অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী, মুখস্থবিদ্যা বিধ্বংসী।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১২/০১/২০১১ - ১১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র। ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। সাধারণ গণিতে ৬৫ পেয়েছি। সব বিষয়ের মধ্যে সেটাই সর্বোচ্চ। উচ্চতর গণিতে কোনমতে পাস করেছিলাম শুধু। বাবা-মা দু’জনই মহা দুঃশ্চিন্তায়। এহেন অবস্থা থাকলে তো ছেলেকে এসএসসিতে স্টার মার্কস পাওয়ানো প্রায় অসম্ভব! কাজেই, আমার স্বল্প আয়ের বাবা আমাকে অংকের টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। বাড়িভাড়া, ইলেকট্রিক-গ্যাসের বিল, স্কুলের বেতন- এসব দিয়ে মা’র হাতে সেসময় সর্বসাকুল্যে ৪০০০ টাকার মত থাকত- সারা মাস ৪ জনের এ পরিবারটিকে চালিয়ে নেয়ার জন্য। এর মধ্যে এখন যোগ হল ৮০০ টাকা- মানিক স্যারের মাইনে।

মানিক বাবু কোন শিক্ষক নন। তিনি মূলত আমাদের কলেজের রসায়ন পরীক্ষাগারের প্রদর্শক (ডেমন্স্ট্রেটর)। কিন্তু, গাধা পিটিয়ে মানুষ করায় তিনি বেশ ওস্তাদ। তাঁর প্রাইভেটে অনেক কড়াকড়ি। এক মিনিটও লেট করে আসা চলবেনা। সব অংক একেবারে হুবহু বইয়ের নিয়মে করতে হবে। একবার মনে আছে, একটি সম্পাদ্যে আমি ‘অংকন’-এর বানান ‘অঙ্কন’ লিখেছিলাম। এর কারণে তিনি ওই সম্পাদ্যে আমাকে ৪ এর মধ্যে ২ দিয়েছিলেন, যদিও আমি অন্য কোন ভুল করিনি! বেতন আদায়ের ব্যাপারেও তিনি অনেক কঠোর ছিলেন। মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন না দিলে তিনি চোখ কপালে তুলে, মুখ বিকৃত করে জিজ্ঞেস করতেন, ‘বাপ-মা কি ফকির নাকি? তাইলে প্রাইভেট পড়তে আসছ কেন?’

সে যাই হোক, মানিক স্যার আমাকে টেনে হিঁচড়ে ৬০ এর ঘর থেকে ৯০ এর ঘরে নিয়ে আসলেন। এমনকি, উচ্চতর গণিতেও ৮০-৮৫ পাওয়া শুরু করলাম। বিশালাকৃতির বপুর সাথে চরম বিসদৃশ গোঁফ, কুৎসিত ভাষা ও মুখভঙ্গি সত্ত্বেও মানিক স্যারকে আমার বেশ ভালই লাগত। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস গরুর মত খাটিয়েছেন। এত পরীক্ষা দিয়েছি তাঁর প্রাইভেটে, যে পুরো বইয়ের সব অংক পুরো মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। ঘুমোতে গেলেও চোখের সামনে অংক ভাসত। আমাদের স্কুলে অংকের বাঘা বাঘা শিক্ষকের কমতি ছিল না। ফয়েজ স্যার, মঞ্জুর স্যার, লতিফ স্যার (লাট্টু) প্রমুখ। কিন্তু, সাফল্যের দিক থেকে মানিক স্যার নামক বিএসসি (পাস) প্রাণীটির সাথে তাঁরা কিছুতেই টেক্কা দিতে পারতেননা। ব্যাপারটা আমার কাছে সে সময় খুব অবাক লাগত।

এখন আর অবাক হইনা। যে দেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভরশীল, শিশুদের সৃজনশীলতাকে যেখানে গলা টিপে হত্যা করা হয় প্রাইমারী স্কুলের ভর্তি কোচিংয়েই, সেদেশে মানিক স্যার নামক হাতুড়েরা প্রাইভেট পড়িয়ে মাসে মাসে কয়েক লাখ টাকা উপরি আয় করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আজ যখন ফিরে তাকাই পেছনে, দেখতে পাই যে সারা জীবন শুধু মুখস্থ করা ছাড়া আর কিছুই করিনি। যখন ফেল করেছি, বা ভাল নম্বর তুলতে পারিনি, সেটাও ছিল মুখস্থ করার অক্ষমতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ব্যাপারটা খুব একটা পাল্টায়নি প্রথমে। তখন আমার অভ্যাস ছিল- একেকটা প্রশ্নের উত্তর ২-৩ টা বই ঘেঁটে দাঁড় করানো, আর তারপর সেটাকে মুখস্থ করা এবং ২-৩ বার লিখে ফেলা। এর ফলে, স্বয়ং আজরাঈল এসেও সেই উত্তরটা আমার মাথা থেকে মুছতে পারবে কিনা সন্দেহ। এহেন ‘পড়ালেখা’ করতে করতে একদিন কিভাবে যেন কোন একটা বিষয় ভাল লেগে গেল। বিষয়টা ছিল resnick-haliday-krane এর বইয়ে quark সম্পর্কিত একটা অনুচ্ছেদ। মুগ্ধ বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম যে এই কালো কালো অক্ষরগুলোর অর্থ আছে। এদেরকে মনোযোগ দিয়ে পড়লে অনেক মজার মজার জিনিস জানা যায়! এর পর থেকে আর কখনো মুখস্থ করিনি- সেটা বলা যাবেনা। বরং, মুখস্থ করা অব্যাহত ছিল আগের মতই। কারণ, এছাড়া পরীক্ষা পাস করা সম্ভব না। স্বয়ং আইনস্টাইনও যদি আমাদের ডিপার্টমেন্টে কোন বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে বসতেন, সম্ভবত ফেল করতেন। এ ডিপার্টমেন্টে ১ম বর্ষে ছাত্ররা কেপলারের গ্রহ-নক্ষত্রের গতি সংক্রান্ত সূত্রের গাণিতিক প্রমাণ শিখে ফেলে। ক্রনিগ-পেনি মডেলের চার পাতার প্রমাণ নস্যি হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এহেন আইনস্টাইন-নিউটনদের তো পুরো পৃথিবী জয় করে ফেলার কথা! কিন্তু ঢাবি-জাবি’র শিক্ষক হওয়া আর তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারেনা এরা!

আমাদের ডিপার্টমেন্টে কামরুল হাসান নামে একজন শিক্ষক আছেন। তিনি গতানুগতিক প্রশ্নধারার বিরোধী। তাঁর প্রশ্ন করার পদ্ধতি হল- তিনি প্রায় ৫/৬ লাইন ধরে একটা বিষয় ব্যাখ্যা করবেন, যেখানে প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় সরঞ্জাম উপস্থিত থাকবে। তারপর তিনি প্রশ্নটি করবেন, এবং প্রশ্নটির উত্তর পেতে হলে কিভাবে অগ্রসর হতে হবে- সেটাও বলে দেবেন। কিন্তু, তাঁর প্রশ্নপদ্ধতি তাঁর সহকর্মীগণ বা ছাত্র-ছাত্রী- কারোরই তেমন পছন্দ ছিলনা। কারণ একটাই- তিনি লেকচার থেকে প্রশ্ন করতেননা! তাঁর ওই ৫-৬ লাইনের বাহারি প্রশ্ন দেখেই ছাত্ররা ভিরমি খেয়ে যেত! এমনতর প্রশ্ন তারা জীবনে কখনো চোখে দেখেনি! লেকচারে তো এমন কোন প্রশ্নোত্তর ছিলনা! ছাত্রদের মাথায় পুরো কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সব প্রশ্নের উত্তর ঠাসা; কিন্তু কোন উত্তরের প্রশ্ন এটা- সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না! প্রথম বর্ষে ভর্তি হবার পর মিলন মামা’র ক্যান্টিনের সামনে কামরুল হাসার স্যারের প্রতি বিষোদগার করা একটা পোস্টার পড়েছিলাম। জানতে পারলাম, আমাদের সিনিয়র ব্যাচের মেকানিক্স পরীক্ষায় তিনি দাঁতভাঙা কঠিন প্রশ্ন করেছেন। আর তাই সবাই সে কোর্সটা ইম্প্রুভমেন্ট রেখে আসতে বাধ্য হয়েছে। কিছুদিন পরে সেই বিখ্যাত প্রশ্নপত্রটি হস্তগত হল। সাগ্রহে পড়ে দেখলাম। পড়তে পড়তে প্রশ্নের মধ্যেই ডুবে গেলাম। “দুটো মাইক একে অপরের দিকে তাক করা। দুটোই একই গান বাজাচ্ছে। কিন্তু, গানটা কোথাও শোনা যাচ্ছে, আবার কোথাও শোনা যাচ্ছেনা। শব্দতরঙ্গের কোন ধর্মের কারণে এমনটি হচ্ছে? এ ধরনের তরঙ্গের নাম কি? এই তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম ব্যাখ্যা কর”। তখনো আমি standing wave, interference- এসব কঠিন কঠিন শব্দ জানতাম না। বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলামঃ ‘স্থির তরঙ্গ!’ স্থির তরঙ্গের যে এরকম বাস্তব উদাহরণ থাকতে পারে- তা আমাকে কেউ কখনো বলেনি। ওই একটি প্রশ্নপত্র আমার পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল!

মজার ব্যাপার হল, আমাদের সিনিয়র ব্যাচের ১ম বর্ষের মেকানিক্সে কামরুল স্যারের এহেন ‘ব্যর্থতা’-র কারণে তাঁকে সে কোর্স থেকে সরিয়ে দিয়ে কেমিস্ট্রির ছাত্রদেরকে একটা মাইনর কোর্স পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। একদিন রসায়ন বিভাগের আমার এক বন্ধুর সাথে কোন একটা বিষয়ে কথা হচ্ছিল। vector analysis- সম্পর্কে তার অপরিসীম জ্ঞান দেখে আমি একটু ধাক্কা খেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুই এইগুলা কোত্থেকে জানসিস?’ ও বললো, ‘স্যার পড়াইসে’। ‘কোন স্যার?’... ‘কামরুল হাসান স্যার’! সেদিন সারাদিন আমার খুব মন খারাপ ছিল। কেমিস্ট্রির ছাত্ররা ভেক্টর এনালিসিস শিখেছে কামরুল স্যারের কাছ থেকে, আর আমরা জনৈক ম্যাডামের কাছ থেকে, যিনি পুরো ভেক্টর এনালিসিস দুই লেকচারে শেষ করে দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে!

যাই হোক, এর পরেও এ ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রায়শঃই দু’একটা বাঘা বাঘা পদার্থবিজ্ঞানী বের হয়। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও দু’একটা মগজ যে কোন না কোন ভাবে ধোলাইয়ের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে- সেটা পরম আশার সংবাদ। বেঁচে থাকুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বেঁচে থাকুক ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট। বেঁচে থাকুন কামরুল হাসান স্যাররা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, আপনার নামটা দিতে মনে হয় ভুলে গেছেন।
লেখা অসম্ভব ভাল্লাগসে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর আপনার লেখা পাবার অপেক্ষায় রইলাম

---আশফাক আহমেদ

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কোয়ান্টাম মেকানিক্সে আপনার আগ্রহের জন্যে বলছি, বাংলায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রথম বইয়ের লেখক প্রফেসর সুনীলকুমার গোলদার। বইটার নাম কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেছিলো বাংলা একাডেমি এবং দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছিলো সৌরভ প্রকাশন। দ্বিতীয় প্রকাশনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলাম এই অধম। বইটা ব্যাপক হারে ব্লাকে ইনডিয়ায়ও চলে গিয়েছিলো। কলকাতার বাজারে আমি দেখেছি। প্রফেসর গোলদার স্ট্যাটিসটিক্যাল মেকানিক্সেরও প্রথম বাংলা বইয়ের লেখক। বইটার নাম পরিসাংখ্যিক বলবিদ্যা। পড়া না থাকলে পড়তে পারেন। ভালো লাগবে কি না তা বলতে পারবোনা। আমি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। নীচের কমেন্টে নাম দিয়েছি। মডারেশন কিউ পেরিয়ে আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা ফিজিক্সের অন্য কোন শাখা নিয়ে লেখার মত কনফিডেন্স আসেনি এখনো। আরো অনেক ফিজিক্স জানতে হবে তার আগে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অংক করে আসছি অনেকদিন ধরে, কিন্তু বিষয়টা আদৌ কতটুকু বুঝি, সেটা প্রশ্নাতীত নয়। ভাল থাকবেন।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম লিখতে ভুলে গেছি। অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

হিমু এর ছবি

অনীক ভাই, প্রথম পাতায় আপনার একটি পোস্ট দৃশ্যমান থাকলে, পরের পোস্টটি দেয়ার আগে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। আর লিখতে থাকুন রয়েসয়ে।

অতিথি লেখক এর ছবি

পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। দুঃখের কথা মুখস্তের বিরুদ্ধে নানা কথা বললেও নিজেও পরীক্ষা পাশের জন্য একাজে বাধ্য এখনও ইয়ে, মানে...
আর মানিক স্যারের কাছে আমিও গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই কেটে পড়েছিলাম। খাইছে

--রুদ্র

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম... :-|

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

কৌস্তুভ এর ছবি

খুব সত্যি কথা লিখেছেন, ভাইরে। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলোতেও মুখস্থরই জয়জয়কার। এ নিয়ে কতই অভিযোগ জমা রয় মনে, বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।

"মুগ্ধ বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম যে এই কালো কালো অক্ষরগুলোর অর্থ আছে।"

এই কথাটাই তো আমাদের গড্ডলিকাপ্রবাহের ছাত্রছাত্রীদের বুঝতে দেওয়া হয় না, ফার্স্ট-সেকেন্ড 'ভালো' ছাত্রেরাও অনেক সময়েই তাতে পাত্তা দেয় না।

কামরুল স্যারের প্রশ্নপদ্ধতি খুব ভালো লাগল। আমাদের এখানে একটু অন্য ধরনের প্রশ্ন হয় যেসব পরীক্ষায়, যেমন আই.এস.আই., আই.আই.টি.র প্রবেশিকা পরীক্ষা, অলিম্পিয়াড, সেগুলিতে এই পদ্ধতি নেওয়া হয় প্রায়ই। আমারও ওইটাই পছন্দ, ওখানে গাঁত- বা চোতা-বিদ্যায় পারদর্শীদের জারিজুরী ফাঁস হয়ে যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনাদের ওখানে কি এধরনের ভাল শিক্ষকদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে দাবিয়ে রাখা হয়? মাইনর ক্লাস বা গুরুত্বহীন ক্লাসের দায়িত্ব দিয়ে মেইনস্ট্রীম থেকে সরিয়ে রাখা হয়? আমাদের এখানে হয়। এটাই হতাশার।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অপছন্দনীয় এর ছবি

কলেজ জীবনের একটা ফিজিক্স পরীক্ষায় দুই বন্ধুর রেস্তোরাঁয় বসে চা খাওয়ার গল্প বলে নিউটন'স ল অফ কুলিং এর অ্যাপ্লিকেশনের একটা অংক ছিলো। আর এক ইংরেজী পরীক্ষায় 'গিফট অফ দ্য ম্যাজাই' এ কোন কোন রঙ কি কারণে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছিলো। এক ধাক্কায়ই চোথাবাজ আউট।

এই সবেমাত্র একটা টার্ম শেষ করলাম গত মাসে। টার্মের শেষ একটা পরীক্ষা ছিলো। ৩০ ঘণ্টার টেক হোম এগজাম। একদিন সকাল দশটায় প্রশ্নটা দেয়া হবে, পরের দিন বিকেল চারটায় জমা দিতে হবে। দুই পৃষ্ঠায় পাঁচটা প্রশ্ন, চারটা হলো বিভিন্ন পেপারের রেফারেন্স দিয়ে সেগুলোর সামারী বা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেগুলোর ব্যাখ্যা, আর বাকিটা হলো একটা অংক, মাত্র অর্ধেক পৃষ্ঠা জোড়া বর্ণনা সহ। পেপার সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে লেগেছে দুই ঘন্টা। আর বাকি পুরোটাই গেছে ওই একখানা অংক করতে। গোটাকয় প্রোব্যাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন আর থিওরী, সেই সাথে নিউমেরিক্যাল অ্যানালাইসিস টেকনিক যোগ করে একটা রিয়্যাল লাইফ প্রবলেমের সমাধান করতে হয়েছে।

প্রবলেম সলভ করতে গিয়ে যদি দু'চারবার খামচে খামচে চুল ছিঁড়তে না হয় আর মাথাটা টেবিলের গায়ে পাঁচ সাতটা বাড়ি মারার প্রয়োজন না পড়ে, তাহলে প্রবলেম সলভ করে মজা কি? হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি :) হাসি :) হাসি সেটাই...

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বাহ!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

তোফায়েল আযম এর ছবি

পরিসংখ্যান,প্রানপরিসংখ্যান ও তথ্যপরিসংখ্যান'এ একজন স্যার আছেন জাফর আহমেদ খান,স্যার কে এতটাই ভাল লাগে যে মনে হয় জীবন অনেক ভাল কোনো কাজ করেছিলাম যার জন্য স্যার এর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম।যেই probability অনেক ভয় লাগত সেটা যে এত মজা করে পড়া যায় সেটা স্যারই প্রথম শিখিয়েছেন।জাফর স্যার এর মত স্যার দের অনেক দরকার কারন সমাজে মুখস্ত যে দিন বন্ধ করা যাবে সে দিন হবে সমাজের মুক্তি।জাফর স্যাররা সেই দিনটি অনেক সহজেই আনতে পারেন...জয় হোক জাফর,কামরুল স্যারদের...

অতিথি লেখক এর ছবি

২য় বর্ষ পরিসংখ্যান ক্লাসে যে স্যার ছিলেন, তাঁর নাম ভুলে গেছি। তাঁকে প্রথমে আমরা খুব অপছন্দ করেছিলাম। কিন্তু, পরে আমি তাঁকে রীতিমত ভালবাসতে শুরু করি। স্যারের নাম ভুলে গেছি... জব্বার বা জাফর-এ ধরনেরই কিছু একটা। তিনি পরিসংখ্যানের বইও লিখেছিলেন। আমি প্রবেবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি।

অন্যদিকে, ১ম বর্ষে ছিলেন মুতাসিম বিল্লাহ, প্রাক্তন হেড অফ দা ডিপার্টমেন্ট। তাঁর পড়ানোর স্টাইল আমার একদম পছন্দ হয়নি।

জয় হোক জাফর স্যার, কামরুল স্যারদের। হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা অনীক ভাই। চলুক চলুক চলুক

মুখস্তের ব্যাপারটা যে কত ভয়ানক অত্যাচার করেছে সেই স্কুল থেকে এখনকার ভার্সিটি লাইফ পর্যন্ত তা ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে যায়। শুধু একটা উদাহরণ দেই। দ্বিতীয় কি তৃতীয় সেমিস্টার এ Ordinary Differential Equation (ODE) এবং Partial Differential Equation (PDE) ছিল। এবং দেখলাম অনেককেই চানাচুরের মত করে চিবাচ্ছে পরীক্ষার আগে না বুঝেই। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান আর অন্যান্য চোথা সব নখদর্পণে তাদের। কিছু না বুঝেই। তবে ক্যালকুলাসের এই জিনিসটা বইতে পড়তে যেয়ে আর হালকা ক্লাসে লেকচার শুনে অনেক আগ্রহ পেলাম শুরু থেকেই। আর তাই এটার পিছনে বেশ কিছুদিন সময় দিলাম। দেখি বিষয়টা আসলেই অনেক আনন্দকর, যদিও কিছু জটিল ক্ষেত্র আছে। আমি শুধু ক্লাসনোটের তিন চারটা অংক করেই পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষার সব প্রশ্নই বলা চলে আমার জন্যে নতুন যদিও তার কিছু অংশ অন্যদের কাছে আংশিক কমন ছিল। কারণ বিগত কোনো সময়ের প্রশ্নের সাথে মিল আছে। আমি পরীক্ষার তিন ঘন্টাই ব্যাপক উৎসাহে ছিলাম। একটা অপরিচিত নতুন অংক সমাধান করার মজাই অন্যরকম। পরে ফলাফলে দেখা গেল বেশিরভাগ প্রশ্ন আউট অফ সিলেবাস হওয়ায় (!) ষাট শতাংশ খাতার পারফরম্যান্স খারাপ। তবে গুটিকতকের মধ্যে আমিও সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়েছিলাম।

বিজ্ঞানের বিষয় তো আছেই, সেই সাথে অন্যান্য বিষয়ও মুখস্তবিদ্যা আর তদ্রুপ ডিগ্রীধারী শিক্ষকদের করাল গ্রাসের শিকার। আমার বলা চলে এই দুইএর চাপে মোটামুটি বাংলাফোবিয়া হয়ে গিয়েছিল। অথচ হাড় পাকার পরে এখন একটু একটু বুঝছি যে আসলে বাংলা সাহিত্য কত মজার বিষয় হতে পারত।

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

অংকের একটা ভাল দিক হল, অনেক চেষ্টা করেও প্রশ্নগুলোকে সাহিত্যের প্রশ্নের মত বর্ণনামূলক করা সম্ভব নয়। কিন্তু, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকরা বর্ণনামূলক প্রশ্ন ঠিকই খুঁজে বের করেন। এটাই সমস্যা। যে থিয়োরীটা আবিষ্কার করতে ডজনখানেক বিজ্ঞানী এক দশক ধরে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছিলেন, সেটাকে যখন ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষার খাতায় লিখতে হয়- তা মুখস্থ করা ছাড়া উপায় থাকে না।

বাংলার ব্যাপারে একটা মজার কথা বলি। আমি বছরের শুরুতে হাতে বই পাওয়া মাত্র সবগুলো গল্প এক নিঃশ্বাসে পড়ে নিতাম, আর কবিতা গুলো উচ্চৈস্বরে আবৃত্তি করতাম। কিন্তু, ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে সে বই আমার শত্রুতে পরিণত হত। দুই চক্ষে দেখতে পারতামনা আর তাকে। মন খারাপ

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

মুখস্তবিদ্যা জিন্দাবাদ। এই জিনিসের কোনো বিকল্প নেই, বিশেষ করে অংকের ক্ষেত্রে। মুখস্তবিদ্যা ছিলো বলেই ফাইভে অংকে ০৮ পাওয়া আমি পরবর্তীতে সব পরীক্ষায় 'আরেকটু হলেই সেঞ্চুরি' হাঁকিয়ে গিয়েছি। দুনিয়ার তাবত কিছু সূত্রে ফেলে বুঝে নেয়া সম্ভব। কিন্তু অংক? উঁহু। ঠাডা মুখস্ত ছাড়া এই জিনিসের আর কোনো গতি নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে, মুখস্তবিদ‌্যার দাপটে মেধাবি ছাত্র থেকে একলাফে পতিত পতন্গ, আর কি বোলবো? সেই স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় একি রকম। আমাদের বিভাগের যে দু একজন শিক্ষক এর বাইরে চেষ্টা করেছেন তারা হয় পথ পালটেছেন নয় চাপা পড়েছেন। এই হয়, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তবুতো দু একজনের দেখা মেলে কিন্তু শুরুর ধাপে ভয়ানক ওবনমন কে থামাবে? ধন্যবাদ। কিন্তু এ নিয়েতো কাজ করা দরকার। এই কথাগুলো আরো সামনে আসা চাই। নিজেদেরো মাঠে নামা দরকার। - পতিত পতন্গ

অতিথি লেখক এর ছবি

এখনকার শক্তিশালী চক্র হচ্ছে মুখস্থবিদ্যার অনুগামী শিক্ষকগোষ্ঠী। ব্যাপারটা শুধু মুখস্থবিদ্যা নয়; পরীক্ষার প্রশ্নপদ্ধতির আমূল পরিবর্তন আসলে একটা মুক্তমনা-স্বাধীনচেতা প্রজন্ম অগ্রাধিকার পাবে-যারা শুধু পরীক্ষা পাসের জন্য পড়ে না, ভালবেসে পড়ে, জানার জন্য পড়ে। সে প্রজন্ম মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে ক্ষমতাসীনের গদি টলমল করবে। স্বাধীনচেতাদের মুখে লাগাম লাগানো অনেক কষ্টকর ব্যাপার। তাই তার চায়না, এরা অগ্রাধিকার পাক।

কাজ আছে অনেক। সামনে অনেকটুকু পথ। নিজেদের তৈরি করছি। একবার মাঠে নামলে পেছনে ফিরে তাকাব না।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

দ্রোহী এর ছবি

মনির হোশেনের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলি - মুখস্ত বিদ্যা জিন্দাবাদ।

"আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... তাই নিয়ে পরিবেশ।"

স্পর্শ এর ছবি

"আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে.... তাই নিয়ে পরিবেশ।"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি মিয়া আপনি পারেনও!! সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেল।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

' এঁ এঁ এঁ আকবর দিল্লীর সম্রাট ছিলেন... এঁ এঁ এঁ আকবর দিল্লীর সম্রাট ছিলেন... এঁ এঁ আকবর...'
অথবা, 'এবিসি একটি ত্রিভুজ, বি উহার কেন্দ্রবিন্দু। '

নৈষাদ এর ছবি

শিক্ষকের বেতের সামনে দাঁড়িয়ে এক ছাত্র চোখ বন্ধ করে মুখস্থ করা নিউটনের তৃতীয় সূত্র বলছে, '….প্রত্যেক বস্তুরই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে….

অতিথি লেখক এর ছবি

পৃথিবী....কমলালে.......কমলালে........কমলালে........কমলালে........... বুর মত গোল..........বুর মত গোল...........বুর মত গোল............বুর মত গোল

কিছু মুখস্ত হইতেছিলনা বইলা গতকাইল একটা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাই(IPE 331) দিলাম না মন খারাপ

ধৈবত

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমি কেলাশ ফাইভের সমাজ বিজ্ঞান পরীক্ষার আগের রাতে ঘুমের মাঝেও বলতেছিলাম - "পরিবেশ বলতে বুঝায়"... এইটা নিয়ে এখনো সবাই হাসাহাসি করে... আর ঠিকমতো মুখস্থ করতারলাম না বলেই তো সারা জীবন নাম্বার কম থেকে গেল সবার চেয়ে... আমাদের দেশে তো নাম্বারের উপ্রে কথা নাই! ওঁয়া ওঁয়া

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি ১ এর ছবি

আমার বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং গোল্ড মেডালিস্ট; কিছুদিন আগে ওর সাথে কথা হচ্ছিল, বললো, "দোস্ত, ফিজিক্স যদি আমি কিছু শিখে থাকি তাহলে এখানে (আমেরিকা) এসে শিখছি "...

এই যদি ওর অবস্থা হয় তাহলে অন্যদের অবস্থা কি ?

পড়াচোর

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার বন্ধুর কি না? কোন ব্যাচের? আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থাও যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, তাও নয়। আমি নিজেই এখন আমেরিকায় পিএইচডি করছি। আমাদের দেশে যে পরিমান কাঁচামাল আছে- ঠিক মত গড়তে পারলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত করাও অসম্ভব নয়। কাজ করতে হবে। অনেক কাজ বাকি।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি ১ এর ছবি

ঠিক বলেছেন ভাই, অনেক কাজ বাকি ... অনেক , কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে ? দেশে গিয়ে ছাত্রদেরকে কামরুল স্যার এর মত করে কিছু শেখাতে গেলে আপনাকেও লোকে পেছন থেকে টেনে ধরবে । এই দুঃখেই অনেকে দেশে ফেরত যায়না।

সংগত কারনে আমার বন্ধুর নামটা দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

পড়াচোর

তুলিরেখা এর ছবি

আরে সেই দুলে দুলে কেমিস্ট্রি মুখস্থ ? হাসি
আর আহারে বেচারা কবিতাগুলো! তাদের ফালুদা বানানো হতো ব্যাখা বিশ্লেষণ দাবী করে।
উফ, এই অদ্ভুত রিডিকুলাস ব্যবস্থা কবে পালটাবে? মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তাশক্তির সৃজনীশক্তির বারোটা বাজানো এক ব্যবস্থা! চিন্তিত

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

"কবি কবিতা লেখেন মনের আনন্দে। আর আমরা প্রথমে তাকে বধ করি, তারপর ডিসেকশন টেবিলে ব্যবচ্ছেদ করি" উক্তিটি আমার কলেজের এক ম্যাডামের।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

ফাহিম হাসান এর ছবি

মানিক স্যারের ছাত্র আমিও ছিলাম। মাধ্যমিকে নম্বর পেয়েছি বিস্তর কিন্তু চিন্তা করতে শিখিনি। এখনও ভুগছি গণিত নিয়ে।

সৌভাগ্যক্রমে আমার স্কুলে কয়েকজন স্বকীয় ও প্রতিভাবান শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা অনেক যত্ন করে পড়াতেন। সেই সব শিক্ষা আজও কাজে লাগে।

স্পর্শ এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন! আপনার কাছ থেকে এমন আরো লেখা চাই। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আরো পাবেন। হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

নৈষাদ এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে।

ফ্রুলিক্স.. এর ছবি

বাইরে পড়তে এসে মুখস্তবিদ্যার ঠেলা বুঝেছিলাম।
অংকে বরাবরই মজা পাই। বিশেষ করে বীজগনিত, জ্যামিত। পাটিগনিত ভালো লাগে না। কম্পু আর ইলেকট্রিক নিয়ে ছিলাম বলে হয়তো মুখস্ত একটু কম করতে হইছে।

জার্মানীতে ওপেন বুক নামে কিছু পরীক্ষা আছে। পুরো কলিজা নিয়ে টানাটানি। বিগত ১৪ বছরের প্রশ্ন এক করেও কোন কাজ হয় না। এক্সামের দিন যার যা খুশি নিয়ে আসো (কম্পুটার ছাড়া)। প্রফেসরগুলো যে কি জিনিস প্রশ্ন হাতে আসলেই টের পাওয়া যায়। মার্কিং সিস্টেমও প্রফেসরের উপর। প্রশ্ন সোজা হলে ৬০/৬৫ মার্কে পাশ। কঠিন হলে ৪০/৪৫ মার্কই যথেষ্ট।
ওপেন বুক পরীক্ষার একটি উদাহরন: প্রশ্নপত্র সবার কাছে বিলি করার পর প্রফেসর পুরো প্রশ্ন একবার পড়ে যান। ঐ প্রশ্ন পড়তেই উনার প্রায় ৪৭ মিনিট লেগেছে। এখন ছাত্রদের উত্তর দিতে হবে দুই ঘন্টায়। মাথায় কিছু থাকলেই শুধু পাশ করা সম্ভব।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছুক্ষণ আগে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি এবং খারাপ পরীক্ষা। কারন পরীক্ষা হলে অনেক সুত্র ভুলে গেছি। অথচ এই সুত্র মুখস্ত করতে গিয়ে ভালো করে বেসিকটা বুঝাই হয়নি মন খারাপ মন খারাপ

-আদু ভাই

শিশির কণা এর ছবি

এ তো গেল বিজ্ঞানে মুখস্থযন্ত্রনা...ঐ দিকে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে মুখস্থ যন্ত্রণা তো প্রাণান্তকর ...
মুখস্থ করে পাতার পর পাতা লিখ আর মার্কস নিয়ে যাও ......

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পড়া মুখস্ত করার অপকারিতার কথাই সবাই বললো, উপকারের কথা কেউ বলে না। মন খারাপ

রাত জেগে উচ্চস্বরে পড়া মুখস্ত করলে চোরের হামলা থেকে বাঁচা যায়। অনেক সময় মুরব্বীদেরকেও 'পড়ছি' বলে ফাঁকি দেয়া যায়। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় স্কুলের হোস্টেলে আমার এক দোস্ত পড়ছে তো পড়ছেই "কেঁচোকে জমির লাঙ্গল বলে ... কেঁচোকে জমির লাঙ্গল বলে ...কেঁচোকে জমির লাঙ্গল বলে ...কেঁচোকে জমির লাঙ্গল বলে ..." পড়তে পড়তে পড়ার টেবিলেই সে ঝিমাচ্ছে, চোখ বন্ধ কিন্তু মুখ চলছেই। সমস্যা বাঁধলো যখন সে কেঁচোর পরিবর্তে চেঁকো পড়া শুরু করলো "চেঁকোকে জমির লাঙ্গল বলে ...চেঁকোকে জমির লাঙ্গল বলে ...চেঁকোকে জমির লাঙ্গল বলে ...চেঁকোকে জমির লাঙ্গল বলে ..."। হোস্টেলের স্যার এসে তার পিছনে দাঁড়িয়ে সেই পড়া কিছুক্ষণ শুনলেন, ফ্রেন্ড কিছুই টের পেলো না। স্যার এরপর তার 'স্কাউট, সদা প্রস্তুত' বেতখানা দিয়ে পিঠে আঘাত করতেই ফ্রেন্ড ধড়মড় করে তন্দ্রা থেকে জেগে উঠলো!

শিক্ষকদের জন্য মুখস্তবিদ্যা বেশি কাজের। কারণ, তাদেরকেও চিন্তা করতে হয় কম। পড়ানোর সময়ও খুব ভালো করে না বুঝালে চলে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

শিক্ষকদের জন্য মুখস্তবিদ্যা বেশি কাজের। কারণ, তাদেরকেও চিন্তা করতে হয় কম। পড়ানোর সময়ও খুব ভালো করে না বুঝালে চলে।

দেঁতো হাসি চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

হাসিব এর ছবি

নরকে গেলেও মুখস্তবিদ্যা কাজে লাগবে। যারা বলে মুখস্তবিদ্যা অমুক জায়গায় কাজে লাগে না তারা একটা ভ্রান্ত ধারমার ভিতর বাস করে। সব এডুকেশন সিস্টেমেই চর্চা, মানে এক জিনিস বার বার করা, জিনিসটা রেজাল্ট আনতে কাজে দেয়। গণিত, ফিজিক্স, বাংলা সবখানেই একই দশা। মুক্ত বই সিস্টেম, বন্ধ বই সিস্টেম সব জায়গায় একই ঘটনা। এই চর্চা জিনিসটা এক অর্থে মুখস্তই।
তবে কী জিনিস কতটুকু মুখস্ত করতে হবে সেই বিষয়ে পার্থক্য আছে জায়গাভেদে।

অতিথি লেখক এর ছবি

যে জিনিস না-বুঝে মুখস্থ করলে, আর বুঝে নিয়ে লিখলে সমান নম্বর পাওয়া যায়, সেটা সবাই সাধারণত না-বুঝেই মুখস্থ করে। আমি সেটার কথাই বলেছি। কাজ করতে গেলে সব সময় অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। হয় সেগুলো মুখস্থ করে নিয়েছি, আর নয়তো বহুদিনের অভ্যাসে এমনিই মুখস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু তার মানে এ নয়, যে আমি সেগুলো বুঝিনা। আমাদের দেশে না বুঝে মুখস্থ করার হার অনেক বেশি।

'আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল। আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল। আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল। আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল। আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল। আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল। ..... আমার এক হাতে পাঁচটা আঙ্গুল।'

'বল: তোমার এক হাতে কয়টা আঙ্গুল?'

'....জানিনা স্যার...'

আমি এই মুখস্থবিদ্যার কথা বলেছি।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক


একবার মনে আছে, একটি সম্পাদ্যে আমি ‘অংকন’-এর বানান ‘অঙ্কন’ লিখেছিলাম। এর কারণে তিনি ওই সম্পাদ্যে আমাকে ৪ এর মধ্যে ২ দিয়েছিলেন, যদিও আমি অন্য কোন ভুল করিনি!

সত্যি খুব অবাক হলাম। 'অংকন' নয়, বরং 'অঙ্কন' বানানটিই শুদ্ধ! অর্থাৎ আপনি ঠিকই লিখেছিলেন!! ভুল করলে ওই মানিক স্যারই করেছেন!!! খাইছে

আপনার সাথে আম্মো বলি, বেঁচে থাকুক কামরুল হাসান স্যাররা।

এখন কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু হয়েছে দেশে। মুখস্থবিদ্যায় আর কাজ হবে না। চিন্তিত

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

তখনকার পাঠ্যবইয়ে এই বানানটাই ছিল। কাজেই, ভুল হোক আর সঠিক হোক- এটাই লিখতে হত আমাদেরকে। কিছুই করার ছিলনা। মন খারাপ

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

ঈশান  এর ছবি

আমিও রেসিডেনসিয়াল এর ছাত্র। এস এস সি ২০০৪। ঘোষ বাবুর ব্যবসায়ের কথা আগেই শুনেছিলাম। তবে উনার কাছে পড়তে যাই নি। পড়তাম আবুল কালাম আজাদ স্যারের কাছে। এবং উনার কাছে পড়েই অংক যে বোঝার জিনিস সেটা টের পাই। রেসিডেনসিয়ালের এই জিনিসটা আসলেই অবাক করে। আমাদের এইটে অঙ্ক করাতো মুগনী স্যার, সেভেনে দিলারা ম্যাডাম, সিক্সে সুলতান(বান্টি) স্যার। এবং আজব ব্যাপার এরা কেউ অঙ্কের টিচার ছিলেন না। অথচ ছেলেপেলেদের অঙ্কের ভিত এই ক্লাসগুলো থেকেই গড়ে উঠে। আর লতিফ স্যার মনে হয় ক্লাস টেনে হায়ার ম্যাথ নিত। উনার ম্যাথ কি জিনিস সেটা রেসিডেনসিয়ালের ছাত্ররা ভালোমতই জানে।
ভালোকথা আপনি কোন ব্যাচ ?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি এসএসসি ২০০১।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

পল্লব এর ছবি

মুখস্থবিদ্যার জয়। পুরা স্কুল, কলেজ এবং (আফসোস) ভার্সিটিতেও কিছু জায়গা পার করতে হইসে মুখস্থবিদ্যায়। "মুখস্থ কর, হাইয়েস্ট পাও, ফার্স্ট হও" - এই নীতিতে স্কুলের পড়া শেষ করসি। মনে আছে, বাংলা রচনা মুখস্থ লিখে শেষ করতে পারিনাই বলে ২০ এ পাইসি ৫, বকা খাইতেসি, এমন সময় ৪ পাওয়া ছাত্র এসে অভিভাবককে জানাইল, "ওই তো সবচেয়ে বেশি পাইসে!" ব্যস! অভিভাবক খুশি।

সারাজীবনে মুখস্থ কইরা যা পার করসি,তার কিছুই মনে নাই, নিজে বুঝে যা শিখসি, সেইগুলা এখন আজরাইলেও বোধ হয় ভুলাইতে পারব না।

মুখস্থ করতে হয় বইলা বাংলা, ইংরেজি সাব্জেক্টগুলায় চরম বিতৃষ্ণা হইসে। গল্প পড়ার মজা বাদ দিয়ে নামকরণের সার্থকতা, চরিত্র বিশ্লেষণের ইত্যকার পয়েন্ট মুখস্থ কর, পরীক্ষার খাতায় উগরায়ে দাও। নতুন সৃজনশীল পরীক্ষা নামে একটা সিস্টেম হইসে দেখলাম। দেশে এইবার গিয়ে বেশ কৌতুহল নিয়ে টেস্ট পেপার খুলে দেখি, সেই একি জিনিস। পুরা গল্পের একটা আজিব কিসিমের সামারি, নিচে অমুক চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলা আলোচনা কর। পুরাই হতাশ।

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমমম....

আবার তোরা মানুষ হ!

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

guest writer rajkonya এর ছবি

কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি ঢাবির ছাত্র। আমাদেরও পদার্থ মাইনর ছিল। কিন্তু কোন স্যারেরা যে পড়াতেন মনে নেই তাঁদের নাম পর্যন্ত। মুখস্থ করতে আমার ভাল লাগত না , কখনোই। তাই হয়ত ভাল নাম্বার পাওয়া হল না।
কামরুল স্যারের ক্লাস কি আমরা পেয়েছিলাম? তিনি ২০০০ এর দিকে জয়েন করেছিলেন? লম্বা , কালো করে? তবে যেমন প্রশ্নের কথা বলছেন, তেমন প্রশ্ন আমরা পাইনি।
আর ফিসিক্সের ছাত্র না হলেও আপনার দেওয়া প্রশ্নটার উত্তর ধরতে পেরেছি। দেঁতো হাসি
----------------------------------------------------------------------------------------------------
রাজকন্যা
[url=আমার জীবনে গণিত]http://www.facebook.com/note.php?note_id=449526632100[/url]

অতিথি লেখক এর ছবি

কামরুল স্যার আরো আগে জয়েন করেছেন বলে আমার ধারণা। কিন্তু আমি ঠিক নিশ্চিত নই। আমি তো ২০০৪ এ ভর্তি হয়েছিলাম। তার আগের কথা ভাল জানিনা।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

guest writer rajkonya এর ছবি

তাহলে আপনি আমার জুনিয়র।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে। লেখায় পাঁচ তারা দিলাম।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

রায়হান আবীর এর ছবি

দারুন লিখেছেন ভাইয়া। আপনি ঢাবির হয়ে থাকলে রাব্বানী স্যারকে চিনে থাকবেন। স্যারের সংস্পর্শে এসে আমি জীবনে প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থেই কিছু শিখতে পারছি ...

আরও লিখুন...

অতিথি লেখক এর ছবি

রাব্বানী স্যারকে আমি সেভাবে পাইনি। মাঝখানে তিনি দু'বছরের ছুটি নিয়ে আইইউটি চলে গিয়েছিলেন। তাঁর কোন ক্লাস করার সৌভাগ্য হয়নি। মন খারাপ

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

হাসিব এর ছবি

এই ব্লগার এবং আপনি কি একই লোক?

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা সময় অ্যাস্ট্রোফিজিকস খুব ভাল পাইতাম, বহুত ইচ্ছা ছিল এইডা লইয়া পড়াশুনা করুম, কিন্তু ভুল জায়গায়চ চইলা আইছি। আপনি যদি হবু অ্যাস্ট্রোফিজিস্ট হয়ে থাইকেন তাইলে আওয়াজ দিয়েন, আপনের সারগিদ হমু। দেঁতো হাসি

ধৈবত

হাসিব এর ছবি

কী বলতে চাইলেন বুঝি নাই। সচলের লেখা আজকাল এদিক ওদিক বিনা অনুমতিতে ছাপানো হয়। এইজন্য বিষয়টা নজরে আনলাম আপনার।

হাসিব এর ছবি

-- রিপিটেড মন্তব্য --

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বি। ওইটা আমিই। আমি সচলায়তনে পোস্ট করে, নিয়ম অনুযায়ী ৭২ ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর ওইখানে পোস্ট দিসি। আপনার concern এর জন্য ধন্যবাদ। হাসি ভাল থাকেন।

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধৈবত, আমি হবু এস্ট্রোফিজিসিস্ট। কিন্তু, এখনো তো 'হবু'। আমার সাগরেদ হওয়ার কি দরকার? সোজাসুজি এস্ট্রোফিজিসিস্ট হইয়া যান না! হাসি

অনীক_ইকবাল (darrel7756@gmail.com)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।