নবাবনামা - চার

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ১১/০৩/২০১২ - ১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্বতৃতীয় পর্ব

মারাঠারা তাদের রীতি অনুযায়ী যুদ্ধে আগে বাড়ার আগে শত্রুপক্ষের সাপ্লাই লাইন কেটে দিতে মত্ত হল। আলিবর্দি তাদের ফাইট দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার সাথের আফগানেরা বেঁকে বসে। তাঁবুর পেছন দিক দিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসে মারাঠা ঘোড়ার দল, অগুণতি সিপাই ঘিরে ধরে ক্যাম্প। আলিবর্দি পড়লেন বাটে। তিনি দূত পাঠিয়ে বললেন আচ্ছা যাও যাও চৌথ বাবদ দশ লাখ রূপী চাইছিলে তা দিয়ে দিচ্ছি। মারাঠা জেনারেল তখন ফট করে দাম বাড়িয়ে দশ লাখ নয় এক কোটি রূপী চৌথ হেঁকে বসলেন।

বিরাট বিপদে পড়ে আলিবর্দি তার আফগান ডান হাত মুস্তাফা খাঁ কে হাতজোড় করে অনুরোধ করলেন যেন তারা তাকে মারাঠার হাত থেকে বাঁচায়। তাদের মধ্যে মন কষাকষি যাচ্ছিল। মুস্তাফা লুক ভালো, সে ভেদাভেদ ভুলে মারাঠাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের ঘোড়সওয়ারের দল মারাঠাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে করতে রাজধানী মুর্শিদাবাদের দিকে রওনা হয়। মুর্শিদাবাদের রাস্তা তখন মারাঠারা ঘিরে রেখেছিল।

জুনের শেষদিকে মারাঠাদের টনক নড়লো যে বাংলার বিশ্রী বর্ষা সিজনে তাদের নাগপুর যাবার রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তারা তাদের তাবু আর লুটের মাল বগলে চেপে কেটে পড়া শুরু করলো। মাঝপথে কি ভেবে তারা আবার মত পালটালো, বাড়ি ফিরার বদলে বীরভূমের পাহাড়ে তারা আস্তানা গাড়লো বিষ্টিবাদলার অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্যে। প্ল্যান ছিল বৃষ্টি একটু ধরে আসলেই আবার বর্ধমানে গিয়ে লুটপাট ইষ্টার্ট। এমন সময় কোথা থেকে মারাঠা ক্যাম্পে হাজির হল মীর হাবিব।

মীর হাবিব ছিল খাজনা অফিসার, তার তহবিল তছরুপের কাহিনী আলিবর্দির নবাবী কান পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তো সেই মীর হাবিব ভাস্কর পাঁট এর সাথে দেখা করে বললো বাংলায় থেকে যেতে আর তিনটে প্রদেশের অধিপতি হয়ে বসতে।

মারাঠা বর্গীর ফিরে আসার খবরে হিঁদু মুসলিম সকলে যথাক্রমে কাছা ও কোঁচা ধরে দৌড় লাগাল। হাটবাজারের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল, মাইল কা মাইল জমি ফেলে লোকে পালাল। চাষা তাঁতি জেলে কুমার সকলে বউবাচ্চা কোলে নিয়ে দিল চম্পট, হাতে অল্প যা কিছু নিতে পারে তাই সম্বল করে। আস্ত বাংলার পপুলেশন গঙ্গা নদী পেরিয়ে পশ্চিমে হাঁটা দিল আর দৃঢ় সঙ্কল্প করলো আর কোনদিন বাংলা ফিরত যাবেনা।

এইসব যখন ঘটে চলেছে তখন আলিবর্দি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তিনি মুর্শিদাবাদের কাছে ক্যাম্প ফেললেন, সাথে যোগ দিল পাটনা থেকে আরো সৈন্য আর উত্তর থেকে আফগান। ততদিনে বাংলার ইউওরোপীয়রাও বিরাট ত্যক্ত মারাঠাদের উপর, তারা তাদের কুঠি বর্গী আক্রমন ঠেকানোর জন্যে সুরক্ষিত করায় মন দিল।

অক্টোবর মাসে ঢোল কত্তাল বাজিয়ে যুদ্ধে নামেন আলিবর্দি। মারাঠা কি আর ওইসব গীতে ভোলে? তারা সম্মুখ যুদ্ধে না এসে কোনাকাঞ্চি দিয়ে গেরিলা আক্রমন চালালো আর অতর্কিত লুটতরাজ অব্যাহত রাখল। এতদিকে সৈন্য পাঠিয়ে মারাঠা দমন করতে গিয়ে আলিবর্দি পড়লেন ভারি মুসিবতে।

সোজা আঙুলে ঘি ওঠেনা দেখে আলিবর্দি দুই নম্বরী পথ ধরলেন। ভাস্কর পাঁটকে নানাবিধ আদর করে সুমিষ্ট চিঠি পাঠানো হল যেন তিনি বৈঠকে আসেন। বিরাট তাম্বু খাটানো হল, আর চিপার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হল গুপ্তঘাতক। মারাঠা জেনারেল ও তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণকে ভয়ংকর আদর করে তাঁবুতে নিয়ে যাওয়া হল, তারপরে তাদের কল্লা নামিয়ে দেয়া হল। জেনারেল ভাস্কর পাঁট এর কল্লা ঝুলিয়ে আলিবর্দি বাইরে অপেক্ষারত মারাঠা সিপাইদের তেড়ে গেলেন।

সিপাইরা অলরেডি পালিয়ে গিয়েছিল। তাদের ডেকে এনে এইরকম অপমান করার রাগ তারা ঝাড়া শুরু করলো গ্রামবাংলার মানুষের উপর। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হল, লোকজনের হাত পাও নাক কান ইচ্ছামত কেটে হাতে ধরিয়ে দেয়া হতে থাকল। সে এক অবিশ্বাস্য অমানুষিক বর্বরতা। কয়েকমাস চললো এই নারকীয় তান্ডব, তারপরে তারা নাগপুর ফিরত গেলো।

আলিবর্দির তখন হালুয়া টাইট। আরো দুই দুইটি মারাঠা আক্রমনের মুখোমুখি তিনি তখন। পূবদিকে ষাট হাজার ঘোড়সওয়ারের বিরাট বাহিনী রুগা’জী ভোঁসলের কমান্ডে উড়িষ্যা তছনছ করে যাচ্ছিলো, ভাস্কর পাঁট রুগা’জীরই জেনারেল ছিলেন। পশ্চিমে সমশক্তির মারাঠা বাহিনী বালাজী রাও এর কমান্ডে আক্রমন করে বিহার। একই সাথে চলছিল লুট।

এইরকম ডাইনে বাঁয়ে আক্রমনে আলিবর্দি দিশেহারা। কিন্তু কয়দিন পর শয়তানে শয়তানে লাগলো কাইজা। দুই মারাঠা কমান্ডার প্রথমে ঠিক করেছিলেন চৌথ আর লুটের মাল আধাআধি বখরা হবে, কিন্তু দুই পক্ষই একে অপরকে সন্দেহ করছিল যে তারা ঠিকমত লুটের মাল দেখাচ্ছেনা। আলিবর্দি এইবার বুদ্ধিমানের মত পেশোয়া কমান্ডার বালাজী রাও এর সাথে চুক্তি করলেন। চুক্তি অনুযায়ী, আলিবর্দী পেশোয়াকে চৌথ প্রদান করবেন আর তার বদলে পেশোয়া বাবাজী ভোঁসলে বাবাজীকে পিটিয়ে বাংলা থেকে বের করে দেবে।

শুরু হল চিটিংবাজীর কম্পিটিশন। মারাঠা রাজারা ছিল ব্যাপক লুভী, তারা মাঝে মাঝে চুক্তি মানত মাঝে মাঝে মানত না। যখন যেইটা সুবিধা। কয়দিন পর বালাজী দেশে ফিরে গেলেন গ্র্যান্ড মারাঠা এম্পায়ার তৈরির লক্ষ্যে, এদিকে দুই মারাঠা বর্গী পার্টি সম্মুখ সমরে লিপ্ত না হয়ে বছর বছর বাংলা আক্রমন করে বার্ষিক লুটের রাজত্ব কায়েম করলো। শেষ পর্যন্ত ১৭৫০ সালে আলিবর্দি রুগা’জী ভোঁসলের সাথে সন্ধি করলেন। সন্ধি অনুযায়ী, উড়িষ্যা পেল রুগা’জী। আর বাংলা বিহার বাবদ তাকে বাৎসরিক চৌথ মঞ্জুর করা হল বারো লক্ষ রুপী।

মারাঠা ভেজালের সাথে যুক্ত হয়েছিল আফগান উৎপাত। আলিবর্দির ভাই হাজী আহমেদ আর আফগান মুস্তাফা খাঁ এর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হল, হাজি অভিযোগ তুললেন যে মুস্তাফা তলে তলে মারাঠাদের সাহায্য করছে। মুস্তাফা পালিয়ে গেল পাটনা, কিন্তু তাকে ধরে ফেলা হল আর কল্লা কেটে শহরময় কল্লা ডিসপ্লে করা হল। আফগান সিপাইরা গেল ক্ষেপে, তারা হাজিকে আটক করলো। নানান পাইকারি পিটুনির পর তার পা হাতীর পায়ে বেঁধে ছ্যাড়ছ্যাড় করে রাস্তায় হিঁচড়ানো হল, ঐ অবস্থাতেই তিনি মারা যান।

আলিবর্দি মারা যান ১৭৫৬ সালে। তার শেষ জীবন পারিবারিক যন্ত্রনায় অতীষ্ঠ ছিল। মারাঠারাও তাকে আরামে ঘুমোতে দিত না। নবাব প্রাসাদের এক মুসলমান ঐতিহাসিকের বয়ানে আমরা পাই আলিবর্দির একটি দিনের বর্ণনাঃ

“নবাব আলিবর্দি দৈনিক সূর্যোদয়ের দুই ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠতেন, আর ফযর নামাজের পর বন্ধুদের নিয়ে কফি খেতেন। সাতটা থেকে নটা তিনি নানান অফিসারের ওজর আপত্তি মন দিয়ে শুনতেন, তারপর নটায় তাকে গান কি কবিতা শোনান হত। মাঝে মাঝে তিনি পাকঘরেও হানা দিতেন, আর তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে রান্নার আয়োজন চলতো। দশটায় তিনি খানা খেতেন, তারপরে অতিথীরা হাত ধুয়ে চলে যেত আর তিনি গল্প শুনতে শুনতে নিদ্রা যেতেন। একটাই ঘুম থেকে উঠে তিনি এক কাপ হিমশীতল পানি খেয়ে নামাজ পড়তেন, আর আসর ওয়াক্ত পর্যন্ত সুললিত কন্ঠে কুরান শরীফ পাঠ করতেন। ওইসময় আলেমউলামার দল কফি আর হুক্কা খেতে খেতে গল্প করতো তার সাথে, আলিবর্দি কফি খেতেন কিন্তু কিন্তু ধূমপানের অভ্যাস তার ছিলনা। এরপরে বড় বড় অফিসার বিশেষ করে জগতশেঠ আসতেন দরবারে আর সারা ভারতের সংবাদ তাকে দেয়া হত। এই সময়টা নবাব হাসি মস্করা করতেন বড়, দুটো ঘন্টা কিভাবে যেন কেটে যেত। এইবার মাগরীব। নামাজ পড়ে নবাব জেনানাদের সাথে মোলাকাত করতেন। রাতের খাবার পরিবেশিত হত, তাতে ঝুড়ি ঝুড়ি ফল আর মিঠাই। নবাব সাধারনত নিজে না খেয়ে সকলের মাঝে বিতরন করতেন তা। খাওয়া শেষে নারীরা বিদেয় হতেন, আর দরবারে দাঁড়িয়ে যেত প্রহরীর দল। আরও আসত গল্পবাজের দল, তাদের গল্প শুনতে শুনতে নবাব গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যেতেন।”

(শেষ)

অনুবাদকের নোটঃ
নবাবনামা এইখানেই খতম। পরবর্তী নবাব আপনার আমার চক্ষের মণি বুকের ধন সিরাজউদ্দৌলার বর্ণাঢ্য আহাম্মকী ক্যারিয়ার একটি স্বতন্ত্র সিরিজের দাবীদার, তাই অচিরেই আসছে ব্র্যান্ড নিউ সিরিজ পরাজিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা
হ্যাঁ ভাই। সিরাজভক্তরা দমবন্ধ করে অপেক্ষা করুন।

<জেমস হুইলারের “The History of India from the Earliest Ages: pt. I. Mussulman rule. pt.II. Mogul empire. Aurangzeb” অবলম্বনে।>

…............................................................
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ লিখকের মতামতের জন্য অনুবাদক দায়ী নহেন।


মন্তব্য

সাই দ এর ছবি

মারাঠাদের উতপাত কবে এবং কিভাবে বন্ধ হয়??
মারাঠাদের জাত্যাভিমানের তো কোন কারণ দেখছিনা যদি লুটপাটই তাদের একামাত্র বলার মত কাজ থেকে থাকে।

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লেখককে

সত্যপীর এর ছবি

মারাঠাদের উতপাত কবে এবং কিভাবে বন্ধ হয়??

মোটাদাগে বছর দশেক চলে বর্গীর উৎপাত। এটা পড়ে দেখতে পারেন।

মারাঠাদের জাত্যাভিমানের তো কোন কারণ দেখছিনা যদি লুটপাটই তাদের একামাত্র বলার মত কাজ থেকে থাকে।

লুটপাটই তাদের একমাত্র বলার মত কাজ নয়। লুট যুদ্ধের অংশ, কেউ বেশি করে কেউ কম। মারাঠারা অতি উচ্চশ্রেণীর গেরিলা যোদ্ধা ও সুনিপুন ঘোড়সওয়ার ছিল, প্রবল প্রতাপশালী মোগল বাদশাকে চরম অস্থির করে রাখতো মারাঠা জাত। তাদের ফাউন্ডার শিবাজীকে নিয়ে লিখেছিলাম আগে, পরে আরো আসবে তার পুত্র শাম্বাজী সহ অন্যান্য মারাঠা সম্রাটের কাহিনী। অনেক ঐতিহাসিকের বইতে বিস্ময় প্রকাশ পেতে দেখেছি মোগল শাসনের পর মারাঠার বদলে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়াতে, লোকে ভাবত মোগলের পর ভারত মারাঠারই।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

মারাঠারা অনেকটা হানদের মত। আক্রমন, লুট, করদ রাজ্যকরন, ভোগ এটাই কিন্তু ওদের মূল স্ট্রেটেজী ছিল। শক্তিশালী স্থায়ী রাজ্য কাঠামো বা, এর পরিকল্পনা মারাঠাদের দেখা যায় না। সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমন আর মারাঠাদের ভারতবর্ষে অভিযানের মধ্যে তেমন কোন বৈষয়িক পার্থক্য নেই।

সত্যপীর এর ছবি

যারা জাহাজ তৈরি করে তারাই ভাল জাহাজ চালাবে এটা ঠিক না। দুই কাজের জন্য দুই রকম লোক প্রয়োজন। মারাঠারা জাহাজ বানিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভাল ক্যাপ্টেনের অভাবে তাদের জাহাজ ফেল মেরেছিল। এইটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, ভুলও হতে পারে। মাহমুদ বা হানের সাথে আলিবর্দি কালীন মারাঠাদের মিল থাকলেও প্রকৃত মারাঠা লিডার শিবাজি শাম্বাজির স্ট্র্যাটেজি শুধুই লুটের ছিলনা মনে হয়।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মারাঠাদের নৌবাহিনী কিন্তু হেলাফেলা করার মতো ছিলোনা। সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ভারত মহাসাগর অব্দি তাদের শক্তিশালী বিচরণ ছিল। এমনকি ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সাথেও সমান তালে লড়ে গেছে। এক মারাঠা অ্যাডমিরাল সরখেল আঙ্গরে'র ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখুন। দেখবেন তিনি আন্দামান অব্দি কব্জায় রেখেছিলেন। তবে ঐ যে নোলার কথা বলেছিলাম, সেটা সামলাতে না পেরে তাদের নৌবাহিনী তো গেছেই গোটা ভারত জুড়ে মারাঠা সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই রয়ে গেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আরেকটা কথা, নামটা শাম্বাজি নয় - শম্ভুজী।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

শম্ভুজী, আচ্ছা ঠিক আছে। পরেরগুলোয় ঠিক করে লিখব।

..................................................................
#Banshibir.

দুর্দান্ত এর ছবি

"আক্রমন, লুট, করদ রাজ্যকরন, ভোগ এটাই কিন্তু ওদের মূল স্ট্রেটেজী ছিল।"

আমার তো মনে হয় ঘটনা উল্টা। রাজ্যপাট টাই ছিল আসলে স্ট্রাটাজেম। আদতে মারাঠাদের মূল পেশা ছিল লুটতরাজ। মারাঠি কেন্দ্র উত্থানের শুরু থেকেই আরমেনিয়ান ও জৈন ব্যাঙ্কারদের কাছ গভীর ঋনে নিমজ্জিত। বিলাসিতার খরচে ঋন আর সেই ঋনের টাকা মেটাতেই তার ডাকাত হয়েছে নাকি বিভিন্ন ডাকাতদলের ভতরে রেশারেশির খরচ (উন্নত ওসমানী বন্দুক, পাটনাই বারুদ, ও আরবী ঘোড়া মোটেও শস্তা ছিলনা)মেটাতে এইসব ডাকাতি - সেটা আমার কাছে পরিস্কার নয়। তবে মারাঠাদের পূর্বদিকে হানা দেবার মূল কারন এখানের কুঠি ও টাকশাল লুট।

আমি মারাঠাদের নিয়ন্ত্রনে যে ভূখন্ড ছিল, তার ভেতরে প্রশাসন-কর-রাস্তাঘাট-শিক্ষা ইত্যাদি সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। মারাঠাদের সামরিক (আসদে রাষ্ট্রায়ত্ব দস্যুবৃত্যি)ইতিহাসের বাইরে এদের অন্যকোন পরিচয় না দিয়েই ব্রিটিশ ঐতিহাসিকেরা মারাঠাদের একটি রাষ্ট্র বা রাজত্বের মর্জাদা দেয়, সেই আলোচনাও তখন একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হয়ে ওঠে।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে পড়ার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি পোস্ট ছাড়ুন। এ সিরিজটা ভাল লেগেছে অনেক।

সত্যপীর এর ছবি

দম বন্ধ করসেন? খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

আহা সিরাজ, সাথে একটু সিরাজি থাকবে তো !

সত্যপীর এর ছবি

এহ দেশ বিদেশ ঘুইরা ভারি পাকনা হইসেন, খালি পানীয় খাইতে মঞ্চায় চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

আহা! আহমেদিনাজাদ বা খামেনিকে একটু ধরে দেখেন ওরা যদি নতুন করে আবার পারমিশন দেয়। নাইলে খৈয়াম পড়া ছাড়া আর কোন আশা নাই।

****************************************

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অনুবাদ ভালো লাগল।
পোস্টে পাঁচতারা।
সিরাজের সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম। হাসি

সত্যপীর এর ছবি

দমবন্ধ কইরা থাকো। সাস নেহি লেনেকা।

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

হাততালি
সিরাজের জন্য সেই কবে থেকে অপেক্ষা করতেছি, অবশেষে আসিতেছে দেঁতো হাসি

সত্যপীর এর ছবি

হ আপ্নের জন্যেই ইস্পিশাল ট্রিট। হিসাব কইরা দেখলাম সিরাজরে নিয়ে যা তা লিখ্যা গালি যখন খামুই, আস্তা সিরিজই নামায় ফালাই। চক্ষের মণি বইলা কথা শয়তানী হাসি

..................................................................
#Banshibir.

নজমুল আলবাব এর ছবি

শেষ!!! এই লোকরে নিয়ে আরও আশা করছিলাম।

লেখার স্টাইলটা উপভোগ্য। দারুণ

সত্যপীর এর ছবি

নেন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হুইলার সায়েবের দিকজ্ঞান তো ব্যাপক দেখতে পাচ্ছি। (ক) যেখানে মারাঠারা পশ্চিম দিক থেকে বাংলা আক্রমণ করতো, সেখানে তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বাংলার লোকজন কিনা গঙ্গা পেরিয়ে পশ্চিম দিকেই দৌড় দিলো! (খ) উড়িষ্যা কি বাংলার পূর্বদিকে নাকি দক্ষিণ-পশ্চিমে? বিহার কি বাংলার সরাসরি পশ্চিমে নাকি উত্তর-পশ্চিমে? আরো হাস্যকর হুইলার সায়েব কর্তৃক আলীওয়ার্দী খানের দিনলিপি বর্ণনা। যে লোক ফজরের ওয়াক্তে উঠে নামাজ পড়ে, যোহর থেকে আসর পর্যন্ত কোরআন তিলওয়াত করে সে কিনা মাগরেবের পর পরই জেনানা মহলে ঢুকে পড়তো আর ইশা’র নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়তো!

ইতিহাসের অনেক বড় বড় শক্তি শুধুমাত্র নিজেদের নোলা সামলাতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মারাঠারা এর বড় উদাহরণ। ভারতে মুঘলরা কোন পাত্তাই পেতো না যদি মারাঠা, রাজপুত এরা নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে আর সুযোগ পেলেই যত্রতত্র লুঠপাট চালিয়ে সদাদুর্বল না হতো। আওরঙ্গজেবের প্রয়াণের পর এমন সুযোগ বহুবার এসেছিল। মারাঠারা মুঘলদেরকে প্রতিস্থাপন করতে পারলে ভারতে ইউরোপীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে আরো শ’খানেক বছর লেগে যেতো।

মারাঠারা হানদের সাথে একটা পর্যায় পর্যন্ত তুলনীয়। সেটা লুঠপাট আর নৃশংসতায়। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্বে হান’রা মারাঠাদের চেয়ে যোজন যোজন দূরে পিছিয়ে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অজানা দেশ আক্রমণ করার যে দুঃসাহস হানদের ছিলো খুব কম মারাঠার সাহস সে পর্যায়ের ছিলো। গত একশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে হান’রা নিজেদেরকে সুসংগঠিত দুনিয়ার সবচে’ বড় (অন্তত মাথাগুনতি হিসেবে) সাম্রাজ্যটা তৈরি করতে পেরেছে। সেখানে মারাঠারা তিনশ’ বছর আগের মতো আজো উত্তর ভারতীয় প্রাধান্যের নিচে আছে।

কয়েকটা নামঃ
আলীওয়ার্দী খান
রঘুজী ভোঁসলে (প্রথম)
পেশওয়া বালাজী বাজী রাও


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

কয়েকটা নামঃ
আলীওয়ার্দী খান
রঘুজী ভোঁসলে (প্রথম)
পেশওয়া বালাজী বাজী রাও

নামগুলো আমি বইয়ে যেভাবে দেখি ওভাবেই তুলে দেই, আলিবর্দি বালাজী ইচ্ছে করেই লিখা। তবে রুগা'জী যে রঘুজী এইটা আমার মাথায় আসেনি, ওটা আমার বুঝা উচিৎ ছিল। দুঃখিত।

..................................................................
#Banshibir.

দুর্দান্ত এর ছবি

বস - হান = মোঘল খান? নাকি হান=হুন, মানে আতিলা দা হুন। চীনা হান যদিও অন্য বস্তু। যাই হোক, ইতিহাসে ডালপালা ধরে একটু গোড়ার দিকে গেলে হান=হুন=খান (অসমর্থিত)। সেই হিসাবে কিন্তু ভারতে 'হান' বংশবৃক্ষের একটি শাখা মোঘল ও অন্যান্য তুর্কি (যেমন সিরাজ) প্রশাসকের বেশে সফল ভাবেই টিকে ছিল।

কি বলেন?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হান = খান। মুঘলদের পিতৃপুরুষরা তো পূর্ব দিক থেকে আক্রমণকারী হান/খান'রা। সেই হিসেবে গেঞ্জিস হান/চেঙ্ঘিস খান তাদের পূর্বপুরুষ। আবার পিতৃ/মাতৃপুরুষের হিসেব নিলে তারা তুর্কিস্তানী তৈমুর লঙের সাথেও সম্পর্কিত। ভারতে আসা মুঘলরা চাঘতাই মুঘল। হানদের মধ্যে যারা অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে ঊষর পিতৃভূমিতে ফেরত যায়নি তারা ভারত, পারস্য, তুর্কিস্তান, আরব, তুরস্ক সব জায়গাতেই ছড়িয়ে গিয়েছিলো। সেনাবাহিনী ও প্রশাসন দুই জায়গাতেই তারা ভালোভাবে টিকে ছিলো।

আত্তিলা হচ্ছে হুন। হানদের তুলনায় এরা পশ্চিমা এবং ইউরোপীয়। নৃতাত্ত্বিকভাবে ককেশীয়। আরো গোড়ায় এরা এক ছিল কিনা তা জানি না। উভয় পক্ষ যাযাবর, লুটেরা, নৃশংস, ঘোড়সওয়ার। ব্যাপারটা একটু সরলীকরণ মনে হলেও যেটুকু ইতিহাস পাওয়া যায় তাতে মহৎ কিছু পাইনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

যথারীতি চমৎকার লেখা চলুক
অধীর আগ্রহে আছি সিরাজ এর জন্য
"আসিতেছে, আসিতেছে, সত্যপীরের একদম ঝকঝকে, ব্রান্ড নিউ শো "দ্য নিউ সিরাজুদ্দৌলা"
কেমন হবে; এমন ঘোষনা যদি দেই? হাসি

সত্যপীর এর ছবি

হিঃ হিঃ হিঃ। সাথে জুড়ে দিন "পড়িলে পস্তাইবেন না পড়িলেও পস্তাইবেন" চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

এ হাসনাত এর ছবি

সিরাজ সাহেবের জন্য অপেক্ষায় আছি পীর সাহেব। জলদি করেন।

সত্যপীর এর ছবি

দম বন্ধ করেন খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

পদ্মজা এর ছবি

মারাঠারা দুর্ধর্ষ। মারাঠা রাজের পৃষ্ঠপোষকতায় দস্যুবৃত্তি চলতো। আহমেদ শাহ আব্দালীর কাছে পরাজিত হওয়ার পরে এরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বাংলার গ্রামে গঞ্জে লুঠতরাজ চালাতো। এদেরকেই আমরা বর্গী নামে চিনি। পিন্ডারী দস্যুরা এদেরই একটা ভাগ। আঠারোশ শতকে বৃটিশরা মারাঠাদের দমন করে।
আর বাংলার'ও কপাল এমন যে শাসক বা দস্যু সবাই এদের কেবল শোষণই করে গেছে।

চলুক

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বাংলার'ও কপাল এমন যে শাসক বা দস্যু সবাই এদের কেবল শোষণই করে গেছে।

জেমস হুইলার সাহেবের ফাঁদে পা না দেয়ায় ভাল। লোকটা চরমভাবে ভারতবিদ্বেষী।

রব এর ছবি

পদ্মজা্র কথায় জেনারালাইজেশন থাকলেও মোটাদাগে "বাংলার'ও কপাল এমন যে শাসক বা দস্যু সবাই এদের কেবল শোষণই করে গেছে"- এমন মন্তব্য করাকে "হুইলার সাহেবের ফাঁদে পা" দেয়া কেন বলছেন?

একে ত বিদেশিরা বারবার শাসন করেছে, তার উপর দেশি-বিদেশি মিলিয়ে এ মাটিতে ভালো শাসক খোঁজা ত হয়রান হওয়ার মতো কারবার।

এই সিরাজসাহেবের কথাই ধরুন না, নানাজনের কাছে শুনে, আনোয়ার হোসেনের অভিনীত ছায়াছবি দেখে কতই না আহাউহু করেছি! কিন্তু হায়, সকলি গরল ভেল।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আপনার মন্তব্যর জবাব দিয়েছিলাম। সচলায়তন কর্তৃপক্ষ কোন কারনে সেটা প্রকাশ করেনি। মন খারাপ
আমার মেইল এড্রেস দিলাম:


জেমস হুইলার, ইতিহাস বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ থাকলে মেইল করতে পারেন।

সত্যপীর এর ছবি

গাছে আম থাকলে লোকে ঢিল দেবেই এতে অবাক হবার কিছু নেই। যুগে যুগে বাংলার দিকে সবারই নজর ছিল, মেলা পয়সাকড়িওলা প্রদেশ কিনা। তার উপর উপরি সুবিধা বাঙালি যোদ্ধা জাত নয়, গ্যাঞ্জাম এড়িয়ে চলতেই তারা পছন্দ করে। তাই শোষন ইত্যাদি।

আঠারোশ শতকে বৃটিশরা মারাঠাদের দমন করে।

ঠিক মোগল সাম্রাজ্যের মত মারাঠা নেতৃত্ব কিছু বুদ্ধিহীনের হাতে চলে যাওয়াটা তাদের পতনের অন্যতম কারণ। ইংরেজ পুরো ক্রেডিট নিতে চায় কিন্তু দেবেননা। সরাসরি যুদ্ধে ইংরেজ ভারতবর্ষে জিতেছে অল্পই, তাদের বেশিরভাগ জয়ের মূল কারণ প্রতিপক্ষের অন্তর্কলহের সুযোগ নেয়া।

..................................................................
#Banshibir.

পদ্মজা এর ছবি

ইংরেজরা শুধু ভারতবর্ষ না সর্বত্র ময়দানের বাইরে যুদ্ধ জিতেছে। তাদের যুদ্ধ টেবিলে। চোখ টিপি

বন্দনা এর ছবি

বেশ ঝরঝরে আর সহজবোধ্য লেগেছে, অনুবাদ পড়ছি মনেই হয়নি।

সত্যপীর এর ছবি

বিরাট শরমিন্দা হইলাম লইজ্জা লাগে

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি এর ছবি

চলুক

ধূসরদিগন্ত এর ছবি

বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা দেখি সব সময়েই অস্থির ছিল ।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

অনুবাদ বরাবরের মতই সুন্দর ।

যাক এবারে তাহলে 'তিনি' আসছেন ।

দম বন্ধ করসি ।
বেশি দেরী কইরেন না ।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্য করা হয়না, কিন্তু খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে পড়া হয়। সিরাজউদ্দৌলা সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম।

সত্যপীর এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। সিরাজ আসবে। এখন লিখছি ফরাসী ভারত নিয়ে একটা লিখা, ওটা শেষ হলেই সিরাজ দেব।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।