পড়েছি মোগলের হাতে

অনিকেত এর ছবি
লিখেছেন অনিকেত (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/০৯/২০০৭ - ৯:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ 'প্রথম আলো'তে আনিসুল হকের একটি লেখা বেরিয়েছে,তার নিয়মিত কলাম 'অরন্যে রোদন'-এ। বিষয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। সাথে সাথে আরো কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় তিনি উত্থাপন করেছেন। যেমন, ভারতীয় নাগরিকদের আমাদের দেশে কাজ করার ক্ষেত্রে কেবল work permit দেয়া ছাড়া আমাদের সরকার আর কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? ভারতীয় ব্যবসাদাররা আমাদের দেশে যে পরিমান বানিজ্য করছেন, সে পরিমান মত কর কি তারা দিচ্ছেন? খুবই ওজনদার প্রশ্ন। কিন্তু আমাকে যে বিষয়টি নাড়া দিয়েছে তা হলো,আমাদের নিজেদের অপরিনামদর্শিতা এবং জাতি হিসেবে সামান্যতম আত্মস্লাঘার অভাব।

আনিসুল হক বলেছেন, রেডিও এফ এম গুলোর কথা। বলেছেন তাদের 'বাংরেজি' ভাষার ব্যবহার।এই যন্ত্রনাটি আমাদের সঙ্গে আছে বেশ অনেকদিন ধরে। খুব ছেলেবেলাতেই বাচ্চাদের মনে এই কথাটি জোরেসোরে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে ফটফট করে ইংরেজি বলতে পারাটাই 'স্মার্টনেস' এর লক্ষন। এমনকি 'স্মার্ট' শব্দটার মানে ছেলেবেলায় আমার কাছে ছিল এই রকম -- নিপাট করে আচড়ানো চুল,দামী জুতো, দামী জামা, লর্ড ক্লাইভের মত 'হেই টুমি এইডিকে এশো' জাতীয় উচ্চারনে বাংলা বলা এবং সবচেয়ে জরুরি বৈশিষ্ট্য ছিল, যারা আমাদের মত ধুলো মাখা জামা পরা অবিন্যস্ত চুলের 'গাইয়া' ছেলেপিলে,তাদের দিকে করুনার দৃস্টিতে তাকান। বহুবছর পর, আমি যখন পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি, তখন দেখলাম 'স্মার্টনেস' এর অন্য সংজ্ঞা। এখানে 'স্মার্ট' তারাই যারা বুদ্ধিতে চৌকশ। কাজেই প্রথম যেদিন হাফ প্যান্ট পরা,চুল পিছনে বেনী করা এক লোক কে আমাদের Electrodynamics এর ক্লাস নিতে দেখলাম, আমি তখন সন্ত্রস্ত হয়ে ভাবছিলাম, আমি ভুল রুমে ঢুকে যাইনি তো? সেই ভদ্রলোকের মত তুখোড় মানুষ আমি কমই দেখেছি।

যাক প্রসংগ থেকে দূরে এসে পড়েছি। বলছিলাম,বাংরেজি-র কথা। আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না যে, কেন আমরা আমাদের নিজেদের ভাষা,নিজেদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গর্বিত হতে পারিনা। কেন আমরা সব কিছুতেই পরাঙ্মুখ।
কেন আমাদের রেডিও শুনতে হবে বাংরেজিতে। কেন আমাদের নিজেদের গান না শুনে হিন্দি গানে মাথা দোলাতে হবে? কেন আমার সাড়ে তিন বছরের ভাগ্নি আমাকে বলবে,"মামা, একটা ঝাক্কাস কাহানী শোনাও তো'। আমি কিছুদিন পর পর দেশে ফিরি। প্রতিটা বার আমাকে নুতুন করে খাপ খাওয়াতে হয়। শেষবার যখন গেছি, তখন দেখলাম,ঢাকা ছেয়ে আছে ঐশ্বরিয়া,কারিণার বড় বড় বিলবোর্ডে। কেন? আমাদের দেশে সুন্দরী মেয়ের অভাব পড়েছে? অনেকে হয়ত বলবেন, ভারতীয়রা বিজ্ঞাপন বানিয়েছে,তাই----। এটা মোটেই গ্রহনযোগ্য যুক্তি নয়। তারা পন্য বেচতে এসেছে আমার দেশে। আমার যা ভাল লাগবে সেই অনুযায়ী তারা বিজ্ঞাপন তৈরি করবে।আমাদের ফরমাস মত। দুঃখের বিষয় হল যে তারা আসলে অনেক সময় আমাদের 'ফরমায়েস' অনুযায়ীই বিজ্ঞাপন তৈরি করছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আমাদের দেশেরই কোনো হোৎকা ভুড়িওয়ালা লোক হাত কচলাতে কচলাতে গিয়ে ওদের বলেছে,আরে ঐশ্বরিয়ার ছবি লাগান, পাবলিক খুব 'খাবে'।

হায়রে পাবলিক !

আমাদের দশা এমন যেন নিজের দেশে আমরা পরবাসি। রাস্তা ঘাটে বেরুলে হিন্দি গানের চোটে মনে হয় আমি কি বাংলাদেশে আছি? নাকি, ভারতে? আমাকে খামকা ভারত বিদ্বেষী ভাবার কোন কারন নেই। আমি ওদের দোষ দেইনা। কেউ যদি নিজের পশ্চাতদেশ এগিয়ে দিয়ে বার বার অনুরোধ করতে থাকে একটা লাথির জন্য,লাথি খাওয়ার পর কান্না কাটি কি তার মানায়?
আমরা 'পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে'।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

‌আপনার মত আমারো স্মার্ট মানে একই ধারনা ছিল। কানাডায় এসে বুঝেছি ম্যাথ রিলেটেড বিষয়ে পড়লেও স্মার্ট হওয়া যায়। ম্যাথের কথা শুনে সাদাগুলো প্রায়ই বলে-- 'ইউ গাইজ আর স্মার্ট।'

জিফরান খালেদ এর ছবি

স্বাগতম!!!

আপনার লিখনী চমৎকার।

কারুবাসনা এর ছবি

রিলায়েন্স কোম্পানির কথা মনে পড়ল।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন নিঃসন্দেহে টপিক হিসেবে বেশ পুরোনো। আনিসুল হক সাহেব তার চেয়ে আমাদের সংস্কৃতিবান মানুষদের মেরুদন্ডহীনতার সাম্প্রতিক টপিক নিয়ে রোদন করলেই বেশি ভালো লাগতো।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

স্বাগতম। আপনার লেখা পড়ে মজা পেলাম। তবে খুব বেশী জেনারেল হয়ে গেছে। কিভাবে ব্যাপারগুলো এড়ানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করলে মজা পেতাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি না।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কথাটাতেই আমার আপত্তি।
সংস্কৃতি গড়ে ওঠে একটি জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের আচার চর্চার মাধ্যমে।

সেটাকে উন্মুক্তই রাখতে হবে।
একসময় এই দেশে মসজিদ ছিল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন,আজকে পাড়ায় মহল্লায় মসজিদের অবস্থান আমাদের সংস্কৃতি।আমাদের পৌত্তলিক সংস্কৃতি এখানে মসজিদের কাছে পরাজিত হয়েছে।তবলা একটি আগ্রাসী বাদ্যযন্ত্র,কিন্তু আজকে তবলা আমাদের সংস্কৃতির প্রতীকগুলোর একটি।
চলতি ভাষায় লেখাটাকে একসময় অপসংস্কৃতির উৎকৃষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে,এখন আপনি যদি সাধু ভাষায় ব্লগ লিখেন,ইত্তেফাকের বুড়ো পিওন ছাড়া কেউ সেটা পড়ার আগ্রহ দেখাবে কি না আমার সন্দেহ।

বাংলা ভাষা যদি হিন্দী বা ইংরেজীর কাছে তলিয়ে যায়,আমি তাতে ব্যথিত হবো,কিন্তু আপত্তি করবো না।যে টিকে থাকতে পারে না,তাকে ধ্বংসই হতে হবে।এটাকে জোর করে আটকালে হয়তো জাদুঘরের তাক ভরা যায়,কিন্তু সংস্কৃতি হয় না।

হিমু এর ছবি

আপনি যদি সাধু ভাষায় ব্লগ লিখেন,ইত্তেফাকের বুড়ো পিওন ছাড়া কেউ সেটা পড়ার আগ্রহ দেখাবে কি না আমার সন্দেহ।

প্রতিবাদ করিতেছি হো হো হো ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কেন,বুড়া পিওন কি ব্লগ পড়ে না বলতে চান?

অতিথি এর ছবি

আনিসুল হক ৫১বর্তী ও অন্যান্য কিছু নাটকে কি স্নবারীর আরেক ভাষার জন্ম দেন নি ? সেখানে নায়ক নায়িকা প্রমিত বাংলায় কথা বলে না - খাইসি, করসি জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে প্রমাণ করে তাদের মাতৃ ভাষা 'বুয়া-বাংলা', অর্থাৎ তাদের উচ্চ-মধ্য শৈশব কেটেছে বুয়াদের কাছেই বেশি।
আমার শৈশবে [কোন সুদূরে] আমার মা সর্ষের তেল মাথায় অন্তর্বাসহীণ সেফটিপিন লাগান হাফ প্যান্ট পরিয়ে আমাকে দেশের সব চেয়ে সম্ভ্রান্ত স্কুলটিতে পাঠাতেন। প্রথমে কয়েকজন শিক্ষক ধমক দিতেন - এই তোর বাড়ি কোথায় রে? বলতাম - নোয়াখালি। তাতে তাঁরা আরো গর্জন করে বলতেন - তুই এই স্কুলে কেন এসেছিস ? তারপর আমার পার্ক সার্কাসী উচ্চারণে সন্দেহ ভরা চোখে তাকিয়ে বলতেন - সত্যি বলছিস ? নোয়াখালি ? এখনকার সময় হলে আরো মজ়া করে বলতাম - জী স্যার, মোয়িন ইউ, মাসুদ ইউর বাড়ির কাছেই। আসলেই কথাটা সত্যি। সারাজীবন সহপাঠিরা আমাকে ভীষণ সম্মান করেছে । না, কখনো বলে নি আমি স্মার্ট; শব্দটা প্রচলিত অর্থে নিজেদের সুবেশী বন্ধুদের জন্যই বরাদ্দ ছিল। আমি ছিলাম 'ভালো ছেলে'। তাই যখন নিজেদের মধ্যে আদি রসের আলাপ করত, আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেত, যাতে আমি ওদের মতই 'খারাপ' না হয়ে যাই! না , সেকালে সব চেয়ে সম্পন্ন পরিবারের সন্তানেরাও বুয়া বাংলা বলত না, যদিও পূর্ব বঙ্গীয় একটা টান ছিল অনেকের।

হিমু এর ছবি

আমি আনিসুল-ফারুকির নাটকে ভাষারীতির সপক্ষে নই, কিন্তু আপনার বক্তব্য ঠিক বুঝলাম না। সেকালের সম্পন্ন পরিবারের সন্তানদের প্রসঙ্গে বললেন, ফারুকির নাটকে একালের "চলতি" বাংলা গুঁজে দেয়ার চেষ্টার কথা বলে। খাইসি করসি যে বুয়া বাংলা শুনে কিছুটা থতমত খেলাম। বাংলাদেশে অনেক জায়গাতেই খাচ্ছি করছি বলা হয় না, সবার ঘরেও প্রমিত বাংলা ব্যবহৃত হয় না, সেটাকে বুয়া-বাংলা বললে শ্রুতিকটূ মনে হয়। এভাবে আঞ্চলিক বাংলাকে বুয়া বাংলা বলে চালিয়ে দেয়াও এক ধরনের স্নবারি বলা যায়।

নাটকে প্রমিত ভাষারীতির ব্যবহারে "অভ্যস্ত" আমি, কেউ যদি বাংলাদেশের নাটকে আঞ্চলিক বাংলার আধিক্য ঘটান তাহলেও আমার আপত্তি নেই, আমার আপত্তি হবে যদি একটি কৃত্রিম, আরোপিত ভাষারীতিকে নাটকে "স্বাভাবিক" বা "ঘরোয়া" ভাষা হিসেবে গেলানোর চেষ্টা করা হয়। আনিসুল-ফারুকির নাটকে প্রচুর চেঁচামেচি হয়, সেখানে প্রচুর প্রস্ফূটিতদেহ মেয়ে থাকে, তারা সারাদিন শুয়ে থাকে নয়তো উচ্চগ্রামে চিৎকার করে ঝগড়া করে, ইত্যাদি আগড়ম বাগড়ম ছাগড়ম ... কিন্তু আপত্তি করবো আপনার ব্যবহৃত বুয়া-বাংলা শব্দটায়। বুয়ার দেশের বাড়ি দিনাজপুর বা যশোর হলে হয়তো সে বাসার মালকিনের চেয়েও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে, নাকি?


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি এর ছবি

দুঃখিত, আমার কথা বোঝাতে না পারায়। আঞ্চলিক বাংলাকে 'বুয়া বাংলা' বলি নি। নিশ্চয়ই নোয়াখালি, বরিশাল, রংপুর , চাটগাঁয়ের ভাষাতে নান্দনিক সাহিত্য রচিত হতে পারে, উপভোগ্য নাটক প্রদর্শিত হতে পারে। তবে বাড়ির সবাই যখন স্বাভাবিক বাংলাতে কথা বলে, বিশেষ করে বাবা-মা, তখন সুশিক্ষিতা, সুন্দরী তরুণীর মুখে এ জবানের অন্য উদ্দেশ্য খুঁজতে হয়। 'প্রস্ফূটিতদেহ মেয়ের' মুখে এ আজব মিশেল ভাষা বোধ হয় বেশ কিউট শোনায়, কিছুটা বেশি আকর্ষণীয় মনে হয় তাকে, ফ্রয়েডের যুক্তিতে তাকে ভাগ্যহত তরুণী গৃহকর্মিণীর মত তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য মনে হওয়াতে। আমি আর এ বিতর্কে যাব না।

যাঁরা বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন, পরে সাহিত্যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, এ রকম তিন জনের লেখাতেই কিন্তু বিভিন্ন ফর্মুলার গিমিক রয়েছে, যা পাঠকরা ঠিক ধরতে পারেন না, কিন্তু খেয়ে যান অকাতরে।

'বুয়া' শব্দটির অর্থ 'ফুপু/পিসি', যা মোটেই অসম্মানের নয়। আমাদের হালের গিন্নীরা নতুন অর্থে এ শব্দ ব্যবহার করছেন, হয় তো নিজের সংসারে ননদিনীকে এক হাত নেওয়া।

দ্রোহী এর ছবি

ডরাইছি!! সারাজীবনে কখনোই খেয়েছি, করেছি ... এভাবে কথা বলেছি কিনা মনে পড়ছে না। যতদুর মনে হচ্ছে আমি বোধহয় বুয়া বাংলাতেই কথা বলি।


কি মাঝি? ডরাইলা?

মাশীদ এর ছবি

ডরাইসি!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আনিসুল হককে লেখা বেচেঁ খেতে হয়,উনি তাই এই সব জনপ্রিয় টপিক নিয়ে লিখতেই পারেন।
কিন্তু সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এতো সহজ না।গুলশান বনানীর পুলা মাইয়া মিলে সংস্কৃতি বদলে ফেলবে বলে মানতে রাজী নই আমি।এর মূল জনসংখ্যার দশমিকের পরের একটা ভগ্নাংশ মাত্র।
.
যারা এসব নিয়ে চিন্তিত তাদের বলি যে,আজকে কিন্তু অনেকগুলো টিভি স্টেশন চালু হয়েছে বাংলাদেশে,এখন স্টারপ্লাস আর সনি,জিটিভির সিরিয়ালের চেয়ে সারওয়ার ফারুকীর সিরিয়াল বেশি জনপ্রিয়।এই জিনিষটা মাথায় রাখতে হবে।এটা একটা পজেটিভ পয়েন্ট যে এখনও ভালো জিনিষ দিলে মানুষ সেটাকে গ্রহন করবে।আমাদেরকে মানোন্নয়নের মাঝ দিয়েই টিকে থাকতে হবে,দরজা বন্ধ করে নয়।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কথা যারা বলেন,তাদেরকে অনুরোধ করি ১লা বৈশাখে একবার ঢাকা শহরে চক্কর দিয়ে আসতে।
এরকম জাতীয় উৎসব দশ বছর আগেও অসম্ভব একটা বিষয় ছিল ।১লা বৈশাখে এখন আলাদা ফ্যাশন হয়,মধ্যবিত্ত মানুষ পর্যন্ত একটা লাল সাদা সুতি কাপড় পরার চেষ্টা করে,পাড়ায় মহল্লায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়..এই সব বিষয়কে ফেলনা ভাবার উপায় নেই।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এবার আসা যাক হীণমন্যতা বিষয়ক কথায়।এটা নিয়ে আলাদা আলোচনা করা যেতে পারে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

টপিকটি ইন্টারেস্টিং। আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে, পশ্চিমা সংস্কৃতি মানেই কান ফুটিয়ে দুল পরে মোরগের ঝুটির মত জেল মেরে চুল উঁচিয়ে পাংকু সাজা। আর হরহামেশা বিকৃত উচ্চরণে বাংলা-আংরেজি মিশিয়ে পটাপট কথার তুবড়ি ফুটানোটাকেই দেখা হয় স্মার্টনেস হিসেবে। আমি একটা জিনিস বুঝি না, এই জিনিসগুলো কেন আমরা আমদানী করি; অথচ পশ্চিমাদের গুণগুলো, সময়ানুবর্তিতা, সততা, দেশপ্রেম, শ্রমের মূল্য - এগুলো আমদানি করতে সমস্যা কোথায়?

ভারতীয় সংস্কৃতি কপি করাটা আমাদের জন্য সহজ। তবে সেটাও আলটিমেটলি পশ্চিমা সংস্কৃতির বাহ্যিক এবং খারাপ দিকগুলোর একটা অপভ্রংশ। সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে, ভাষার বিকাশ ঘটবে; মানুষ যেটায় মজা পাবে, সেটাই গ্রহণ করবে; কিন্তু আমি বেশি কনসার্নড অর্থনৈতিক দিকটায়। একটা অনুৎপাদনশীল ভোক্তা জনগোষ্ঠীতে পরিণত হওয়া অনেক বড় ভয়ের কথা।

তবে আরিফ জেবতিক ভাই যেটা বলেছেন, আমিও মনে করি, এই বাংরেজি গ্রুপটা একেবারেই সংখ্যালঘু। সমস্যা হলো, বর্তমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই আংরেজি মিডিয়াম-সেনা-কালোটাকা-ছাগুরাই লাইম লাইটে। আরেকটা ভয়ের ব্যাপার, দেশের শিকড় থেকে উঠে আসা অনেক অ্যাকাডেমিক্যালি শিক্ষিত ছাগুও এই স্রোতে নিজেকে বিলীন করে দেয়।

ওভারঅল ভালো লিখেছেন। এ ধারা বজায় থাক। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ইংল্যান্ডে আমাদের সেকেন্ড জেনারেশন শুরু হয়ে গেছে।বিশেষ করে সিলেটী অনেক ছেলেমেয়ে যাদের বয়েস ২০ থেকে ২৮ এর ঘরে,তারা জীবনেও হয়তো কোনদিন বাংলাদেশে আসে নি,তাদের মাঝে সাংস্কৃতিক একটা আলাদা সত্ত্বা গড়ে উঠেছে।

আমি অবাক হয়ে দেখেছি,তারা (প্রায় ৮০ শতাংশের উপরে)সাদা মানুষের সংস্কৃতিটা নিতে পারে নি,তারা নিয়েছে কালো মানুষের সেই ঢোল জিন্স,রঙচঙে পোশাক,"ইয়ো ম্যান" বলা,রেপ সঙ এই সব বিষয়।

টপিক হিসেবে এটাকেও ইন্টারেস্টিং লেগেছে।কেন একটি "সুশীল"কালচারের দিকে না গিয়ে অন্যপথে গেল এই জনস্রোত?
কেন সাদা হয়ে উঠার চেয়ে কালো হয়ে ওঠার দিকেই ঝোক এই জেনারেশনের ?

প্রবাসী যারা সেখানেই বাস করেন তারা হয়তো ভালো বলতে পারবেন ।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একই ঘটনা জার্মানিতে বসবাসকারী তার্কিশদের। আমার মনে হয়, লন্ডনের বাঙালি বা জার্মানির তার্কিশ - এরা নিজেদের একটা সার্কেলের মধ্যেই সাধারণত বেশি মিশে। আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া যতগুলো তার্কিশ স্টুডেন্ট দেখেছি, সবাই সরাসরি তুরস্ক থেকে স্টুডেন্ট হিসেবে আসা, জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের মধ্য থেকে কাউকে দেখি নি।

জার্মানিতে বাঙালি স্টুডেন্টদের সাথে অধিকাংশ স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাঙালিদেরও একটা কমুনিকেশন গ্যাপ আছে। আমি কারো ভিশনকে ভালো, কারোটা খারাপ - এরকম বলছি না; তবে প্রত্যেকে তার নিজস্ব ভিউপয়েন্ট থেকে কোনো সমস্যাকে দেখে। আশেপাশের মানুষদেরকে দেখে আমরা শিখি। একটা টি-শার্ট পরা প্রফেসর যখন কাঁটায় কাঁটায় সময় মেনে ক্লাস করাতে আসেন, তখন সেই সাকসেসফুল মানুষের সময়ানুবর্তিতাটা আমাদের চোখে পড়ে; আরো বুঝি পোষাকের ফিটফাট বাহার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আবার কোনো একটা সার্কেলে যদি দেখা যায়, সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষটি চুলে জেল মেরে নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পরে কোনো কাজে হাজির হয়েছে এবং যে যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার 'ওয়েট' তত বেশি, এবং সেই ওয়েটের ভারে 'ওয়েটিং টাইম' হয়ে ওঠে গুরুত্ব নির্ধারণের মাপকাঠি, তখন সময় ভাঙ্গাটাই হয়ে ওঠে আদর্শ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

Sushanta এর ছবি

''আমি অবাক হয়ে দেখেছি,তারা (প্রায় ৮০ শতাংশের উপরে)সাদা মানুষের সংস্কৃতিটা নিতে পারে নি,তারা নিয়েছে কালো মানুষের সেই ঢোল জিন্স,রঙচঙে পোশাক,"ইয়ো ম্যান" বলা,রেপ সঙ এই সব বিষয়।''

I am here in London, UK for two years, so I am agree with Jebtik's point.

অরূপ এর ছবি

ভারতে বাংলাদেশীদের Work Permit দেওয়া হয় না।
আমরা ওদের দেই.. মন খারাপ
------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নির্বোধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অরূপ,বিষয়টি এতো সহজ না এক্ষেত্রেও।আপনাকে কি মালয়েশিয়া ওয়ার্কপারমিট দেয় নি?দিয়েছে। কারন আপনার ভেতরের মালটি তাদের দরকার।
ভারতের এই মূহুর্তে বাংলাদেশী এক্সপার্ট দরকার নেই।সেটা তাদের যথেষ্ঠ আছে।ধারনা করি (আমি কম্পুকানা বেশি জানি না) যে আইটিতে আমাদের এক্সপার্ট মানুষ আছে যারা হয়তো অনেকেই ভারতের এক্সপার্টদের চেয়ে অনেক ভালো,কিন্তু সিলিকন ভ্যালিতে ভারত তাদের নিজেদের এক্সপার্টদেরকে ব্যবহারেই বেশি উৎসাহী হবে,এটাই স্বাভাবিক।
আর কোন সেক্টরে বলার মতো এক্সপার্ট জনশক্তি আমাদের আছে?তাছাড়া অডযবের জন্য কুলিমজুরই বা তারা কেন নেবে যেখানে বিহারে জীবনে জুতো পরেনি এরকম লোকের সংখ্যাও অগনিত।

অপরদিকে ভারতের একটা বিশাল অংশ এই দেশে গার্মেন্টস সেক্টরে আছে।তারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কিন্তু
আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে না ,আরেক ভারতীয় বায়িং হাউসেই কাজ করে।একজন ভারতীয় ব্যক্তি তার দেশী ভাইদেরই কাজ দেবে,তার ভাই ভাতিজা বন্ধুকেই দেশ থেকে এখানে নিয়ে আসবে,এটাই স্বাভাবিক।আমাদেরকে বিষয়টা হজম করতে হচ্ছে কারন বায়িং হাউসের ব্যবসাটা আমাদের গার্মেন্টসকে টিকিয়ে রাখছে।

এখানে হয়তো কড়াকড়ি আরোপ করা যেত,কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখানে ব্যবসা করতে অস্বস্থিতে পড়তো।আমাদের দেশে কাজ চালানোর মতো ইংরেজী জানা লোকেরই এত্তো সংকট যে আপনি অবাক হবেন।সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করে যে কবর খুড়েছি,সেই জের এখন টানতে হচ্ছে।অথচ মিডলেভেলে আমাদের ইংরেজী জানা লোকের খুবই প্রয়োজন।
একজন ভারতীয় ভালো ইংরেজী জানলেও বেতন নেবে ৩০ হাজার টাকা,একজন বাংলাদেশী সেই কোয়ালিটির হলে বাংলাদেশে কাজ করবে না,বিদেশ চলে যাবে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে।তো,কী করা যায়,বলুন?

এখানেও আমি মনে করি,যদি নিজেকে যোগ্য করে তোলা যায়,তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কোলে তোলে নিয়ে যাবে।
সমস্যা হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে যে ঝুড়ি ঝুড়ি পলিটিক্যাল সায়েন্স,ফিলসফি,আরবী বিষয়ের গ্রাজুয়েট বেরুচ্ছে তাদের দিয়ে আমাদের সেই কাজটা
হচ্ছে না।
আমার কলেজে ইংরেজী অনার্সে সিট ছিল ২০ টা,আর ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে ২৩০টা! কোন মানে হয়!

হিমু এর ছবি

এই ব্যাপারে কি সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? কিংবা এই ব্যাপারটা আদৌ তাঁদের চোখে পড়েছে কি?


হাঁটুপানির জলদস্যু

মাশীদ এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল। স্মার্টনেসের ওরকম সংজ্ঞা আমিও মনে করতাম। অবশ্য একদিকে লাভ হয়েছিল। আমার ইংলিশে পটু বোনেদের মত 'স্মার্ট' হওয়ার ইচ্ছায় ঐ ভাষাটা মোটামুটি শেখা হয়ে গিয়েছিল যেটা স্মার্ট না বানালেও অন্যান্য অনেকভাবেই এখন পর্যন্ত কাজে আসছে।

কমেন্টগুলো পড়েও মজা পেলাম। সহমত@জেবতিক ভাই আর বলাইদা।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

অনিকেত এর ছবি

প্রথমে সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের সুচিন্তিত মতামতের জন্য। বিষয়টি নিয়ে দেখা গেল অনেকের অনেক কিছু বলার আছে। আমি খুব উৎসাহের সঙ্গে খেয়াল করলাম সময়ের সাথে সাথে আরো অন্যান্য বিষয় এসে যুক্ত হয়েছে।

আমি নিজে কিছু মন্তব্য যোগ করতে চাইছিঃ
১। জনাব আরিফ জেবতিকের মন্তব্য গুলোর সাথে আমি প্রায় একমত। আমি মানছি যে সংস্কৃতি কে ধরে বেধে রাখা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা মানুষ অমোঘ ভাবেই সেই সংস্কৃতির পক্ষ নেবে যেটা তার কাছে বেশি আবেদনময় মনে হবে। কিন্তু আমার আপত্তি অন্যখানে। আমরা যদি হাত পা ছেড়ে বসে থাকি, তাহলে যে কোন কিছু আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের যদি বাঙ্গালি হিসেবে বাচতে হয়, তাহলে আমাদের সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাচা উচিত। আমি বাঙ্গালি হব, হিন্দিতে কথা বলব,ইংরেজি খাবার খাব(আমাকে ইংরেজি খাবার না হলেও আমেরিকান খাবার খেতে হয়,তবে সখ করে যে নয়, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন)তাহলে আমি শেষমেষ কি হলাম ? অনেকে বলবেন, এইটা এক ধরনের সীমিত চিন্তা ভাবনা--এখন সময় এসেছে আমাদের বিশ্বের নাগরিক হবার। আমার প্রবল আপত্তি এই খানটাতে। আজকের পৃথিবীটা এত রোমাঞ্চকর কারন এখানে নানান ভাষার, নানান রঙের মানুষ আছে বলে। সবাই যদি একই ভাষায় কথা বলতে থাকি আর একই খাবার খেতে থাকি, আমাদের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়ত হবে কিন্তু আমরা হারাব আমাদের স্বকীয়তা, আমাদের বৈচিত্র। আমাদের যদি নিজের স্বকীয়তা রেখে টিকে থাকতে হয়, আমি অবশ্যই চাইব এক বাঙ্গালি হয়ে বাচতে।

২। আনিসুল হকের নাটক প্রসঙ্গে কিছু কথা এসেছে আলোচনাতে। 'আনিস-মোস্তফা' জুটির নাটক আমার দেখা তেমন হয়নি।প্রধানতঃ দুইটি কারনে---খবর পাইনি, আর...খবর পাইনি। যাই হোক দেরিতে হলেও খবর পেলাম এবং আমার দেখা প্রথম নাটক খুব সম্ভবত ৫১ র্বতী। তারপর 69। আমাকে প্রথমেই যে জিনিসটা আগ্রহী করে তোলে তা ছিল আমাদের কথ্য ভাষার ব্যবহার। আমি জানি অনেকেই এটা অপছন্দ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে এই কথ্যরীতির কারনে আমাদের নাটকগুলো তাদের আড়স্টতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আমি চরিত্রগুলোর সাথে অনেক একাত্মতা বোধ করেছি। কারন আমার মনেই পড়ে না শেষ কবে আমি 'ভাত খেয়েছি'বলেছি।
সব সময় 'ভাত খাইয়া ফালাইছি'।
এখন আমরা এই রীতির অনুসরন কি সবক্ষেত্রে করব? এরি মধ্যে প্রচলন কি শুরু হয়ে যায় নি? টোকন ঠাকুরের কবিতা যারা পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন আমি কি বলছি।

বেশ কৌতুহলোদ্দীপক পরিস্থিতি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আলোচনা ভালো লাগতেছে। চলুক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।