১।
প্রিয় সাগ্নিক,
তোর বয়স এখন ঠিক দুই মাস তেইশ দিন। এই দুই মাস আমার পুরোটাই কেটেছে একমাত্র তোকে নিয়েই। তোর চোখ, তোর মুখ, তোর নাক, চুল, আঙুল, তোর শ্বাস-প্রশ্বাস এসব নিয়েই দেখতে দেখতে কেমন এতগুলো দিন পার হয়ে গেল, দ্যাখ। তোর সবকিছু আমার কতটা প্রিয় তুইতো বুঝতে পারিস, সোনা আমার। আর কারও না বুঝলেও চলে এসব, না বুঝলেই ভালো বরং, অন্যেরা এসব কথা যত কম জানবে ততই কম জ্বালাবে, তাই না?
ফরমালিন বা বরফ দেয়া ছাড়া মাছ যেমন দিনে দিনে পঁচে যায় তেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন নানা বিষয় উত্তপ্ত আলোচনা-সমালোচনা হয়ে হারিয়ে যায়। শ্রেণী বা গোষ্ঠী স্বার্থকে স্পর্শ করে যায় এমন বিষয়গুলো ব্যপ্তি ও গভীরতা বিচারে সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত সব ধরনের মিডিয়াতে টিকে থাকে। এরপর নতুন ইস্যু এসে পুরনোগুলোকে চাপা দিয়ে যায়।
[ জঙ্গীবাদের মতো এত অচেনা এবং ভয়াবহ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। একের পর জঙ্গী আক্রমণের পর সেই উপলব্ধি থেকেই এই সিরিজের অবতারণা। নিজের মতামত দিয়েই শুরু হোক, পাঠক মন্তব্যে আলোচনা চালানো যাবে। ]
তাঁদের প্রথম দেখা লন্ডনে এক বন্ধুর বাড়িতে। তেইশ বছরের তরুণ "দ্যা বিটলসের" গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের তখন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। প্রথম দিনের আলাপে ছেচল্লিশ বছরের রবিশঙ্কর লাজুক এবং নিরহংকার হ্যারিসনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। লন্ডন থেকে সামান্য দূরে ছিল জর্জ হ্যারিসনের বাংলো। তবলাবাদক আল্লা রাখাকে নিয়ে রবিশঙ্কর সেতার শেখাতে তাঁর সে বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁদের দ্বিতীয় এ সাক্ষাতে জন লেনন আর রিংগো স্টারও ছি
ব্যস্ত শহরের মধ্যে হুট করে একটা নির্জন রাস্তা আর সারি সারি নাম জানা বৃক্ষের নির্বাক দেয়াল। রাস্তার সংক্রামক নির্জনতা প্রতিদিন নিয়ম করে রাত নিয়ে আসে পৃথিবীতে। তখন সমস্ত শহর সেই রাস্তার মতো নির্জন। রাতজাগা নিয়ন বাতি আর স্পিডলিমিট অতিক্রম করে চলে যাওয়া দুই একটা মোটরকারের পদশব্দ শহরের সবুজকে আরেকটু নির্জন করে, মানবিক করে। হাঁটতে হাঁটতে একটু দূরে গেলেই কোনো অলৌকিক রাস্তার পাশে পার্ক করা সারি সারি গাড়ি।
পরবাসের প্রথম দিনগুলো ভালোই কাটে। নতুন দেশ, নতুন মাটি, নতুন মুখ, রঙিন দুনিয়া। বেড়াতে আসার মতো। এই সময়টাতে দেশের জন্য কষ্ট হয়না। নতুন পরিবেশের শতেক সংকেতের পাঠোদ্ধার করতে করতে মস্তিস্ক এই সময়টাতে দুঃখী হওয়ার সময় পায়না বোধহয়।
আমরা এখনো কবজি ডুবিয়ে মাছ মাংস খাই। খিচুড়ি, বিরিয়ানী, তেহারি- নেহারি, চটপটি- ফুচকা, তেলেভাজা চপ, তন্দুরি সালাদ সব খাই। সেমাই দধি আইসক্রিম মিষ্টান্ন কিছুই বাকী নাই। বেড়াতে যাবার সময় আমরা এখনো সুগন্ধী মাখি, জুতো পালিশ করি, জামা ইস্তিরি করি। গায়ে সাবান, মুখে ফেসওয়াশ, চুলে তেল শ্যাম্পু কণ্ডিশনার দেই। অফিস করি, বেতন তুলি, মানিব্যাগের টাকা ফুরোলে বন্ধুর কাছ থেকে ধার করি। সবই আগের মতো আছে শুধু একটি বাড়তি
১
একটি গল্প বলি। উনিশ বছরের তৌহিদের গল্প। পড়াশোনায় খারাপ ছিলো না কোনো কালেই তবে মাধ্যমিকের পরে তার বাবার কাজের বদলিতে অন্য শহরে পাড়ি জমালে তাদের পরিবার সে একা হয়ে পড়ে, আগের বন্ধুবান্ধবদের হারায়, খানিকটা বিষণ্নতায় ভুগে, পড়াশোনায় তেমন মন বসে না। অথচ ছোটবেলা থেকে সে স্বপ্ন দেখতো সে “সুপারহিরোদের” মতো কিছুটা করে একদিন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে।
বাসায় ঢুকতে যেয়ে কলিং বেলের কাছে হাতটা আপনা থেকেই থেমে গেলো। দেয়ালে সুইচটার উপরে নতুন একটা শোপিস ঝুলছে, আরবি কিছু শব্দ-বাক্য লেখা তাতে। কোন সুরা-দোয়া হবে নিশ্চয়ই, পাঠ করলে অশেষ সওয়াব অথবা শয়তানের প্রবেশাধিকার ক্ষুণ্ণ করে গৃহস্থের কল্যাণকামী কিছু। ক’দিন আগেও তো সেখানে কার্জন হলের সামনে থেকে কেনা টেরাকোটার নারীমুখটার লাজুক হাসি দেখেছিলাম, কবে বদলে গেলো মনে করতে পারছি না একেবারেই। অবশ্য আমাদের বাসার