে। দু’জনেই প্রকৃতির গভীর প্রেমে নিমজ্জিত ছিলেন। একজন লিখেছেন ‘রূপসী বাংলা’ তো আরেকজন লিখেছে ‘তোমাদের গ্রাম’ বা ‘বেলাভূমি’। দু’জনের মধ্যে অমিলও কম নয়। তবে শেষপর্যন্ত দু’জনেই নিজের জীবনের উপসংহার নিজেই টেনেছেন। জীবনানন্দ দাশের সাথে পাভেযে’র তুলনা বা সাদৃশ্য দরকারী নয়। তবে বাংলা কবিতার পাঠক পাভেযে পাঠ করতে গেলে তার তন্ত্রীতে জীবনানন্দ দাশ যে ঘা দেবেনই সে কথাটা আগেভাগে জানিয়ে রাখলাম মাত্র।

পাভেযেকে জানতে হলে তার কবিতা পাঠের বিকল্প নেই। কিন্তু তার কবিতা রূপান্তর করার সামর্থ্য বা যোগ্যতা আমার নেই। যারা কবিতা ভালোবাসেন তারা একটু কষ্ট করে পাভেযের বইয়ের হার্ডকপি বা সফটকপি যোগাড় করে নেবেন। ইচ্ছা করেই কোন লিঙ্ক দিলাম না। যারা এই পর্যন্ত আসতে পেরেছেন তাদের পক্ষে লিঙ্কগুলো বের করা কোন ব্যাপার হবার কথা না। তবে পাঠকদেরকে একেবারে নিরাশ করছি না। পাভেযের বিভিন্ন রচনা থেকে কয়েকটা উদ্ধৃতি নিচে দিয়ে দিলাম। বাজে অনুবাদের দায় কেবলমাত্র আমার।

----------------------------------------

১. ভ্রমণ একপ্রকার নৃশংসতা। এটি অপরিচিতজনকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে, নিজ গৃহের সমস্ত দৈনন্দিন সুবিধা আর প্রিয়জনদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। নিজেকে সব সময় অস্থির রাখে। নিজের অত্যাবশকীয়গুলো ছাড়া আর কিছুই নিজের থাকে না - বাতাস, নিদ্রা, স্বপ্ন, সমূদ্র, আকাশ - সবকিছুই নিঃসীম মনে হয় অথবা যেমনটা আমরা ভাবতে চাই।

২. আপনি যদি দূরে আর দ্রুত ভ্রমণ করতে চান তাহলে নিজেকে হালকা করে ফেলুন। ঝেড়ে ফেলুন হিংসা, ঈর্ষা, ক্ষমাহীনতা, স্বার্থপরতা এবং ভয়।

৩. সমস্ত পাপই হীনমন্যতা থেকে উৎসারিত, নচেৎ একে উচ্চাশা বলা হয়।

৪. সাহিত্য জীবনের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাস্বরূপ। সাহিত্য জীবনকে বলে, তুমি আমাকে হারাতে পারবে না। আমি তোমার স্বভাব জানি, তোমার প্রতিক্রিয়াগুলো জানি এবং তা উপভোগ করি। তোমার স্বাভাবিক প্রবাহের বিরুদ্ধে চতুর বাধা দিয়ে তোমার গোপনীয়তাগুলো চুরি করি।

৫. খাদে পড়ার হাত থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে খাদটার ভেতরটা দেখা, পরিমাপ করা এবং শেষে তাতে নেমে পড়া।

৬. ধর্মসমূহের মধ্যে সবচে সস্তা হচ্ছে ভালোবাসা।

৭. আমরা দিনগুলোকে মনে রাখি না, মনে রাখি মুহূর্তগুলোকে। যে দিনগুলোর কথা আমরা ভুলে গেছি জীবনের সার্থকতার স্মৃতিগুলো সেগুলোতেই নিহিত।

৮. জীবন হচ্ছে যন্ত্রণা আর ভালোবাসার আনন্দ হচ্ছে একপ্রকার চেতনাহীনতা।

৯. প্রত্যেকটি বিলাসিতার জন্যই মূল্য দিতে হয়, এবং পৃথিবীর সবকিছুই বিলাসিতা যার শুরুটা হচ্ছে পৃথিবীতে টিকে থাকা দিয়ে।

১০. বেঁচে থাকার কৌশল হচ্ছে মিথ্যাকে বিশ্বাস করার কৌশল জানা।

১১. কোন নারীই টাকার জন্য বিয়ে করে না। তারা যথেষ্ট বিচক্ষণ। তাই তারা কোন কোটিপতিকে বিয়ে করার আগে তার প্রেমে পড়ে।

১২. শিক্ষা দান করা যায় না, শিক্ষা অর্জন করতে হয়।

১৩. নিজে নিজে একটা দুঃসময়কে বেছে নেয়া হচ্ছে দুঃসময়ের বিরুদ্ধে আমাদের একমাত্র প্রতিরক্ষা। এর মানে হচ্ছে কষ্টকে গ্রহন করা। প্রকৃতিগতভাবে পুরোপুরি সয়ে যেতে পারাটা একজনের সুবিধা।

১৪. প্রস্তুত হাতের চেয়ে বরং আমাকে প্রস্তুত জিহ্বা দাও।

১৫. পৃথিবীর একমাত্র আনন্দ হচ্ছে কোন কিছু শুরু করা।

১৬. সবসময়েই ঘৃণা হচ্ছে আমাদের আত্মার সাথে কারো শরীরের সংঘাত।

১৭. কবিতা কোন উজ্জ্বল ধারণার জন্ম দেয় না, কিন্তু উজ্জ্বল ধারণাকে প্রজ্জ্বলিত করে।

১৮. একপ্রকার নাস্তিবাদ কেবল আরেক প্রকার নাস্তিবাদ দিয়ে নিরাময়যোগ্য।

১৯. জীবনে একটা জিনিস খুঁজে বের করতে হবে, তা হচ্ছে অনেকগুলো সুযোগ।

২০. যে নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে অবগত নয় তার দুষ্কালকে রুখে দাঁড়ানো উচিত নয়।

২১. জীবনের শেষ বছরটা হচ্ছে একটা ‘মুখোশ পার্টি’র শেষের মতো, যখন মুখোশগুলো খুলে ফেলা হয়।

২২. শিল্পীরা বুর্জোয়াঁ রাষ্ট্রের পুরোহিত।

২৩. একজনের শৈশবের তখনই সমাপ্তি ঘটে যখন সে বুঝতে পারে কাউকে নিজের সমস্যার কথা বলা অবস্থার কোন উন্নতি ঘটায় না।

২৪. একজন নারীকে ভালোবেসে কেউ আত্মহত্যা করে না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য করে। যে কোন ভালোবাসা আমাদের মধ্যকার নগ্নতা, দুর্ভাগ্য, দুর্বলতা আর অন্তঃসারশূন্যতাকে প্রকাশিত করে দেয়।

২৫. জীবনটা হচ্ছে একটা লম্বা যোগ অংকের মতো। কেউ যদি প্রথম দুটো সংখ্যা যোগ করতেই ভুল করে বসে তাহলে কোনদিনই সে ঠিক উত্তরটি মেলাতে পারবে না। তাই জীবন হচ্ছে পরিস্থিতির জটিল শৃঙ্খলে নিজেকে জড়ানো।

২৬. মৃত্যুপথযাত্রী অনেক মানুষ আছেন যাদেরকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলে ক্রোধে ফেটে পড়েন।

২৭. মহান প্রেমিকেরা সব সময়ই অসুখী হন। কারণ, তাদের প্রেম মহৎ এবং দয়িতার জন্য গভীর ভাবনায় পূর্ণ। বিনিময়ে দয়িতার কাছ থেকে তারা অমন মহৎ আর গভীর ভাবনায় পূর্ণ প্রেমই প্রত্যাশা করেন। সেটা না পেলে তারা নিজেদের প্রতারিতবোধ করেন।

২৮. যে তোমার সাথে তোমার পরিণতিকে বরণ করতে রাজী না, তার কাছ থেকে সিগারেট নিও না।

২৯. আত্মহত্যা করার জন্য ভালো কারণের কখনোই অভাব হয় না।

৩০. যে মহৎ ব্যাপারটি আমরা সবসময় অনুভব করি সেটা হচ্ছে আত্মহত্যার আকাঙ্খা। এটি আমাদের মনের গভীরে আছে। একজন অসহায় শিশুর মতো আমরা নিজেদের সব প্রতিরোধ ভেঙে নিজেকে এর কাছে সমর্পণ করি। আত্মহত্যার ধারণা হচ্ছে জীবনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আত্মহত্যার মাধ্যমে কেবল মৃত্যুকে আকাঙ্খা করার হাত থেকে পলায়ন করা যায়।

----------------------------------------

ঠ্যাঙনোটঃ সচলের মার্জিনে কবিতা লেখার মতো দুষ্কর্মের প্রতিক্রিয়ায় এস এম মাহবুব মুর্শেদঅনিন্দ্য রহমান-এর অনুযোগের প্রেক্ষিতে এই লেখা। ঠেলা দিয়ে পাভেযে সম্পর্কে লিখিয়ে নেবার জন্য তাদের উভয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা।


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

সবচেয়ে ভাল লেগেছে ৩০ নম্বরটি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই কবি'র সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবচেয়ে ভাল লেগেছে ৩০ নম্বরটি।

সর্বনাশ, বলেন কী! কন্সট্যান্স ডোলিং-এর কাছ থেকে দূরে থাকুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

১ নম্বরটি কপি করে রাখি, তারেক অণুর উপর ঝাল ঝাড়তে কাজে লাগবে চোখ টিপি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

২ নম্বর উদ্ধৃতিটি লক্ষ করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

২ নম্বরটা আছে কিন্তু হাসি

সৌরভ কবীর

আইলসা এর ছবি

ভালো লাগলো খুব।

উত্তম জাঝা!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

৩, ৫, ১৬ এবং ৩০ নম্বরটা খুব ভালো লেগেছে।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে -- " যে কোন ভালোবাসা আমাদের মধ্যকার নগ্নতা, দুর্ভাগ্য, দুর্বলতা আর অন্তঃসারশূন্যতাকে প্রকাশিত করে দেয়।"

সৌরভ কবীর

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

পান্ডবদা আপনার লেখা দেখে অফিস থেকে চুরি করে লগ ইন করে ফেললাম। ৫ নাম্বারের খাঁদে পড়ার তত্ত্বটা খুউউব ভাল্লাগছে। বাঁধাই করে রাখার মত।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

খাদে পড়ার তত্ত্বটা বিবাহিত পুরুষ/নারী মাত্রই হাড়ে-মজ্জায় জানেন।

অটঃ কার যেন ঢাকায় আসলে দেখা করার কথা ছিল। নাদের আলীরা কথা রাখে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

নাদের আলী একটু দোটানায় ছিল, ঠিক করে উঠতে পারে নাই উপদ্রব করা উচিত হবে কি হবে না লইজ্জা লাগে । এইটা নাদের আলীর অপরিপক্কতা বিবেচনা করে ছাড় দেয়া হোক। আসছে বারে এই ভুল আর হবে না হাসি

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

দুর্দান্ত এর ছবি

উক্তিগুলোর কয়েকটা তার দিনপন্জির সংকলন (জিন্দেগির তেজারতি?) তে পেয়েছিলাম। গুগলে এই বইটার একটা অসম্পূর্ণ সংস্করন আছে।

***
৪/১৭ আর ২২ এর মধ্য়ে একটু পরস্পর বিরোধিতা আছে না? শিল্পীরা হল গিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগতকারির পুরোহিত (পাভেযে অবশ্য় সেকারদোতে/প্রেত না বলে বলছে মনিচি, যার মানে হয় সন্য়াসি) আর কথা সাহিত্যিক ও কবিরা যথাক্রমে জীবনের রক্ষাকবচ ও উজ্জ্বল ধারনার দেশলাই?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তোমার উল্লেখিত বইটার মূল নাম 'Il mestiere di vivere: Diario 1935–1950', এখানে mestiere শব্দটার অনুবাদ art বা craft করাটা সঙ্গত হয়, business-টা ঠিক জুতসই হয় না।

৪, ১৭ এবং ২২-কে আমার কাছে তিনটি independent ধারণা বলে মনে হয়েছে। এগুলোকে mutually exclusive বা intersecting বা overlapping ধারণা বলে মনে হয়নি।

sacerdote/prete = পুরোহিত, monaco = সন্যাসী ঠিক আছে। তবে পুরোহিতের পক্ষে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা সম্ভব, সন্যাসীর পক্ষে নয়। সে হিসেবে তোমার ভাষান্তর যথার্থ। আমি অবশ্য পাভেযের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। কথাসাহিত্যিক আর কবি সম্পর্কে তার মতামতের ব্যাপারে আমি নবারুণ ভট্টাচার্যের পরামর্শ সঠিক মনে করি। তিনি বলেছেন পাভেযে'র কবিতাকে তার উপন্যাসের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

ভালো লাগল।
আচ্ছা দাদা, আপনাকে ফেবুতে না পেয়ে সচলে একটা মেসেজ দিয়েছিলাম, পেয়েছেন কি? অথবা এখানেই জানাতে পারেন, আপনি কি রেপ অফ নানকিং বইটা খুঁজছিলেন?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

হার্ড কপি আছে, জানুয়ারিতে নিয়ে আসব।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।

সেজার পাভেযের কবিতা কোথা থেকে পড়া যায় ?? নিজে না পড়লেও কোঞ্চিপাকোবি ত্রেক্কে দেয়া যায় ভাবছি। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটু খাটাখাটনি করো, নেটেই পাভেযের কিছু কবিতা, কিছু বই পেয়ে যাবে। বাষট্টি বছর পার হয়ে গেছে, এখন আর কপিরাইটের ঝামেলা থাকা উচিত না।

তারেককে আমি সাধারণত কারো কবিতা সাজেস্ট করি না। কবিতার ব্যাপারে ওর সাজেশন নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অতএব, আগে কোটিপতি হোন - নারী'র প্রেম উইল কাম ইন ডিউ কোর্স। ইউরো-ডলার-পাউন্ড-টাকায় কোটিপতি হতে না পারলে ভিয়েতনামী ডঙ, লাও রিপাবলিকের কিপ বা জ্ঞানাইয়ান সেদি-তে কোটিপতি হলেও চলবে। উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

দারুন চলুক

আমারো ৩০ নম্বরটা ভালো লাগল।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্যাপারটা কী, সবাই ৩০ নম্বরকে ভোট দেয় কেন?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

চলুক কয়েকটা তো মারাত্মক।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঘটনা তো আসলেই মারাত্মক, নয়তো কি আর মুঠো মুঠো বার্বিচুরেট খায়!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দারুণ!!! উত্তম জাঝা!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

উত্তম জাঝা!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগলো, ধারাবাহিক চলুক।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি আবার কী ধারাবাহিক চালাবো! পাভেযে তো আপনার প্রতিবেশী। কবিতা লেখা বা রূপান্তরের কাজ তো আপনার - আমার নয়। আপনি বরং 'Verrà la morte e avrà i tuoi occhi'-টা যোগাড় করে বাংলা রূপান্তর শুরু করে দিন। তাহলে আমরা ধারাবাহিক ভাবে পাভেযের কবিতা পড়তে পাবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

আমরা মৃত্যুর আগে কী বুঝিতে চাই আর? জানি না কি আহা,
সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মতো এসে জাগে
ধূসর মৃত্যুর মুখ — একদিন পৃথিবীতে স্বপ্ন ছিল — সোনা ছিল যাহা
নিরুত্তর শান্তি পায় — যেন কোন্‌ মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে।
কী বুঝিতে চাই আর? রৌদ্র নিভে গেলে পাখিপাখলির ডাক
শুনি নি কি? প্রান্তরের কুয়াশায় দেখি নি কি উড়ে গেছে কাক।
মৃত্যুর আগে - জীবনানন্দ দাশ

মৃত্যুর নগ্ন নির্জন হাত ছুঁয়ে লাশকাটা ঘরে শুয়ে থাকতে মনে হয় কোন কোন কবিদের খুব ভালো লাগে। তবে ২৯ আর ৩০ নিয়ে একটা মজার তথ্য আছে। আত্মহত্যা এমন একটা অপরাধ, যেটি করে ফেললে শাস্তি নাই, কিন্তু করার চেষ্টা করলে শাস্তি পেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি যখন প্রথম পাভেযে'র কবিতা পড়ার সুযোগ পাই তখনই মনে খুঁতখুঁত করছিল এমন জিনিস আগে কোথায় যেন পড়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝে যাই, আরে ধানসিঁড়ি পাড়ের বাসিন্দা আর লাঙ্গে পর্বতের পাদদেশের বাসিন্দা তো আসলে এক ঘরের মানুষ!

ফালতু কথা না বলে বরং একটা উদাহরণ দিয়ে যাই,

"Death will come and have your eyes
death that accompanies us
from dawn to night, sleepless,
deaf, like an old remorse
default or an absurdity. Your eyes
be a useless word,
a silent cry, a silence.
So you see every morning
when you lean one
in the mirror. Oh, face hope
that day we will know, too,
that are life and you are nothing.
For all death have a look.
Death will come and have your eyes.
It will be like leaving a vice,
like looking in the mirror
poke a dead face,
like listening to a lip and closed.
Dumb, descend into the abyss."


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পুতুল এর ছবি

দূর্দান্ত!!!
২২ নাম্বারটা মনে হয় বেশী কঠিন।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ বস্‌!

আপনার উপন্যাস যে পূর্ণ গতিতে ছুটছে দেখে খুব ভালো লাগছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রংতুলি এর ছবি

চলুক চলুক ১ নাম্বারের অনুভূতি নিয়ে প্রায় একটা কবিতা লিখে ফেলছিলাম! সাথে ৫, ১২, ১৫, ২৯ নাম্বারগুলো বেশী রিয়ালিস্টিক।

১১ নাম্বারটাতে প্রশ্ন আছে কেউ কি (নারী বা পুরুষ) নিজের মর্জিমাফিক প্রেমে পড়তে পারে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যাহ্‌! একটা 'প্রায় কবিতা' কি তাহলে আর 'কবিতা' হতে পারলো না?

এমনিতেই বেশির ভাগ মানুষ নির্ভরতা, মোহ আর প্রেমের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তবে এই তিনটার কোনটাই মর্জিমাফিক হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ (নারী বা পুরুষ যে-ই হোক) এই তিনটার যে কোনটাকে প্রেম বলে দাবী করে তদ্রুপ অভিনয় করতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

অধিকাংশ কোটেশনই অদ্ভুত! (ধৃষ্টতা কিঞ্চিত বেশি হলে আরো কতগুলো বিশেষণ যোগ করতাম খাইছে )

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কোটেশনগুলো আমারও না, তোমারও না। সুতরাং ধৃষ্টতা আবার কী! মন খুলে বিশেষণ যোগ করতে পারো। এতে পাভেযের ব্যাপারে অন্য রকম ভাবনাও ভাবা যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

৮,১৫,২৪,২৬ একই কথার ভ্যারিয়েশন। বাসনায় আনন্দ আছে, বাসনা-পূরণে বিরক্তি। ১৮, হেগেলীয় দ্বন্দ্বের ৩য় সূত্র। কোনো নিরাময়ই যদিও স্থায়ী না।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাসনা পূরণে ক্লান্তি বা বিরক্তি আসলে বুঝতে হবে বয়স হয়েছে বা সামর্থ্য কমেছে। বাসনা পূরণে নতুন বাসনার সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে যৌবন এখনো মধ্যগগণে।

একটি নঞর্থক ধারণাকে আরেকটি নঞর্থক ধারণা দিয়ে নিরাময় করার ব্যাপারটি একটি সাধারণ কৌশল। কিন্তু একটি নঞর্থক ধারণাকে একটি সদর্থক ধারণা দিয়ে নিরাময় করার চেষ্টাটি মহৎ ব্যাপার। দ্বিতীয় পথটি আবিষ্কারের জন্য সৃষ্টিশীলতা, সাহস এমন সব গুণ থাকতে হবে।

উচ্চতা যত কমতে থাকে স্থিতিশক্তি তত কমতে থাকে, অবস্থান আরো সুসংহত হয় - দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু কোন উচ্চতা, কোন গতি, কোন অবস্থান চিরস্থায়িত্বের নিশ্চয়তা দিতে পারে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীলম এর ছবি

৩ নম্বরটা আমার চিন্তার সাথে এতোই মিলে গেল যে বাকিগুলোতে আর ঠিকমত মনই দিতে পারলাম না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কবি'র শ্রেষ্ঠত্বটা এখানেও। সময় করে বাকিগুলোও পড়ে ফেলুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শাব্দিক এর ছবি

২৯, ৩০ দুইটাই তো ভাল্লাগ্লো। ৫ আর ২৩ টা বেশ ভাল।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর জলছবি এর ছবি

দুর্দান্ত । ৫ ,৯,২৩,৩০ এই কয়েকটা বেশী মনে ধরল । হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমার চোখ যেদিন থেকে চালশে হলো, সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করলাম, কত কিছুই যে পড়ি নি!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।