ঢাবি নিয়ে কিছু তেতো কথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৬/১২/২০১১ - ৭:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ সকালে একটা আর্টিকেল পড়লাম, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধঃগমনের স্বরুপ তুলে ধরা হয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এক সময়ের উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ থেকে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে কলঙ্কে পরিণত হয়েছে। কোনো র‍্যাঙ্কিংয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫০০-র ভেতরেও খুঁজে পাওয়া যায় না। শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি, ছাত্রদের চাঁদাবাজিসহ সব কিছুই হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে, শুধুমাত্র পড়ালেখা ছাড়া। যখন আমাদের উচিত এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার তার পুরনো অবস্থান ফিরিয়ে দেয়ায় সচেষ্ট হওয়া, তখন আমাদের একাংশ ওই নোংরা রাজনীতিতে হাত মেলাচ্ছে আর বাকিরা বালিতে মুখ গুঁজে আকাশপানে পশ্চাৎ তুলে দিয়ে অদৃষ্টকে দুষছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজকে যে অবস্থায় পৌঁছেছে, তাতে একে আর ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ কেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’-ও বলা যায় কি না- ভেবে দেখা দরকার। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালানোর জন্য ন্যুনতম প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়েই আজ আমি কথা বলতে চাই।

একটা শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে evaluation বা মূল্যায়ন। ছাত্রদেরকে মূল্যায়ন করা হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। সেখানে তারা সারা বছর ধরে কত ভালো করে পড়ালেখা করেছে- সেটা যাচাই করা হয় এবং তার পরে তাকে সে ফলাফল হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। যে শিক্ষক সারা বছর ছাত্রদেরকে পড়ালেন, তাঁর চোখে প্রত্যেকটি ছাত্র কতটুকু সফল- সেটা ছাত্রদেরকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে এর মাধ্যমে। ঠিক একইভাবে, শিক্ষকরা কতটুকু ভালোভাবে পড়িয়েছেন- সেটার মূল্যায়ন করারও অধিকার রয়েছে ছাত্রদের। ছাত্ররাই সারা বছর ধরে ঐ শিক্ষকের ক্লাস করেছে, কাজেই বছর শেষে তারা ওই শিক্ষককে জানিয়ে দেবে- যে তাঁর ক্লাস তাদের কতটুকু পছন্দ হয়েছে, তিনি তাঁর কর্তব্য কতটুকু ভালোভাবে সম্পন্ন করেছেন এবং কোথায় কোথায় তাঁর দক্ষতার (ও সততার) অভাব রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই, এমনকি, বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। শিক্ষক শেষ ক্লাসে সব ছাত্রকে একটি মূল্যায়ন ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান। ছাত্ররা এই ফর্ম পূরণ করে ডিপার্টমেন্ট অফিসে জমা দিয়ে আসে, এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষক এই মূল্যায়ন দেখতে পান। এই দ্বিমুখী মূল্যায়ন পদ্ধতি একটা শিক্ষা ব্যবস্থার অপরিহার্য্য অঙ্গ। যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষককে মূল্যায়নের অধিকার ছাত্রদেরকে দেয়া হয় না- সেখানে ছাত্রদের পরীক্ষা নেয়ারও কোনো অধিকার শিক্ষকদের থাকতে পারে না।

ছাত্রদেরকে তাদের পরীক্ষার খাতা দেখতে দেয়া হয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেন দেখতে দেয়া হয় না- সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমি এটা বুঝি যে- ছাত্রদেরকে তাদের পরীক্ষার খাতা দেখতে না দেয়া চরমতম অন্যায়, এবং ছাত্রদের অধিকারের লংঘন। ছাত্ররা সারা বছর ধরে পড়ালেখা করে পরীক্ষা দেয়। সে পরীক্ষার খাতায় তারা কী ভুল লিখলো, কী সঠিক লিখলো- সেটা যদি তারা দেখতে না পায়, তাহলে তারা তাদের ভুল শুধরে নেবে কীভাবে? বারবার প্রতি পরীক্ষায় একই ভুল করতে থাকবে, এবং ব্যর্থ মনোরথ হয়ে একটা সময় নিজেকে সে গবেট মনে করতে থাকবে। ঠিক একইভাবে, কোনো শিক্ষক যদি খাতা দেখার ব্যাপারে অসৎ হন, অর্থাৎ যথাযথ সতর্কতার সাথে নিরপেক্ষভাবে খাতা না দেখেন- সেটারও কোনো প্রতিকার হয় না। ছোটোখাট মিডটার্ম থেকে শুরু করে ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষার উত্তরপত্র ছাত্রদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করার কথা সব সেরা ছাত্রদের মধ্যে তুলনামূলক বাছবিচার করে যোগ্যতম আবেদনকারীকে বেছে নিয়ে। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাঁদের নিজ নিজ বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞানসম্পন্নদের মধ্যে পড়েন। তাঁদের যোগ্যতা এবং সততার ওপর সবাই নিঃশর্ত আস্থা রাখতে না পারলে সে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। একজন শিক্ষক ছাত্রদেরকে কী পড়াবেন, কীভাবে পড়াবেন, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন করবেন এবং পরীক্ষার খাতা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- এই পুরো বিষয়টাই সম্পূর্ণভাবে শিক্ষকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতে অন্য কারো দখলদারি গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকের পড়ানোর পদ্ধতি এবং বিষয়াদি যদি ছাত্রদের মনঃপুত না হয়, তাহলে তারা সেটা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষককে জানাতে পারবে। তবে অন্য কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক সারা বছর ধরে ছাত্রদেরকে পড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কোর্স পড়ানো কখনোই চাট্টিখানি বিষয় নয়। এই পুরো ব্যাপারটাতে তাঁর কোনো সাহায্যকারী থাকে না। কখনও কোনো এক্সটার্নাল এসে তাঁর দু’একটা লেকচার পড়িয়ে যায় না।

তবে, পরীক্ষার সময় পুরো ব্যাপারটা বদলে যায়। প্রশ্নপ্রত্র তৈরী করার সময় এক্সটার্নাল এবং মডারেশন বোর্ড মিলিয়ে যে বিশাল দলের উদ্ভব ঘটে, তা দিয়ে একটা ফুটবল টীম তৈরি করা সম্ভব। বেচারা অধ্যাপক যত্নের সাথে যে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন, তাকে কেটেছিঁড়ে জোড়াতালি দিয়ে একাকার করে নিজেদের জ্ঞান জাহির করেন এই ফোপর দালাল মডারেশন বোর্ড। ফলে, পরীক্ষার হলে গিয়ে অধীত বিষয়সমুহ এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক দেখে ছাত্রদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এই অদ্ভুত মডারেশন পদ্ধতি পৃথিবীতে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। এর মূল কারণ বোধকরি একে অন্যের ওপর অনাস্থা। শিক্ষকগণ হয় নিজেরাই একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারেন না, অথবা নিজের চরকায় তেল দেয়ার চেয়ে অন্যের কাজে নাক গলানোকে তাঁরা বেশি পছন্দ করেন। এ ব্যবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।

প্রত্যেক বিভাগে প্রথম বর্ষের কোর্সগুলোর জন্য শিক্ষক নির্ধারণে যত্নবান হতে হবে। আমরা সবাই জানি, স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিস্তর তফাত। একটা ছাত্র যখন একটা কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়ে, সেটা অনেকটা কুয়োর ব্যাঙের হঠাৎ করে নদীতে এসে পড়ার মত। একটা ছাত্রের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেমন যাবে- সেটা নির্ভর করে তার প্রথম বছরের অভিজ্ঞতার ওপর। যে ছাত্ররা প্রথম বছরে বৃদ্ধ, থেমে থেমে কেশে কেশে কথা বলা কয়েকজন উত্তেজনাহীন অধ্যাপকের ক্লাস করে- তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা হবে একঘেয়ে, উত্তেজনাহীন। ওরা প্রথম বর্ষেই ক্লাস করার সব আগ্রহ হারাবে। যে বিষয়ে পড়তে এসেছে, সে বিষয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাবে গোড়াতেই। পরের বছর এদের একটা বড় অংশ আবার ভর্তি পরীক্ষা দেবে। কেউ কেউ পড়ালেখা ছেড়ে দেবে, কেউ কেউ পুনরায় ভর্তি হবে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ক্লাসের বাইরেই সময় কাটাবে এদের বড় একটা অংশ।

সবাই লক্ষ্য করে দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় গ্যালারী ক্লাসরুমগুলো বরাদ্দ থাকে প্রথম বর্ষের জন্য। এরপর ধীরে ধীরে ক্লাসরুমের আকার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে। কারণ, শিক্ষকরাও জানেন, ছাত্ররা ধীরে ধীরে ক্লাস করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আমাদের প্রথম বর্ষে ছাত্র-ছাত্রী ছিলো ১৩০ জনের মত। ক্লাসে আসতো ৭০-৮০ জন। অন্যদিকে, অনার্স পাস করে বেরোয় ৯২ জন, তবে ততদিনে ক্লাসে উপস্থিতির হার ক্লাসপ্রতি ১০ জনে ঠেকেছে। এই পুরো ব্যাপারটার জন্য শিক্ষকরা একচেটিয়াভাবে ছাত্রদেরকেই দায়ী করেছিলেন এবং তাদের সবাইকে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে বাধ্য করেছিলেন। সে জরিমানা দিতে গিয়ে অনেক দরিদ্র ছাত্রকে দু’বেলা খেয়ে কাটাতে হয়েছিলো মাসখানেক।

ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে তরুণ, উৎসাহী, উদ্দীপ্ত শিক্ষকরা নবীনদের ক্লাস করাবেন। সেখানে তাঁরা ক্লাসের পড়ার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। ক্লাসে ছাত্ররা যে পড়া করছে, সেগুলো দিয়ে কীভাবে পৃথিবীর সব বড় বড় সমস্যা সমাধান করা যায়, পৃথিবীর কোন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছেন- এসব বিষয় ছাত্রদেরকে জানাতে হবে। ফলে, ছাত্রদের মধ্যে একটা অসাধারণ আগ্রহের সৃষ্টি হবে, সৃষ্টি হবে জ্ঞানপিপাসার। এর পর বাকি ছাত্রজীবন ওদেরকে আর দিকনির্দেশনা দিতে হবে না। সলতের মাথায় আগুন দিলে যেমন পুরো সলতে আপনিই পুড়ে চলে, ঠিক সেভাবেই এই নবীনদের জ্ঞানতৃষ্ণা কোনোদিনই আর মিটবে না। ওরা আপনিই নিজেদের রাস্তা করে নেবে। ডিপার্টমেন্টের সেমিনার লাইব্রেরি আর জনমানবহীন অন্ধকার কুঠুরী থাকবে না, কলকোলাহলে মুখর হয়ে উঠবে সেই জ্ঞানালয়, নবীনের পদচারণায় ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে আলোকিত অংশে পরিণত হবে।

প্রত্যেক কোর্সে হোমওয়ার্ক এবং মিডটার্ম চালু করতে হবে। ছাত্রদেরকে সারা বছর পড়ালেখা করতে বাধ্য করার জন্য এবং সেই পড়ালেখা থেকে যথাযথ সুফল বের করে আনার জন্য হোমওয়ার্ক এবং মিডটার্ম অপরিহার্য। হোমওয়ার্ক দেখার জন্য টিচার্স এসিসট্যান্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। যে কোনো কোর্সের টিএ সাধারণত সেই বিভাগেরই সিনিয়র কোনো ছাত্র হয়। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র ক্লাসগুলো থেকে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদেরকে বেছে নেয়া হতে পারে। এ ব্যবস্থার মূল সুবিধা হলো, একজন ছাত্র তার জুনিয়রদের যতটা কাছাকাছি যেতে পারে, শিক্ষক ততটা পারেন না। শিক্ষকদের সাথে ছাত্রদের একটা দূরত্ব থেকেই যায়, আর সেটা থাকাটাই হয়তো বাঞ্ছনীয়। কাজেই, ছাত্রদের সব সমস্যা তারা শিক্ষকদেরকে জানাতে পারে না। অন্তত, তাদের কাছে যাবার, তাদের কথা শোনার জন্য কিছু কিছু লোক থাকা দরকার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ল্যাব ক্লাস নেয়ার জন্য তিন-চার জন করে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। অথচ, ছাত্রদেরকে ল্যাব করানোর পুরো দায়িত্বটাই টিএ তথা সিনিয়র ছাত্রদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায়। এতে শিক্ষকদের সময় বাঁচবে, এবং সেই সময় তাঁরা অন্য ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় করতে পারবেন। হয়তো, ডিপার্টমেন্টে কয়েকটা নতুন কোর্স চালু করা সম্ভবপর হবে।

প্রত্যেক বিভাগেই কম্পিউটার বিষয়ক কোর্স চালু করা খুব জরুরী। আমি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র। যুক্তরাষ্ট্রে এসে দেখেছি, যে কোর্সই পড়তে যাই না কেন, programming এবং scientific computing সম্পর্কে বিশদ দক্ষতা না থাকলে পদে পদে পিছিয়ে পড়তে হয়। পদার্থবিজ্ঞানের অনার্সের সিলেবাসে অন্তত একটা প্রোগ্রামিং ভাষা এবং একটি গাণিতিক সফটওয়্যার (mathematica, maple, IDL, Matlab প্রভৃতি) শেখানো দরকার। একই সাথে প্রতিটি কোর্সে এই সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ শেখাতে হবে। এ বক্তব্য অন্য সব বিষয়ের ক্ষেত্রেও সত্য। আমি দেখেছি, এমনকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রদেরকেও প্রোগ্রামিং জানতে হয়, ম্যাটল্যাব ব্যবহার করতে হয়। এ ব্যাপারে আমরা যে এতটা পিছিয়ে আছি- সেটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।

সবশেষে বলতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের একান্ত আপন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পুনর্জন্ম হয়েছিলো। এখানে এসে আমি নিজেকে চিনতে শিখেছি। প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলকামনা এবং মঙ্গলচিন্তা করে যাবো আজীবন। আমার মনে হয়, এখন সময় এসেছে অযথা সরকারকে, শিক্ষকদেরকে কিংবা সিস্টেমকে দোষারোপ না করে, ফালতু বুলি কপচানো বন্ধ করে কাজের কাজ কিছু করে দেখাবার। আমার বক্তব্য সবার মনঃপুত নাও হতে পারে। আমি অনেক কিছু ভুল বলে থাকতে পারি। তবে, এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা দরকার, এখনই কাজে নামা দরকার। কয়েক দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অধোঃগমন চলছে, তা রুখতে এখনই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। অন্যের দোষ দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকার দিন শেষ। আসুন, সবাই মিলে এক হয়ে এগিয়ে আসি, কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করি, তাদের কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরি। আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখি, আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হই।

অনীক_ইকবাল
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%64%61%72%72%65%6c%37%37%35%36%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%64%61%72%72%65%6c%37%37%35%36%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সবার আগে দরকার একটা ভালো বেতন কাঠামো। খ্যাপ বন্ধ করতে না পারলে পরিস্থিতির উন্নয়ন করা অসম্ভব। যত টিকাই দেয়াই হোক, লাভ হবে না। শিক্ষকরা লাল-নীল দল করে নিজেদের দলের আখের গোছাতে ব্যস্ত, শিক্ষকদের ভালোমন্দ দেখার সময় পায় না।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

হুমমম। এ বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ব্যবস্থা হলো একটা দেশের মেরুদন্ড। শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান অবস্থার ওপর নির্ভর করছে আমাদের এই শতাব্দীর সব স্বপ্ন এবং স্বপ্নপূরণ। অবশ্যই সে স্বপ্নপূরণের নায়কদের গড়ার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। বেতন কাঠামোয় সবার ওপরে অবস্থান হওয়া উচিত শিক্ষকের। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষকের বেতনই কমপক্ষে ৩০,০০০ টাকা হওয়া উচিত। একজন প্রফেসর, যিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে 'খ্যাপ' মেরে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারেন, তাঁর বেতন অন্তত ১ লাখ টাকা তো হওয়াই উচিত।

আজহার এর ছবি

ভারতের অন্ধ্র ভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপকের সাথে ঢাবিতে আমার অনেক কথা হয়েছিল। তার বেতন শুনলাম (২০০৯ সালে) ৮৮,০০০ রুপি। সাথে বাড়তি ফ্যাসিলিটিস তো আছেই। আর সে জন্যই তাদের বাইরে খ্যাপ মারার দরকার হয় না। আর করলেও সরকারকে অনেক ভ্যাট দিতে হয়, এতে বাইরে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোতো আছেই, বিদ্যমান যা ব্যবস্থা আছে সেটাও চলছে না ঠিকভাবে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের চলতি বর্ষের অনার্স ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে ৬ মাসের বেশি হল। অথচ এখন পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরিক্ষা কমিটির সদস্যরা একে ওপরকে দোষারোপের মাধ্যমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। আর ছাত্র-ছাত্রীরা
চেচামেচি করেই যাচ্ছে! চিন্তিত

জালিস এর ছবি

আসলেই চিন্তার বিষয়

শ্যামল এর ছবি

ছোটবেলায় স্কুলে পরীক্ষার খাতা দিলে কি যে আনন্দ পেতাম বলার মত নয়।
আপনার পয়েন্টগুলো ভাল লেগেছে; কিন্তু ছাত্র শিক্ষকের দূরত্ব থাকতে হবে ই তার সাথে একমত নই।
আরো লিখুন। ধন্যবাদ।

তাপস শর্মা এর ছবি
সুস্মিতা শ্যামা এর ছবি

আমি এখনো এখানকার ছাত্রী। তাই, প্রতিটি কথাই যে সত্যি সেটা আমি হাড়ে হাড়ে জানি। পুরোপুরি একমত।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সাথেই সহমত।
পোস্টে +++++ চলুক

guest_writter এর ছবি

এই লেখাটি পড়ে আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে হলো। আমি অর্থনীতির ছাত্রী। সে সুবাদে আমাদের অনার্স তৃতীয় বর্ষে econometrics নামে একটি কোর্স পড়তে হয়। পুরো বছরে কোর্স শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন মাত্র ৭টি। বলাবাহুল্য যে ঐ সাত দিনে তিনি আমাদের কিছুই পড়াননি। ক্লাসে এসে গল্প করতেন আর হোম ওয়ার্ক দিয়ে চলে যেতেন। ফাইনাল পরীক্ষার দিন প্রশ্ন হাতে পেলাম। প্রশ্ন পাওয়ার পর দেখলাম ছোট একটা ভুল। বাকি বন্ধুরাও বিসয়টি খেয়াল করে স্যার কে ডেকে বলল ভুলটি শুধরে দিতে না হলে যে অংক দেওয়া আছে সেটা করা যাবে না। মজার ব্যাপার হলো, যে কোর্স শিক্ষক তিনি বুঝতেই পারলেন না ভুল কোথায়, আর সাতটি ক্লাস করে আমরাই বুঝে গেলাম ভুল!!!!!!!!!!!!!!!!!
মজার এজন্যই বলছি কারন এই থেকেই অনুমান করা যায়, কারা আমাদের পড়াচ্ছেন? কি পড়াচ্ছেন?

দীপাবলি।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অথচ দেখেন এনারাই যখন প্রাইভেটে খ্যাপ মারে তখন সবাই নিয়মানুবর্তী হয়ে যান, ঠিকমতো ক্লাস নেন, যত্ন করে পড়ান, ছাত্রছাত্রীদের কোন প্রশ্ন আছে কিনা তার জবাব দেন, সময়মতো খাতা দেখে মার্কস জমা দেন।

এসবের পেছনে মূল নিয়ামক তাহলে কী?

অনীক_ইকবাল এর ছবি

আপনি অর্থের কথা বলেছেন, বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। আরো অনেক বিষয় আলোচনায় আসা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার যোগ্য প্রার্থীদেরকে খুব কঠোরভাবেই ছেঁটে ফেলে দেয়া হয়। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির জন্য যে ধরনের চামচা প্রয়োজন- সেটা যথার্থ শিক্ষিত, যোগ্য ব্যক্তি করবেন না কখনও। কাজেই, এসব গলার কাঁটা রাখতে চায় না ডিপার্টমেন্ট। আমি এরকম কমপক্ষে আধা ডজন উদাহরণ জানি, যেখানে অসাধারণ ঈর্ষণীয় যোগ্যতাই আবেদনকারীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখায় পড়েছি দেশে ফিরে এসে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি যোগ দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু শিক্ষকদের দলাদলির ফাঁদে পড়ে সেটা আর করা হয়নি। এমআইটি,স্ট্যানফোর্ড,কেমব্রিজ আর ইমপেরিয়াল কলেজে যথাক্রমে ব্যাচেলর্স,মাস্টার্স,পিএইচডি এবং পোস্টডক করা মাহবুব মজুমদারের ইন্টারভিউয়ের দু:খজনক কাহিনী পাওয়া যাবে নিচের দুইটা লিংকে --অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ২/৩ বারে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ঠিকঠাকমত করতে না পারা লো্কেরা্ই এখন ঢাবির শিক্ষক হওয়ার জন্য সবচাইতে যোগ্য

http://www.ishafi.com/2006/11/painful-funny-story.html

http://www.ishafi.com/2006/11/reply-from-dr-mahbub-majumdar.html

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

নাঈম এর ছবি

পোষ্টের প্রায় সবকটি বিষয়ে একমত। কয়েকটা লাইন খুবই ভালো লাগলো...
[b]"ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে তরুণ, উৎসাহী, উদ্দীপ্ত শিক্ষকরা নবীনদের ক্লাস করাবেন।"
"ছাত্রদেরকে তাদের পরীক্ষার খাতা দেখতে দেয়া হয় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ......। তবে আমি এটা বুঝি যে- ছাত্রদেরকে [b]"তাদের পরীক্ষার খাতা দেখতে না দেয়া চরমতম অন্যায়, এবং ছাত্রদের অধিকারের লংঘন।"
প্রশ্নপ্রত্র তৈরী করার সময় এক্সটার্নাল এবং মডারেশন বোর্ড মিলিয়ে যে বিশাল দলের উদ্ভব ঘটে, তা দিয়ে একটা ফুটবল টীম তৈরি করা সম্ভব।" দেঁতো হাসি
আমাদের এক কোর্সে প্রশ্ন মডারেশন করে এমন অবস্থা করা হলো যে পরীক্ষার দিন স্বয়ং কোর্স শিক্ষকও বুঝতে পারলেন না কিছু প্রশ্ন কোন টপিক থেকে করা হইছে মন খারাপ ঢাবির ইন্জিনিয়ারিং ও বিজ্ঞান অনুষদের সবকটি সাবজেক্টে programming পড়ানো হয়। বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে শিক্ষক মূল্যায়নেরর সিস্টেম আছে বলে শুনেছি।

ক্লাশে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা আছে বলে বেশীরভাগ শিক্ষকই বিশাল একটা লেকচার তৈরী করে এনে ক্লাশে তা পড়ে শোনান। ছাত্ররা বুঝলো কিনা বা ৫০/৫৫মিনিটে এতো কিছু বুঝা সম্ভক কিনা তা ভেবে দেখার সময় তাদের নেই। মুখস্ত বিদ্যায় ভর করে ভালো রেজাল্ট করে এবং দলীয় লবিং করে এমন অনেকেই নিয়োগ পান, যাদের পড়ানোর দুর্বলতায় ছাত্ররা ক্লাশেই হাসাহাসি করে।

ভালো ছাত্র হলেই যে ভালো শিক্ষক হবে এমন কোন কথা নেই। তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে (৩বছর বা এরকম কিছু) তারপর ছাত্রদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নবায়ন করা যেতে পারে।

নানা সীমাবদ্ধতার পরেও এমন কিছু শিক্ষককে পেয়েছি যাঁরা নিয়মিত যত্ন করে আমাদের পড়িয়েছেন, নতুন কিছু করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তার পাশাপাশি তাঁদের অনেকে প্রাইভেট ক্লাশ নিয়েছেন, যা পরে শুনে অবাক হয়েছি। সে সব শিক্ষকদের গভীর শ্রদ্ধা জানাই ।

ঢাবির সমস্যাগুলো কম-বেশী সকলেরই জানা কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্তমানকে উন্নত করার চেয়ে অতীত নিয়ে জাবর কাটতেই বেশী পছন্দ করে। তবু স্বপ্ন দেখি একদিন সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নিশ্চয়ই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখবো। কোন একদিন নিশ্চয়ই...

পোষ্টে পাঁচ তারা ।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সিস্টেম থাকে- শুনেছি। নতুন আবেদনকারীরা ছাত্রদের সামনে লেকচার দেয়, এবং শিক্ষকদের সাথে সাথে ছাত্ররাও তাদেরকে মুল্যায়ন করে। যার র‍্যাংক সবচেয়ে বেশি হয়, তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়। এখানেও সেটা করা যায় কি না ভেবে দেখা দরকার। তবে, শিক্ষকতা জীবনের একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে tenured তথা স্থায়ী চাকরী দিতে হবে। একজন শিক্ষককে যদি সবসময় চাকরী হারানোর ভয়ে থাকতে হয়- সেটা খুব বেশি ভালো না। আর, নিয়োগ দেয়ার সময় শিক্ষকদের গবেষণা এবং শিক্ষকতার যোগ্যতা যাচাই করে নিয়ে নিয়োগ দিলে এ সমস্যা হবার কথা নয়।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

কেউ তো আর শিক্ষক হয়ে জন্মায় না। শিক্ষককে তৈরি করে নিতে হয়। ধীরে ধীরেই একজন ব্যক্তি শিক্ষকে পরিনত হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কী কখনো কোন ট্রেইনিঙ্গের কথা শুনেছি আমরা? বেশির ভাগ শিক্ষকদেরই দেখা যায়, তাঁরা ক্লাসে আসেন কোন রকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া। ২৫-৩০ বছর ধরে পড়াচ্ছেন। তাই হয়ত ওটা লাগে না তাঁদের। তারপরে ক্লাসে এসে কোন বিদেশ ঘুরে এসেছেন, কী করেছেন, কী করবেন এইসব গল্প করে সময়টা ভালই কাটিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি। অথচ তাঁদের ক্লাস পারফররম্যান্স কেমন, তার কোন ডেমো হয় না।

চমৎকার একটা পোস্ট।

ঝুমন এর ছবি

এখন বাধ্যতামুলক ক্লাস উপস্থিতি ৭৫% হতে হয়। উপস্থিতির উপর ৫% নম্বর। ক্লাস আপনাকে করতেই হবে। কি এসে যায় শিক্ষক কিছু না পারলে। কি এসে যায় আপনার যদি ক্লাস করা না লাগে। ভাববেন না মিথ্যে বলছি। ৪ বছর ক্লাস করেছি। লেকচার তুলি নাই কোনদিন তাতে কি পড়া বুঝতে কখনোই সমস্যা হয় নি। ৪০ বছর ধরে উনারা সেটাই পড়াচ্ছেন। আমি ফলিত রসায়নে পড়ছি। আমাদের যেসব প্রোডাকশন প্রসেস পড়ানো হয় সেসব তামাদি হয়ে গেছে অনেক আগেই। সব পড়িয়ে শেষে ফুটনোট থাকে " nowadays this process is not used ".

আপনার লেখাটা পড়ে খিচড়ে থাকা মেজাজটা আরো খিঁচড়ে গেল। কারণ পরিত্রাণের কোন উপায় সুদূর ভবিষ্যতেও দেখছিনা।

মর্ম এর ছবি

"nowadays this process is not used!"

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেয়ার খুব ইচ্ছা ছিল- ইমোটিকনের অভাবে পেরে উঠলাম না!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

দেবজিত এর ছবি

ফুটনোটটা সেরা দেঁতো হাসি

ঝুমন এর ছবি

আরেকটা ব্যাপার লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার পোস্টটা ডিপার্টমেন্টের ফেবু গ্রুপে দিয়েছিলাম। পরে সরিয়ে দিয়েছি কারণ এতে করে আমার এম.এস. এর অবস্থা করুণ হয়ে যেতে পারে। একবার ভাবেনতো।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

গবেষণা যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম প্রধান মাপকাঠি। গবেষনার বিকাশ ঘটানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া দরকার।
ভাল ফ্যাকাল্টি নিয়োগের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লজ্জাজনক অনীহার কথা কিছুদিন আগেও বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াতে আলোচিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরা পদার্থবিজ্ঞানের মেধাবী অধ্যাপককে নিয়োগের নামে যে তামাশা করা হয়েছিল তা অত্যন্ত নির্মম এবং লজ্জাজনক। এমন আরো বেশকিছু উদাহরণ আমি জানি।

শিক্ষকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে কনসালটেন্সি অথবা গবেষণা প্রযেক্ট বাগিয়ে সেটা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন করেন। মাঝখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কিছুই পায়না। এটা অনৈতিকই শুধু নয়, বেআইনিও। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই এ অপরাধে অপরাধী। কিন্তু তাদেরকেও পুরোপুরি দোষ দেয়া যায়না। শুনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রজেক্ট আনতে গেলেও নাকি সীমাহীন দুর্নীতি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাহাড় ঠেলতে হয়। আর বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশে গবেষণা প্রজেক্টের টাকা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ ব্যয় নির্বাহ হয়।

আমি জনস হপকিন্সে আছি, যেখানে প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিকে নিজের বেতনের টাকা নিজেকেই যোগাড় করতে হয়। হয় গবেষণা প্রজেক্ট নয়তো কোন গ্র্যান্ট জোগাড় করতে না পারলে চাকরিই থাকবেনা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এতটা হয়ত সম্ভব নয়; কিন্তু শিক্ষকদের পুরো বেতন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে এমন ভাবারও কারণ নেই; এর বাইরে তাকানোর প্রয়োজন আছে।

আমেরিকাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে প্রধানত ডোনেশনের টাকায়। আমাদেরও বিত্তশালীদেরকে এবিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। একসময় আমাদের সমাজে কিন্তু এ চলটা ভালভাবেই ছিল। আমাদের অসংখ্য অবক্ষয়ের তালিকায় এ বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে খুব বেশিদিন আগে নয়।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

আমি পদার্থবিজ্ঞানেরই ছাত্র। আপনি কার কথা বলছেন- ভালো করেই জানি। এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ আমি নিজেই দেখেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজনকে চিনি- যাঁকে বিদেশ থেকে ডেকে আনা হয়েছিলো- চাকরি দেয়ার জন্য। তিনি ঢাবি-র শিক্ষক হবার জন্য এতই ব্যাকুল ছিলেন, যে মাস্টার্সের পড়া শেষ না করেই তিনি এখানে চলে আসেন এপ্লাই করার জন্য। পরবর্তীতে তাঁর সাথে প্রহসন করা হয়, তাঁর বদলে নেয়া হয় নিতান্তই অযোগ্য, রাজনৈতিক দলের ধামাধরা একজনকে। এর পর তিনি তাঁর ডিপার্টমেন্টে আরো বেশ কয়েকবার আবেদন করেন। প্রত্যেকবারই তাঁকে যাচ্ছেতাই অপমান করা হয় ইন্টারভিউ বোর্ডে। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রিসার্চ করছেন। তাঁর পাবলিশ করা পেপার নিয়ে এখন তাঁর ডিপার্টমেন্টে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে। এনএসএফ এর ফান্ড তো পেয়েছেনই, সব প্রফেসররা তাঁর সাথে কাজ করতে চাইছেন এখন। অথচ, এই লোক তাঁর নিজের ডিপার্টমেন্টেই চাকরি পেলেন না।

নিবিড় এর ছবি

ভাল লাগল লেখাটা। শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যাপারে আপনার সাথে একমত। অনেক শিক্ষক আছেন যারা দুই তিন দশক আগে তারা যখন ছাত্র/ছাত্রী ছিলেন তখন যা পড়েছেন তাই পড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে আছেন হয়ত জানেন ভাল তবে ক্লাসে যেভাবে পড়ান তাতে কারো উপকার হয় না। এইসব চিহ্নিত করার জন্য ছাত্রদের ফিডব্যাক দরকার। কিন্তু এইটা চালু হলে কী হবে ভেবেই হাসি পাচ্ছে।

আর পরীক্ষার খাতা দেখতে দেওয়ার ব্যাপারে একমত। তবে ফাইনালের খাতা কেমনে দেখতে দিবে সেইটা কিন্তু সমস্যা। কারণ আমার জানামতে ফাইনালের খাতা দেখার পর সম্ভবত রেজিস্ট্রার বিল্ডিঙ্গে জমা দিতে হয়। আমি অবশ্য আমার পুরা ইউনি জীবনে দুই তিনজন শিক্ষক ছাড়া বাকীদের ক্ষেত্রে ইনকোর্সের খাতাগুলো দেখতে পেয়েছি। এইসব খাতা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি অনেক শিক্ষক ভাল করে খাতা পড়েন না সম্ভবত। আমি নিজেই একবার এক শিক্ষকে এক পরীক্ষায় কম পাবার জন্য যখন প্রশ্ন করলাম তখন উনি বললেন যে এই এই বিষয়গুলা তো ইমপোর্টেন্ট, এইগুলা লিখ নাই কেন? আমি খাতা দেখিয়ে বলার পর উনি বললেন- উহ, ভুল হয়ে গেছে। এত এত লেখা, সব কী চোখে পড়ে। তা সব কিছু এরপর থেকে খাতায় ভাল করে হেডিং দিয়ে পয়েন্ট আকারে লিখবা তাইলে খাতায় কী কী আছে বুঝা যাবে (!!!!)

তবে পরীক্ষা পদ্ধতিতে এক্সার্টানাল আর মডারেশন বোর্ড থাকার পক্ষে আমি। আর মডারেশন বোর্ডের কী খুব বেশি কাচি চালানোর ক্ষমতা আছে? আর চালালেও কী বেশি কিছু বলার আছে আমাদের? কারণ আমার জানামতে ২০ % এর বেশি প্রশ্নে মডারেশন বোর্ড বা এক্সর্টানাল হাত দিতে পারে না। আর যদি হাত দেয় তাও কিন্তু ক্লাসের সিলেবাস থেকে প্রশ্ন করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় অনেক স্যার তার পছন্দের না হলে অনেক টপিকে হাত দেন না কিন্তু ঐগুলা কিন্তু সিলেবাসে থাকে। মডারেশন বা এক্সর্টানাল প্রশ্ন করলে কিন্তু ঐ প্রশ্ন না পড়ানো সিলেবাসেই থাকে। আর আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয় কোন স্কুল না যে শিক্ষক এইখানে সব সিলেবাস ধরে ধরে পড়াবেন। স্যার ক্লাসে দশটা টপিক পড়াবেন আর আমরা চোখ কান বন্ধ করে আর কী কী সিলেবাসে আছে তা ভুলে গিয়ে তাই পড়ব। যদি তাই হয় তাইলে মনে হয় মডারেশন বোর্ড কে দোষ দেওয়ার কোন কারণ আছে।

আর আপনার উত্তেজনাহীন অধ্যাপকদের ক্লাস নেওয়ার কথার সাথেও একমত হতে পারলাম না। ইউনিতে অনেক বিষয় পড়াতে গেলে বাস্তব অভিজ্ঞতার দরকার হয় যেটা অনেকসময় বিভাগের তরুণ শিক্ষকদের থাকে না। সেই রকম ক্ষেত্রে ক্লাস বাস্তবতা বিবর্জিত তত্ত্বকথা মূলক ক্লাস হবে। আর ক্লাস নেওয়া একটা আর্ট। আমি নিজে বিভাগের অনেক সিনিয়র শিক্ষককে চমৎকার ক্লাস নিতে দেখেছি আবার অনেক অপেক্ষাকৃ্ত তরুণ শিক্ষকের ক্লাসেও ঘুমিয়ে গিয়েছি। তাই মনে হয় উত্তেজনাহীন অধ্যাপক না হয়ে টার্মটা অপেক্ষাকৃ্ত যোগ্য শিক্ষক হওয়া দরকার।

আমাদের ক্লাসটা শুরুতে ১৫০ জনের ছিল অনার্সের শেষে এইটা ১২৪ জন হল। মার্স্টার্সে অবশ্য আরেকটু কমেছিল। এইখানে আপনার ক্লাসের মত ক্লাস উপস্থিতির সংকট ছিল তবে তা অবশ্য কখনোই ১০ জনের মত বিপদজনক সংখ্যায় নেমে আসেনি। ক্লাস উপস্থিতির ব্যাপারে আমার মত হল যেইসব স্যার/ম্যাডামরা ভাল ক্লাস নেন তাদের ক্লাসে ছেলেমেয়েরা উপস্থিত থাকে। আর যেইসব শিক্ষকদের ক্লাস মানে ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি এবং যাদের সুনাম আছে তারা যাই পড়ান না কেন অল্প কিছু বিষয় থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করেন তাদের ক্লাসে সব সময় ছেলেমেয়েরা কম উপস্থিত থাকে। তাই জরিমানা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ঠিক কী কী কারণে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে উৎসাহী না এটা বের করা।

আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদেরো দোষ আছে আমার মতে। যেসব শিক্ষকরা ক্লাসে এসে মুখস্ত বলে যান আর আমরা সেইসব বাণীমৃতগুলো ক্লাস লেকচারে তুলে নেই, না নিলেও অন্যের কাছ থেকে ফটোকপি করে নেই এবং পরীক্ষায় সেইসব লিখলে যখন স্যাররা ভাল নাম্বার দেন তখন আমরা তাদের নামে ধন্য ধন্য রব তুলি। আবার কোন শিক্ষক যদি ক্লাসে বইয়ের রেফারেন্স দেন, ক্লাস লেকচার তোলার উপযোগী মুখস্ত বাণী নিঃসৃ্ত না করেন তাইলে পারলে আড়ালে আমরা তাদের সব কিছু উদ্ধার করে ফেলি। এইসব স্কুল উপযোগী মানসিকতা থেকে বের না হতে পারলে শিক্ষকরা হাজার চেষ্টা না করলে কোন লাভ নাই।

আর আমাদের শিক্ষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার নিজ নিজ বিষয়ে বর্তমানে কী কী নতুন বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে অবগত নন অথবা অবগত হলেও ক্লাসে সে ব্যাপারে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে আলোচনায় আগ্রহী নন। এই কারণে আমরা হয়ত প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ বিষয়ে ইউনীর সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেওয়ার পরেও বর্তমান সময় থেকে বছর দশেক পিছিয়ে থাকি। সিলেবাস অন্তত প্রতি বছর তিন চারের মধ্যে একবার আপডেট করতে না পারলে মনে হয় আমাদের কর্মক্ষেত্রে ঢুকার সময় সব সময় বছর দশেক পিছিয়ে থাকতে হবে।

আর অনেক কিছু নিয়ে বলার থাকলেও মন্তব্য বড় হয়ে যাওয়াতে আপাতত এইখানেই বিরতি।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে খাতা জমা দিতে হয় বলেই সেটা ছাত্রদেরকে দেখানো যাবেনা- এ যুক্তিটা কি ধোপে টিকবে? আমরা তো সিস্টেম পরিবর্তনের কথাই বলছি। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছি, সেখানে বেশিরভাগ প্রফেসর ফাইনাল পরীক্ষার খাতা ফেরত দেয় না। তবে, আমাদেরকে বলে রাখে, খাতা দেখা শেষ হলে তার অফিসে এসে নিজের খাতা নিজে দেখে যেতে। কোনো প্রশ্ন থাকলে সে সময়ই প্রফেসরকে করা যায়। কেউ কেউ আবার কিছুদিনের জন্যই খাতা দিয়ে দেয়।

ঢাবি-র পদার্থবিজ্ঞান থেকে এসেছি আমি। প্রশ্নপত্রে মডারেশনের জন্য এরকম কোনো ২০% এর সীমারেখা আছে বলে জানি না। আমাদের বহু প্রশ্ন অর্ধেকের বেশিই মডারেট হয়েছে দেখেছি। আমি সম্পূর্ণই মডারেশনের বিপক্ষে। ভার্সিটির প্রফেসরের ওপর এ ব্যাপারে এতটুকু আস্থা না রাখতে পারলে কীভাবে? আর যাদের ওপর আস্থা রাখা যায় না, তাদেরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেয়াই শ্রেয়। ঢাবি তে মডারেশনের খড়গ বারে বারে নেমে আসে ভালো শিক্ষকদের ঘাড়েই। যাঁরা একটু ব্যতিক্রমধর্মী প্রশ্ন করতে চান, ছাত্রদেরকে মুখস্তবিদ্যার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেন, তাঁদের প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি মডারেট হয়। এটা কাম্য নয়।

তরুণ অনেক শিক্ষক দেখেছি, যারা অজমূর্খ এবং অত্যন্ত আকর্ষণহীন চরিত্র। চায়ের দোকানের সেলিমও এদের অনেকের চেয়ে কথাবার্তায় স্মার্ট। আবার, আমাদের সকল ছাত্রদের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক যিনি- তিনি রিটায়ারমেন্টের দোরগোড়ায়। কাজেই, আপনার বক্তব্যের এই অংশের সাথে সহমত। নবীন বলতে আসলে আমি মানসিকতায় নবীনদেরকেই বোঝানো উচিত ছিলো। পরিষ্কার করে লিখতে পারিনি।

ছাত্রছাত্রীদের তো দোষ আছেই। তবে, তাদেরকেই একচেটিয়া দোষ চাপানো হয়। শেষ পর্যন্ত, একটা ক্লাস ভালোভাবে না চললে ভুক্তভোগী তো ছাত্ররাই হবে, শিক্ষকরা নন। কাজেই, ছাত্রছাত্রীরা যদি নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে- সেটার খেসারত তাদেরকে দিতেই হবে। ছাত্ররা অনেকেই হয়তো ইচ্ছে করেই মুখস্ত করে। তবে, আমি আমার কথা বলি। ফার্স্ট ইয়ারে বুঝে বুঝে পড়ে সবচেয়ে কম মার্কস পেয়েছিলাম। ধীরে ধীরে মুখস্তবিদ্যায় পারদর্শী হয়েছি, নম্বর বেড়েছে। এটাতে শুধু আমাকে দোষারোপ করলে কীভাবে হবে?

হিমু এর ছবি

আমার তত্ত্বাবধায়ক প্রফ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কলোকুইয়ুম দেন। সেখানে পরীক্ষা দেয়ার পরপরই আদ্যাক্ষর অনুযায়ী ছাত্রেরা তার এবং একজন টিএর সাথে বসে নিজের খাতা দেখে। মার্কিং ছাত্রের সামনেই হয়। এমনকি ছাত্র মুলামুলিও করতে পারে, যে ৫ এ ২ দিলেন ক্যান, ৩ দেন, আমি তো ঐটা ঠিকই লিক্সি! ফলে কলোকুইয়ুম শেষে কোনো অভিযোগ নিয়ে তাকে ভোগানোর কোনো সুযোগ তিনি দেন না। ছাত্রও নিজের ভুলটা জেনে ঠিক জিনিসটা জেনে বেরিয়ে আসে। প্রফ তার সেক্টরের অন্যতম ব্যস্ত লোক, কিন্তু পড়ানো নিয়ে ১ মিনিট গাফিলতি কখনো করতে দেখিনি।

দেবজিত এর ছবি

আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদেরো দোষ আছে আমার মতে। যেসব শিক্ষকরা ক্লাসে এসে মুখস্ত বলে যান আর আমরা সেইসব বাণীমৃতগুলো ক্লাস লেকচারে তুলে নেই, না নিলেও অন্যের কাছ থেকে ফটোকপি করে নেই এবং পরীক্ষায় সেইসব লিখলে যখন স্যাররা ভাল নাম্বার দেন তখন আমরা তাদের নামে ধন্য ধন্য রব তুলি। আবার কোন শিক্ষক যদি ক্লাসে বইয়ের রেফারেন্স দেন, ক্লাস লেকচার তোলার উপযোগী মুখস্ত বাণী নিঃসৃ্ত না করেন তাইলে পারলে আড়ালে আমরা তাদের সব কিছু উদ্ধার করে ফেলি। এইসব স্কুল উপযোগী মানসিকতা থেকে বের না হতে পারলে শিক্ষকরা হাজার চেষ্টা করলে কোন লাভ নাই।

সত্যি কথা। এর জন্য দায়ী হল আমাদের প্রচলিত মানসিকতা। আমাদের পড়ালেখা পুরোটাই বাজারমুখি হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য থাকে যত দ্রুত সম্ভব পাস করে বের হতে হবে, দ্রুত একটা চাকরি ধরতে হবে। আর ভাল চাকরির জন্য ভাল সিজিপিএ লাগবে। নাম্বার বেশী তো সিজিপিএ বেশী। তাই যে স্যার নাম্বার বেশী দেয় সে ছাত্রদের কাছে ভাল, তা সে যেমনি পড়াক না কেন। আর মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শীরা অধিকাংশ সময়ে শিক্ষক/শিক্ষিকা হচ্ছেন। তাই তাদের কাছ থেকে খুব ভাল কিছু আশা করি না। আমাদের এক শিক্ষিকাকে ২য় সেমিস্টারে একটা প্রশ্ন করলে তার জবাব ছিল "তুমি তো আমার চেয়ে বেশী বুঝ" দেঁতো হাসি আরেকবার ক্লাসে আরেক প্রশ্নের জবাবে বললেন "প্রশ্ন করে আমাকে বিব্রত করার চেষ্টা করো না" খাইছে কিন্তু ওই প্রশ্নের উত্তর আর পাইনি মন খারাপ মজার ব্যাপার হল, উনি কিন্তু অনার্স- মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম চিন্তিত

guesr_writer rajkonya এর ছবি

@দেবজিত ভাইঃ চলুক

আলভী মাহমুদ এর ছবি

প্রথমত,আপনি ভাই বিশাল ভাগ্যবান।আমরা তো ইনকোর্সের মার্ক্স ফাইনাল দিয়ে পরের ইয়ারের ক্লাস শুরু করার পরে পেয়েছি এমন ঘটনাই বেশি,আর খাতাটার যে কি হয় তা তো আল্লাহ জানে।

মডারেশনের অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে কিছু বলতে চাই,আমাদের ভার্সিটির আর কিছু থাক না থাক মাশাল্লাহ বিশাল একটা সিলেবাস থাকে (যেটা কবে প্রণদিত হয়েছিল সেটা একটা গবেষণার বিষয় কারণ অর্ধেক রেফারেন্স নূহ নবী যখন বজরার কাঠ খুজছিলেন ওই যুগের পেয়েছি আমি)। তো এই বিশাল সিলেবাস পড়িয়ে সময়মত শেষ করাই দুরূহ,আম শিক্ষকদের তো আর অনুপস্থিতির জরিমানা দিতে হয় বলে শুনি নাই (!!),সুতরাং একজন শিক্ষকই জানেন তার ছাত্ররা কি পারবে আর কি পারবে না। আমাদের এক স্যার একবার ৪০ ক্লাস ধরে ম্যাক্সওয়েল ইকুয়েশন বুঝিয়েছেন,পরে তার প্রশ্ন মডারেট করে যা তা অবস্থা,তবে অধিকাংশ শিক্ষক তাদের প্রশ্ন মডারেশনের কোন ব্যবস্থা নেন না,এই স্যার নিয়েছিলেন (এরপরে তার প্রশ্নে কেউ আর হাত দেয় না)।

শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যাপারে আর কি বলবো,এক শিক্ষকের পড়ানো ভালো না বলে জানতাম,তাই একটু সাহস দেখিয়ে তার বদলে আরেকজনকে নেবার অনুরোধ করেছিলাম চেয়ারম্যানকে,মানা করে দিলো।পরে দেখলাম তার কোর্সে ফেল মেরেছি,মজা লেগেছে যখন ওই শিক্ষক আমার একটা মিডের মার্ক্স যোগ করে নাই জানতে পেরে তাকে বলতে গেলাম আমার কিছু মার্ক্স অ্যাড করা যায় কিনা,বলে দিলেন "Marks are not for charity,marks you have to earn,দান খয়রাত করতে পারবো না",সো দুই মার্কের জন্য আমি একটা মেজর কোর্সে এফ নিয়ে বসে আছি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি আমাদের ডিপার্টমেন্টের ভালো শিক্ষকরা হয় বাইরে ব্যস্ত থাকেন,নইলে বিদেশে থাকেন,আর নয়ত তাদের ভালো কোর্সগুলো দেওয়া হয় না,কারন লাল-নীল রাজনীতি।

মূল লেখার কম বেশি প্রতিটা পয়েন্টে একমত,সাথে আরেকটা কথা বলতে চাই,আমাদের শিক্ষকরা কম জানেন এটা কিন্তু ভুল,একশ পারসেন্ট ভুল।ঢাকা ভার্সিটির ভাইভা দিয়েছে এমন কেউ এই কথা বললে তার জায়গা উত্তর গোলার্ধে,এখানে না!!

হাসিব এর ছবি

আমাদের শিক্ষকরা কম জানেন এটা কিন্তু ভুল,একশ পারসেন্ট ভুল।ঢাকা ভার্সিটির ভাইভা দিয়েছে এমন কেউ এই কথা বললে তার জায়গা উত্তর গোলার্ধে,এখানে না!!

তালগাছটা আপনাকে দিলাম

পড়াচোর এর ছবি

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সময় আমাদেরকে ৭০ সালের একটা বই থেকে পড়ানো হয়েছিল, যদিও এর পরের এডিশনের বই বাজারে ছিল। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে ভাল যে শিক্ষক ক্লাস নিয়েছিলেন, পরীক্ষার সময় তিনিই মুখস্থবিদ্যা নির্ভর প্রশ্ন করেছিলেন।

আজীবন মুখস্থ করে পাস করতে করতে বুঝে পড়ার আনন্দটাই আর পাওয়া যায়না। আর নবীন শিক্ষককে দিয়ে ক্লাস নেবার কথা বলছেন ? আমারই ক্লাসমেট পাস করে শিক্ষক হবার পরে অনেক খাটাখাটনি করে সম্পূর্ণ নতুনভাবে তার ছাত্রদের ক্লাস নিয়েছিল। এর পরের বছর থেকে তাকে ওই ক্লাস থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো নতুন কিছু করতে গেলেও ত সমস্যা। সিনিয়র শিক্ষকরা এসে দমিয়ে দেন।

পড়াচোর

অনীক_ইকবাল এর ছবি

খানিকটা এই ব্যাপার নিয়েই আমি লিখেছিলাম একদিন। একটু পড়ে দেখতে পারেন। http://www.sachalayatan.com/guestwriter/37165

পড়াচোর এর ছবি

হুম, পড়েছিলাম এবং মন্তব্যও করেছিলাম ।

পড়াচোর

সাদরিল এর ছবি

আপনার বেশির ভাগ পয়েন্টগুলোর সাথে একমত কিন্তু হোমওয়ার্ক-এর ব্যাপারটাতে একমত হতে পারলাম না।এমনিতেই ৬ মাসের সেমিস্টার সিস্টেমে ৫০ নম্বরের ফাইনাল পরীক্ষার পাশাপাশি আমাদের ১৫ নম্বরের এ্যাসাইনমেন্ট,১০ নম্বরের ক্লাস টেষ্ট আর ২০ নম্বরের মিড টার্ম পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।সেই সাথে উপস্থিতির জন্য ৫ নম্বর(যদিও এটা প্রক্সি মেরে পার করা যায়)।এতকিছিতে এমনিতে চাপের ভেতর থাকি।তবে এই চাপ নিয়ে আমরা পরীক্ষার জন্যি কেবল প্রস্তুত হচ্ছি,গবেষনা কিংবা বিদ্যা অর্জনের জন্য নয়।আর পড়ালেখা তখন-ই বোরিং হয়ে উঠে যখন তা পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়।তাই ছাত্রদের হোমওয়ার্ক না বাড়িয়ে ক্লাসরুমে কিভাবে শিক্ষার মান বাড়ানো যায় সেই ব্যাপারটাতেই বেশী জোর দেয়া উচিত।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

দেখো, (তুমি আমার জুনিয়রই বোধ হয়) আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়েছি। ওখানে কোনো সেমিস্টার সিস্টেম নেই। বছর শেষে একটা পরীক্ষা, এবং সারা বছর কোনো হোমওয়ার্ক, মিডটার্ম বা কিছুই নেই। ফলে, ছাত্ররা সারা বছর কোনোই পড়ালেখা করে না, আর পরীক্ষার সময় অগাধ জলে পড়ে। যদি তুমি পুরো সেমিস্টারই পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকো, তাহলে তোমাকে তো আর ব্যতিব্যস্ত করার কোনো মানে নেই। তবে, সবসময়ই ছাত্রদেরকে পড়ালেখায় ব্যস্ত রাখার কোনো বিকল্প নেই- সেটাই বলতে চেয়েছি।

দেবজিত এর ছবি

আসলে সিলেবাস যদি গবেষণামুখী হয় তাহলে আর ছাত্রদেরকে পড়ালেখায় ব্যস্ত রাখতে হবে না, বরং তারা নিজেদের তাগিদেই পড়ালেখা করবে।

দেবজিত এর ছবি

"আর পড়ালেখা তখন-ই বোরিং হয়ে উঠে যখন তা পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়।তাই ছাত্রদের হোমওয়ার্ক না বাড়িয়ে ক্লাসরুমে কিভাবে শিক্ষার মান বাড়ানো যায় সেই ব্যাপারটাতেই বেশী জোর দেয়া উচিত।"

গুরু গুরু

ফালতু পাঠক এর ছবি

ভালো ভালো কথা শুনতেও ভালো লাগে, পড়তেও ভালো লাগে, কিন্তু....শেষ পর্যন্ত সবকিছু নষ্টদের দখলেই যাবে, কোনো উপায় তো দেখি না, নাকি আমার চোখেই সমস্যা মন খারাপ

দেবজিত এর ছবি

সমস্যা থাইকলে আর কিইবা করবেন... চক্ষে চশমা লাগান দেঁতো হাসি

সৃষ্টিছাড়া  এর ছবি

একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা দেখলেই গোটা দেশের পরিস্থিতি বোঝা যায়। একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররাও যখন তেলের ড্রাম পিঠে নিয়ে রাজনীতিবিদদের পায়ে মালিশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তখন সেই প্রতিষ্ঠানের রসাতলে যাওয়া ঠেকানোর জন্য শয়তানকে তলব করে আনতে হবেনা!! রেগে টং
চলুক

হিমু এর ছবি

ঢাবির শিক্ষকদের ওপর কিছু গবেষণা হওয়া দরকার। গোপনে তাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে, তারা তাদের সময়টা কীভাবে ব্যয় করেন। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান, পরের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান, বেনীআসহকলা দলীয় কাজ, প্রশাসনিক কাজকম্মো, পরামর্শ বিক্রি, টক শো, সভাসেমিনার (বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোপের বাইরে), কমিশন কর্তব্য ইত্যাদি ইত্যাদি।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

এর সাথে যোগ করুন- শেয়ার মার্কেটের সূচক হ্রাস/বৃদ্ধি নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকা

দেবজিত এর ছবি

আরও আছে- সুন্দরী ছাত্রীদের জন্য ফ্রী উপদেশ সেশন(এটা অবশ্য শুধু শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,সবাই নয় অবশ্যই) চোখ টিপি

অনীক_ইকবাল এর ছবি

এটা লিখতে গিয়েও লিখিনি খাইছে

নাম বলতে চাইনা (ভয় লাগে) এর ছবি

ভাল রেসাল্টধারীরাই যে ভালো টিচার হয় এটা আমি মানতে পারিনা।
আমি অনেক সিনিয়র ভাইদের কাছে অনেক কিছু বুঝেছি। দেখেছি যে, যাদের নলেজের ডেপ্থ অনেক বেশী এবং বোঝানোর ক্ষমতা ভালো তাদের কেন জানি সিজিপিএ খুব খারাপ হয়। আর বেশীরভাগ ফার্স্ট. সেকেন্ডই সব সাবজেক্ট গড়ে মুখস্থ করে উইদাউট এনি আউটনলেজ টিচার হয় এবং স্টুডেন্টদেরকে পেইন দিয়ে মারে। বোঝাতে পারেনা কিছু, আত্মগরিমায় ভোগে।
এ জিনিসটা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা উচিত। আমি আমার নিজের কথা বলি। সত্যি কথাই বলছি। আমি নিজে বিলিভ করি যে টিচার হলে অনেক ভালো আউটপুট দিতে পারবো। জুনিয়রদের অনেক ওয়ার্কশপ নিয়েছি। অনেককেই অনেক কিছু বুঝাতে গিয়েই এই কনফিডেন্সটা এসেছে। কিন্তু সিজিপিএ খারাপ। অনেক সিনিয়র আছেন যারা অনেক ভালো করতেন টিচার হলে কিন্তু তাদের সিজিপিএ খারাপ। আর প্রতি ইয়ারে যারা ফার্স্ট, সেকেন্ড হচ্ছে তাদের বেশীরভাগকে আমার গরু গাধা বলতে কোন আপত্তি নেই। আনসোশাল, বুঝানোর ক্ষমতা খুবই খারাপ, অহংকারী, মুখস্থবিদ্যা।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

কথাটাকে সর্বাংশে সত্যি বলে মেনে নিতে পারবো না। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। সেখানে ভালো শিক্ষকের পাশাপাশি ভালো গবেষকও প্রয়োজন। কাজেই, এখানে এমন অনেকেই থাকতে পারেন, যাঁর শিক্ষকতার দক্ষতা খুব বেশি ভালো না হলেও গবেষণা জগতে তিনি অনেক পরিচিত নাম; মানুষ তাঁর ক্লাস করতে চাইবে, আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অমূল্য সম্পদ পরিগণিত হবেন। যেমন ধরুন, আইনস্টাইন (যদি জীবিত থাকতেন) বাগ্মী কি না, তিনি ভালো বোঝাতে পারেন কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। একজন ভালো শিক্ষকের চেয়ে তাঁর ক্লাসে লোকসমাগম বেশি হবেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময়ই এমন কিছু কিছু বিশেষ বিষয় থাকে, যেগুলোতে পড়ানোর জন্য ঐ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে, সাধারণত ঐ বিষয়ে গবেষণারত একজন ভালো গবেষককেই দায়িত্ব দেয়ার কথা।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

পার্ফেক্ট রিপ্লাই
চলুক

ইফতেখার এর ছবি

কিছু দ্বিমতঃ

ভাল রেসাল্টধারীরাই যে ভালো টিচার হয় এটা আমি মানতে পারিনা।

এথেকে কি এই সিধান্তে আসা যায় যে, খারাপ রেজাল্টধারীরাই ভালো শিক্ষক হবে?

যাদের 'নলেজের ডেপ্থ অনেক বেশী' তাদের সিজিপিএ খুব খারাপ হওয়াটা মনে হয় কিছুটা ব্যাতিক্রম।

বটম লাইনঃ ভবিষ্যতে কে কেমন টিচার হবে এটা যদি আগে থেকে না জানা যায়, তবে ঝুকি হিসেবে ভালো রেজাল্টধারীদেরই নেয়া উচিত।

হাসিব এর ছবি

লেখার মূল বক্তব্যের সাথে একমত। তবে ছাত্রদের ইভাল্যুয়েশনের ওপর আস্থা রাখা অনুচিত। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে সেখানে বর্ণবাদ বা যৌননিপীড়ন ছাড়া আর কোন অভিযোগের পাত্তা দেয়া হয় না। জার্মানিতে মোটামুটি সিনারিও এটাই।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

আস্থা রাখা- না রাখার কথা পরে। ছাত্ররা কী পছন্দ করে, না করে- সেটা জানাটা প্রথমত জরুরী। তাই ইভালুয়েশন চালু করা দরকার। তারপর তাদের মতামত কতটুকু আমলে নেবেন- না নেবেন, সেটা নিয়ে না হয় আরেকটা পোস্ট লিখবো।

হাসিব এর ছবি

আমার এখানে দুইটা কারণে এটার গুরুত্ব দেয়া হয় না। প্রথমত এইটা এ্যাবিউজ তৈরী করে, দ্বিতীয়ত এতে শিক্ষার মান নিচু হবার সম্ভাবনা তৈরী করে।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? আমার মনে হয়, ছাত্রদের অধিকার রয়েছে শিক্ষককে জানানোর- যে তারা তাঁর পড়ানো কতটুকু পছন্দ করেছে। ছাত্রদের কাছ থেকে ফিডব্যাক না নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে?

হাসিব এর ছবি

অধিকার থাকা এক জিনিস এবং সেইটারে মাপকাঠি বানানো ভিন্ন জিনিস। বহুকাল আগে ঢাবিতে আমিও পড়তাম। অল্পস্বল্প হালকার উপরে পাতলা কোর্স কভারেজ, কঠিন জিনিসগুলো এড়িয়ে চলা, পরীক্ষায় সহজ প্রশ্ন করা, গ্রেড ভালো দেয়া এগুলো হলো জনপ্রিয়তার সূচক। কঠিন বিষয়গুলো যারা সিরিয়াসলি পড়ান তারা সবসময়ই অজনপ্রিয়। আমার ধারণা অবস্থা এতোটুকুও বদলায়নি। জনপ্রিয়তা যদি মূল মাপকাঠি হয় তাহলে শিক্ষকরা পপুলিস্টভাবে পড়াবে। এতে শিক্ষার মান বেড়ে না গিয়ে কমে।
শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড়ায় গবেষণা, যুগের আগে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারার ক্ষমতার মাধ্যমে। ছাত্ররা কতটুকু শিক্ষকদের পছন্দ করলো সেটার উপরে নয়।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

আপনার কথার বিরোধিতা করছি না। ছাত্ররা ফাঁকিবাজদেরকেই বেশি র‍্যাংকিং দেবে, তাই শিক্ষকরা পপুলিস্ট পদ্ধতিতে পড়াবে- এসব স্পেকুলেটিভ কথা না বলে আমরা জিনিসটা করেই দেখি না হয়। আমি কিন্তু কোথাও বলিনি, যে ছাত্রদের ইভালুয়েশনের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষকদের প্রমোশন/ডিমোশন/চাকরি নির্ধারণ করা হোক। আমি বলেছি, ছাত্রদের মতামতও নেয়া হোক। পরে পলিসি মেকিংয়ে অন্য সব বিষয়ের সাথে ছাত্রদের মতামতও একটা গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে থাকবে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মতামতকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না- বললেন। তার মানে, ছাত্রদের মতামত নেয়া তো হয়! আমিও সেটাই বলছি। কতটুকু গুরুত্ব দেবেন- সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করা যেতে পারে। আগে তাদের মতামতটা জানতে তো হবে!

হাসিব এর ছবি

কথাটা স্পেকুলেটিভ না। আমি আমার ফ্যাকাল্টির ইভালুয়েশনগুলো দেখভাল করি। আমি পুরো পশ্চিম ইওরোপের কথা বলতে পারবো। এখানে ইভালুয়েশন হয় তবে সেটার ওপর কোন বিশেষ কিছু উনিশ বিশ হয় না। পলিসি মেকিঙে ঐ ইভালুয়েশন কোন বিষয়ই না। এ্যাকাডেমিক কমিটিতে ছাত্ররাজনৈতিকদের প্রতিনিধি থাকে। তাদের মতামতের শুধু গুরুত্ব আছে।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

কানাডাতে আমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি সেখানে ছাত্রদের ইভালুয়েশন শিক্ষকদের ক্যারিয়ারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ করে কমেন্ট সেকশনে যেটা লেখা হয় সেটা। তাই অনেক শিক্ষককে ক্লাসে অনেক ভালো পড়ানোর পরও ওই সময়টায় একটু নার্ভাস হয়ে যেতে দেখেছি।

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

হাসিব এর ছবি

আমাদের এখানেও ছাত্রদের ধারণা এইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চাল্লু

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

হা হা, আমাদের অবশ্য এক প্রফেসর ক্লাসে মুখ ফুটে একদিন বলে ফেলছিল! ওয়েট কেমন জানি না অবশ্য। পদোন্নতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক সম্ভবত পাব্লিকেশন।
তবে প্রফেসরদের ইভালুয়েশন থাকাটা জরুরি মনে করি। আর কিছু না হোক একজন শিক্ষক কেমন ক্লাস নেয় ছাত্রদের কাছ থেকে এই ব্যাপারে অনেস্ট ফিডব্যাক পাওয়াটা জরুরি মনে করি।

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

হাসিব এর ছবি

এগুলোর কোন গুরুত্ব আসলে নাই। আমরা বলি শিক্ষকদের যে এটা খুব গুরুত্বপূর্নভাবে ছাত্রদের কাছে তুলে ধরতে। উনারা সেটাই করেন। ছাত্ররাও নিজেদের গুরুত্বপূর্ন ভেবে খুশি থাকে। আসলে এর কোন প্রভাব নেই। গবেষণা, কানেকশনস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ন।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

USA teo tai dekhchhi. Evaluation er upor shudhu teacher na, akta course next year e thakbe kina ta nirbhor kore (Avro kono durboddho karone kaj korchhena, English e type korar jonno dukkhito)

অনীক_ইকবাল এর ছবি

ছাত্রদের আপনার পড়ানো ভাল্লাগে কি লাগে না- সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই মনে করি। ইভালুয়েশন ফর্মে ১৫-২০ টা প্রশ্ন থাকে। প্রশ্নগুলো অনেক ভেবেচিন্তে এভাবেই করা হয়, যেন ছাত্ররা বিভিন্ন পয়েন্টে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই প্রফেসরের দক্ষতাকে বিচার করে মতামত দিতে পারে। যেমন: 'পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্রের মান কেমন?' এর উত্তরে ছাত্ররা 'খুব খারাপ' লিখতে পারে। কিন্তু, তার সাথেই প্রশ্ন থাকবে, 'তিনি ক্লাসে পড়া বোঝাতে পারেন কেমন?'- এ প্রশ্নের উত্তরেও ছাত্ররা 'খুব খারাপ' লিখবে না, তিনি যদি ভালো পড়ান- তাহলে। আর তিনি যদি ছাত্রদের মধ্যে পড়ালেখা করার আগ্রহ সৃষ্টি করতে সমর্থ না হন, তাহলে সেটাও তাঁর ব্যর্থতা, তিনি যত সৎভাবেই পড়ান না কেন। তাঁকে আমি 'ভালো প্রফেসর' বলবো না।

অথি এর ছবি

আমেরিকার একটা পদ্ধতি বাংলাদেশে চালিয়ে দিলেন আর সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেল!!আমেরিকাতে একটা ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা ২৫ এর বেশি হলে শিক্ষকদের একজন করে টিএ দেওয়া হয় এটা আপনার অজানা থাকার কথা নয়, এবং একজন লেকচারার তিনটা কোরসের বেশি পড়ায় না। আর বেতনের কথা জানতে চান? আমেরিকাতে একটা টিএ যে বেতন পায় ঢাবির একজন প্রফেসরের বেতন তার কত ভাগ সেটা আপনার জানা না থাকলেও আমার আছে।আপনার কাছে একটা সিচুয়েশান তুলে ধরছি এরপর কয়েকট প্রশ্ন করব যদি উত্তর পাই তাহলে খুশি হব, “একটা ছেলে ধরেন আপনার ফিজিক্সসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হল এবং কোন রকম রাজনিতিক প্রভাব ছাড়াই ঢাবি(ফিজিক্সসে যে রাজনিতিক প্রভাব ছাড়াই ভাল ছাত্ররা লেকচার হিসাবে নিয়োগ পায় সেটা নিশ্চই জানেন) ফিজিক্সসে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ পেল।এবার ছেলেটার একটা বউ আছে এবং একটা বাচ্চা আছে, সে বেতন পায় ১৯,০০০ টাকা, তার ঢাকায় বাড়ি নেই, সুতরাং তাকে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে, এবং গ্রামে বয়স্ক বাবা মা আছেন তাদেরকেও হাত খরচ দেওয়া দরকার।ছোট ভাইটার পড়ালেখার খরচ না দিতে পারলে তার আর স্কুলে যাওয়া হবে না, সে ক্লাসে পড়ায় ভাল, ছাত্ররা ক্লাসের বাইরে তার প্রসংসা করে”, আপনি কি তার জন্য একটা মাসিক বাজেট করে দিতে পারবেন? এবার সে যদি ঢাবিতে তার ক্লাস ঠিক মত কভার করে প্রাইভেটে দু একটা ক্লাস নিয়ে কোনমতে সংসার চালায় সেটাকে কি অন্যায় বলবেন? আপনি কি মনে করেন তার ঢাবিতে চাকরী করা উচিত, নাকি প্রাইভেটে চলে যাওয়া উচিত? আমি ফিজিক্সের সবাইকে চিনি, আমি অন্তত কোন টিচার কে দেখিনি যে প্রাইভেটে পড়ানোর জন্য ঢাবিতে ক্লাস মিস দিয়েছে, শেষ দু তিন বছরে এরকম হয়েছে বলে মনে হয় না।
মিডটারমএর কথা বলছেন, আগে কিন্তু মিডটারম ছিল ফিজিক্সে, যতটুকু মনে পড়ে ৯৭ বা তার দুএক বছর আগে ওইটা উঠে গেছে। কেন জানেন? যেদিন থেকে মিডটারম শুরু হবে তার ১৫ দিন আগে থেকে ছাত্ররা ক্লাসে আসে না, মিডটারমের প্রিপারেশন নেয়, যেদিন ক্লাস টেস্ট থাকে অইদিন টেস্টের আগ পরযন্ত কেউ আর অন্য ক্লাস করে না, টেস্টের জন্য পড়া শুনা করে। তার ফলে সেশন জ্যাম আর বাড়তে থাকে।এই কারণে পদ্ধতিটা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।
অনেক কিছু বলার আছে আপনার উত্ত্র গুলা পেলে আরও লিখব।

অনীক_ইকবাল এর ছবি

আপনি আমার আগের জবাবগুলো না পড়েই মন্তব্য করেছেন দেখে দুঃখ পেলাম। আমি এক জায়গায় বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের বেতন ৩০০০০ আর অধ্যাপকের এক লাখের ওপর হওয়া উচিত।

আপনি কি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন কখনও? যদি না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার এহেন মন্তব্যে আমি মোটেই অবাক হচ্ছিনা। আর যদি পদার্থবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেও আপনার এই ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে এই মন্তব্য হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই ওদের ধামাধরা। আপনি এখানে মন্তব্য করছেন কোনো উপরওয়ালাকে সন্তুষ্ট করতে। সেক্ষেত্রে আপনার সাথে কোনো তর্কই চলে না।

এই ডিপার্টমেন্টে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং কোর্সের বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান (যেটুকু কোর্স শিক্ষকের থাকা উচিত) সম্পন্ন শিক্ষকদের নাম নিতে গেলে, নাম ফুরিয়ে যায়, তাও হাতে আঙুল ফুরোয় না। শিক্ষকদের সাফাই গাইতে আসবেন না দয়া করে। শুধু সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকা আর ক্লাস কামাই না দেয়াই শিক্ষকদের মানদন্ড নয়। আমাকে শিক্ষকদের শিক্ষাদানের মান, তাঁদের নিজেদের জ্ঞানের পরিমাণ- এসব বিষয় নিয়ে আমি মন্তব্য করতে এই লেখা লিখিনি।

আমেরিকা কেন, পৃথিবীর সবগুলো দেশ, সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞান বিতরণের নিমিত্তে একসূত্রে গ্রথিত হচ্ছে, সেখানে আমেরিকান সিস্টেম বলেই সেটাকে দূর দূর করে বাতিল করে দেয়া কি যৌক্তিক? টীচিং এসিসটেন্ট যদি বিশ্বের সব দেশে থাকতে পারে, (এমনকি বাংলাদেশেও, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে) তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না কেন? আমি তো সে কথাই বললাম আমার লেখায়। আপনি আমার লেখা না পড়েই এ মন্তব্য লিখতে গেলেন কেন?

"আরও লিখব">>>> এর পরের বার লেখার আগে দয়া করে আমার পুরোটা লেখা, পাঠকদের মন্তব্য এবং আমার জবাব-পুরোটুকু পড়বেন। নইলে আমি আপনার কোনো মন্তব্যের জবাব দেবো না।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

চলুক

মুশফিক এর ছবি

আপনি এখানে মন্তব্য করছেন কোনো উপরওয়ালাকে সন্তুষ্ট করতে। সেক্ষেত্রে আপনার সাথে কোনো তর্কই চলে না।

ঐক্যমত্য প্রকাশ করছি! চলুক

মুশফিক এর ছবি

, “একটা ছেলে ধরেন আপনার ফিজিক্সসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হল এবং কোন রকম রাজনিতিক প্রভাব ছাড়াই ঢাবি(ফিজিক্সসে যে রাজনিতিক প্রভাব ছাড়াই ভাল ছাত্ররা লেকচার হিসাবে নিয়োগ পায় সেটা নিশ্চই জানেন) ফিজিক্সসে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ পেল।

তাই নাকি ? সেই দিন মনে হয় আর নাই ! ব্যাতিক্রম ঘটেছে !

দেবজিত এর ছবি

কলাভবন এলাকায় একটা কৌতুক চালু আছে - বাংলার কেউ একজন একটা নোট করেছিলো। দশ বছর পর সেটা সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যপাঠ্য নোট হয়ে গিয়েছে।

ইফতেখার এর ছবি

একটা জিনিস বুঝিনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মত যায়গায় সেখানে শিক্ষা এবং গবেষণা দুটোরই চর্চা করতে হয়, সেখানে পি.এইচ.ডি ছাড়া কিভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। এই নন-পিএইচডিদের আবার শীঘ্রই ছুটি দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হয় পি.এইচ.ডি করার জন্য, বেতন সহ। তার মানে ৫ বছর তারা বেতন নিচ্ছেন কাজ ছাড়াই। অথচ এখন পিএইচডি ধারী অনেক লোক পাওয়া যায়। মোটের উপর সরাসরি পিএইচডি ধারীদের নিলে কম ইনভেষ্ট করে দেশ বেশি অভিজ্ঞ লোক পেত।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ডিমান্ড আর যোগানের মধ্যে বিরাটা ফারাক।

যে মাস্টার্স করে ৬ হাজার টাকা বেতনের প্রভাষক পদে যোগ দিবে, পিএইচডি করে সে সেই চাকুরী করবে? আপনি ঐ বেতনে পিএইচডি পাবেন না তো। আমি ৭ বছর আগের কথা বলছি, এখনো কিন্তু একই চিত্র বর্তমান। এখন হয়তো বেতন বেড়েছে, ২৫হাজার টাকা হয়েছে। কিন্তু ২৫হাজার টাকার ক্রয় ক্ষমতা সেই ৬হাজার টাকার সমানই আছে অথবা কমে গেছে।

মুশফিক এর ছবি

দারুন লিখেছেন ! হাততালি

Namhin এর ছবি

অসাধারন দেঁতো হাসি

robotrix এর ছবি

খুব খুব ভালো লাগলো।

ডাইনোসর এর ছবি

ভাল লেগেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।