গান তুমি হও

যুধিষ্ঠির এর ছবি
লিখেছেন যুধিষ্ঠির (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৮/২০০৯ - ৩:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কেউ কি মনে করতে পারেন জীবনের প্রথম কোন গানটা শুনেছিলেন? একটা গান যে একটা গান, সেটা শুনে আনন্দ-দু:খ-হতাশা-উৎসাহ-প্রেম-বিরহ এসব হতে পারে, এটা যে একটা নেশায় পরিণত হয়ে যেতে পারে, এটার ভেতরে যে ঢুকে যাওয়া যেতে পারে, এই বোধটা কবে প্রথম এসেছিলো? আমি হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারি না। আমার মা রবীন্দ্রসংগীত আর তখনকার আধুনিক গান, মানে হেমন্ত-মান্না দে এঁদের ভক্ত ছিলেন। যখন ছোট ছিলাম, আমাদের বাসার কমলা রঙের বিশালবপু ফিলিপস রেডিওটা আমার হাতের নাগালের বাইরে অনেক উঁচু একটা শোকেসের উপরে রাখা থাকতো, যখন মাকে আমরা তাঁর ইচ্ছেমত গান শুনতে দিতাম, দুপুরের ঠিক পরে - সকালে মায়ের স্কুল আর তারপর অগুনতি গৃহস্থালি কাজ সেরে একটু গা এলিয়ে তার বিশ্রামের সময়টাতে, তখন উনি তো এদের গান-টানই শুনতেন - সাগর সেনের রবীন্দ্রসঙ্গীত, হেমন্ত-মান্না দে-শ্যামল মিত্র। অনুরোধের আসর। হারানো দিনের গান। প্রথম শোনা গান হয়তো এসময়ে ওসব শিল্পীদেরই কারোটা হবে। কিছুতেই মনে করতে পারি না।

তবে গান শোনাটা যেদিন থেকে জীবনের অচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেলো, সেই সময়টা বেশ স্পষ্ট মনে করতে পারি।

ক্লাস সিক্সে যখন পড়ি, একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো। বাসায় অত্যাধুনিক টু-ইন-ওয়ান আসলো মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী এক আত্মীয়ের কল্যানে। স্টেরিও সাউণ্ড। হাই-ফাই। ১৫ ওয়াট পিএমপিও। ওয়ান টাচ রেকর্ডিং। দামড়া সাইজের রেডিওটা স্থানাভাবে গেলো খাটের নীচে। কেউ একজন বাসায় পঙ্কজ উধাসের গজলের ক্যাসেট নিয়ে আসলেন। চান্দি য্যায়সা রাং হ্যায় তেরা... সাওয়ান কি সুহানে মওসাম মে... এসব। বাসায় সব মিলিয়ে ক্যাসেট ছিলোই দু তিনটা, তাই এটা বারবার শোনা হতে লাগলো। এসময় মায়ের সাথে নানাবাড়ি যাচ্ছি একদিন। যাবার পথে বাসে জানালা দিয়ে অবারিত সবুজ প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, আর পরে যমুনায় ফেরির রেলিং-এ ঝুঁকে পানি দেখতে দেখতে খেয়াল করলাম, মাথার মধ্যে ওই গজলগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। কিছুতেই অন্য কোনকিছু মাথায় আসছে না। এমনকি প্রতিদিন সকালে ঠিক সাতটা দশ থেকে সাতটা পনেরোর ভেতরে বারান্দায় গিয়ে টুথব্রাশ করার অযুহাতে নীচতলার যে মেয়েটার স্কুলে যাওয়া দেখি বুকের ভেতর একটা চাপা উত্তেজনা নিয়ে, তার কথাও তেমন মনে হচ্ছে না। গানগুলো শোনার তীব্র একটা আকাংখা হল তখন। সেসময় ওয়াকম্যান টিভি-র চাইতেও বড় বিলাসিতা। নানার বাড়িতে টু-ইন-ওয়ান ছিলো না। ছিলো আরও বিশাল এক রেডিও যার নবগুলোই ছিলো টেনিস বলের সমান। একটা সপ্তাহ কাটলো চরম যন্ত্রণার ভেতরে। নানীর বানানো পিঠা-টিঠা সব বিস্বাদ লাগলো। সেইসময়টায় বুঝলাম গান একটা নেশাও হতে পারে। পরবর্তীতে একটা সময়ে এই গজলগুলোর প্রতি পেট উল্টে আসার মত বিতৃষ্ণা যখন জন্মালো, তখনও নানাবাড়ি যাওয়া-আসার পথে বাসে বা ফেরিতে উঠলেই বারবার এই গানগুলোর কথাই মাথায় ঘুরতো।

তারপরও গান শোনাটা তখনও অতটা জরুরী ছিলো না।

এর আগে পর্যন্ত আধুনিক ধাঁচের গান বলতে ছিলো লাকি আখন্দের চিরনতুন এই নীল মণিহার। ছিলো ফেরদৌস ওয়াহিদ, আজম খানের গানগুলো। কিন্তু এই সময়টায় দেশে ব্যাণ্ড মিউজিকও চাড়া দিয়ে উঠতে লাগলো। সোলস, ফীডব্যাক আর কুমার বিশ্বজিৎ আর শোয়েব এরকম গায়কেরা। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো, পাশের বাসায় ভাড়া আসলেন এক নতুন পরিবার। তাদের ছোট ছেলে, জামি ভাই নামের দুর্দান্ত স্মার্ট এক ব্যক্তি, যিনি কি না সারাদিন ইংরেজী গান শোনেন। এই সময়টায় আমরা সপরিবারে জামি ভাইয়ের প্রেমে পড়লাম। তার কাছ থেকে শিখলাম অনেক নাম, অ্যাবা, বনি-এম, এয়ার সাপ্লাই, এলটন জন, ব্রায়ান অ্যাডামস, অলিভিয়া নিউটন জন, রেইনবো, সারভাইভর, স্করপিওন, আরও কত কি। ইংরেজী গানের কথা বুঝতাম না কিছুই, কিন্তু এসব শুনতে শুনতে হাইস্কুল কলেজ পার হয়ে গেলাম। রেইনবো আর কবীর ভাইকে চিনলাম এই সময়টায়। ঢাকা কলেজের জামান স্যারের কাছে ব্যাচে পড়তে গিয়ে উনার মুখেই শুনলাম, মিউজিক অ্যাণ্ড ম্যাথেমেটিকস অলওয়েজ গো টুগেদার। ব্যস, উঁচু ভলিউমে গান ছেড়ে পড়াশোনা করার যুগ শুরু হলো, বাবার ভ্রুকুঞ্চন আর "আমাদের সময় আমরা পড়াশোনা করতাম সেইরকম..." জাতীয় কথাবার্তা উপেক্ষা করে। মায়ের ইচ্ছেমতো গান শোনার অধিকারটা আমরা কেড়ে নিলাম এই সময় অত্যন্ত নির্দয়ভাবে। তারপরও মা গান শুনে পড়াশোনা করাটাতে কখনো আপত্তি করতেন না কেন যেন।

গান শোনাটা এ সময়েও উপাসনার পর্যায়ে যায়নি। এটা ছিলো গান শোনার "কোয়াণ্টিটি"র যুগ। "কোয়ালিটি"র নয়।

সেটা ঘটলো আরও অনেক পরে। আমার একুশতম জন্মদিনে, যেদিন চার পাণ্ডব আমার ঘরে ঢুকলেন সাউণ্ডস্কেপস সিরিজ নিয়ে। মিউজিক অফ দ্য মাউনটেইনস, রিভারস, সীজ। কোনদিন পাহাড় না দেখেও, আর প্রেম না করেও ঢুকে গেলাম মাউনটেইন লাভ সং-এর একেবারে ভেতরে। সান্তুর বলে যে একটা বাদ্যযন্ত্র আছে, সেটা সেই প্রথম শুনলাম। কথাবার্তা ছাড়া যে সঙ্গীত হয়, সেটাও অনুধাবন করতে পারলাম প্রথম ওই সময়ে। সারা রাত জেগে ছিলাম সেদিন। আমূল বদলে গেলো জীবন সে রাতে। ওটাই ছিলো শুরু। তারপর সুমন চট্টোপাধ্যায় আসলেন। আসলেন অজয় চক্রবর্তী। আবিস্কার করা শুরু হলো। ডায়ার স্ট্রেইটস আর জেথরো টাল। পিঙ্ক ফ্লয়েড। কিটারো। কিশোরী আমোনকার। মেনুহীনের বেহালা আর আমির খানের কণ্ঠ অপার। লালন গীতি। সব শুনে টুনে পৃথিবীর বাকি সবকিছু নিতান্তই অর্থহীন মনে হতে লাগলো। সেদিন থেকে বুঝলাম আমার অন্য অনেক কিছু না হলেও চলবে। কিন্তু সঙ্গীত ছাড়া নয়।

এই সময়টাতেই গান শোনার ব্যাপারটা ইশ্বরের আর উপাসনার জায়গাটা নিয়ে নিলো।

রেডিওর প্রতিদিনের দুপর তিনটার ওয়ার্ল্ড মিউজিক অনুষ্ঠানটা তখন ১০০ এফ-এম ব্যাণ্ডে স্টেরিও সাউণ্ডে সম্প্রচার শুরু করলো। সেটা একটা বৈপ্লবিক ব্যাপার ছিলো। মচমচে তাজা শব্দে রেডিয়োয় গান শোনা। শুক্রবারের ইয়োর চয়েস অনুষ্ঠানে চিঠি লিখে গান অনুরোধ করার প্রতিযোগিতা শুরু হল আমার আর চতুর্থ পাণ্ডবের মধ্যে। অনেক সচল ব্লগাররা যেরকম নিজের লেখায় একতারা বা পাঁচতারা পাওয়া নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন - আমাদের সেরকমটা হত আমাদের অনুরোধ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হলে, বা কোনদিন আমাদের একটির বেশি দুটি বা তিনটি গান শোনালে।

গান কিছুটা হলেও ভালোবাসে না এমন কাউকে কখনো দেখিনি, তবে গানের ভালোবাসাটা অনেকভাবে প্রকাশ হতে দেখি। এইটা ভালো না ওইটা ভালো। আরে ধুর মিয়া আপনে কি পিঙ্ক ফ্লয়েড শুনসেন, আমি শুনসি তার চেয়ে বেশি। গজল শুনবেন মিয়া মেহেদী হাসান, জগজিৎ-টগজিৎ হইলো পাতলা টাইপের গান। স্ল্যাশ আবার গীটার বাজাইতে পারে না কি, গীটার শুনতে হইলে শুনবেন সাত্রিয়ানি আর ফ্রীডম্যান। ফিউশন আসছেই হইলো মিউজিকের জাত মারার জন্য। ইয়ানি হইলো এক্টা ভুয়া লোক। এইরকম অলোচনা প্রায়ই শুনি। গানের তো আসলে কোন ভালো মন্দ থাকে না। যেটা থাকে সেটা হলো সময়। থাকে প্রজন্মের দূরত্ব। ইশতিয়াক রউফ-এর গানবন্দী জীবন পড়লে যেমন জানবেন একেকটা গান কিভাবে জীবনের একেকটা সময়কে উপস্থাপন করে সারাজীবনের জন্য আটকে থাকে বুকের ভেতরে। কষ্ট হয়ে। কান্না হয়ে। হাসি হয়ে। প্রেম হয়ে।

আজকাল গান শোনাটা পাল্টে গেছে অনেক। রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই দেখি কিশোরবয়সীরা কানে আইপডের তার গুঁজে হাঁটছে। পার্কে জগারের কানে আইপড। লাইব্রেরীর চেকআউট ডেস্কের মেয়েটা, প্লেনে সহযাত্রী, অফিসে সহকর্মী - সবার কানেই তার গোঁজা। এটা কি গানে মনোযোগ দেবার জন্য নাকি এই পৃথিবীর অন্য কোন শব্দ শুনতে না চাওয়ার জন্য কে জানে। শেষমেষ আমিও তাই করি। লেখাপড়ার পাট শেষ, তাই মাল্টিভ্যারিয়েট অ্যানালিসিস করতে করতে গান শোনা আর হয় না। বেশিরভাগই শোনা হয় গাড়িতে অফিসে যেতে যেতে, এয়ারপোর্টে বা প্লেনে বসে। বাসায় গাঁটের পয়সা খরচ করে কেনা সারাউণ্ড সাউণ্ড সিস্টেম পড়ে থাকে অনাদরে, আমার কেন যেন শুধু বারবার কিশোর বেলার সেই ভাঙ্গাচোড়া টু-ইন-ওয়ানটার কথা মনে পড়ে যায়। স্টেরিও সাউণ্ড... হাই-ফাই... ১৫ ওয়াট পিএমপিও... ওয়ান টাচ রেকর্ডিং...

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

শেষ করার আগে চৌরাসিয়ার একটা কম্পোজিশন শোনাতে ইচ্ছে হলো। আউট অফ দ্য ব্লু । গান নিয়ে লিখবো আর একটা গান থাকবে না, তাই কি হয়!


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

মনে করার চেষ্টা করে দেখলাম। সবচেয়ে পেছনে গিয়ে মনে পড়ছে, আমার মা-য়ের স্বারোপিত ঘুমপাড়ানি সুরে

চৈত্র মাসের দুপুরবেলা আগুন হাওয়া বয়
দস্যি ছেলে ঘুরে বেড়ায় সকল পাড়াময়
কাকেরা সব ছায়ায় বসে এদিক সেদিক চায়
শুকনো গলায় ডাকছে কা কা ... হঠাৎ উড়ে যায়।

তখন দস্যি ছেলে ছিলাম। এখন কাক হয়ে হঠাৎ উড়ে চলে গেছি কোথাও।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

এই ঘুমপাড়ানি গানটা কখনো শুনিনি। আমাকে ঘুম পাড়ানো হতো "ঘুম পাড়ানি মাসী পিসি" দিয়ে।

আমরা সবাই কাক হয়ে উড়ে গেছি এসব ঘুমপাড়ানি গান থেকে অনেক দূরে।

মৃত্তিকা এর ছবি

সুন্দর লিখেছেন। মনে পরে গেলো নিজের গান শোনার অতীতগুলো....কত কী যে শুনতাম, যে সময়ে যেটা শুনতাম সেই মুহূর্তে সেই গানটিই মনে হতো সবচেয়ে ভালো! স্মৃতি তৈরী হতো তার সাথে সাথে!
কিন্তু সংযোজনকৃত গানটি বাজছেনা, পরে আবার এসে শুনে নিব।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ। গান শোনার অতীতগুলো কমবেশী সবারই একই রকম বোধহয়। ইস্নিপসের গানটা কেন যে শুনতে পেলেন না বুঝলাম না।

ফকির লালন এর ছবি

জালোতার অই গান আমাদের এক শিক্ষাসফরের পুরো সময়টাই বাসে বেজেছিলো, প্রায় এক হপ্তা। ও গান শুনলেই সেই দিন আর সহপাঠীদের কথা মনে পড়ে।

ভালো লাগলো।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনার কাছে ভালোলাগাটা বিরাট পাওয়া।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আমার শোনা প্রথম গান ছিল কিশোর কুমারের 'পৃথিবী বদলে গেছে" আর দ্বিতী্য গান ছিল ভুপেন এর আশা এর একটা বাংলা গান, নাম মনে নেই, এর পরে সম্ভবত অন্তরা চৌধুরি এর একটা গান ছিল হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আপনার আজকের জন্মদিন তাহলে খুব বেশী বড় সংখ্যার না হাসি

অনিকেত এর ছবি

প্রথমেই বলে নেই একটা খুব জরুরী জিনিস---'আহা, আহা'
আপনার লেখা পড়ে এই কথাটিই প্রথমে আমার মাথায় খেলে গেছে।

গান আর বিজ্ঞান---আমার দুই প্রিয় বিষয়। অবশ্য কে কার চেয়ে বেশি প্রিয় সেটা এখনো অমীমাংসিত। আপনার এই লেখাটা আমাকে খুব করে আমার নিজের শৈশব মনে করিয়ে দিল।

আবারো বলছি, খুব খুউব ভালো লাগল লেখাটা।(গান বিষয়ক যেকোন লেখাই খুব ভাল লাগে আমার)।

এমনি আরো লেখার জোর দাবী জানাচ্ছি আপনার কাছে।

ভাল থাকুন, সব সময়----

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ প্রিয় অনিকেত। এমন প্রানঢালা উৎসাহ পেলে না লিখে তো আর উপায় থাকবে না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখাটা যেমন হয়েছে, সাথের সুরটি যেনো তাকে সম্পূর্ণ করেছে। এমন একটি লেখার সাথে এমন একটি সঙ্গীতই আসলে মানানসই। সুরের প্রতিটি মূর্ছণায় মুহূর্তেই উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে একেকটি সেইসকল দিনে। একেকটি সেইসব সূর্যোদয়ে যখন চোখ ডলতে ডলতে বিছানা ছেড়ে ওঠা হতো, তৈরী হয়ে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে বইয়ের ঝোলা নিয়ে চুল পাটি করে বেরিয়ে গেছি স্কুলের পানে। কিংবা কখনো রোদেলা দুপুরে, যখন সবাই ঘুমে ঝিমায় তখন মাতিয়ে বেড়ানো ছেলে চুপি চুপি চলে গিয়ে লিচু গাছে ঢিল মেরে লিচু পেড়ে দৌঁড়...।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আহা, আপনার মন্তব্যের মত সুন্দর করে লিখতে যদি পারতাম! ধন্যবাদ ধুগোরাজ!

সুরটা আমারও ভীষণ পছন্দের আর ভীষণ কাছের।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সকালে ঘুম ভাঙ্গত হাই ভলিউমে রেডিওর আওয়াজ শুনে। বাবা বিবিসি শুনছেন। একটা বাঁশির সুর দিয়ে শুরু হত বিবিসির সেই সকালের খবর। সেই গগনবিদারী বাঁশির সুরে চোখ ডলতে ডলতে উঠে পড়তাম।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমোবার সময়ে মামার ঘর থেকে ভেসে আসে হৈমন্তী শুক্লা, লতা, আশা, হেমন্তের গান। সেই ক্ষীণ মায়া ভরা সুরগুলোতে কত দুপুর উদাস হয়ে গেছে।
অনেক গানই এখন শুধুই স্মৃতি টেনে নিয়ে আসে।
সেইসব গান পারতপক্ষে শুনতে চাই না। হঠাৎ ইচ্ছা করলে একবার শুনেই থেমে যাই।
যা ফিরে আসবে না, তাকে নিয়ে ভেবে কী লাভ?
কত আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম বেরিয়েছে, কিন্তু সেই ছোটবেলায় সাধারণ ফিতার ক্যাসেটে বাজা গানগুলো যে আমাকে আগেই চুরি করে নিয়ে গেছে, প্রযুক্তির চমৎকারিত্ব দিয়ে কি আর সেই আমাকে ফেরত পাওয়া পাবে?
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

যুধিষ্ঠির এর ছবি

বিবিসি-র ওই বাঁশীর সুরটার সাথে একমাত্র "গগনবিদারী" বিশেষণটাই যায়! বহুদিন বিবিসি শুনি না, এখনো কি ওরা ওইটাই বাজায়?

আমারও এরকম কয়েকটা গান আছে, কখনো ইচ্ছে করে শুনতে চাই না। হঠাৎ ভুলক্রমে প্লেলিস্টে চলে এলে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেই। যদিও একটা গানকে মাঝপথে থামিয়ে দেয়াটা আমার নীতিবিরুদ্ধ, তবুও। কিছু কিছু স্মৃতির মুখোমুখি হওয়া যায় না, তাই না?

স্নিগ্ধা এর ছবি

এই সময়টাতেই গান শোনার ব্যাপারটা ইশ্বরের আর উপাসনার জায়গাটা নিয়ে নিলো।

কী বলবো - লেখাটা স্টাইল এবং কনটেন্ট, দু'দিক থেকেই এত্তো ভালো হয়েছে যে বেশি কিছু আর বলার নেই ......

চৌরাশিয়ার কম্পোজিশনটা তো দুর্দান্ত! দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!

'আড়ানা' রাগনির্ভর কিছু একটা শুনতে মঞ্চায় হাসি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ষষ্ঠ যেমন বলে, আপনি নিজেই একটা ইনস্টিটিউশন, তাই আপনার ভালো লাগা মানে তো বিরাট ব্যাপার! ধন্যবাদ!

রাগ আড়ানা নিয়ে তেমন ভালো কিছু এখনো পাইনি। এই দুটো শুনুন। দুটোই কণ্ঠসঙ্গীত। প্রথমটা ক্যাসেট টেপ থেকে এমপিথ্রী করা, তাই শব্দমান খুবই খারাপ। একটা কথা, আড়ানা কিন্তু গভীর রাতের রাগ, দিনের বেলা শুনলে মাথা ব্যথা করবে হাসি

এটা ভিনায়করাও পটবর্ধনের...

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

আর এটা মাশকুর আলি খানের...

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

পরিবর্তনশীল এর ছবি

সেদিন থেকে বুঝলাম আমার অন্য অনেক কিছু না হলেও চলবে। কিন্তু সঙ্গীত ছাড়া নয়।

গান ছাড়া পৃথিবীতে মানুষ চলতো ক্যাম্নে এইটা ভাবতেছি। ভাবছি, একটা গল্প লিখব, যেখানে কোন গান নাই হাসি

খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা, আমার খুব বাচ্চাকালে শোনা গানের কথা মনে করতে বললে অঞ্জন দত্ত, হাসন রাজার গান ছাড়া আর কিছু মনে পড়ে না। বাসার সবাই শুনত, তাই ভালো লেগে গিয়েছিল।

আর মনে পড়ে, বিটিভির সংবাদের আগে 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে' মিউজিকটা। কোথাও কেউ নেই এর সেই সুরটা- যেটা শুনলে কান্না পেতো। ম্যাকগাইভারের রোমাঞ্চকর সুরটা।


অনেক সচল ব্লগাররা যেরকম নিজের লেখায় একতারা বা পাঁচতারা পাওয়া নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন

আপনি উত্তেজিত হবেন কীনা জানি না, গান নিয়ে এই সুন্দর লেখাটা পড়ে এবং পাঁচতারা দিয়ে আমি কিন্তু খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এভার চেঞ্জিং ব্লগার!

'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে' মিউজিকটা তো খবরের আগে শুনতে শুনতে মুখস্থই হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো এরশাদদাদুর সুশাসনামলে বেড়ে ওঠার কারণে আমার মাথায় খালি "তোমাদের পাশে এসে বিপদের সাথী হতে আজকের চেষ্টা আবার" ঘুরঘুর করে। আহা, কি সেই সঙ্গীত, ভোলা যায় না।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

প্রথম গান শোনার কথাটা অনেক গুতিয়েও মাথা থেকে বের করতে পারলাম না। তবে মনে পড়ছে একদম-ই ছোটবেলার ঘটনা, আমার জোরাজুরির জন্য মামা নিয়ে গেলেন হেমন্তের লাইভ কনসার্টে। সেখানকার একটা গান মাঝে মাঝে মনে পড়ে, আমি যদি আর, নাই আসি হেতা ফিরে...

বাসায় গাঁটের পয়সা খরচ করে কেনা সারাউণ্ড সাউণ্ড সিস্টেম পড়ে থাকে অনাদরে, আমার কেন যেন শুধু বারবার কিশোর বেলার সেই ভাঙ্গাচোড়া টু-ইন-ওয়ানটার কথা মনে পড়ে যায়। স্টেরিও সাউণ্ড... হাই-ফাই... ১৫ ওয়াট পিএমপিও... ওয়ান টাচ রেকর্ডিং..

এটাই...

যুধিষ্ঠির এর ছবি

হেমন্তের লাইভ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন! বাহ!

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

টেনেটুনে ৫/৬ বছর বয়স ছিলো তখন। হাসি

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসম্ভব ভালো লাগল লেখাটা। নিজে প্রথম কোন গানটা শুনসি, সেটা চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না। তবে আপনার অনুভূতির কথা পড়তে খুব খুব ভালো লাগল। হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ওহ্, বলা হয়নি, বাসা বদলানোর পর, পুরাতন বাসা (ভিন্ন শহরে) থেকে বেশ অনেক জিনিস কিছুদিন আগে আনা হইসে। তার মধ্যে সনির পুরাতন একটা ক্যাসেট প্লেয়ার আছে। ছোটবেলায় এটাতেই গান শুনতাম। এখন যদিও মোবাইলে গান শুনি, অথবা ল্যাপটপে, তারপরও পুরনো স্মৃতি তো আর চাইলেই ভোলা যায় না।

একটা আইপডের বড়োই শখ। কবে যে শখ পূরণ হবে! মন খারাপ

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ প্রহরী! চায়না থেকে ঘুরে এসে আইপডের জন্য আফসোস করলে হবে? ওখানেই না শুনেছি এ জাতীয় জিনিস পথে ঘাটে পানির দামে বিক্রি হয়!

বইখাতা এর ছবি

লেখাটা পড়তে শুরু করতেই যেন অন্য কোনো জগৎ থেকে কানে ভেসে এলো ’মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে....’ , (গানের কথা ভুল হলে দুঃখিত। অনেকদিন শুনি না গানটা। ) মনে মনে আমি চলে গেলাম আমার ছোটবেলার বাসায় - আমি এঘর ওঘর কোনো কারণ ছাড়াই ঘুরঘুর করছি আর আব্বুর বেডরুমে ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজছে এই গানটা।
খুব ভালো একটা স্মৃতিজাগানিয়া লেখা। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। বিশেষ করে হাই ভল্যুমে গান ছেড়ে অংক করার দিনগুলি !

সব শুনে টুনে পৃথিবীর বাকি সবকিছু নিতান্তই অর্থহীন মনে হতে লাগলো।

ঠিক একইরকম অনুভূতি ছিলো আমারও। প্রথম কোন্ গান শুনেছি মনে পড়ে না। কোনো রবীন্দ্রসংগীত হবে।
সাগর সেন, হেমন্ত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া কোনো গান হবে হয়তো (কারণ তাঁদের গানই আব্বু শুনতেন বেশি। ) খুব ভালো লাগলো লেখাটা।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ধন্যবাদ, ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। মুছে যাওয়া দিনগুলি-র কথা ঠিকই লিখেছেন। ওই গানটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে। আমাদের এক অপাণ্ডব বন্ধুর অসম্ভব প্রিয় ছিলো গানটা। ওটা ছিলো ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগ। বারবার রিওয়াইণ্ড করে শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে সে ওই গানটা একটা ব্ল্যাংক ক্যাসেটের দুপাশে মোট ষোলোবার রেকর্ড করে নিয়েছিলো। তারপর ওই একটিমাত্র ক্যাসেট নিয়ে সে লং ড্রাইভে বের হতো! বোঝেন অবস্থা।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ঠিক মতো পড়বো বলে জমিয়ে রেখেছিলাম পোস্টটা। মাঝের লিংক দেখে মজা পেলাম। হাসি

অনেক চেষ্টা করেও প্রথম শুনা গান মনে করতে পারলাম না। তবে, ভাবতে গেলে খুব মনে পড়ে ছোটবেলায় বিটিভি'তে দেখানো গান/বিজ্ঞাপনের কথা। বাসায় গান শুনা হতো, তবে তাতে কান দিতাম না। বিজ্ঞাপনেও না। তবে, হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখা হতো। সেই নাটকগুলোয় প্রায়ই দারুণ সব রবীন্দ্রসঙ্গীত থাকতো। সেগুলোর কথাই মনে পড়ে ঘুরে-ফিরে।

লেখা নিয়ে কী আর বলবো?! বাকি পাণ্ডবদেরও চাই সচলে।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মাঝের লিংক দেখে মজা লাগবে না! ওই ছেলেটার বয়স কম হলে কি হবে, লেখার হাত তো খুবই ভালো! ওর অন্য লেখাও পড়ে দেখতে পারেন।

এটার পেছনে কিন্তু আমার লেখায় একটা কমেণ্ট নিশ্চিত পাবার একটা হীন উদ্দেশ্যও কাজ করতে পারে চোখ টিপি

আসলে আপনার ওই সিরিজটা পড়তে পড়তেই এই লেখাটা মাথায় এসেছিলো, তাই লিংকটা দিয়ে একটু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলাম আর কি।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

প্রথম শোনা গান 'আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সনে কইবো কথা, নাই বা তুমি এলে' ... আমার ছোট খালা ঘুম পাড়াতো আমাকে এই গান শুনিয়ে... আকাশের গান শুনে তার নামই দিয়ে দিয়েছিলাম 'আকা'। এখনও তাকে তাইই ডাকি...

পোস্ট প্রিয়তে নিলাম... আপনি যে আমার মনে কথাগুলোই বলেছেন... ছোটবেলার গানগুলো নিয়ে কিছু একটা লিখছি... শেষ হলে পোস্ট করবো... সুযোগ পেলে পড়ে দেখবেন।

--------------------------------------------------
একটি বাদরে, কি যে আদরে, খাচ্ছিল দোলা, ডাল ধরে ধরে!!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

কি মজার ব্যাপার! ছোটবেলায় আমারও একটা খালাকে আমি নাকি 'আকা' ডাকতাম! কি কারণে মনে নেই যদিও।

ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। আপনার গান নিয়ে লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কি এক রহস্যময় কারণে গান-বাজনার সাথে তেমন কোন আহামরি দোস্তি হয়নি কখনো। আমার তেমন কোন স্মৃতি নেই যেখানে কোন সংগীত জড়িত ছিল। তার পরও কোন কোন সময়ে কোন কোন গান চমকে দেয়। মনে হয় তার জন্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গানটির লিরিক হয়তো বেশী দায়ী। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বেশীর ভাগ সময়েই ওই গানটি শুনে সংগীতবোদ্ধারা আমার দিকে ভুরু কুঁ‍চকে তাকায়। এই গানের মধ্যে আবার ভালো লাগার কি আছে- এই রকম একটা ভাব আর কি। তাই দেখে আমি আরো সংকুচিত হয়ে পড়ি। কিন্তু গান একটি সাংঘাতিক জিনিস, এটা আমি জানি। এই লেখাটিতে কিশোরী আমোনকারের নাম দেখে একটি ঘটনার কথা মনে পড়লো। অনেক দিন আগে আমার এক বন্ধু আমাকে আমোনকারের একটি লাইভ প্রোগ্রামের অংশ টেপ করে দিয়েছিল। সেখানে "রাতিয়া কিধার যাওয়াই রে" বলে একটি গান ছিল। কয়েকমাস আগের কথা। আমরা গাড়ী করে কোথায় যেন যাচ্ছি। কি কারণে ওই টেপটি বাজছিল তখন। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো পিছনের সিটে বসা কন্যার দিকে। জন্ম থেকেই বিদেশে থাকা মেয়েটি হাতের উল্টোপিঠে দেখলাম চোখ মুছছে নীরবে। কেন তা তাকে আমি সেদিন শুধোইনি। এই প্রশ্নের জবাব কি শব্দের গাঁথুনীতে বাঁধা যায়? অতীব দুঃখের ঘটনাটি হচ্ছে এই যে ঐদিনেই টেপটি গাড়ীর প্লেয়ারের মধ্যে জড়িয়ে যায় এবং আর কোনদিন বাজানো যায়নি। আমোনকারের গাওয়া গানটি আমার আর শোনা হয়নি। (যদি কেউ এই গানটির সন্ধান দিতে পারেন, তাহলে খুব ভালো হয়।)
দেখলেন তো গানের কত বড় শক্তি। আমার মতো নিরেট কাঠের মানুষও কতবড় একটা কমেন্ট লিখে ফেললো।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমোনকারের ওই গানটি আমার সংগ্রহে নেই। যদি পাই, অবশ্যই আপনি জানবেন।

গানের শক্তি অনেক বড় তো অবশ্যই। তবে আমাদের প্রিয় অনুগল্পকার নিরেট কাঠের মানুষ! নাহ, সেটা সজ্ঞানে কেউ মেনে নেবে না। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তিন দিন নেটের বাইরে থাকায় অনেক লেখাই সময়মত পড়া হয়নি, মন্তব্য করা হয়নি। তাই এই পোস্টে আমি লাস্টবয়দের দলে।

ধর্ম্মপুত্র, আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি তাড়াহুড়া করে এই পোস্টটা নামানোর চেষ্টা করেছেন। প্রসঙ্গটা আসলে এক পোস্টে নামানো সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। সিরিজ করতে বলছিনা তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এপিসোড হিসেবেও কয়েক পর্ব হতে পারত। যেমন, প্রথম গান, শুরুর দিকের গান শোনা, গান গাওয়ার চেষ্টা, গান-প্রেম-গান, ইন্দ্রপুত্র-অশ্বিনীকুমারের সাথে প্রতিযোগীতা, গানে ভেসে যাওয়া, নির্বাসনে গান, গান এখনকার সময়ে ..... এমন সব। একটু ভেবে দেখুন, আমার মনে হয় তাতে আপনার Writer's Block-টাও কেটে যেত।

কিছু লেখা হয় মাথা দিয়ে, আর কিছু লেখা হয় হৃদয় দিয়ে। এই লেখাটা মাথা আর হৃদয় দুটো মিলিয়ে লেখা। গানবিহীন আমার এখনকার জীবনে এমন লেখা আর আপনার পাঠানো গান শুধু হাহাকারই বয়ে আনে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ঠিক তাড়াহুড়া করে আসলে লিখিনি। তবে হ্যাঁ, শুধু একটি বিষয় নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম। লিখতে গিয়ে একটু পটভূমি দিতে গিয়ে একবারে অনেক কিছু চলে আসলো। এই 'অনেক' বিষয়গুলো পরে আবার লেখা হবে না হবে ভেবে একবারেই লিখে ফেললাম। তাছাড়া, সিরিজ লেখা বা ধারাবাহিক ভাবে লেখার কমিটমেণ্টটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার একটা ইচ্ছাও কাজ করেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক প্রথম গানের কথা মনে পরছে না, তবে হবে হয়তো নানির মুখের শোনা কয়েকটি ছড়াগানের যে কোন একটি। যে ছড়াগানেটি এখনও মনে আছে সেটির লিরিকস দিলাম এখানে ( কয়েকটি শব্দ ভুলও হতে পারে, সেজন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী) -

মশা মশা পাকপড়শা, পায়ে পাকাইলাম দড়ি
বেবাক মশা বাইন্দা থুইলাম তোমার শশুড়বাড়ি।

প্রথম দিকের গানের কথা মনে না পরলেও আবার গানের মানুষের দুটি স্মৃতিও খুব মনে পড়ে।

১৯৮৫ এর দিকে একবার বাবা মায়ের হাত ধরে টিএসসি গিয়েছিলাম, তখন গেটে রথীন্দ্রনাথ রায়ের সাথে দেখা। বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বাবার সাঠে হয়তো উনার পরিচয় ছিল। উনি আমাকে দেখেই কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেয়েছিলেন। আমি এই ব্যাপারটিতে বেশ মজা পেয়েছিলাম। কেননা উনাকে টিভিতে দেখে আমি চিনতাম, বিশেষ করে উনার মশা বিষয়ক গানটি বেশ আমার বেশ প্রিয় ছিল। আপনাদের সেই গানটি মনে আছে নিশ্চয় -

"ও মশা আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কামড়াইয়া..." খাইছে

( সঠিক লিরিকসটি হবে ও মশায় আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া )

১৯৮৩/৮৪ এর দিকে শহীদ মিনারে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ফুল দিতে গিয়েছি বাবার হাত ধরে, আমাদের লাইনের একটু পেছনের দিকেই ছিল ফকির আলমগীর। কিছুক্ষন বাদেই দেখি পাবলিক উনার পান্জাবি টেনে ছিড়ে ফেলেছে। আমি কিছু না বুঝে হা করে তাকিয়ে দেখলাম পুরা দৃশ্যটি। পরে জেনেছিলাম যে ফকির সাহেব ফটো সংবাদিক দেখে ফুলসমেত একগাল হাসি নিয়ে পোস দিয়েছিল। পাবলিক এতেই ক্ষেপে গিয়ে হাসি

কানা বাবা

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বিভিন্ন অঞ্চলের ছেলেভুলানো এই ছড়া বা গানগুলোতে এমন কিছু শব্দ থাকে যার মানে বের করতে পারি না কখনো। এই যেমন আপনার ছড়াগানটায়, পাকপড়শা সেরকম একটা শব্দ।

কোয়েলিয়া এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটা। মনে পড়ে গেল, প্রথম শোনা গান মায়ের মুখে ঘুম পাড়ানি "ঘুম মাঝি ওই হাল ধরেছে "। সম্ভবত কোন বাংলা ছবির গান। তারপর "সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে"। সুমনের "গান তুমি হও" কিন্ত দারুণ একটা গান।

তিথীডোর এর ছবি

♪♫ 'গান তুমি হও শীতের দুপুর, উথলে ওঠা আলো...
ভাঙাচোরা জীবনটাকে, হঠাৎ লাগে ভালো! '--♪♫

সুমনের এ গানটা শুনতে বসলে এই লেখাটার কথা মনে পড়ে। হাসি
চলুক চলুক চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।