যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা দরকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: সোম, ২২/০২/২০১০ - ৫:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কবে থেকে অংশগ্রহন করেছিল? আমরা জানি ভারত পাকিস্তানের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে জড়ায় ডিসেম্বরের ৩ তারিখে। কিন্তু ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের ৩ তারিখের আগে কি ভারতীয় সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ সেক্টরে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেনি? আমরা জানি এর আগে ভারত পাকিস্তানের সাথে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ করেনি বটে কিন্তু অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধ চলেছে আরো অনেক আগে থেকেই। ভারত বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং দিচ্ছিল, অস্ত্র সরবরাহ করছিল, রসদ যোগাচ্ছিল এমনকি অঘোষিতভাবে অপারেশনেও অংশ নিচ্ছিল। তাই শেষ পর্যায়ে এসে ভারতের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধে জড়ানো ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।

ভারতের উপর এক কোটির অধিক বাংলাদেশী শরণার্থীর চাপ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে তো বটেই গোটা ভারতের উপরই অর্থনীতিসহ অন্য বিষয়ে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী মূলতঃ ভারতীয় ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের বিরূদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছিল। যুদ্ধের শুরু থেকে ভারতের ভূমি ব্যবহার করে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরূদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাপক সামরিক তৎপরতা যুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহন অনিবার্য করে তুলেছিল।

অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী গঠিত হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধের শুরু থেকেই। এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দেয়। জুলাই ১১-১৭তে অনুষ্ঠিত সেক্টর কমান্ডারদের যৌথ সভা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে সংগঠিত রূপ দেয়। ২১শে সেপ্টেম্বর বিমান বাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা আর ৯ই নভেম্বর নৌবাহিনীর প্রথম ফ্লিট গঠন পাকিস্তানের বিরূদ্ধে জলে-স্থলে-আকাশে সার্বিক যুদ্ধের সূচনা করে। সম্ভবতঃ নভেম্বরের ২১ তারিখে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কমান্ডের আওতায় আনা হয়। এই কমান্ড শুধুমাত্র যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ছিল, কারণ বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শুরু থেকেই মুজিবনগর সরকারের অধীন ছিল এবং এই ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই।

ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং মূলতঃ ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহে সীমাবদ্ধ ছিল। অস্ত্র ও রসদ সরবরাহও ছিল নূন্যতম পর্যায়ে। এমনই অবস্থায় সরাসরি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সমান্তরালে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। মুক্তিবাহিনী যেখানে ছোট ছোট অস্থায়ী ক্যাম্পে অল্পদিনের ট্রেনিং পেত মুজিব বাহিনী সেখানে দেরাদুনের মিলিটারী একাডেমীতে পূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের প্রাপ্ত অস্ত্র ও রসদও ছিল অত্যাধুনিক ও উন্নত মানের।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে মুজিব বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য কী ছিল? মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে। সুতরাং ভারতের সাপেক্ষে এই বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল, তাই তাদের দ্বারা ভারতের বিশেষতঃ ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব ছিলনা। বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ করতে গেলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ব্যবহার ভারতের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাদের সাপেক্ষে বাংলাদেশে এমন একটি বাহিনী দরকার ছিল যারা পাকিস্তানের বিরূদ্ধে লড়বে ঠিকই কিন্তু ভারতের ইন্টারেস্টের বিপক্ষে যাবেনা। দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব বা কোন কার্যক্রম ভারতীয় স্বার্থের বিপক্ষে গেলে তা মিনিমাইজ করার জন্য এমনটা দরকার ছিল।

মুক্তিবাহিনীর একটা বড় অংশ ছিল ন্যাপ (ভাসানী/মোজাফ্‌ফর) আর কমিউনিস্ট পার্টি বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো থেকে আগত। স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসশাসিত তখনকার ভারত সরকারের কাছে তাঁরা গুডবুকে ছিলেন না। পশ্চিমবঙ্গে সেসময়ে চলমান বাম চরমপন্থীদের তুমুল আন্দোলন ভারত সরকারকে এই চিন্তায়ও ফেলে দেয় যে মুক্তিবাহিনীর বাম ধারার সদস্যরা ভারতের বামপন্থীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গড়তে পারে। তাতে ভারতকে দেশে ও দেশের বাইরে বামদের বিরূদ্ধে লড়তে হবে। মুক্তিবাহিনী তথা বাংলাদেশ বাহিনীর মধ্যে বামদের সম্ভাব্য প্রভাব কমানো বা বাড়ার সুযোগ না দেয়ার জন্যই মুজিব বাহিনীর মত বাহিনী দরকার ছিল।

ফলে মুজিব বাহিনী মাঠে নামলে শুধু পাকিস্তানীদের বিরূদ্ধেই নয় মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বের বাম অংশের সাথে, মুক্তিযোদ্ধাদের বাম অংশের সাথে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের অংশের সাথে তাদের যুদ্ধের কথাও জানা যায়। তাদের দ্বারা তাজউদ্দীন আহমদকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টার কথাও জানা যায়। মোটের উপর মুজিব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরের একটা বাহিনী ছিল যাদের মোটিভ আর মুক্তিযোদ্ধাদের মোটিভ এক ছিলনা। বস্ততঃ মোটিভ এক হলে মুজিব বাহিনী গঠনের প্রয়োজন পড়েনা।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর এই পূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত বাহিনী নিজেদেরকে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সাথে একীভূত হবার দাবী জানায়নি। বরং তারা অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিশে গিয়েছিল। তাহলে ভারত যে এত রিসোর্স ব্যবহার করে একটা বাহিনী তৈরি করল তার প্রয়োজনীয়তা কি যুদ্ধ শেষ হবার সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেল? অবশ্যই না।

প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটা দিকে লক্ষ্য করা যাক। আফগানিস্তানে সোভিয়েত অনুপ্রবেশের বিরূদ্ধে লড়াই করা প্রায় আঠারোটি মুজাহিদ গ্রুপকে পাকিস্তান আর ইরান আশ্রয় দিয়েছিল। এই দেশ দুটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্ররা মুজাহিদদের সমর্থণ ও রসদ যুগিয়েছে। মুজাহিদদের বিজয় নিশ্চিত হবার কাছাকাছি সময়ে তারা পাকিস্তানকে ভিত্তি করে তালিবানদের গড়ে তোলে। তালিবানরা মুজাহিদদের তুলনায় অধিক সুবিধাপ্রাপ্ত, অধিক কট্টর ও ভয়ঙ্কর। মুজাহিদীন সরকারের দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খলার সুযোগে মুজাহিদীন সরকারকে তারা শুধু উৎখাতই করেনা, মুজাহিদীনদের কচুকাটাও শুরু করে। আফগানিস্তানে নিজেদের স্বার্থকে আরো মজবুত উপায়ে রক্ষা করার ও নিশ্চিত করার জন্যই তালিবানদের পেট্রনরা তালিবানদের তৈরি করেছিল। ষাট ও সত্তরের দশকে তৃতীয় বিশ্বের সামরিক শাসনপ্রবন দেশগুলোতেও ঐসব পেট্রনরা এভাবে একাধিক জেনারেলের পিছনে সাহায্য ও সমর্থণের হাত রাখত। একই ফ্রেমে ফেল্‌লে মুজিব বাহিনীর ব্যাপারটাও আমাদের কাছে কিছুটা স্পষ্ট হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, তার সহযোগী সংগঠনগুলো ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিশে যাওয়া মুজিব বাহিনীর কার্যকলাপ আজ এতগুলো বছর পর কিছু কিছু বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাভাবিক আকাঙ্খা থাকে সর্বদল সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকারের (মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের বাদ দিয়ে)। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা, পরিকল্পনাহীনতা, ব্যক্তিবিশেষের ক্ষমতার লোভের জন্য ১৬ই ডিসেম্বরের পর জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারেনি। ফলে আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের সহযোগী সংগঠনদের থেকে একা করে ফেলা সম্ভব হয়। এতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের বিপর্যস্ত জনতাকে তাদের অপ্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দোষারোপের জন্য ক্ষেপিয়ে তোলাও সম্ভব হয়।

স্বাধীনতাপূর্ব আওয়ামী লীগ কোন বামপন্থী দল ছিলনা, আজকের আওয়ামী লীগও কোন বামপন্থী দল নয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী নেতৃত্ব বাম দিকের রাস্তা ধরার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বাম দিকে যাত্রা ধীরে ধীরে ডানপন্থী কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারতের স্বার্থের বাইরে যেন না যায় বা পশ্চিমবঙ্গের বাম চরমপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয় বা বাংলাদেশ যেন একটা কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত না হয় সেদিকে ভারতের নজর ছিল। ভারতের নজর থাকার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয় যখন মুজিব বাহিনী ফেরতদের একাংশ জাসদ গঠন করে। ন্যাপ বা কমিউনিস্ট পার্টি অসমর্থ হওয়ায় দেশে তখন একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। জাসদ সেই সুযোগটি নিতে সক্ষম হয় কিন্তু গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা নেবার কোন অভিপ্রায় তাদের ছিলনা। তাছাড়া সেসময়ে বিশ্বব্যাপী প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলন যে পরিমাণ বেগবান হয়েছিল তাতে তরুণরা বামধারার প্রতি আকৃষ্ট হয়। জাসদ এই সুযোগটিও গ্রহন করে, তবে বাম হঠকারী ধারায়। এতে দেশ ও দেশের মানুষের সাথে দীর্ঘমেয়াদে বামধারার রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এভাবে জাসদ নামক “বাম প্রতিষেধক টীকা” দিয়ে বাংলাদেশে কমিউনিজমের উত্থান ঠেকানো হয়। কংগ্রেস সরকারের লক্ষ্যও ছিল তাই।

মুজিব বাহিনীর যে অংশ আওয়ামী লীগের সাথে ছিল তাদের ভূমিকাও উগ্র ছিল। বস্ততঃ বঙ্গবন্ধু সরকারকে যে যে বিষয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তার বেশিরভাগ এই অংশের অবদান। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ পরিকল্পিতভাবে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাবার জন্য জনগণ যে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিল তা নষ্ট হয়ে যায়। এই অংশের দুর্নীতি স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের ভালো অংশের অর্জনকেও কালিমালিপ্ত করে। তাছাড়া সেসময়ে আরো অনেকে ছিলেন যারা বঙ্গবন্ধু সরকারকে নানা কেরামতি পরামর্শ দিতেন (যেমন মুদি দোকান পর্যন্ত জাতীয়করণ করে ফেলা)। আজ সময়ের বিচারে এই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়েছে যে, সেদিনের বাম অতিবিপ্লবীরা, সরকারের ভেতরে থাকা উগ্রপন্থীরা বা কেরামতী উপদেষ্টারা সবাই একই বা একই ধরণের ভাগাড়ে পৌঁছেছেন। সেসময়ে এরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বঙ্গবন্ধু সরকারকে ডুবিয়েছেন, দেশকে ডুবিয়েছেন।

আমি “ইনকিলাবী-সংগ্রামী”দের মত এ’কথা বলছিনা যে ভারত পাকিস্তানকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছিল তাই ১৯৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিল, অথবা বাংলাদেশকে দুর্বল ও পরনির্ভর করার জন্যই ভারত মুজিব বাহিনী গঠন করেছিল। বরং আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের মৃত্যু তার জন্মপ্রক্রিয়াতেই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২৪ বছরের অধিককালের অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য, শোষন ও নিপীড়ন তাকে একটু একটু করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। খাঁড়ার শেষ কোপটা মেরেছিল খোদ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ২৫শে মার্চে। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী যখন সরকারেরই অংশ পুলিশ (রাজারবাগে) ও ইপিআরের (পিলখানায়) উপর হত্যাযজ্ঞ চালায় তখন সেই রাষ্ট্র আর টিকে আছে বলা যায় না, তার নৈতিক ভিত্তিটাই ধ্বংস হয়ে যায়। আর দক্ষিণ এশিয়ায় কমিউনিজমের উত্থান ঠেকানোর জন্য কমিউনিজমবিরোধী দুনিয়ার যে পরিকল্পনা ছিল ভারতের কংগ্রেস সরকার সেটাতে সহযোগিতা করেছে মাত্র। কংগ্রেসের নিজের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য এটা জরুরী ছিল, ভারতের কানের পাশে একটা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র গঠিত হবার সম্ভাবনাকে নির্মূল করার জন্য এটা জরুরী ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ যদি নয় মাস না হয়ে নয় বছর ধরে চলত তাহলে হয়তো এক পর্যায়ে মুজিব বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত হত। তাতেও পাকিস্তানীদের জেতার বা ভারতের বাংলাদেশ দখল করার মত কোন পরিস্থিতি তৈরি হতনা। রসদের অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ থেকে বঞ্চিত, হত মনোবল পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আরো দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করার চেষ্টা করলে তাদের আরো শোচনীয় পরাজয়ই ঘটত। আর ভারত বাংলাদেশকে দখল করার মানসিকতা রাখলে মুক্তিযোদ্ধাদের বা মুজিবনগর সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করত না বা ১৯৭২ সালে ভারতীয় বাহিনীও তাদের দেশে চলে যেত না।

মুজিব বাহিনীকে নিয়ে এই বিশ্লেষণ তাদের কার্যক্রম আর পরবর্তী ইতিহাসের উপর অনুমিত। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলা দরকার যাতে আমাদের জানা, আমাদের ধারণা বা আমাদের বিশ্লেষণে ভুল থেকে না যায়। মুজিব বাহিনীর ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো বলতে পারতেন খোদ মুজিব বাহিনীর নেতারা। কিন্তু ইতিহাসের এই অংশের ব্যাপারে তারা বরাবর হয় নিশ্চুপ থেকেছেন অথবা নূন্যতম বলেছেন। ফলে তাদের নিয়ে সন্দেহগুলো দানা বাঁধতে পেরেছে। পরবর্তী ৩৯ বছরে তাদের নানা কার্যকলাপ সেই সন্দেহগুলোকে আরো দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে।

মুজিব বাহিনীর ইতিহাস যেহেতু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ তাই এটা নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে, আলোচনা করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কোন অস্পষ্টতা, কোন সংশয়, কোন সন্দেহ বা কোন বিতর্ক রাখার অবকাশ নেই।


মন্তব্য

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

প্রিয়তে রাখলাম গুরু গুরু
বস, ক্যাটাগরিতে "মুজিববাহিনী" যুক্ত করেন যেন কেউ মুজিববাহিনী নিয়ে গুগল সার্চ দিলে এই লেখাটি পায় ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ক্যাটেগরীতে "মুজিব বাহিনী" যোগ করে দিলাম। সময় করে আবার পড়ে বিস্তারিত আলোচনা করুন। আমাদের আলোচনা থেকেই দরকারী তথ্যগুলো বের হয়ে আসবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শুভাশীষ দাশের লেখা "ছফাগিরি। কিস্তি আট।"-এর মন্তব্যে মুজিব বাহিনী নিয়ে লেখার জন্য আমি প্রতিশ্রুত ছিলাম। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ঐ পোস্টের মন্তব্যে না দিয়ে এটি আলাদা পোস্ট হিসাবে দিলাম। তাছাড়া বিষয়টি আহমদ ছফার উপর আলোচনা থেকে একটু বেশি দূরে বলে মন্তব্যে দিলে আলোচনা শুভাশীষ দাশের পোস্টের মূল বিষয়ের বাইরে চলে যেত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অপেক্ষা করছিলাম। ধন্যবাদ।

দুর্দান্ত এর ছবি

আমিও প্রীয়তে নিলাম। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করি, কি মমতা নিয়ে আপনি বিশ্লেষনের ভারসাম্য ঠিক রাখেন। এমন একটি বিষয়কে পক্ষপাতিত্বের তকমা পরানো যায়, কিন্তু আপনি যেভাবে বলছেন, তাতে পক্ষপাতিত্ব দেখিনা। যাদের বাজার হয়ে বসে আছি, যাদের মত ভাবতে বসেছি, তারাও যে নিঃস্বার্থ নয়, এটা মেনে নেয়ার জন্য আরো জানার প্রয়োজন। আরো ভাবুন ও আপনার ভাবনাগুলো আমাদের বলুন।
ভারত সরকারের মিত্রবাহিনী অধ্যাদেশ ৩ ডিসেম্বর হলেও, ভারত যুদ্ধে নামে ১৯৭১ এর ১৫ মে তে - অপারেশান জ্যাকপট (নৌ-কমান্ডোদের অপ' জ্যাকপট নয়) এর মাধ্যমে। লেজে জ্যাকবের 'সারেন্ডার এট ঢাকা - বার্থ অফ এ নেশান' এ ১৫ মে এর পর থেকে বি এস এফ ও ভারতীয় 'বিশেষ বাহিনী' কর্তৃক বাংলাদেশ সীমানার ভেতরে এসে রেকি, অপারেশান ও অন্তত দুটি সেক্টর (ভারতীয় সেক্টর) থেকে অবিরাম গোলাবর্ষনের কথা পড়েছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

পান্ডবদা, অতি গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে সাবলীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ লেখাটি দেবার জন্য ধন্যবাদ।
একটা অনুরোধ; অনেকের কাছেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সরকারের ঔদাসিন্য এবং দায়ীত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য শুনতে পাই। এই বিষয়টা নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা সেই সব বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস রাখি।

---- মনজুর এলাহী ----

হিমু এর ছবি

সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কোনো দেশ সেনাসমাবেশ করতে পারে না। সীমান্ত থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে সেনাসমাবেশের অর্থ প্রতিবেশীকে অস্ত্র হাতে তৈরি হবার উসকানি। সীমান্তে অস্ত্রধারণের ক্ষমতা কেবল পুলিশ আর সীমান্তরক্ষীর। এ কারণে পৃথিবীর সব দেশে শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে সেনাসমাবেশ সীমান্ত থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যখনই সীমান্তে অস্ত্র হাতে উপস্থিত হয়েছে, ভারতীয় সেনারা সীমান্তের ওপাশ থেকে সশস্ত্র প্রত্যুত্তর দিয়েছে। কামালপুর অপারেশনে ভারতীয় আর্টিলারি বড় রেঞ্জের কামান থেকে গোলাবর্ষণ করেছে কারণ কামালপুর এলাকায় পাকিস্তানী সেনাসমাবেশ এই নিরাপদ দূরত্বের নীতিকে লঙ্ঘন করেছিলো। মায়ানমার সীমান্তে নাসাকার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করায় গতবছর বাংলাদেশ-মায়ানমার একটা সম্ভাব্য যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে পড়েছিলো, যা কূটনৈতিক ফ্রন্টে প্রশমিত হয়।

মুজিব বাহিনী তৈরির ব্যাপারে মেজর [অব] রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের "লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে" বইটিতে একজন মুক্তিফৌজ কমান্ডারের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। তিনি জানিয়েছেন, প্রচুর তরুণ-যুবা ট্রেনিং ক্যাম্পে উপস্থিত হতো, যাদের একটি বড় অংশ উদ্বৃত্ত রয়ে যেতো প্রশিক্ষণ অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কারণে। তাদের দুইবেলা খাবার দেয়াও দুঃসাধ্য ছিলো তখন। ক্যাম্পের রাজনৈতিক স্ক্রিনাররা [অধিকাংশ নিকটবর্তী অঞ্ছলের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা] ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক যুবাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিলেন। হঠাৎ করেই ক্যাম্প থেকে এই উদ্বৃত্ত যুবারা অদৃশ্য হতে শুরু করে। এ ব্যাপারে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ভারতীয় সেনাধ্যক্ষদের প্রশ্ন করে মেজর রফিক ঠাণ্ডা তিরস্কারের শিকার হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে মুজিব বাহিনী [ভারত যার নাম দিয়েছিলো বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা বিএলএফ] যখন দেশের অভ্যন্তরে অপারেশনে আসে, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেন, তাদের আগ্নেয়াস্ত্র অত্যন্ত আধুনিক এবং সাপ্লাই বিপুল। মুজিব বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিফৌজের সাথে কোনরকম যোগাযোগ না করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতো এবং নিজেদের অপারেশন সমাধা করতে গিয়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে পণ্ড করে আসতো। গেরিলারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেইজ ও গাইড ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন, মুজিব বাহিনীর অপারেশনের প্রতিক্রিয়ায় পাক বাহিনী ঐ অঞ্চলে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করতো, বেইজ ও গাইড নষ্ট হতো, গেরিলারা পরবর্তী দীর্ঘ সময় আর সেখানে অপারেট করতে পারতেন না। বিরক্ত হয়ে হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগ করেন মেজর রফিক [তাঁর ১ নং সেক্টরেই মুজিব বাহিনীর তৎপরতা বেশি ছিলো] , এবং অবশেষে এই রফা হয়, এরা কোথাও অপারেশনে যাওয়ার আগে সেই সেক্টরের কমান্ডারের সাথে গোপন আলোচনা করে বিস্তারিত জানাবে।

মূলধারা '৭১ এ মঈদুল হাসান তরফদার লিখেছিলেন, একদিন এক যুবক তাজউদ্দীনের অফিসে এসে তাঁর কাছে একটি রিভলভার হস্তান্তর করে এবং গ্রেফতার করার অনুরোধ জানায়। তাজউদ্দীন তখন কাপড় ধুচ্ছিলেন [তাঁর অফিস কক্ষের পাশেই তাঁর শয়নকক্ষ ছিলো]। তিনি সেই যুবককে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করেন। যুবকটি জানায়, মুজিব বাহিনী শেখ মণির সিদ্ধান্তে তাজউদ্দীনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। এ কাজে ভলান্টিয়ার বাছাইয়ের সময় যুবকটি আগ্রহ প্রকাশ করে, এবং তাকে রিভলভার দিয়ে পাঠানো হয় এ কাজে। যুবকটি মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীনের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত ছিলো বলে সে তাঁর প্রাণরক্ষার্থেই অন্য কারো পরিবর্তে নিজে এ কাজে এসে ধরা দেয়। তাজউদ্দীন সেই যুবককে গ্রেফতার না করে ফেরত পাঠিয়ে দেন।

মুজিব বাহিনী এবং এর নেতাদের নিয়ে আসলেই প্রচুর আলাপ হওয়া প্রয়োজন। শেখ মণি নামের এই টোটাল ফালতু লোকটাকে নিয়ে আরো বেশি। এই লোক মুজিবের অনুপস্থিতিতে তাঁকে প্রতিস্থাপিত করার মতো ছাগলামি বুদ্ধি নিয়ে মাঠে নেমেছিলো। "মুক্তিযুদ্ধে অ্যাসহোলরা" নামে কোনো বই লেখা হলে সেটার একটা বড় চ্যাপ্টার মণিকে নিয়ে লেখা সম্ভব।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

দুর্দান্ত এর ছবি

"মুক্তিযুদ্ধে অ্যাসহোলরা" নামে কোনো বই লেখা হলে সেটার একটা বড় চ্যাপ্টার মণিকে নিয়ে লেখা সম্ভব।

শেখ মনি যুদ্ধের পরেও বহুত মজেজা দেখিয়েছে। তাকে দিয়ে আলাদা ইবুক করা যায়।

হিমু এর ছবি

"মুক্তিযুদ্ধে কতিপয় ব্যক্তির ভূমিকা" শিরোনামে একটা ব-e হতে পারে অবশ্যই।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

স্বাধীন এর ছবি

ব-e এর ব্যাপারে সহমত জানালাম।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মজার ব্যাপার হলো, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের ঘটনা যাদের কারণে ঘটা সম্ভব হলো, মণি সেই নেপথ্য নায়কদের অন্যতম।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কেমনে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

শেখ মণি নামের এই টোটাল ফালতু লোকটাকে নিয়ে আরো বেশি।

শেখ মণি'র অনেক সমালোচনাই সম্ভব কিন্তু 'টোটাল ফালতু' কথাটা বাড়াবাড়ি।

৬২-৬৩'র উত্তাল সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে যে ছিলো, ছয়দফা আন্দোলনের সময় যাকে তিনবছর কারাবন্দী থাকতে হয়েছে, আইয়ূব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য যার মাষ্টার্স ডিগ্রী কেড়ে নেয়া হয়েছিল - এক কথায় তাকে বাতিল করে দেয়া যায়না।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

FZ এর ছবি

মুজিব বাহিনি তৈরীর কারণ বুঝতে হলে আমাদের আওয়ামি লিগের তৎকালিন গ্রুপিং বুঝ্তে হবে। শেখ মুজিবকে মুলত ছাত্রলিগের নেতারাই চাপ প্রয়োগ করেছিলেন স্বাধিনতা ঘোষণা দেবার জ্ন্য। এই গ্রুপই কিন্তু সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিল, ছাত্রদের সংগঠিত করেছিল স্বাধিনতার স্বপক্ষে। আওয়ামী লীগের ভেতরে অনেক নেতার মাঝের দোদুল্যমানতা থাকলেও এই গ্রুপের নিষ্ঠা ও কঠোর অবস্থানের কারণে তারাও স্বাধিনতার পক্ষেই অবস্থান নেয়। যুদ্ধ শুরুর পর এই সব ছাত্রনেতারা প্রবাসী সরকারে গুরুত্ত্বপূর্ণ পদ দাবী করলে আওয়ামি লীগের নেতাদের সাথে তাদের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। যেহেতু তাজউদ্দিনের নেত্ৃত্তের প্রতি তাদের আস্থার অভাব ছিলো, তাই প্রবাসী সরকারের আওতার বাইরে একটি বাহিনী গঠন করা হয়, যা বি এল এফ বা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত। আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না, ন্যাপ- কমিউনিস্ট পার্টির (মস্কোপন্থি) অধীনেও অনুরূপ একটি বাহিনী ছিলো, যাতে ছাত্র ইউনিয়নের বহু নেতা কর্মী ছিলেন। আমার বাবাও এই বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। উনার কাছে শুনেছি এই বাহিনীটি গঠনে ও অস্ত্র সরবরাহে সোভিয়ত রাশিয়ার সরাসরি ভুমিকা ছিল, জানিনা এ কথা কতটুকু সত্য।

মুক্তিযুদ্ধে এভাবে নানা রাজনৈতিক অবস্থান হতে নানা বাহিনীর অংশগ্রহন ছিল। কাদের সিদ্দিকির মত অভ্যন্তরীণ সংগঠিত বাহিনীও ছিল। এদের মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে যে বিরোধ হয়নি, তা নয়, তারপরও কিন্তু দেশের জন্য সবাই যুদ্ধ করেছেন, অবদান কারোরই কম নয়। তাছাড়া যুদ্ধের শেষএর দিকে কিন্তু এই বিরোধ ভুলে সবাই সহায়ক শক্তি হিসেবেই যুদ্ধ করেছেন।

মুজিব বাহিনীর বহু যোদ্ধা শহীদ হয়েছন এই যুদ্ধে, সাহসিকতা দেখিয়ছেন অনেকেই, কিন্তু সে তুলনায় স্বীকৃতি পেয়েছন খুবই কম, সেই আওয়ামি লিগের তৎকালিন গ্রুপিং এর কারণেই। পরবর্তীতে কার ভুমিকা কি, তা দেখে মুক্তিযুদ্ধ কালীন অবস্থান কে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা অসংগত হবে। আর শেখ মনি উচ্চাভিলাষী হয়তো ছিলেন, কিন্তু তার দেশপ্রেম ও সাংগঠনিক ক্ষমতাকে সম্মান দিতেই হয়। কেউ কেউ দেখলাম মুজিব হত্যাতেও শেখ মনির হাত দেখছেন, কিন্তু ১৫ই আগস্ট এ কিন্তু মনি নিজেও নিহত হন। সুতরাং অযথাই এ ধরণের বিশেষণ প্রয়োগ না করাই ভাল।

হিমু এর ছবি

ফাইয়াজ, একটা জিনিস আমাকে বোঝাও। দেশটা আক্রান্ত। যুদ্ধ চলছে। একজন ছাত্রনেতা কেন প্রবাসী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ দাবি করবেন, যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত?? কোন নৈতিক অবস্থান থেকে? স্বাধীনতার জন্যে শেখ মুজিবকে এই ছাত্রনেতারাই শুধু চাপ দিয়েছেন, এটা একটা কথা হলো? আর আওয়ামী লীগের বহু বহু বহু নেতা প্রবাসী সরকারের পিছনে দুই হাতের দশটা এবং দুই পায়ের দশটা মোট বিশটা আঙুল ঢুকিয়ে রেখেছিলো। এদেরকেও তাজউদ্দীন পাত্তা দেন নাই। প্রবাসী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাই নাই অতএব আমি যামুগা, মেজর জেনারেল উবান যা কয় তাই করমু, এটা কেমন দেশপ্রেম? এটাকে দেশপ্রেম বলে না, ক্ষমতাপ্রেম বলে। শেখ মণির সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নাই, সেই ক্ষমতা কোন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

FZ এর ছবি

তাজউদ্দিনের উপরে কিন্তু শুধু মনি বা আওয়ামী লীগের নেতারা নন, অন্যান্য দলের নেতারাও সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য চাপ প্রয়ওগ করেছিলেন। ছাত্র নেতাদের দাবীর পিছনে মূল শক্তি ছিল তাদের স্বাধীনতার পক্ষএ সুস্পষ্ট অবস্থান, যা কিনা তাজউদ্দিন বা নজরুল ইসলাম ব্যতীত আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়্র নেতাই নেননি, হয়তো strategic কারণেই।

তাজউদ্দিন অনেক বিচক্ষণতার অধিকারী ছিলেন, তাই কেবল মাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকেই সরকারে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার স্বপক্ষএ ছাত্রনেতাদের অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিশেষ মূল্যায়ন দাবী করতেই পারেন, কারন যুব সমাজের এক বিশাল অংশের, যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, সাথে এই ছাত্রনেতাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তবে শেষ বিচারে তাজউদ্দিনের সিদ্ধান্তই সঠিক হয়েছে বলতেই হবে, কারণ মাথা গরম এই সব ছাত্রনেতারা সরকারের উচ্চ পদে থাকলে এক দিক দিয়ে যেমন বাংলাদেশের প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ত হত না, তেমনি হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের risk রয়েই যেত।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

কারণ মাথা গরম এই সব ছাত্রনেতারা সরকারের উচ্চ পদে থাকলে এক দিক দিয়ে যেমন বাংলাদেশের প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ত হত না, তেমনি হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের risk রয়েই যেত।
ঠিক। শেখ মণি যখন নির্বাচিত হয়ে সংসদে এলেন, খন্দকার মোশতাকের প্ররোচনায় যিনি তাজউদ্দীনকে আস্তে করে সাইড লাইনের বাইরে পাঠিয়ে দিলেন। বঙ্গবন্ধুকে একরকম বাধ্য করলেন একদলীয় বাকশাল গঠন করে বাকি সবার গলার স্বর চেপে ধরতে, বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করে ফেললেন 'জনমানুষের নেতা'র চাদর থেকে। পনেরোই আগস্টের ঘটনার পেছনে এগুলো কোনো কারণ বলে মনে হচ্ছে না আপনার!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তোর কি মনে হয় 'বাকশাল' না করলেই শেখ মুজিব বেঁচে থাকতো? আর সরকার পদ্ধতি বদলে ফেলার মতো এতো বড় তাত্বিক শেখ মনি ছিলোনা আদৌ।
বাকশাল গঠনের পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক ইন্ধন যারা জোগিয়েছিলেন তারা অনেক বড় বড় চাঁই যারা পরে বাকস্বাধীনতার পয়গাম্বর সেজেছিলেন। যা হোক এটা অন্য প্রসঙ্গ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বাকশাল তো এখানে মূখ্য না দাদা, এটা একটা ফ্যাক্টর কেবল। আর আপনি ঠিকই বললেন, সরকার পদ্ধতি বদলানোর মতো তাত্ত্বিক মণি ছিলেন না। ছিলেন না বলেই তাঁকে ঘুটি বানানো সহজ হয়েছে। যারা এর ছক বানিয়েছে তাদের কাজটা সহজ হয়েছে তাদের ঘুটি মণি বলেই।

বঙ্গবন্ধু অবশ্যই বাঁচতেন না। কাহিনীর প্রয়োজনেই তাঁকে মরতে হতো, কমপক্ষে এখনকার বিবেচনায় এটাই বুঝা যায়! কিন্তু তাঁর পরিণতি এরকম নাও হতে পারতো পাশে তাজউদ্দীন সক্রিয় থাকলে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হিমু এর ছবি

এবং এই লোক প্রবাসী সরকারপ্রধান তাজউদ্দীন আহমদকে অ্যাসাসিনেট করার জন্য আততায়ী পাঠিয়েছিলো। তাকে বাতিল করার জন্যে এই একটা ব্যাপারই যথেষ্ঠ। গোলাম আযম ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলো, স্ট্যান্ড করসিলো এসএসসিতে, কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের জিএস ছিলো, তো কী হইসে?

শেখ মণি যেসব বিপত্তির মধ্যে দিয়ে গেছে, আরো অনেকেই সেগুলোর ভিতর দিয়ে গেছেন। তিনি একা এইসব ভোগান্তি পোহান নাই।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

শেখ মণি নামের এই টোটাল ফালতু লোকটাকে নিয়ে আরো বেশি। এই লোক মুজিবের অনুপস্থিতিতে তাঁকে প্রতিস্থাপিত করার মতো ছাগলামি বুদ্ধি নিয়ে মাঠে নেমেছিলো। "মুক্তিযুদ্ধে অ্যাসহোলরা" নামে কোনো বই লেখা হলে সেটার একটা বড় চ্যাপ্টার মণিকে নিয়ে লেখা সম্ভব।

এবং এই লোক প্রবাসী সরকারপ্রধান তাজউদ্দীন আহমদকে অ্যাসাসিনেট করার জন্য আততায়ী পাঠিয়েছিলো। তাকে বাতিল করার জন্যে এই একটা ব্যাপারই যথেষ্ঠ। গোলাম আযম ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলো, স্ট্যান্ড করসিলো এসএসসিতে, কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের জিএস ছিলো, তো কী হইসে?

হিমু ভাইয়ের মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্যবহুল মনোগ্রাহী লেখা, এমনকি অনেক মন্তব্যও তথ্যবহুল; ভাল লাগল।

কৌস্তুভ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একেবারে লাজওয়াব পোস্ট।

জয় হোক ষষ্ঠ পাণ্ডবের।



অজ্ঞাতবাস

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

বদ্দার ফাঁকিবাজির বিরুদ্ধে ধিক্কার । ছফাগিরি -৮ এবং এই পোস্টে আপনার একটিভ অংশগ্রহন কাম্য ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কিছুই জানা হল ।
চমৎকার পোস্ট
চলুক

বোহেমিয়ান

দিগন্ত এর ছবি

আপনার বক্তব্য ও ব্যাখ্যা বেশ ভাল লেগেছে কিন্তু দুটো জায়গায় দ্বিমত আছে। প্রথমত ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে, আমার ধারণা ভারত সত্যিই পাকিস্তানকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছিল, যদিও তা যুদ্ধের/বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল কারণ নয়। স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব দেখলে ভারতের কাছে ৭১-এর যুদ্ধ এখনও অসীম, কারণ একদিকের বর্ডারের সেনা/সামরিক ইন্সটলেশনের খরচা ২০%-এরও কম হয়ে গেছে।

আরেকটা ব্যাপার হল কংগ্রেস সরকারকে আপনি যতটা বামপন্থা-বিরোধী দেখাচ্ছেন ততটা বাম-বিরোধী তারা আন্তর্জাতিকভাবে হতে পারেননা, কারণ ভারতের পেছনের খুঁটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। বাম-বিরোধী তেমন কিছু করলে সোভিয়েত সাহায্য-বঞ্চিত হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও ছিল। তাই দেশে বামপন্থী আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই সুবিধা খুব একটা ছিল না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নকশাল, চীনা বাম।
এ ক্ষেত্রে সোভিয়েতের কোন আপত্তি ছিলোনা হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই বিশ্লেষণটা অনেকগুলো বিষয়কেই মাথার মধ্যে গুছিয়ে দিলো
ধন্যবাদ পাণ্ডবদা

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'মুজিব বাহিনী' বলে কি অফিসিয়ালী স্বীকৃত কোন বাহিনী ছিলো?
সিরাজুল আলম খান, ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাকদের কমান্ডে যে বিশেষ বাহিনী তৈরী করা হয়েছিল সেটা 'বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স', অফিসিয়ালি এটি বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীরই অন্তর্গত এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিলো।

কথিত মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ বিষয়ে এই বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই এরা মুক্তিবাহিনীর আলাদা কিছু ছিলো। আপনি যদি বিএলএফ'র কোন যোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেখেন, সেটা সর্বাধিনায়কের স্বাক্ষর দেয়াই এবং সংখ্যায় এরা ছিলো মোট মুক্তিবাহিনীর অর্ধেকের মতো। ৬০,০০০- ৭০,০০০! কেন্দ্রে দলাদলি ছিলো কিন্তু বিএলএফ প্রবাসী সরকারের প্রতিপক্ষ ছিলোনা। বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পর এরা তার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলো

সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন বাহিনী সরকার এবং সর্বাধিনায়কের কর্তৃত্বাধীন ছিলোনা। যুদ্ধকালীন সময়ে ও তাদের গলাকাটা কর্মসূচী বহাল ছিলো।

জাসদ বিষয়ে আপনার বিশ্লেষন একদম ঠিক। আমাদের অনেক বোদ্ধাই বুঝতে চাননা কিংবা মানতে চাননা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বাহানায় এদেশে সমাজতন্ত্রের সহজাত বিকাশকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। একেবারে পেনিসিলিন থেরাপি!
যে সিরাজুল আলম খান, আসম রব'রা জীবনে ও কোনদিন সমাজতান্ত্রিক ছিলোনা- '৭২ এর জানুয়ারী পর্যন্ত মুজিববাদের ফেনা তুলেছে মুখে তারা রাতারাতি হয়ে গেলো সমাজতন্ত্রের উদ্ধারকর্তা!
ছফার মতো জ্ঞানীজন ও এদের ধোঁকায় ঠকেছেন পুরো এক দশক হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

দ্বিমত উইথ ক্যাপিটাল দ্ব।

প্রথমত, বিএলএফের রিক্রুটমেন্ট ও প্রশিক্ষণের ওপর বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের কোনো রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। মেজর জেনারেল উবান তখন উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি বিএলএফকে নিজের মতো করে প্রশিক্ষণ দেন। আপনি যদি দাবি করে থাকেন, শ্রদ্ধেয় জেনারেল ওসমানীর নিয়ন্ত্রণে বিএলএফ ছিলো, দয়া করে কি বলবেন, কেন এক নম্বর সেক্টরে অস্ত্রের অভাবে গেরিলা অপারেশন ঠিকমতো চালানো যেতো না, আর বিএলএফের হাতে তখনকার সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকতো? আপনি কি মুজিববাহিনীর কয়েকটা অপারেশনের নাম বলতে পারবেন? কোনো তথ্য দিতে পারবেন কোন অপারেশনে তারা কী কী করেছে?

সর্বাধিনায়কের সনদ বিলানোর ভেতরের চেহারাটা জানতে দয়া করে একজন গণবাহিনী কমাণ্ডার, কবি ও মুক্তিযোদ্ধা আবিদ আনোয়ারের এই লেখাটা পড়ুন।

আপনি বলছেন কেন্দ্রে দলাদলি ছিলো কিন্তু বিএলএফ প্রবাসী সরকারের প্রতিপক্ষ ছিলো না। মূলধারা '৭১ এ তাজউদ্দীনকে হত্যাচেষ্টার কথা মঈদুল হাসান লিখে গেছেন। বইটি ঊনিশশো চুরাশি সালে সম্ভবত প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। আপনি আমাকে উদাহরণ দেখান যে অন্তত একজন বিএলএফ কমান্ডার এই বইতে উল্লেখিত তথ্যের প্রতিবাদ করেছেন। তাজউদ্দীন সাহেবের নিজের ডায়রি ঘাঁটলেও কিছু তথ্য হয়তো পাওয়া যেতে পারে।

সংখ্যায় মোট মুক্তিবাহিনীর অর্ধেক হলেই সাত খুন মাফ? রাজাকারও তো সেরকম ছিলো!



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এটা দেখো
প্রবাসী সরকারের সাথে মুজিব বাহিনীর কমাণ্ডারদের দ্বন্ধ ছিলো। কিন্তু এই দ্বন্ধ শেষপর্যন্ত একটা সমঝোতায় এসেছিলো।
'some senior civil and military officials of India like DP Dhar and General Manek Shaw mediated between the Bangladesh government and the Mujib Bahini leaders.'

যদি এরকম কোন ধারনা থাকে যে মুজিব বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধ না করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াতো এটা ভুল। কোন বই লেখা হয়নি কিংবা নেটে রেফারেন্স নেই বললেই সত্যের অপলাপ ঘটেনা।

মাঠপর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে দেখো, এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিএলএফ ছিলো। আমি অন্ততঃ যাদের চিনি তাদের অনেকেই ছিলেন। বাংলাপিডিয়ার এই অংশেই দেখো-

In the battlefield, the Mujib Bahini fought shoulder to shoulder with other freedom fighters. It carried out daring raids into the Pakistani occupation army's positions in the south, the south-west and some areas around Dhaka. It was especially trained in guerrilla warfare and was equipped with comparatively better weapons.
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

আপনি প্রথমে বলছেন মুজিববাহিনী সর্বাধিনায়কের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। সর্বাধিনায়ককে নিয়োগ দিয়েছিলো প্রবাসী সরকার। আবার পরে বলছেন ভারতীয় কূটনীতিক ডি পি ধর আর খোদ স্যাম মানেকশকে মুক্তিবাহিনীর অংশ বিএলএফের নেতাদের সাথে প্রবাসী সরকারের মিটমাট করতে হয়েছে! স্ববিরোধী না ব্যাপারটা? ব্যাপারটা অনেকটা এমন না, যে আপনার বাম হাতের সাথে আপনার শরীরের বিরোধ মিটমাট করতে আমি ডান হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি?

বিএলএফ কিছু করেনি, এ কথা কেউ বলবে না। তারা যেটা করেছে, নিয়মিত বাহিনীর বড় স্কেলের অপারেশনের কোনো তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো একটা রেইড করে ফিরে এসেছে। এর খেসারত দিতে হয়েছে অনেক দুর্বল অস্ত্র আর সামান্য রসদ সম্বল করে যেসব গেরিলা বড় কোনো অপারেশনের প্রস্তুতি নিতেন, তাদের।

আর এটা কি বিচিত্র না, মুক্তিবাহিনীর অর্ধেক লোক মুজিববাহিনীতে ছিলো, একটা বই লিখলেন না তাদের কেউ! তাদের কোনো কার্যকলাপের রেকর্ড নেটে পর্যন্ত এলো না, এক বাংলাপিডিয়া সম্বল!

শেখ মণি তার যোদ্ধাদের নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর খাগড়াছড়ি দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছিলো। যেখানে সব মুক্তিযোদ্ধা তখন শেষ মরণকামড় দিচ্ছে পাকিদের গায়ে। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামে যুদ্ধ করেছেন মেজর রফিক। এ থেকেই বোঝা যায় মণি ক্যামন মুক্তিযোদ্ধা ছিলো, আর তার মুজিববাহিনীকে সে কীভাবে পরিচালনা করেছে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরেকটু পরিস্কার করা যাক।
মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ কি মুক্তিবাহিনীর বাইরে ছিলো না মুক্তিবাহিনীর অংশ ছিলো?
যদি বাইরে থাকে অন্য কথা। যদি না থাকে, যদি বিএলএফ মুক্তিবাহিনীর অংশই হয়েই থাকে তাহলে অন্ততঃ আইনগতভাবে কার নিয়ন্ত্রনে ছিলো?

বিএলএফ গঠনের পেছনে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলো সন্দেহ নেই, প্রবাসী সরকারের কারো কারো সাথে তাদের দ্বন্ধ ছিলো এটা ও সত্য কিন্তু সিরাজ শিকদারের মতো তারা সরকার কাঠামোর বাইরে ছিলোনা।

আর মণি তো তার বীরত্ব গাঁথা লিখে যাওয়ার সময় পাননি। মেরে ফেলার পর তাকে নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়, জানা থাকলে বেচারা ও বহু কিছু লিখে যেতো।

মইদুল হাসানের বই'কে ও আমি কোন বাইবেল মনে করছিনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

আপনি তাহলে এক কাজ করেন, লিখিত প্রতিবাদ জানান বইতে প্রকাশিত তথ্যের। বলেন যে মঈদুল হাসান যা লিখেছে সেটা ঠিক না, সেটা ভিত্তিহীন, প্রমাণযোগ্য নয়।

আর এই যে আমরা সরকার কাঠামোর ভিতরে বাইরে নিয়ে ত্যানা প্যাঁচাচ্ছি, একটা কথা বলেন দেখি, ফারুক-রশিদ-জিয়া-মোশতাক কোন মামুর বেটা সরকার কাঠামোর বাইরে ছিলো?



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রাও ফরমান আলী গনহত্যার কথা অস্বীকার করে বই লিখছে। তুমি লিখিত প্রতিবাদ করবে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

অর্থাৎ শেখ মণির চামড়া বাঁচানোর জন্যে আমরা প্রবাসী সরকারের একজন শীর্ষ কূটনীতিককে রাও ফরমানের মতো একটা জন্তুর কাতারে দাঁড় করাতে দ্বিধাবোধ করবো না।

আর আপনার জ্ঞাতার্থে এ-ও জানাই, রাও ফরমানের সেই বইয়ের বক্তব্যের লিখিত প্রতিবাদ আমি মুনতাসির মামুনের বইতে পেয়েছি। অর্থাৎ একজন বাঙালি গবেষক অধ্যাপকের কথা আমি বলতে পারি যিনি ঐ বইকে আনচ্যালেঞ্জড ছেড়ে দেননি।

শেখ মণি বই লিখলেও কি লিখে যেতো, অমুক তারিখ আমি তাজউদ্দীনকে গুল্লি মারিবার উদ্দেশ্যে ফজলুকে দায়িত্ব দিয়াছিলাম, শালার বেটা বাং মারিয়াছে ... ?



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এটা ত্যনাপেঁচানো হয়ে যাচ্ছে হিমু।
মাইদুল হাসান তার বইয়ে তার মতো লিখেছেন। তুমি তোমার অভিজ্ঞতা ও তথ্যের ভিত্তিতে এটাকে সত্য বলে মানতে পারো।

আমি না ও মানতে পারি। এটা একজনের ভাষ্য, কোন দলিল না যে এটা আমাকে মানতেই হবে। সমস্যাটা কি?

শেখ মনি'র চামড়া বাঁচানো আমার উদ্দেশ্য না। তার অনেক সমালোচনা প্রাপ্য কিন্তু তুমি শুরু করেছো তাকে 'টোটাল ফালতু' বানিয়ে।

সামরিক বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর এর বাইরে বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলো বিএলএফ- বিএলএফ গঠনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সমালোচনার সুযোগে তাদের যুদ্ধের অংশটুকু যেনো বাতিল করা না হয়- এই সতর্কতাটুকু জরুরী। সে কারনেই এতো কথা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

বিএলএফের যে যোদ্ধা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, আমি ভুলে যাচ্ছি না যে তিনি ঘরে মাকে ফেলে রেখে পালিয়ে এসেছিলেন যুদ্ধ করতে। আমি এ-ও ভুলে যাচ্ছি না যে তাঁর কমান্ডার যখন তাঁকে মরতে পাঠিয়েছেন তিনি প্রশ্ন না করে মরতে চলে গেছেন। আমি প্রশ্ন করছি বিএলএফের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে। সেগুলোর উত্তর আপনি দিতে পারেননি।

শেখ মণির ইগোর বোঝা মুজিববাহিনীর যোদ্ধা কেন টানবে? আপনি শেখ মণিকে গুরুত্বপূর্ণ বানাচ্ছেন তার আইয়ূববিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্যে, আমি তার গুরুত্ব ফ্লাশ করে দিচ্ছি প্রবাসী সরকারের প্রধানকে হত্যা করতে লোক পাঠানোর জন্যে। আমি বিশ্বাস করি তাজউদ্দীনের জায়গায় দ্বিতীয় ব্যক্তি থাকলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিণতি হতো ফিলিস্তিনের মতো। তাজউদ্দীনকে হত্যা করতে পেরেছে যারা, আর চেয়েছে যারা, তাদের মধ্যে কি আসলে খুব বেশি পার্থক্য? দুই দলই কি ক্ষমতার কাঙাল ছিলো না?

বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, এক ফারুক বাদে বাকি অফিসাররা তো খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা। একটা স্যালুট দিবেন তাদের জন্যে কখনো?

শেখ মণির যে সমালোচনা প্রাপ্য আমি তাকে তা দিয়েছি। ইতিহাস তাকে আমার চেয়ে কম নির্মমভাবে মূল্যায়ন করলে তার জন্যেই ভালো।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি প্রশ্ন করছি বিএলএফের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে। সেগুলোর উত্তর আপনি দিতে পারেননি।

আমার উত্তর দেয়া কি খুব জরুরী?

বিএলএফের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশ্য স্পষ্ট রাজনৈতিক ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হলে তার রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশন যেনো বদলে না যায় সেটা নিশ্চিত করা। বিএলএফের মতো ছাত্র ইউনিয়নের ও নিজস্ব গেরিলা ইউনিট ছিলো, এটা ও তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ছিলো।
এইসব উদ্দেশ্য আজকে তোমার আমার ভালো নাও লাগতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধে এটাই বাস্তবতা।

মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক সহ সেক্টর কমাণ্ডারদের কেউ কেউ ও সরাসরি যুদ্ধ করেননি। কিন্তু এতে তাদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
বিএলএফের যোদ্ধারা যদি যুদ্ধ করেই থাকে তার অধিনায়কদের প্রেইস জানাতে আমার কোন আপত্তি নেই।

ছয়দফা আন্দোলনে শেখ মণি'র ভূমিকা ইতিহাসের অংশ। তুমি একজনের ভাষ্যে এরকম কাউকে ফ্ল্যাশ করে দিতে পারো, আমি পারিনা। মাইদুল হাসানের ঐ ভাষ্য ইতিহাসের অংশ হোক, মনি'কে আমি ও ফ্ল্যাশ করে দেবোনে।

বিএলএফের কার্যক্রম নিয়ে এই পোষ্টে যে টোনে কথা হয়েছে সেটা আমার অভিজ্ঞানের সাথে সমর্থক নয়, হতেই পারে এমন-আমি আপত্তি করছিনা।

মুক্তিযুদ্ধ যদি নয় মাস না হয়ে নয় বছর ধরে চলত তাহলে হয়তো এক পর্যায়ে মুজিব বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত হত।

এই যে 'মুজিব বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ'- মনে হতে পারে মুজিব বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা না! এরা মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রুপক্ষ! এই যে ৫০,০০০ হাজার যোদ্ধা এদেরকে বাতিল করে দিলে কারা মুক্তিযুদ্ধ করলো তবে? এরা বাতিল হলে ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা ইউনিট ও বাতিল হলো। ধরে নিলাম এরা ও আরো কয়েক হাজার। মুক্তিযোদ্ধা তাহলে আর্মি,পুলিশ, ইপিআর?

ব্যক্তিগত কথাবার্তা ব্লগে বলিনা। কিন্তু এই পোষ্টের কন্টেন্ট এর কারনে বলতে বাধ্য হলাম। আমার পরিবারেই একাধিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা মুজিব বাহিনীর গেরিলা ছিলেন। মুজিব বাহিনীর সদস্য থাকার অপরাধে এবার এদেরকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা থেকে বাতিল করে দিতে পারি!

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জিফরান খালেদ এর ছবি

আব্বাও বিএলএফের, হাসান ভাই। হাফলং-এ ছিলো, আপনি তো জানেন-ই। ইন ফ্যাক্ট, আব্বার সমস্ত বন্ধু বান্ধব যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যারা বেঁচে আছেন এখনো, তারা সবাই বিএলএফ-এর অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। সীতাকুণ্ড এলাকা আব্বারা বিএলএফ এর অধীনেই মুক্ত করে।

FZ এর ছবি

মুজিব বাহিনীর উপরে লেখা বই আছে। ঢাকায় আমার বাসাতেই একটি বই আছে, লেখকের নাম মনে নেই, তবে তিনি মুজিব বাহিনীর একজন কমান্ডার। এ বছর শেষে ঢাকায় গেলে আপনার কাছে পৌছে দেবার ব্যবস্থা করব।

আর মনি কেমন যুদ্ধ করেছেন তা জানি না, কিন্তু মুজিব বাহিনির বহু যুদ্ধের বিবরণ ওই বইটিতে পড়েছি। আপনি যদি চান, তা হলে মুজিব বাহিনীর একজন বীর যোদ্ধা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা, নাজমুল হাসান পাখির ফোন নাম্বার দিতে পারি, যিনি যুদ্ধে বীরত্ত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তার সাথে সরাসরি কথা বলে দেখতে পারেন।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হিমু ভাই মুজিব বাহিনী গঠন ও এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন , শেখ মনির তাজউদ্দিনকে হত্যা চেস্টার নিন্দা করেছেন এর মানে তো এই নয় যে , মুজিব বাহিনীর সকল সদস্যের দেশপ্রেম বা লড়াই তিনি অস্বীকার করেছেন ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মুজিব বাহিনী আর শেখ মনি নিয়ে হিমু ভাইয়ের সাথে একমত পোষন করছি ।
হাসান ভাই , মঈদুল হাসানের মূ্লধারা'৭১ নিছক লেখকের ভাষ্য নয় , বরং ইতিহাসের দলিল ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

লাভ হলো নেট ঘেঁটে, একটা দারুন জিনিস পেয়ে গেলাম।
জেলা তথ্য বাতায়ন নামে সরকারী ওয়েবসাইটে প্রতিটি জেলার মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এবং উল্লেখযোগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা দেয়া আছে।
এটি মানিকগঞ্জ জেলার। লিংকে গিয়ে জেলার নাম বদলে দিলে অন্যান্য জেলা পাওয়া যাচ্ছে।

তো মানিকগঞ্জ জেলার প্রতিটি থানার মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক তালিকা দেয়া আছে, একেবারে নিচে একজন শহীদ ও আছেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সচল জাহিদ এর ছবি

পান্ডবদা, অতি সহজ করে বুঝিয়েছেন, যা আগে নিজে পড়ে বা জেনে বুঝিনি। বদরুদ্দীন উমরের 'স্বাধীনতা যুদ্ধের নেপথ্য কাহিনী' তে এই নিয়ে বেশ কিছু তথ্য আছে। বইটির পিডিএফ সংস্করণ থাকলে কেউ আপলোড করতে পারেন।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

দুইটা সংশোধনীঃ
১।বইটির নাম 'স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্য কাহিনী' ,নওরোজ, ঢাকা ১৯৮৪ ।
২। লেখক বদরুদ্দীন উমর নন বরং বদরুদ্দীন আহমেদ ।

বইটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবামলে শেখ মনির কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়েছে । আর মুজিব বাহিনী নিয়ে তিনি মাঈদুল হাসানের মূ্লধারা '৭১ কে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

পাণ্ডবদাকে ধন্যবাদ বরাবরের মত নির্মোহ দৃষ্টিদিয়ে ইতিহাসের একটা বড় প্রশ্নকে উপস্থাপন করার জন্য।

প্রশ্নটা নিশ্চই বিএলএফ/মুজিববাহিনী পাকিস্তানের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল কিনা, কিম্বা বাংলাদেশের পক্ষে ৭১ এর যুদ্ধে কোন অবদান রেখেছিল কিনা সেটা নয়।

এটা মোটামুটি বোঝা যায় মুজিববাহিনী প্রবাসী সরকারের অগোচরে এবং প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে প্রশিক্ষিত হয়েছিল।

মুক্তিবাহিনীর প্রায় সমশক্তিসম্পন্ন এমন একটা বিকল্প বাহিনী গঠনের কারণকে অবশ্যই শুধুমাত্র শেখ মণি বা তরুণ নেতৃত্বের রগচটা স্বভাব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না।

মাঈদুল হাসান এর মূলধারা একাত্তরে মুজিব বাহিনী সম্পর্কে ২-১ টা ঘটনা এবং প্রবাসী সরকারে উৎকণ্ঠার প্রকাশ ছাড়া বিশেষ কোন বিশ্লেষণ নেই। তবে এটুকু মনে হয়েছে যে র এর অধীনে এই বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে ভারত সরকারের অভ্যন্তরেও দ্মতবিরোধ ছিল। (যতদূর জানি র ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে।)

প্রশ্নটা এই পৃথক বাহিনী কেন তৈরি হয়েছিল, কারা এর পেছনে ছিল তা নিয়ে।

ফাইয়াজ এবং জিফরান, আপনাদের পারিবারিক অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে। আশাকরি যতদূর সম্ভব তথ্য দেবেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটি কথা মনে হয় আমার বলে রাখা উচিত, অন্ততঃ এই পোস্টের লেখক হিসেবে। মুজিব বাহিনীতে থেকে যারা পাকিস্তানীদের বিরূদ্ধে বা তাদের সহযোগীদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তাঁদের সততা, আত্মত্যাগ, বীরত্ব, দেশপ্রেম, মহত্ত্ব এগুলোর কোনটা নিয়েই আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। দেশের জন্য যুদ্ধ করার জন্য তাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন, জীবনের মায়া বা সম্পদ-ক্ষমতার লোভে নয়। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন, সেখানে নেতারা তাঁদের কীভাবে ব্যবহার করলেন তার দায় তাঁদের নয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের আত্মত্যাগ ও অবদানগুলো আমাদের অবনত মস্তকেই স্বীকার করতে হবে।

কিন্তু আমার আলোচনার লক্ষ্য তাঁদের নিয়ে নয়। আমার আলোচনার লক্ষ্য মুজিব বাহিনী গঠন, গঠনের উদ্দেশ্য, এইক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা এইসব নিয়ে।

আমি "মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী" বলেছি যাঁরা মুজিব বাহিনীতে ছিলেন এবং যাঁরা ছিলেন না তাঁদের আলাদা ভাবে বোঝানোর জন্য। এখানে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।

ছাত্র ইউনিয়ন বা কমিউনিস্ট পার্টি যে আলাদা মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ তৈরি করেছিল সেটি কিন্তু মুজিব বাহিনীর মত ফরমাল কোন ব্যাপার নয়। আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিক আদর্শের পার্থক্য থাকায় ছাত্র ইউনিয়ন বা কমিউনিস্ট পার্টির মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এমন গ্রুপ হতেই পারে তবে তা মুজিবনগর সরকারের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না। দেশের অভ্যন্তরে আটকা পড়া বা থেকে যাওয়া বাঙালীদের নিয়ে গড়া কাদেরিয়া বাহিনীও অমনই একটা ব্যাপার। অমন আরো ছোট স্থানীয় পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপের কথা শুনেছি। তাঁরাও মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্যশীলই ছিলেন। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বের সাথে মুজিবনগর সরকারের মতদ্বৈধতা, অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাঁদের সমন্বয়হীনতা, মুজিবনগর সরকারের সামরিক কাঠামোকে অগ্রাহ্য করা এগুলোই তাঁদের প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়।

সবচে' বড় প্রশ্নটা দাঁড়ায় মুজিব বাহিনী গঠনের প্রক্রিয়া ও উদ্দেশ্য নিয়ে। এই রকম একটা এলিট ফোর্স গঠনের জন্য ভারত সরকার এমনি এমনি তেল ঢেলেছে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। ভারত সরকার চাইলে সেই তেলটা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর পিছনে ঢালতে পারত। মুজিবনগর সরকার বা তার সেনানায়কদের কাছে গোপন রেখে সুদূর দেরাদুনের আর্মি একাডেমিতে যখন এমন বাহিনী গঠন করা হয় এবং তাঁদের নিজস্ব প্ল্যান অনুযায়ী অ্যাকশনে নামে তখন তাদের কার্যক্রম, গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বইকি। কিন্তু এই পোস্টের মন্তব্য-আলোচনায় এই প্রশ্নগুলোকে সামনে কম আনা হচ্ছে। এতে মুজিব বাহিনীর ব্যাপারে মূল বিষয়গুলো অস্পষ্টই থেকে যাবে।

মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বের মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর ভূমিকা নিয়েও আমি কিছু কথা বলেছি যাতে পূর্বের ঘটনার সাথে পরের আচরণের মিল আছে কিনা তা নিয়ে ভাবা যায়। এগুলো নিয়েও আলোচনা করুন।

সবার প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ এই ব্যাপারগুলো তে যা জানেন তা আমাদের জানান, প্রয়োজনে স্বতন্ত্র পোস্ট দিন। শুধুমাত্র গুজবের কথা বলবেন না।

আমরাই পারি পরস্পরকে সত্যটা জানাতে। তাতে সত্য ইতিহাসটা সবারই জানা হয়ে যাবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মুজিব বাহিনীতে থেকে যারা পাকিস্তানীদের বিরূদ্ধে বা তাদের সহযোগীদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তাঁদের সততা, আত্মত্যাগ, বীরত্ব, দেশপ্রেম, মহত্ত্ব এগুলোর কোনটা নিয়েই আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। দেশের জন্য যুদ্ধ করার জন্য তাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন, জীবনের মায়া বা সম্পদ-ক্ষমতার লোভে নয়। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন, সেখানে নেতারা তাঁদের কীভাবে ব্যবহার করলেন তার দায় তাঁদের নয়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের আত্মত্যাগ ও অবদানগুলো আমাদের অবনত মস্তকেই স্বীকার করতে হবে।

কিন্তু আমার আলোচনার লক্ষ্য তাঁদের নিয়ে নয়। আমার আলোচনার লক্ষ্য মুজিব বাহিনী গঠন, গঠনের উদ্দেশ্য, এইক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা এইসব নিয়ে।

আমারও বক্তব্য /অবস্থান এটি।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় পান্ডব,
আপনার পোষ্টের উদ্দেশ্য নিয়ে আমারো কোন দ্বিমত নেই। ইতিহাসের এই অংশগুলো নিয়ে আলোচনা জরুরী। কিন্তু সেই সাথে সতর্কতা ও দরকার কারন সামান্যতম অসতর্কতা প্রসঙ্গ পালটে দিতে পারে।

আমার, FZ, জিফরানের মন্তব্য বাদে- আপনার পোষ্ট এবং হিমু'র মন্তব্য আরেকবার পড়ুন প্লিজ।

প্রথমতঃ আপনার পোষ্টে আপনি মুজিব বাহিনী'কে মুক্তিবাহিনী থেকে আলাদা করে ফেলেছেন।
দ্বিতীয়তঃ হিমুর মন্তব্য ৫ এবং ১১.১.১.১.১.১ পড়ে মনে হবে মুজিব বাহিনীর কাজই ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের বিপদে ফেলা।

আপনার শেষের মন্তব্যের এই অংশটা আবার দেখুনঃ-

ভারত সরকার চাইলে সেই তেলটা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর পিছনে ঢালতে পারত

এই অংশে আবার মনে হতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ আসলে করছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভারত তাদেরকে তেল না ঢেলে কোথাকার কোন মুজিব বাহিনী'কে সব তেল ঢেলে দিচ্ছিলো।

সবিনয়ে স্মরন করিয়ে দিতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ করছিলো মুক্তিবাহিনী। মুক্তিবাহিনীর ভিতরে সেনাবাহিনী ছিলো, মুজিব বাহিনী ছিলো, কাদের সিদ্দিকী'র বাহিনী ছিলো। মুক্তিবাহিনীর অন্তর্গত সকল বাহিনীর আলাদা আলাদা অধিনায়ক থাকলে ও সকল বাহিনীর প্রধান অধিনায়ক ছিলেন জেনারেল ওসমানী। সে কারনেই তিনি সর্বাধিনায়ক।

তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন, সেখানে নেতারা তাঁদের কীভাবে ব্যবহার করলেন তার দায় তাঁদের নয়।

এই অংশে কি মনে হতে পারে? তারা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে আসলে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। বরং নেতাদের দ্বারা ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়েছেন।
এটা ইতিহাসের অপলাপ। মুজিব বাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, শহীদ হয়েছেন।

আবারো বলতে চাই- সামরিক, আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বাইরে বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলেন বিএলএফ। আমি স্বাক্ষ্য দিলাম, জিফরান দিলো।এখন আপনি যদি বলেন মুজিব বাহিনী'র এরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলোনা, হিমু যদি বলে এদের এজেন্ডা ছিলো আসল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঝামেলা পাকানো তাহলে তো সমস্যা, বিরাট সমস্যা।

সে কারনেই সবিনয়ে আবারো অনুরোধ থাকবে এসব বিষয়ে আরেকটু সতর্কতার জন্য।

আরেকটা বিষয়ে একটু মনোযোগ দিতে পারেন- মুক্তিবাহিনীর ভেতরের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের দ্বন্ধ। সেনাবাহিনী থেকে আসা অংশ বেসামরিক যোদ্ধাদের কোন দৃষ্টিতে দেখতো?

আর @মানিক ভাই,
আপনি জোর দিয়ে বলছেন মাইদুল হাসানের বই ইতিহাসের দলিল যেখানে বলা হয়েছে শেখ মনি, তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যার জন্য কাউকে পাঠিয়েছিল।
আপনি তো ইতিহাস নিয়ে যথেষ্ট চর্চা করেন। কোন একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে অন্য কোন স্বাক্ষ্যপ্রমান ব্যতীত কোন একজনের ভাষ্য কিভাবে ইতিহাসের দলিল হয়ে যায়- আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আপনার পোষ্টে আপনি মুজিব বাহিনী'কে মুক্তিবাহিনী থেকে আলাদা করে ফেলেছেন।

মুজিব বাহিনী আর মুক্তিবাহিনী আলাদাই ছিল । আর মুজিব বাহিনী জেনারেল ওসমানির কমান্ডে ছিল না , এজন্য সিএনসি ওসমানি পদত্যাগ করতেও চেয়েছিলেন । তাজউদ্দিন ইন্দিরার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাদের কমান্ডে আনার জন্য ।

হাসান ভাই , বেয়াদবি মাফ করবেন । আপনি মনে হয় মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিবাহিনী গুলিয়ে ফেলছেন ।

মুজিববাহিনী অফিসিয়াল্লী বিএলএফ নামে পরিচিত ছিল । মুক্তিবাহিনী (শুরুতে মুক্তিফৌজ )অফিসিয়াল্লী ছিল বিএফএফ । কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী আলাদা ছিল , এরা কাদেরিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল (একইভাবে হেমায়েত বাহিনী ) । সেনাবাহিনীর অফিসার -সিপাহিরা মুক্তিবাহিনীতে ছিল আবার আলাদা তিনটি নিয়মিত ব্রিগেডে (জেড, এস , কে ফোর্স ) ছিল । সেক্টর কমান্ড আর ফোর্স কমান্ড,পরিচিতি, পদবি সবই ছিল আলাদা ।

মোটাদাগে , মুক্তিবাহিনী, মুজিববাহিনী, কাদেরিয়া/হেমায়েত বাহিনী ,তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড, নৌ কমান্ডোর সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তাজউদ্দিন ইন্দিরার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাদের কমান্ডে আনার জন্য ।

তারপর কি কমান্ডে এসেছিলো, না এসেছিলো না?

কাদের সিদ্দীকি'র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী না? কাদের সিদ্দীকি সাংগঠনিক ভাবে সর্বাধিনায়কের অধীনে ছিলোনা? ওসমানী কি তাহলে শুধু আর্মি-ইপিআরের সর্বাধিনায়ক ছিলেন?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আমার জানামতে, ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সিইনসি ছিলেন আর মুক্তিবাহিনীতে আর্মি-ইপিআরের সংখ্যা ছিল কম বরং সাধারণ জনগণই (ছাত্র-শ্রমিক-জনতা )ছিল বেশি ।

কাদের সিদ্দিকী বা তার বাহিনীর কেউ কি কখনো দাবি করেছে যে তারা মুক্তিবাহিনীতে ছিল ? কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী এভাবেই তো জেনেছি এতকাল ? কাদের সিদ্দিকীর এলাকা তো এগারো নং সেক্টরভুক্ত । কাদেরিয়া বাহিনীর কেউ কি সেক্টর অধিনায়ক তাহেরের কমান্ড মেনেছে ?

কত অজানারে !

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কিন্তু মানিক ভাই,
কাদের সিদ্দীকি সেক্টর কমাণ্ডারের কমান্ড মেনেছে কিনা সেটা নয় আমি জানতে চাই কাদের সিদ্দীকি ওসমানী তথা মুজিব নগর সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন কিনা?

যেহেতু আপনি বলছেন- ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন এবং কাদের সিদ্দীকির বাহিনী মুক্তিবাহিনীর অন্তর্গত ছিলোনা- তার মানে কাদের সিদ্দীকি আনুগত্য ছিলোনা ওসমানীর প্রতি, শেষ পর্যন্ত মুজিব নগরের প্রতি কারন ওসমানী মুজিব নগর সরকারের নিয়োগ ছিলেন।
তাহলে আসুন আরেকটা সমীকরন দাঁড় করাই। সিরাজ শিকদার ওসমানী তথা মুজিব নগরের কমান্ডে ছিলেন না কখনোই। তার দলে কতো যোদ্ধা ছিলো?

আপনারা বলছেন- বিএলএফ, কাদের সিদ্দীকি, হেমায়েত বাহিনী ওসমানীর কমান্ডে ছিলোনা। ওসমানী তথা মুজিব নগরের কমান্ডে না থাকা মোট যোদ্ধার সংখ্যা কতো? বিএলএফ ৫০,০০০+ কাদের সিদ্দীকি ১৬,০০০+ হেমায়েত+ সিরাজ শিকদার+ আরো কিছু উপদল=? ৮০ হাজারের কাছাকাছি!

এবার বলুন- সামরিক আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য বাদে ওসমানী তথা মুজিব নগরের কমাণ্ডে বেসামরিক যোদ্ধা, আপনার কথিত ছাত্র, শ্রমিক সংখ্যায় কতো ছিলো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় হাসান মোরশেদ

হ্যাঁ আমার পোষ্টে আমি মুজিব বাহিনী আর মুক্তিবাহিনীকে আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছি। এর ব্যাখ্যাতে (মন্তব্যে) এটাও বলেছি,

আমি "মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী" বলেছি যাঁরা মুজিব বাহিনীতে ছিলেন এবং যাঁরা ছিলেন না তাঁদের আলাদা ভাবে বোঝানোর জন্য। এখানে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।

আমি তাদেরকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ বলছিনা। তবে তাদের গঠনপ্রক্রিয়া ভিন্ন, তাদের পরিচালনাও এক ছিলনা। মুজিব বাহিনী গঠনপ্রক্রিয়াতেই আমার প্রথম প্রশ্নটি। ভারত সরকার কেন আলাদা করে মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ গঠন করেছিল। এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি আমাদের কী জানাতে পারেন?

হিমু তার মন্তব্যে যা বলেছেন তার ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন বোধ করলে সেটা তিনিই দেবেন। আমার সেখানে বলার সুযোগ নেই।

তেল ঢালার প্রসঙ্গে আমার আসলে “মুক্তিবাহিনী” বলা উচিত ছিল। ভুলক্রমে “সেনা বাহিনী” বলেছি। এই ভুলের দায় আমার। বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধাদের পিছনে সহযোগীতা না বাড়িয়ে তাঁদের সমান্তরাল আরেকটি বাহিনী তৈরি করাতেই আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে। ভারত সরকার তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে পার্থক্যটা তৈরি করেছে। এই ব্যাপারটিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ নামকরণ আমার নয়। সেটা যারা মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ তৈরি করেছিলেন তাদের করা। এই নামকরণের মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনী থেকে তাদের ভিন্ন পরিচয়ের সূচনা তারাই করেছেন। মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ-এ বাংলার মুক্তিকামী মানুষেরা অংশগ্রহন করেছেন, কিন্তু গঠনের পরিকল্পনাটা ভারতের। এই পার্থক্যটা কিন্তু মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ প্রশ্নে এটিকে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই।

মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ-এর নেতাদের প্রসঙ্গে যা বলেছি তার কিছুটা আমার মূল পোস্টেও আছে। আমি একথা বলিনি বা বোঝাতে চাইনি যে, মুজিব বাহিনী বা বিএলএফরা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমার মন্তব্যেও তাঁদের আত্মত্যাগের ব্যাপারে আমার শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছি। সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের প্রশ্নে মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ-এর কৌশল ও লক্ষ্য মুক্তিবাহিনী থেকে ভিন্ন হত। গঠনপ্রক্রিয়া ছাড়া এটাও একটা পার্থক্য। এর দায় মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ যারা গঠন করেছিলেন এবং এর প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ কেন্দ্রিয় নেতৃত্বে ছিলেন তাদের।

মুক্তিবাহিনীর ভেতরে সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব অবশ্যই আলোচিত হতে পারে। সেটা নিয়ে আমি বা আপনি বা অন্য কেউ ভিন্ন পোস্ট দিতে পারেন।

আমার পোস্টে আমি বলেছি,

মুজিব বাহিনীকে নিয়ে এই বিশ্লেষণ তাদের কার্যক্রম আর পরবর্তী ইতিহাসের উপর অনুমিত।

বক্তব্যে অনুমিতি থাকা মানেই সেখানে জানার, বলার, সংশোধনের সুযোগ আছে। পোস্টের শিরোনামে এবং উপসংহারেও সেই আবেদন আছে। আপনারা এখানে আলোচনা করছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আমি বলেছি,

আমরাই পারি পরস্পরকে সত্যটা জানাতে। তাতে সত্য ইতিহাসটা সবারই জানা হয়ে যাবে।

আমরা পরস্পরকে সত্যটা জানানোর চেষ্টা করলে আমাদের মাঝে থাকা বিভ্রান্তিগুলো দূর হয়ে যাবে। আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস জানতে চাই, জানাতে চাই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

পোস্টের মূল আবেদন বা প্রশ্নগুলির বাইরে আলোচনা/মন্তব্য করা থেকে বিরত হলাম ।

আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস জানতে চাই, জানাতে চাই।

হ ।

স্বাধীনতার পরে মুজিববাহিনী্র কর্তাদের কর্মকান্ড বিশেষত জাসদ সম্পর্কে আলোচনা পড়ার বা জানার আগ্রহ ছিল ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমার উপরের প্রশ্ন আপনার কাছে অপ্রাসংগিক মনে হলো মানিক ভাই?

ঠিকাছে- এই পোষ্টে বিরত থাকেন। অন্য কোন সময়, সময় হলে দয়া করে জানাবেন- ওসমানী তথা মুজিব নগরের কমান্ডে থাকা আর না থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যানুপাত।
তাহলে এদেরকে আবার ক্যাটাগরাইজ করা যাবে- (মুজিব নগর) সরকারী মুক্তিযোদ্ধা আর বে(মুজিবনগর)সরকারী মুক্তিযোদ্ধা।

আর মাইদুল হাসানের বই এর ভাষ্য অন্য কোন স্বাক্ষ্য প্রমান ব্যতিরেকে কি করে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলো সেটা ও সময় করে জানাবেন প্লিজ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় ষষ্ঠপান্ডব,
আপনার পোষ্টের কোন কোন বাক্য সংশয় তৈরী করার সুযোগ করতে পারে, আমি সুনির্দিষ্টভাবেই সেগুলো উল্লেখ করেছি।

মুজিব বাহিনী বলে অফিসিয়ালী কিছু ছিলোনা বলে আমি একে বিএলএফ বলছি। এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আপনার যে মনোভাব, সেটি আমার থেকে খুব আলাদা কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ও তখন বিভিন্নমুখীতা ছিলো। প্রত্যেকে প্রত্যেকের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা করেছে। সিরাজ শিকদার একদিকে পাকিস্তান আর্মির সাথে যুদ্ধ করেছেন অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধরত বিরোধীমতদের কাছ থেকে ও অস্ত্র লুট করে নিয়েছেন ভবিষ্যত বিপ্লবের প্রয়োজনে। সোভিয়েত পন্থী'রা ও নিজেদের গেরিলা বাহিনী গঠন করে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগের র‌্যাডিকাল তরুনরা দীর্ঘমেয়াদে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখার জন্য মুজিব নগর সরকারকে পাশ কাটিয়ে আলাদা করে বিএলএফ গঠন করেছে। নুরুজ্জামান মানিকের তথ্য মতে কাদের সিদ্দীকি'র বিশাল বাহিনী ও ওসমানীর কমান্ড থেকে আলাদা ছিলো।
এই বহুমুখী ধারগুলোর সমালোচনা এতোবছর পর নিরাপদ দূরত্বে থেকে আমরা করতে পারি কিন্তু তাতে বাস্তবতা বদলায়না। হিসেব করে দেখলে দেখা যাচ্ছে- সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটা বড় অংশই মুজিব নগরের সরাসরি নিয়ন্ত্রনবহির্ভুত ছিলো।

আমরা এদের সবাইকে সন্দেহ করবো?
আপনার পোষ্টের কোন কোন বাক্য এবং হিমু'র কোন কোন মন্তব্য বিএলএফ এর যুদ্ধকালীন ভূমিকা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা তৈরী করতে পারে, আমি সেটা উল্লেখ করেছি।

দুঃখিত-এই আপত্তিটা রয়ে গেলো আপনার গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টে।
আলোচনার জন্য কৃতজ্ঞতা।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জিফরান খালেদ এর ছবি

আমি একথা বলিনি বা বোঝাতে চাইনি যে, মুজিব বাহিনী বা বিএলএফরা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমার মন্তব্যেও তাঁদের আত্মত্যাগের ব্যাপারে আমার শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছি। সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের প্রশ্নে মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ-এর কৌশল ও

এই যে আলাদাভাবে মুজিব বাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যে আপনার শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হলো, এটাই সবচেয়ে বাজে ব্যাপার। আপনার 'ক্যাটাগরাইজেশান' এখানে মার খায় আরকি।পরবর্তী জীবনে মহিউদ্দীন-রশীদের মতো না হলে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা একটা অনিবার্য সত্যের মতো।

আমি আমার আব্বার সাথে যোগাযোগ করে দেখছি ওনাঁর ভাষ্য কী এ-ব্যাপারে। একজন মুক্তিযোদ্ধা থেকে জানাই ভালো। জেনে এখানে জানাচ্ছি।

তবে, এমনতরো আলোচনার, বিশেষ করে হিমু ভাই-এর 'মুজিব বাহিনী সব পণ্ড করে দিতো' ধরণের কথাবার্তার জন্যে একদিন হয়তো মুক্তিযোদ্ধা আর মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা বলে দু'শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব ঘটবে। এইটাই হইলো আর্মচেয়ার ফাইটিং-এর ফ্যাটালিটি।

ভারতের অমন বাহিনী গড়বার উদ্দেশ্য নিয়েই আলোচনাটা দরকার। শুধু টার্মিনোলোজিটা ঠিক রাখবার সময় পা যেন না পিছলায় আমাদের।

হিমু এর ছবি

খালেদ সাহেবের কাছ থেকে জানার জন্যে খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আর এই "পণ্ড করার" অভিযোগ আমার না, কারণ আমি সেখানে ছিলাম না, ১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করা কয়েকজন নিয়মিত বাহিনীর সদস্যের [যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন] কাছ থেকে শোনা, এবং ১ নং সেক্টর কমাণ্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এর লিখিত অনুযোগ থেকে জানা। তিনি তাঁর "লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে" বইতে একটা অধ্যায়ই রেখেছেন এর ওপর।

আর টারমিনোলজি নিয়ে যখন কথা উঠলো, মুক্তিযোদ্ধা টার্মটা জেনেরিক। মুক্তিফৌজ [নিয়মিত বাহিনীর সেনা, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ] আর গণবাহিনী [যুদ্ধ করতে আসা সাধারণ মানুষ যারা ভারতে প্রশিক্ষিত হয়েছিলো]কে পরে যৌথভাবে মুক্তিবাহিনী নাম দেয়া হয়। এর বাইরে ছিলো ব্যক্তিবিশেষের বাহিনী, কাদেরিয়া আর হেমায়েত, আর ছিলো বিএলএফ। বাহিনী নির্ধারিত হয় কমান্ড অনুযায়ী। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধাও মুক্তিযোদ্ধা, আবার মুজিববাহিনীর যোদ্ধাও মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নাই।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

Nat এর ছবি

আমার জানামতে 32 special BCS এ আমার বন্ধুদের বাবাদের মুক্তিযুদ্ধ্ব বিষ্য়্ক প্রশ্নে সুস্প্ষ্ট্ভাবে জানতে চাওয়া হয়েচে বাবা মুজিব্বাহিনীর না মুক্তিবাহিনীর।

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাসান ভাই ও পাণ্ডবদা,

আব্বার সাথে কথা হলো। কার্ডে খুব বেশি টাকা ছিলো না। আর, মাঝখানে কথাবার্তা 'তিন বিঘা' আর 'বেনাপোলে'র দিকে ঘুরে গেলো। হাসিনার সাম্প্রতিক সফর এবং ভারত রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মুখপাত্রের কূটনৈতিক শিষ্টাচারহীন প্রেস বক্তব্য।

আব্বার সাথে কথা বলে আমি আসলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আব্বার সাক্ষাতকার বা অভিজ্ঞতা তুলে রাখবার জন্যে এখন উদগ্রীব হয়ে আছি। দেশে গেলে এইবার, আব্বার কোনোকিছু এরমধ্যে না হলে এই কাজ করবোই।

হাসান ভাই,

আব্বা বললেন, ততকালীন ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের বাইরে অবস্থান করতো অনেকাংশেই এবং খুবই শক্তিশালী ছিলো। আওয়ামী লীগের এক শেখ মুজিব আর চট্টগ্রামের এম. এ. আজিজ ছাড়া স্বাধীনতার কথা স্পষ্ট করে কোনো আওয়ামী নেতা তখন শোনাননি। বেশিরভাগ-ই কনফডারেশান-এ আগ্রহী ছিলেন। কারণ, একট স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখা, সেই স্বপ্ন অর্জন, সেই অর্জনের পথে যে ত্যাগ-তিতিক্ষা - এত বড় কিছুর বাস্তবতা নিয়ে বেশিরভাগ আওয়ামী নেতারাই সন্দিহান ছিলেন।

এবং, এখানেই ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণতম ভূমিকা। বিশেষতঃ সিরাজুল আলম খান আর আ.স.ম. আব্দুর রব যেভাবে ছাত্রদের মাঝে স্বাধীনতামাকিতাকে জাগিয়ে তুলেছেন, সেটা এখন বেশিরভাগ মানুষই ভুলে গেছেন। আব্বা মুক্তিযুদ্ধের পেছনে মুজিব এর পর সিরাজুল আলমকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ততকালীন ছাত্রলীগের স্বাধীনতাকামি অংশের বড় অংশের কাছে তিনিই মূল ফিগার ছিলেন, আ.স.ম. আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজ সহ। মনি যদিও পাওয়ারফুল ফিগার ছিলেন, এবং সিরাজুল আলম খান এর সমগুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, কিন্তু, তার প্রতি অনুগত অংশের আকৃতি তুলনায় বেশ ছোট। এবং এটাও আব্বা বললেন যে, বিপ্লবী হিসাবে সিরাজুল আলম খান আর আ.স.ম. আব্দুর রব যতখানি সফল ছিলেন, দেশ পুনর্গঠনে তাদেরকে সেই দুর্দান্ত শক্তিতে আর তেজস্বী হিসেবে পাওয়া যায় নাই। এবং, শেখ মনিই বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নেতা হিসেবে আবির্ভুত হতেন, যদি শেখ পরিবারকে বাঁচানো যেত। শেখ মনির পরাক্রমী ব্যক্তিত্ব ও মুজিবের ভাগিনা হিসেবে আলাদা একটা যে ক্ষমতা ছিলো ছাত্রদের মাঝে, সেটাও বললেন। বিএলএফ এ দু'টি ঘরাণা ছিলো - বিপ্লবী ও প্রতি-বিপ্লবী। বিপ্লবী অংশ সিরাজুল আলম খানকে মানতেন, আর প্রতি-বিপ্লবী মনিকে।

আব্বা ব্যক্তিগতভাবে চট্টগ্রাম কলেজে ১৯৭০ (মনে হয় ৭১ বলতে চেয়েছেন) এর ১লা জানুয়ারী আব্দুর রবে'র ভাষণে প্রথম স্বাধীন দেশ ব্যাপারটা নিয়ে আলোড়িত হয়েছিলেন। 'স্বাধীনতার কমে আর কিছু চলবে না' স্পষ্ট কথা ছিলো রবের।

সাধারণ মানুষ মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞাত ছিলো না, বা বিশেষতঃ ছাত্রলীগ তাজউদ্দীন-নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ছিলো না। তাদের একমাত্র নেতা ছিলো শেখ মুজিব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মানুষেরা যখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রকে মাত্র ছ-সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে ফোরফ্রন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছিলো, এবং এর ফলে প্রচুর ছাত্র শহীদ হচ্ছিলো, তখন শীর্ষ ছাত্রনেতারা ছাত্রলীগের ছেলেদের উন্নত ট্রেনিং, যা দিয়ে আসলেই হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করা যাবে, তার জন্যে ভারতীয় হাই কমান্ডের দ্বারস্থ হোন। যেহেতু ছাত্রলীগ শেখ মুজিব ছাড়া আর কাউকেই নেতা মানতো না, তারা সঙ্গত কারণেই তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে থাকা সরকারকে তোয়াক্কা করেনি। আব্বা গিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামি বিপ্লবী হিসেবে। আব্বার বন্ধুরা ছাত্রলীগের হওয়াতে আব্বাও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তাদের সাথেই এবং ছাত্রলীগের একজন হয়েই। দেরাদুন আর লোয়ার হাফলং ছিলো দু'টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। উবানের অধীনে।

ওসমানীকেও সর্বাধিনায়ক হিসেবে ছাত্রলীগ এর শীর্ষ নেতৃত্ব ওভাবে স্বীকার করেনি। তারা তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ভূমিকার জন্যে। কিন্তু, মনে হয় না, ওভাবে দেখতেন। ওনাঁর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন সিরাজুল আলম খান ও আব্দুর রব। ছাত্ররা ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবস করতে দেয়নি এবং বিভিন্ন জায়গায় উষ্কানীমূলক (প্রোভোক করবার কথা বলছেন) ততপরতার মাধ্যমে জনগণের কাছে পাক-সরকারের নির্মম ছবি তুলে ধরে। জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী আর মার্চ এর পত্রিকাগুলো দেখলেই এর প্রমাণ মিলবে স্বাধীনতার আগুন কারা জ্বালিয়েছিলো।

বিএলএফ এর সাথে টাঙ্গাইল এবং আর কিছু জায়গা ছাড়া কোথাও মুক্তিফৌজের সমস্যা ছিলো বলে মনে করেন না আব্বা। এবং, চট্টগ্রামসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঐ ঐ জায়গার রেজিমেন্টের ভার্চুয়াল কমান্ডারশিপ বিএলএফ-এর নেতৃত্বের কাছেই ছিলো। মানে, সেনাবাহিনীও এই নেতাদের অনুগামী ছিলেন। কারণ, বিশাল অংশের কাছে এই ছাত্রনেতারাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কমান্ডিং ফিগার ছিলেন। আওয়ামী নেতারা ছিলেন না। আব্বার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তা-ই।

আরো অনেক কিছু বলেছেন, কী কী মিস গেলো বুঝতে পারছি না।

পাণ্ডবদা,

আব্বা যা বললেন, দিগন্তদা তা উপরে বলে দিয়েছেন। ভারতের ততকালীন শীর্ষনেতাদের কথা ছিলো 'এতদিনে পাওয়া গেছে, পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলো।' এর ফলাফল তো দেখছেন। আমাদের সাথে ভারতের আচরণ, আর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক। শত্রুর শক্তি চিরতরে খর্ব করা তো বিশাল ব্যাপার। এইটা ভারতের লাভ। বাংলাদেশকে খেয়ে ফেলবার একটা গোপন উদ্দেশ্য নিয়ে বিএলএফ এর পিছনে অর্থ ঢালা, এইটার স্পষ্ট বিরোধীতা করলেন আব্বা। বাস্তবতাটাই সেরকম ছিল না। বরং বেশ বিরক্তই হলেন। এখন ক্ষতির সম্ভাবনা তারচেয়েও বেশি বলে মনে করেন।

বিএলএফকে নিয়ে বিতর্ক তোলা চীনপন্থীদের পুরনো কাজ। মস্কোপন্থীরাও ফিরতে ফিরতে যখন দেখলো যুদ্ধ শেষ, তাদেরও এইটা একটা পুরোনো কাসুন্দি যে বিএলএফ ভারতের দালাল, ভারতের স্বার্থরক্ষা ইত্যাদি।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিএলএফ নাকি মুক্তিফৌজ - এই প্রশ্নটাতেই আব্বা থমকে গিয়েছিলেন। বললেন, 'এটা কী ধরণের প্রশ্ন?'

সেই কন্ঠস্বরে একজন মুক্তিযোদ্ধার আহত হওয়াটা টের পাই। এবং, এই ব্যাপারে নির্মোহ থাকতে পারি না।

আপনার এই পোস্টে আপনার আর হিমু ভাইয়ের বিভিন্ন মন্তব্য আর এই পোস্টটার মধ্যেই যে ছদ্ম-নির্মোহ অনুমিতিগুলো আছে, সেগুলোর প্রতি আপত্তি জানিয়ে রাখলাম ধিক্কারসহ। আমার এই আপত্তি ও ধিক্কার একান্তই ব্যক্তিগত, আমার ধারণা আরো অনেকেই এই অনুভূতি লালন করবেন এমনতরো ইম্পলিকেশানে। আপনার বা হিমু ভাই এর প্রতি আমার আলাদা কোনোভাবে বিরোধীতা নেই।

আমি আব্বার সাথে আরো কথা বললে প্রাসঙ্গিক তথ্য জানিয়ে দেবো। তবে ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্যে। অনেক কিছু স্পষ্ট হলো।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

পড়লাম। কিছু জানলে আপনাদের ও জানাবো।

ধন্যবাদ জিফরান ভাইকে, দ্রুততর সময়ে এ বিষয়ে ন্যূনতম আলোকপাতের জন্য।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

যুধিষ্ঠির এর ছবি

মূল লেখা আর মন্তব্যগুলো থেকে অনেককিছু জানলাম, যেগুলো সম্পর্কে অসম্পূর্ণ আর অস্পষ্ট ধারনা ছিলো। বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যের কিছু কিছু দিক নিয়ে আপনার উত্তর আশা করছি, তবে এটাও বুঝতে পারছি, যে কিছু কিছু বিষয়ের মীমাংসা হবে না, আর বাকি কিছু বিষয়ে উত্তর দিতে হলে আরও একটু গবেষনা হতে হবে। সেটাই হোক। সময় নিয়ে বিষয়টির ফলোআপ লেখা দিন কিছুদিন পর।

মূল লেখায় লেখকের নিরপেক্ষ থাকার বা ভারসাম্য রাখার প্রচেষ্টাটা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধর্ম্মপুত্র, একটা বিষয় কি লক্ষ করেছেন, আমার উত্থাপিত মূল প্রশ্নগুলো নিয়ে কিন্তু খুব বেশি আলোচনা হয়নি - নিষ্পত্তিতো দূরে থাক। এখনো কিছু মন্তব্য আছে যেগুলোর উত্তর হয়তো আমার দেয়া উচিত। কিন্তু আমি ভেবেছি আমি তা করবোনা। কারণ, এই পোস্টের আলোচনা ইতিমধ্যেই ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে গেলে আমাদেরকে পড়তে হবে, অন্যদের সাথে কথা বলতে হবে, গবেষণা করতে হবে, ভাবতে হবে। এখানে হুটহাট কিছু বলার বা লেখার উপায় নেই। যে সব বিষয়ের মীমাংসা হবেনা সেগুলোতে সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের জন্যই মীমাংসা হবেনা। যেসব বিষয়ে নানা ধরণের মত বা ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে সেগুলোর ব্যাপারে নিরপেক্ষ অনুমিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। যেন এভাবে সত্যতে পৌঁছানো যায়। আমি অন্ততঃ অমনটাই ভেবেছিলাম।

কিন্তু নিরপেক্ষ অনুমিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন আমার সম্ভবতঃ তা নেই। আমার অনুমিতিতে এর মধ্যেই "ছদ্ম-নির্মোহ" ট্যাগ পড়ে গেছে "ধিক্কারসহ"। কোন কাজ করার সময় কেউ যদি ছদ্মাবরণ নেয় বা কথা বলার সময় ভ্রান্ত ধারণা দেবার চেষ্টা করে তাহলে বুঝতে হবে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন। আমি এমন কোন লেখা লিখতে চাইনা যা পাঠকের কাছে শেষ বিচারে লুকায়িত উদ্দেশ্যসম্পন্ন বলে মনে হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আমি নিরপেক্ষ নই, বরং প্রবলভাবে পক্ষপাতিত্বসম্পন্ন। আমার পক্ষপাতিত্ব বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশের মানুষ আর বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতি। মুক্তিযুদ্ধকালীন কোন বিশেষ দল, কোন বিশেষ নেতা, কোন বিশেষ বড়ভাই, কোন বিশেষ রঙের আদর্শ বা কোন বিশেষ লবীর প্রতি আমার কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। আমি জানি এভাবে টিকে থাকাটা মুশকিল, তবু আমি আমার মনোভাব পরিবর্তন করতে আগ্রহী নই। আমি আমার নিজের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখি। এই ব্যাপারে কারো কোন সার্টিফিকেটের আমার দরকার নেই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জিফরান খালেদ এর ছবি

আপনি ভারতীয় স্বার্থ নিয়ে চীনপন্থী (মাওবাদী) যে কমুনিস্ট শাখা সেটার উত্থানের আশংকা সমেত যে চমতকার পর্যবেক্ষণ দিলেন, এবং শেষে গিয়ে যেভাবে বিএলএফ এ থাকা যোদ্ধাদের বর্তমান বা সাম্প্রতিক বা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তাদের একটা অসুদেদ্দশ্য নিয়ে যে সন্দেহ উপস্থাপন করলেন, তাতে এই 'সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মিশে যাওয়া' যোদ্ধারা কিভাবে তালিবানদের (অসঠিক প্রেক্ষাপটীয় প্রতিতুলনা যদিও) মতো করে দেশটাকে খেয়ে ফেলতে চাচ্ছে, এরকম একটা কৌতূহল বা চিন্তা তো আসেই।

সেই সংশয় তৈরি করবার জন্যে আপনার পোস্ট সফল। বিএলএফ এর যোদ্ধারা কে কোথায়, কী করছে তারা, খোঁজ আসলেই নেয়া দরকার।

সার্টিফিকেট, পরিষ্কার/ অপরিষ্কার মনোভাব, ধারণা - এরম আত্মাভিমানী চলক বাদ দিলেও চলে। আপনার সংশয়-মাখানো তীর লক্ষ্যচ্যুত হয়না তাতে।

যোগ্যতা নিয়ে আপনার দ্বিধা অমূলক মনে হয়নি। অন্ততঃ যদ্দিন না, এধরণের দুর্বল প্রতিতুলনা নিয়ে আসবেন। আর, বিএলএফ এর কার কার ব্যাপারে সন্দেহ, খুলে বলুন। কী কী করেছেন তারা? আমি জানি না। আমার আব্বা এবং চাচারাও এইসবে লিপ্ত (আপনার টোন খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দেয় যেহেতু) থাকতে পারেন। এইসব অন্তর্নিহিত ইম্পলিকেশানের কারণেই 'নির্মোহ'-টা ছদ্ম। অবশ্য আমার ভুল মনে হতেই পারে।

বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে আপনার উদ্বেগ দেখে ভাল লাগলো। আমরা অনেকেই হয়তো এটা ধারণ করি না ভেবে খারাপও লাগলো।

'ধিক্কার' বহাল রাখতে বাধ্য হলাম আসলে। সমস্ত পর্যবেক্ষণের শেষে আলোচনা করতে বলে যেভাবে অনেক মুক্তিযোদ্ধার জন্যে ভাঙ্গা পাটাতন এগিয়ে দিলেন ...

আমি বিএলএফ এর ব্যাপারে কম্পিটিং কিছু ভাষ্য পেয়েছি। সেগুলো যোগ করছি শীঘ্রি।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের যেকোনো অসতর্ক বর্গীকরণ/শ্রেণীকরণ এমুহূর্তের প্রেক্ষাপটে বিপজ্জনক ও আত্মঘাতী হতে পারে।

সত্যিকার অর্থে এই পোস্ট ও প্রতিক্রিয়ায় অনেক কিছু যেমন জানতে পারলাম, অনেক কিছুই বোঝাও গেল।

আমি প্রসঙ্গত এম আর আখতার মুকুল (মুজিবনগর সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতরের পরিচালক) এর গ্রন্থ আমি বিজয় দেখেছি থেকে খানিকটা উদ্ধার করছি। অনুল্লেখ্য নয়, লেখকের মন্তব্য একান্ত লেখকের। আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত হতেও পারি নাও পারি।

"একাত্তরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে এইযে, মুজিব বাহিনীর সৃষ্টি সম্পর্কে এবং প্রস্তুতি পর্বে মুজিবনগর সরকার এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। উপরন্তু এই বাহিনী কোনো সময়েই নির্বাসিত মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে আনুগত্য ঘোষণা করেনি।অথচ এঁরাও ছিলেন দেশপ্রেমিক এবং এঁরা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।

... ....

... এঁরাই একরকমভাবে বলতে গেলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।

... ...

তবু একটা কথা বলা চলে যে, মুজিব বাহিনীর সৃষ্টির আসল ইতিহাস আজও পর্যন্ত রহস্যের অন্তরালেই রয়ে গেল। ... এছাড়াও মুজিবনগর সরকার এবং তার সেক্টর কমান্ডারদের অজান্তে যখন মুজিব বাহিনী বাংলাদেশের পশ্চিম রণাঙ্গন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল তখন মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর মধ্যে যে ক'টা সংঘর্ষ হয়েছিলো সেসব ঘটনা তো বিস্মৃতির অন্তরালেই রয়ে গেল ! আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য এসব ইতিহাস লেখার কি এখনও সময় আসেনি?" (আমি বিজয় দেখেছি, প্রথম অনন্যা প্রকাশ ২০০৭, পৃ: ৩৯-৪০)

এবিষয়ে সত্যিই আমি তেমন কিছু জানি না। আর জানি না এই জন্য যে 'ইতিহাস লেখার' সময়টা কখনো আসেনি। তবু বলি, কথিত চীনপন্থী অপপ্রচার আর কথিত অন্ধ আওয়ামীপন্থার মাঝখানে কোথাও সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার (হোন তিনি যেকোনো 'বাহিনী'র) ইতিহাস ঘুরপাক খাক, এ যেন কারও অভীষ্ট না হয়। কষ্ট লাগে তখন। ভয়ও লাগে । কারণটা আবার বলি - মুক্তিযোদ্ধাদের যেকোনো অসতর্ক বর্গীকরণ/শ্রেণীকরণ এমুহূর্তের প্রেক্ষাপটে বিপজ্জনক ও আত্মঘাতী।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

বর্ষা এর ছবি

মুজিব বাহিনীর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলে এই নিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর অপপ্রচারও বন্ধ হবে। অনেক কিছু জানতে পারলাম। প্রিয় পোষ্টের সাথে যুক্ত করলাম।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

জিফরান খালেদ এর ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেছনে কেন আরো অর্থ ঢালা হলো না, বা কেন অসংখ্য ছাত্র সেনাবাহিনীর ছাউনি ছেড়ে পালিয়ে মুজিব বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়ানে শুনুন। ছ'পর্বের এটি। পরপর আছে পাশেই।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দেখলাম।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তবু আমরা তাকে 'মুজিব বাহিনী'ই বলবো- মুক্তিযোদ্ধা নয়, তার উদ্দেশ্য/ বিধেয় নিয়ে প্রশ্ন তুলবো। হাহ!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

জিফরান, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মূল্যবান একটা সাক্ষাৎকারের লিংক দেবার জন্য।

মুক্তিযোদ্ধা জনাব কামরুল ইসলামের সাক্ষাৎকারটি মন দিয়ে শুনেছি। অনেক অজানা তথ্য জেনেছি। জীবন-সায়াহ্নে তাঁর দীর্ঘদিন আগের স্মৃতিচারণে অনেক তথ্য বাদ পড়া স্বাভাবিক, সাক্ষাৎকার শুনতে শুনতে সেগুলো নিয়ে আমার নিজের মনে জাগা প্রশ্নগুলো টুকে রাখছিলাম। কিন্তু শেষ পর্বে এসে বুকে একটা ব্যাথা অনুভব করলাম যেন। থাক, প্রশ্ন গুলো নাহয় পরেই করি।

মনে হল আমাদের সামনে থেকে সে সময়ের সব মানুষগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছেন। কত স্বপ্নছিল আব্বার কাছে সেই সময়ের কথাগুলো শুনব। এখনকার মত আমার মনের দ্বন্দ্বগুলো তখনো ফুটে ওঠেনি। কখনো আব্বাকে সেভাবে চেপে ধরা হয়নি কথাগুলো বলার জন্য। একাত্তরে কারাবন্দী হয়ে যাওয়ায় অক্ষমতার একটা গ্লানিও কাজ করত তার মনে। আর, কি দেখার ছিল কি দেখছি --- এই নিয়ে একটা বিরাগ তো ছিলই। কখনও নিজ থেকে কিছু বলতেন না সেসব কথা। গায়ের দাগ দেখে প্রশ্ন করায় শুধু কারাগারে নির্যাতনের কথা, আর যুদ্ধের শেষদিকে মৃতের অভিনয় করে পালিয়ে যাবার কথাটুকু ছাড়া, বেশি কিছু জানা হয়নি তাঁর কাছ থেকে।

আপনার আবেগ কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারি। অনুরোধ রইল পাণ্ডবদার প্রকাশভঙ্গির দিকে চেয়ে আপনার মনে যে ক্ষোভই জন্ম নিক, আপনার বাবার কথাগুলো আমাদেরকে জানান।

মনের ভিন্ন ভিন্ন ধারণাগুলো মেলানোর জন্য মনে প্রশ্ন আসলে, পূর্ব-অনুমিতির ভিত্তিতে এর প্রকাশ আবেগপ্রবণ হতেই পারে। সে হোক, আপাতত সেদিকে না তাকিয়ে পাণ্ডবদা আর আপনার কথোপকথন থেকে তথ্যগুলো ছেকে নিতে অনুসন্ধানী পাঠকের অসুবিধা হবে না।

মামুন হক এর ছবি

লেখাটা পরে আসলে বিরক্তি চলে আসলো। আদিপাপের প্রায়শ্চিত্তই হলোনা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভেদাভেদের যৌক্তিকতাটা কোথায়? ভারতের আসল উদ্দেশ্য বা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শ্রেনীকরণের বিলাসী ইতিহাস চর্চাটা রাজাকারদের বিচারের পরে করলেই বোধ হয় যুক্তিযুক্ত হতো।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

সবিনয়ে একটা কথা বলতে চাই। কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়।

প্রগতিধারীদের Religious-like প্রশ্ন-বিমুখতা আমাকে খুব বিব্রত করে। হাজার বছর ধরে সবাই যখন জানে আর বিশ্বাস করে যে পৃথিবীই সৃষ্টির কেন্দ্র, কোপার্নিকাস-গ্যালিলিও রা এলেন আজগুবি নতুন প্রশ্ন নিয়ে, বলে কিনা পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে --- বিশ্বাসীরা তো মারমুখী হয়ে তেড়ে আসবেই।

বুঝতে পারি, মধ্যযুগের বিশ্বাসীদের ভুত এখনো আমাদের ঘাড় থেকে নামেনি। নাহলে হোকনা আজগুবি, কোন প্রশ্ন করে কোন বিষয়কে যদি নতুন করে জানতে পারি তার প্রতি এত বিমূখতা কেন?

জিফরান খালেদ এর ছবি

বলেছিলাম আমি দু'টো কম্পিটিং ভাষ্য পেয়েছি যা এই পোস্টের জন্যে সহায়ক হতে পারে। একটি পেয়েছি ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স এর সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন একজনের কাছ থেকে। তার চিঠিটুকু আমি সংক্ষেপে তরজমা করে দিচ্ছি নিচে। আরেকটি একজন আওয়ামী-বিরোধীর বিএলএফ এর উপরে লিখা বই থেকে অংশবিশেষ। এটি ইংরেজীতেই দিলাম। অমি পিয়াল এটি পাঠিয়েছেন, এর সাথে ইন্ডিয়ান আর্মি আর্কাইভ থেকে তিনটি পাতার স্ক্যান কপি। ওগুলো কিভাবে দিতে হবে এখানে যেন সবাই দেখতে পায়, ওটা জানি না। জেনে নিয়ে যোগ করছি।

প্রথমটি হলো ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স এর যোগাযোগ আছে যে মানুষটির ( সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশ করতে পারছি না), তার আমাকে লিখা চিঠির তরজমাটুকু। কিছু বিষয়ের বাইরে কথা আছে, ওগুলো ধর্তব্য নয়।

----- '
বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া প্রসঙ্গে র সবসময়ই বেশ খানিকটা সন্দেহ পোষণ করতো। অনেক বাঙ্গালী সামরিক অফিসরেরা পূর্বে আইএসআই এর সদস্য ছিলেন এবং জিয়া তাদের একজন। জিয়া আসলে একজন আইএসআই এর উচুঁ পদে থাকা অন্যতমদের একজন ছিলেন এবং গুজব ছিলো যে তিনি পাকিস্তান আর্মির কাছে তথ্য পাচার করছিলেন। জিয়ার এই আইএসআই এর সাথে সম্পর্কের গুজব এবং তার নিস্ক্রিয় থাকা ওসমানীর সাথে জিয়ার প্রচন্ড বিরোধের জন্ম দেয় যার পর ওসমানী জিয়াকে বহিঃষ্কার করতে চেয়েছিলেন সেক্টর কমান্ডার-এর পদ থেকে। পাকিস্তান আর্মিতে থাকা বেশিরভাগ বাঙ্গালি অফিসারই দক্ষতা ও কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ১৯৬৫ এর ইন্দো-পাক যুদ্ধে। যার ফলে, এই অফিসারদের প্রতি র সবসময়েই একটা সন্দেহ পোষণ করেছে এই আর্মি অফিসারদের মধ্যে গভীরে প্রোথিত ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টের কারণে এবং ফলতঃ আর্মি অফিসিয়ালরা খুব বেশি সামরিক সহায়তা ভারত থেকে পায়নি। অবশ্য এই অফিসাররাও ভারত থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চেয়েছিলেন যেকোনোভাবে, অন্ততঃ বেশ খানিকটা সময়। তো, এটা ছিল দু’পক্ষ থেকেই অপরের প্রতি অবিশ্বাস। বাঙ্গালি অফিসারদের ভয় ছিলো পাকিস্তান যদি পরাজিত হয়, তবে এই বিজয়ের কৃতিত্ব নিয়ে নেবে ভারত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয়।

বিএলএফ অপরপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক শক্তির মুখপাত্র ছিল এবং এর নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের সাথে ৬০’এর দশকের পুরোটা সময় ধরেই র এর একটা ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিলো। শেখ মুজিব, সিরাজুল আলম খান, শেখ মনি এন্ড গং ভারতের সাথে সবসময়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করেছেন। বস্তুতঃ ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স সব সময় পাকিস্তানের কিছু রাজনীতিবিদের সাথে একটা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছিলো এবং এই যোগাযোগরক্ষা প্রকল্পের পূর্ব পাকিস্তানের সূত্র ছিলেন এঁরা। র অনুভব করছিলো যে বিএলএফ যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি নেতৃত্ব দেবে, পাকিস্তান হতে ফেরত বাঙ্গালী আর্মি অফিসাররা নয়।

ভারত বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান আর্মি হতে চলে আসা আর্মি অফিসারদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিতে মানা করেছিলো। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু তিনি যা সঠিক মনে করেছিলেন, তা-ই করেছিলেন এবং তার তখনকার আগ্রহ ছিলো একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন করে ভারতের সাথে একটা ভারসাম্য বজায় রাখবার ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত ধুরন্ধর (ইতি অর্থে) রাজনীতিবিদ ছিলেন। ভারতের মতো বিশাল একটা শক্তির একদম ভিতরে একটা আলাদা দেশ চালানো বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো।

এমন একটা ঘটনা কিন্তু আছে যেখানে বঙ্গবন্ধু ভাসানীকে তার বিরূদ্ধে সমাবেশ করবার জন্যে অর্থ পাঠিয়েছিলেন যেখানে ভাসানী বঙ্গবন্ধুকে অভিযুক্ত করবেন এই বলে যে বঙ্গবন্ধু ভারতের অনুগত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন শুধু এবং এই সমাবেশকে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ভারতকে বলবেন জনগণ ভারতের সাথে এত মাখামাখি পছন্দ করছে না। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের পরে ভুট্টোর সাথেও একটা পর্যায়ে যোগাযোগ রেখেছিলেন। যেটা আমাদের বোঝা জরুরী এক্ষেত্রে, তা হলো, বঙ্গবন্ধুর অনেকগুলো সাংঘর্ষিক স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্যে চেষ্টা করতে হলো, আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ, অনেক সময় যেক্ষেত্রে উনি পুরোপুরি সফল ছিলেন তা বলা যাবে না।
এবং, এইরকম কিছু ব্যার্থতাই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

বিএলএফ সহ বা ছাড়া বাংলাদেশের জন্ম আটকানো যেতো না। ১৯৭১ এর যুদ্ধ একটা ট্রিগার ছিলো মাত্র। পাকিস্তান শুরু থেকেই আনসাস্টেইনেবল ছিলো। ও ধরণের ঔপনিবেশিক অঙ্গরাজ্য পালার দিন শেষ হয়ে গিয়েছিলো।

বিএলএফ পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রুপিঙ্গ-এর ফলে বিভক্ত হয়ে যায় এবং ফলতঃ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সামরিক নেতৃত্ব তারা নিতে পারেনি। বস্তুতঃ তাদের একাংশ তাদের যুদ্ধচলাকালীন সময়ের যে সামরিক চরিত্র, তা বজায় রেখেছিল রক্ষীবাহিনীতে। রক্ষীবাহিনী সামরিক বাহিনীর একটা অল্টারনেটিভ ছিলো, এবং উন্নততর অস্ত্রে সজ্জিত ছিলো। সেনাবাহিনী এব্যাপারে সবসময়ে অভিযোগ জানিয়েছিলো। কিন্তু, রক্ষীবাহিনীর ইন্টেলিজেন্সও ব্যার্থ হয়েছিলো প্রচন্ডভাবে যেকারণে ১৫ই অগাস্টের হত্যাকাণ্ড থামাতে পারেনি তারা।'

এই ভাষ্য আমার অনেক কম্পেলিং মনে হয়েছে। একে হয়তো নির্মোহ বলা গেলেও যেতে পারে।

নুরুজ্জামান মানিক ভাই আমাকে জানাচ্ছেন যে 'ওসমানি জিয়াকে মে মাসেই ১ নং সেক্টর থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং পরে জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট জারি করেছিলেন।' এব্যাপারে তিনি লিখেছেন এখানে

অপর ভাষ্য একটা বই এর অংশবিশেষ। এটি হুবহু তুলে দিচ্ছি। কাজে লাগতে পারে যে কারো। বই এর নাম ও লেখকের নাম আমাকে পিয়াল ভাই দিতে পারেননি তখন। পাওয়ার সাথে সাথেই ওটি যোগ করে দেবো। এখানে উবানের ভাষ্য আছে বেশ কিছু ব্যাপারে। দু'টি অংশে ভাগ করে দিলাম এটি।

----- 'Even though Mujib himself was not present among the freedom fighters, his devoted and worthy disciples were there. Sheikh Fazlul Hoque Moni, Sirajul Alam Khan, Abdur Razzaque and Tofael Ahmed were unflinching Mujibists. Tajuddin, on the other hand, was different and the four young leaders knew it. And, that is why they had no confidence in him. They considered Tajuddin to be Mujib's rival. Even Mujib started thinking like that - especially after the birth of Bangladesh. Consequently, he removed Tajuddin from his Cabinet at the first opportunity. For this his excuse was 'Tajuddin's attachment for India' . But the real reason was different. Sheikh Mujib, the leader, who was an absentee during the Liberation War, was finding it difficult to face Tajuddin who had worked in the fields, bazaars and ghats during the period of the war. The freedom fighters knew co-fighter Tajuddin directly, and not Sheikh Mujib. That is why Mujib had little faith in the first Bangladesh army composed of freedom fighters. And so he created and placed the Rakkhi Bahini over the military institution's head. He promoted one or two of his faithful favourites in the army without caring for the rules of seniority. The result was that dissatisfaction became manifest in the army.

The four young leaders of the Mujib Bahini took up absentee Mujib's cudgel in the battlefield in 1971. They not only opposed Tajuddin, they were opposed to Osmany, Commander-in-Chief of the Mukti Bahini, as well. They also did not have a high opinion of the provisional government-in-exile because Tajuddin headed it. Rather, the four leaders had regard for Syed Nazrul Islam, the acting President, standing in for Sheikh Mujibur Rahman. The four young leaders did not like the fact that Tajuddin and his government were maintaining a good relationship with the Indian government and with Aurora, the General appointed by the government of India. Uban has written about this: 'The young leaders were always complaining that General Aurora had a special type of collusion with Tajuddin as both of them were putting pressure so that the Mujib Bahini came under their command and was directed by them, and did not remain under the young leaders who were disloyal to Tajuddin.' Uban further says, ' I tried my best to dispel this misunderstanding, but as it was rooted deep in the past, the old attitudes could not be put right and nothing of consequence happened.'

The young leaders were not, however, the type of men who would remain inactive and silent. They were carrying on with their job. In the words of Uban: 'In some way or other, the young leaders might have influenced the elderly MNAs and MPs and started the propaganda that the post of the Prime Minister had gone to the wrong man. According to them the post should have gone to somebody else. I think they had in mind Syed Nazrul Islam when they were saying it. The matter might take an ugly turn as the young leaders were almost mad to show Tajuddin his proper place. At this stage any break-up in the provisional government could be disastrous for the whole movement. I think I was able to make the young leaders understand that any such step would be dangerously risky for their mission and might even bring more fatal consequences during the independence and post-independence days of Bangladesh. Fortunately, they agreed with me though they had been roasting Tajuddin within themselves which, except for a few persons like me, no one else knew. I think Syed Nazrul Islam also warned them against it and that is how it was possible to get over a fatal political threat.'

One cannot but be dumbfounded at those happenings in the most critical days of the country how the freedom flag-carrying Awami League leaders were indulging in infighting and conspiracy among themselves when thousands were losing their lives at the hands of the Pakistani killers and hundreds of sisters and mothers were being violated! Was that patriotism?

Awami League, especially the Mujibists among them, used to think that the communists 'especially the pro-Chinese ones' were bigger enemies than the Pakistanis. About this Uban says, 'These four leaders inform us that many undesirable persons similar to the Naxalites are making inroads (into the Mukti Bahini) in Bangladesh and are getting training and weapons. They warn that these weapons will not be used against the Pakistanis; rather, they are being hidden in Bangladesh so that they can be used after independence in support of movements similar to the Naxalite one. In fact, they mention the names of the pro-Chinese communist leaders who are connected to some army officials of Bangladesh and through whose approval a large number of communist cadres were being recruited and trained and armed with weapons. The matter was brought to the notice of the authorities confidentially, but the result was nil.' Perhaps, like Uban, the four young leaders were also disappointed at this. One may feel a little surprised at the whole thing, because neither Tajuddin and his government nor the Indian government considered the communists to be their allies. So, one doubts the truth of the information supplied by the Mujibist leaders. Moreover, why cannot the communists, other than the Muscovite puppets, be patriots?

Let us now come to what the provisional government of Bangladesh thought about the Mujib Bahini. About this Uban writes, 'The provisional government of Bangladesh'

which meant Tajuddin ? never did agree with the leaders of the Mujib Bahini and took all their complaints lightly. Colonel Osmany accepted directives from his government and, though outwardly friendly to the young leaders, he did not like that there ought to be a separate force in the name of Mujib Bahini 'especially because that force which would not be under his overall command. General Aurora of the Eastern Command, who was appointed to direct the total operation, was unhappy about the thing as Mujib Bahini was not directly under his command. It seems the relationship between the two factions of the Awami League was like that of the snake and mongoose and that also during the Liberation War.'

A new dimension regarding the communist terror was added to the minds of the young leaders from another direction. 'The young leaders have seen Bangladesh's Naxalite men gossiping with the Indian officials in an aristocratic hotel of India. Perhaps the Naxalites lived in such hotels. The young leaders knew that during military rule in East Pakistan those people had been their worst enemies. It was originally against them that the youth organisation of the Awami League was established. The young leaders failed to understand why India was partial towards their identified enemy. So they mistakenly concluded that the goal of our government was to enable a communist party to stand on solid ground in Bangladesh. They also came to know through a reliable source that the Marxist workers and Moulana Bhasani's followers were getting separate training and weapons.' The young leaders saw Uban and, expressing their anger, told him, 'We never expected you to train the Marxists and Naxalites and give them weapons to nullify what we have achieved in the last 25 years.'

Getting annoyed at what the young leaders said, Uban went to meet Secretary Kao to verify the truth. Kao told him, in the words of Uban, 'Moulana Bhasani's Naxalites are getting their training in a different venue. They had not been put in my custody, because he was certain I would not keep any such promise and the young leaders would very soon find out where those trainees were. This would cause a very serious disturbance.' Uban was astonished at Kao's reply. He was not prepared for this discovery. Kao further said to him, 'We have done nothing against the wishes of the provisional government of Bangladesh and they think Bhasani's men are a very valuable resource against the Pakistanis. How can we disregard their advice? Tell your young leaders that even if they do not like it they have to swallow it. In the overall planning we will support them only as a key branch, but not as an entity possessing an independent political leadership. We cannot do anything if they do not walk on the right path. Let them go to the dogs.'

The Mujibist leaders became more careful after this. 'They would not divulge their secrets to the key personnel of their government - not even to the Prime Minister Tajuddin. They suspected that Tajuddin would capture power for himself after ousting Sheikh Mujib. They then told me sincerely, "Tajuddin is in union with D. P. Dhar, your communist minister. We do not trust either of them. Even your government do not know what plans they have about Bangladesh after the country's independence." The young leaders did not trust the provisional government or anyone connected with the government'. Uban informs us, 'They would not divulge any information even to Colonel Osmany, who had been working closely with Tajuddin, nor even to Lieutenant General Aurora who, they suspected, was acting as their political adversary for some unaccountable reasons. They would often tell me that General Aurora had been instigating Tajuddin to meet Indira Gandhi and putting pressure so that Mujib Bahini came under his command.'

There was also a big problem about the name Mujib Bahini. Neither the government-in-exile nor the military High Command was supporting this name. At that time, seizing an opportunity, the young leaders put forward the name of Mujib Bahini otherwise christened as the Bengal Liberation Force (BLF). While the Mukti Bahini was fighting splendidly on the border and inside Bangladesh, the Mujib Bahini, so-called, was in reserve in their Dehradun camp by the Indian faction of the Indian Army ostensibly with the nod from Delhi's political bosses.

But Mujib Bahani, which has no record of fighting during the entire period of armed struggle excepting trying to impose them as the political commissars, that was unacceptable to the regularly-constituted Mukti Bahini and the Guerrilla force, christened as the Bangladesh Defence Forces (BDF), maintained its entity with the informal sanction of the Indian Intelligence and General Uban. Mujib Bahini. It was not acceptable to the High Command when Uban proposed the name of the special force as Mujib Bahini. According to them, a doubt might be created in the minds of the people inside Bangladesh, and there might even be friction between the Mukti and Mujib bahinis. The young leaders did not agree to accept this decision of the High Command. They said, 'Let others say what they like, these boys will be known as Mujib Bahini inside Bangladesh.'

Followingter this arose the question of how the operational work would be shared between the two bahinis. General Aurora solved the problem. This is how he divided the responsibilities. Mukti Bahini would be responsible for up to 20 miles inside the border and the Mujib Bahini would be in charge of further interior regions inside the country. The young leaders also wanted this and so there were no differences there. Aurora, however, wanted the Mujib Bahini to work under his command, but they were not accepting it. Another problem cropped up with regard to the operational work. Another decision was needed in the matter relating to the method of infiltration after crossing the border and the army and the Mukti Bahini had been in charge of that.

The Indian army established wide corridors including safe houses all around Bangladesh and the boys of the Mukti Bahini did prepare an outstanding line of communication as far as the villages through their well-established networks. Uban informs us, 'Lieutenant General Aurora used to pressure my boys to find out the routes they used, their entry-route on the border, and about the safe houses they used and their destinations. The young leaders had no problem to divulge their entry-routes on the border so that the army units were vigilant to allow them to infiltrate. But they were not willing to divulge any information about their corridors, safe houses and destinations. This was because they doubted the sincerity of many Mukti Bahini leaders who had been their political enemies.'

Thus we see how the game of clashes being played between the Mujib Bahini and Mukti Bahini, between Mujib and Tajuddin and between the Awami League and the Awami League! And the country of Bangladesh and its people had to suffer for it.

At last, after a great effort, things were made agreeable to them for a peaceful solution. The solution was they would only inform the local army commanders who would allow them to enter their entry-routes.

(পরবর্তী মন্তব্যে বাকি অংশ)

জিফরান খালেদ এর ছবি

বাকি অংশঃ

Major General Uban was a supporter of the Mukti Bahini, sympathetic to the Mujibists and an admirer of the four young leaders. Yet we are in a position to know from his writings some of evidences of power struggle and the divisive and the autonomous role of an ideological elite force, so called, that never fought the war but merely kept in reserve for Mujibist take-over in the absence of Mujib, if it had come that after December 16, 1971. The infightings of the party continued even after the birth of the country and in a very ugly manner.

Uban ends the relevant chapter of his in the following words: 'Bangladesh is now free. Under the sacrificing Prime Minister Tajuddin, the provisional government has started the work in full swing. The new government of Bangladesh has directed the return of all illegal weapons and the very first of those who were told to do it were the boys of the Mujib Bahini. Sheikh Moni was furious about this.'

He made a definite complaint to me about the dicta adopted by Tajuddin. Among them were his staying in power and preparing a leftist force. He even showed me a group of armed communist youths in the corridors of the Hotel Intercontinental who had black bands tied around their foreheads.

'I was a witness to a hot debate between Sheikh Moni and Shree D. P. Dhar in connection with the surrender of weapons. Moni told Shree Dhar they would not surrender their weapons before Sheikh's arrival in Dhaka and, if necessary, they would wage a civil war' Moni later said to me that his observation hitherto has confirmed that Shree Dhar was a sworn enemy of his country.'

Mujibists became much more powerful after Sheikh returned to Dhaka on the 10th of January, 1972. Tajuddin was expelled from the Cabinet. Osmany left the Bangladesh army. Sheikh Mujib started to rule the country with the help of his devoted and enthusiastic disciples and the three bahinis the Rakshi Bahini, Sheikh Moni's Juba League and labour leader Mannan's Lal Bahini. The power of the police and the army was curbed, because the government had little faith in them. A reign of terror was unleashed in Bangladesh.

The ruling Awami League party and its factions 'and nobody else' were chiefly responsible for the anarchy and terrorist activities that pervaded Bangladesh in its first three years. The people of Bangladesh were deprived of the peace and security which they had hoped for in an independent country in what was the killing fields of Bangladesh during the Pakistan Military's occupation.

এ আলোচনা গতি হারিয়েছে মনে হচ্ছে। আমার আক্রমণাত্মক ভঙ্গি সেটা করে থাকলে আমি দুঃখিত। কিন্তু, বেশ কিছু জায়গায় লেখকের অসাবধানতাবশতঃ কিছু স্পর্শকাতর উচ্চারণ আছে, যেগুলো পুরোপুরি সংশয়াচ্ছন্ন অনুমিতির উপরে টিকে থাকা। সেগুলো অস্বীকার করতে পারিনি।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

জিফরান, আপনার দেয়া কম্পিটিং ভাষ্যদুটো পড়লাম।

আগের ভিডিওতে মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলামের বক্তব্য থেকে অনেক প্রশ্ন জন্মেছিল বলেছিলাম। এর মধ্যে একটা হল র এবং বিশেষত সুরজিত সিং উবানের রাজনৈতিক চরিত্র।

ভিডিও থেকে একটা তথ্য আসে, সেটা হল, উবান ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর কাউন্টার ইনসার্জেন্সী ফোর্স কে সহায়তা করেছেন। এ তথ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আরেকটা তথ্য হল RAW চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা CIA থেকে প্রাপ্ত ট্রেনিং এর ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল, এবং এর গঠন পুরোপুরি CIA এর আদলেই তৈরি।

আপনার কম্পিটিং ভাষ্যদুটির প্রথমটি, যেটিকে আপনি নির্মোহ বলেছেন, সেটি থেকে আরেকটি যে তথ্য পাওয়া সেটা হল RAW ৬০ দশক থেকেই স্বাধীন-বাংলা নিউক্লিয়াসের সাথে যোগাযোগ করত। অনুমান করা যায় সেই ভিত্তিতেই, এই নিউক্লিয়াসের বিশ্বস্ত সদস্যদের সমন্বয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একটি বাহিনী গঠন করেছিল, যাদের আদর্শিক ভিত্তি সবসময়েই RAW দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

জনাব কামরুল ইসলামের ভাষ্য থেকে আরেকটা প্রশ্ন আসল -- সেসময়ে আদর্শে প্রশিক্ষিত কিন্তু সামরিকভাবে দুর্বল ছাত্রদের সাথে আদর্শে অপরিকল্পিত কিন্তু সামরিক প্রশিক্ষিত সেনাবিদ্রোহীদের আদর্শের সংঘাত হল। কিন্তু সেই রাজনৈতিক আদর্শে উজ্জিবীত ছাত্ররা কোন ভিত্তিতে দেশের বিদ্রোহী সেনাকর্মীদের চাইতে মার্কিন প্রশিক্ষিত একজন কাউন্টার ইন্সারজেন্সী বিশেষজ্ঞকে বেশি ভরসা করলেন?

আরো সহজ কথা হল, আগের পরিকল্পনা না থাকলে হঠাৎ কিভাবে তারা জেনারেল উবানেরই শরণাপন্ন হলেন?

এব্যপারে আপনার ধারণাগুলো জানাবেন।

গুগল সার্চ থেকে RAW এবং জেনারেল উবান প্রসঙ্গে পাওয়া তথ্য (এর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই)-
[url] http://www.thehindu.com/fline/fl2219/stories/20050923004503000.htm[/url]

India's covert capabilities, however, began to develop significantly in the wake of the 1962 war with China. Aided by the United States, the newly founded Research and Analysis Wing (RAW) developed sophisticated signals intelligence and photo-reconnaissance capabilities. Central Intelligence Agency (CIA) instructors also trained Establishment 22, a covert organisation raised from among Tibetan refugees in India, to execute deep-penetration terror operations in China.

For a variety of reasons, the India-U.S. collaboration on China soured within just a few years, but the assets RAW had gained were put to good use during the 1971 Bangladesh war. India's eastern offensive was substantially aided by its new covert assets. While India's covert aid to the Mukti Bahini is well documented, few are aware that Establishment 22, operating under the command of Major-General Surjit Singh Uban, carried out deep-penetration strikes against Pakistani forces well under the RAW umbrella prior to the onset of the war. Using Bulgarian weapons to ensure that India could deny it was connected to their activities, General Uban's covert forces played a key role in drawing Pakistani troops forward, thus easing the conventional thrust towards Dhaka.

জিফরান খালেদ এর ছবি

দ্বিতীয় ভাষ্যে উবানের জবানে অনেক ব্যাপার উঠে এসেছে। এ-থেকে তাঁর অবস্থান বা আদর্শ - এগুলো বুঝে নেয়ার কথা। আপনি দ্বিতীয় ভাষ্যটুকুতে (ইংরেজীতে যেটা দেয়া) আবারো চোখ বুলিয়ে নিন। আমার ধারণা এ-ব্যাপারটা অনেকখানিই পরিষ্কার হবে।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

সামান্য ঘাটাঘাটিতে আরো যেটুকু জানলাম (এসব হয়ত অনেকেরই জানা, আমি নতুন জানলাম)-

সেটা হল, ভারতের বর্তমান উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুনের অদূরে চক্রতায় অবস্থিত কমাণ্ডো প্রশিক্ষণ শিবিরটি মূলত তৈরি হয়েছিল ১৯৬২ এর চীন-ভারত যুদ্ধের পরে মার্কিন সহায়তায় নবগঠিত RAW এর অধীনে তিব্বতী শরণার্থীদের নিয়ে একটা গোপন বাহিনী তৈরীর জন্য। এই বাহিনী Special Frontier Force নামে পরিচিত। এর আরেক ছদ্মনাম হল Establishment 22। উল্লেখ্য, RAW এবং এই SFF ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমাণ্ড স্ট্রাকচার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীন।

http://en.wikipedia.org/wiki/Special_Frontier_Force

এসম্পর্কিত একটা তথ্য হল, এই বাহিনীর প্রায় ৩০০০ তিব্বতী সেনা বাংলাদেশের পক্ষে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে লড়েছিলেন, এবং এদের মধ্যে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। তিব্বতী বাহিনীর এই অংশগ্রহণে দালাইলামার সম্মতি ছিল।

BLF বা মুজিব বাহিনী এই SFF শিবিরেই প্রশিক্ষিত হয়েছিল। তিব্বতী সদস্যদের সাথে তারা একসাথে লড়েছিলেন কিনা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানা যেতে পারে।

এসম্পর্কিত আরো তথ্য পাওয়া যেতে পারে জেনারেল উবানের লেখা বইটিতে, যেটি আমার পড়ার সুযোগ হয়নি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অমি রহমান পিয়ালের লেখাটা পড়লাম। প্রাসঙ্গিক তাই লিঙ্কালাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পিয়ালের বেশ খাটাখাটনি করে লেখা বিশাল পোস্টটা পড়েছি। কিন্তু তাতেও আমার প্রশ্নগুলোর ঠিক উত্তর মিল্‌ল না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রতিধ্বনি এর ছবি

জুলাই ১১-১৭তে অনুষ্ঠিত সেক্টর কমান্ডারদের যৌথ সভা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে সংগঠিত রূপ দেয়। ২১শে সেপ্টেম্বর বিমান বাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা আর ৯ই নভেম্বর নৌবাহিনীর প্রথম ফ্লিট গঠন ... । ... সরাসরি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সমান্তরালে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।

১. মুজিব বাহিনী গঠিত হওয়ার ডেট নেই। পড়ে মন হয় সশস্ত্র বাহিনী হওয়ায় রাগে দুঃখে কেউ জেদ করে মুজিব বাহিনী বানিয়ে ফেলেছে।

২. মুজিব বাহিনীকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়েছে “... সরাসরি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতায় ...”, যেখানে সশস্ত্র বাহিনী তো বটেই মুজিবনগর সরকারও চলছিলো ভারতের সহযোগিতায়।

৩. মুজিব নগর সরকারে শুধু যে তাজউদ্দীন আহমেদের মত ডেডিকেটেড নেতা ছিলেন তা নয়, খন্দকার মোশতাকের মত লোকও ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই মুজিব নগর সরকারের ক্ষমতা বেহাত হলে পুরো মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতিও বদলে যেত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলাদেশের বদলে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনে যাওয়ার চক্রান্তও করেছিলো খন্দকার মোশতাক। যারা দীর্ঘকাল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের জন্য কাজ করেছিলো তারা যদি তখন খন্দকার মোশতাকের মত লোকের উপস্থিতিময় কর্তৃপক্ষের সর্বোত কর্তৃত্বের অধীন থাকতো তাহলে মোশতাককে বাঁধা দেয়ার শক্তিও তাদের সীমিত হয়ে যেত। সেদিক বিবেচনায় যুবনেতাদের নিজস্ব শক্তিবলয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছিলো।

৪. চার ছাত্রনেতার উপর বঙ্গবন্ধুর আলাদা নির্দেশ ছিলো। চিত্তরঞ্জন সুতোরের সাথে দেখা করে তাদের পরবর্তী কাজ এগিয়ে নেবার কথা ছিলো। সিনিয়ার আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে যুবনেতাদের সিনক্রোনাইজেশনের এই অভাবও কিছু ভূমিকা রেখেছে সাময়িক দূরত্ব তৈরীতে। কিন্তু পরে কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট করা দেয়া সাপেক্ষে মুজিবনগর সরকার আর মুজিব বাহিনীর সিনক্রোনাইজেশন তৈরী হয়।

... বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী শুরু থেকেই মুজিবনগর সরকারের অধীন ছিল...

৫. কতটা অধীন? এতটাই অধীন যে সশস্ত্রবাহিনী প্রধাণ ওসমানীর নির্দেশ ছাড়াই জিয়া ফোর্স তৈরী হয়ে গিয়েছিলো। কতটা অধীন? এতটাই অধীন যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বাধ্য হয়েছিলেন মনচুক্তি দেয়া ফোর্সের নাম বাতিল না করে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কে ফোর্স ও এস ফোর্স তৈরীর নির্দেশ দিতে? এতটাই আধীন যে না সশস্ত্রবাহিনী প্রধাণ আর না সরকার প্রধাণ সমর্থ হয়েছিলেন মনচুক্তি দেয়া ফোর্সের নাম বাতিল করতে!

মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে।

৬. এবেলায়ও মুজিব বাহিনীকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে “ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর পরিকল্পনা” কে উপস্থাপন করতে হয়েছে। খোদ মুক্তিযুদ্ধই ভারতের সহযোগীতায় হয়েছে। প্রবাসী মুজিব নগর সরকারের ভারতের কাছ থেকে শেল্টার নেয়া থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীর ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র-রসদ নেয়া পর্যন্ত “ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর পরিকল্পনা” কে প্রয়োজন পড়ছেনা, প্রয়োজন পড়ছে কেবল মুজিব বাহিনীর বেলায় ।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল, তাই তাদের দ্বারা ভারতের বিশেষতঃ ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব ছিলনা।

৭. যে সামরিক বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠেছিলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, সেই মুক্তিযুদ্ধকেই তিল তিল করে গড়ে তোলা গণআন্দোলন থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের পর্যায়ে গড়ে তুলেছিলো যেসব ছাত্রনেতা, তারাই মুজিব বাহিনীতে ছিলো। তাদের আনুগত্য যে বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিলো, মুজিব নগর সরকারও সেই বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধুর নামে চলতো। মুজিব বাহিনী কংগ্রেসের কী উদ্ধার করে দিয়েছে?

বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ করতে গেলে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ব্যবহার ভারতের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাদের সাপেক্ষে বাংলাদেশে এমন একটি বাহিনী দরকার ছিল যারা পাকিস্তানের বিরূদ্ধে লড়বে ঠিকই কিন্তু ভারতের ইন্টারেস্টের বিপক্ষে যাবেনা। দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব বা কোন কার্যক্রম ভারতীয় স্বার্থের বিপক্ষে গেলে তা মিনিমাইজ করার জন্য এমনটা দরকার ছিল।

৮. মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সামরিক বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর দ্বারা ভারতের বিশেষতঃ ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব ছিলনা বলে জানা যাচ্ছে কিন্তু বাঙালীর স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘকালের সংগ্রাম করে যারা মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাদের পরিচয় হিসেবে দেয়া হয়েছে - “এমন একটি বাহিনী ... যারা পাকিস্তানের বিরূদ্ধে লড়বে ঠিকই কিন্তু ভারতের ইন্টারেস্টের বিপক্ষে যাবেনা।“ !!!

মুক্তিবাহিনীর একটা বড় অংশ ছিল ন্যাপ (ভাসানী/মোজাফ্‌ফর) আর কমিউনিস্ট পার্টি বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো থেকে আগত।

৯. হ্যাঁ, আগস্ট নাগাদ ট্রেনিং শুরু হয়ে যাবারই কথা। সিদ্ধান্ত নিতে এই তো মাত্র কয়েক মাসই দেরী হয়েছিলো!

এই দেরী তো ঐতিহাসিক অভ্যাস। প্রথমে যখন ৬ দফা এলো, তখনও তো দেরী হলো। বলা হলো ৬ দফা সিআইএ এর প্ল্যান। তারপর হাওয়া বুঝে দেয়া হল ১১ দফা। তারপর যখন ৬ দফা ১ দফায় পরিণত হলো, তখনও হাওয়া বুঝতে বুঝতে আগস্ট মাস চলে এলো। “ডু নট ডিস্টার্ব আইউব” এর ঘোর কাটতে এইটুকু সময় তো লাগতেই পারে!!!

মুক্তিবাহিনী তথা বাংলাদেশ বাহিনীর মধ্যে বামদের সম্ভাব্য প্রভাব কমানো বা বাড়ার সুযোগ না দেয়ার জন্যই মুজিব বাহিনীর মত বাহিনী দরকার ছিল।

১০. অথচ আমরা লেখায় দেখছি, “প্রাপ্ত অস্ত্র ও রসদও অত্যাধুনিক ও উন্নত মানের” হওয়া সত্ত্বেও, “মুক্তিবাহিনীর একটা বড় অংশ ছিল ন্যাপ (ভাসানী/মোজাফ্‌ফর) আর কমিউনিস্ট পার্টি বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো থেকে আগত।" । অত্যাধুনিক অস্ত্রের ট্রেনিং তো তাহলে বৃথাই গেল!!!

১১. মুজিব বাহিনীর ভেতরেই ছিলো দুটো গ্রুপ - মনি গ্রুপ আর সিরাজ গ্রুপ। মনি গ্রুপের বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও বাম নিধনের অভিযোগ আছে। কিন্তু সিরাজগ্রুপে ছিলো স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নেতারা, স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রস্তাবের উত্থাপক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী লোকজন যারা সিরাজের নেতৃত্বে বহু আগে থেকেই সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো। সুতরাং সমস্যাটার নাম যদি বাম নিধন হয়, তাহলে তা সিরাজগ্রুপের স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নেতারা, স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রস্তাবের উত্থাপক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী লোকজনের উপর বর্তায় না। বরং সিরাজ গ্রুপের স্বপন চৌধুরী, মনি গ্রুপের হাতে মারা গেছেন বলে কথিত আছে।

১২. ন্যাপ দুধের বাচ্চা ছিলো না। তার যে শুধু বন্দুকের ট্রিগার টিপতেই জানতো তা নয়, বরং বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ধরার তত্ত্বও তাদের জানা ছিলো। আর্মস তাদের হাতেও ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের টালমাটাল পরিস্থিতির ভেতর সুযোগ বুঝে প্রতিবিপ্লব তৈরীর সুযোগ না পাওয়ার দুঃখ, এখন মুজিব বাহিনীর উপর আক্রোশ প্রকাশের ভেতর দিয়ে মিটছে।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর এই পূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত বাহিনী নিজেদেরকে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সাথে একীভূত হবার দাবী জানায়নি।

১৩. কেন জানাবে! তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের এলিট পলিটিকাল লিডার! মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা নিজেরাই নিজেদের চারটা সেক্টরে যুদ্ধ করেছে। সিরাজ, মনি, রাজ্জাক, তোফায়েল, কাজী আরেফ, রব, সাজাহান সিরাজ, মার্শাল মনিরা সেনাবাহিনীতে গিয়ে কোন পদে চাকরি করতো? যেখানে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ভাল পোস্টিং দেয়ায় পাকিস্তান ফেরত সিনিয়ার আফিসাররা ক্ষুব্ধ ছিলো সেখনে এদের মত লোক আর্মিতে গেলে কী অবস্থা হত! কোন পদে চাকরি করতো তারা! তারা সেখানেই ছিলো যেখানে তাদের থাকার কথা ছিলো - রাজনীতিতে।

তাহলে ভারত যে এত রিসোর্স ব্যবহার করে একটা বাহিনী তৈরি করল তার প্রয়োজনীয়তা কি যুদ্ধ শেষ হবার সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেল? অবশ্যই না।

১৪. তো কী উদ্ধার করে দিয়েছিলো তারা ভারতের? ভারতের কিছু যদি তারা উদ্ধার করে দিতোই তাহলে সিরাজ গ্রুপের মুজিব বাহিনী আর মনি গ্রুপের মুজিব বাহিনী থাকার পরেও কেন ভারত রক্ষীবাহিনী তৈরী করে দিলো? মুজাহিদীন তালেবান গল্পের মত তো এটাও বলা যায় যে পাকিস্তান-চীন ন্যাপকে টিউন করে রেখেছিলো তালেবানদের ভূমিকা পালনের জন্য।

স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, তার সহযোগী সংগঠনগুলো ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিশে যাওয়া মুজিব বাহিনীর কার্যকলাপ আজ এতগুলো বছর পর কিছু কিছু বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাভাবিক আকাঙ্খা থাকে সর্বদল সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকারের (মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের বাদ দিয়ে)। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা, পরিকল্পনাহীনতা, ব্যক্তিবিশেষের ক্ষমতার লোভের জন্য ১৬ই ডিসেম্বরের পর জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারেনি। ফলে আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের সহযোগী সংগঠনদের থেকে একা করে ফেলা সম্ভব হয়। এতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের বিপর্যস্ত জনতাকে তাদের অপ্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দোষারোপের জন্য ক্ষেপিয়ে তোলাও সম্ভব হয়।

১৫. মিশে যাওয়ার প্রশ্ন কোথা থেকে আসে! সবাই জানতো যে তার মুজিব বাহিনীর লোক!

১৬. জাতীয় সরকারের দাবী তো জাসদেরও ছিলো। জাসদ / মুজিব বাহিনীর সিরাজ গ্রূপ যখন জাতীয় সরকার চায় তখন সেটা “স্বাভাবিক আকাঙ্খা” হয়? কেন হয়? তারা তো ভারতের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য “গঠিত হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে”!

১৭. মুজিব বাহিনীকে ছোট করতে এই লেখায় যাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে তাদের কেউ কেউ সেই কৃতিত্বের ভাগীদার - মওলানা ভাসানী ও সিরাজ সিকদার। দুঃখজনক সত্য যে তার কেউই মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিলেননা!!!

স্বাধীনতাপূর্ব আওয়ামী লীগ কোন বামপন্থী দল ছিলনা, আজকের আওয়ামী লীগও কোন বামপন্থী দল নয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী নেতৃত্ব বাম দিকের রাস্তা ধরার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৮. কোন কালেই বামে না থাকা আওয়ামীলীগ যখন বামে হাঁটা শুরু করলো তখন তা হয়ে গেল “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা”। আর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ারও আগে স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রস্তাব করা মুজিব বাহিনীর সিরাজ গ্রুপ যখন জাসদ গঠন করলো তখন তা হয়ে গেল “বাম হঠকারী ধারা”!

১৯. ন্যাপ তখন কী করছিলো? সামাজতন্ত্রের পথে হাঁটতে থাকা আওয়ামীলীগের কাজকর্ম তারা কীভাবে দেখতো? ভাসানী তখন কী করতেন?

ভারতের নজর থাকার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয় যখন মুজিব বাহিনী ফেরতদের একাংশ জাসদ গঠন করে। ... এভাবে জাসদ নামক “বাম প্রতিষেধক টীকা” দিয়ে বাংলাদেশে কমিউনিজমের উত্থান ঠেকানো হয়।

২০. সেই টিকা এমনই বাম প্রতিষেধক টিকা যে তার মধ্যে মেজর জলিল, কর্নেল তাহেরের মত লোক ছিলো। সে টিকা এমনই প্রো-ভারত টিকা যে জাসদের লোকজন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাকেই তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।

২১. “ভারতের নজর থাকার ব্যাপারটি” এমনই যে সে খোদ সমাজতান্ত্রিক বঙ্গবন্ধু সরকারকেই রক্ষীবাহিনী তৈরী করে দেয়। বাই দা ওয়ে, ভারত আসলে কার উপর নজর রাখছিলো - সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বামে হাঁটা আওয়ামীলীগের উপর না কী টিকা জাসদের উপর? কাকে ঠেকানোর জন্য কার উপর নজর রাখছিলো সে? তবে কী নজরের লক্ষ্য ছিলো যারা, তারাই সেই ঠেকিয়ে দেয়া আসল, সহি, কুদরতি জিংসেন উত্থান (?)!

স্যাম এর ছবি

অনেক আগের একটা দারুণ লেখা ও মন্তব্য, এরকম আলোচনা এখন অনেক কম দেখি।

মাসুদ সজীব এর ছবি

দারুণ লেখা, তারচেয়ে ও দারুণ আলোচনা। অনেক দেরিতে পড়লাম। পড়ার পরে নিজের ভাবনা গুলো জানিয়ে গেলাম।

পোষ্টে মুজিব বাহিনী কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী বলার চেষ্টা করা হয়নি, যেটা অনেকের মন্তব্যে অভিযোগ আকারে দেখলাম। বরং মুজিব বাহিনীর সদস্যরাও যে অসীম আত্নত্যাগে বলিয়ান হয়ে যুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে সেটার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন ছিলো মুজিব বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য। একটা সরকার থাকার পরও কেন আরেকটা বাহীনিকে শক্তিশালী করেছে ভারত? অস্থায়ী সরকারের প্রতি অনস্থা? স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব বাহীনির পরবর্তী কার্যক্রমগুলো দেখলে স্পষ্ট বুঝা যায় তাদের নেতৃত্বস্থানীয় মানুষজন-ই বিপথে গেছে, রাষ্ট্রকে বিপথে নিয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে পান্ডব দার ভাবনার সাথে খুব বেশি অমিল থাকে না।

দ্বিতীয় যে আলোচনা হয়েছে সেটি হলো শেখ মনি কে নিয়ে। শেখ মনি তাজউদ্দিন কে হত্যা করতে লোক পাঠিয়েছেন এটা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে অতীতে তার কি অর্জন ছিলো সেগুলো বৃথা। সেক্ষেত্রে হিমু ভাইয়ের মতো বলা যায় ‘শেখ মনি শুধু ফালতু নয় ক্ষমতামোহী এক ষড়যন্ত্রকারীর নাম। তাজউদ্দিনকে দল থেকে বিদায় করতে মনি যে অন্যতম সদস্য ছিলো সেটি বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। মোর্শেদ ভাইয়ের কথা মতো শেখ মনিকে শ্রদ্ধ করতে হলে এখন আমাকে কাদের সিদ্দিকীকেও শ্রদ্ধা করতে হয়। কাদের সিদ্দিকী যে কারণে বাতিল, ঠিক তেমনি শেখ মনিও বাতিল, অগ্রনযোগ্য।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।