বাংলা ভাষায় বাঙালিয়ানা কতটুকু?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৯/০১/২০১১ - ৮:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলা ভাষা মানুষ বা তরুর মত জন্ম নেয়নি, কোন কল্পিত স্বর্গ থেকেও আসেনি।—হুমায়ুন আজাদ

গবেষকদের মতে বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজার ভাষা প্রচলিত আছে। অবশ্য সব ভাষার লিপি নেই। আবার লিপি আছে, কিন্তু কিছু ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহারের মানুষ নেই। যেমন, লাতিন ও সংস্কৃত ভাষা। আর পৃথিবীতে প্রচলিত প্রধান ভাষাগুলোর একটি সম্পর্ক লক্ষ করে ভাষাবিজ্ঞানীরা এদের পরিবারভুক্ত করেছেন। এই ধারায় আমাদের বাংলাসহ গ্রিক, ল্যাটিন, ইংরেজি, হিন্দি, ফারসি, ফরাসি, ডাচ, নেপালি ইত্যাদি ভাষা হচ্ছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের অন্তর্ভুক্ত। [১]

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ বলতে মূল ভাষাগোষ্ঠীকে বোঝায়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর পূর্বে এই মূল ভাষার অস্তিত্ব ছিল। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশে আছে অনেকগুলো ভাষা-শাখা, যার একটি হচ্ছে ভারতীয় আর্যভাষা। বৈদিক ভাষা থেকে বাংলা ভাষা পর্যন্ত বিবর্তনের প্রধান তিনটি ধারা :

ক. প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা—বৈদিক ও সংস্কৃত
খ. মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা—প্রাকৃত ভাষা (অপভ্রংশ)
গ. নব্য ভারতীয় আর্যভাষা—বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, প্রভৃতি।

ভারতীয় আর্যভাষার প্রাচীন ভাষাগুলোকে বলা হয় প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার স্তর তিনটি—

ক. বৈদিক ভাষার স্তর
খ. সংস্কৃত ভাষার স্তর
গ. বৌদ্ধ ভাষার স্তর

বৈদিক ভাষা যখন সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে তখন ব্যাকরণবিদগণ নানা নিয়ম বিধিবদ্ধ করে একটি মানসম্পন্ন ভাষা সৃষ্টি করেন, যার নাম সংস্কৃত (খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে চূড়ান্তভাবে বিধিবদ্ধ হয় ব্যাকরণবিদ পাণিনির হাতে)। এর পাশাপাশি প্রচলিত ছিল প্রাকৃত ভাষা। এ প্রাকৃত ভাষাগুলোর শেষ স্তরের নাম অপভ্রংশ। বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে নানান আধুনিক ভারতীয় আর্যভাষা—বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবি প্রভৃতি ভাষা। তাই এগুলো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের সদস্য।

প্রাকৃত শব্দের ভাষাগত অর্থ প্রকৃতি বা জনসাধারণের ভাষা। প্রাকৃত ভাষা মুখ্যত কথ্য ভাষা হলেও তার সুনির্দিষ্ট ব্যাকরণ ছিল এবং তাতে কাব্য, নাটক ইত্যাদি রচিত হয়েছিল। অঞ্চল ভেদে প্রাকৃত ভাষা কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে শৌরসেনী প্রাকৃত, মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত, মাগধী প্রাকৃত, পেশাচী প্রাকৃতের নাম উল্লেখযোগ্য। বর্তমান ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বিহার রাজ্যের প্রাচীন নাম ছিল মগধ রাজ্য। এখানে যে প্রাকৃত ভাষা প্রচলিত ছিল তার নাম মাগধী প্রাকৃত।

এই সকল প্রাকৃত ভাষা জনসাধারণ কর্তৃক নিত্য ব্যবহারের ফলে ক্রমেই উচ্চারণে শৈথিল্য ঘটতে থাকে। ফলে নানারূপ অপভ্রংশের উদ্ভব হয়। মাগধী প্রাকৃত কালক্রমে বিকৃত হয়ে যে রূপ ধারণ করে তাই মাগধী অপভ্রংশ। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, পূর্ব ভারতে প্রচলিত মাগধী অপভ্রংশ থেকেই খ্রিষ্টীয় দশম শতকের কাছাকাছি সময়ে (ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে সপ্তম শতকে অর্থাৎ ৬০১-৭০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে সর্বপ্রথম জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন স্পষ্ট মত প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, মাগধী প্রাকৃতের পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকেই জন্ম নিয়েছে বাংলা ভাষা।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের মতামতকে আরও বিশ্লেষণাকারে প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন মাগধী অপভ্রংশের তিনটি শাখা। পূর্ব-মাগধী অপভ্রংশ, মধ্য-মাগধী অপভ্রংশ এবং পশ্চিম-মাগধী অপভ্রংশ। তাঁর মতে, এই পূর্ব-মাগধী অপভ্রংশ থেকেই জন্ম নিয়েছে বাংলা, আসামি ও উড়িয়া ভাষা। তাই আসামি ও উড়িয়ার সাথে বাংলার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ।

অবশ্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি একটি প্রাকৃতের নাম দিয়েছেন গৌড়ী প্রাকৃত। তাঁর মতে, গৌড়ী প্রাকৃতের পরিণত রূপ গৌড় অপভ্রংশ থেকে উৎপত্তি ঘটে বাংলা ভাষার।

যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ {তৎ (তার)+সম (সমান)}=তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত। উদাহরণ : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, কৃষ্টি, তুষ্ট ইত্যাদি। বাংলা ভাষার প্রায় এক-চতুর্থাংশ শব্দ এই শ্রেণীর।

যেসব শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (যার অন্যতম লিখিত রূপ সংস্কৃত ভাষা) থেকে বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ক্রমপরিবর্তিত হয়ে বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। এসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ, 'তৎ' (তার) থেকে 'ভব' (উৎপন্ন)। যেমন সংস্কৃত—হস্ত, প্রাকৃত—হত্থ, তদ্ভব—হাত। সংস্কৃত—চর্মকার, প্রাকৃত—চম্মকার, তদ্ভব—চামার ইত্যাদি। এই তদ্ভব শব্দগুলোকে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয়। বাংলা ভাষার শতকরা প্রায় ৬০টি শব্দই তদ্ভব।

বাংলাদেশের আদি অধিবাসীদের ভাষা থেকে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে তাদের দেশি শব্দ (বা অজ্ঞাতমূল ভারতীয় শব্দ) বলে। যেমন : একটা, কয়লা, কাকা, কামড়, কুলা, কুড়ি, খড়, খবর, খাতা, খাঁচা, খুকি, খোকা, খোঁপা, খোঁড়া, খোঁচা, গণ্ডা, গলা, গয়লা, চঙ্গ, চাঙ্গা, চাউল, ছাল, ছাই, ঝাউ, ঝাল, ঝিঙা, ঝোল, টোপর, ঠাটা, ডাগর, ডাহা, ডাঁসা, ডিঙি, ঢিল, ঢুড়া, ঢেউ, ঢেঁকি, ঢোল, ধিঙি, ধুচুনি, ধুতি, নেকা, নেড়া, পয়লা, পেট, পেটরা, মই, মাচা, মেকি, যাঁতা, লাঠি, বাদুড়, বোরা, বাখারি, বোবা ইত্যাদি।

বিভিন্ন কালে বিভিন্ন বিদেশি জাতির সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের ভাষা থেকে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে পরবর্তী সময় বাংলা ভাষারূপে প্রচলিত হয়েছে তাদের বিদেশি শব্দ বলে। প্রথমে যে বিদেশি জাতির সঙ্গে বাংলা ভাষার যোগাযোগ ঘটে তারা হলো—আরবি, ইরানি ও তুর্কি মুসলমান। এ সুযোগে তাদের ভাষা আরবি, ফারসি ও তুর্কি হতে বহু শব্দ গ্রহণ করে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে।

আরবি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দগুলোকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।

ক. ধর্মসংক্রান্ত শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ইমান, ওজু, কোরবানি, কোরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তসবি, জাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল ইত্যাদি।

খ. প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ : আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ইত্যাদি।

ফারসি শব্দ : বাংলা ভাষায় আগত ফারসি শব্দগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।

ক. ধর্মসংক্রান্ত শব্দ : খোদা, গুনাহ, দোজখ, নামাজ, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোজা ইত্যাদি।

খ. প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ : কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দপ্তর, দরবার, দোকান, দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ ইত্যাদি।

গ. বিবিধ শব্দ : আম, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রপ্তানি, হাঙ্গামা ইত্যাদি।

মুসলিম যুগের শেষ দিকে এদেশে আসে পর্তুগিজ, ফরাসি, দিনেমার, গুলন্দাজ ও ইংরেজ জাতি। তাদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে পাশ্চাত্য ভাষার অনেক শব্দ গ্রহণ করে বাংলা ভাষা শ্রী ও মাধুর্য বৃদ্ধি করেছে। এসব শব্দ বিদেশির ভাষা থেকে গ্রহণ করা হলেও বর্তমানে সেগুলো বাংলা ভাষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে। বাংলা ভাষায় আসন গ্রহণকালে এদের মূল চেহারা, উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য, অর্থ ও তাৎপর্য অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়ে গেছে; কিন্তু ব্যুৎপত্তির বিচারে তাদের বিদেশি শব্দ বলেই আখ্যায়িত করা হয়।

নিচে বাংলা ভাষায় প্রচলিত কতগুলো বিদেশি শব্দের উদাহরণ দেয়া হলো :

ইংরেজি শব্দ : ইংরেজ শাসনামলেও তাদের নিজস্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতির বহু শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে। ইংরেজি শব্দ দু প্রকারের পাওয়া যায়।

অনেকটা ইংরেজি উচ্চারণে : ইউনিভার্সিটি ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, পাউডার, পেন্সিল, ব্যাগ, ফুটবল, মাস্টার, লাইব্রেরি, স্কুল, স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্টুডিও, স্টেশন, স্টোর, বিয়ারিং, কোচিং, নার্সিং, ড্রয়িং, মিটিং, রিপোর্টিং, বোলিং, ওয়েটিং, শুটিং, ট্রেনিং, বোর্ডিং, বাইন্ডিং, ব্যাংক ইত্যাদি।

পরিবর্তিত উচ্চারণে : আফিম (Opium), অফিস (Office), ইস্কুল (School), বাক্স (Box), হাসপাতাল (Hospital), বোতল (Bottle) ইত্যাদি।

ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষার শব্দ :

(১) পর্তুগিজ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি, ইত্যাদি।
(২) ফরাসি : কার্তুজ, কুপন, ডিপো, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।
(৩) ওলন্দাজ : ইস্কাপন, তুরুপ, রুইতন, হরতন ইত্যাদি।

অন্যান্য ভাষার শব্দ :
(১) গুজরাটি : খদ্দর, হরতাল ইত্যাদি।
(২) পাঞ্জাবি : চাহিদা, শিখ ইত্যাদি।
(৩) তুর্কি : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ইত্যাদি।

মিশ্র শব্দ : কোনো কোনো সময় দেশি ও বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন : রাজা-বাদশা (তৎসম + ফারসি), হাট-বাজার (বাংলা + ফারসি), হেড-মৌলভী (ইংরেজি + ফারসি), হেড-পণ্ডিত (ইংরেজি + তৎসম), খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজি + তৎসম), ডাক্তার-খানা (ইংরেজি + ফারসি), পকেট-মার (ইংরেজি + বাংলা), চৌ-হদ্দি (ফারসি + আরবি) ইত্যাদি।

পারিভাষিক শব্দ : বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দকে পারিভাষিক শব্দ বলে। এর বেশির ভাগই এ কালের প্রয়োগ।

উদাহরণ : সচিব-Secretary, স্নাতক-Graduate, স্নাতকোত্তর-Post Graduate, সমাপ্তি-Final, সাময়িকী-Periodical, সমীকরণ Equation ইত্যাদি।

পৃথিবীর কোনো ভাষাই মৌলিক নয়। বাংলা ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার শব্দসম্ভার দেশি, বিদেশি, সংস্কৃত, প্রাকৃত—যে ভাষা থেকেই আসুক না কেন, এখন তা বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদ। বাংলা ভাষা কারও কাছ থেকে ধার করা ভাষা নয় বরং সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা।

জয় হোক বাংলা ভাষার। জয় হোক বাঙালিয়ানার।

তথ্যসূত্র :
[১] সৌরভ সিকদার (মানব ভাষার গল্প)
[২] শব্দসম্ভার-তালিকা : সংগ্রহ
------------------------------------------------------------------------------------
পূর্ববর্তী পর্ব :

১. ই-কার বনাম ঈ-কার
২. ও কি এল, ও কি এল না

৩. হ্রস্ব স্বর না দীর্ঘ স্বর
৪. 'অনুস্বার' বনাম 'ঙ', সাথে 'এ' বনাম 'অ্যা'
৫. দন্ত্য-ন বনাম মূর্ধন্য-ণ

৬. বাংলার তিন 'শ'—দন্ত্য-স, মূর্ধন্য-ষ আর তালব্য-শ
৭. বাংলা হরফ বনাম রোমান হরফ—জ বনাম J, Z, G
৮. পাঠ্যবইয়ে বাংলা একাডেমীর বানানরীতি মেনে চলতে হবে
৯. ব-য় শূন্য 'র' বনাম ড-য় শূন্য 'ড়'
১০. কখন কি লিখব, কখন কী লিখব
১১. সংস্কৃত বানানরীতি বনাম বাংলা বানানরীতি
১২. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ কবে তৈরি হবে?

কুটুমবাড়ি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে তাড়াতাড়ি সচল করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। লেখাঝোকার সময় ভাষাগত বা বানানগত কোন সমস্যায় পড়লেই, লেখক সার্চ অপশনে গিয়ে "কুটুমবাড়ি" লিখে সার্চ দিলেই উত্তর মিলে যাবে আশা করছি।

ধৈবত

কৌস্তুভ এর ছবি

সচল করবেন কী করে, উনি নাকি এতদিন নিবন্ধনই করেন নি।

ঔর কুটুমবাড়ি ভেইয়া, আপনার লিখালিখি নিয়ে আর হামি কি বোলবে। বংগালি তো আপনি আচ্ছাই সমঝিয়েন। আলতু ফালতু পোশ্‌ট বানিয়ে ওয়াক্ত বরবাদ কোরছেন কাঁহে? ফুরসত বাঁচান, শুদ্ধ্‌ ঘিউ খান। চোখ টিপি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেস্ট

অতিথি লেখক এর ছবি

(তারিখ: বিষ্যুদ, ২০ জ্যান ২০১১, ১২:৩৩ AM)

ইংরেজি January-এর সংক্ষিপ্ত রূপ Jan. বাংলায় লিখলে হয় জ্যান। এই নিয়মে এরপর কি তাহলে ফেব আসবে? চিন্তিত তার চেয়ে জানু, ফেবু এভাবে এগিয়ে গেলে কেমন হয়? দেঁতো হাসি

কুটুমবাড়ি

স্পর্শ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ ভেইয়া, আমেরিকা গিয়েই তো বংগালি ভাষা আবার ভুলতে শুরু করবেন। চোখ টিপি কোলকাতায় যে কদিন আছেন, আলতু ফালতু জায়গায় ঘুরে ওয়াক্ত বরবাদ কোরছেন কাঁহে? গরমাগরম পোশ্‌টান, আমরা মজা কোরে পড়বে। খাইছে

শুদ্ধ্ ঘিউ হামি খাবে না, হামার বংগালি পেটে সইবে না... ইয়ে, মানে...

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

পরশুরামের 'জাবালি' বইয়ের একটা লাইন ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে গেল - "সত্যযুগে এক কার্ষাপণে তিন কলস খাঁটি হৈয়ঙ্গবীন মিলিত, আর এই ত্রেতায় কেবল এক কলস, তাও ভঁইসা।"

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহলে দ্বাপর যুগে হৈয়ঙ্গবীনের রেট কত ছিল? চিন্তিত

এখন তো ঘোর কলিযুগ, খাঁটি হৈয়ঙ্গবীন কেবল স্বপ্নেই পাওয়া যায়। চোখ টিপি তবে এই একটা জিনিস সেই সত্যযুগের মতোই আছে। আর তা হলো স্বপ্ন দেখতে তখনো পয়সা (নাকি পণ?) লাগেনি, এখনো লাগে না। শয়তানী হাসি

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

বানানায়তন কেবল বানান সংক্রান্ত পোষ্ট এর ট্যাগ ভাবছিলাম। তাই কি?

পূর্ণাঙ্গ পোষ্টের চেয়ে নতুন কোন সিরিজের ভূমিকা হিসেবেই বেশি মানাত। কারণ আশা করি নিজের ভাষার ব্যাপারে এইটুক জ্ঞান সকলেরই আছে। পুনঃপাঠের সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

-রাখাল বালক

অতিথি লেখক এর ছবি

ট্যাগ নিয়ে বিপদে আছি ভাই। বিকল্প সমাধান হিসেবে বাংলা ভাষা নিয়ে যে কোনো লেখাতেই বানানায়তন ট্যাগ দিয়ে রাখছি যাতে পরে সেগুলি খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়।

পুনঃপাঠের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

যতিচিহ্ন এবং ওদের প্রয়োগের উপর একটা উদাহরণ সমৃদ্ধ পোস্ট আসা দরকার

-শশাঙ্ক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। শিগগিরই দেয়ার চেষ্টা করব। সাথে থাকবেন আশা করি। হাসি

কুটুমবাড়ি

আব্দুর রহমান এর ছবি

"দিনেমার, গুলন্দাজ ও ইংরেজ জাতি।"

গুলন্দাজ নয় ওলন্দাজ।

আমার যদি ঠিকঠাক মনে থাকে, তাহলে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়,জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এদের যে সিদ্ধান্তগুলো আপনি তুলে ধরেছেন, এগুলো হুমায়ুন আজাদ রচিত 'বাংলা ভাষার জন্মকথা' যা অষ্টম শ্রেণীতে পাঠ্যপুস্তকে আছে তার অংশ। খানিকটা পরিমার্জন করলেও এক্ষেত্রে আপনি মূল লেখকের কথা উল্লেখ করলে ভালো করতেন বলে আমি মনে করি।

"[২] শব্দসম্ভার-তালিকা : সংগ্রহ"

এই সংগ্রহের সিংহভাগ কি নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে নেয়া নয়?
কোথা থেকে সংগ্রহ করলেন বলতে সমস্যা কোথায়?
এগুলো যেকোনো জায়গা থেকেই সংগৃহিত হতে পারে, কিন্তু আপনি একেবারেই হুবহু বইয়ে যেমনটি আছে সেভাবেই কপি করেছেন।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। লেখাটা অসম্পূর্ণ। ওঁয়া ওঁয়া হুমায়ুন আজাদ স্যার তাঁর 'বাংলা ভাষার জন্মকথা' গ্রন্থে যা বলেছেন তার সারাংশ বলতে পারেন লেখাটিকে। দেঁতো হাসি কারণ বাংলা ভাষার জন্মকথা সম্পর্কে এর চেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য তেমন নেইও। আসলে বাংলা ভাষার উৎপত্তি-ইতিহাস কিছুটা রহস্যে ঘেরা। বাংলায় যে একাধিক উৎসমূলের শাসন আছে তা অনেকেই বলেছেন। বাংলায় বানানবৈষম্যের পেছনেও এরই হাত আছে বলে মনে করা হয়। হাসি তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই বাংলাকে মাগধি প্রাকৃতজাত বলে মনে করেন। বাংলায় যে তিন উষ্মধ্বনি শ-ষ-স এর উচ্চারণে কেবল শ-কার রক্ষিত তাও নাকি এই কারণে। অবশ্য প্রাচীন যুগের বাংলা ভাষার জন্য কথাটি বোধ হয় পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়। চিন্তিত

শব্দসম্ভার-তালিকাটি আমার কাছে কোত্থেকে এল তা মনে করতে পারছি না। মন খারাপ

কুটুমবাড়ি

সাবিহ ওমর এর ছবি

ক্লাস টেনের বাংলা বইয়ে হুব্বাহু এরকম কিছু একটা পড়েছিলাম...

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্লাস টেনের নাকি ক্লাস এইটের বইয়ে? চিন্তিত যাগগে, পুরোনো পড়াই ঝালিয়ে নিলেন না হয় একটু... দেঁতো হাসি

কুটুমবাড়ি

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

যাক অনেক দিন পর একটু ব্যাকরন পড়লাম। খারাপ লাগেনি, ভালোই লেগেছে। প্রিয় কুটুমবাড়ি, লিখেছেন যখন, তখন ওটার উৎস গুলোও দিয়ে দেন। তাতে মনে হচ্ছেনা আপনার প্রচেষ্টা বিফলে যাবে। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, মানিকদা। আপনার পড়তে ভালো লেগেছে শুনে আমারও খুব ভালো লাগল। হাসি আপনার পরামর্শ সব সময় মাথায় থাকবে এখন থেকে। আর এই লেখাটিসহ এ সিরিজের আগের লেখাগুলোও কখনো সংকলন আকারে প্রকাশ করতে হলে যথাযথ উৎস-নির্দেশ (যেখানে যেখানে বাদ পড়েছে) দিয়ে দেয়া হবে।

কুটুমবাড়ি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সংক্ষেপে ভাষার ইতিহাসটা চমৎকারভাবে সংকলনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

০২
একটা বিতর্কিত বিষয়। আমার ধারণা আপনি কিছু বিস্তৃত করতে পারেন এ বিষয়ে
বিষয়টা হলো:

আধুনিক হিন্দি ভাষার জন্ম ১৯৩৫ এর দিকে
এটা একটা অসম্পূর্ণ এবং অপূর্ণ ভাষা
এটা দিয়ে সব এক্সপ্রেশন প্রকাশ করা যায় না বলেই ইংরজির মতো ভিন্ন ভাষা থেকে বাক্য ধার করতে হয়
(যেখানে বাংলার মতো পূর্ণভাষা শব্দ ধার করে নিজস্ব ফর্মে/গ্রামারে ব্যবহার করে)

বিষয়টা নিয়ে কিছু বলবেন?

কৌস্তুভ এর ছবি

লীলেন্দা, একটু প্রশ্ন করি, 'আধুনিক' হিন্দি ভাষা বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন? ঠিক ১৯৩৫ সময়কালটাই বা জন্মকাল হবে কেন?

কথ্য হিন্দি আর উর্দুর তফাত করাটাও কিছু মুশকিল মনে হয়। বলিউডে দেখি, ডায়লগ বা গানে খানিকটা সুশীল, সংস্কৃতিবান ভাব আনতে হলে লোকজন (যেমন গীতিকার জাভেদ আখতার, গুলজার) বেশী বেশী করে উর্দুর শব্দ আমদানি করেন। উর্দুর শব্দ বলতে, মূলে যাদের আরবি শব্দ। তাই আরবি শব্দের পরিমাণের কমবেশী দিয়েও পার্থক্য করা মুশকিল। যতদূর মনে হচ্ছে, আলিসাহেব বলেছিলেন, পার্থক্য করতে হয় ক্রিয়াপদ ও বাক্যগঠনের কিঞ্চিৎ হেরফের দিয়ে।

শরদিন্দু (এবং অন্যরা) বলেছেন বলে মনে পড়ে, উত্তম হিন্দি বলতে উত্তরপ্রদেশের অভিজাত হিন্দু পরিবারের কথ্য ভাষা, আর উত্তম উর্দু বলতে লখনৌ ইত্যাদি উত্তরপ্রদেশের নবাব-আদি শরীফ লোকেদের ভাষা।

এক সময় যেমন ছিল উত্তম বাংলা মানেই সাধু বাংলা, তেমনই এঁদের কাছে বিশুদ্ধ হিন্দি মানে যথাসম্ভব সংস্কৃত ঘেঁষা হিন্দি, যাতে ভোজপুরি ইত্যাদি গ্রাম্য ভাষা, পাঞ্জাবী বা আরবী শব্দ যথাসম্ভব বর্জিত।

হিন্দি উত্তর ভারতের ভাষা বলে, যেহেতু দিল্লী ইত্যাদি উত্তর ভারতের অনেক স্থানেই পাঞ্জাবীদের দাপট, তাই কথ্য হিন্দিতে প্রচুর পাঞ্জাবী শব্দ ঢুকে পড়ে সেখানে। আর বলিউডও সেটাকে এক্সপ্লয়েট করে, যেহেতু প্রবাসীদের মধ্যেও পাঞ্জাবীদের সংখ্যা প্রচুর এবং তাঁরা সিনেমা রান্নার এই মশলাখানি বেহদ পসন্দ করেন।

বাংলা হিন্দির তুলনায় সমৃদ্ধতর তো বটেই। কিন্তু বাংলাতেও যেমন ইংরাজি ও অন্যান্য ভাষার অনেক শব্দেরই ঠিক ঠিক প্রতিশব্দ নেই, সেই সমস্যা হিন্দিরও, তবে কিছু বেশি পরিমাণে। তবে আমার মনে হয় না, হিন্দির প্রয়োজন পড়ে একটা ভিন্ন ভাষা থেকে সম্পূর্ণ বাক্য ধার নেবার। এটা হয়ত যে বলেছে তার নিজের প্রয়োজন পড়েছিল বলে।

একটু নাক গলালাম। আশা করি রাগ করলেন না।

অদ্রোহ এর ছবি

কৌস্তুভদা, কাকতাল বোধহয় একেই বলে। আজকেই সত্যসন্ধানী ব্যোমকেশের "বহ্নি রহস্য" বইতে এই কথাটিই বলেছিলেন,"রতিকান্তর ভাষা উত্তর ভারতের বিশুদ্ধ হিন্দী ভাষা, বিহারের ভেজাল হিন্দী নয়"। বিষয়টা কৌতুহলোদ্দীপক, এ নিয়ে আরো জানার অপেক্ষায় রইলাম।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

দিগন্ত এর ছবি

আরবি নয়, উর্দু ধার করে মূলত ফার্সি থেকে। দুটো আলাদা ভাষা। ফার্সি ও সংষ্কৃত একই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে। আরবী নিজে আলাদা ভাষাগোষ্ঠীতে পড়ে। তবে লিখিত হরফে আরবী থেকে ফার্সী ও ফার্সী থেকে উর্দু এসেছে।

তবে কোনো ভাষা আরেক ভাষা থেকে সমৃদ্ধ কি না সেটার মূল মাপকাঠি সাহিত্য। বাংলায় যেহেতু লিখিত সাহিত্যের পরিমাণ অনেক বেশী তাই স্বাভাবিকভাবেই ভাষাও সমৃদ্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে ইংরেজী আরও সমৃদ্ধ ভাষা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কৌস্তুভ এর ছবি

হ...

অতিথি লেখক এর ছবি

দিগন্ত দা কে একটা প্রশ্ন। ভারতের জাতীয় সঙ্গীতটা কী বাংলায় নয়? ওটাকে অমন বাঁকিয়ে বুঁকিয়ে হিন্দীর মত করে গাওয়া হয় কেন?

ধৈবত

কৌস্তুভ এর ছবি

আচ্ছা, আমার মতটুকু বলি। ওটা বাংলাতেই লেখা বটে। তবে যদি শুদ্ধ উচ্চারণে গানটা গাওয়া হয়, তবে সেটা সংস্কৃত-উচ্চারণ-অনুসারী করার জন্য, বাঁকিয়ে বুঁকিয়ে হিন্দীর মত করার জন্য নয়। এখন এ আর রহমান সায়েব বন্দেমাতরমকে যেমন করেছেন, তেমন ভাঙাচোরা করলে অন্য ব্যাপার। এই যেমন, নদী'র উচ্চারণ আমরা করি নোদি। সেটাকে ঠিক করে উচ্চারণ করা হল। কেউ কেউ অত্যুৎসাহী আবার বেশি শুদ্ধ করতে গিয়ে নাদী করে ফেলেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার হাতে আসোল উত্তর দেবার মতো তথ্য নেই
আমার কিছু জানার বিষয় মূলত

আরেকটা কমেন্ট। নীরদ সি চৌধুরীরর

বাঙালিরা পড়ে ইংরেজি কিন্তু লিখে বাংলায় (সাহিত্য)
হিন্দিভাষীরা পড়ে ইংরেজি আর লিখেও ইংরেজি (সাহিত্য)
(সরাসরি কোট নয়। বিষয়বস্তু)

আমার ধারণা হিন্দি ভাষার দুর্বলতার এটাও একটা কারণ অথবা আমার প্রথম স্টেটমেন্টটার কারণেই হিন্দিভাষীরা ইংরেজিকেই ভাব প্রকাশের উপযুক্ত ভাবেন। হিন্দিকে নয়

অতিথি লেখক এর ছবি

Devanāgarī is the main script used to write Standard Hindi, Marathi, and Nepali. Since the 19th century, it has been the most commonly used script for Sanskrit. Devanāgarī is also employed for Bhojpuri, Gujari, Pahari (Garhwali and Kumaoni), Konkani, Magahi, Maithili, Marwari, Bhili, Newari, Santhali, Tharu, and sometimes Sindhi, Sherpa and Kashmiri. তথ্যসূত্র : wikipedia

দিগন্ত ভাইও বলেছেন, "সেভাবে একক লিখিত ভাষা হিসাবে হিন্দি ছিল না।" স্ট্যান্ডার্ড হিন্দি সব হিন্দিভাষীই বুঝে, তবে লিখতে পারে কজনে আমার সন্দেহ আছে। বাংলায় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা থাকলেও একটি মান ভাষাও আছে, যা দীর্ঘদিনের সাহিত্যচর্চার ফসল। হিন্দি ভাষায় ম্যালা ফ্যাকড়া। একদিকে আছে পুরোনো (কলোকিয়াল) হিন্দি, অন্যদিকে স্ট্যান্ডার্ড হিন্দি। তার ওপর আছে অনেকগুলো উপভাষা। এর চেয়ে ইংরেজি ভাষাই শিক্ষিত হিন্দিভাষীদের জন্য ভাব প্রকাশে সহজ মনে হওয়ার কথা। কার্যত ঘটছেও তাই।

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

দাদা, একটা অনুরোধ, অপরাধ নিয়েন্না। নীরদ-বাবুর লেখা পড়ার সময় কিন্তু একচিমটি নয়, একবস্তা নুন সাথে রাখাই বিধেয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

কথ্য হিন্দি আর উর্দুর তফাত করাটাও কিছু মুশকিল মনে হয়। বলিউডে দেখি, ডায়লগ বা গানে খানিকটা সুশীল, সংস্কৃতিবান ভাব আনতে হলে লোকজন (যেমন গীতিকার জাভেদ আখতার, গুলজার) বেশী বেশী করে উর্দুর শব্দ আমদানি করেন। উর্দুর শব্দ বলতে, মূলে যাদের আরবি শব্দ। তাই আরবি শব্দের পরিমাণের কমবেশী দিয়েও পার্থক্য করা মুশকিল। যতদূর মনে হচ্ছে, আলিসাহেব বলেছিলেন, পার্থক্য করতে হয় ক্রিয়াপদ ও বাক্যগঠনের কিঞ্চিৎ হেরফের দিয়ে।

কৌস্তুভ ভাই,
উর্দুর শব্দ বলতে, মূলে যাদের ফার্সি শব্দ এটা ইতিমধ্যেই দিগন্ত ভাই বলেছেন। কিন্তু আপনার কাছে যেটা জানতে চাচ্ছি সেটা হলো, আমি এত দিন জানতাম হিন্দি (বা হিন্দুস্তানী) ভাষার সাথে উর্দু ভাষার পার্থক্য মূলত লিপি ও শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে। ক্রিয়াপদের ব্যবহার ও বাক্যগঠনের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। প্রায় হাজার বছর ধরে ফার্সি, আরবি এবং তুর্কি ভাষার প্রভাবে হিন্দুস্তানী ভাষাভাষীর একাংশের মুখে মুখে এই ভাষা তৈরি হয়েছে। এসব বিদেশি ভাষার প্রভাবে উর্দুর শব্দভাণ্ডার হয়তো হিন্দির থেকে কিছুটা আলাদা। কিন্তু বাক্যগঠন প্রক্রিয়া তো একই থাকার কথা, তাই না? একটু বিস্তারিত করতে পারেন?

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

লিপির তফাত তো 'বেসিক' পার্থক্য। সেইজন্যেই আমার মন্তব্যটায় কথ্য হিন্দি আর উর্দুর তফাত করারই চেষ্টা করেছি। কিন্তু কথ্য হিন্দিতেও খানিকটা ফারসি শব্দ ঢোকে, উর্দুও পুরোপুরি সংস্কৃত শব্দ মুক্ত নয়। তবে কী কেবল ফার্সি শব্দের কম-বেশিতেই দুটো কথ্য ভাষার মধ্যে তফাত করতে হবে? চারিদিকে সচরাচর তাই'ই হচ্ছে বটে, কিন্তু অনেকদিন আগে যা পড়েছিলাম তাতে মনে হচ্ছে বাক্যগঠনেও কিঞ্চিত তফাত ছিল। নিশ্চিত নই, খোঁজ নিতে হয় তাহলে, কিন্তু আমার কলকাতাবাসও ফুরিয়ে গেল...

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে কী কেবল ফার্সি শব্দের কম-বেশিতেই দুটো কথ্য ভাষার মধ্যে তফাত করতে হবে?

হ। তবে আধুনিক হিন্দির কল্যাণে সংস্কৃত (তৎসম হাসি ) শব্দের কম-বেশি দিয়েও কিছুটা তফাত বোঝা যেতে পারে।

কিন্তু অনেকদিন আগে যা পড়েছিলাম তাতে মনে হচ্ছে বাক্যগঠনেও কিঞ্চিত তফাত ছিল। নিশ্চিত নই, খোঁজ নিতে হয় তাহলে, কিন্তু আমার কলকাতাবাসও ফুরিয়ে গেল...

উর্দু ভাষায় আরবি-ফার্সি গ্রামারের কিছু সূক্ষ্ণ প্রভাব বা লক্ষণ থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু। তবে তার জন্য বাক্যগঠনে বড় ধরনের হেরফের হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু আম্মো নিশ্চিত নই। আপনি কিছু জানতে পেলে আপডেট জানায়েন... হাসি

কুটুমবাড়ি

হিমু এর ছবি

উর্দু ভাষা হাজার বছর ধরে তৈরি হয়নি। মুঘল বংশ ভারতের উত্তরাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার পর বিভিন্ন ভাষাভাষী সেনারা এক বাহিনীর অন্তর্গত হয়ে পড়ে। তাদের যোগাযোগকে সহজ করার জন্যেই দিল্লির পূর্বের অঞ্চলের মানুষের ভাষার সাথে দিল্লির পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে উর্দু তৈরি করা হয়। উর্দুর আরেক নাম লস্করি জবান [বাহিনীভুক্তের ভাষা]।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই, বিবিসির এই লিংকটায় গিয়ে দেখুন। সেখানে লেখা আছে-

The word "URDU" is a Turkish word and it means "an army or legion". Modern Urdu has taken almost 900 years to develop to its present form. The old Urdu was a mixture of Turkish, Persian and Arabic and was the language of the most powerful warrior tribes of Central Asia.

কুটুমবাড়ি

ফাহিম হাসান এর ছবি

উর্দু আর উর্দির শব্দমূল বোধকরি একই দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক ধরেছেন। হাসি দুটো শব্দেরই উৎপত্তি তুর্কি ভাষা থেকে।

‘ordu’ > উর্দু
'wardi' > উর্দি

কুটুমবাড়ি

দিগন্ত এর ছবি

হিন্দিতে সব এক্সপ্রেশন প্রকাশ করা যায় ও প্রয়োজন হলে তা সংষ্কৃত বা ফার্সী থেকে শব্দ ধার করে। বাংলার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপারট সত্যি। তবে বাংলায় ধার করার ব্যাপারটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে কারণ বাংলা-সাহিত্য অনেক পুরোনো হিন্দির তুলনায়।
আধুনিক হিন্দির জন্ম মূলত ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে (আমি যা জানি)। কারণ তার আগে বিভিন্ন উপভাষা (ব্রজবুলি, মৈথিলি) গুলো থাকলেও সেভাবে একক লিখিত ভাষা হিসাবে হিন্দি ছিল না। এই পর্যায়ে হিন্দির মধ্যে অনেক সংষ্কৃত শব্দ এনে একে অন্যান্য ভারতীয় ভাষার কাছাকাছি করে তোলা হয়। এই ভাষাই ভারতে সরকারী ভাষা হিসাবে চলে। বলিউড পুরোনো (কলোকিয়াল) হিন্দি ব্যবহার করে। তাই এই দুই ভাষায় শব্দ-প্রয়োগে অনেক পার্থক্য দেখি। আজকাল ডিসকভারী বা অন্যান্য হিন্দি পরিভাষার চ্যানেলও বলিউডের ভাষাই ব্যবহার করছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে বাংলায় ধার করার ব্যাপারটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে কারণ বাংলা-সাহিত্য অনেক পুরোনো হিন্দির তুলনায়।

বাংলায় শব্দ ধার করার ব্যাপারটা অতটা প্রকট নয় যতটা আছে/ঘটেছে হিন্দির বেলায়। বাংলায় সংস্কৃতের চিহ্নসমেত (যেমন ঈ ষ ণ ইত্যাদি) তৎসম (সংস্কৃত) শব্দ আছে একেবারে শুরু থেকেই। অন্যদিকে হিন্দিতে অধিক হারে সংস্কৃত শব্দের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে আধুনিক বা স্ট্যান্ডার্ড হিন্দি তৈরির স্বার্থে, তাই সাধারণ হিন্দিভাষীরা এসব শব্দের সাথে তেমন পরিচিত নয়। কিংবা শব্দগুলো তারা সরকারি ভাষায় চলতে দেখলেও অধিকাংশ সময়েই ঠিকঠাক অর্থ বলতে পারবে না। আমার মনে হয় এ কারণেই বলিউড বা ডিসকভারী বা অন্যান্য হিন্দি পরিভাষার চ্যানেলগুলো পুরোনো (কলোকিয়াল) হিন্দি ব্যবহার করে। স্ট্যান্ডার্ড হিন্দি নয়।

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

লীলেন্দা,
আধুনিক (বা স্ট্যান্ডার্ড) হিন্দির জন্ম খুবই সাম্প্রতিক ঘটনা, এর সাথে ভারত ভাগের (বা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রাপ্তির) গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তবে ওভাবে দিন-তারিখ ধরে বলে দেয়া যায় না বোধ হয়, যে ১৯৩৫ বা ৫০ বা ৫৫ সালেই জন্ম হয়েছে।
হিন্দি ভাষা বাংলার মতো সমৃদ্ধ না হলেও পূর্ণাঙ্গ ভাষা। ভিন্ন ভাষা থেকে বাক্য ধার করতে হওয়ার বিষয়টি মনে হয় সত্য নয়। আমার নিজের টুকটাক হিন্দি বলার অভিজ্ঞতাও তা-ই বলে। হাসি

কুটুমবাড়ি

গৌতম এর ছবি

আমার মনে হয় এখন সময় হয়েছে আপনার লেখাগুলো সংকলন করে একটা ইবুক কিংবা প্রিন্টেড বই প্রকাশ করার। ভেবে দেখতে পারেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। হাসি

লেখালেখি করতে গিয়ে আমাদের কত ধরনের ভাষাগত বা বানানগত সমস্যাতেই না পড়তে হয়! সেসবের অনেক খুঁটিনাটি তথ্যই এখনও তুলে আনতে পারিনি। মন খারাপ তা ছাড়া বই আকারে প্রকাশ করতে হলে আগের লেখাগুলোরও কিছুটা পরিমার্জনার দরকার হবে। আমার মনে হয় অন্তত পঁচিশটি পর্ব হয়ে গেলে কিছু একটা ভাবা যেতে পারে...

কুটুমবাড়ি

ফাহিম হাসান এর ছবি

কাজের পোস্ট। আপনার বানানায়তন পোস্টগুলো ভাল পেলাম।

বানান শ্রমিককে ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, ফাহিম ভাই। আপনার ক্যামেরাবাজি কেমন চলছে? হাসি

কুটুমবাড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।