আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: শনি, ০৯/০৫/২০১৫ - ৭:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বড় হতে হতে টের পাই, আমাদের অন্যতম প্রধান কৌতুহলের নাম যৌনতা। যা খুব ঢেকে রাখার একটা জিনিস, আড়ালে আবডালে লুকিয়ে রাখার ব্যাপার। বড়রা যখন ইশারা ইঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে দুষ্টুমি করতে থাকে, তা দেখে নিজের ভেতরে আরো বেশি কৌতুহল লুকিয়ে রাখার জিনিস। যে কৌতুহল লুকিয়ে রাখতে হয়; প্রকাশ্যে প্রকাশ করতে নেই, প্রশ্ন করতে নেই। শুধু ফিসফিস করে বন্ধুদের সঙ্গে গোপনে আলাপের বিষয় এটা। আচমকা একটা ন্যাংটো মেয়ের ছবি দেখে ফেললে হা হয়ে তাকিয়ে থাকার ব্যাপার। আর প্রথমবার যখন নিজের শরীর জাগে, তখন অজানা এক শিরশিরে অনুভূতিতে বিহ্বল হওয়ার ব্যাপার। তখনো আমাদের 'এসব ব্যাপার স্যাপার' জানার কোনো সুযোগ থাকে না। মেয়েরা আর মেয়েদের শরীর তখন হয়ে যায় লুকিয়ে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার ‘জিনিস’। সে এক দারুণ কৌতুহল আমাদেরকে ঘিরে ধরতে থাকে সেই ছোটবেলা থেকে।

এই কৌতুহল আর নিষেধাজ্ঞা আমাদেরকে ব্যাপারটার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। গুপ্তধনের মতো আকর্ষনীয় করে তোলে। যেহেতু স্বাভাবিক উপায়ে এই কৌতুহল মেটানোর কোনো সুযোগ আমাদের থাকে না, উপায় থাকে না জানার, তাই আমাদের এগিয়ে যেতে হয় আরো নিষিদ্ধ কিছু উপায়ের দিকে। আমরা বদ্ধ দরোজার ফুটোয় উঁকি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি ব্যাপারটা, বালিকার জামার ফাঁক ফোকরেও আমাদের চোখ পাততে হয়। কখনো পাততে হয় হাত। বয়সে বড় কাজিন বা কাজের ছেলেটি আমাদের এসব কৌতুহল মেটাতে এগিয়ে আসে। আর তাতে করে তার জীবনের ভুল শিক্ষাগুলো আরো রঙে চড়ে আমাদের জীবনের ‘শিক্ষা’ হয়ে জোটে।

জ্ঞান আহরণে আমরা দ্বারস্থ হই চটি পুস্তকের, লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ি রসময় গুপ্তর রসময় সব লেখা। এক টিকিটে দুই ছবি দেখি, ভিডিওতে থ্রি এক্স সিনেমা দেখে আমরা জ্ঞানী হই। আগের প্রজন্মের ভুল শিক্ষা, গুপ্তচটিবই আর এক্সরেটেড সিনেমা গড়ে দেয় আমাদের যৌন জ্ঞানের ভিত্তি। গুপ্ত স্যার আমাদেরকে শিখিয়ে দেন নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু, সে মা মাসী যে-ই হোক! নেহায়েৎ অতোটা পারি না, তাই মা মাসী রক্ষা পেয়ে যান। কিন্তু পাশের বাড়ির ভাবী, বড়বোনের বান্ধবী, কাজের মেয়ে, নিজের খেলার সাথী, কাজিন সবাইকে আমরা ভেবে নেই চটিবইয়ের চরিত্র, যারা হাত বাড়ালেই শুয়ে পড়তে রেডি! আমাদের রাতের স্বপ্নে আর দুপুরের বাথরুমে হাজির হয় মাধুরী, ক্যাটরিনা, বিপাশা বসুরা; কখনো কখনো চেনা আকাঙ্খিত নারীরা। মনে মনে সঙ্গম চলে, কল্পনার নারী জানতেই পারে না। আহ্ কি সুখ! আমরা বড় হতে শুরু করি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নয়, মেয়েদের বুকের দিকে তাকিয়ে। আমরা মনে বড় হই না, বড় হই যৌনচিন্তায়।

আর আমরা বড় হতে হতে 'স্বাধীন' হতে শিখি। পাড়ার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে ধুম্রশলাকা পান করতে করতে যদি পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটার শরীর চোখ দিয়ে খেয়ে নিতে না পারি, তাহলে আমাদের হীনমন্যতাবোধ হয়। মনে হয় আমরা বুঝি অতোটা বড় হতে পারিনি এখনো। চোখ দিয়ে দেখে মেয়েটার বুকের মাপ বলে দিতে না পারলে বন্ধুমহলে কদর বাড়ে না আমাদের। মেয়েদেরকে টিজ করতে না পারলে নিজেকে পুরুষ বলে মনেই হয় না। আমরা বড় হয়ে উঠি অশ্লীল গালি মুখে নিয়ে। দ্বিধাহীন কণ্ঠে ‘তর মায়রে চুদি’ বলতে না পারলে আমি কোন্ বালের পুরুষ হলাম?! আমাদের মজার কৌতুক, রসিকতা সবকিছু যৌনতা আর নারীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে। নারী হয়ে ওঠে আমাদের প্রধানতম বিনোদন। নারীর যে এতে বড্ড অবমাননা হলো; তা আমাদের নজরে আসে না, মননে তো নয়ই। কারন আমরা জানি এভাবেই একটা ছেলে বড় হয়ে ওঠে, এভাবেই ‘পুরুষ’ হয়ে উঠতে হয়। নারীকে অবমাননা না করা পর্যন্ত পুরুষ হতে শিখি না আমরা। আমাদের শিক্ষা, আমাদের সামাজিকতা আমাদেরকে এভাবেই তৈরি করে দেয়। এটাকেই নিয়তি জানি আমরা।

একই সমান্তরালে আমাদের সমবয়সী মেয়েটা, যে আমাদের সঙ্গেই খেলতো, সে একসময় ধীরে ধীরে নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে নিতে থাকে, লুকিয়ে থাকতে শেখে। আমরা যখন শিখেছি নারীর গোপনে উঁকি দিতে হয়; তখন তার মা, খালা, চাচী, বড়বোন সবাই তাকে শিখিয়েছে ‘ঢেকে রাখ’। যখন আমরা শিখেছি চান্স পেলেই চামে হাতিয়ে নিতে হবে নারীর শরীর; তখন তার মা-খালা তাকে শিখিয়েছে পুরুষ হাতিয়ে দিলেও চুপ করে থাকতে হবে, কাউকে কিচ্ছুটি বলা যাবে না। নিজের ভেতরে কান্নায় ডুবে যেতে হবে, মরমে মরে যেতে হবে। এটাই নিয়ম। নারীকে চুপ করে থাকতে হয়, চুপ করে রাখতে হয়।

এই 'সিস্টেম' থেকে যে মেয়েরা বের হতে চায়, তাদেরকেও আমরা 'আমাদের সিস্টেমে' ফেলে দেই। আমাদের মতো করে সিগারেট খাও, আমাদের মতো করে গালি দাও, মেতে ওঠো অশ্লীল কৌতুকে, তাহলেই তুমি আমাদের মতো হতে পারবে, আধুনিক হতে পারবে। নইলে তুমি আনস্মার্ট। আর কোনো ছেলে যখন আমাদের মতো এগুলোতে মাতে না, তখন আমরা তাকে বলি মাইগ্যা। এই স্ট্যান্ডার্ডগুলো আমরাই ঠিক করে দেই। যেভাবে একজন আদিবাসী তরুণ নিজের পোশাক, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ছেড়ে আসতে পারলে আমরা তাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেই। আমাদের মতো সার্ট প্যান্ট পরলে, বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে কথা কইলে, ফ্রায়েড রাইস খাইলেই কেবল সে আমাদের সমকক্ষ হতে পারে। নারীর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকম।

বড় হতে হতে ক্রমশ আমরা কামুক হতে থাকি। পত্রিকায় শবমেহের নামের কিশোরী মেয়েটির ধর্ষণের খবর পড়ে আমাদেরও মনের ভেতর লালসা উঁকি দেয়। মনে মনে বলি “আহা, আমি যদি শবমেহেরের প্রথম ধর্ষনকারী হতাম!” (পোস্টমর্টেম: রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ)
সেই দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে, গলায় টাই পেঁচিয়ে আমরা অফিসে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া স্কুলবালিকার বুকের দিকে জুলজুল করে তাকাই। চান্স পেলে একটু হাতিয়েও দেই।

বড় হতে হতে আমরা জেনে যাই পুরুষ আর নারীর বেড়ে ওঠার এটাই প্রচলিত নিয়ম, এটাই সিস্টেম, এটাই রীতি, এভাবেই হয়ে আসছে এতোকাল। পুরুষ যা খুশি তা করবে, তার সব মাফ। 'ব্যাটাছেলেরা এরকম একটু আধটু করেই'। লজ্জা কেবল নারীর ভূষণ। এভাবে পৃথিবীর বিশাল বনে পুরুষ ধীরে ধীরে বাঘ হয়ে যায়, নারী সেখানে মায়া হরিণ। আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।

সবচেয়ে ক্ষতিটা হয় বন্ধুত্বে আর মানসিকতায়। বড় হতে হতে ছেলে আর মেয়েগুলো আলাদা হয়ে যায়, বন্ধু হয় না। পড়তে হয় আলাদা, খেলায় হয় আলাদা। চিন্তা ভাবনার জগৎটা সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটে, রেল লাইনের মতো। মেলে না আর। বেড়ে ওঠার বয়সে দূরত্ব বাড়তে থাকে ভীষণ। এই দূরত্ব তৈরি করে আরো বেশি কৌতুহল, আরো বেশি ভুল জ্ঞান। যে দূরত্ব পরে আর কখনোই দূর করা হয়ে ওঠে না, আরো বেশি বেশি করে বাড়তেই থাকে কেবল। নারীকে কখনো জানা হয়ে ওঠে না পুরুষের, পুরুষকে নারী জানতে পায় কদর্য হাতের মাপে।

তেমনি জানা হয়ে ওঠেনা যৌনতাকেও। আমাদের কাছে দিনে দিনে নারী হয়ে ওঠে একটা এভারেস্ট। যার উপরে উঠে পতাকা গাড়লেই জয় করা হয়ে যায় আমাদের। এরকমটাই চিন্তা আমাদের গড়ে ওঠে। পুরুষের একপেশে চিন্তার জগতে নারী ততোদিনে অনেকটা জড় পদার্থের মতোই হয়ে গেছে। নারীর কোনো অনুভূতি তার আর প্রয়োজন হয় না। নারী-বন্ধু-সঙ্গবিবর্জিত পুরুষ যৌনানন্দটুকু খুঁজে নিতে শিখেছে একা একা, হস্তমৈথুনে। ছোটবেলা থেকে যৌনতায় নারীর অংশগ্রহণ কল্পনায় পেতে পেতে পুরুষ একসময় অভ্যস্ত হয়ে যায়। যৌনতায় নারীর বাস্তব অংশগ্রহণ অপ্রয়োজনীয় বা অদরকারী মনে হতে থাকে। আর তাই ভীড় বা অন্য সুযোগে হাতিয়ে নিলেই তার আনন্দসুখ জোটে, নারীর অংশগ্রহণ আর অনুভূতি কল্পনায় যোগ করে নিতে অসুবিধে হয় না। অথবা ছুঁতে না পারলে চোখ দিয়ে চেটেপুটে খেয়ে বাথরুমে গিয়ে জাবর কাটে আর হাত মারে। পুরুষ ধীরে ধীরে কল্পিত নারীর সঙ্গে যৌনসুখে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এই অভ্যাসটা কখনো কখনো ভয়াবহ রূপ নেয়। বিবাহিত পুরুষ স্ত্রী সহবাসে তৃপ্তি পায় না, পাশাপাশি তাকে হস্তমৈথুনের অভ্যাস চালিয়ে যেতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের জানা হয়ে ওঠে না যে ব্যাপারটা আম জাম লিচু খাওয়ার মতো একপাক্ষিক না। জানা হয় না যে এ এক দারুণ সুখের অনুভূতি, যা দুজনে মিলে রয়েসয়ে উপভোগ করতে হয়। একজনের অনুভূতি সামান্য কম থাকলেও ব্যাপারটা আনন্দময় হয় না।
ছোটবেলা থেকে বড় হওয়াতক এই ‘একলা ভোগেই তৃপ্তি’ পাওয়ার শিক্ষা আমাদেরকে সারাজীবনের জন্য যৌনতার অপার্থিব আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে দেয়! নারীকেও, পুরুষকেও... মানুষকে। পুরুষ তখন যৌনতৃপ্তির চেয়ে ভোগদখলকৃত নারীর সংখ্যা গোনে। 'তুই যতোজন মেয়ের সাথে কথা কইছস, তারচেয়ে বেশি মেয়ের সাথে আমি শুইছি। জানস?' এরকম গর্ব করার 'পুরুষ' আমাদের আশেপাশেই আছে। তাদের জন্য দুঃখই হয়।

আর এসবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে দাম্পত্যে। সমাজ নানাবিধ শর্তের বিনিময়ে যখন দু’জন মানুষকে এক ছাদের নিচে এক বিছানায় পাঠিয়ে দেয়, তখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে এই দু’জনের পার্থক্য। বাঘে মহিষে একঘাটে জল খাওয়ার মতো দু’টো অচেনা অজানা প্রজাতির প্রতিনিধি বাস করতে থাকে পাশাপাশি। সন্তান জন্ম দেয় আর সুখের ভান করতে থাকে। বছরের পর বছর সঙ্গম করে যায়, বাচ্চা পয়দা হয়, কিন্তু তৃপ্তি হয় না সুখ হয় না। দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করলেও এই গ্যাপ থেকে যায়। স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে কিছুটা জানলেও ‘নারী আর পুরুষ’ স্বত্ত্বা যে পরষ্পরকে চেনে জানে না? যৌনতার স্বাভাবিক জ্ঞান যে নেই। পুরুষ নারীর কাছে খোঁজে পর্নস্টারের পারদর্শিতা, কল্পনায় আঁকে সানী লিওনিকে। নিজের মাপটা তার জানা নেই। নারী কি খোঁজে? সেই খোঁজ পুরুষের অজানা থেকে যায়।

শেষ পর্যন্ত তাই অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্যের সঙ্গী হয় অতৃপ্তি। তারপর সেই তৃপ্তির খোঁজে আবারো এদিক সেদিক হাতড়াতে থাকে পুরুষ আর নারী। ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়। এমনি মায়ার ছলনা। এরা ভুলে যায়, কারে ছেড়ে কারে চায়। তাই কেঁদে কাটে নিশি, তাই দহে প্রাণ, তাই মান অভিমান, তাই এত হায় হায়।‘ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
হায় হায় করতে করতে, অতৃপ্তি নিয়ে একসময় আমরা মরে যাই পরকালের আশায়।

শুধু ব্যক্তিজীবনে না, এই প্রভাব কর্মজীবনে থাকে, থাকে নাগরিক জীবনে। বেড়ে ওঠার কালে যে দূরত্ব আর অভ্যাস তৈরি হয়েছিলো, সেগুলো বড় হয়েও ছেড়ে যায় না পুরোপুরি। রিকশায় পুরুষ ডানদিকে বসে, নারী বসে বামপাশে; তার নাম যে বামা! আমরা সর্বত্র নারীকে দেখি রমণযোগ্য হিসেবে, তার নাম যে রমণী! অধিকারের বেলায় অর্ধেক দেই; সে যে মানুষ না, মেয়ে-মানুষ! আলোচনায় তাকে কথা বলতে দেই না বা তার কথায় গুরুত্ব দেই না, তার নাম যে অবলা! তাকে বাইরে আসতে দেই না, সে যে অন্তঃপুরবাসিনী! বিশ্বাস না হয় তো শাস্ত্র দেখুন জনাব হাসি

আমরা জানি সেই প্রচলিত ছড়াটা “নারী, তুমি যতোই করো বড়াই; বিয়ার পরে রান্নাঘরে, ঠেলতে হবে কড়াই”। অথবা মতিকণ্ঠের ভাষায় “নারীর সঙ্গে দেখা হবে রুটি বেলার কাঠে, কাপড় কাচার ঘাটে, রাইতের বেলা খাটে। এর বাইরে আর কুথাও নারী দেখলেই মাইর”। এ-ই আমাদের শিক্ষা।

আমরা জানি নারীকে হতে হবে লক্ষ্মী, অসূর্যম্পশ্যা। সুন্দরী, সতী। আমরা বার বার অন্ধকারে তার দিকে বাড়িয়ে দেবো আগ্রাসী হাত, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করে তাকেই বার বার দিতে হবে সতীত্বের অগ্নিপরীক্ষা। এটাই সিস্টেম, এটাই রীতি, এটাই নিয়ম। এভাবেই আমরা শিখে এসেছি, জেনে এসেছি এতোকাল। অন্যথা হতে নেই। অমঙ্গল হয়। অমঙ্গলের যাবতীয় দায় নারীর। অমুক এলাকায় কলেরা লেগেছে? কোনো এক নারীকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে দাও, ঝামেলা মিটে যাবে। যুদ্ধ করবে? বীরের খেদমতে বিছানায় যেতে হবে নারীকে। বীরের শরীরে আনন্দ দেওয়ার দায় নারীকে নিতেই হবে। নাগরিক আর পরিব্রাজকের যৌনতার দায় মেটাতে নারীকে হতে হবে বেশ্যা। উৎসবে আনন্দে পুরুষের হাত গায়ে মেখে নিয়ে কেঁদে ফিরতে হবে নারীকেই। থার্টি ফার্স্ট নাইটে, পহেলা বৈশাখে, বই মেলায়, স্বাধীনতা দিবসে... শাহবাগ থেকে মার্কিন সৈকত... সর্বত্র! বছরের পর বছর ধরে ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবখানে এভাবেই হয়ে এসেছে। তাই এটাই জগতের নিয়ম হয়ে গেছে।

নারীর স্বীকৃতি কেবল রূপে আর শারীরিক সৌন্দর্যে। তাকে বিউটি পার্লার থেকে সাজিয়ে, সুন্দর পোশাকে আর অলঙ্কারে অপরূপা হয়ে আমাদের সঙ্গী হিসেবে শোভা বাড়াতে হয়। পার্টিতে আমার ‘মিসেস’ হতে হয়। অফিসের ফ্রন্ট ডেস্কে বসতে হয়, কাস্টোমার কেয়ারে সুললিত কণ্ঠ হতে হয়। এমনকি মিছিলের আগেও থাকতে হয় পিটুনি খেয়ে মিডিয়ার খোরাক হওয়ার জন্য। আর বিজ্ঞাপনে পণ্য হতে হয়। এরকম অসংখ্য, অগুনতি।

সবখানে নারীকে আমরা দমিয়ে রাখি। আর আমরা বলি ‘এগুলো’ পুরুষের ‘অবদমিত কামনা বাসনা’র ফল। তাহলে নারীর অবদমিত কামনা বাসনা কোথায় গেলো? তার ফল কেন পৃথিবী ভোগ করে না? এই যে শুরু থেকে বলে আসছি কৌতুহল ইত্যাদির কথা, কৌতুহল কি শুধু পুরুষেরই ছিলো? নারীর কৌতুহল ছিলো না? পুরুষের যেমন উঁকি দিয়ে, হাতিয়ে ‘জ্ঞান আহরন’ এর ইচ্ছে হয়, নারীর জ্ঞান তবে কোথা হতে আসবে? নারীকেই কেন তার সবটুকু কৌতুহল লুকিয়ে রাখতে হবে? দমিয়ে রাখতে হবে? আবার অদমমিত কামনা বাসনার ফলটুকুও লুকোতে হবে?

হ্যাঁ হবে, হচ্ছে। কারন ঐ যে ‘লুকিয়ে থাকো, লুকিয়ে রাখো, চুপ করে থাকো’ নীতিশিক্ষা আমাদের।

এই চর্চাটা একদিনে গড়ে ওঠেনি। মানুষ সবকিছু অধিকার করতে চায়, জোর দিয়ে মুল্লুক দখল করে নেয়। যেভাবে মানুষ সমস্ত প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে, সেভাবে একে একে মানুষকেও মানুষ নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাসে নিয়ে আসে। এক জাতি আরেক জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীকে। অস্ত্র, রাজনীতি আর ধর্ম ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ আর দখলের এই অপসংস্কৃতি অবিরাম চলে। আর সেই হিসেবমতো মানব জাতির অর্ধেকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আর দখল প্রতিষ্ঠা করা যায় শুধু নারী বলে তাদের দমিয়ে রাখতে পারলে। নারীর মাতৃত্ব সংক্রান্ত ইস্যুগুলো এই কাজে পুরুষকে খুব সাহায্য করে। পিরিয়ডের ছুঁতোয়, মাতৃত্বকালীন দায়িত্বের ছুঁতোয় তাদেরকে ঘরের ভেতর আটকে দেওয়া যায়।

ধীরে ধীরে নারীর দায় হয়ে ওঠে মনোরঞ্জনের। দায়িত্ব হয়ে ওঠে কোমলতার। শরীর ভরে উঠতে থাকে পেলবতায়। নারী অভ্যস্ত হতে থাকে এই রীতিতে। আর আমরা জানি শুধু এভাবেই এক ধাক্কায় অর্ধেক ‘মানুষ’কে দখল বাণিজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। বাকি অর্ধেকের মধ্যে চলতে থাকে মারামারি কাটাকাটি। ২০১১-এর আদমশুমারীর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার এবং ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। এই অর্ধেক নারীকে ঘরে আটকে রাখতে পারলে পুরুষ জাতের খুব সুবিধা হয়, অহেতুক প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়ে না। আর এই কাজে ব্যায়ও নেহায়েত কম না। সম্প্রতি কেয়ারের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে শুধু নারী নির্যাতনের কারণে প্রতি বছর ১৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়। যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। বুঝুন অবস্থা!

নারী আর পুরুষের অসম পৃথিবীর বয়ানের জন্য একটা ব্লগ খুব সামান্য জায়গা, কোটি কোটি অক্ষর লিখলেও এর শেষ নেই। যেমনি শেষ নেই নারী অবমাননার গল্পের। গত ক’দিন ধরে সচলায়তনে অনেক ঘটনা উঠে আসছে, কিন্তু তা প্রকৃত পরিস্থিতির তুলনায় দশমিক এক ভাগও না। এই পৃথিবীর ঘরে ঘরে নারীর শরীরে শরীরে লেগে আছে এরকম কোটি কোটি ক্ষত। কিন্তু কেউ বলে না। ঐ যে লুকিয়ে থাকা আর লুকিয়ে রাখার শিক্ষা আমাদের রপ্ত হয়ে গেছে!

আজ মানুষ জানছে যে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই, চুপ করে থাকার কিছু নেই। লুকিয়ে থাকতে থাকতে, চুপ করে থাকতে থাকতে অবস্থাটা এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আজ তাকে মুখরা হতেই হবে। আজ হোক কাল। তবে আজই শুরু হোক?

ব্রা’র স্ট্র্যাপ দেখা গেলে ‘তোর তাতে কী?’ বলার সময় এসেছে। যৌনতা নারীর পোশাকে না, পুরুষের চোখে আর মননে; একথা বলার সময় হয়েছে। নজর আর মনন শুদ্ধি অভিযানের সময় এসেছে, পোশাকের না। পিরিয়ডকে নারীর লজ্জা ভাবার সময় শেষ হয়েছে, জীবনের একটা স্বাভাবিক অংশ হিসেবে দেখার সময় হয়েছে। মাতৃত্বকে অসুস্থতা বলার নির্বোধ চর্চা থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। আর সময় হয়েছে নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার। সময় হয়েছে আরো অনেক কিছুর। খুব কঠিন কিছু না, শুধু দৃষ্টিভঙ্গিটুকু বদলাতে হবে।

চর্চাটা দিকে দিকে শুরু হয়েছে, অনেক বছর ধরেই চলছে। তবু আজ সচলায়তনে যারা বলছেন, তাঁরা অনেকেই প্রথমবারের মতো বলছেন। যে নারী আজ মুখ ফুটে বলছেন তার ছোটবেলার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা, তিনি হয়তো আর প্রতিকারের আশা করেন না; কিন্তু তাঁর সন্তান যেন একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে না যায়, তাঁর সন্তান যেন দুধে ভাতের পাশাপাশি নিরাপদেও থাকে, সেই পৃথিবীটা তৈরি করার ইচ্ছেটা তাঁর আছে। আর এজন্যই চুপ করে না থেকে, লুকিয়ে না রেখে বলার চর্চাটা আজ জরুরী। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা ‘চুপ করে থাকা, লুকিয়ে থাকা’র চর্চা থেকে বের হয়ে আগামী প্রজন্মকে সরব হতে শেখাটা জরুরী।

পাশাপাশি এতক্ষণ যে ‘আমাদের’ কথা বলে গেলাম, তা কি দোহাই?
না।
স্বীকারোক্তি। এই সমাজ আর শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের ভেতরে সেই ছোটবেলা থেকে যে ভুল জ্ঞান, চর্চা, অভ্যাস ইত্যাদি ঢুকিয়ে দিয়েছে; যে অসুস্থ সংস্কৃতি নারীকে হরিণ আর পুরুষকে বাঘ বানিয়ে দিয়েছে, আমাদেরকে নারীর বন্ধু না বানিয়ে শত্রু বানিয়ে দিয়েছে, বর্বর বানিয়ে দিয়েছে, সেই চর্চা থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। এই গ্লানির জীবন থেকে আমরা বের হয়ে আসতে না পারলে আমাদের সন্তানেরা এই পৃথিবীতে নিরাপদ থাকবে না। আমাদের সন্তানরা যেন এই অসুস্থ সংস্কৃতির ধারক না হয়, সেই চেষ্টা শুরু করতে হবে আমাদের প্রত্যেকের।
একইভাবে পুরুষ শিশুর ওপর যৌন নিগ্রহের ঘটনাও নেহায়েত কম না। সেখানে নারী কখনো কখনো বাঘ হয়ে ওঠে, পুরুষ হয়ে যায় হরিণ। এই সবকিছুর জন্য অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে ‘যৌন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান’ এর অভাবটাই মূলত দায়ী।

একসময় পৃথিবীর মানুষ জানতো পৃথিবীটাই সব; সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র সবই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে ঘুরে মরে। কিন্তু যখন জানা গেলো চরম সত্যটা, তখন অনেক কষ্টে আর প্রাণের বিনিময়েও শেষ পর্যন্ত সত্যটা প্রতিষ্ঠা করা গেছে পৃথিবীতে। তার জন্য পাল্টে ফেলতে হয়েছে যাবতীয় জ্ঞান, ইতিহাস, চর্চা, অভ্যাস, কেতাব সবকিছু।
নারী পুরুষের এই দ্বান্দ্বিক জীবনযাত্রা থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে পাল্টে ফেলতে হবে সকল ধ্যান ধারনা, প্রচলিত রীতি নীতি। এই চর্চা আর সংগ্রামে নারী মাথা উঁচু করে যোগ দিক, মাথা নিচু করে ক্ষমা চেয়ে পুরুষও যোগ দিক। নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার শুরু হোক হাতে হাত রেখে।

কিভাবে হতে পারে? নতুন যে শিশুটি পৃথিবীতে আসছে, যে অতিক্রম করছে কৈশোর, তাদের সবাইকে যৌনতা আর মানবিকতার সঠিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার ইত্যাদির অপেক্ষায় বসে না থেকে ঘর আর পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে সবার আগে। যৌনতার প্রাথমিক ধারণা আর নারী-পুরুষের শারীরিক পার্থক্যগুলোর প্রাথমিক শিক্ষাটুকু পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া গেলেই কৈশোরের ভয়াবহ কৌতুহলের স্পৃহাটুকু যৌনতার খোঁজে উঁকি দিয়ে না কাটিয়ে অন্য অনেক দরকারী জ্ঞান আহরণে সে কাজে লাগাতে পারবে।

লাখ লাখ বছর ধরে যে চর্চা আর অপব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা একদিনে নির্মূল হয়ে যাবে তা ভাবি না। হয়তো কয়েক প্রজন্ম লাগবে। এখনো মা তাঁর কন্যা সন্তানকে শিখিয়ে দেবেন পুরুষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল। আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো আমাদের কোন আচরণটা নারীর জন্য অবমাননাকর। কোন রসিকতাটা মজার হলেও, সবাই খুব তারিফ করলেও মেয়ে বন্ধু/কলিগের জন্য অপমানকর, তা বুঝতে চেষ্টা করবো। একদিনে হবে না, চেষ্টা করবো দ্রুত শিখে নিতে। আর শিক্ষাটা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়াতে। তবে এমন একদিনের স্বপ্ন আমরা দেখতে চাই যেদিন এই পৃথিবীর কোনো শিশু/নারীকেই আক্রমণ করবে না কোনো কদর্য হাত। নারী আর পুরুষ খুঁজে পাবে স্বাভাবিক সুস্থ আনন্দময় জীবন। সম্ভব, খুব অসম্ভব না। এখন থেকে মিলেমিশে ঘরে ঘরে এই চর্চা শুরু করলে অবশ্যই সম্ভব। শুরু হোক।

শেষ করি দু’টো ছোট্ট ঘটনা দিয়ে।
ক) পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে নারীর প্রতি যৌন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আরেক বৈশাখ উদযাপনের ডাক এসেছিলো কিছুদিন আগে। সেখানেই একজনের কণ্ঠে শুনেছিলাম একটি কথা, হয়তো দুষ্টুমি করেই বলছিলেন ‘আমরা নারী, আমরাও মারি’। চমকে উঠিনি, দারুণ ভালো লেগেছিলো।

খ) পুরনো বইয়ের দোকানে বই খোঁজা আমার অন্যতম একটা শখ। এই করতে করতে সেদিন অসামান্য দু’টো বই পেলাম। আবুল হাসানাৎ রচিত দুই খণ্ডের “যৌন বিজ্ঞান”। বাংলা ভাষায়, এই বাংলাদেশে প্রায় বারোশো পৃষ্ঠাব্যাপি বিশাল গবেষণাগ্রন্থ লিখিত এবং প্রকাশিত হয়েছিলো সেই ১৯৩৬ সালে! এই তথ্য আমার জানা ছিলো না। বই দু’টোর সূচীপত্র পড়েই চক্ষু চড়কগাছ। বাংলা ভাষায় যৌন বিষয়ে এতো সমৃদ্ধ গবেষণামূলক বই আর চোখে পড়েনি আগে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এই বই বাঙালির ঘরে ঘরে সমাদর লাভ করার আশা প্রকাশ করেছিলেন!

তবে তারচেয়ে ভালো লেগেছিলো বইটির যিনি মালিক তাঁর বিকশিত চিন্তার দেখা পেয়ে। বাংলাদেশের মফস্বল অঞ্চলের এক কলেজের জনৈক অধ্যাপক এই দু’টি বই ১৯৮১ সালে কিনেছিলেন তাঁর একমাত্র কন্যার জন্য। বইয়ের মলাট ওল্টাতেই লেখা ‘আমাদের একমাত্র মেয়ে ...........র জন্য সংগৃহীত।‘ পরের পৃষ্ঠা ওল্টালে দেখা যায় মেয়ের নামাঙ্কিত সিলমোহর। ভালো লাগে, ভীষণ ভালো লাগে। আমাদের ঘরে ঘরে এরকম সমৃদ্ধ বাবা মা থাকুক, সন্তানেরা নিরাপদে থাকবে।

...................................................

[বি: দ্র:

  • এটা একটি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার লেখা। এখনো মানুষ হয়ে উঠতে না পারার বেদনা নিয়ে বড় হওয়া এক অক্ষম পুরুষের নিজের বেড়ে ওঠা, চর্চা এবং উপলব্ধির মাপে চিন্তা করা কিছু কথা। অনেক কিছুর সঙ্গেই অনেকের দ্বিমত হওয়ার কথা, হওয়াটাই স্বাভাবিক, দ্বিমতটা জরুরীও। তর্ক হোক, তর্কটাও জরুরী। সবশেষে একটা উপায় বের করতে হবে আমাদেরকেই।
  • লেখায় শব্দচয়ন, বাক্যগঠনেও ভুল থাকতে পারে বিস্তর। বানানেও। শুধরে দিন।
  • কেউ যদি কোনো শব্দচয়নে কষ্ট পেয়ে থাকেন, অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একসময় ক্লান্তি ভর করেছিলো একটানা লিখতে লিখতে। অসচেতনতায় ভুল কিছু হয়ে থাকতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ব্যাপারটা অনিচ্ছাকৃত। শুধরে দিন।
  • আরো অনেক কিছু হয়তো বলার ছিলো, ক্লান্তি আর সময়াভাবেই গুছিয়ে উঠতে পারিনি। লেখার আগে যা যা ভেবে রেখেছিলাম, তার অনেক কিছুই লিখতে গিয়ে ভুলে গেছি। অনেক প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গ তোলাই হয়নি। একই অজুহাতে কিছু প্রসঙ্গ খুব দ্রুত আর সংক্ষেপে সারতে হয়েছে। জানি না ঠিকমতো বোঝাতে পারলাম কি না। অন্তত ভুল বোঝাবুঝি না হোক।
  • প্রচুর পরিমানে 'আমাদের' শব্দটার ব্যবহার করেছি। যা খুবই আপত্তিকর রকমের সাধারণীকরণ। এই 'আমাদের' বলতে হয়তো আমি আপনি অনেকেই, আবার হয়তো অনেকেই এই ‘আমাদের’ শব্দের গণ্ডিতে আঁটেন না।
  • লেখাটা পড়ে দুনিয়ার সব পুরুষ বাঘের মতো হিংস্র এরকম ধারণা করারও কোনো কারন নেই]

শিরোনাম কৃতজ্ঞতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উৎসর্গ: আকাশলীনা নিধি


মন্তব্য

guest_writer এর ছবি

অনেক সুন্দর আর বিস্তারিত ভাবেই লিখেছেন ভাই। সবশেষে কিছু যৌক্তিক পরামর্শ লেখাটাকে পূর্ণতা দান করেছে। আশা রাখি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মননশীল হবে, এই সমস্যার অবসান হবে। ভাল থাকুন।

আনন্দ পথিক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এতো বড় লেখা পড়তে পড়তে আমি নিজেই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন। অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আপনিও ভালো থাকবেন।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তাসনীম ভাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সত্যপীর এর ছবি

ভাল লাগল পড়ে।

..................................................................
#Banshibir.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার লেখা। চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রানা মেহের এর ছবি

অসাধারণ নজু ভাই।

লেখার বিষয়ে যাবার আগে লেখার দৈর্ঘ্যের জন্য একটা ধন্যবাদ দিয়ে দেই। ফেইসবুকের কল্যানে আমরা বড় লেখা লিখতে ভয় পাই, ভাবি পাঠক পড়বে কি না। ভাল লেখা মহাকাব্য হলেও পাঠক পড়বে আর না পড়লেও তার দায় লেখকের নয়। পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্য আমরা একটা ভাল লেখাকে কেটেকুটে বনসাই না বানাই।

১)

এই 'সিস্টেম' থেকে যে মেয়েরা বের হতে চায়, তাদেরকেও আমরা 'আমাদের সিস্টেমে' ফেলে দেই। আমাদের মতো করে সিগারেট খাও, আমাদের মতো করে গালি দাও, মেতে ওঠো অশ্লীল কৌতুকে, তাহলেই তুমি আমাদের মতো হতে পারবে, আধুনিক হতে পারবে। নইলে তুমি আনস্মার্ট।

আবার দেখবেন এরকম প্রথা ভাঙা মেয়েদের তার বন্ধুরাই বলবে, খারাপ মেয়ে।

২)

তেমনি জানা হয়ে ওঠেনা যৌনতাকেও। আমাদের কাছে দিনে দিনে নারী হয়ে ওঠে একটা এভারেস্ট। যার উপরে উঠে পতাকা গাড়লেই জয় করা হয়ে যায় আমাদের।

খুব সত্যি কথা।

পুরো লেখার অনেক অংশই কোট করার মতো। তাই আর করলাম না।
এরকম একটা সহস্র দিক কাভার করা লেখার দরকার ছিল।

অট - আবুল হাসানাত ১৯৩৬ সালে দুই খন্ডের একটা বই লিখেছেন যার নাম 'যৌন বিজ্ঞান'। আর ইউ কিডিং মি? কী অপূর্ব একটা ব্যাপার!

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

IMG_20150507_003253
[প্রথম খণ্ডের প্রচ্ছদ]

আমি নিজেও বইটা দেখে অবাক হয়েছিলাম। পড়া এখনো শুরু করতে পারিনি, কিন্তু উল্টে পাল্টে যা দেখলাম অসাধারণ। ঐ আমলে এরকম আধুনিক চিন্তার বই, এতো খেটেখুটে লেখা বইটা মুগ্ধ করেছে। দুর্ভাগ্য বইটা এখন আর পাওয়া যায় না।
আমার কাছে আছে বইটির ত্রয়োদশ সংস্করণ। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত। যথেস্ট আপডেট করা হয়েছিলো। লেখক নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছেন 'বস্তুত এই সংস্করণের প্রায় প্রতি প্যারা, প্রতি পৃষ্ঠা আমূল সংশোধিত এবং বিষয়বস্তু অসংখ্য নূতন তথ্য-যোজনায়, নূতন বিষয়-সন্নিবেশে পুর্বাপেক্ষা অনেকটা পরিবর্ধিত হইল। চিত্রসংখ্যাও বাড়ানো হইয়াছে।'

লেখক জানিয়েছিলেন বইটির তৃতীয় খণ্ড হবে। হয়তো কাজ শেষও হয়েছিলো। কারণ তৃতীয় খণ্ডের সূচীপত্রও যোগ করা আছে বইতে। কিন্তু এই খণ্ডটা আমার সংগ্রহে নেই।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সজীব ওসমান এর ছবি

বইটার পিডিএফ করে ফেলা গেলে ভাল হত। এখন যদি আর বইটার কোন সংস্করণ প্রকাশ এবং বিক্রি না হয়ে থাকে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক মুটা বই। দুই খণ্ড মিলিয়ে বারোশ পৃষ্ঠা। পিডিএফ করতে হলে মরতে হবে।
প্রকাশের ব্যবস্থা করাই বেশি সহজ হবে বোধকরি। দেখি কী করা যায়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শফিকুর রহমানের নানান প্রবন্ধে এই ভদ্রলোক ও তাঁর বইয়ের কথা বিভিন্ন প্রসঙ্গে পেয়েছি। অর্ধভোজন মাত্রই কষ্টকর। বইটা সত্বর প্রকাশের ব্যাবস্থা করুন। অশেষ ফায়দা হবে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চেষ্টা চলছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লেখা -গুড়- হয়েছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কনীনিকা এর ছবি

আমার দারুণ সৌভাগ্য যে এই বইটা পড়েই বলতে গেলে আমার যৌনতায় হাতেখড়ি হয়েছিল। বাবামায়ের বুকশেলফের পেছনের তাকে বইটা তুলে রাখা ছিল। তাঁরা কখনো সরাসরি আমাকে যৌনশিক্ষা দেননি, বইটিও হাতে তুলে দেননি। কিন্তু ছেলেমেয়েদের হাতের নাগালে বইটি রেখে তাঁরা পরোক্ষভাবে আমাদের যা উপকার করেছেন তা অস্বীকার করার নয়। ছোটবেলা থেকেই যৌনতা সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণার মুক্তি ঘটেছিল এই বইটির কল্যাণেই।

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি ভাগ্যবান, সময়মতোই এই বই পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কনীনিকা এর ছবি

লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। লেখার দৈর্ঘ্য রসাস্বাদনে কোন সমস্যাই করেনি। মগ্ন হয়ে পড়লাম। পুরুষদের জবানীতে এই ধরণের আলোচনা যত বেশি হবে ততই মঙ্গল।

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ব্লগ আর ফেইসবুক এক না। ফেইসবুকে এরকম লেখা সম্ভব না। তবে একটা সুবিধা হয়েছে, যা খুশি তাই লিখে ব্লগে প্রকাশ করার আর উপায় নেই। ব্লগে এখন খেটেখুটেই লিখতে হবে। এই লেখাটার কথাই বলি, গত এক সপ্তাহ ধরে লেখাটা নিয়ে চিন্তা করেছি। যখন যে ভাবনাগুলো এসেছে কাগজে নোট নিয়েছি। বিচ্ছিন্ন চিন্তাগুলোকে সাজিয়েছি একটা আলাদা কাগজে। তারপরও আজ গোটা একটা দিন লেগেছে এই লেখাটা শেষ করতে। বার বার পড়ে চেষ্টা করেছি ত্রুটিগুলো শোধরাতে। তবু কিছু রয়ে গেছে ধৈর্য্যের অভাবে, হয়তো একদিন ঠিক করবো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এক লহমা এর ছবি

নজু-ভাই, হয়ত আমার চোখে সহজেই জল এসে যায়, হয়ত আমি যথেষ্ট 'পুরুষ' নই। এ লেখা আমি চোখ না ভিজিয়ে শেষ করতে পারিনি। অন্ধকারে আমরা যারা পথ হেঁটে চলেছি, এ লেখা তাদের হাতের মশালগুলোর একটা অবশ্যই। নিভে যাবে? যাক না, কিছুটা তো পথ হেঁটে নেব এর আলোয়। অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।

আমার মন্তব্যটা বের হতে হতেই রাণা-দিদির মন্তব্যটা এসে গেছে। তখন খেয়াল করলাম, ঐ অট-টা ত আমারও বলার ছিল। তাই ওনারটাই তুলে দিলাম।
"অট - আবুল হাসানাৎ ১৯৩৬ সালে দুই খন্ডের একটা বই লিখেছেন যার নাম 'যৌন বিজ্ঞান'। আর ইউ কিডিং মি? কী অপূর্ব একটা ব্যাপার!"

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এক লহমা দাদা হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিটোল এর ছবি

দারুণ! চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নিটোল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীলকমলিনী এর ছবি

খুব ভাল লাগল লেখাটা। আমাদের সময়ে আমরা নিজেদের যৌনতা নিয়েই কিছু জানতাম না ছেলেদের টা প্রশ্নই আসে না। আমার বিয়ে হয়েছে একুশ বছর বয়েসে, তাও বর ছিল বিদেশে, আমি দেশে। বিয়ের এক বছর পর বরের সাথে দেখা হয়, ও আমার পরিচিত ছিল। এখন ভাবলে অবাক হই কোন রকম ধারনা না দিয়ে কি করে বাবা মা খালা চাচীরা আমাকে এতদূর পাঠিয়েছিলেন।
আমার স্বামীর তখন দুবছর ধরে বিদেশে আছে। আমার কোন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হইনি, উনি খুব সহানুভূতিশীল ছিলেন বলে। তবে আমি আসার পরদিন ছোট ইউনিভারসিটি শহরের ক্যাম্পাস বুক
স্টোর থেকে প্রথম যে বইটি উনি আমার জন্য কিনেন সেটা ছিল, Joy of sex।
সেটা আশি সালের ঘটনা। এর চার বছর পর আমি দেশে গিয়ে শ্বশুরবাড়ির বইএর আলমারি তে হাসনাত সাহেবের বই দুটি পাই, এবং পড়ে ফেলি, আসার সময় নিয়েও আসি। এই বইটির আসলেই কোন তুলনা নেই।
আমার বিয়ের পর ও সবসময় বলতো ছেলেদের আর মেয়েদের যৌনতা ভিন্ন। এটা আমার মেয়েদেরো বলতো যখন ওরা সদ্য যৌবনে পা দিচ্ছে। আমি খুব ছোট বেলা থেকেই ওদের ভালো ছোঁয়া, মন্দ ছোঁয়া নিয়ে বলেছি। বড় হবার সাথে সাথে শরীরের পরিবরতনের কথা বলেছি, এবং অল্প বয়েসে ছেলে বন্ধু হলে ভাল মন্দ কি তাও বলেছি। সব সময় ছেলেমেয়ে মিলে বন্ধু দের নিয়ে আড্ডার কথা বলেছি স্কুলে থাকতে। অল্প বয়েসে প্রেগন্যান্ট হলে কি কি ঝামেলায় পরতে পারে বলেছি। আর স্বাবলম্বী হওয়া জীবনের অন্যতম লক্ষ্য বলেছি। এখন ওরা বড় হয়ে গেছে, আমরা চারজন যে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আমি আশা করি না যে ওদের জীবনের সব কথাই আমাকে বলবে, সেটা কেউই করে না।
বিদেশে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব অত বেশী বাচ্চাদের কাছাকাছি থাকে না যে সারাক্ষন চিন্তা হবে কে আমার ছেলে মেয়েকে বাজে স্পর্শ করবে, দেশে খুব বেশি সাবধানে থাকা দরকার।
আর গৃহকরমীর ব্যাপারেও সচেতন থাকা দরকার। আমি দেশে গেলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে কেউ তেমন পাত্তা দেয় না। দেখা যায় দাওয়াতে সবাই যাচ্ছে, বাসায় থাকছে ছোট মেয়েটা আর বাসার কোন ছেলে বা বেড়াতে আসা কেউ। আমি থাকলে এমন হতে দেই না।মেয়ে টি কে নিয়ে যাই। আমাদের সবাই কে অনেক অনেক সচেতন হতে হবে, সচলে যারা তরুন বাবা মা তারা হয়তো অনেক সচেতন। আর এই সচেনতাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমেরিকায় কিন্ডারগার্টেন এই ভাল স্পর্শ আর খারাপ স্পর্শ নিয়ে কার্টুন দেখায়। এবং সেখানে খুব কাছে লোকরাই এটা করে দেখায়। মন্তব্য অনেক বড় হয়ে গেল। সরি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাবা মায়েদের মধ্যে সন্তানকে নিয়ে খুব টেনশন কাজ করে। সারাক্ষণ চোখে চোখে আগলে রাখতে চায়। কিন্তু এতে যে আদৌ লাভ হয় না কোনো এই জানাটা জরুরী। একজন মানুষকে সর্বক্ষণ আগলে রাখা যায় না কোনোভাবেই। এতে আসলে বাবা মা সন্তান সবারই বাড়তি ঝামেলা হয়।
সর্বক্ষণ আগলে রাখার চেষ্টা না করে বাবা মায়ের উচিত সন্তানকে সেই শিক্ষাটা দেওয়া, যাতে এরকম পরিস্থিতিগুলো থেকে সন্তান নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারে। আর যৌনতা বিষয়ক প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো ভেঙ্গে দেওয়া দরকার।
অনেক ধন্যবাদ দিদি, চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
আর মন্তব্য অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় স্যরি বলার তো কিছু নেই। মন্তব্য আরো বড় হলে তো আরো ভালো হতো হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীলকমলিনী এর ছবি

নজরুল, দেখ হাসনাত সাহেবের বইটি আবার প্রকাশের ব্যবস্থা করা যায় কিনা। বইটি পড়ার পর বুঝতে পারবে কি অসাধারণ। তোমরা দুজনেই পড়ো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি বইটি পড়েছেন জেনে ভালো লাগছে। আমি এখন মূলত অন্য দু'টো বিষয় নিয়ে প্রচুর পড়ছি, হয়তো অচিরেই সচলায়তনে সেগুলো নিয়ে লেখবো। এই কাজ দুটো শেষ হলে হাসানাত সাহেবের বই দু'টো পড়বো। তবে উল্টে পাল্টে আর চোখ বুলিয়ে যা দেখেছি তাতে সত্যি বলতে ভীষণ অবাক হয়েছি। এতো সমৃদ্ধ বই ঐ আমলে যৌন বিজ্ঞান নিয়ে লেখা হয়েছিলো, তা আমার ধারনার বাইরে ছিলো।

বইটির ত্রয়োদশ সংস্করণ ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে। প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানটি এখনো আছে। তাঁদের সঙ্গে দ্রুতই যোগাযোগের চেষ্টা করবো বইটির ভবিষ্যৎ জানতে। নয়তো লেখক বা তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবো অন্য কোনো প্রকাশনী থেকে পুন প্রকাশনার ব্যাপারে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

চরম উদাস এর ছবি

কি দারুণ একটা লেখা চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি

বিশ্বাস করেন, আমি আপনের লেখার জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। জানতাম, মাস্টারপিস কিছু আসবে। এক্সপেক্টেশান ছাড়ায়া গেছে। অসাধারণ। গুরু গুরু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাসুদ সজীব এর ছবি

একেবারে যাপিত জীবনের সাধারণ কথ্য ভাষায় লেখার কারণে লেখাটা সাধারনের চেয়ে একটু বেশি ভালোলেগেছে। অামরা যেভাবে বন্ধু বান্ধবের সাথে বড় হই, পরিবারে বড় হই সেটাই প্রকাশ পেয়েছে। চলুক

একটা চিন্তাশীল/গবেষনামূলক ব্লগ লেখা সহজ কাজ নয়, প্রচুর সময়, ধৈর্য্য আর সেই বিষয়ে পড়ালেখাও থাকতে হয়। বানান, বাক্যপ্রয়োগ, শব্দ চয়নেও যথেষ্ট সচেতন হতে হয়। এত পরিশ্রমের পর একটা লেখা দাঁড়ালে আর সেটি প্রকাশিত হলে, যদি পাঠকের প্রাণবন্ত অংশগ্রহন থাকে তাহলে লেখক আরো লেখার অনুপ্রেরণা পায়। কিন্তু পাঠকের অংশগ্রহন কম হলে সেই অনুপ্রেরণায় ভাটা পড়ে যায়। ব্লগের আলোচনায় কিংবা মতামতে এই অংশগ্রহণটা কমে গেছে ইদানিং। কারণ যাইহেক (ফেসবুক/ব্যস্ততা) এই দিকটা গুরুত্বের সাথে বিবেচন করা দরকার। সচল/হাচল সবার-ই ফিরে আসা উচিত এই ঘোরলাগা অন্ধকারের সময়টাতে, লেখালেখির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এই রুদ্ধদার-অন্ধকার দূর করা সম্ভব নয়।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আয়নামতি এর ছবি

উত্তম জাঝা!
-----
সবার কাছেই তার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা।
কিন্তু এক্ষেত্রে কেন জানি আমার একধরনের গর্ববোধ কাজ করে, যে আমার বাবা শ্রেষ্ঠতম।
আমার যাবতীয় কৌতুহল সে পিঁপড়ে বিষয়কই হোক কিংবা মানুষের শরীর বিষয়ক সবের প্রাথমিক জ্ঞান বাবার কাছ থেকে
পাওয়া। হয়ত কথাগুলো বড্ড অপ্রাসংঙ্গিক হয়ে গেলো, তবুও বললাম উৎসর্গে নিধির নামটা দেখে।
নিধি যখন বড় হয়ে এই লেখাটা পড়বে আমি নিশ্চিত, সে'ও আমার মত গর্ববোধ করবে তার বাবাকে নিয়ে।
আপনার লেখাটা আবার পড়বার আগ্রহ থাকলো। অসাধারণ একটা লেখা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা পড়ে ভেবেছিলাম চ্যালেঞ্জ জানাবো, বাজী ধরবো যে আমার বাবাই শ্রেষ্ঠতম। তার প্রমাণ দিতে ৮ বছর আগের একটা লেখা খুঁজে বের করলাম, পড়তে চাইনি তবু পড়ে ফেললাম। চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো। আমাদের সবার বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা...
ভালো থাকবেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তাপস শর্মা এর ছবি

এত সাবলীল এবং সরলভাবে লেখা যে টানা পড়ে শেষ করে আরেকটু আছে কিনা খুঁজছিলাম। ভাল্লাগছে, প্রত্যেকটা কথা ভীষণ ভালো লেগেছে দাদা...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এতো বড় একটা লেখা দিলাম, তবু আরো চান?!?
অনেক ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দারুণ, নজু ভাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কবি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনু-আল হক এর ছবি

কী চমৎকার একটা লেখা। অনেক কিছুই কৌট করার মতো। অন্তত একটা করি:

স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে কিছুটা জানলেও ‘নারী আর পুরুষ’ স্বত্ত্বা যে পরষ্পরকে চেনে জানে না? যৌনতার স্বাভাবিক জ্ঞান যে নেই। পুরুষ নারীর কাছে খোঁজে পর্নস্টারের পারদর্শিতা, কল্পনায় আঁকে সানী লিওনিকে। নিজের মাপটা তার জানা নেই। নারী কি খোঁজে? সেই খোঁজ পুরুষের অজানা থেকে যায়।

ষাটের দশকের পর থেকে আমাদের বাংলাদেশে ক্রমাগত রক্ষণশীল হয়ে পড়েছে বলে বলেছিলেন ড. নীলিমা ইব্রাহীম তাঁর ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইয়ের ভূমিকায়। আবুল হাসানাৎ-এর যৌনবিজ্ঞান বইয়ের প্রকাশকাল দেখেও সেই ধারণা আরো পোক্ত হয়। আমি নিজেও কখনো এই বই পড়ে দেখিনি। যৌনতার প্রাথমিক ধারণার উৎস ওই গুপ্ত মশাই আর গুপ্তছবিই।

১৯৭৫-পরবর্তী দীঘসময় রাজাকার নিয়ে কথা না-বলার কারণে রাজাকার মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছে, জনসাধারণের কাছে ইসলামের রক্ষাকর্তা হয়েছে। আবার শাহবাগ আন্দোলনের ফল হিসাবে এদের বিরুদ্ধে অন্তত সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এইজন্যই কথা বলতে হবে, সব পর্যায়ে। যৌনতা এবং লিঙ্গধারণা নিয়ে দশকব্যাপী একটা ‘হোক কলরব’ করতে পারলে সামাজিকভাবে এটার ‘ডি-সেন্সিটাইজেশন’* সম্ভব হতো, এবং যৌনতা-সম্পর্কিত আলোচনা/যোগাযোগের বাধা দূর হতো।

(দুঃখিত, এটার কোনো সঠিক বাংলা জানি না।)

----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন

এক লহমা এর ছবি

"যৌনতা এবং লিঙ্গধারণা নিয়ে দশকব্যাপী একটা ‘হোক কলরব’ করতে পারলে সামাজিকভাবে এটার ‘ডি-সেন্সিটাইজেশন’ সম্ভব হতো, এবং যৌনতা-সম্পর্কিত আলোচনা/যোগাযোগের বাধা দূর হতো।" - চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যৌনতা নিয়ে ভয়, অহেতুক কৌতুহল ইত্যাদি দূর করতে পারলে মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র সবার অর্ধেক সমস্যা কমে যাবে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানিম এহসান এর ছবি

দারুণ লাগলো!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ তানিম ভাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বন্দনা এর ছবি

লেখা পড়তে পড়তে হাঁপায়ে গেলাম, তবে বোম ফাটানোর মত একটা লেখা নজু ভাই।কাল্কেই এক বড়ভাই বলছিলেন, তোমরা মেয়েরা যদি জানতে আশেপাশের বেশ ভদ্র দেখতে ছেলেমানুষগুলা তোমাদের নিয়ে সারাক্ষন কেমন চিন্তা করে তোমরা হয়তো বিশ্বাস করতে পারতানা, আর এমন ছেলেদের সংখ্যা নাকি ৯৯%।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাসি
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। অবস্থা বদলে যাবে, বদলাতে হবে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিক্ষার বিকল্প নাই। সেটা স্কুলে যেমন জরুরী তার আগে বাসায়/পরিবারে জরুরী। তারও আগে বুড়ো ধাড়িগুলোর শিক্ষা জরুরী। কারণ, সরকার শিক্ষা দিতে চাইলেও বুড়ো ধাড়িরা এর বিরুদ্ধে যেতে পারে। উদাহরণ দেখুন

আমার কাছে অবাক লাগে এই অসম্পূর্ণ, বিকৃত শিক্ষা নিয়ে আমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী চলছি কী করে! আমাদের মূর্খতার বড় দৃষ্টান্ত আমরা আবার এসব নিয়ে গর্বও করি!!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

সরকার শিক্ষা দিতে চাইলেও বুড়ো ধাড়িরা এর বিরুদ্ধে যেতে পারে বৈকি (আপনার উদাহরণ দেখলাম), কিন্তু বিরুদ্ধে না গেলেও খুব একটা লাভ নেই। অন্তত এই উপমহাদেশে তো বটেই। এবার সেই উদাহরণটা দেখুন -

****************************************

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শিক্ষায় আমাদের অনেক অরুচি, উচিৎ শিক্ষা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা মূর্খই থাকতে চাই। এ এক কঠিন প্রপঞ্চ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমরা যে অসম্পূর্ণ আর বিকৃত শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছি এবং তার ফল এখনো ভোগ করছি, এই বোধটা সবার আগে জরুরী। অযথা অহংকার করে মহামানব সাজার কিছু নাই। গর্ব করার তো কিছু নাই-ই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যেহেতু এই শিক্ষায় পুরুষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে, তাই এইটা কেউ ছাড়তে চাইবে না।
কিন্তু এই অবস্থাটা বদলাতে হবে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি মানব এর ছবি

ঘুমে আমার যখন প্রথম বীর্যমু্ক্তি হয়, উদ্বিগ্ন হয়ে বাসায় জানিয়েছিলাম। কিছুদিন পর পরিচিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার আমাকে বললেন, তোমার ‘যৌবন’ এসেছে। আমি তখন ‘যৌবন’ কি বস্তু সেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। বাসায় কেউ কথাটা বলতে পারেনি, তাই একজন ডাক্তারকে দিয়ে বলিয়েছে। কিন্তু ডাক্তারও খোলাখুলি বলতে পারে নি সংকোচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যৌনতা নিয়ে সবার এতো সংকোচ কেন বুঝি না

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এভাবে ভাবতে চাওয়া আর শেখা, শেখানোটা খুব জরুরি। চমৎকার লেখা।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

কি অসাধারণ একটা লেখা নজরুল ভাই। আক্রমণ না করেও ব্যক্তি বা গোষ্ঠির দুর্বলতা নিয়ে লেখা যেতে পারে, তার চমত্কার দৃষ্টান্ত এই মনোমুগ্ধকর রচনা। গুরু গুরু

অন্ধকার দূর করতে সিনিয়র সচলেরা সমস্ত উদ্যম নিয়ে লেখালেখিতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন এই আশা করছি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আরাফাত

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লেখাটা দারুণ হয়েছে! যদিও বিন্দুতে সিন্ধু ধারণের প্রচেষ্টা, তবুও বলবো, দারুণ!
'কাম ও যৌনতা বিষয়ক' একটা লেখা প্রায় তৈরি করে ফেলেছিলাম, সহসাই আমার মাতৃবিয়োগ হওয়ায় একটু থমকে গিয়েছি। আশা করি শীঘ্রই শুরু করতে পারবো। লেখায় একটু ঝাল-মশলা দিয়েন। হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরো ঝাল মশলা? পাবলিক পিটাবে তো!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রণয় ভুঁইয়া এর ছবি

"যৌনতা নারীর পোশাকে না, চোখে আর মননে"
- এই বিষয়টা আমাদের সমাজের পুরুষদের বুঝতে অনেক দেরী হবে। সবচে কষ্টকর ও হতাশাজনক বিষয় হল এটা বোঝানো যায় না। এরা বোঝার জন্য প্রস্তুত-ই না। তবে দিন পাল্টাবে.......

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হ্যাঁ, দিন নিশ্চয়ই পাল্টাবে। অনেক ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

এইসব 'ভাবনা' এতো চমৎকারভাবে গুছিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুমি আপা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর জলছবি এর ছবি

আগে একবার পড়েছিলাম, এখন আবার পড়লাম। আমার মনে হচ্ছে আশেপাশের সব মানুষগুলোকে যদি ধরে ধরে পড়াতে পারতাম লেখাটা। হয়তো পড়েই কেউ বদলে যাবে না কিন্তু তবুও পড়ানো টা জরুরী ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়তে পড়তে ভাবতে ভাবতে নিশ্চয়ই একসময় বদলাবে। শুধু একবার ফিরে তাকাতে হবে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এ মুহূর্তের আফসোস কী - এই ব্লগ পোস্টটা বাংলাদেশের অর্ধেক পুরুষও পড়ে দেখবে না। তাদের আবার অর্ধেকই হয়তো ফেসবুকে মেয়েদের সম্পর্কে নোংরা পেইজ খুঁজে দেখবে; মেসেজে চ্যাটে ভাইবারে রাত তিনটায় বৌ-এর পাশে শুয়েই বা অন্য কোথাও কোন মেয়ের সাথে এমনিতেই ফালতু কথা বলবে বা বলতে চাইবে; আর ঐ আপনি যা যা লিখেছেন তেমন সবই করবে।

লেখাটা ফেসবুকে শেয়ার করলে কোন্‌ অংশটুকু হাইলাইট করে করবো বুঝতে পারছি না। সবটুকু কীভাবে কাওকে ধরে পড়ানো যায়? আর আমার লিস্টের ছেলেরা, আমার বন্ধুরা তো এমন ছেলেদের কাতারে পড়ে না, পড়েনি, তা হলে তো তারা আমার বন্ধু হয়ে থাকতে পারতো না।

কিন্তু কথাগুলান যে কী সত্য!
এই ঘটনাগুলা থিতায়ে গেলে আবার যেই কে সেই হয়ে যাবে, সবাই ভুলে যাবে গত বৈশাখেই কী হয়েছিলো। মেয়েরা ভীতুই হয়ে থাকবে। ছেলেরা 'পুরুষ'ই হতে থাকবে। বাবা-মা ছেলে সন্তানকে শেখাবে না যে 'মেয়ে' না 'মানুষ' হিসেবে সবার সাথে মিশতে শেখ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই বৈশাখ কখনো শেষ হয় না। নারী নিপীড়ন সবচেয়ে নিয়মিত ঘটনা। তাই থিতিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নজমুল আলবাব এর ছবি

মুগ্ধ হয়ে পড়লাম

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

দারুণ লেখা!

বইটা আবার প্রকাশ করা যায় কিনা দেখবেন প্লিজ!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ।
বইটার প্রকাশক আহমদ পাবলিশিং হাউজ জানালো এই বই তারা আর বের করবে না, লেখক এখন আর জীবিত নেই। তবে বইটি পরে অন্য এক প্রকাশক নাকি বের করেছিলেন, কিন্তু তারা কারা সেটা তিনি জানাতে পারলেন না। দেখি আরেকটু খোঁজ নিয়ে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়োপযোগী একটি ডিটেইল লেখা।খুবই ভালো লেখা।
-শামীম রুনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।