সেবা প্রকাশনী স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই মাসুদ রানা

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ০১/১২/২০১২ - ৫:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাসুদ রানা বাংলাদেশে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। একা। টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায়- অবিচার-অত্যাচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে-পদে তার বিপদ-শিহরন-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি।

এই মাসুদ রানার সাথে পরিচয় হয়েছিল সেবা প্রকাশনীর নিউজপ্রিন্টের বইয়ের মাঝে, খসখসে পাতা থেকে কালো কালো অক্ষর গুলো তখন রঙিন বিশ্বের গান শোনাত ঘুরে ঘুরে, ক্লাস রুমে শিক্ষক এক ঘেয়ে গলায় বলে চলেছেন জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার উপকারিতা, আমি চলেছি সোহানার সাথে , জিম্বাবুইয়ের ধু ধু মরুভূমির মধ্য দিয়ে জীপে করে, জীবনের লক্ষ্য তখন একটাই- দেখে নিব উমাঙ্গো নামের বদমাশটাকে।

রানার নিজের সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা প্রায় পরিণত হয়েছিল জীবন দর্শনে – নিজের সম্পর্কে সব সময় উঁচু ধারণা পোষণ করেছি আমি। নিজেকে চিনি, নিজের যোগ্যতার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখি বলেই সম্ভব হয়েছে এটা। শারীরিক যোগ্যতা এবং চিন্তার স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য জ্ঞান হবার পর থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস কারও চেয়ে কম নয়, তার কারণ নিজেকে মনের মত করে গড়ে তোলার কাজে কখনও ফাঁকি দিইনি আমি। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ভদ্র হওয়া একটা অলঙ্ঘনীয় শর্ত, সে চেষ্টাই করছি। বসুন্ধরা শক্তের ভক্ত, নিজেকে আমি সেভাবেই গড়ে তুলেছি। উচ্চাশা ছাড়া মানুষের উত্তরণ ঘটেনা, তাই আমিও উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

কখনও পড়ার ঘর ক্রান্তীয় স্বর্গদ্বীপে পরিণত হতো, তেতলার জানালা দিকে তাকালেই যেন পদ্মাপারের রাজশাহীতেই সদ্য গজিয়ে ওঠা পাম গাছ ছাওয়া পাহাড় আর অদূরের অথৈ সমুদ্র, সাদা বালির সৈকত, নীল ল্যাগুন দেখা যাবে। থাক,আপাতত বইয়ের মাঝেই ডুব দিই মোটা তাজা ক্রাইফিশ ভাজা আর রাফেলা বার্ডের সঙ্গ পাবার লোভে। আবার থেকে থেকেই চারপাশে হয়ে ওঠে রণাঙ্গন, ফুলঝুরির মত গুলি ফুটছে, মাথার উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে মর্টারের ঝাঁক, যে কোন মুহূর্তে ছুটে আসা স্প্লিন্টার লেগে পঙ্গু হয়ে যেতে পারি জীবনের জন্য, অবিরাম দৌড়ানোর ফলে বুকের ভেতরে হৃৎপিন্ড নিস্তেজ হয়ে পড়ার যোগাড়, উত্তেজনার ধেয়ে আসে হরমোনের স্রোত, কিন্তু থামার উপায় নেই! আমি থামলেই মাসুদ রানা মারা পড়বে যে! সেটি হবার নয়। কখনো আবার জলের দিশা নেই ত্রিসীমানায়- সাহারার কোন প্রান্তে চলেছি আরব বেশে,ইসরায়েলি স্পাই অ্যালেক বোগানকে মোকাবিলা করতেই হবে, তার কাছে আগে রেবেকা নামের সেই ক্ল্যাসিক বইটি যেখান থেকে গুপ্ত কোডের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য পাঠাচ্ছে সে। গলা শুকিয়ে কাঠ, ইতস্তত জিভ ঘুরে বেড়ায় শুকনো ঠোঁটে,সাবধান তাপের কাছে, তৃষ্ণার কাছে, অ্যালেকের কাছে হার মেন না। তুমি হার মানলেই রানা শেষ, ধবংস হয়ে যাবে বাংলাদেশে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। কখনো বরফের রাজ্যে, গ্রিনল্যান্ডে বা সুমেরুর আশেপাশে, কিংবা কেজিয়ামের দ্বীপের খোঁজে দক্ষিণের দিকে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দানব যখন মনে হয় হিমশৈলগুলোকে।

কেন এমন ভাবে মিশে গিয়েছিলাম মাসুদ রানার মাঝে?

এই প্রশ্নের কি কোন উত্তর হয়!

বলা হয়ে ছিল জেমস বন্ড কেন এত জনপ্রিয়? একটা উত্তর ছিল অধিকাংশ পুরুষই স্বপ্ন দেখে তার হাতে থাকবে দামী গাড়ীর স্টিয়ারিং, পকেটে বিচিত্র সব অস্ত্র, আশেপাশে লাস্যময়ী নারী, জীবনময় ঝুঁকি, রোমাঞ্চ- তাই সবাই রূপোলী পর্দার জেমস বন্ডের মাঝে খুঁজে নেয় নিজের সেই লালিত স্বপ্নকে। হয়তো না নারীরা পান তাদের স্বপ্নপ্রেমিককে।

কিন্তু মাসুদ রানা জেমস বন্ড না। যখন রানা ক্যাসিনোর টেবিলে জেতা হাজার হাজার ডলার সাথের সঙ্গিনীকে দিয়ে দেয় যেন সে নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতে পারে ( মনে হয় বন্ধু বইতে), নিজের জীবন বিপন্ন করে রানা এজেন্সীর অধীনে চাকরি করা এক এজেন্টকে বাঁচাতে চলে যায় যুদ্ধাক্রান্ত আফ্রিকাতে ( টার্গেট নাইন), ছোট মেয়ে লুবনার স্মৃতিকে মর্যাদা দিতে উপরওয়ালাদের সকল নিষেধ অমান্য করে, সকল প্রতিকূলতাকে দলে ধুলোয় গুঁড়িয়ে দেয় মাফিয়া ডন বাকালার প্রাসাদ ( অগ্নিপুরুষ), ভিনদেশকে ভালবেসে নিজের উদ্ধার করা সমস্ত গুপ্তধন অবলীলায় দিয়ে আসে ( আই লাভ ইউ, ম্যান) তখন তাকে অনেক আপনার মনে হয়, একজন খাঁটি মানুষ মনে হয়। আর সবার উপরে থাকে তার দেশপ্রেম, সবসময়ই। চরমতম বিলাসিতার সুযোগ পেলেও রানার মনে আসে দুর্ভিক্ষের শিকার মাছের জাল পড়া গৃহবধু বাসন্তীর কথা,পথশিশুদের কথা, শত বার উদ্ধার করা টন টন সোনা সে অকাতরে দিয়ে দেয় বাংলাদেশের কোষাগারে। আহা, এমন ভাবে যদি সবাই চিন্তা করত, সবাই তো আর মাসুদ রানা হতে পারে না, কিন্তু সাধ্যমত প্রচেষ্টা করত দেশটাকে সামনে নিয়ে যাবার!

মতিঝিল শাপলা চত্বরে যেতে হাঁ হয়ে গেছিলাম প্রথমবার, এইখানেরই কোন এক অফিসে রানা বসে, আছে সেখান সোহেল, সলীল, রাশেদ, সোহানা, রূপা এবং দ্য বিগ বস মেজর জেনারেল রাহাত খান। এইখানেই বোমা মেরে রানাকে নিকেশ করতে যেয়ে গিলটি মিয়াকে প্রায় মেতে ফেলেছিল দস্যু উ সেন, ফলাফল- নিজের মৃত্যু ডেকে আনল সে! রানার সাথে সঙ্গী হলাম সেই উ সেন নামের এক অসাধারণ অভিযানে, এক অসম্ভবকে সম্ভব করে, দীপ্ত ছন্দময় পদচারনায় ছদ্মবেশের মেলা দেখিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ইউনিয়ন কর্সের কাপু উসেনের নিকেশ করে। কিন্তু আসলেই কি ধ্বংস হল উ সেন? তাহলে কেন আবার ফিরে আসল একই ধরনের অপরাধচিত্র আবার উ সেনে? রানারই প্রেমিকা হয়ে হত্যার চেষ্টা করল উ সেনেরই কন্যা, পরিণতি হল তার খুনে বাবার মতোই।

রানা একা, কিন্তু একা না কোন সময়ই! টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না, যদিও কথাটা মনে হয় ঠিক না। রানার নিজের ভাষাতেই- অনেক মেয়ের সান্নিধ্য পেয়েছি আমি, আজ যখন কোন একটা গানের সুর কানে বাজে বা নির্দিষ্ট কোন একটা সুগন্ধ নাকে পাই তখন শুধু মধুময় স্মৃতি হয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফিরে আসে তারা আমার মনে।

প্রথম প্রেমিকা রাফেলা বার্ডের ঘন নীল চোখ (দুপুরের কড়া রোদ সরাসরি মোজাম্বিক স্রোতে পড়লে যেমন অপার্থিব গাঢ় নীল হয়) যেমন তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ( আই লাভ ইউ, ম্যান), তেমনই রেবেকা সাউলের গাঢ় কফির মত চোখের মণির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে বিশ্ব জয়ী বাঙ্গালী বীর ( বিদায় রানা), মিত্রা সেনের প্রেমে বিয়ের ফাঁদে রাজী হয়েই জীবনের খাঁদে প্রায় পতন ঘটেছিল ( ভারতনাট্যম, মূল্য এক কোটি টাকা মাত্র), ব্যারনেস সিবা কেবলমাত্র তাকেই ভালবাসে বন্ধুত্বের খাতিরে বেছে ছিল আত্নহননের পথ ( সেই উ সেন), লুকিয়ে মেক্সিকোর অ্যাডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়ে কাউবয় মতো ঘোড়ার পিঠে র‍্যাঞ্চে দাবড়ে বেড়ালেও প্রেম তার পিছু ছাড়ে না এবং প্রেমিকাও চেয়ে বসল একটি মাত্র উপহার- রানার সন্তান ( বুমেরাং), মাল্টার মেয়ে ভায়োলা যেন নতুন জীবন দান করেছিল রানাকে আর বাটু ফারেঙ্গি সমুদ্রতল থেকে শুরু করে ঢাকার ফ্ল্যাট সবখানেই উপস্থিত ভবিষ্যতের মিসেস রানা- সোহানা।

কিন্তু বাস্তবের রানা লম্পট নয়, অপরূপার সাথে এক বিছানাতেও মাঝে গোলাপের তোড়া রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমায় সে আর কিছুই না করে, সকালে সেই আবেদনময়ী তরুণী বলে- আমার পাশে শুয়েও যে আমার দেহের দিকে হাত না বাড়িয়ে কোন পুরুষ থাকতে পারে তার প্রমাণ প্রথম পেলাম। নিয়াপলিটান সৌন্দর্যের উৎকৃষ্ট নমুনা লরা আভান্তিকে ফিরিয়ে দেয় সে চোখ বন্ধ করে। আবার এই রানাই নকল রাফেলার সাথে কামময় রাত কাটানোর আগে বলে- নিজেকে বঞ্চিত করতে নেই, দুর্ভিক্ষ কখন দেখা যায় কেউ বলতে পারে না! লুইসা পিয়েত্রোর সাথে তার বন্ধুত্ব অটুট থাকে, থাকে রূপা সাথে সুদৃঢ় বোঝাপড়া। আবার ডাঁসা পেয়ারার মত ফিগারের অধিকারী নার্স সিস্টার মে-র অবুঝ প্রশ্ন মেয়ে মানুষ এর চেয়ে বড় নেশা আর কি হতে পারে? রানার মুখে আমার নির্লিপ্ত উত্তর ছিল- অ্যাডভেঞ্চার।

কত জানা-অজানা প্রতিপক্ষ, বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয়, শত্রু বন্ধুতে। কিন্তু সবচেয়ে বড় শত্রু যারা বাংলাদেশের ক্ষতি চায়, দেশী বা বিদেশী! কবির চৌধুরী তো আছে সেই প্রথম বই ধ্বংস পাহাড় থেকেই, তারপর যে কতবার আমাদের যৌথ চেষ্টার কাছে পরাজিত হল তার কোন ইয়ত্তা নেই, কিন্তু বেড়ালের চেয়ে যেন বেশী প্রাণের অধিকারী লোকটা! মরণ কামড়ের কামড়েই মরণ হবার কথা ছিল তার, কিন্তু বেঁচেছিল সে সেযাত্রা। অবশেষে আবার সেই দুঃস্বপ্নে চাপা দেয়া হয়েছিল এক সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আটক করা (স্পর্ধা) কবির চৌধুরীকে, ইদানিং তার পুত্রসন্তান মাঝে মাঝে বিরক্ত করার চেষ্টা করে! জয়দ্রথ নামের বিষাক্ত কেউটের চেয়ে ভয়ংকর লোকটাকে মনে আছে, সোনার বাংলাকে শ্মশান করতে চেয়েছিল যে অভিনব উপায়ে পঙ্গপালের ঝাক দিয়ে ( ভারত নাট্যম)? সিডনী শেরডান নামের সেই হাঙ্গরের মত ক্ষুধার্ত, লোভী, নিষ্ঠুর লোকটাকে যার জন্য চার চারটি বছর নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে রানার? হুমায়ুন দাদা নামের সেই দানবটাকে যাকে বোমার বিস্ফোরণও মারতে সক্ষম হয় নি? হেক্টর নামের অহংকারী তেলকূপ বিশেষজ্ঞ কে ( সাগর কন্যা)? বিষকন্যার ভিলেন অফিসার রুস্তমভ? চাই সাম্রাজ্য নামের অসাধারণ বইটির দুই ভাই মিশরীয় উম্মাদ নেতা এবং মেক্সিকান উগ্রবাদীকে? জাপানি ফ্যানাটিকের ভয়ংকর শত্রুকে? শ্বাপদ সংকুল অরণ্যের হাতি অসুর এবং জেনারেল কিরকিটি বাওনাকে? সত্যবাবার তথাকথিত বুজুর্গ পীরবাবা হযরত হিকমত বাগদাদীকে? নাৎসি গুপ্তচর বিভাগের সাবেক প্রধান কোকেন সম্রাট কে? এদের মানুষ মনে রেখেছে কিন্তু রানার জন্যই!

কিন্তু রানা ধ্বংস করতে ইচ্ছুক না, সে চায় সৃষ্টি করতে। সবুজ বাগানে, বনে দেশ ভরে দিতে। যে ধ্বংস তাকে বাধ্য হয়ে করতে হয় সেগুলো মানবজাতির পক্ষে এক একটি বাঁধা স্বরূপ। বাধ্য হয়েই অপসারণে ডাক পড়ে রানার, কিন্তু সুযোগ পেলেই গড়তে লেগে যায় সে – বঞ্চিত শিশুদের জন্য আশ্রম, বিদ্যালয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সবকিছুই।

আর রানার বন্ধুভাগ্য! সেই তালিকা তার শত্রুতালিকার চেয়ে অনেক অনেক লম্বা, ভিনসেন্ট গগলের মত এক অদ্ভুত বন্দী আছে তার যে কোন প্রশ্ন করা ছাড়ায় সারা বিশ্ব পাড়ি দেয় রানার বিপদে! সোহেল না রানা, কে যে কার জন্য বন্ধুঅন্তপ্রাণ বলা মুশকিল! আছে রেমারিক, জিলেট ল্যাম্পনি, ফিলিপ রডরিক, জিপসির প্রিন্স মোর্সেলিন দ্য মুরগা, বন্ধু মিছিলে এত এত বেশী নাম যে সেটার জন্য আলাদা পোষ্ট দরকার। তাদের কেউ কেউ চিরবিদায় নিয়েছে রানাকে বাঁচাতে যেয়ে, বন্ধুত্বের শক্তিতে! তারা জানত দরকার হলে রানাও প্রাণ দিতে বন্ধুর জন্যই।

রানার মত এত মহাকাশব্যপী গুণের সমন্বয় কি বাস্তবের কোন মানুষের মাঝে সম্ভব? তার সৃষ্টিকর্তা কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর ছিল – না! কোন মানুষ একই সাথে এত দক্ষ ভাষাবিদ, পর্বতারোহী, ডুবুরী, কম্পিউটার বিশারদ, ইতিহাসবিদ, শিকারি, যোদ্ধা, কূটনীতিবিদ, বৈমানিক, সাগরবিশেষজ্ঞ, ভূতাত্ত্বিক, অস্ত্রবিশারদ, ড্রাইভার, জীববিদ- এমন অযুত গুণের আকর হতে পারে না! যতবার রানার কাঁধ ছুয়ে গুলি সামান্য মাংস নিয়ে বেরিয়ে গেছে, সেটা বাস্তব হতে হলে যে পরিমাণ মাংসপেশী কাঁধে থাকার কথা কোনো মানুষের কাঁধেই এত বেশী মাংস থাকতে পারে না! কিন্তু রানার সার্থকতা এইখানেই, মনের মধ্যে সে স্বপ্ন বুনে যায়- এমন মানুষ যদি নাও থাকে- আমার রানা হতে দোষ কোথায়? চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?

জন্মের আগেই হয়ত কার্ল স্যাগানের কসমস দেখাত টিভিতে, অনেক বছর পরে সেটা দেখেছি ইউটিউবে বারংবার, তাই আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের নাম প্রথম জেনেছিল মাসুদ রানার সাথে থেকেই- চাই সাম্রাজ্য নামের অদ্ভুত এক কাহিনীতে। জায়ান্ট স্কুইডের লোমহর্ষক কাহিনী জেনেছিলাম বড় ক্ষুধা পড়েই, সেই দানবের সাথে অতল জলের নিচে দেখা হলে কী হতে পারে চিন্তা করেই হাত-পা পেটের ভিতরে সেঁধিয়ে গেছিল। একশ টন সোনা আপনি হাইজ্যাক করতে পারেনই, কিন্তু সেটা বহন করা এক ট্রাকে সম্ভব না! এত সহজ সরল সত্য কে জানাল? কেন শত্রুপক্ষের খালিদের ছদ্মবেশে মাসুদ রানা! মায়ান সাম্রাজ্যে পা দেবার অনেক আগেই জেনেছিলাম তাদের সিনোতে আর গুপ্তধনের কথা,কোথায়? কেন, মায়ান ট্রেজার পড়ে। এমন আছে লাখো বিষয়ের কথা। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি?

মাসুদ রানার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব- গল্পের এই চরিত্রকে নিজের মাঝে আবিস্কার করে, তার অনুপ্রেরণায় একাধিক অসমসাহসী যুবক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এরচেয়ে বড় সন্মান এবং স্বীকৃতি আর কী হতে পারে!

দিন শেষে মনে হয় মাসুদ রানা আমার মতই একজন বাঙ্গালী, ঘুমাবার আগে যার মনে হয় কুয়াশা ঢাকা গ্রাম, আমের বাগান, বাঁশের ঝাড় আর শ্লোক বলা কাজলা দিদিকে।

চিরতরুণ, চিরসবুজ মাসুদ রানার গতি অব্যাহত থাকুক, আমাদের দিনগুলো ভরে উঠুক নব নব অ্যাডভেঞ্চারে, বুকের গহনে তিরতির রোমাঞ্চ নিয়ে আমরা যোগ দিই সেই দুঃসাহসী যুবার সাথে।

সবশেষে মাসুদ রানার জন্য থাকল একটা বিখ্যাত ইতালিয় গান- এক সময় থেমে যাবে সমস্ত কোলাহল, ঘুমিয়ে পড়বে ধরণী। আকাশের সবচেয়ে উজ্জল তারাটি মিটমিট করলে বুঝবে আমি তোমায় ডাকছি। সে-রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘুমিয়ে পড়ো না। আর, হ্যাঁ, ফুলের গন্ধ পেলে বুঝে নিয়ো আমি আসছি। আর যদি কোকিল ডাকে, ভেব আর আমি বেশি দূরে নেই। তারপর, হঠাৎ ফুরফুরে বাতাস এসে তোমার গায়ে লুটিয়ে পড়লে বুঝবে আমি এসেছি। সে-রাতে তুমি জেগে থেকো বন্ধু, ঘুমিয়ে পড়ো না।


মন্তব্য

সজ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি
তুলিরেখা এর ছবি

আপনি যে হারে সারা দুনিয়ায় চক্কর দ্যান,আপনিই তিনি নন তো? চিন্তিত

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারেক অণু এর ছবি

ইচ্ছা তো আছেই, কিন্তু ঈমানে বলি- আমি না! মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পের বই পড়ে সজ্ঞানে প্রথম কেঁদেছি অগ্নিপুরুষ পড়ে। একজন মাসুদ রানা যে কত মানুষকে কতভাবে অনুপ্রাণিত করেছে তার ইয়ত্তা নেই। কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিরন্তর শ্রদ্ধা আর এই মাস্টারপিস উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে উত্তম জাঝা!

ফারাসাত

তারেক অণু এর ছবি

লুবনার মৃত্যু মন খারাপ

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

খুব খারাপ সময় যাইতেছে, এই সময়ে মাসুদ রানার কথা মনে করাইয়া দেওয়ায় একই সাথে তীব্র ধিক্কার অ্যান্ড ধন্যবাদ।
ধিক্কার- পড়ার সময় নাই, কিন্তু বুকডা ফাইট্যা যায় পড়ার লাইগা
ধন্যবাদ- দুঃসময়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়, মরতে মরতে বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে, ইচ্ছা করে আবার প্রাণ ভরে দেখি এই সুন্দর পৃথিবীটাকে।

লেখা পড়ি নাই, মাসুদ রানা দেইখাই মন্তব্য কইরা গেলাম।

লেখা -গুড়- হয়েছে
চলুক

তারেক অণু এর ছবি

খুব তো দেখলাম আড্ডা মারলেন, এখন আবার কী হল!

সাফি এর ছবি

মাসুদ রানা কি তারেকাণুর মত এত দেশ ঘুরসে?

তারেক অণু এর ছবি

ব্যাটা তো মনে অয় চান্দেও গ্যাছে! আরামে আছে আর কি, পাসপোর্ট, ভিসা, পয়সার ঝামেলা নাই! স্পাই মানুষ!

রিসালাত বারী এর ছবি

মাসুদ রানা আউটার স্পেসেও গেছে হাসি

তারেক অণু এর ছবি

বইয়ের নাম দিয়েন তো -

রিসালাত বারী এর ছবি

এই বইটার নাম আমি ভুলে গেছি। সম্ভবত রানার একমাত্র সায়েন্স ফিকশন যেখানে এলিয়েন এসে রানারে তুলে নিয়ে যায়। ভালো লাগে নাই বলে পুরা পড়ি নাই।

তারেক অণু এর ছবি

হায় হায় ! পিশাচ দ্বীপের মত অন্যধারার কাহিনী মনে হচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রলয় সঙ্কেত। পিশাচ দ্বীপ যেমন রানা সিরিজে পিশাচ কাহিনী, তেমনি এই বইটি রানা সিরিজে সাইন্স ফিকশন।

তারেক অণু এর ছবি

আচ্ছা, লুসিফার নিয়ে কে যেন একটা কাহিনী ছিল, সেটাও কি পিশাচ কাহিনী?

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্ভবত , সাক্ষাৎ শয়তান। সোহানা ছিল।
-রানা।

তারেক অণু এর ছবি

কেমন সেটা, পড়া হয় নি।

তমসা  এর ছবি

রানার নতুন বই অনেকদিন পড়িনি।তবে এলিয়েনের ব্যাপার ছিল 'প্রলয় সঙ্কেত'-এ। জতদূর মনে পড়ে, রানাকে তুলে নিয়ে যাবেনা। তবে অপূর্ব সুন্দরী এক এলিয়েন নারীর সাথে পরিচয় হবে।কাহিনী যাই হোক, ওখানে রানার দুর্দান্ত বুক-ধড়াস করা হাইড অ্যান্ড সীক রয়েছে যেটার আকর্ষণ বইয়ের শেষ পাতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত অস্বীকার করা যায় না।

তারেক অণু এর ছবি

হুম অ্যাঁ চিন্তিত

নিলয় নন্দী এর ছবি

চিন্তিত চিন্তিত চিন্তিত
মাসুদ্রানায় এলিয়েন? বইটা পড়া লাগে !!!

তারেক অণু এর ছবি

রানা নিজেই কি এলিয়েন!

আকাশ চৌধুরী এর ছবি

মাসুদ রানার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব- গল্পের এই চরিত্রকে নিজের মাঝে আবিস্কার করে, তার অনুপ্রেরণায় একাধিক অসমসাহসী যুবক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এরচেয়ে বড় সন্মান এবং স্বীকৃতি আর কী হতে পারে!

আসলেই কি তাই? গর্বে বুকটা ভরে উঠল। এতদিন ভাবতাম মাসুদ রানার সবচাইতে বড় বাস্তব কৃতিত্ব কোন এক কিশোরের স্কুলব্যাগে আবিষ্কৃত হয়ে স্যারের হাতে কিঞ্চিৎ উত্তম-মধ্যমের মাঝেই। বাসায় খবর পৌঁছাবার পরে ঐ গুণধরের বাবা ছেলেকে ডেকে নিলেন তার রুমে। কিশোরটি ভাবছিল একইদিনে দুবার মার পড়বে, কপাল আসলেই খারাপ। তাকে অবাক করে দিয়ে মুচকি হেসে বাবা বললেন, "জানিস, আমিও একদিন মার খেয়েছিলাম মাসুদ রানা সমেত বামাল ধরা পড়ে? "

আমাদের মনের চিরকিশোর অংশে বেঁচেবর্তে থাকুক মাসুদ রানা!

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

কাজের ফাঁকে কোনোদিকে যাব না বলে পণ করেছিলাম। পারলাম না! গুরু গুরু

--সাইফুজ জামান

তারেক অণু এর ছবি

কেন? কোথায় গেলেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

যাই নাই। আসলাম। আপনার লেখা পড়তে।

--সাইফুজ জামান

তারেক অণু এর ছবি
টিউলিপ এর ছবি

কেন যেন রানা আমার খুব প্রিয় ছিল না (এই রে, গণধোলাই খাওয়ার রাস্তা খুলে দিলাম) , তবে প্রথম শ'দুয়েক পড়েছি। অগ্নিপুরুষ, আই লাভ ইউ ম্যান, ধ্বংসপাহাড় - এরকম হাতে গোনা পাঁচ ছয়টাই ভালো লেগেছিল। তবে রানা নেশার মত ধরে রাখতে পারে, সেটা টের পেতাম।

শেষের ইতালীয় গানটা মনে হয় রুনা লায়লা গেয়েছিলেন, এখন ইতালীয়টা শুনতে ইচ্ছে করছে।

আর শেষে সবার মত আমারো প্রশ্ন, আপনি শিওর আপনিই রানা নন?

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

তারেক অণু এর ছবি

আহা, অগ্নিপুরুষের গান।

আমি? হে হে অ্যাঁ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ক্লাস সিক্সে থাকতে কাজী আনোয়ার হোসেনকে আমরা ছয়জন বন্ধু মিলে একবার চিঠি লিখেছিলাম রেবেকাকে মেরে ফেলার প্রতিবাদ করে...
আর তার সাথে তাকে বলেছিলাম সোহানার সাথে যেন রানার বিয়েটা দিয়ে দেয়; দেরি করলে সোহানার বাবা মা আবার মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেবে...

সেই মাসুদরানা এখনো বিয়ে করল না....

তারেক অণু এর ছবি

হ, নিজেও গেরস্থ হইছেন, রানাকেও করতে চান রেগে টং

এরিক এর ছবি

সুন্দর লেখা। উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

নাঈম এর ছবি

টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বই কিনতে শিখেছিলাম যে কারণে, আজও যে কোন দূরপাল্লার জার্নিতে প্রিয় সঙ্গী হো হো হো

তারেক অণু এর ছবি
শাব্দিক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক গুল্লি উত্তম জাঝা! লেখা -গুড়- হয়েছে

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

তারেক অণু এর ছবি
সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

চলুক চলুক গুল্লি উত্তম জাঝা!
মাসুদ রানার কিছু কিছু বই এত ভালো, বিশেষ করে আই লাভ ইউ ম্যান, অগ্নিপুরুষ,হ্যালো সোহানা এমন আরও অনেক অনেক বই।
যখন ফিনল্যান্ডে আসি ব্যাগ বোঝাই করে অন্যান্য বইয়ের সাথে মাসুদ রানাও এসেছিল আমার সাথে। শুধু ছোট বেলাতেই নয়,পরবাসেও মাসুদ রানা আমার খারাপ সময়ে সঙ্গ দিয়েছে এবং মাঝে মাঝে এখনও দেয়।
সব বই যে ভালো লাগে তা বলবনা, তবে মাসুদ রানার প্রতি তীব্র একটা টান টের পায় আমি, যখনি সামনে দেখি কিনে ফেলে পড়ে ফেলি। হাসি

কেমনে লিখেন অনুদা এমন সব লেখা!! চিন্তিত

তারেক অণু এর ছবি

টান থেকে রে ভাই!

কীর্তিনাশা এর ছবি

আহারে মাসুদ রানা আর সেবা ! কত পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন রে ভাই !!

চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তারেক অণু এর ছবি

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশেষে আপনার মাসুদ রানা বিষয়ক লেখা আসলো। হাসি

দিলেন পুরা নস্টালজিক কইরা। রানার ১ টা বইও হাতের কাছে নাই। বই মেলার থেকে বই কেনার লিস্টে আরো কিছু বই যোগ হল। এই আকালের দিনে খরচ বাড়ানোর জন্য কষে মাইনাস!!!

লেখা যথারীতি দুর্দান্ত।

-কাজী

তারেক অণু এর ছবি

সেবা নিয়ে আরো লেখা আসবে-

মন মাঝি এর ছবি

'কুয়াশা' নিয়ে লেখেন না!

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
বাওয়ানী এর ছবি

রানা দ্যা বস চলুক

যখন রানা ক্যাসিনোর টেবিলে জেতা হাজার হাজার ডলার সাথের সঙ্গিনীকে দিয়ে দেয় যেন সে নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতে পারে ( মনে হয় বন্ধু বইতে)

এটা স্বর্নমৃগ তে।

তারেক অণু এর ছবি

আচ্ছা! ধন্যবাদ, ইয়ে মেয়েটা কি থাইল্যান্ডের ছিল? কোন দেশের ঠিক মনে পড়ছে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ থাইল্যান্ড‌্যের।

--সাইফুজ জামান

তারেক অণু এর ছবি

মনে পড়েছে

মন মাঝি এর ছবি

চলুক দারুন!

একটা সনির্বন্ধ অনুরোধঃ এইবার দেশে আসলে (ফেব্রু?) কাজীদার একটা সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়ার চেষ্টা করেন - যা দিয়ে এরকম অন্তত ৬/৭টা বড় বড় পর্ব লেখা যায়। পারলে সেটাকে ভিডিও-ও করে ফেলতে পারেন ভিডিও ডকুমেন্টারির আকারে। এই মানুষটার উপ্রে খুব একটা লেখালেখি বা মিডিয়াতে ধারণকৃত সাক্ষাৎকার/অনুষ্ঠান ইত্যাদি তেমন কিছু নাই মনে হয়। অন্তত অন্যদের তুলনায়। অথচ ভেবে দেখেন বাংলাদেশের কতগুলি প্রজন্মের তরুনদের তিনি পজিটিভলি প্রভাবিত করে গেছেন। অনুপ্রাণিত করেছেন, আনন্দময় করেছেন। এমন কারো সম্পর্কে আমাদের প্রচুর মিডিয়াধৃত উপাদান থাকা উচিত। অথচ বেশিদিন সেই সুযোগ থাকবেও না মনে হয়। আপনি এই কাজটা সবচেয়ে ভাল পারবেন মনে হয়।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

শুধু থাম্বস-আপ দেখায়ে পিছলায়ে গেলে হপে না। একটা চেষ্টা নিয়েন, প্লিজ। হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

করব হাসি

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

তারেক অণু এর ছবি

ব্যানার হবে, নতুন ব্যানার!

মন মাঝি এর ছবি

রানার প্রথম প্রেমিকা রাফেলা বার্ড না। সুলতা সেন না ঐ রকম কি যেন (ধ্বংস্পাহাড়)। হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

না রে ভাইয়া! প্রথম বই ধ্বংস পাহাড় কিন্তু অনেক অনেক আগের ঘটনা এই লাভ ইউ ম্যান, সেখানেই রানা প্রথম বারের মত প্রেমে পড়েছিল বলে উল্লেখ আছে।

পরমাণুঅণুজীব এর ছবি

পুরা মাথা আউলাইয়া দিলি রে ভাইডি ! গুল্লি

আই লাভ ইউ ম্যান এ- সেই দৈত্যাকার বন্ধুর মৃত্যুর সময় বলা কথাগুলা বুকের মাঝখান দিয়ে গেছিল। এখনো ওই জায়গা দিয়ে কেমন একটা লম্বা শ্বাস বের হয়ে আসে।

তারেক অণু এর ছবি

সত্য

তানিম এহসান এর ছবি

রডরিক!

তারেক অণু এর ছবি

হ, ফিলিপ রডরিক, তার দেখা পায়ছিলাম মোজাম্বিক যেয়ে

তানিম এহসান এর ছবি

ব্যারনেস লিনা অটারম্যান আর কংগ্রেস সদস্যা লরেলি’র নাম বাদ গেছে মনে হয় দেঁতো হাসি আরেকটা চরিত্র আমার খুব বেশি প্রিয়: মুক্ত বিহঙ্গ বইয়ের মাইকেল সেভারস; কিংবা নুমা’র রেডক্লিফ।

এই শ্রদ্ধেয় বটবৃক্ষের সাথে বইপড়ুয়া গ্রুপের কয়েকজন বন্ধু’র সৌজন্যে দেখা করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। এত নিপাট ভদ্রলোক, আটপৌরে মানুষ তিনি! একটা সাদা লুঙ্গি আর একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বসে আমাদের প্রচুর সময় দিলেন। সময় নির্দিষ্ট করা ছিলো কিন্তু তার চাইতে বেশি সময়ই আমরা পেয়েছিলাম। বাসায় যাবার আগে নিচে গেটে বলে যেতে হলো কতজন, যতজন বলা হবে তাঁর চাইতে বেশি মানুষ হলে নাকি ঢুকতে দেন-না। এই সুযোগে কয়েকটা তথ্য দিয়ে দেই:

১) তাঁর সবচাইতে পছন্দের বই: রবিন হুড
২) তাঁর পছন্দের শ্রেষ্ঠ তিন রানা: অগ্নিপুরুষ, আই লাভ ইউ ম্যান এবং মুক্ত বিহঙ্গ (আমার এই তিন সবচাইতে পছন্দ দেঁতো হাসি)
৩) নিজের তৈরি সবচাইতে প্রিয় চরিত্র: গিলটি মিয়া (এই চরিত্রের ভাষা তিনি বেছে নিয়েছিলেন তাঁর মায়ের মুখ থেকে শোনা ভাষা থেকে)
৪) ২২ বছর তিনি সেবা প্রকাশনী লসে চালিয়েছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। সেখান থেকেই আজকের সেবা।
৫) বাংলাদেশের প্রচুর লেখকের শুরু সেবা থেকে, তিনি সবসময় চেষ্টা করেছেন সবার বিপদে পাশে থাকার জন্য। পাশাপাশি আজকের ধ্রুব এষ এর শুরু কিন্তু বলতে গেলে সেবা থেকেই। কিন্তু তিনি এই বিষয়ে কথা বলার সময় এমনভাবে বললেন যেন তাঁর কোন অবদান-ই নেই।

যে কথাটা না বললেই নয়, পুরোটা সময় আমার মনে হয়েছে রাহাত খানের সামনে বসে আছি হাসি

প্রিয় উড়ন্ত ঘুড়ি, আপনার সেবা প্রকাশনী নিয়ে আগের লেখাটা নাকি তাঁর চোখে জল এনেছে। দেশে আসেন, আরেকবার আপনার সাথে যাবো।

জুন ভাই কই? তাঁর কাছে ছবি আছে সেদিনের, আছে ভিডিও। একটা পোস্ট দেন ভাইজান।

তারেক অণু এর ছবি
সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

রানা যে আমার কে ছিলো, কেমনে কই! কি দুরন্ত প্রেম!!
সোহানারে ক্যান জানি সহ্য হইতো না। কিন্তু রূপার মহাভক্ত ছিলাম।

হেই, রানার শেষ কোন বইটা পড়েছেন আপনি?

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তারেক অণু এর ছবি

হুম, চিন্তা করতে হবে, কয়েকটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়ি

পাঠক এর ছবি

মাসুদ রানার প্রথম বই (ধ্বংস পাহাড় ) ১৯৬৬ সালের দুর্লভ একখান কপি আমাদের বাসায় আছে। দেঁতো হাসি
আপসোস একটা ভালো বাংলাদেশের সিনেমা হল না এই দুর্দান্ত স্পাইকে নিয়ে।

তারেক অণু এর ছবি

ওয়াও! দারুণ, বাঁধিয়ে রাখার মত জিনিস!

সিনেমা তো হয়েছিল, গোফওয়ালা ভুড়িয়াল রানা ছিল !

অতিথি লেখক এর ছবি

মাসুদ রানার সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ক্লাস সেভেন এ "মরণকামড়" দিয়ে শুরু । এরপর প্রায় সবগুলোই (ইদানিং প্রকাশিত হওয়া বাদে) পড়েছি, সংগ্রহেও রেখেছি। অসাধারণ সময় কেটেছে রানা, সোহানা, রূপা, কবীর চৌধুরী আর গিলটি মিয়াদের সাথে। তাবৎ দুনিয়া সম্পর্কে জেনেছি। কাজীদার এই অসাধারণ সৃষ্টি মাসুদ রানা, যুগ যুগ ধরে রোমাঞ্চপ্রিয় বাঙ্গালিদের সাথী হয়ে রয়েছে। রানার সেরা ৫ টি বইঃ
৫। অন্ধকারে চিতা
৪। মুক্তবিহংগ
৩। সংকেত।
২। আই লাভ ইউ ম্যান
১। অগ্নিপুরুষ।

-রানা।

তারেক অণু এর ছবি

তাবৎ দুনিয়া সম্পর্কে জেনেছি। গুল্লি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, মাসুদ রানা ! সেই কবেকার কথা।

তারেক অণু এর ছবি

কেন? একটু স্মৃতিচারণ করুন, আমরা জানি।

তমসা  এর ছবি

ম্যান অন ফায়ার পড়েছি; সিনেমার সবগুলো ভার্সন-ও মিস করিনি; কিন্তু অগ্নিপুরুষের মত বুকটা ফাঁকা করে দেওয়া অনুভূতি কোনোটাতেই হয়নি।

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

লাইক লাইক লাইক লাইক হাসি

তারেক অণু এর ছবি
আশালতা এর ছবি

রানার প্রথম দিকের বইগুলোর কথা এল না যে ? পড়নি ? আমার কাছে আছে কিন্তু একদম সেই সময়ের টাটকা এডিশনগুলো, এক টাকা দেড় টাকা দাম। পুরনো গন্ধ মাখানো বইগুলো হাতে নিলে এখনও কি ভালো যে লাগে। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি

প্রথম দিকের বইই তো বললাম!, শেষের দিকের গুলা তো আমিই পড়ি নাই।

স্যাম এর ছবি

এক টাকা দেড় টাকা দাম?!! এ তো আসলেই ঠাম্মি! হাহহাহ - আমি এত পুরনো পাঠক - আমিইতো ৮/১০ টাকায় কিনেছিলাম যা মনে পড়ে

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ৬-৮ টাকা দিয়ে কিনে পড়েছি।

ফারাসাত

আশালতা এর ছবি

ওহে বুদ্ধিমান, মাথার গ্রে সেলগুলোকে কাজ টাজ করতে দিয়েন এক আধটু। আমার কাছে এরচেও ঢের পুরনো বইও আছে কিন্তু তার মানেই সেগুলো আমার নিজের কেনা তো নয়। আমার বাবা দাদারা সবাই খানদানি বইয়ের পোকা ছিলেন। সেগুলো ওঁদের কেনা। দাদু বাড়িতে বিরাট লাইব্রেরি ছিল। মুক্তিযুদ্ধে সব গেছে। এখন অল্প কিছু আছে বাসায়। সেগুলোর কথাই বলছি। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি

বাহ, সেগুলো দেখতে হবে।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আহা! মামার কেনা (সম্ভবত) ধ্বংস পাহাড়ের প্রথম কপি থেকে শুরু করে এই মোটা বিস্মরনের প্রথম কপি ছিল বাসায়। - কোন উল্লুক যেন নিজের মনে করে নিয়ে চলে গেছিল! অনেক পরে সোনাদীঘির মোড়ে পুরানো বইয়ের দোকানে পেয়েছিলাম আত্মহত্যা আর দ্বীপ বিভীষিকা (শেখ আবদুল হাকিম আর খোন্দকার আলী আশরাফের লেখা যথাক্রমে) - প্রথম প্রকাশের বইগুলোর প্রতি কেন যেন একটা আলাদা টান থাকে।

খেকশিয়াল এর ছবি

আমি জানি তো! তুই-ই মাসুদ রানা! নানান দেশের লাস্যময়ীদের সাথে তোর ছবি দেইখা আমার এই ধারণা পোক্ত হইছে! খাইছে

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তারেক অণু এর ছবি
ওডিন এর ছবি

আমারও সেইরকমই মনে হয় চাল্লু

তারেক অণু এর ছবি

এক রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর! আপনিও ওডিন দা খেকুর দলে!

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সত্য কথা - এথেন্সের বুকে দুই সুন্দরী বিদেশিনীর মাঝে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসার ছবি দেখলে তো তাই মনে হয়! চোখ টিপি

তারেক অণু এর ছবি

গ্রীস মিস করি।

ওডিন এর ছবি

এই লেখায় এখনো একটাও ভোট পড়ে নাই এইটা একটা কথা হইলো!!!!! অ্যাঁ

আমি নাহয় মাসুদ রানার ফ্যান না, কিন্তু তারেক অণু'র তো ফ্যান দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

আহা, রানার কী আর ভোট লাগে!

আশালতা এর ছবি

ভোটের উপযোগিতাটা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারি নাই। ভোট দিলে কি হয় আর না দিলেই বা কি ?

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি
শামীম আশরাফী এর ছবি

লেখার টাইটেলটা পরিচিত লাগছে। কাজীদাকে নিয়ে কোন এক লেখার কমেন্টে বা স্ট্যটাস এ লিখেছিলাম মনে হয় :)। যাইহোক লেখাটি পড়ে নস্টালজিক হতে হল। সত্যি, কাজীদা সারা দুনিয়ার অজানাকে মাসুদ রানার মাধ্যমে আমাদের কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন মনে হয় আমরাই সেখানে ছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর ভাষায় তুলে ধরার জন্য।

তারেক অণু এর ছবি

আপনেই নাকি! অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার আপনার প্রতি। একটা কমেন্টেই পেয়েছিলাম এটুকু মনে আছে, আবারও ধন্যবাদ।

সাকিন উল আলম ইভান  এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
আল-আমিন এর ছবি

মাসুদ রানার কিছু বইয়ের লিংক দিন ভাই

তারেক অণু এর ছবি

সেবা থেকে লিঙ্ক পাবার কোন উপায় নেই বিধায় দেওয়া যাচ্ছে না

Shah Arafat Hossain এর ছবি

মাসুদ রানা সিরিজের "ক্ষ্যাপা নর্তক" আর "শয়তানের দূত" এই দুইটা বইয়ের reprint এ date দেওয়া আছে প্রথম প্রকাশ "জুলাই ১৯৭১" আর "নভেম্বর ১৯৭১" !!! কারো কাছে থাকলে check করতে পারেন!!! (বই দুইটা কি আসলেই যুদ্ধের সময় লেখা???) আমি এমনিতে জানি যে পাক আর্মি ১৯৭১ এ সেবা প্রকাশনী পুড়িয়ে দেয়। কিন্তু বই তে যে সময় লেখা আছে সেইটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। আপনি মাসুদ রানা সম্পর্কে অনেক জানেন দেখে শেষমেশ আপনার শরণাপন্ন হচ্ছি। আশা করি আমার কৌতূহল নিবৃত্ত করবেন।

তারেক অণু এর ছবি

খবর নিচ্ছি, ইন্টারেস্টিং!

মন মাঝি এর ছবি

ইন্টারেস্টিং খবর চান? তাহলে আরও ইন্টারেস্টিং খবরের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। কাজীদার সাথে কি যোগাযোগ আছে এখনও? থাকলে ওনার কাছে জিজ্ঞেস করুন তো - মনমাঝি জানতে চেয়েছে 'পিচ্চি পিরিঙ্গি' কেমন আছে? তারপর দেখেন আরও কত মজার গল্প বেরোয়! দেঁতো হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

কেন, আপনিও 'পিচ্চি পিরিঙ্গি'-কে চেনেন নাকি? অ্যাঁ

****************************************

বটতলার উকিল এর ছবি

কি মনে করে দিলেন তারেকাণু ভাই!

বটতলার উকিল

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

এখনো মনে হয় সেদিন থেকে পড়া শুরু করলাম মাসুদ রানা , তার চোখে দেখলাম বিশ্বটাকে । পড়ার বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে রাখা পেপার ব্যাকে জমাট উত্তেজনা , আবেগ , রোমাঞ্চ । চির যুবক মাসুদ রানা মানেই আমার জীবনের উচ্ছল কৌশর ।

আহা কি সুন্দর দিনগুলা ।

লাল নীল ভাবনা

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই !

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভবঘুরে কে? রানা নাকি তারেক অণু? চিন্তিত

কাইয়ুম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।