সহজিয়া রামায়ণ ৪

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/১০/২০১৭ - ৯:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সার্কাসের সাপের মতো একবার ফোঁস কইরা তিনবার মাটিতে থুতনি ঘষেন রাজা দশরথ। তাড়াহুড়া করতে গিয়া ভুল করছেন হিসাবে আর চুরি লুকাইতে গিয়া হারাইছেন সহায়। সব থিকা বড়ো কথা জীবনে পয়লাবারের মতো একলা একলা রাজাগিরি করতে গিয়া খেয়ালই করেন নাই রাজকীয় কলকব্জার কোন চাকা কোনদিকে ঘোরে আর কোন ছিদ্র দিয়া কোন কব্জায় কে ঢালে তেল…

পৈত্রিক সূত্রে যে রাজ্যখান পাইছিলেন দশরথ সেইটা আর বাড়েও নাই কমেও নাই তার জীবনে। তিনি না যেমন আক্রমণ করছেন অন্য কোনো রাজ্য; তেমনি অযোধ্যারেও এই জীবনে কোনো আক্রমণের শিকার হইতে হয় নাই…

অযোধ্যার নামে যতটা সীমা আছে তার মোটামুটি তিনভাগের দুইভাগ এলাকার লোক তার কথাবার্তা শোনে; কর দেয় এবং তাগোরে চুরি চামারি থাইকা সুরক্ষা দিতে দশরথরে সেইসব গ্রামে সৈন্য সামন্তও মোতায়েন করতে হয়…

দেশের বাকি একভাগ এলাকার লোক মুখে মুখে নিজেগো অযোধ্যার মানুষ বইলা স্বীকার করলেও রাজারে যেমন পোছেও না করও দেয় না তেমনি সেইসব এলাকায় ডাকাইত টাকাইত পড়লে বিচার নিয়াও তারা আসে না দশরথের কাছে। মানে ওইসব এলাকায় দশরথের আয়ও নাই; খচ্চাও নাই; নামেমাত্র তিনি সেইসবের রাজা…

এই রকম একখান নিরিবিলি রাজ্য; বলতে গেলে নিজের কিছুই করা লাগে না তার। সুমন্ত্রসহ রাজ্যের নিম্নপদে কর্মচারী আটজন; যারা রাজা- রাজ পরিবার আর মন্ত্রীগো নির্দেশে কামকাজ করে…

রাজার পাঁচ উপদেষ্টা বা মন্ত্রী; সকলেই বিভিন্ন গোত্রের শিক্ষিত বামুন। বশিষ্ঠ-বামদেব তো আছেনই; তার লগে আছেন কাশ্যপ আর গৌতম গোত্রের বামুন উপদেষ্টা…
অযোধ্যার প্রজাগো মাঝে বেশ কিছু নাস্তিক বৌদ্ধও আছে; তাই দশরথের মন্ত্রীগো মাঝে বৌদ্ধ পুরোহিত জাবালিও ঠাঁই পাইছেন রাজনৈতিক সমীকরণের খাতিরে…

অবশ্য এইসব বামুনরা কেউ কেউ বংশ বাড়াইয়া নিজের পোলাপানরেও ঢুকাইয়া দিছেন রাজপদে। সেই হিসাবে বশিষ্ঠের পোলা সুযজ্ঞসহ আরো কয়েকজন চ্যাংড়া বামুনও অযোধ্যার উচ্চ পদের রাজ কর্মচারী হিসাবে গণ্য; তবে তারা রাজার মন্ত্রী হিসাবে গণ্য না; তারা মূলত বুইড়া বামুনগো সহকারী হিসাবেই কাজকাম করে…

এক বাপের এক পোলা দশরথের তিনকূলে নিজের আত্মীয় কেউ নাই; তাই তার রাজের রাজপদে পরিবারের কোনো লোকও নাই…

অযোধ্যার কূলগুরু বশিষ্ঠ কামেকাজে মূলত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বই পালন করেন। রাজারেও উপদেশ দেন আবার ভূপতি- মন্ত্রী বা সেনাপতিগোও নির্দেশ দিয়া থাকেন…

রাজা দশরথের অযোধ্যা কোনোদিন কোনো যুদ্ধ করে নাই দেইখা এই দেশে কোনো প্রধান সেনাপতি নাই। অযোধ্যার সেনা-সৈনিকরা মূলত ভাগে ভাগে ভূপতিগো অধীনেই থাকে। ভূপতিরা হইল অযোধ্যার বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদার। এরা নিজেগো অংশের জমিদারি চালায়; রাজার পক্ষে কর তোলে; রাজার সৈন্য পোষে আর দরকারে রাজার পক্ষে সেইসব সৈন্য পরিচালনা করে...

ছোটখাট কোনো দরকারে একের অধিক ভূপতির সৈন্যগো একলগে কোনো কামে পাঠাইতে হইলে বশিষ্ঠই পদ্ধতি ঠিক কইরা নেন। কিন্তু কোনোদিন প্রধান সেনাপতি নির্বাচনের কোনো পরিস্থিতি তৈয়ারি হয় নাই দেইখা সেই পদের বিষয়ে অযোধ্যায় কোনোদিনও ভাবে নাই কেউ। অথবা বলা যায় অলিখিতভাবে বশিষ্ঠই প্রধান সেনাপতি পদেরও দায়িত্ব পালন করিয়া থাকেন। আর বামদেব সব কিছুতেই তিনার সহযোগী…

কেকয় রাজা অশ্বপতির মাইয়া কৈকেয়ীরে বিবাহের সূত্রে শ্বশুরের কাছ থিকা কূলগুরু বশিষ্ঠরে আশীর্বাদ হিসাবে পাইছিলেন রাজা দশরথ। রাজ্যের সব কিছুই বড়ো চৌকশ হাতে বশিষ্ঠ চালায়া নিয়া গেছেন। এত দীর্ঘদিন যুদ্ধ এড়াইয়া চলার কৌশলটাও বশিষ্ঠের বুদ্ধির গুণ…

দশরথের এই দীর্ঘ রাজকীয় জীবনে একবার মাত্র রাজপুত্র পয়দা করার বিষয় নিয়া নিজেরে মাথা ঘামাইতে হইছিল। তাও শুধু মাথা ঘামানো পর্যন্ত; বাকি সব আয়োজন সামলাইছেন আবার সেই বশিষ্ঠ…

বিবাহের পরে তার পয়লা সন্তান কন্যা হওয়ায় মন খারাপ কইরা সেই মাইয়া শান্তারে দত্তক দিয়া দিছিলেন অঙ্গদেশের রাজা লোমাপদের ঘরে। মাইয়া যেহেতু রাজ্যের উত্তরাধিকার হইবা না সেহেতু খামাখা ওর পিছনে খাটনি দিয়া কী লাভ?

তবে সেই মাইয়া তারে একটা লাভ দিছিল। মানে সেই মাইয়ার জামাইর কল্যাণেই চাইর চাইরটা পুত্র সন্তানের জনক তিনি হইতে পারছেন…

লোমাপদ শান্তারে বড়ো কইরা বিবাহ দিছেন বহুত কামেল ঋষি ঋষ্যশৃঙ্গের লগে। পুত্রেষ্টি যজ্ঞ কইরা পুত্রহীনগো পুত্র দানে রীতিমতো বিখ্যাত মানুষ এই শান্তার বর। রাজা দশরথ যখন পোলা পোলা কইয়া হাহুতাশে অস্থির তখন বশিষ্ঠর বুদ্ধিতেই তিনি জামাইরে আইনা শাশুড়িগো পুত্রবতী করার পদ্ধতি গ্রহণ করেন…

ঋষি ঋষ্যশৃঙ্গ স্ত্রী শান্তারে নিয়াই শ্বশুরবাড়ি আসছিলেন আর তারপর তার কীর্তিমান পুত্রেষ্টী যজ্ঞ প্রক্রিয়া দিয়া শ্বশুরের তিন বৌরেই পুত্রবতী কইরা দশরথরে দিয়া গেছিলেন চাইরখান পুত্রধন…

চাইর পোলারে শ্রেণিমতো বড়ো করতেও বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাইতে হয় নাই দশরথের। কৈকেয়ীরে বিবাহের সময় শ্বশুর অশ্বপতিরে কথা দিছিলেন কৈকেয়ী গর্ভজাত পোলাই হইব অযোধ্যার পরবর্তী রাজা। আর ভরতের নানা অশ্বপতি খালি নাতিরে রাজা বানাইবার শর্ত দিয়াই বইসা থাকেন নাই; নাতি ভরতরে তিনি নিজের বাড়িতে নিয়া শিক্ষাদীক্ষারও ব্যবস্থা করছেন যাতে নাতি রাজকার্য ঠিকঠাক শিখতে পারে…

সেই দিকে ভরতের বিষয়ে কোনো ভাবনাই ভাবতে হয় নাই দশরথের। আগাগোড়াই সে নানা অশ্বপতি আর মামা যুধাজিতের নজরদারিতে নানাবাড়ি থাইকা বড়ো হইতে আছে। আর এইদিকে সাবেক রাজকন্যা ও ভবিষ্যৎ রাজমাতা হিসাবে কৈকেয়ীও থাকছে সর্বদা রাজনীতির আশেপাশে। মন্ত্রী- রাজ কর্মচারী এমনকি ভূপতিগো লগেও ঘনিষ্ঠ খবরান্তর রাখছে নিয়মিত; উপরি হিসাবে এই দিক থাইকাও দায়িত্বে বহুত ছাড় পাইছেন দশরথ…

রামের মা কৌশল্যা দশরথের বড়ো বউ হইলেও সাধারণ গেরস্থ ঘরের মাইয়া। আর রাম বড়ো পোলা হইলেও যেহেতু সে রাজা হইবার সম্ভাবনা নাই; সেহেতু সে বাড়িতে থাইকা সাধারণ গেরস্থালি শিক্ষায় মূলত বাপের আদরের পোলা হিসাবেই বড়ো হইয়া উঠছে। আর রামের মাও সামলাইছেন দশরথের সংসার…

দশরথের তৃতীয় স্ত্রী সুমিত্রা স্থানীয় আদিবাসী ঘরের মেয়ে। রাজার পূর্ণ স্ত্রী হিসাব গণ্য হইলেও রাম কিংবা ভরত তারে মা জাতীয় কোনো সম্বোধনেই ডাকে না; শূদ্রাণী স্থানীয় হিসাবে সরাসরি নাম ধইরাই ডাকে…

শূদ্র জননীর পোলারা সিংহাসন পাইবার কথা না। তাই সুমিত্রার জমজ দুই পোলারে বড়ো দুই পোলার দেহরক্ষী হিসাবেই গইড়া তোলা হইছে। রামের দেহরক্ষী লক্ষ্মণ আর ভরতের দেহরক্ষী শত্রুঘ্ন…

সেই হিসাবেই রাম যেখানে যায় লক্ষ্মণও যায়; আর ভরতের লগে থাকে শত্রুঘ্ন…

রানিগো বাপের ঘরের হিসাব দিয়া রানিগো মর্যাদা আর শ্রেণিমতো মায়েগো মর্যাদা দিয়া পোলাপানের এই বিন্যাসটাও দশরথের ঘরে বড়ো সাবলীল চলতে আছিল অযোধ্যায় বিশ্বামিত্রের পা পড়ার আগে পর্যন্ত…

বিশ্বামিত্র এমন এক সময় অযোধ্যায় পা দিছিলেন যখন মাত্র চাইর পোলা ষোলো পার হইছে আর তাগো বিবাহের আলাপ শুরু হইছে। অযোধ্যায় এই গেরস্থবংশীয় বামুনের আগমন না ঘটলে হয়ত শ্রেণিমতোই চাইর ভাইর বিবাহ হইত; কোনো রাজকইন্যার লগে ভরতের; মন্ত্রী কইন্যার লগে রামের আর কোনো সেনাপতির মাইয়ার লগে লক্ষ্মণ বা শত্রুঘ্নের…

অবশ্য বিশ্বামিত্র দশরথের চাইর পোলার বিবাহের আয়োজন থাইকাও দশরথের বাচাইয়া দিলেন। চাইর পোলারই বিবাহ দিলেন বাড়ির বাইরে; যেইখানে সাইজা গুইজা বরযাত্রী যাওন ছাড়া বলতে গেলে কিছুই করতে হয় নাই তার…

কিন্তু এই বিশ্বামিত্র বামুনেরা বহুত উল্টাপাল্টা। এরা শূদ্রের যজ্ঞেও পৌরহিত্য করেন আবার বামুনের উপরও অস্ত্র উঠান। এরা খালি গেরস্থালি বা খালি বামুনগিরি কোনোটাই করেন না। এরা দুইটাই একলগে করেন…

কাউরে কিছু না জিগায়া বিশ্বামিত্র এক লগে দশরথের চাইর পোলার বিবাহ দিয়া অত যত্ন কইরা বশিষ্ঠের তৈয়ারি করা অত বছরের সমীকরণ এক ধাক্কায় দিলেন উল্টায়া। মাইনসে এমনি এমনি কয় না যে বশিষ্ঠগো বাড়া ভাতে ছাই দিবার লাইগাই জন্ম হইছে বিশ্বামিত্র বামুনগো…

বিশ্বামিত্র রাম আর লক্ষ্মণের বিবাহ দিলেন রাজকইন্যাগো লগে আর ভরত শত্রুঘ্নরে গছাইয়া দিলেন এক সেনাপতির মাইয়া…

নিজের জমি দখল করাইয়া রাম লক্ষ্মণরে তিনি যেমন বীর হিসাবে খ্যাতি দিয়া গেলেন; তেমনি বৈবাহিক সূত্রে রাম আর লক্ষ্মণরে একটানে ভরত আর শত্রুঘ্ন থাইকা উপরে উঠাইয়া চইলা গেলেন বিশ্বামিত্র…

আর বিশ্বামিত্রের এই উল্টা সমীকরণেই হঠাৎ রাজা দশরথের মনে হইল- হইলেও তো হইতে পারে এইটাই সঠিক সমীকরণ…

রাম বয়সেও বড়ো; বীর; বৈবাহিকসূত্রে রাজ জামাতা আর অযোধ্যায় থাইকা বড়ো হওয়ায় সকলেরই পরিচিতি আর পছন্দেরও মানুষ। হইলেও তো হইতে পারে রামই দশরথের পরে অযোধ্যার উপযুক্ত রাজা। বাদ; ভরত বাদ…

হিসাবটা তার একলারই মনে হইল; আর জীবনে পয়লাবারের মতো একলাই সিন্ধান্ত নিলেন। কারো লগে পরামর্শ করলেন না; সকলরেই জানায়া দিলেন সিদ্ধান্ত- রামই হইব যুবরাজ; মানে পরবর্তী রাজা…

জীবনের এই একটামাত্র একক সিন্ধান্ত নিতে গিয়াই কাঁচা হিসাবে ধরা খাইলেন দশরথ। যে পোলা ভবিষ্যতে রাজা হইবার প্রস্তুতি নিতাছে সে রাজ্যে না থাকলেও তার মায়ের স্বাভাবিক রাজনৈতিক বুদ্ধি আর কোয়লিশনের কথা হিসাবে ধরেন নাই দশরথ....

হিসাব করেন নাই মাত্র কয়দিন ধইরা বীর হিসাবে গণ্য হইলেও রাম জীবনেও কোনো যুদ্ধ পরিচালনা করে নাই; রাজ্যের সৈন্যরা কয়জন কোথায় থাকে না থাকে; কার কথা শোনে না শোনে কিছুই জানে না সে…

সে জানেও না রাজ্যের কোন মন্ত্রী কোন কাম করেন; টেকা পয়সা কে দেখেন আর কে যোগাযোগ রাখেন ভূপতি আর সৈনিকগো লগে…

ভাবেন নাই দশরথ এইসব। ভাবেন নাই বাড়ির গেরস্থালি আর পূজা পার্বণ ছাড়া আর কিছুরই সংবাদ রাখেন না বড়ো বৌ কৌশল্যা…

রামের একমাত্র ভরসা তার দেহরক্ষী ভাই লক্ষ্মণ। সে রামের উপরে আসা দুই চাইরটা আঘাত ঠেকাইতে পারে; কিন্তু যুদ্ধ কেমনে সাজায়; কেমনে ঘটায়; কেমনে সামলায় সেইটা তো লক্ষ্মণেরও জানা নাই…

ভাবেন নাই; দশরথ ভাবেন নাই ফান্দে পড়লে তারে ছাড়াইবার কেউ নাই অযোধ্যায়…
এখন কেমনে কী করা?
কৈকেয়ীর ডর দেখাইবার লাইগা হুঙ্কার ছাড়তে গিয়া সেইটারে কোঁকানিতে রূপান্তর করেন রাজা দশরথ। হায়রে হায়রে হায় কইয়া চিক্কুর দিয়া মাটিতে পড়েন রাজা…

মাটিতে আছড়ান আর হাহুতাশ করেন। একবার কৈকেয়ীরে গালাগাল করেন তো আরেকবার করেন আফসুস- তোমারে ভালোবাইসা কোন পাপটা আমি করছি কও? হায়রে হায়; কী কথা তুমি আমারে শুনাইলা রানি? আমারে তো মাইরা ফালাইছ তুমি...

কৈকেয়ী কোনো কথা কন না। দশরথ কৈকেয়ীর দুই পা জড়াইয়া ধরেন- তুমি আমার মাথায় লাত্থি মারো। তাও আমারে দয়া করো রানি…

যে রাজ্য ভরতের পাইবার কথা কিংবা রামের পাইবার কথাই না; সেইটা আবার ভরতরে ফিরাইয়া দিতে বিন্দুমাত্রও আপত্তি নাই রাজা দশরথের। কেকয় রাজের দেওয়া শর্তে কোনো চিন্তাই নাই তার। তার এখন কঠিন চিন্তা কেকয় রাজার মাইয়ার দেওয়া নতুন শর্ত- চৌদ্দ বছরের লাইগা বনবাসে পাঠাইতে হবে রামেরে। রামের লাইগা কী সর্বনাশা শর্ত জুইড়া দিছে কৈকেয়ী…

- হায়রে হায়। কী কথা শুনাইলা তুমি রানি। তুমি বহুবার কইছ যে ভরত আর রাম দুইজনই তোমার কাছে সমান। তাইলে কেন তুমি তারে বনে পাঠাইতে চাও?
বড়োপোলার বনবাস ঠেকাইতে কান্দেন রাজা। কৈকেয়ীর পা ধইরা কান্দেন- পোলাটা কেমনে বনে থাকব কও? তোমার পোলায় তো এইখানে থাকেই না। এইখানে তোমার যত সেবা সবই তো রাম করে। তারে কেন তুমি এই শাস্তি দিলা? আমি কেমনে পোলাটারে গিয়া কমু তুই বনে যা?

রাজায় আছাড়ি পিছাড়ি করেন। কিছু কন না কৈকেয়ী। রাজায় বিলাপ শুরু করেন আবার- কৈকেয়ী আমি বুড়া হইছি। পোলার এমন কষ্ট আমার সহ্য হবে না। আমারে তুমি একটু দয়া করো। তুমি আমার পোলাটারে একটু দয়া করো। বনবাসের শর্তটা অন্তত ফিরাইয়া নেও...

-সেই শর্ত ফিরাইয়া নিলে তোমরা বাপ বেটা মিলা যে আবারো ষড়যন্ত্র করবা না তার কী নিশ্চয়তা?
কী নিশ্চয়তা দিবেন দশরথ? রাজনীতিতে কেমনে কী নিশ্চয়তা দিতে হয় সেইটা তো জানা নাই তার। বাপ-বেটা মিলা একবার বেইমানি কইরা ধরা খাইছেন এখন কোন কথা দিয়া কৈকেয়ীরে বিশ্বাস করান কিছুই মাথায় আসে না তার…

দশরথ কান্দেন। আকুলি বিকুলি করেন দশরথ; …

দশরথ কৈকেয়ীর পা ধইরা কান্দেন। বেহুঁশের মতো মাটিতে গড়াগড়ি করেন। আবার উইঠা কৈকেয়ীর পা ধরেন। কৈকেয়ী এইবার একটা ধমক লাগান- বেইমানি না করলে রাম এইখানেই থাকতে পারত। কিন্তু এখন ভরতের বিষয়ে তারে আর বিশ্বাস করি না আমি। যা বলছি সেইটাই করো…

কৈকেয়ীর ঝাইড়া ফালায়া দেওয়া আকুতি আবারো তার পা ধইরা নিবেদন করা ছাড়া কিচ্ছু খুঁইজা পান না দশরথ। অনেক্ষণ আর কিছু কন না তিনি। ভ্যাবলার মতো কৈকেয়ীর মুখের দিকে তাকাইয়া থাকেন। কৈকেয়ী যা বলছে সেইটাই ঘটবে নিশ্চিত অনুমান করেন…

এইবার পোলটার লাইগা দুঃখ হয় রাজার। পোলাটারে রাজা বানাইতে গিয়া কিনা শেষ পর্যন্ত নির্বাসন উপহার দিলেন তিনি?
- হা রাম। রাম রে। বাজান আমার...
বাপ হইয়া নিজের একটা বেকুবিতে পোলার বনবাসের কষ্টে হুঁশ হারাইয়া পইড়া মাটিতে গড়ান দশরথ...

হুঁশ ফিরে। রাইত বাড়তাছে। সময় আর বেশি নাই। বহুক্ষণ ঘোরে থাইকা ভনভন মাথা নিয়া দশরথ আবার মিনমিন করেন- আমার কথা বাদ দেও। তুমিই না হয় রামরে রাজা বানাও...
কৈকেয়ী কন- তাতে কী ফারাক? কে কারে রাজা বানাইব সেইটা কি বিষয়? নাকি কে রাজা হইব সেইটা বিষয়? বিষয় হইল রাজা হইব ভরত...
- হবে হবে। ভরতই রাজা হবে। কিন্তু রাম বনাসে যাবে না কৈকেয়ী রানি…
- পয়লা রাম যাবে বনবাসে; তারপর ভরত হবে রাজা…

কৈকেয়ী শুধু তার বাপের শর্তের বাস্তবায়ন চায় না। বাপের শর্তের আগে সে চায় নিজের শর্তপূরণ…

আবার পয়লা থাইকা শুরু করেন দশরথ। একবার গালাগালি তো আরেকবার মিনতি। রাইত শেষের দিকে। অভিষেক অনুষ্ঠানের লগ্ন কাছাকাছি। লোকজনরে জানাইতে ও জাগাইতে বৈতালিকেরা বন্দনা শুরু কইরা দিছে। দশরথ উঁকি দিয়া তাগোরে একটা ধমক লাগান- প্যানপ্যানানি বন্ধ করো...

কৈকেয়ীও ঝাড়ি লাগান রাজারে- বহুত কাম বাকি। বিলাপ বন্ধ কইরা যা করবার তা করো...

জীবনের শেষ ফোঁসটা কইরা উঠেন রাজা দশরথ- আমি তোমারে ত্যাগ করলাম। তোমার পোলা ভরতরেও ত্যাজ্য করলাম…

নিজের কথা নিজেরই বিশ্বাস হয় না রাজার। রানি কৈকেয়ী মুচকি হাসেন- তুমি মনে মনে ত্যাগ করায় না করায় কারো কিছু যায় আসে মনে করো?
- মনে মনে হইব ক্যান? আমি প্রকাশ্য রাজসভায় গিয়া ঘোষণা দিব…
- তোমারে রাজসভায় যাইতে দিলো কেডা?

রাজা আবার পোতাইয়া যান। এইখানে চিল্লাইয়া ত্যাগ কিংবা দানের কোনো অর্থই যে নাই আবারো আবিষ্কার করেন রাজা। কৈকেয়ীর বাড়িতে তার কোনো কথার কোনো সাক্ষী হইব না কেউ…

রাজা এইবার কৈকেয়ীর আবেগের ঘরে টোকা দিয়া ডর দেখান- তুমি শুইনা রাখো রানি; আইজ যদি রামের অভিষেক না হয়; তবে অভিষেকের লাইগা যে আয়োজন হইছে; সেই আয়োজন দিয়া আমার পোলা রাম আইজই আমার মরদেহ সৎকার করব। কিন্তু কোনোভাবেই ভরত না। রাজ্যও পাইব না সে; আমার লাশ সৎকারের অধিকারও না...
- তুমি মইরা যাবার পরে তোমার হুকুম তামিল করার ঠেকা পড়ছে কার?

বিধবা হইবার ডরও কোনো ডর না কৈকেয়ীর কাছে। নাইলে দশরথের আত্মহত্যার হুমকিতে একটু হইলেও কাঁইপা উঠতেন রানি। দশরথ বুইঝা গেছেন রামের নির্বাসন আর ভরতের সিংহাসন এই দুইটা ঘোষণা দেওয়া ছাড়া অযোধ্যায় তার আর কোনো প্রয়োজন নাই…

দশরথ ঝিমান। রানি হুকুম করেন- রামরে ডাইকা পাঠাও। তারে এইখানে আইনা সিদ্ধান্ত জানায়া বনে পাঠাও আর আমার পোলারে রাজ্য দেও...

পোলাটার বিপদ আর না বাড়ানোই ভালো। তারে অযোধ্যায় রাখার লাইগা বেশি গাইগুঁই করলে হয়ত জানের উপরে হুমকি তৈরি হইব তার…

ভাঙা দশরথ কোনোমাতে জানলা দিয়া উঁকি দিয়া এক সেপাইরে কন- তোমরা পারলে কেউ আমার পোলা রামরে সংবাদ দেও; তারে দেখবার বড়ো ইচ্ছা হয় আমার...

অভিষেকের লগ্ন ভোরে। পুষ্যা নক্ষত্রে। বশিষ্ঠের নেতৃত্বে হইব অভিষেক। কিন্তু তিনি অভিষেকের ক্ষেত্র ছাইড়া উপস্থিত কৈকেয়ীর উঠানে। অন্য মন্ত্রীরাও আছে…
তিনি সুমন্ত্ররে ডাইকা কন- যাও রাজারে গিয়া সংবাদ দেও। সকলে আইসা পড়ছে…

সুমন্ত্র একটু ঘাবড়ায়। সে রাজার ঘনিষ্ঠ কর্মচারী; রাজার রথও চালায়। কিন্তু অভিষেকের স্থল বাদ দিয়া সকলের কৈকেয়ীর মহলে উপস্থিতি তারে একটু ভাবায়। রাজার তিন বৌ দেইখা রাইতে তারে না দেখলে কোনো রানিই তার খোঁজ করেন না; ভাবেন অন্য রানির মহলে আছেন। কিন্তু যুবরাজের অভিষেকের মতো একটা অনুষ্ঠানের ভোরে রাজা কোনো এক রানির মহলে ঘাপটি মাইরা আছেন এইটা কেমন খটকায় ফেলে সুমন্ত্ররে। তার উপর সে ছাড়া সকলেই জানে তিনি কৈকেয়ীর ঘরে…

সকাল বেলা কোথাও যাইবার থাকলে রাজা তারে রাত্তিরেই জানায়া রাখেন সকালে কোন মহল থাইকা তারে তুইলা নিতে হবে। কাইল রাত্তিরে রাজা কৈকেয়ীর মহলে আসছিলেন; কিন্তু সকালে তারে এইখান থেকে তুইলা নিতে তো আদেশ করেন নাই…

অভিষেকের পূজা পার্বণ সকলই হইতে আছে বড়ো রানি কৌশল্যার মহলে; সেইখান থাইকাই রানিরে নিয়া অভিষেকে যাইবার কথা রাজার। সেই মতো রাজা রানিরে তুলতে সকাল থাইকা বড়ো রানির মহলে রথ নিয়া অপেক্ষায় আছিল সুমন্ত্র। কিন্তু বশিষ্ঠ তারে সংবাদ পাঠাইলেন রানি কৈকেয়ীর মহলে…

রাজার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসাবে রানিমহলগুলার ভেতর বাড়িতেও সুমন্ত্রের অবাধ যাতায়াত। এর লাইগাই বাড়ির ভিত্রে সুমন্ত্ররে দিয়াই সংবাদ পাঠান বশিষ্ঠ…

সুমন্ত্র কৈকেয়ীর মহলের ভিতর আইসা রাজারে জানায়- সকলে আপনার লাইগা অপেক্ষায় মহারাজ। লগ্নও নিকটে...

রাজা ফ্যালফ্যাল কইরা তাকান সুমন্ত্রের দিকে- সুমন্ত্ররে। বুকটা ফাইটা যাইতাছে আমার...

রাজার কথায় সুমন্ত্র পুরা ঘাবড়াইয়া যায়। কিছু একটা ঘটতে আছে সে অনুমান করতে পারে। কিন্তু কী আর কতটুকু ঘটছে এখনো বুইঝা উঠতে পারে নাই। যুবরাজের অভিষেকের সকালে রাজার কেন বুক ফাইটা যাইতাছে সেইটা বুইঝা উঠতে পারে না রাজার রথের চালক…

রাজার বিছানার পাশেই উপস্থিত রানি কৈকেয়ী। থতমতো খাওয়া সুমন্ত্র রাজারে বাদ দিয়া প্রশ্নবোধক চোখ তুইলা তাকায় রানির দিকে। রানি বোঝেন সারথি সুমন্ত্র ঘাবড়াইছে রাজার কথায়। তিনি পরিস্থিতি তরল কইরা সুমন্ত্ররে কন- সুমন্ত্র। ডরানের কিছু নাই। পোলার অভিষেকের খুশিতে রাজায় সারা রাইত না ঘুমাইয়া একটু কাহিল আর আউলা আছেন। তুমি এক কাম করো; তুমি রামরে গিয়া এইখানে নিয়া আসো...

হইলেও হইতে পারে। পোলার অভিষেকের আগের রাত্তিরে খুশিতে রাজার ঘুমের ব্যাঘাত হইতেই পারে আর সেই ব্যাঘাতে তার উনসত্তুর বছরি স্বাস্থ্যে ধকল আসতেই পারে। কিন্তু অভিষেকের দিনে অভিষেকের জায়গায় না গিয়া রাজা কি এইখানেই রামের অভিষেক করবেন? এতই কি খারাপ রাজার শরীর?

রানির কথায় সুমন্ত্রর ঘাবড়ানি গেলেও সে খাড়ায়া থাকে। রানি তারে তাড়া দেন- তোমারে না কইলাম রামরে এইখানে নিয়া আসতে?
সুমন্ত্র কয়- মহারানি। রাজার হুকুম ছাড়া কেমনে গিয়া তারে ডাকি?

সুমন্ত্রর লগে কিছু কথা কইতে পারলে সুবিধা হইত। কিন্তু রাজার পাশে আঠার মতো লাইগা আছে রানি কৈকেয়ী। এখন সুমন্ত্ররে এইখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ায়া রাখলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাইতে পারে…

ভাবিয়া চিন্তিয়া বালিশে মুখ লুকায়া কান্না চাইপা দশরথ সুমন্ত্ররে কন- হ হ। পোলাটারে আমি দেখতে চাই সুমন্ত্র। তুমি গিয়া তারে ত্বরায় নিয়া আসো...

সুমন্ত্রর সন্দেহ হয়। পোলার অভিষেকের দিন রাজায় এমন কান্দে ক্যান? রাজায় কেন রানির কথা আওড়ায় তোতা পাখির মতো…

সুমন্ত্রর সন্দেহ আরো বাড়ে যখন ঘর থাইকা বাইর হইয়া দেখে রানি কৈকেয়ির ঘরের সামনে অতক্ষণে সৈনিকসহ ভূপতিরাও আইসা উপস্থিত হইছে। রাজার ব্যক্তিগত কর্মচারী সুমন্ত্র নিশ্চিত হইয়া যায় রাজারে তবে আটকাইছেন রানি; সম্ভবত তার পোলারে রাজ না দেওয়ার সিন্ধান্তের লাইগা…

কৈকেয়ীর ঘর থাইকা বাইর হইতে হইতে নিজের বুদ্ধিতে একটা সিদ্ধান্ত নিয়া ফালায় সুমন্ত্র। রাজায় তারে বড়ো মায়া করেন। তার উপরে বড়ো ভরসা করেন। রাজারে অন্তত জানানো দরকার ঘরের দরজার এই সমাবেশের কথা…

সে আবারো ফিরা গিয়া রাজার সামনে খাড়ায়। কিন্তু তারে দেইখা রাজা খিটখিট কইরা উঠেন- তোমারে না কইলাম রামরে নিয়া আসতে। তুমি কেন আবার চেহারা দেখাইতে আসছ এইখানে? আমার আদেশ কানে যায় নাই তোমার?

সুমন্ত্র অবস্থা বোঝে। রানি কৈকেয়ীর সামনে রাজায়ও তারে কিছু কইতে পারতেছেন না; তারও সম্ভব না বলা। সে শুধু কাচুমাচু কইরা কথাখান ঘুরাইয়া কয়- আপনেরে আগে জানাইতে ভুইলা গেছিলাম যে পুরোহিত বশিষ্ঠের লগে ভূপতিরা সকলেই সৈনিকসহ রানি কৈকেয়ীর উঠানে আপনের অপেক্ষায় উপস্থিত। সেইটা জানাইতে আসলাম আবার…

পেন্নাম ঠুইকা সুমন্ত্র বাইর হইয়া যায় রামরে ডাকতে। রাজা কিছু কন না। সুমন্ত্র তার বিপদ বুঝতে পারছে। বুদ্ধি কইরা জানায়া গেছে কারা কারা বাইরে পাহারায়। এখন বুদ্ধি কইরা যদি রামেরে ডাইকা নিয়া না আইসা বিষয়টা বুঝাইয়া কইতে পারে; তবে হইলেও হইতে পারে একটা উপায় বাইর করতে পারে রাম আর লক্ষ্মণ…

আশায় একবার চোখ ঝিলিক দিয়া আবার পুতায়া যায় দশরথের। নিম্নস্তরের হুকুমদাস সুমন্ত্র; তাগোরে সারা জীবন ধইরা একটা মাত্র যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হইছে; সেইটা হইল নিজের বুদ্ধি খাটায়া কিছু না করা। এগো একমাত্র কাম হইল খাপেখাপে হুকুম তামিল করা। সুমন্ত্ররে বলা হইছে রামরে ডাইকা নিয়া আসতে; দীর্ঘদিনের হুকুমদাস সুমন্ত্র রামরে ডাইকা নিয়া আসা ছাড়া আর কিছুই কইব না এই বিষয়ে নিশ্চিত রাজা…

দশরথ একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন; সুমন্ত্রর মতো বিশ্বস্ত কর্মচারীগোও যদি বামুনগো মতো একটু নিজের বুদ্ধি খাটাইবার অধিকার দেওয়া হইত; তবে হইলে হইতে পারত আইজ সুমন্ত্রের বুদ্ধিতেই রাজা দশরথের একটা উপায় হইত…

অবশ্য কী আর উপায় হবে। এক রাত্তিরের মাঝে রানি কৈকেয়ী যে সকলরেই যে রাজার বিপক্ষে খাড়া কইরা দিবে সেইটা তো রাজায়ই অনুমান করতে পারেন নাই রাজা…

নাহ। বহুত আগে থাইকাই তবে এই রকম একটা দিনের লাইগা প্রস্তুত হইয়া আছেন রানি কৈকেয়ী…

রামের মহল দশরথের রাজবাড়ি থাইকা মাইল দুই দূরে। পোলাপানের বিবাহের পর কিছুদিন রাজবাড়ি রাইখা চাইর পোলারেই আলাদা আলাদা মহলে সংসার সাজাইয়া দিছেন দশরথ। এতে পোলাপান যেমন ঘর গেরস্থালি সংসার চালাইতে শিখব তেমনি চাইর পোলার মহলের কারণে রাজ্যের অন্তত আরো চাইরটা জায়গায় আপনা আপনি রাজ প্রতিনিধির উপস্থিতি তৈরি হইব। এতে প্রজারাও নিয়ন্ত্রণে থাকব আর চোর ডাকাইতও ডরাইব কিছু…

বিবাহের পর থাইকা আট বছরের বেশি সময ধইরা রাম এই আলাদা মহলেই থাকে। রাম-সীতার নয় বচ্ছরের সংসারে পোলাপান না হইলেও তাগো গরু বাছুরসহ ঘর গেরস্থালি বেশ বড়ো। সীতা এক কৃষিময় দেশের রাজকইন্যা; সেইটার ছাপ সে এই কয় বচ্ছরে পুরাই রাইখা গেছে তার বাড়িঘর গেরস্থালির সব কিছুতেই…

এই বাড়ির পোলাই অযোধ্যার ভবিষ্যৎ রাজা। সেই আনন্দে রামের পুরা মহল জুইড়া উৎসব। ভবিষ্যৎ রাজার লাইগা উপহার নিয়া লোকজন উপস্থিত। এই দিকের এইসব দেখাশোনা করতে আছে লক্ষ্মণ। এমন সময় রথের চাকায় ক্যাচর ক্যাচর তুইলা গিয়া হাজির হয় সুমন্ত্র…

সুমন্ত্ররে দেইখা সকলে ভাবে যুবরাজরে নিয়া যাইতে রাজা তার নিজের রথ পাঠাইছেন ব্যক্তিগত সারথীরে দিয়া…

যুবরাজের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাইবার লাইগা রাম সাইজা গুইজা আছে; সীতাও বড়ো দারুণ কইরা সাজাইছে নিজেরে। এর মাঝে হন্তদন্ত হইয়া সুমন্ত্র গিয়া সোজা হাজির হয় রামের সামনে- রাজা তোমারে দেখতে চান। তোমারে নিয়া যাইতে পাঠাইছেন আমারে...

রাম একটা ঝটকা খায়। বুইঝা ফালায় এইটা অভিষেকে যাবার আমন্ত্রণ না; অন্য কিছু। নাইলে রাজা তারে দেখতে চান এমন কথা কইয়া সুমন্ত্ররে পাঠাইতেন না তিনি…

কথা আছিল সীতা আর রাম একলগে যাবে অভিষেকে। সাথে মিছিল করতে করতে যাবে বিশাল বহর। কিন্তু সুমন্ত্রের মুখের দিকে তাকাইয়া রাম আর কিছু কয় না; বোঝে লোকবহর নিয়া না; সীতারেও লগে নিয়া না; একলাই যাইতে হবে তারে…

রাম শুকনামুখে সীতারে কয়- মনে হয় রাজা আমার লগে কিছু পরামর্শ করতে চান। আমারে ডাইকা পাঠাইছেন। তুমি থাকো; আমি গেলাম…

সীতা অবাক হইলেও ভাবে অভিষেকের আগে রাজায় যুবরাজের লগে নিরালা পরামর্শ করতে চাইতেই পারেন; কথাটা বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু স্বভাবে বেশি কথা বলা সীতা কোনোদিনও এক বাক্যে হ্যাঁ কিংবা না কইতে পারে না। তার উপরে আছে তার খোঁচা মাইরা কথা কওয়ার স্বভাব…

সুমন্ত্রর শুকনা মুখ তার চোখে পড়ে না; রামের দুশ্চিন্তাও তার চোখ এড়াইয়া যায়। সীতা স্বাভাবিক গলাতেই কয়- পরামর্শ করতে চাও করো। কিন্তু সেইখানে গিয়া আবার একলা একলা অভিষেক কইরা ফালাইও না কইলাম। আমি কিন্তু তোমার অভিষেকে যাব…
রাম কয়- অবশ্য অবশ্যই। অভিষেকের আগে অবশ্যই তোমারে আইসা নিয়া যাব আমি...

রাম যেদিকে যায় লক্ষ্মণেরও যাওয়া লাগে। সেও লাফ দিয়া উঠে সুমন্ত্রের রথে…

রাজবাড়ির নিয়মে নিম্নপদের কর্মচারী সুমন্ত্রের রাজ পরিবারের লোকজনের লগে বাড়তি কোনো কথা বলা নিষেধ। তাই সে গোমড়া মুখেই রথ চালায়। আবার রামের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন থাকলেও পদের বাধার কারণে সে আর কিছু জিগায় না সুমন্ত্ররে…

অভিষেকের আসরে যায় না সুমন্ত্রের রথ। রাজসভায়ও যায় না; যায় না বড়ো রানি কৌশল্যার মহলে। রাম আর লক্ষ্মণরে নিয়া সুমন্ত্র গিয়া হাজির হয় কৈকেয়ীর ঘরে…

কৈকেয়ীর বাড়ির পরিবেশ দেইখা নিজের মনে আস্তে আস্তে কুলক্ষ্মণ অনুমান করে রাম। সেই কুলক্ষ্মণ সম্পূর্ণ আতঙ্কে পরিণত হয় যখন রামরে দেইখা দশরথ তার নাম ধইরা একবার একটা চিক্কুর দিয়া আর কিছু কইতে পারেন না…

পোলারে দেইখা মুখ লুকাইয়া খালি কান্দে বাপ; আতঙ্কে বেকুব পোলায় এইদিক সেইদিক তাকায়া কৈকেয়ীরে জিগায়- হইছে কী জননী বলেন তো আমারে?

কৈকেয়ী কিছু না কয়া দশরথের দিকে তাকান। দশরথ কান্দে। পরিবেশ সহজ করতে রাম কল্পনায় নিজের কিছু সমস্যা খুঁইজা বাইর কইরা কৈকেয়ীর লগে কথা বাড়ায়- আব্বায় এমন করেন ক্যান জননী? আমি কি তিনার লগে কোনো বেয়াদবি করছি? নাকি শরীর খারাপ করছে তার? নাকি পরিবারের কারো কোনো দুঃসংবাদের ঘটছে কিছু?

এইসবের কিছুই ঘটে নাই রাম নিজেও জানে। এইসব কিছু হইলে সুমন্ত্রই সেই সংবাদ দিতো। তাছাড়া অত মানুষ অভিষেকের আসর থুইয়া কৈকেয়ীর বাড়ির উঠানে মাড়া দিত না…

দশরথ কিছু কন না। খালি ফুপায়া কান্দেন। কৈকেয়ী বোঝেন দশরথ কইবেন না কিছু। তাই নিজেই কথা শুরু করেন রামের অযথা প্রশ্নের হাল্কা হাল্কা উত্তর দিয়া- বাপ রাম। তোমার আব্বায় তোমার উপর রাগ করেন নাই; আার বাড়ির কারো কোনো বিপদও ঘটে নাই; সকলই মঙ্গল; কুশলেই আছে সকলে…

কৈকেয়ী থামেন; একবার তাকায়া দেখেন দশরথ তার কথায় বাধা দিবার কোনো পায়তারা করতে আছেন কি না। সেই দিকে কোনো প্রকার কোনো আত্মরক্ষার চিহ্নবর্ণ নেই দেইখা কৈকেয়ী গলার মমতা আরেকটু বাড়াইয়া কথা আগান- পুত রাম; ঘটনা হইল একটা ঘটনা ঘটাইয়া তোমার আব্বা তোমার কাছে বড়োই শরমিন্দা হইয়া আছেন। কথাটা তিনি নিজের মুখে তোমারে কইতে না পাইরা মুখ লুকাইয়া কানতে আছেন লজ্জায়...

কৈকেয়ী থামেন। কোনো নড়াচড়া নাই দশরথের। শুধু তার কান্দান এখন গোঙানির মতো শোনায় রামের কাছে। রাম কৈকেয়ীর মুখে তাকায়া থাকে- কী এমন কথা জননী যেইটা আমারে কইতে শরমান তিনি?
কৈকেয়ী কন- কথাটা হইল; তোমার আব্বায় একজনরে একটা কথা দিছিলেন; এখন সেই কথাটা রাখতে তোমার আব্বার তোমার সাহায্য দরকার। তো বাপ তুমি এই বংশের বড়ো পোলা; তোমারে নিয়া বহুত গর্ব আছে তোমার আব্বার; আমরাও সকলে গর্ব করি তোমারে নিয়া; প্রজারাও করে। এখন বাপের মায়ার পোলা হিসাবে বাপের মুখ রাখার দায়িত্ব যে বাপ তোমারেই নিতে হয়…

মূলত তোমারে এই কথাটাই নিজের মুখে কইতে না পাইরা তিনি শরমিন্দা আছেন…

রাম অনুমান করে ঘটনাটা অনেক বড়ো। না হইলে কৈকেয়ী অত কথা ঘুরাইতেন না। বহুত কথা ঘুরাইয়া কৈকেয়ী এখন পর্যন্ত শুধু এটুকু বুঝাইছেন যে রামরে বড়ো কিছু একটা করতে হবে বাপের মুখ রাখার লাইগা। কিন্তু সেইটা কী?

রাম কিছুটা অধৈর্য হয়- এইটা আবার কী রকম কথা জননী? আব্বায় যদি কাউরে কোনো কথা দিয়া থাকেন তবে অবশ্যই সেই কথা রাখার দায়িত্ব আমার উপরেও বর্তায়। এইটা কইতে শরমের কী আছে? কন তো জননী কন কী করতে হবে আমার?

কৈকেয়ী কন- হ সেইটাই তো কথা। বাপের বড়ো পোলার মতো উপযুক্ত কথা। কথা দিয়া কথা রাখাই তো হইল ধর্মের মূল কথা। কথা দিয়া যদি কথা না রাখতে পারেন তবে রাজার সম্মানের কি আর বাকি থাকে কিছু? আর বাপের বড়োপোলা হিসাবে বাপের কথা রাখার দায় তো তোমার উপরই পড়ে; অবশ্যই পড়ে…

রাম তাকায়া থাকে। কৈকেয়ী তাকায়া দেখেন মুখ লুকায়া শ্বাস ওঠানামা করা ছাড়া দশরথের আর কোনো কার্যক্রম নাই। একটা ঢোক গিলা কৈকেয়ী কথা আগান- তয় দেইখো বাপ। তোমার লাইগা যেন তোমার আব্বারে আবার শরম পাইতে না হয়। তুমি যদি কথা দেও যে তুমি বাপের কথা রাখবা তয় তোমারে তোমার আব্বার পক্ষে কথাটা কইতে পারি আমি...

কৈকেয়ী মূল কথার কাছাকাছি আইসা পড়ছেন। তিনি যাতে আর কথা না ঘোরান তার লাইগা আরো দুই চামচ বাড়ায়া রাম তারে যাবতীয় নিশ্চয়তা দেয়- এমন কথা কইয়েন না জননী। আব্বার কথায় আমি আগুনে ঝাঁপ দিতে পারি; বিষ খাইতে পারি; সমুদ্রেও ডুবতে পারি। তিনি যা বলবেন অবশ্যই আমি তা করব। আর এইটাও জাইনা রাইখেন যে রাম একমুখে দুই কথা কয় না কোনোদিন...

একটা লম্বা শ্বাস নিয়া কৈকেয়ী মূল কথা পাড়েন এইবার- শোনো রাম। তোমাগো জন্মের আগেই তোমার আব্বায় আমার আব্বারে কথা দিছিলেন যে আমার গর্ভের পোলাই হইব অযোধ্যার পরবর্তী রাজা; সেইটা সকলেই জানে; তোমার মায়েও জানেন আর তুমিও জানো বইলা আমি জানি…

কৈকেয়ী একটু থামেন; নিঃশ্বাস আটকাইয়া যায় রামের। সে তাকায় থাকে কৈকেয়ীর মুখে। কৈকেয়ী আবার শুরু করেন- তো হইতে পারে বয়সের কারণে; হঠাৎ কইরা সেই কথাটা তোমার আব্বায় ভুইলা গিয়া যুবরাজ হিসাবে তোমার অভিষেকের আয়োজন কইরা ফালাইছিলেন…

দশরথ একটু নইড়া উঠেন। রানি কৈকেয়ী অন্তত পোলার সামনে তারে বিশ্বাসঘাতক কয় নাই। কইছে বয়সের কারণে ভুইলা যাবার কথা। এইবার কৈকেয়ীর কাছে কৃতজ্ঞতায় আরেকটু কান্দেন দশরথ…

পাথরের মতো খাড়ায়া থাকে রাম। রানি কৈকেয়ী রাজার দিকে আরেকবার তাকায়া রামের চোখে চোখ রাখেন- তোমার আব্বায় আবারো সিদ্ধান্ত নিছেন যে আগের সিদ্ধান্তমতো ভরতেরই অভিষেক হইব যুবরাজ হিসাবে…

এই কথাটা কৈকেয়ীর আগের কথারই ভিন্ন উচ্চারণ। রাম খাড়ায়া থাকে আরো কোনো কথা আছে কি না শোনার লাইগা। কৈকেয়ীও একটু দম নেন। একবার দশরথের দিকে তাকায় আবার রামের চোখে চোখ রাখেন- লগে আরেকটা সিদ্ধান্ত নিছেন তোমার আব্বায়। সেইটা হইল আজকেই চৌদ্দ বছরের লাইগা তোমারে বনবাসে যাইতে হইব দণ্ডকবনে…

রাম লক্ষ্মণ তাব্দা মাইরা থাকে। দশরথ নিশ্চুপ। রামের দিক থাইকা সামান্যতম কোনো প্রতিরোধ নাই দেইখা কৈকেয়ী তার কথার উপ্রে মমতার লগে গাম্ভীর্য মিশায়া আরেকটু প্রলেপ বিছান- তো পুত; তুমি যেমন কথা দিছ যে বাপের কথা রাখবা; সেই হিসাবে আজকেই যে চৌদ্দ বছরের লাইগা তোমারে বনবাসে যাইতে হয় বাপ। বুঝতেই পারতেছ রাজায় এই কথা নিজের মুখে তোমারে কইতে না পাইরা খুব মনোকষ্টে আছেন। তোমার মুখের দিকেও তাকাইতে পারতাছেন না। এইবার বড়োপোলা হিসাবে তোমারই দায়িত্ব হইল বাপের কথা রাইখা বাপের সম্মান রক্ষা করা...

রাম ধাক্কা সামলাইয়া উঠলেও প্রচণ্ড ডরাইছে সে। ধরা গলায় রাম কয়- এইটাই যদি আব্বার ইচ্ছা হয় তবে অবশ্যই আমি তা করব। কিন্তু আব্বায় কেন আমার লগে কথা কইতাছেন না?
কৈকেয়ী কন- অতক্ষণ তোমারে আমি কী বুঝাইলাম? তিনি শরমে তোমারে কইতে পারতাছেন না দেইখাই তো এই কঠিন কথাগুলা তিনার পক্ষে আমারে কইতে হইল…

রামের শরীর কাঁপে। সে কৈকেয়ীর দিকে তাকায়া বিড়বিড় করে- আমার বদলা ভরতের অভিষেক হইব অন্তত এই কথাটাতো আব্বায় আমারে নিজের মুখে কইতে পারতেন। আর বনবাস; রাজা হিসাবে তিনার আদেশ তো মানতেই হবে। এমনকি আপনেও যদি আমারে আমারে আদেশ দেন; তাইলেও কিন্তু আমি ভরতরে রাজ্যের লগে লগে সীতারেও দান কইরা দিতে পারি...

কৈকেয়ী জিবে কামড় দেন- আরে না। সীতার উপরে ভরতের কোনো লোভ নাই আমি তোমারে নিশ্চয়তা দিতে পারি। সীতা তোমারই থাক। তোমার বিষয়ে তোমার আব্বায় যে সিদ্ধান্ত নিছেন তুমি শুধু সেইটা মানলেই হবে…

রাম বোঝে একটাও কথা বলবেন না দশরথ। দশরথের নাম কইরা কথাগুলা কৈকেয়ী কইতে আছেন মুখ লুকানো দশরথের সামনে; পরিস্থিতি খুবই খারাপ না হইলে এমন হইত না। রামের হ্যাঁ কিংবা না করার সুযোগ নাই সে বোঝে। আর এইটাও বোঝে এর বেশি কিছু জানবারও সুযোগ নাই…

রাম মাইনা নিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে- ঠিকাছে জননী। রাজায় শরম পাইছেন। রানি হিসাবে আপনি তিনারে শান্ত করেন। খামাখা কান্দাকাটি করা ঠিক না। আর অভিষেকের লাইগা আজকেই ভরতরে আনতে লোক পাঠান...

কৈকেয়ী কন- হ তা পাঠাব। ভরতের নানাবাড়ি অবশ্যই লোক যাবে তারে আনতে। কিন্তু বাজান তোমারেও যে ত্বরায় বনযাত্রা করা লাগবে। তুমি না যাওয়া পর্যন্ত যে শরমে রাজায় আর আমার ঘর থাইকা বাইর হইয়া কাউরে মুখ দেখাইতে পারবেন না…

দশরথ আবারো কৃতজ্ঞ বোধ করেন কৈকেয়ীর কাছে। রাম বনযাত্রা না করা পর্যন্ত রাজা কৈকেয়ীর ঘরে বন্দী এই কথাটা না কইয়া পোলাগোর কাছে ঘর থাইকা না বাইরাইবার কারণ হিসাবে রাজার শরমরেই উপস্থাপন করছেন…

কৃতজ্ঞ দশরথ মোচড় দিয়া একটা চিক্কুর দেন- কষ্টরে... কষ্ট। কষ্ট কষ্ট...

বিছানায় মাথা আছড়ান দশরথ…

ভয়ডর কাইটা একটা ঘোর তৈয়ারি হয় রামের ভিতর। রাম নিশ্চিত কৈকেয়ী রাজার নামে যা কইছেন তার একটাও রাজার কথা না। কিন্তু একটারও প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নাই রাজার…

যা ঘটবার তা ঘটবই; যদি সেইগুলা রাজার কথা হইত অথবা সেইগুলা ঠেকাইবার কোনো উপায় থাকতো তবে এমন বাচ্চাগো মতো কানতেন না রাজা…

বুড়া বাপটার লাইগা মায়া লাগে তার। বীর আছিলেন না তিনি; বিজয়ীও আছিলেন না কোনোদিন। কিন্তু এই অযোধ্যায় রাজাই আছিলেন দশরথ। মানুষ আইসা তার কাছে কানতো। সেই অযোধ্যার রাজা দশরথ অযোধ্যাতেই কান্দেন…

এই কান্দন রাজার কান্দন না; এই কান্দন অসহায় এক বন্দী পিতার। রাম গিয়া তার বিছানায় মাথার কাছে বসে। দশরথ মুখ লুকাইয়া দুই হাতে শক্ত কইরা আঁকড়াইয়া ধরেন রামের কোমর…

দশরথের লুকানো মুখসহ মাথাটা কোলে তুইলা নেয় রাম। কিন্তু একবারও চোখ খুইলা পোলার দিকে তাকান না দশরথ। কৈকেয়ী সতর্ক হইয়া উঠেন। বাপ-পোলায় ঠারেঠুরে কোনো ফন্দি কইরা ফালাইতে পারে। এখন পর্যন্ত ভরতের অভিষেক বা রামের বনবাস দুই সিদ্ধান্তের একটাও নিজের মুখে এক বারের লাইগাও উচ্চারণ করেন নাই দশরথ…

কৈকেয়ী খাড়ায়া থাকেন পাশে। রামের কোলে রামের কোমর জড়াইয়া কাইন্দা উঠেন দশরথ। বাপ-বেটা দুইজনেরই বহুত কথা; কিন্তু কারো কোনো কথা কইবার সুযোগ নাই। সবাইরে লুকাইয়া এই দুই বাপ পোলাতেই সিদ্ধান্ত নিছিলেন অভিষেকের; এখন এই দুই বাপ-বেটা কৈকেয়ীরে লুকায়া একে অন্যের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন কান্দনের ভাষায়…

কৈকেয়ী রামরে তাড়া দেন- তোমার তো দেরি হইয়া যাইতাছে বাপ। বহুত কিছু তো তোমারেও গোছগাছ করতে হবে...

রাম বুঝতে পারে দশরথের কাছে রামরে বেশি সময় থাকতে দিতে ভয় পাইতেছেন কৈকেয়ী। তাই ভাগ্য মাইনা নেওয়া রাম ঠাণ্ডা গলায় কৈকেয়ীরে নিশ্চয়তা দেয়- চিন্তার কিছু নাই জননী। কথা যখন দিছি তখন তা রাখবই। কিছুটা সময় আপনে আমারে আব্বার ছোঁওয়াটা পাইতে দেন। তারপরে আমি মা আর সীতারে জানায়া আজকেই বনে রওয়ানা দিমু। নিশ্চিন্ত থাকেন...

বাপের মাথায় হাত বোলায় রাম। এই হাতের ছোঁয়ায় দশরথ বুঝতে পারেন তার পোলায় অন্তত এইটা বুঝতে পারছে যে বাপে তারে নির্বাসন দেয় নাই…

দশরথ কান্দেন। রাম তার হাত ছাড়াইয়া উঠতে চায়। রাজা আরো শক্ত কইরা ধরেন পোলারে। বন্দী দশরথ বুইঝা গেছেন পোলার বনবাস আটকাইবার ক্ষমতা তার নাই। আর চৌদ্দ বছর পরে পোলারে দেখার লাইগা বাইচাও থাকবেন না তিনি। এইটাই শেষ দেখা বাপ ও বেটার। তাই আর পোলার মুখের দিকে তাকাইতে পারেন না তিনি…

রাম বাপের মাথায় হাত বোলায়; পিঠে হাত বোলায়। থাইকা থাইকা রামের কোলে ফুঁপাইয়া কান্দেন পিতা। রাম তার হাত ছাড়াইতে চায়; তিনি ধইরা রাখেন। সেই ছোটকালে কাজে যাইবার সময় বাপের গলা জড়াইয়া রাখত রাম। রাজায় যত চাইতেন তারে ছাড়াইতে; ছোট হাত দিয়া ততই শক্ত কইরা পোলায় ধইরা রাখত বাপের গলা। আইজ পোলা যাইতে চায়; কানতে কানতে ধইরা রাখেন বাপ...

বুড়া বাপের হাত এক সময় জোর কইরা ছাড়ায়া উইঠা পড়ে রাম। বাপে তাকায় না পোলার দিকে। পোলায়ও তাকায় না ফিরা। কোল থাইকা বাপের মাথাটা বিছানায় নামাইয়া কৈকেয়ীর ঘরের বাইরে আসতে আসতে রাম পিছনে শুনতে পায় রাজা দশরথের এক বুকফাঁটা চিৎকার- রাম; পুত আমার…
২০১৭.১০.০৭ রোববার
………………
সহজিয়া রামায়ণ ৩
সহজিয়া রামায়ণ ৪ (প্রথম খসড়া)
সহজিয়া রামায়ণ ৩ (প্রথম খসড়া)
সহজিয়া রামায়ণ ২
সহজিয়া রামায়ণ ১
.....
রামায়ণের শোলক সন্ধান ৫: রামায়ণ থেকে মহাভারত প্রাচীন আখ্যান
রামায়ণের শোলক সন্ধান ৪: রাম নয় কৃষ্ণই প্রাচীন
রামায়ণের শোলক সন্ধান ৩: বাল্মিকী কি ভিল জাতির মানুষ?
রামায়ণের শোলক সন্ধান ২: সীতার সতীত্ব পরীক্ষা
রামায়ণের শোলক সন্ধান ১: সীতা কার মেয়ে?


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পয়লা পাতায় দুই লেখা দিবার নিয়ম নাই; কিন্তু আগের লেখাটা সরাইতে পারতেছি না; আবার ডিলিটও করতে চাই না; বুদ্ধি থাকলে দিয়েন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জাবালির প্রতি রামের উক্তিঃ

"যথা হি চোরঃ স তথা হি বুদ্ধ
স্তথাগতং নাস্তিকমত্র বিধ্হি
তস্মাদ্ধি যঃ শঙ্ক্যতমঃ প্রজানাম্
ন নাস্তি কেনাভিমুখো বুধঃ স্যাত্"

যদি এর ভিত্তিতে জাবালিকে বৌদ্ধ বলে থাকেন তাহলে কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায়। জাবালিকে নাস্তিক বলা ঠিক আছে, নাস্তিক ব্রাহ্মণ বলাও ঠিক আছে, কিন্তু নাস্তিক বৌদ্ধ বললে তাকে গৌতম/সিদ্ধার্থ/শাক্যসিংহ/শুদ্ধোদন-মায়াদেবী তনয়/কপিলাবাস্তু কুমার-এর অনুসারী বোঝাতে পারে। রাম যদি বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হন (ত্রেতা যুগ) তাহলে তার বয়োজ্যেষ্ঠ জাবালি বিষ্ণুর নবম অবতার (কলিযুগ) হতে পারেন না। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, ভাগবত পুরাণ (বুদ্ধ) বা ভবিষ্য পুরাণ (শাক্যমুনি গৌতম) অনুযায়ী বুদ্ধকে বর্ণনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বাক্যসমূহের ক্রিয়াপদ অতীত কালের হলেও সেটা আসলে foretelling। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ চতুর্থ শতকে, ভাগবত পুরাণ তারও পরে লিপিবদ্ধ হলেও এগুলোর বাক্‌ রচনাকাল আরও আগে। তাছাড়া ভবিষ্য পুরাণ খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে লিপিবদ্ধ বলে তার বাক্‌ রচনাকাল কপিলাবাস্তু কুমারের জন্মের আগের হবার কথা।

তাহলে জাবালি কোন ধর্ম/দর্শনের অনুসারী? আমার হিসাবে জাবালি নিঃসন্দেহে নাস্তিক এবং জ্ঞানী যিনি 'বুদ্ধত্ব' অর্জন করেছিলেন। বিদ্যমান ধর্মীয় রীতির বিরুদ্ধাচারণের জন্য তার প্রতি রাম এমন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অহ স্যার; আপনের নামে তো আমার হাড্ডি গুড়ার করার অপরাধে মামলা করতে ইচ্ছা হইতেছে আমার। মহাভারতখান্ও খালি গল্প লেখতে চাইছিলাম; আপনে কইলেন যুক্তিগুলাও থাকা দরকার পুস্তকে। সেই কথা শুইনা প্রায় ৬০ পৃষ্ঠা খটমটো বাক্য যোগ করলাম সেইটাতে...

আর এইটাতে এইসব খটমটো করলাম গল্প বন্ধ কইরা প্রায় এক বছর...

অবতার আর বৌদ্ধ বিষয়ে খটমটানি আছে এইখানে:
রামায়ণের শোলক সন্ধান ৫: রামায়ণ থেকে মহাভারত প্রাচীন আখ্যান

রামায়ণের শোলক সন্ধান ৪: রাম নয় কৃষ্ণই প্রাচীন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই গন্ধমাদন আপনি নিজেই নিজের কাঁধে নিয়েছেন, সুতরাং আমার নামে মামলা করার স্কোপ নাই। আপনি যেহেতু লৌকিক আখ্যান থেকে আরোপিত অহেতুক মহিমাগুলোকে ছেঁকে তুলে বাতিল করছেন তাই আমি যুক্তি, তথ্য যাচাই এগুলোর দাবী করেছি। এটা না করলে আপনার রচনা বইয়ের দোকানে পাওয়া যায় এমন আর দশটা রামায়ন-মহাভারতের কপি হতো, শুধু ভাষাটা আলাদা।

আমি আপনার আগের লেখাগুলো পড়েছি, আপনার সাথে যখন আলাপের সুযোগ ছিল তখন এটা নিয়ে অতি সামান্য কথাও হয়েছে। এখন আমি যদি রাম, কৃষ্ণ আর বুদ্ধের সময়কাল নিয়ে তর্ক শুরু করি তাহলে আমাকে আপনার মতো খাটুনি দিতে হবে। সেটা করার সামর্থ্য এখন আমার নেই। তবে একটা কথা বলি। সময় যত এগিয়ে গেছে সাহিত্যে অধিক চরিত্রের আগমন, কাহিনীর জটিলতা, 'নেস্টেড' কাহিনী ও সমস্যা, চরিত্রের জটিলতা ইত্যাদি আস্তে আস্তে বেড়েছে। এই বিচারে রামায়ন মহাভারতের চেয়ে অনেক সরল কাহিনী। রাম আর কৃষ্ণকে বাদ দিয়ে ত্রেতা আর দ্বাপর যুগের অন্য কাহিনীগুলো লক্ষ করলেও এমনটা দেখতে পাবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্রেতার গল্প সত্য যুগের মতো।

যাকগে, এটা নিয়ে তর্ক বাড়াতে চাই না। কারণ, আপনি যে যুক্তিগুলো দিয়েছেন আমি সেগুলোকে অস্বীকার করছি না। আমি শুধু বলতে চাই, প্রচলিত বিশ্বাসের দোহাই না টেনে এর উল্টো দিকেও যুক্তি আছে। সেই গবেষণা কেউ করতে চাইলে করুক। আপাতত আপনার গল্প যেভাবে চলছে সেভাবে চলুক। আমার ফোঁড়ন কাটা নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনের লগে কথা বলার সুযোগ নাই বলল কেডা? সময় মতো ঠিকই ফোন ঠুকব

০২
গল্প লেখা থামায়া নোট গোছাতে গিয়ে মাঝখানে এক বছর গেছে; আপাতত গল্পটা আগাগোড়া শেষ করতে চাই পয়লা; অন্যকিছু ঢুকে গেলে গল্পে ঝামেলা তৈরি হয়
০৩
আমি আপাতত এই সমীকরণটা ধইরা আগাচ্ছি; এইটারে অবধারিত বলা যাবে না; কিন্তু গল্পের লাইগা আমারে একটা তরিকা নেয়া লাগবে। এইটার পেছনের খটখটানি কিছুটা কয়েকটা প্রকাশিত নোটে আর কিছুটা গল্প শেষ করার আগে আবার সাজায়া দিব:
ওইসব নোট থাইকা একটা সামারি এইখানে থাকল:

বাল্মিকীরে চতুর্থ শতাব্দির মানুষ ধইরা নিবার পক্ষে আরো বহুত যুক্তি আছে। এর পয়লাটা হইল রামায়ণের ভাষা। রামায়ণের ভাষা যে আধুনিক সেইটার বিষয়ে বহুত আলোচনা আছে। কারো কারো মতে খিপূ ৪র্থ শতকে পাণিনি যে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ সংগঠিত করছিলেন; রামায়ণ রচিত হইছে সেই ব্যাকরণ মাইনা।

০৪
গল্পে আমি রামায়ণ সমাজে বৌদ্ধদের উপস্থিতি ধইরাই আগাইতেছি; মানে রাম আর বাল্মিকী দুইজনই বৌদ্ধের পরের মানুষ ধইরা। এবং এইটা করা লাগতেছে রামায়ণের 'নাস্তিক'দের সম্প্রদায়রে চিহ্নিত করার লাইগা। এইখানে আমি এই যুক্তির পিছনে খুঁটি হিসাবে বুদ্ধদেব বসুর "রামায়ণে নাস্তিক বলতে বৌদ্ধদেরকেই বোঝানো হয়েছে" এই সূত্রটাই নিচ্ছি...

০৫
রামায়ণের নাস্তিকদের ব্যক্তিগত পর্যায়ের নাস্তিক ধরা সম্ভব না; এরা ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিক না। এরা গোষ্ঠীগতভাবে নাস্তিক। মানে নাস্তিক সম্প্রদায়; আর পুরা সম্প্রদায় হিসাবে নাস্তিক বৌদ্ধ ছাড়া অন্য কিছু ভাবা মুশকিল এইখানে...
০৬
রামায়ণ সমাজরে মহাভারত সমাজের পরবর্তী হিসাবে ধইরাই আমি আগাইতেছি; এবং অবশ্যই রাম কৃষ্ণের পরের মানুষ ধইরা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

০১। ঠিক আছে। যোগাযোগের একটা তরিকা বের করে নেয়া যাবে। তবে কথা হলো, এইসব কায়দা কানুনে আর যাই হোক আড্ডাটা আর ঠিকমতো হয় না।

০২। ঠিক আছে। এভাবেই চলুক। মাঝখানে পাঠক যা মন্তব্য করবেন সেখানে যেটা যেটা বিবেচনার যোগ্য সেগুলোর নোট রাখবেন। পরে সম্পাদনার সময় জায়গা মতো দিয়ে দেবেন। তাতে পাঠকের অংশগ্রহনের ব্যাপারটা সার্থক হয়।

০৩। আপনার স্ট্র্যাটেজি ঠিক আছে। যেহেতু এটাও একটা মত, সুতরাং এই মত অনুযায়ী আপনি পুরো আখ্যান ব্যাখ্যা করতে পারেন। শুধু এটুকু বলি, লিপিবদ্ধ রামায়ণের ভাষার গঠন দিয়ে বাক্‌রচিত রামায়ণকে বিচার করলে ভুলের সম্ভাবনা থেকে যায়।

০৪। তিন নাম্বার পয়েন্ট ঠিক থাকলে চার নাম্বার পয়েন্ট ঠিক থাকতে বাধ্য।

০৫। এরা যে ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিক না সেটা আমিও মানি। ব্যাপারটা হচ্ছে কী, মোটামুটি ধরেই নেয়া হয় বৌদ্ধ-জৈন-আজীবকদের মাধ্যমে গোষ্ঠীবদ্ধ নাস্তিকতার শুরু। আমি এইখানে দ্বিমত করি। সভ্যতার আদিলগ্নে মানুষের মনে ঈশ্বর ভাবনা ছিল না। সুতরাং নাস্তিকতার শুরু একেবারে শুরু থেকেই। মানুষের ঈশ্বর ভাবনা প্রবল এবং জনপ্রিয় হতে থাকলে গোষ্ঠীবদ্ধ নাস্তিকতা বাজার হারাতে থাকে। ঈশ্বর ও তার স্বর্গরাজ্য/দেবলোক/সুরলোকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সূচনাকারী প্রত্যেকটি একক বা গোষ্ঠীবদ্ধ অসুর/দানব/রাক্ষস এক প্রকার নাস্তিক। ধর্মগুরুরা তাদের শক্তি ও সাহসকে বিপদজনক মনে করে বলে তাদের শক্তির উৎস ঈশ্বর বা তার অবতার থেকে প্রাপ্ত বলে দেখায়।

০৬। আপনি আপনার মতো করে আগান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি এইখানে দ্বিমত করি। সভ্যতার আদিলগ্নে মানুষের মনে ঈশ্বর ভাবনা ছিল না। সুতরাং নাস্তিকতার শুরু একেবারে শুরু

একেবারেই একমত; যদি আপনে নাস্তিকতা আর 'ঈশ্বরহীনতা' 'ঈশ্বর বিষয়ে উদাসীনতা' রেও নাস্তিকতা হিসাবে ধরেন। সেই হিসাবে বেদও কিন্তু সার্বভৌম ঈশ্বর বিষয়ে উদাসীন; আছে কি নাই নো কমেন্ট; মানে ওই সোসাইটি কোনো তথাকথিত সার্বভৌম ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকারও করত না আবার বিপরীতে আরেকদল অস্বীকারও করত না (নাস্তিক)
কিন্তু নাস্তিক কথাটার চল ঈশ্বর কথাটা চালু হইবার পর ঈশ্বর অস্বীকারকারী হিসাবে; যখন ঈশ্বর সম্পর্কে সকলেই অজ্ঞ আছিল কিংবা পাত্তা দিতো না; তখনকার পরিস্থিতিরে এক শব্দে কী বলা যায় সেইটা নিয়ে আমি একটু ঝামেলায় আছি...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আলোচনা বেলাইনে চলে যাবে বলে এই টার্মগুলো ব্যবহার করতে চাইনি। যাকগে অল্প কথায় বলি। সভ্যতার আদি লগ্নে মানুষের মধ্যে ঈশ্বর ধারণার উদ্ভব হয়নি। এটাকে 'ঈশ্বরহীনতা' বলা যায়, এটাকে 'নাস্তিকতা' বলা ঠিক হয় না। এটাকে 'ধর্মহীন' বলা যায় না এই জন্য যে, সে তখনই ইহজাগতিক কিছু রীতিতে আবদ্ধ ছিল (ধর্ম মানেই পারলৌকিক বিষয়সংশ্লিষ্ট নয়)। মানুষ যখন একটু চালাক-চতুর হলো তখন তার মধ্যে ঈশ্বর ধারণার উদ্ভব হলো। তখন সে হলো 'আস্তিক'। সমসাময়িককাল থেকে যারা ঈশ্বরকে অস্বীকার করলো তারা হচ্ছে 'নাস্তিক' > ন আস্তিক। এই সময়ে বা তার কিছু পরে কিছু মানুষ ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে দোলাচলে দুল্‌ল। এরা হচ্ছে 'সংশয়বাদী'। 'ঈশ্বর বিষয়ে উদাসীন' যারা তারা একটা আমব্রেলা গ্রুপ। এখানে আগের তিনটা শ্রেণীই আছে একটু ভিন্ন ফর্মে। এই ছাতার নিচের আস্তিক ঈশ্বরের পূজা-প্রার্থণা করে না, কিন্তু মনে মনে ঈশ্বর ভীতি আছে, কারো মনে হয়তো কিঞ্চিৎ স্বর্গের লোভও আছে। এই ছাতার নিচের নাস্তিক চুপচাপ থাকে; ঈশ্বরের পূজারীদের রম্‌রমাতেও 'যাকগে, আমার কী!' ধরনের ভাব নিয়ে থাকে। সংশয়বাদীদের মধ্যে যারা ঈশ্বর ভাবনাটিকে খুব বেশি ভাবার বিষয় মনে করেন না তারা এই ছাতার নিচের বৃহদাংশ।

বেদ 'আসমানী কিতাব' নয়। বেদ অমন দাবী করেও না। সভ্যতা রচনা, বিধিবিধান সৃষ্টি, সমাজসৃষ্টি, প্রার্থণা, সেবা, মানবিক গুণাবলীর বিকাশের উপায় ইত্যাদির উদ্দেশ্যে যে গ্রন্থাবলী প্রাজ্ঞ ঋষিদের রচনা তাতে পদে পদে ঈশ্বরের মহিমা কীর্তনের প্রয়োজন নেই। হিন্দু ধর্ম ইনক্লুসিভ। এখানে আস্তিক, নাস্তিক, সংশয়বাদী - সবাই ঠাঁই পায়। এখানে সার্বভৌম ঈশ্বরের পূজারী আছেন, তবে তারা সংখ্যায় অল্প।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

"সহজিয়া" তো একটা বিশেষ সাধনপ্রক্রিয়া বলে জানতাম। এ শব্দটা প্রায়ই "সহজ" বা "অজটিল" বা "সর্বজনবোধ্য" অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখি। আমার অভিমত, এসব অর্থে "সহজিয়া"র প্রয়োগ ভুল। সহজ একটা বিশেষণ, সহজিয়া বিশেষ্য।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সহজিয়া= তরলায়িত? গ্রামার ঠিকাছে?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সহজিয়া প্রেম বলে এক ধরনের ব্যাপারও কিন্তু আছে!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লেখাটায় মেলা 'ডট' (...)। পাঠক খেই হারায় ফালাইব না?
আরেকটা কথা, এই লেখাটা আমার পাঠ-পছন্দের হিসেবে 'কেমুনজানি'। পড়তে সহজ লাগেনাই।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ; ঘষা দিমুনে 'কেমুনজানি' দূরীকরণের উদ্দেশ্যে

অতিথি লেখক এর ছবি

লীলেন, আমার দাদার বাড়ি ময়মনসিংহে। বড় হয়ে আর যাওয়া হয় নি। কিন্তু ছোটো বেলায় মাঝে মাঝেই যেতাম। গরমের ছুটিতে, শীতের ছুটিতে, এমন কি ছুটি ছাঁটা না থাকলেও। শীতকালে বেড়াতে যাওয়ার কোন তুলনা হয়না। দাদার উঠানে খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর ফাঁকে ফাঁকে জ্যাঠাজিদের কিম্বা গ্রামের অন্যদের মুখ কিচ্ছা শুনতাম। ঠিক তোমার গল্পের ঢঙ্গে। তুমিও ভাটির মানুষ, কী অপূর্ব ভাবেই সেই আমেজটা তুলে এনেছো!

----মোখলেস হোসেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটা কোনো কথা হইল? রংপুরিগো মতো তুমিও দেখি আমারে "ভাটিয়া" কও...

সারা বাংলাদেশ পানিতে তলায়া যাইবার পরেও যে কয়েকটা মাত্র টিলা থাকব পোকামাকড়ের শ্বাস ফালাইবার লাইগা সেইরকম একটা টিলায় আমার জন্ম

অতিথি লেখক এর ছবি

হে হে, দাদার বাড়ির গারো পাহাড়েরই ভাত নাই আর তুমি আসছো টিলার গীত নিয়া।

---মোখলেস হোসেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গারো পাহাড় তো ইন্ডিয়ায়; তক্কের খাতিরে তুমি দেখি শেষ পর্যন্ত হিমালয়ে গিয়া উঠবা

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুল হয়ে গেছে। ভূগোলে না, বাংলা দ্বিতীয় পত্রে। সংশোধিত রূপ "হে হে হে, দাদার বাড়ির পিছনের গারো পাহাড়েরই ভাত নাই আর তুমি আসছো টিলার গীত নিয়া।" হে একটা বাড়াইয়া দিলাম।
---মোখলেস হোসেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি একটা জিনিস বুঝলাম নাঃ বিশ্বামিত্রের চেলা হিসেবে এতদিন ঘুইরা রাম-লক্ষণের লাভটা কী হইল? বিশ্বামিত্র ঋষি হওয়ার আগে নাকি ছিলেন রাজা; তো তিনি তাঁর এই দুই চেলারে প্রশাসন, রাজনীতি, যুদ্ধ পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে কোন লেসন দিতে পারলেন না?! আর রাম-লক্ষণ নিজেরাও তো আগ বাড়ায়ে বিশ্বামিত্রের ব্রেনটারে পিক করতে পারত; সেইটাও তো মনে হয় এই দুই বেকুব করে নাই, খালি চাকরের মত গুরুর হুকুম তামিল করসে!

এমনকি আপনেও যদি আমারে আমারে আদেশ দেন; তাইলেও কিন্তু আমি ভরতরে রাজ্যের লগে লগে সীতারেও দান কইরা দিতে পারি...

এই কথা পড়লে তো মনে হয় রাম যে রাজা হয় নাই, সেইটা অযোধ্যাবাসীর সৌভাগ্য! নাইলে তো নিজের ওয়াদা রক্ষার জন্য হয়ত কবে রাজ্যটাই কারে দান কইরা দিত! আর দুর্ভাগা সীতা এই জামাইয়ের জন্য এত ত্যাগস্বীকার করল?! এই দিক থেকে চিন্তা করলে রাবণ বরং অনেক বেটার ক্যারেক্টার; সে "শক্তি দিয়া যারে দখল করসি, তাঁরে আমি বিনা যুদ্ধে ছাইড়া দিব না"- নীতিতে বিশ্বাসী। আর রামায়ণ যারা লিখসে, তারা উচুদরের সাহিত্যিক হইলে রামরে একটা (ইন্টারেস্টিং/জটিল) প্রতি-নায়ক (অ্যান্টি-হিরো) বানায়ে দিতে পারত [ধরেন, দশরথ-কৈকেয়ী-রামের কথাবার্তা শেষ হইলে রাম কৈকেয়ী আর তার অ্যাডভাইজার বশিষ্ঠের গলাটা নামায়ে দিয়া সিংহাসনে বইসা গেল (আফটার অল, দশরথ তো তাঁরে পাব্লিক্লি রাজা ঘোষণা কইরা দিসেই)। একবার সিংহাসনে বসার পরে কিন্তু সে ইনকামবেনট; তখন ভূপতিরা তার অর্ডার মানতে বাধ্য। আর এই ঘটনার পর রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা না কইরে অযোধ্যার রাজা হওয়ার কোন সুযোগ ভরতের থাকত না। পর্দার আড়ালের রাজনীতিগুলি তখন শুরু হইত, আর রামায়ণটাও অনেক বেশী ইন্টারেস্টিং হইত!]

যারা রামায়ণ পড়ে নাই, তাদের জন্য কোন কিছু স্পয়েল করতে চাই না, কিন্তু আমার মতে রামায়ণের সবচেয়ে চালু পলিটিশিয়ান হইল ভরৎ। কীভাবে সবাইরে খুশী রাইখা সে নিজের কাজটা ঠিকই হাসিল কইরে নিল! রামের বদলে ভরতরে কেন্দ্র কইরে মহাকাব্য লিখলে সেইটা মনে হয় অনেক বেশী ইন্টারেস্টিং হইত...

শত্রুঘ্ন সারা জীবনে কয়টা শত্রু মারসিল?! ঐটা মনে হয় দশরথের সবচেয়ে ইউজলেস পোলা!

আপনার এই সিরিজটা পড়তে গেলে ভানুর নবরামায়ণ নাটিকাটার কথা মনে পড়ে...

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিশ্বামিত্র ট্রেনিং দেয় নাই তো; ভাড়াইট্টা হিসাবে নিয়া গেছে...
আর বিশ্বামিত্র কিন্তু ভালো রাজা না; লুটেরা টাইপের শাসক/যোদ্ধা; অনেকটা মারাঠাগো মতো। রাজনীতি বোঝে না

০২
রাম কিন্তু আরো কয়েকবার সীতারে দান/ত্যাগ করতে চাইছে। আর ফাইনালি লংকা জয়ের পর তো সীতারে বইলাই দিছে- আমি তোমার লাইগা যুদ্ধ করি নাই; আমি যুদ্ধ করছি আমার বাপের বংশের সম্মান উদ্ধারের লাইগা; এইবার তুমি যারে ইচ্ছা তার লগে চইলা যাইতে পারো; রাবণের ঘরে বাসকরা তোমারে আমি আর ঘরে নিতে পারি না...

০৩
রাবণ সরল চরিত্র; সেই যুগের প্রথাগত শক্তিশালী রাজা; রাজনীতি বোঝে না...

০৪
সীতা ত্যাগ স্বীকার করল কই? সে তো পুতুলের মতো পরিস্থিতির স্রোতে হাত থেকে হাতে বদলাইতে থাকল খালি। জন্মের পর অভাবের কারণে মূল মা বাপে দিলো বনে ফালায়া; সেইখান থাইকা তুইলা আইনা বড়ো করল মিথিলার রাজা; তারপর বিশ্বামিত্রের কথায় তুইলা দিলো কোন না কোন অজ্ঞাত রামের হাতে; সেইখানে দশরথ-রাম কৈকেয়ীর চক্করে হারার পর ভাগল দিবার সময় রাম তারে যাইতে আছিল ফালায়া; দেবরের আশ্রিতা হইয়া থাকার চাইতে স্বামীর লগে থাকা ভালো মনে কইরা রওয়ানা দিলো বনে; নিয়া গেলো রাবণ; রাবণ মারবার পর স্বামী কয়- যেখানে ইচ্ছা সেইখানে যাও তোমারে আর নিতে পারব না আমি; হনুমাণ আর বিভীষণে বুদ্ধি কইরা তারে আবার গছাইয়া দিলো রাজা রামের ঘরে; সেই রাজা আবার কয়দিন পরে লক্ষ্মণরে কইল- যা তারে ফালায়া আয় রাজ্যের বাইরে; সেইখান থাইকা কুড়াইয়া নিলো বাল্মিকী; বাল্মিকী আবার চেষ্টা করল রামেরে গছাইয়া দিতে; রাম নিলো না; অবশেষে আত্মহত্যা কইরা পুতুল জীবনের হাত বদল থামাইল সীতা; সে ত্যাগ করল কই?

০৫
ভরত প্রশিক্ষিত কূটনীতিক; আং সান সুচির মতো প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট না হইয়াও দেশের প্রধান
০৬
রাজা হিসাবে সব থিকা ঝানু আর কূটনীতি বুদ্ধিসম্পন্ন হইল বিভীষণ আর রাজনীতিবিদ হিসাবে হনুমান। এই বিভীষণ হনুমানের বুদ্ধিতে প্রায় একশো বছর দাক্ষিণাত্য আর্য আগ্রাসন থাইকা বাইচা থাকতে পারছিল
০৭
শত্রুঘ্ন ভরত এইসবগুলারে পরে রাম নির্বাসন দিছিল; আর লক্ষ্মণরে মৃত্যুদণ্ড

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যেহেতু আদিনাগ বিষ্ণুর সেবক, তাই আদিনাগের অবতার লক্ষ্মণ ঐতিহাসিকভাবে রামের সেবক, অথবা আদিনাগের অবতার বলরাম কৃষ্ণের সেবক। এটা লক্ষ্মণের নির্বন্ধ। যমরাজের সাথে রামের কী আলাপ হচ্ছিল যে লক্ষ্মণ সেটা শুনে ফেলায় রাম কোপিত হলেন? বিষয়টা সম্ভবত লক্ষ্মণের পরিণতি বিষয়ক। তাই লক্ষ্মণকে বান্ধবগড়ে না পাঠিয়ে সরযূর তীরে অনাহারে মরার ব্যবস্থা করা হলো। এখানে দুর্বাসার আগমনের দোহাই নিছক অজুহাত। (যে যখন পেরেছে দুর্বাসার দোহাই দিয়ে গেছে)

ঘাপলাটা সম্ভবত একটু আগের। চ্যবন রামকে অনুরোধ করলেন মধুবনের লবণাসুরকে দমন করতে। রামের ফার্স্ট চয়েস ছিল ভরতকে পাঠানো। কিন্তু ভরত কায়দা করে শত্রুঘ্নকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন লবণাসুর কে হত্যা করার জন্য। অবশ্য এখানে যুদ্ধটা হয়েছিল শিবের আশীর্বাদপুষ্ট লবণাসুর আর বিষ্ণুর আশীর্বাদপুষ্ট শত্রুঘ্নের মধ্যে। যুদ্ধে শত্রুঘ্ন যে লবণাসুরকে হত্যা করতে পারবেন সেটা সম্ভবত কেউ আশা করেনি। কিন্তু তখন সময়কালটা বিষ্ণুর পক্ষে। বিজয়ী শত্রুঘ্নকে মধুবনেই রেখে দেয়া হলো। এতে রামের প্রেক্ষিতে সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না।

রামের সাথে ভরত আর শত্রুঘ্নের সহমরণে যাবার ব্যাপারটা ইনটেরেস্টিং। লক্ষ্মণ বেঁচে থাকলে তাকেও সহমরণে যেতে হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রামের সাথে ভরত আর শত্রুঘ্নের সহমরণে যাবার ব্যাপারটা ইনটেরেস্টিং

এইটা নিয়া খটকা আছে; কেউ কেউ বলেন জলোচ্ছ্বাসে তিন ভাই মরছে; তারপর থাইকা আর 'সেই রাম্ও নাই অযোধ্যাও নাই'। কিন্তু হঠাৎ করে ভরত শত্রুঘ্ন রামরে লগে মরতে আসছিল মানা যায় না; আবার স্বেচ্ছায় সহমরণ মানার কারণও নাই। সবচে বড়ো কথা রামায়ণ সমাজে সহমরণ জিনিসটা নাই
০২
সম্ভবত তিন ভাইরেই একলগে এক জাগায় মাইরা ফালাইছিল কেউ; রামের রাজ্যরে সাম্রাজ্য হইতে না দেয়ার লাইগা/ রামের ভাতিজাগো মাঝে ছোট ছোট রাজ্য হিসাবে টিকাইয়া রাখার লাইগা তিন ভাইরে একলগে মারা হইছে। লক্ষ্মণ তো আগেই গেছে...
এই কামটা বামুনগো না; আমার হিসাবে হনুমাণের কাম এইটা; তার লগে বিভীষণও যুক্ত থাকতে পারে; বশিষ্ঠ বামুনরাও যুক্ত হইতে পারে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

০১। পুরুষের সহমরণের কোন ঘটনা কি ভারতবর্ষের কোন আখ্যানে আছে? সম্ভবত নাই। সেখানে ভাইদের সহমরণে যাবার তো প্রশ্নই নাই। প্রাচীন মিশরীয়রা যেমন পরকালে মৃত সম্রাটের সেবাযত্মের জন্য তার সাথে কিছু দাসদাসীকে মেরে কবর দিত এখানে ব্যাপারটা এমন হতে পারে। অথবা ছেলেপিলেদের কেউ বা সিংহাসনলোভী অন্য কেউ একবারে সব ল্যাঠা চুকিয়ে ফেলার জন্য এমনটা করতে পারে।

০২। আপনি রামায়ণকে যে কালের বলার চেষ্টা করছেন সেটা মহাজনপদ বিদ্যমান থাকার কাল। সুতরাং কোশল, মল্ল, বৃজ্জি, কাশী বা লিচ্ছবিদের কেউ রাজতন্ত্র উৎখাত করে প্রজাতন্ত্র কায়েম করার কথা ভাবতে পারে। অথবা আযোধ্যার লোকজনও আশপাশের মহাজনপদদের রীতি অনুসরণ করার কথা ভাবতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কেউ রাজতন্ত্র উৎখাত করে প্রজাতন্ত্র কায়েম করার কথা ভাবতে পারে। অথবা আযোধ্যার লোকজনও আশপাশের মহাজনপদদের রীতি অনুসরণ করার কথা ভাবতে পারে।

পরবর্তীতে সেইরকম কোনো নিদর্শন পাওয়া যায় না। বরং রামের ভাতিজারা (ভরত শত্রুঘ্ন লক্ষ্মণের পোলাপান) আগে থাইকাই যেসব অঞ্চলের প্রশাসক আছিল পরে সেইগুলারেই ছোট ছোট রাজ্য হিসাবে শাসন করতে দেখা যায়; কিন্তু সেইসব কোনো কেন্দ্রীয় শাসনের অধিনে বইলা প্রমাণ নাই (যেইটা রামের সময় অযোধ্যায় কিছুটা আছিল)

আবার বহিরাগত কেউ দখল নিবারও প্রমাণ নাই; বিলুপ্ত অযোধ্যা মূলত আপনা আপনিভাবে আশপাশের রাজ্যগুলার সাথে মিশা গেছিল পরে

সোহেল ইমাম এর ছবি

অসাধারণ লাগলো। রামায়ণের চিরপরিচিত কাহিনিটা আবার শুনতে একঘেয়ে লাগবে ভেবেছিলাম কিন্তু লীলেন ভাই আপনিতো যাদু করে দিলেন। পরের পৃষ্ঠা গুলো পড়ার জন্য মনটা আকুপাকু করছে কিন্তু জানি মাহবুব লীলেনের পরবর্তী কিস্তি ছাড়া আর কোন রামায়ণেই তা পাওয়া যাবেনা। আমি একেবারে মাদুর পেতে গ্যাঁট হয়ে বসলাম গল্প শোনার জন্য। রামায়ণ নিয়ে তার প্রচলিত ভাষ্য আর আপনার ভাষ্য নিয়ে কথা হয়তো থাকবেই এবং পুরোটা পড়া হলে সেসব নিয়ে আরেক প্রস্থ চিন্তারও অবকাশ থেকেই যাবে, কিন্তু এখন শুধু তন্ময় হয়ে শুনবো ভাই। আপনার রামায়ণ নিয়ে বিস্তর আলোচনা, সমালোচনা হয়তো চলতেই পারে কিন্তু আমার মনে হয় আপনার এই সহজিয়া রামায়ণটাকে (যদি ঠিক ঠাক শেষ হয়) কোনমতেই কখনও অগ্রাহ্য করা যাবেনা। রামায়ণ সম্পর্কিত গবেষণায় এই ভাষ্যকে এড়িয়ে যাওয়া সহজ হবেনা। গল্প চলুক চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শত শত প্রশ্নের মুখে সূত্র হাজির করার লাইগা নোটগুলারে গুছাইতে বহুত দিন গেছে; এখন সিদ্ধান্ত নিছি খটখটানি ব্যাখ্যা পরে দেবো; আগে গল্পটা শেষ করব; কারণ নিজের পড়াশোনা থাইকা গল্পের আউটলাইত তৈয়ারি আর নিজের পাঠ থাইকা অন্যের লাইগা সাজায়া থিসিস তৈরি পুরাই আলাদা খাটনির কাম;

এক লহমা এর ছবি

বাজারের খবর। এইমাত্র পড়লাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

লীলেন ঘুমাও নাকি? বইটা তাড়াতাড়ি নামাও।

---মোখলেস হোসেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।