বিচ্ছুর দল!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৫/০২/২০১২ - ৭:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালবেলা যেদিন ক্লাস থাকে সেদিন ভার্সিটি যাবার সময় ছোট ছোট বাচ্চাদের যখন মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতে দেখি তখন আগের দিনের এই সময়গুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, কিভাবে ১২টা বছর সকাল ৮টায় ক্লাস করতাম! অবাক লাগে ভাবতে। দেখি, ছোট ছোট মানুষ, কাঁধে বিশাল বড় বড় ব্যাগ!

এই পিচ্চি ছেলেমেয়েগুলো ভীষণ চাল্লু। আমি যখন ক্লাস ১০ এ পড়ি, তখন ভাইয়া প্রথম একটা মোবাইল সেট কিনেছিল। নোকিয়া ১১০০। যাকেই দেখতাম, তাকেই বলতাম, জানিস,আমাদের বাসায় একটা মোবাইল সেট আছে। বন্ধুরা বেশ ইজ্জত দিতো। এখনকার ক্লাস ৬ এর একটা ছেলে এনড্রএড সেট ব্যবহার করে। অতি স্বাভাবিক একটা ব্যাপার!

যাই হোক, যে কারণে লিখতে বসলাম সেটার বিষয়বস্তু এইটা না। আজকালকার পিচ্চিগুলা এক একটা বিচ্ছু। যেই বিষয়টা এই বুড়া বয়সে এসে উপলব্ধি করতে পারতেসি, সেইটাতে তারা এই বয়সেই পিএইচডি করে বসে আছে। তার কিছু নমুনা তুলে ধরতেই আমার এই লেখা।

ঘটনাঃ ১।

ক্লাস নাইন এর এক ছাত্রীকে পড়াতাম। মেয়েটার গুণধর একটা ভাই ছিল, ক্লাস ৪ এ পড়ত। সারাক্ষণ পড়ার টেবিলটার পাশে ঘুরঘুর করতো আর আচমকা উদ্ভট উদ্ভট সব প্রশ্ন করে বসতো।

পিচ্চিঃ আপনি কি জানেন, কলমের কালি কেন রাবার দিয়ে ঘষে মুছা যায় না? পেন্সিলেরটা যায়?
আমিঃ কেন?
-পেন্সিলের আগায় যেই শিষটা আছে না, ওইটা গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি। ওইটাতে ঘষা দিলে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে কার্বন ডাই অক্সাইড হয়ে উড়ে যায়। কলমের আগায় তো আর গ্রাফাইট নাই।

বাসায় আসার সময় একটা কদুর তেলের শিশি কিনে আনলাম। ক্লাস ৪ এ থাকতে তো জানতাম ই না যে বাতাসে অক্সিজেন আছে। চিন্তিত

ঘটনাঃ ২।

মায়াজ। এখন পর্যন্ত আমার শোনা সবচে’ আজিব আজিব কাজ করে নাম করেছেন তিনি। পড়েন স্ট্যান্ডার্ড ২ তে। ছোটোখাটো একটা প্রফেসর। জানেন না, এমন বিষয় খুব কমই আছে। বাবা দেশের একটা শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক আর মা ঢাবি এর অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর। মাঝেই মাঝেই তিনি ঢাবি’র ক্যাম্পাস এ ঘুরতে যান আর কথার জাদুতে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে বাসায় প্রত্যাবর্তন করেন। ইংলিশ মিডিয়ামের পিচ্চিগুলা সাধারণত বাংলায় অতটা পারদর্শী হয় না। কিন্তু তিনি ব্যতিক্রম। তিনি কি বাংলা, কি ইংরেজি- দুটোতেই চমৎকারভাবে কথা বলতে পারেন।

মায়াজঃ আমার বাসায় তোমার একদিন দাওয়াত রইলো।
ভাইয়াঃ আজকেই যাবো। তোমার গাড়িতে নিয়ে যাবা আমাকে?
-সমস্যা নেই। যেতে পারো, তবে যদিনা তোমার ম্যাডাম (আম্মু না, ম্যাডাম!) এক গাড়িতে যেতে আপত্তি করে।

তো, এই মায়াজ তার মায়ের সাথে একটা মেলায় গেছে। সাথে তার ৫ বছরে একটা কাজিন। এইটা নাকি তার গালফ্রেন্ড! চিন্তিত দুই পিচ্চি মিলে একটা স্টলে ঢুকল।

মায়াজঃ ৭ বছরের একটা পিচ্চির জন্য আপনার দোকানে কি কোন পাঞ্জাবি হবে?

এতোটুকুন পিচ্চির মুখে এই রকম কথা শুনে সবাই টাসকিতো। পেছন থেকে আনটি ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি তার অভিভাবক। বিক্রেতা বোধ হয় একটু ভরসা পেলো।

বিক্রেতাঃ হবে।
মায়াজঃ দেখান তো। আর ৫ বছরের একটা মেয়ের জন্য একটা শাড়িও দেখান।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মজাটা বুঝে গেলো।
মায়াজঃ আমার কাছে তো অত টাকা নেই। আমার মা আপনাদের টাকাটা দিয়ে দিবে।
বলেই মায়াজ অন্য স্টলে ঢুকল।
মায়াজঃ আপনাদের দোকানে মেহেদি আছে?
-আছে।
বলে স্টলের বিক্রেতা মেয়েটি মেহেদির টিউব বের করে দিল।
-কোনটার দাম কতো?
-বড়টা ৭০ টাকা, ছোটটা ৩০।
- ৭০ আর ৩০, তার মানে ১০০ টাকা। আমার কাছে আছে ১১০ টাকা। আপনি যদি দুটোই ৯০ টাকায় দিতে পারেন, তো আমি দুটোই নিতে পারি।

মায়াজের একটা এপল এর ল্যাপটপ আছে। সেখানে সে তার বাবা-মার দেশের বাইরে যাবার টিকেট নিজেই অনলাইনে কাটে।
ভাইয়াঃ মায়াজ, তোমার ই-মেইল অ্যাড্রেস আছে?
মায়াজঃ সবারই তো আছে।
-তুমি কি তোমার মেইল অ্যাড্রেস এর পাসওয়ার্ড টা আমাকে বলবে?
-পাসওয়ার্ড কেন বলবো? That is a secret thing.

এই মহামান্য পিচ্চি বড় হয়ে কি হবে, তা আন্দাজ করার সামর্থ্যটুকুও আমার নাই। গুরু গুরু

ঘটনাঃ ৩।

জিম। এইবার ক্লাস ৬ এ উঠেছে। ২-৩ বছর আগে থেকেই তার কাছে যেকোনো হিন্দি,ইংলিশ গান গাওয়া মামুলি একটা ব্যাপার ছিল। সে পারে না, ভালো করে বললে “করে না” এমন কোন কাজ নাই। ছাতা হাতে প্যারাসুট খেলা, সিলিং ফ্যানে হেলিকপ্টার খেলা, ১০ সেকেন্ডে ৬ তালা বিল্ডিং এ উঠা-নামা করা তার জন্য মামুলি একটা ব্যাপার। শয়তানী হাসি শয়তানী হাসি ওর যন্ত্রণায় বাসায় টিকে থাকা বেশ মুশকিল। ও স্কুল থেকে আসলেই সবাই অটো বুঝে যায় যে ও এখন বাসায়।

জিমঃ অই মিয়া, আপনি সারাদিন বাসায় বইসা বইসা কি মুড়ি চাবান? অত বেলা কইরা ঘুমান ক্যান?
আমিঃ কি করবো কাজ নাই।
-আমি উঠসি সকাল ৬ টায়।
- তোর সমান থাকতে আমিও উঠতাম। এইডা কোন ব্যাপারই না!
-বুঝছি। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধানই ভাঙ্গে।
-পকপক কম কর। এখন দূর হ আমার রুম থেইকা।
-আপনার গীটার কই?
-তোর উৎপাতে লুকায় রাখসি।
-ওইটাতে কি মধু মাখানো নাকি যে লুকায় রাখছেন?
-তুই অইডা দিয়া যে নতুন ডুগডুগি খেলা আবিষ্কার করসস সেইটা আমি শুনছি।
-দেহুম নি। কয়দিন লুকায় রাখতে পারেন।

২ দিন পর সিঁড়িতে জিম এর সাথে দেখা।
-আপনার গীটারের জন্য নতুন তার কিনতে কখন যাইবেন?
-নতুন এক সেট তার তো লাগানোই আছে। আবার লাগামু ক্যান?
-তারগুলান ছিঁড়তে অনেক কষ্ট হইছে। নাইলনের নাকি?
-এই দুপুরে আমার লগে চাম্বাজি করস? ওইটা আমি যেইখানে লুকাইসি তুই সারাজীবনেও খুইজা বাইর করতে পারবি না। বাসায় যা।
-হ। ঠিকই কইছেন। খাটের তলায় ঢুকতে বহুত কষ্ট হইছে। ছিঁড়তেও মোর জ্বালা!
আমি ম্যারাথন দিয়া বাসায় ঢুকে দেখি আমার খাটের উপর গীটার খানা পড়ে আছে। বিধ্বস্ত! রেগে টং

জিমের পিএসসি রেজাল্ট দিছে। ৩.৯ পাইছে।
আমিঃ সারাদিন খালি লম্ফঝম্ফ। তোর সাথের গুলা তো সব এ+ পাইছে।
জিমঃ বাণী ছাইরেন না। আপনাগো সময় এইডা ফার্স্টক্লাস আছিল। বুঝছেন?

আর লিখতে পারতেসি না। এদের সাথে যখন কথা বলি বা কারও কাছে এইসব শুনি, মনে হয় কি ছিলাম এই সময়ে আমি। আর এইগুলান কি বিচ্ছু! ম্যাঁও

-অন্ত আফ্রাদ


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

হাসি
সময় থাকতে এদের কাছ থেকে কিছু ট্রেনিং নিয়ে রাখেন। বিপদে কাজে দেবে।

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

ভালো বলেছেন। হাসি

আশফাক আহমেদ এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ ! মন খারাপ

মরুদ্যান এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

চিন্তিত

মিলু এর ছবি

হুমম্‌ ভালোই...

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

গুল্লি

তাপস শর্মা এর ছবি
অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া হাসি

guest_writter এর ছবি

হো হো হো

দীপাবলি।

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

হাসি

আশালতা এর ছবি

চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

বিচ্ছুর দল যদি টের পায় যে আপনি তাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন তো আপনি শেষ! হো হো হো

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

মায়াজ আবার সচলায়তনে ঢুকে দেখে ফেলবে না তো আপনি ওর অনুমতি ছাড়া ওর ব্যাপারে লিখেছেন !!
তবে কিন্তু আপনার কপালে অশেষ দুঃখ । খাইছে

লেখা ভালো লাগল ।
ভালো থাকবেন ।
শুভেচ্ছা ।

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

মায়াজের কথা জানি না, তবে জিমকে এই লেখাটা পড়ে শোনানো হয়েছে। ওর বীরত্বের কথা নাকি কিছুই লিখতে পারি নাই। এই জন্য সে আমার উপর নাখোশ!

ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

বিচ্ছুদের গুরু গুরু

-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

দেঁতো হাসি

সুদিপ এর ছবি

আপনার ছাত্র একটা চীজ গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

আমার ছাত্র না ভাই, ও আমার স্টুডেন্টের ছোট ভাই!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।