তিস্তা পানিবন্টন চুক্তির সম্ভাবনার অপমৃত্যুঃ একটি বিশ্লেষণ

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বুধ, ০৭/০৯/২০১১ - ১১:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভূমিকাঃ

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি সম্পাদিত হলো না। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পানিসম্পদের জন্য এটি একটি দুঃখজনক ও হতাশাব্যাঞ্জক খবর। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে গত ৪০ বছর ধরে, গঙ্গাচুক্তি হবার পর থেকে (১৯৯৬ সাল) তা বেগবান হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। বিশেষ করে গতবছর (২০১০) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের পথে অনেকদূর এগিয়েছিল দুই দেশ। যদিও শেষ মূহুর্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জানান, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের প্রধানমত্রীর ভারত সফরে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই, তবে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে সফরে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে [১]। এবছর (২০১১) মনমোহন সিং এর বাংলাদেশে সফরের সময় অবশ্য শেষ পর্যন্তও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন[২] তবে তা যে নিছকই দুরাশা ছিল সেটা বলাই বাহুল্য।

তিস্তা পানিবন্টন চুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও ইতিহাস নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্লাটফর্মে আলোচনা করেছি [৩, ৪, ৫, ৬, ৭]। এই পোষ্টে আলোচনা থাকবে মূলত সাম্প্রতিক তিস্তা পানিবন্টন চুক্তির অপমৃত্যু নিয়ে, তবে পাঠকদের সুবিধের জন্য আমার 'তিস্তা পানিবন্টন চুক্তিঃ ইতিহাস ও পর্যালোচনা' শীর্ষক পোষ্টটি থেকে কিছু তথ্য পূনরাবৃত্তি করা হবে।

তিস্তা চুক্তির প্রয়োজনীয়তাঃ

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে চাষাবাদের ক্ষেত্রে সেচের ভূমিকা অপরিসীম আর বাংলাদেশে নদীভিত্তিক সেচ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প একটি সফল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যেখানে দেশের গড় সেচ-আবাদি জমির শতকরা হার ৪২ সেখানে তিস্তা অববাহিকার শতকরা ৬৩ ভাগ আবাদি জমি সেচের আওতাধীন যা মূলত তিস্তা ব্যারেজকে কেন্দ্র করেই । কিন্তু তিস্তায় পানির প্রবাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ায় এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। শুরুতে পরিকল্পনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের দুটি ফেইজ ছিল, যার মধ্যে ফেইজ-১ সম্পন্ন হয়েছে যা মূলত রংপুর ও নীলফামারী জেলায় সেচের সুবিধা দিচ্ছে। দ্বিতীয় ফেইজে পরিকল্পনা ছিল দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাটকে অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু ভারতের গজলডোবায় ব্যরেজ নির্মানের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়াতে সেই পরিকল্পনা এখন হুমকির সম্মুখীন। এই মূহুর্তে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি তাই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ।


তিস্তা পানিবন্টন চুক্তির আলোচনা, অতীত ও বর্তমানঃ

১৯৭২ সালে আন্তঃসীমান্ত নদীসমুহের উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জ়েআরসি) প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাফল্য হচ্ছে ১৯৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের ২৫ তম বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানি বন্টনের জন্য একটি এডহক চুক্তি করার বিষয়ে সম্মত হওয়া। সেসময় তিস্তার মোট প্রবাহের ২৫% কে অবন্টনকৃত রেখে বাকী ৭৫% শতাংশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্টন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩৬:৩৯ (বাংলাদেশঃভারত) অনুপাতে। তবে এই বন্টন কোথায় এবং কি পদ্ধতিতে হবে সেটি নিয়ে দ্বিমতের জের ধরে সেই এডহক চুক্তিটি বাস্তবের দেখা পায়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গাচুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে মূলত তিস্তা পানি বন্টনের আলোচনা বেগবান হলেও দুই দেশের যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় সাতটি বৈঠকে মিলিত হবার পরও এই বিষয়ে কোন ঐক্যমতে দুই দেশ পৌঁছাতে পারেনি। সর্বশেষ ৫ জানুয়ারী ২০১০ ভারত বাংলাদেশ যুক্ত নদীকমিশনের দুই দিন ব্যাপী সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষেও তিস্তার বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।এই দীর্ঘ সময়ের আলোচনার ফলেও সফল একটি পানিবন্টন চুক্তিতে না আসার মূল কারন আসলে বাংলাদেশ ও ভারত পানি বণ্টন নিয়ে একটি একক ফর্মুলায় একমত না হতে পারা।

পানিবন্টনের ফর্মুলা নির্ধারনে মূলত কয়েকটি জিনিস চলে আসে। প্রথমতঃ বন্টন নদীর কোন স্থানের প্রবাহের ভিত্তিতে হবে, দ্বিতীয়তঃ কত বছরের হিস্টরিকাল প্রবাহের ভিত্তিতে বন্টন করা হবে, তৃতীয়তঃ বন্টনে নদীর নিজস্ব হিস্যা এবং দুই দেশের হিস্যা কত হবে , চুতর্থতঃ পানিবন্টনের সময়কাল কি হবে ইত্যাদি। যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্ত মতে ভারতের দোমোহনী ও বাংলাদেশের ডালিয়াতে প্রবাহ পরিমাপ কেন্দ্রের ১৯৭৩-১৯৮৫ এই সময়কালে প্রতিবছরের ১ অক্টোবর থেকে পরের বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হিস্টরিকাল প্রবাহের উপাত্ত নিয়ে পানিবন্টন ফর্মূলা নির্ধারণ করা হবে বলে নির্ধারণ করা হয় আর বন্টনের জন্য তিনটি হিস্যা নিয়ে আলোচনা হয়, প্রথমতঃ নদীর ন্যুনতম প্রবাহ যা কিনা মৎস্য, নৌচলাচলহ সহ নদীখাত সংরক্ষণে রাখা হবে, দ্বিতীয়তঃ ভারতের অংশের হিস্যা, তৃতীয়তঃ বাংলাদেশ অংশের হিস্যা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ নদী কমিশনের সভায় ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ১০ বা ২০ ভাগ নদীখাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ রেখে বাকী অংশ সমভাবে অথবা নিদেনপক্ষে ৩৬:৩৯ (বাংলাদেশঃভারত) অনুপাতে ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব করা হয় যার বিপরীতে ভারত প্রস্তাব করে নদীর জন্য ১০ শতাংশ পানি রেখে বাকী ৯০ শতাংশ পানি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সেচ প্রকল্প এলাকার ভিত্তিতে ১:৫ (বাংলাদেশঃভারত) অনুপাতে বন্টন করার। পরবর্তীতে ভারত দাবী করে যেহেতু ভারতের গজলডোবা থেকে ছেড়ে দেয়া পানি বাংলাদেশের ডালিয়া অংশে পৌঁছবে সুতরাং এই দুইয়ের মাঝখানে নদীখাত সংরক্ষণের জন্য আলাদা করে কোন প্রবাহ বন্টন দরকার নেই। আর বাংলাদেশে তিস্তা নদীর ডালিয়া থেকে ব্রহ্মপুত্রে পড়ার আগ পর্যন্ত নদীখাত সংরক্ষণের জন্য আলাদা কোন হিস্যার দরকার নেই।

বিভিন্ন সময়ের যৌথ নদী কমিশন কিংবা ভারতের রাজনীতিবিদ বা প্রতিনিধিদের বিবৃতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভারত কখনই এই ১:৫ অনুপাত থেকে খুব বেশি সরে আসতে পারেনি। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি ২০১০ সালে পশ্চিমবংগ রাজ্য সরকার তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করে যাতে তিস্তার পানির ৮৩ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে রেখে ১৭ শতাংশ বাংলাদেশে ছাড়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে দুই দেশের 'বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের'(!!) ইতিহাস টেনে রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের মন্ত্রী সুভাষ নস্কর ওই খসড়ার নোটে উল্লেখ করেন,

যেহেতু বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেশ, তাই শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানির ২৫ শতাংশ বাংলাদেশকে দিলেও রাজ্যের কোনো ক্ষতি নেই [৮]।

একই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে তখন তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের সবরকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সেই মূহুর্তেও পশ্চিমবঙ্গের মালদহের কংগ্রেস নেতা লোকসভার সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরীর বিবিসিকে বলেন,

...আমাদের বৈঠক হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন আমাকে বলেছেন, (তিস্তায়) যে পরিমাণ পানি থাকবে, তার ৭৫ শতাংশ ভারত নেবে এবং ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে [৯]।

তবে এর বিপরীতে আমরা সবসময় আশা করে এসেছি ১৯৯৬ সাল সংঘটিত গঙ্গাচুক্তিকে সামনে রেখে যেখানে অনুচ্ছেদ ৯ উল্লেখ আছে,

পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীসমূহের চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত

এবং এক্ষেত্রে সাম্যতা বজায় রেখে ও শুধু একপক্ষের ক্ষতি সাধন না করে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করা দুই দেশের জন্যই কিছুটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পড়ে। সেই আঙ্গিকেই মূলত মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফরের ঠিক ৫ দিন আগে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় যখন তিস্তা চুক্তির খসড়া পানিবন্টনের একটি খবর বের হয় [১০] সেটা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও আশার মুখ দেখেছিল। ঐ খবরে উল্লেখ করা হয় যে ১৫ বছর মেয়াদী অন্তর্বতীকালীন তিস্তা চুক্তি হচ্ছে যাতে ৪৬০ কিউসেক হারে পানির সঞ্চয় রেখে বাকি পানির ৫২ শতাংশ নেবে ভারত, ৪৮ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ। এই '৪৬০ কিউসেক পানি সঞ্চয়' বিষয়টি ঠিক পরিষ্কার ছিলনা তবে ধারনা করে নেয়া হয়েছিল যে এই ৪৬০ কিউসেক পানি নদীখাত সংরক্ষণে নির্ধারিত থাকবে, অর্থাৎ এই পরিমান পানি নদীতে সবসময় প্রবাহমান রেখে বাকী পানি ৪৮:৫২ অনুপাতে বন্টন করে নেয়া হবে। আপাতদৃষ্টিতে এই বন্টন চুক্তি নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত মত ছিল যে, এই ৪৬০ কিউসেক পানি যদি ভারতে 'সঞ্চয়' হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা আছে কারন তিস্তায় শুষ্ক মৌসুমে ন্যুনতম প্রবাহ ৪৬০ থেকে অনেক কম। আর যদি তা নদীখাত সংরক্ষণের ( মূলত জলজ বাস্তুসংস্তান) জন্য হয় তবে তা ইতিবাচক কারন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির আলোচনায় সবসময়ই শতকরা ২০ ভাগ বা ন্যুনতম শতকরা ১০ ভাগ পানি নদীখাতের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবী ছিল সবসময়। তবে উল্লেখ্য যে তিস্তায় শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বেশ কম এবং অনেক সময় তা এই ৪৬০ কিউসেক এর চেয়েও কম। সুতরাং আশঙ্কা ছিল এই ভেবে যে,

প্রথমতঃ ভারত যেখানে শতকরা ১০ ভাগ পানিই নদীখাত সংরক্ষণে বরাদ্ধ রাখতে যায়না সেখানে শুষ্ক মৌসুমে ন্যুনতম প্রবাহের সময় পুরো পানিই নদীখাত সংরক্ষণে বরাদ্ধ করছে সেটা ঠিক বিশ্বাস করা যায়না।

দ্বিতীয়তঃ এই ৪৬০ কিউসেক প্রবাহ কিসের ভিত্তিতে নির্ঝারিত হয়েছে সেটাও ঠিক বোধগম্য ছিলনা।

তিস্তা পানিবন্টন চুক্তির সম্ভাবনার অপমৃত্যু

বাস্তবতা হচ্ছে কোন চুক্তি সম্পাদিত হয়নি, যার মানে দাঁড়ায় আমাদেরকে আবারো নির্ভর করতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দয়ার উপর। রাজনৈতিক কাঁটাতারের ফাঁদে পড়ে সীমান্তের ঐ পারে গজলডোবায় কৃষানীর দূয়ার ধানে ভরে যাবে আর বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে মঙ্গাপীড়িত মানুষ একমুঠো ভাতের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরবে।কেন শেষ মূহুর্তে এসে চুক্তিটি হলোনা সেটা পর্যালোচনার দাবী রাখে। আমি চেষ্টা করেছি দুটি আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করতেঃ

ভারতের অবস্থানঃ

পানিবন্টন একটি কারিগরী বিষয় যা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।জাতিসঙ্ঘের কনভেনশন মতে একটি পানিবন্টন চুক্তিতে প্রথমত লক্ষ্য রাখা উচিৎ যেন বন্টন এমন না হয় তা কোনপক্ষের ক্ষয়ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। সেই সাথে বন্টন এমন ভাবে করা উচিৎ যেন তা দুই দেশের মধ্যে সমভাবে বিস্তৃত হয়। এখানেই মূল বিপত্তি এসে দাঁড়ায় আর তা হলো ‘কোন ক্ষতি না করা’ আর সমভাবে বন্টন কিভাবে একসাথে সিদ্ধ করা যায়। নিঃসন্দেহে প্রত্যেকটি দেশ তার নিজস্ব লাভ বা ক্ষতি নিয়ে সচেতন থাকে। অনেক সময় দেখা যায় সমান ভাবে বন্টন করলে কোন দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় আবার অসমভাবে বন্টন করলে অন্য দেশটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই এক্ষেত্রে শেয়ার্ড স্যাক্রিফাইস বিবেচনা করা হয় যেখানে দুই দেশই তার কিছুটা স্বার্থ ছাড় দেবে একটি সফল বন্টন ফর্মুলার জন্য। অর্থাৎ একথা অনস্বীকার্য যে এক বা দুই দিনের আলোচনায় এই বন্টন ফর্মূলা সম্পাদন করা সম্ভব নয়। সুতরাং ধরে নিয়েই পারি যে যেহেতু দুই দেশই জোর দিয়ে বলেছে ২০১১ তে মনমোহন সিং এর ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে সুতরাং এই বন্টন ফমূলা নিয়ে দুই দেশের রাজনীতিবিদেরা আলোচনা করেই একমত হয়েছে এবং একথাও বলার অপেক্ষা রাখেনা যে যৌথ নদী কমিশনের পানি বিশেষজ্ঞরা তিস্তার ঐতিহাসিক প্রবাহ কারিগরী ভাবে বিশ্লেষণ করেই একমত হয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেন সফরের এক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী বেকে বসবেন। সেটা হতে পারে কয়েকটি কারনেঃ

  • একঃ কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী বিশেষজ্ঞদের তৈরী করা বন্টন ফর্মুলা মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু তিনি যখন তার রাজ্য মন্ত্রীপরিষদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তখন মনে করেছেন যে এই চুক্তিতে তার রাজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে।
  • দুইঃ কেন্দ্রীয় সরকার বন্টন ফর্মুলা নিয়ে মমতা ব্যানার্জীকে অবগত করেননি এবং ধরেই নিয়েছেন যে কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত নেবে তা রাজ্য সরকার মেনে নেবে।
  • তিনঃ ইতিপূর্বে জোতিবসুর নেতৃত্বাধীন কমিউনিষ্ট সরকার গঙ্গা চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন যা কিনা রাজ্যের জন্য অনুকূল হয়নি বলে ধারণা করা হয় এবং সাম্প্রতিক কমিউনিষ্ট সরকারের পতন ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের কারনে মমতা ব্যানার্জী রাজ্যের স্বার্থবিরুদ্ধ বা সম্ভাব্য স্বার্থবিরুদ্ধ কোন চুক্তি করতে ভয় পাচ্ছেন।
  • চারঃ বন্টন ফর্মুলার কারিগরী দিকগুলো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে পরিষ্কার করা হয়নি।

প্রথম সম্ভাবনাকে ব্যাবচ্ছেদ করলে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের নিজেদের মধ্যে সমঝোতার অভাব আমাদের চোখে পড়ে। মমতা ব্যানার্জী যদি কেন্দ্রীয় সরকারের ঠিক করে দেয়া পানিবন্টন মেনেই নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্র আগে থেকেই সেটি তার মন্ত্রীপরিষদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ ছিল। দ্বিতীয় সম্ভাবনাকে সামনে আনলে কেন্দ্র সরকারের সাথে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সমঝোতার অভাব চোখে পড়ে। কেন্দ্র সরকার এই চুক্তি চুড়ান্তকরনের পানিবন্টন আলোচনায় রাজ্য সরকারকে যদি অন্ধকারে রেখে থাকে তবে ভবিষ্যতেও তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের কালক্ষেপণ আরো বাড়বে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মতামত বিশ্লেষণ করে অবশ্য এই সম্ভাবনাকে বেশ প্রবল বলে মনে হয়। তৃতীয় সম্ভাবনাটি একান্তই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তবে তাদের এই অবস্থান তাদেরকে কতটা জনপ্রিয় করবে সেটি সময়ই বলে দেবে।

চতুর্থ সম্ভাবনাটি আসলে চিরাচরিত, বিশেষত আমাদের উপমহাদেশে। কারিগরী বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অবস্থানগত দূরত্ত্ব অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে। বন্টন ফর্মুলায় অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোন পয়েন্টের প্রবাহের সাপেক্ষে বন্টন করা হবে এবং কোন পয়েন্টের প্রবাহ মেপে সেটা দুই দেশ বুঝে নেবে। উদাহরন সরূপ গঙ্গা চুক্তির প্রথম ও তৃতীয় অনুচ্ছেদ লক্ষ্য করলে দেখা যায়,

  • অনুচ্ছেদ ১-ভারত বাংলাদেশকে চুক্তিতে যে পরিমান পানির প্রদানের বিষয়ে মতৈক্য উপনীত হয়েছে তা নির্ভর করবে ‘ফারাক্কায় পানির প্রবাহের উপর’।
  • অনুচ্ছেদ ৩- ভারত কতৃক ‘অনুচ্ছেদ ১’ অনুসারে ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশে ছেড়ে দেয়া পানি ফারাক্কা ও যে স্থানে গঙ্গার উভয় পাড়ই বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এই দুই এর মাঝখানে যুক্তিসংগত ব্যবহার ব্যাতিরেকে( সর্বোচ্চ ২০০ কিউসেক) আর কমানো হবেনা।

অর্থাৎ কিনা ভারতের ফারাক্কায় ব্যারেজের উজানে যে পরিমান প্রবাহ রেকর্ড করা হবে তার ভিত্তিতেই বন্টন ফর্মুলা ব্যবহার করে দুই দেশের হিস্যা নির্ধারিত হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের হিস্যা, যা আরো কিছু দূরত্ব অতিক্রম করে বাংলাদেশে পৌছবে সে অংশের উপরে ভারতের তেমন কোন অধিকার ( সর্বোচ্চ ২০০ কিউসেক) থাকবেনা। এখানে উল্লেখ্য যে ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এই অংশে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এই অংশের অববাহিকা থেকে ওভারল্যান্ড ফ্লো (বৃষ্টির কারনে যে প্রবাহ নদীতে আসে) ও ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহের মাধ্যমে। যদিও ঐ চুক্তিতে এই বর্ধিত প্রবাহের পরিমান কি হতে পারে তা নিয়ে কোন তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। গঙ্গা চুক্তির ধারাবাহিকতায় তিস্তার ক্ষেত্রেও পানিবন্টন ফর্মুলা কার্যকর হবার কথা ভারতের গজলডোবা পয়েন্টে। অর্থাৎ গজলডোবা ব্যারেজের ঠিক উজানে যে পরিমান প্রবাহ রেকর্ড হবে তার ভিত্তিতেই দুই দেশের হিস্যা নির্ধারণ করা উচিৎ এবং সেই হিস্যা বুঝে নেয়া উচিৎ গজলডোবা পয়েন্টেই এবং তা যথাযথ ভাবে আসছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে। উল্লেখ্য যে এই দুই পয়েন্টের মধ্যে দূরত্ত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার এবং এই দূরত্ত্বের মধ্যে ওভারল্যান্ড ফ্লো ও ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহের মাধ্যমে তিস্তাতে কতটুকু প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে সেটাও ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারণ করার প্রয়োজন ছিল।

আমার ব্যাক্তিগত অভিমত এই চুক্তি থেকে শেষ মূহুর্তে সরে আসার কারন যৌথভাবে প্রথম ও চতুর্থ সম্ভাবনা।তবে যে কারনেই হোক পশ্চিমবংগ রাজ্য সরকার যখন এই চুক্তি সম্পাদনে বেকে বসেছিল তখন কেন্দ্র সরকারের কিছু করার ছিলনা কারন ভারতে স্ব স্ব রাজ্যের পানিসম্পদ সেই রাজ্যের সম্পদ বলে গণ্য হয়।

বাংলাদেশের অবস্থানঃ

তিস্তা চুক্তিকে ঘিরে ভারতের অবস্থান যতটা রহস্যজনক (বিশেষত মমতা ব্যানার্জীর সরে আসা) তার চেয়েও বেশি রহস্যজনক মনে হয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। জনগন একটি সরকারকে নির্বাচিত করে তার প্রতিনিধি হিসেবে অথচ এই ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বেশি অন্ধকারে থেকেছে জনগণ। গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ( আদৌ আছে কিনা জানিনা) কোন ব্যাখ্যা, এমনকি পানিসম্পদ মন্ত্রীর কোন বিবৃতিও আমাদের চোখে পড়েনি। ঠিক কি ফর্মুলায় পানিবন্টন করা হচ্ছে, এবং কোন পয়েন্টের প্রবাহের ভিত্তিতে তা করা হচ্ছে সেটি অনুমান করার জন্যও আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সংবাদের দিকে। তারা যখন বলেছে ৪৮:৫২ তখন আমরা আশাবাদ ব্যাক্ত করেছি, তারা যখন জানিয়েছে ২৫:৭৫ তখন আমরা হতাশ হয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আসন্ন চুক্তি সম্পর্কে জনমত তো দূরের কথা, কোন রকম আলোচনা পর্যালোচনা করারা সুযোগ আমাদের ছিলনা। আগেই বলেছি পানিবন্টন চুক্তি একাধারে কারিগরী ও রাজনৈতিক। আমার মতে এই সম্ভাব্য চুক্তিতে রাজনৈতিক প্রভাব যতটা ছিল কারিগরী বিশেষজ্ঞদের মতামত কিংবা অভিজ্ঞতার বাস্তবায়ন ততটা ছিলনা।

এই মূহুর্তে বাংলাদেশের কি করনীয়ঃ

প্রথমতঃ খসড়া চুক্তিতে কি ছিল সেটা জনগনের কাছে উন্মুক্ত করা উচিৎ। অন্তত সরকার যে দেশের স্বার্থ রক্ষায় এই পানিবন্টন চুক্তি করতে যাচ্ছিল সেটা সরকারের নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে হলেও প্রকাশ করা উচিৎ।

দ্বিতীয়তঃ ভারতের কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া। ঠিক কি কারনে তিস্তাচুক্তি সম্পাদন সম্ভব হলোনা তার অনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার আশা করতে পারে। সেই সাথে বাংলাদেশের সাধারণ জনগনের কাছে ও সংসদে সেই ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা উচিৎ।

তৃতীয়তঃ ভারতের ব্যাখ্যা যদি যৌক্তিক না হয় এবং শীঘ্রই যদি পূনরায় এই চুক্তি সম্পাদনের কোন সম্ভাবনা না থাকে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে গঙ্গাচুক্তির অনুচ্ছেদ ৯ ('পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীসমূহের চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত')উল্লেখ করে দুই দেশের কাছে এই চুক্তি সম্পাদন যে কিছুটা হলেও বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পড়ে সেটা ভারতের কাছে পরিষ্কার করা উচিৎ।

তথ্যসুত্রঃ

[১] ‘তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা কম, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে তিনটি চুক্তি হতে পারে', দৈনিক প্রথম আলো, ৮ জানুয়ারী, ২০১০।

[২] 'তিস্তা চুক্তির আশাবাদ দীপু মনির', দৈনিক প্রথম আলো, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১।
[৩] 'তিস্তা চুক্তিতে বাংলাদেশের লক্ষণীয় বিষয়গুলো', জাহিদুল ইসলাম, দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৭ মার্চ, ২০১০।
[৪] তিস্তা চুক্তি ও তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশ, জাহিদুল ইসলাম, দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৩ অক্টোবর, ২০১০।
[৫] আবারো পিছিয়ে গেল তিস্তা পানিবন্টন চুক্তির সম্ভাবনা, সচল জাহিদ, সচলায়তন।
[৬] তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি আসলে কী হচ্ছে ?, সচল জাহিদ, সচলায়তন।
[৭] ভারতের একপেশে তিস্তা চুক্তির খসড়া, সচল জাহিদ, সচলায়তন।
[৮] "চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে মনমোহনের নির্দেশ", আবেদ খান, কালের কন্ঠে, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০।
[৯] 'তিস্তা চুক্তিতে ২৫ শতাংশ পানি পাবে বাংলাদেশ', ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
[১০] "রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করেই চুক্তি, তিস্তার জলবণ্টনে সায় মমতার", আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১১।

বিঃদ্রঃ

ব্যাক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত।


মন্তব্য

আশফাক আহমেদ এর ছবি

খসড়া চুক্তিতে কী ছিল তা জনগণের কাছে উন্মুক্ত করা উচিত

---বাংলাদেশ সরকারের কী পারবে এমন ঔদার্য দেখাতে?

ভারতের কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত

---বাংলাদেশ সরকার কী পারবে এমন দুঃসাহস দেখাতে?

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সচল জাহিদ এর ছবি

খসড়া চুক্তি উন্মুক্ত করা সরকারে নিজের স্বার্থেই প্রয়োজন। আর ব্যাখ্যা মনে হয় ইতিমধ্যে চেয়েছে। সেই ব্যাখ্যা জনগণের কাছে উন্মুক্ত হবে কিনা সেটা গুরুত্ত্বপূর্ণ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

সময়মত বিস্তারিত লেখার জন্য ধন্যবাদ, জাহিদ। সার্বিক একটা ধারণা পাওয়া গেলো বিষয়টি নিয়ে এই এক লেখাতেই।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

করণীয়তে আরেকটি যুক্ত করা যেতে পারে তা হচ্ছে দুই দেশের পানি-সম্পদ প্রকৌশলী কিংবা তৃতীয় একটি আন্তর্জাতিক কন্সালটেন্সি প্রতিষ্ঠান (আমার কাছে এইটি বেশি গ্রহনযোগ্য) দিয়ে একটি গবেষণা করা যার উদ্দেশ্য হবে

১. নুণ্যতম কতটুকু প্রবাহ প্রয়োজন তিস্তা নদীর নাব্যতা ও নদীর ভারসাম্য রক্ষার্থে তা সঠিক ভাবে নিরূপণ করা। এভাবে হাওয়ার উপর ১০ ভাগ না ২০ ভাগ না ৪৬০ কিউসেক রাখা হবে এই পরিমাপ গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।

২. গজলডোবা থেকে ডালিয়া পর্যন্ত কি পরিমান গ্রাউন্ড ফ্লো আর ওভার ল্যান্ড ফ্লো পাওয়া যায় বছর জুড়ে সেটাও পরিমাপ করা।

৩. প্রতিটি সিনারিও চেক করাঃ
ক) নুণ্যতম ১০/২০ ভাগ রেখে গজলডোবায় সমান ভাবে ভাগ করা হলে ডালিয়াতে কত প্রবাহ সারা বছর ধরে আসলেই আসে তার একটি চার্ট

খ) নুণ্যতম ১০/২০ ভাগ রেখে গজলডোবায় ৭৫/২৫ ভাগ করা হলে ডালিয়াতে কত প্রবাহ সারা বছর ধরে আসে তার একটি চার্ট

গ) নুণ্যতম ১০/২০ ভাগ রেখে গজলডোবায় কত ভাগ সরালে ডালিয়াতে ৫০ ভাগ প্রবাহ পাওয়া সম্ভব সেটাও দেখা।

এভাবে একটি স্টাডি করার পরেই সম্ভব দুইপক্ষের একটি সমঝোতায় আসা।

সচল জাহিদ এর ছবি

সহমত। আমার ঠিক জানা নেই আসলে যৌথ সমীক্ষা হয়েছিল কিনা বা হবার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা। তবে তিস্তার দুই পয়েন্টের প্রবাহ ( গজলডোবা ও ডালিয়া) আর এর মধ্যকার ভূগর্ভস্থ প্রবাহ, ওভারল্যান্ড প্রবাহ, গজলডোবা থেকে ব্রহ্মপুত্র অবধি তিস্তার ইন্সট্রিম ফ্লো রিকোয়ারমেন্ট এইসব নিয়ে যৌথ সমীক্ষা এই চুক্তির জন্য আবশ্যিক।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

 তাপস শর্মা  এর ছবি

গোটা ব্যাপারটাই খুবই হতাশাজনক। রাষ্ট্র রাজনীতিতে রাজ্য রাজনীতি থাবা বসালে যা হয়, এই ক্ষত্রেও তাই হল। মমতা বন্দোপাধ্যায় ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় রাজনীতির জোট সঙ্গী। তাই তাকে রুষ্ট করতে চায়নি সরকার। এদিকে প্রথম খসড়ার ব্যাপারে সম্মতি থাকলেও, দ্বিতীয় খসড়ায় যখন তিনি দেখলেন যে বাংলাদেশ কে জল সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতেই তিনি বেঁকে বসলেন। শেষ খসড়াটা ছিল সম্ভবত ৫২% - ৪৮%। এখানে মমতার পালটি খাওয়ার পেছনে কিছু কারণ কাজ করেছে -


দেশীয় রাজনীতিতে ফায়দা তোলা।


বিপাকে থাকা উপিএ সরকারকে আরও চাপে রাখা।


রাজ্য রাজনীতিতে নিজের প্রতিপত্তি দেখানো।


নিজের রাজ্যের লোকসানটা দেখা।

মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ পূর্বে যখন তিস্তা জল বন্টন নিয়ে দ্বিমত দেখা দিয়েছিল তখন কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বুঝনোর চেষ্টা হয়েছিল। এব্যাপারে অর্থ মন্ত্রী প্রণব মুখাজ্জি পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেছিলেন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী নিজে দপ্তর থেকে সচিবকে পাঠিয়ে মমতাকে বুঝানোর চেস্টা করেছিলেন। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।

কারণ আরও অনেক কিছুই থাকতে পারে। তবে যাই হোক সবচেয়ে খারাপ লাগে এই যে এত দিন পর দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে ভাল সম্পর্কে সামনে এনে একটা ঐতিহাসিক সূচনা হতে চলেছিল তা ভেস্তে গেল। তিস্তার জলে।

------------------------------------------
আরে মাত্র ৬৫ বছর আগেরই তো কথা। তিস্তার জলে তখন দাগ কাটা ছিল না, এটা আমার, আর ওটা তোমার !!!
হতভাগা আমারা। জলকেও দ্বিখণ্ডিত করে দিলাম ।

সচল জাহিদ এর ছবি

আপনার মন্তব্যে আমি একটু কনফিউজড। 'প্রথম খসড়া ও দ্বিতীয় খসড়া' এই তথ্যের ভিত্তি কি একটু জানাবেন?


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

কাল বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন স্বাক্ষরিত চুক্তি দেখতে ভারতের পররাষ্ট্র-মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যেতে - সত্যিই এটা হতাশাজনক।

তবে চুক্তি হবেই, সেটা একটু দেরী হচ্ছে এটাই যা। আমার ধারণা প্রায় অপরিবর্তিত চুক্তি হবে আগামী এক বছরের মধ্যেই। মমতা রাজনীতিতে পুরোনো হলেও ক্ষমতায় নতুন। উনি বিরোধী দলনেত্রী হিসাবে আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির বা রীতিনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের ধারণার লাভক্ষতির হিসাব এতদিন করে এসেছেন, তিনমাসে সেই অভ্যাস পরিবর্তন করা শক্ত। সুতরাং, কিছু একটার বিনিময়ে (উত্তরবঙ্গের জন্য সিকিম থেকে বিদ্যুত বা নতুন জলাধার অথবা দুটো নতুন ট্রেন হাসি ) উনি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চুক্তিতে সম্মতি দেবেন। এটাই আমার ধারণা ও আশা।

আপনার ৯০ কিমি দূরত্বের মধ্যের সমস্যাটা পশ্চিমবঙ্গের একজন জলসম্পদ বিষয়ক প্রকৌশলীর লেখায় দেখলাম। কিন্তু আমার এ নিয়ে ধারণাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। চুক্তি মূলত গরমকালের জন্য প্রযোজ্য (বর্ষায় এখনও কোনো সমস্যা নেই বলেই জানি), যে সময়ে ওই ৯০ কিমিতে জল কিছুটা বাষ্পীভূত হবে ও ভূগর্ভস্থ জলস্তরে ঢুকবে, অর্থাৎ বাংলাদেশে কিছুটা কম জল আসবে। ওভারল্যান্ড ফ্লো থাকলেও গরমের দিনে আমার ধারণায় নেট এফেক্ট নেগেটিভ হবার সম্ভাবনাই বেশী।

চুক্তির খসড়া আমার ধারণায় গঙ্গাচুক্তির ধরণেই হবে। না প্রকাশিত হওয়া অবধি কিছু অবশ্য বলা যাচ্ছে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

দিগন্ত, তিস্তা পেরিনিয়াল রিভার। হেড ডিফারেন্সের কারনে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্স্থ পানির স্তর থেকে নদীতে পানি আসে, নদী থেকে ভূগর্ভে পানি যায়না। আপাতঃদৃষ্টিতে শুষ্ক মৌসুমে এই অংশে ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে পানির যোগান কিছুটা হলেও আসার কথা। আমরা উপাত্ত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি, শেষ হলে বিস্তারিত জানানো যাবে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ফাহিম হাসান এর ছবি

এ থেকে আরেকটা জিনিস প্রমাণিত হয় - বাংলাদেশ সরকারের নেগোশিয়েটিং স্কিল বা দর কষাকষির দক্ষতা অত্যন্ত নিম্নমানের। আওয়ামী লিগ সরকার, যাদের সাথে ভারতের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা অনুমেয়, তারাই চরম ভাবে ব্যর্থ!

সচল জাহিদ এর ছবি

এক্ষেত্রে সরকারের কূটনৈতিক দৌর্বল্য আমাদের চোখে পড়ে। সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে এই চুক্তি নিয়ে জনগণ, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এমনকি মন্ত্রীপরিষদের সাথেও আলোচনার অভাব লক্ষ্যনীয়।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

 তাপস শর্মা  এর ছবি

চলুক

তবে চুক্তি হবেই, সেটা একটু দেরী হচ্ছে এটাই যা।

চুক্তির খসড়া আমার ধারণায় গঙ্গাচুক্তির ধরণেই হবে। না প্রকাশিত হওয়া অবধি কিছু অবশ্য বলা যাচ্ছে না।

উনি বিরোধী দলনেত্রী হিসাবে আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির বা রীতিনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের ধারণার লাভক্ষতির হিসাব এতদিন করে এসেছেন, তিনমাসে সেই অভ্যাস পরিবর্তন করা শক্ত।

আওয়ামী লিগ সরকার, যাদের সাথে ভারতের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা অনুমেয়, তারাই চরম ভাবে ব্যর্থ!

*****দিগন্ত এবং ফাহিম হাসান
চলুক আপনাদের কথায় সহমত জানালাম।

জ়াতির বিবেক এর ছবি

চমৎকার লেখা । অনেক কিছুই জানতে পারলাম । আমরাও এই চুক্তি সম্পর্কে‌ বিস্তারিত জানতে চাই । বাংলাদেশের অর্থ‌মন্ত্রী বলেছেন যে তিন মাসের মধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে (যদিও উনার কথার উপর আমার কোন আস্হা‌ নাই ) , সে ক্ষেত্রে চুক্তির আগে অবশ্যই সবাইকে বিস্তারিত তথ্য দেয়া উচিত ।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ। দেখা যাক।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

 তাপস শর্মা  এর ছবি

ভাই , জাতির বিবেচক । রাষ্ট্রশক্তি কোনদিনই তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সাধারণ পাব্লিক এর জন্য উন্মুক্ত করেনা। তাই এই ক্ষত্রেও তাই হবে।
তাই বলে লাভ নেই।

যদিও দেশের সংবিধানে বলা হয়ে থাকে- কমন পিপলই হল রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ এবং ভিত্তি । আমার মতে এটাই হল সংবিধানের সবচেয়ে বড় সত্যরূপি মিথ্যা।

বলা দরকার ঃ

কস্কি মমিন! নেতা'ই সর্গ নেতা'ই ধর্ম নেতা'ই রাষ্ট্র নেতা'ই পরম তপঃ নেতা'রি নেতমান্তে নেতান্তে নেত্ত দেবতা বাদশা
আর জনগণ গোলাম !!!!!

জয়ন্ত এর ছবি

লেখাটা ভালই লেগেছে... কিন্তু আমার সহজ মনে একটাই প্রশ্ন জাগল যে কেন সব সময় দেশের গুরুত্বপুর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সরকারকেই সব চুক্তি করার গুরু দায়ীত্বটা নিতে হয়... দেশে কি অন্য সরকারগুলো দেশপ্রেমিক নয়? তারা কি দেশ নিয়ে চিন্তা বা রাজনীতি করেননা? লেখক সাহেব সুকৌশলে সেদিকটা এড়িয়ে গেলেন কেন? ... আমরা সবাই একজোট হয়ে যাই এই বুঝি আওয়ামীলীগ দেশটাকে ভারতের হাতে তুলে দিল... কিন্তু আমরা কি কখনো এই ইস্যুগুলোতে অন্য সরকারগুলোর সময় সরব হই?... বিগত ৪০ এর বেশি বছর পেরিয়েছে স্বাধীনতার পর ... কিন্তু আওয়ামীলীগ এর সরকারকেই কেন এইসব গুরু দায়ীত্ব সমাধান করতে হয়?... লেখক সাহেব কি এই জিনিসটা নিয়া কিছু লিখবেন? না কি ধরে নিব উনি ইচ্ছাকৃতভাবেই সেটা গোপন করেছেন?...।

সচল জাহিদ এর ছবি

আমার পোষ্টের কোথাও "আওয়ামী লীগ" শব্দটা উচ্চারিত হয়নি। আলোচনা বা সমালোচনা করা হয়েছে সরকার কে নিয়ে। সরকার একটি প্রতিষ্ঠান, কোন দল নয়। আশা করি মন্তব্যে আলোচনা সেভাবে উপস্থাপন করবেন।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আলোচনা বা সমালোচনা করা হয়েছে সরকার কে নিয়ে। সরকার একটি প্রতিষ্ঠান, কোন দল নয়।

সহমত।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই জয়ন্ত,
Elisabeth Corell and Ashok Swain বিরচিত "India : The Domestic and International Politics of Water Security" এই নিবন্ধটি কিছুটা হলেও আপনার জিজ্ঞাসা মেটাতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। লিংক দিয়ে দিলাম, লিংক থেকে সংগ্রহ করতে না পারলে ই-মেলে জানাবেন, আমি স্ক্যান করে পাঠাবো।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

 তাপস শর্মা  এর ছবি

সরকার একটি প্রতিষ্ঠান, কোন দল নয়। আশা করি মন্তব্যে আলোচনা সেভাবে উপস্থাপন করবেন।

সহমত

হিমু এর ছবি

খুবই সময়ানুগ, তথ্যবহুল, সুলিখিত পোস্ট। ধন্যবাদ বস।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

জাহিদ ভাই, গঙ্গার পানি চুক্তি আর এই তিস্তা চুক্তির মধ্যে কোনো তারতম্য আছে কি? গঙ্গার পানি চুক্তি হওয়ার পরেও বাংলাদেশ কি চুক্তিমতো পানি পেয়ে আসছে? তিস্তা চুক্তি এতো যে হাদুমপাদুম হচ্ছে, এই চুক্তি হওয়ার পরেও যে আরেকটা গঙ্গা চুক্তিই বাংলাদেশের মানুষ দেখবে না, সে নিশ্চয়তা কি কোনোভাবে বিধান করা যাবে!

সচল জাহিদ এর ছবি

ধুগো, দুই চুক্তির মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। গঙ্গাতে যেমন ব্যারেজ দিতে ভারত কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য হুগলী নদীতে পানি প্রত্যাহার করত তেমনি তিস্তাতে ব্যারেজ দিয়ে ভারত সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করছে।

গঙ্গা চুক্তির দূর্বলতা আছে , থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই চুক্তি যখন ছিলনা তখন ভারত একতরফা ভাবে পানি প্রত্যাহার করত, পদ্মা নদী ও এর শাখানদীগুলোর চরম দূর্দশা সেই সময় থেকেই শুরু হয়েছে। অবস্থা এমন ছিল যে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তুলতে হয়েছিল। একটি জিনিস আমরা ভুলে যাই আর তাহচ্ছে জাতিসংঘের কনভেনশনমতে আন্তঃসীমান্ত নদীর ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক কোন চুক্তি না থাকলে কোন আইনই সেখানে কাজ করবেনা। সুতরাং চুক্তির কোন বিকল্প নেই। চুক্তি না থাকলে ভারত যদি সব পানিও প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশের নালিশ জানানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা।

গঙ্গা চুক্তিমত পানি পাচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ করার জন্য সাম্প্রতিক উপাত্ত নিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। দেখতে পারো। কিছুটা গরমিল আছে অস্বীকার করছিনা কিন্তু সেটা তদারকি করার সুযোগও চুক্তিতে বর্তমান। তবে একথা বলতে পারি অন্তত গঙ্গা চুক্তির আদলেও যদি তিস্তা চুক্তি হয় সেটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বই নেতিবাচক হবেনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

চুক্তির নেতিবাচকতা নিয়ে বলছি না জাহিদ ভাই। আমি দৃষ্টি ফেলছি ভারতের সাথে চুক্তি থাকলেও ভারতের সেটা ভায়োলেট করাতে। ভারত আমাদের সাথে চুক্তি নামক খেলাটা খেলে এসেছে এতোদিন। তিস্তা নিয়েও তো খেলতে পারে। কিন্তু কথা হলো, ট্রানজিট চুক্তি হওয়ার পরে বাংলাদেশ কি ভারতের সাথে এমন খেলা খেলতে পারবে কিনা!

আমার কথা হলো, যেহেতু ভারতের জন্য ট্রানজিট চুক্তিটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উচিৎ হবে ভারতকে নাকে খত দেয়ানো, যে অতিরিক্ত আনুকূল্য বাংলাদেশকে দেখানোর দরকার নেই। এ যাবৎ যতো চুক্তি হয়েছে আর হওয়ার সম্ভাবনা আছে— সেগুলো যেনো হাড়ে হাড়ে মেনে চলা হয়। নাহলে কোনো ট্রানজিট চুক্তি নয়! হিসাব শেষ। এতো নাটকের কী আছে!

সচল জাহিদ এর ছবি

ধুগো, "ট্রানজিটের বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি" এই নীতি কতটা সমীচিন সেটা নিয়ে বহুমত আছে। আমার ব্যাক্তিগত মতামত এই দুটি এক পাল্লায় আনাটাই ভুল। একটি হচ্ছে অধিকার (তিস্তা চুক্তি) আরেকটি হচ্ছে আনুকূল্য (ট্রানজিট), দু'টি কোন ভাবেই সমার্থক নয়। তাই তিস্তা আলোচনায় আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ট্রানজিট ইস্যুটাকে না আনতে। ট্রানজিট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে আলোচনা আসাই ভাল। তবে শুধু বলতে পারি চুক্তি ছাড়া ৫৪ টি অভিন্ন নদীর হিস্যা বাংলাদেশ কখনই পাবেনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্রোহী এর ছবি

তথ্যবহুল একটি লেখা!

আমি পেসিমিস্টিক মানুষ। কেন জানি ধরে নিয়েছিলাম চুক্তিটি হবে না। মন খারাপ

সচল জাহিদ এর ছবি

আমি অবশ্য ধরে নিয়েছিলাম চুক্তিটি হবে সেটা বাংলাদেশের কতটা অনুকূলে হবে সেটা নিয়ে আশঙ্কা বা শংশয় ছিল।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সিম্পলি অসাধারণ! গুড জব রিপন, আমার মনে হয় তিস্তা নিয়ে একটা বইয়ের কাজ ধরার সময় হয়ে গেছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ি ছিটমহল দিয়ে দিয়েছিলো; কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে তিন বিঘা দেয়নি। ভারত তার পার্লামেন্টে গত ৩৭ বছরে প্রস্তাবটি তোলেইনি। তাছাড়া ভারতের পার্লামেন্টে তুললেও প্রস্তাবটি যে পাশ হবে না সেটা একজন অর্বাচীনও বোঝে। তাহলে ভারত সরকার কিসের ভিত্তিতে এই লোকদেখানো চুক্তিটি করেছিলো? ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা তাঁদের রাষ্ট্রীয় সফরে অন্যদেশের সাথে যেসব আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হন সেগুলো কি তাঁদের পার্লামেন্ট বা রাজ্য সরকারের (যেখানে প্রজোয্য) কনসেন্ট ছাড়াই করা হয়? না কি বাংলাদেশের জন্য হিসেবটা ভিন্ন? গতকাল ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যে চুক্তি হলো তার পরিণতি কি এরচেয়ে ভিন্নতর কিছু হবার উপায় আছে?

তিস্তা নিয়ে চুক্তি হবার আগে, গঙ্গার জলবন্টন চুক্তি হবার পর চুক্তির শর্তগুলো কতটুকু মানা হয়েছে, চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ তার হিস্যার কতটুকু পেয়েছে এই ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখার ও জনসমক্ষে প্রকাশ করার দরকার আছে। তাহলে সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তির রূপরেখা কী হওয়া উচিত সেটা ভাবা যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ পান্ডবদা। গঙ্গার ক্ষেত্রে দেখুন, আপনি যে পরীক্ষা করে দেখবেন যে চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছি কিনা সেই সুযোগ নেই। যুক্তি নদী কমিশন কেবল ২০০৮ সাল থেকে সরকারী ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ ভারত দুই পয়েন্টের প্রবাহের পরিসংখ্যান দিচ্ছে এর আগের কোন তথ্য আমরা জানিনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিহান এর ছবি

চমৎকার লেখা।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

pathok(sam) এর ছবি

চলুক

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু চুক্তিটি হয় নি।

... আমার নিজেরও মনে হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রের মাঝের সমঝোতার অভাবের সাথে প্রকৌশলী ও রাজনীতিবিদদের মাঝের পারষ্পরিক সমঝোতার অভাবেই আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম।

যথারীতি একটি দারুণ পরিশ্রমী লেখা দিলেন ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ। হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

আমিও আশাবাদী ছিলাম। ধন্যবাদ সুহান।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দুর্দান্ত এর ছবি

১। পান্ডব দার সাথে সহমত। নতুন নতুন চুক্তি না করে যেগুলো আছে, সেগুলো কতটুকু ফল দিয়েছে সেটা আগে খতিয়ে দেখতে হবে। তাছাড়আ যেখানে ভারতের সাথে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে, সেখানে প্রতি ৩০ বছরে একটি নদীর পানি বন্টনের কথা বলাটা সমিচীন হতে পারেনা।

২। সমাগত বা পরিনত পরাশক্তি হিসাবে বাংলাদেশের সাথে বিশ্বমজলিসে ও ভেতর থেকেও বাংলাদেশের সাথে খোলাখুলি ভাবে তিক্ততা বাড়আনোতে ভারতের আগ্রহ থাকার কথা নয়। এতদিন দুনিয়ার চোখ ভারতের পশ্চিম সীমানায় রাখতে পেরেছে, কিন্তু তার নিজের পেটের মধ্য়ে যে আগুন জ্বলছে সেটা নেভাতা বাংলাদেশকে ভারতের প্রয়োজন না হলেও, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রান্সিট তার প্রয়োজন।

৩। অভিন্ন নদীর পানির ওপরের আমাদের আন্তর্জাতিক আইনসিদ্ধ হক আছে। আন্তর্জাতিক আদালতকে এই বিষয়ে আমরা আমাদের পক্ষেই পাবো। কিন্তু ট্রান্সিট একটি একান্তই, যাকে বলে, নিশ্কন্টক সম্পদ, এটা দেয়া বা না দেয়ার সিদ্ধান্ত একান্তই বাংলাদেশের। এজমালি সম্পদের ভাগবাটোয়ারা প্রশ্নে একটি নিজস্ব সম্পদকে যুক্ত করার যুক্তি বুঝতে পারিনা।

দিগন্ত এর ছবি

জলের মত ট্রানজিটেরও আইনি ভিত্তি আছে। ট্রানজিট বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থার চুক্তিতে পঞ্চম আর্টিকেলের মধ্যে পড়ে। কিন্তু গুরুত্ব হিসাবে এক দলে পড়ে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

১) এখন সময় এসেছে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর জন্য একটি সাধারণ বন্টন চুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।

২) সহমত।

৩) আসলে জাতিসংঘের পানি নিয়ে সেটা আছে সেটা হচ্ছে কনভেনশন। মোট ৩৯ টি দেশের অনুমোদন লাগে, পেয়েছে মাত্র ২৪ টি দেশের। এটা আইন না হবার আগ পর্যন্ত দেন দরবার করা ছাড়া আর খুব বেশি করার নেই। বাংলাদেশ গঙ্গা নিয়ে এর আগেও জাতিসঙ্ঘের সাধারণ/নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ জানিয়েছিল কিন্তু সেখানে দুই দেশকে এই নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ ছাড়া জাতিসংঘ আর কিছু করতে পারেনি। আইন হয়ে গেলে অবশ্য ভিন্ন কথা। ভারত এখনো সেই আইনে স্বাক্ষর বা অনুমোদন কোনটাই করেনি। আর আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার মত শক্ত ভিত্তি বাংলাদেশের পক্ষে বের করা কঠিন তিস্তার ক্ষেত্রে। গঙ্গার ক্ষেত্রে যাও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনের কথা বলে একটা উপায় ছিল। তবে একটাই উপায় আর তা হচ্ছে যেহেতু গঙ্গা চুক্তিতে উল্লেখ আছে যে অন্যান্ন নদীর বিষয়ে চুক্তির বিষয়ে একমত হবে, সেই মতে তিস্তার চুক্তি না হওয়াতে গঙ্গা চুক্তি লঙ্ঘিত হচ্ছে এই অভিযোগ তোলা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দিগন্ত এর ছবি

আমার মনে হয়না ট্রানজিটের সাথে তিস্তার জল-ভাগের সম্পর্ক আছে। ট্রানজিটের গুরুত্ব তিস্তার জল-ভাগের তুলনায় কিছুই না। এমনকি, ট্রানজিট বাতিল হবার পরের দিনে আমি পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরামের মোট ১৫টি পত্রিকা দেখলাম, মাত্র তিনটি (সবই ত্রিপুরার) ট্রানজিট নিয়ে হা-হুতাশ করেছে। এটা ত্রিপুরার বাম-সমর্থন ও মমতা-বিরোধিতার ফল হতে পারে, অথবা চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ত্রিপুরার নৈকট্যের কারণেও হতে পারে। সুতরাং, ট্রানজিট ভারতে কোনোভাবেই ততটা গুরুত্বপূর্ণ না, যতটা তিস্তার জল বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের উচিত ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটার জন্য বড়জোর মাস তিনেক অপেক্ষা করা, তারপরেও কিছু না হলে গঙ্গাচুক্তির ধারা অনুসারে সমবন্টনের জন্য ভারতকে চাপ দেওয়া - যেমনটা জাহিদ লিখেছেন। ওই একই চুক্তিতে আন্তর্জাতিক কোর্টে যাওয়ার কথাও লেখা আছে - সুতরাং বর্তমানে জল পাওয়ার সাথে প্রতিশ্রুত পরিমাণের তারতম্য হলে সেটা নিয়ে কোর্টে যাওয়াই সঠিক পন্থা।

এই চুক্তির সাপেক্ষে ট্রানজিট-তিস্তা অদল-বদল ঠিক আছে। একদিন আগে জানা গেল যে তিস্তার চুক্তি হচ্ছে না, সেই অবস্থায় বাংলাদেশও তাদের দিকের সবথেকে দামী ইস্যুটা সরিয়ে নিল - এটা একটা তাৎক্ষণিক টিট-ফর-ট্যাট গোছের - দীর্ঘমেয়াদে এর খুব কিছু গুরুত্ব নেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ দিগন্ত। এর আগেও মন্তব্যে বলেছি "ট্রানজিটের বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি" এই নীতি কতটা সমীচিন সেটা নিয়ে বহুমত আছে। আমার ব্যাক্তিগত মতামত এই দুটি এক পাল্লায় আনাটাই ভুল। একটি হচ্ছে অধিকার (তিস্তা চুক্তি) আরেকটি হচ্ছে আনুকূল্য (ট্রানজিট), দু'টি কোন ভাবেই সমার্থক নয়। তাই তিস্তা আলোচনায় আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ট্রানজিট ইস্যুটাকে না আনতে। ট্রানজিট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে আলোচনা আসাই ভাল। তবে শুধু বলতে পারি চুক্তি ছাড়া ৫৪ টি অভিন্ন নদীর হিস্যা বাংলাদেশ কখনই পাবেনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিছুই বলার নাই... পোস্টটা বান্ধায়ে রাখার মতো...
সময়ের অভাবে দেরীতে পড়া হলো
ধন্যবাদ বন্ধু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ বন্ধু।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

কানা বাবা এর ছবি

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আজকের আনন্দবাজার পত্রিকাতে ছেপেছে যে শুধু সিকিমেই ভারত ৩টি বাধ তৈরী করছে বা করেছে। তার মানে গজলডোবার আগেই ভারত অনেক পানি সরিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপরে একটু আলোকপাত করবেন কি? এর ফলাফল বা পরিনতি কি হতে পারে? অথবা আন্তর্জাতিক নদীর ব্যাপারে এই বাদঃ তৈরীর আইনগত ভিত্তিবা কি?

আনন্দবাজারঃ "...সিকিমে এখন তিস্তার উপরে তিনটি ব্যারাজ তৈরি হচ্ছে। ফলে সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর নদীতে কত জল থাকছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চান মমতা।..."

লিন্কঃ আনন্দবাজার

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ। ভারত ও বাংলাদেশের আন্তসীমান্ত নদীগুলোর মধ্যে তিস্তাই মনে হয় সবচাইতে কাটাছেঁড়ার সম্মুখীন হয়েছে। তিস্তার ওপরে ভারতে নির্মিত হয়েছে একটি ব্যারাজ, দুইটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ আর বাংলাদেশে নির্মিত হয়েছে তিস্তা ব্যারাজ। আর আপনার দেয়া লিঙ্ক থেকে দেখা যাচ্ছে আরো ব্যারাজ হচ্ছে।

সাধারনত এইসব চুক্তির ক্ষেত্রে একটি পয়েন্টের৩০/৪০ বছরের হিস্টরিকাল প্রবাহ বিশ্লেষণ করে বন্টন ফর্মুলা তৈরী করা হয়। যেমন গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৪৮-১৯৮৮ এই ৪০ বছরে ফারাক্কা পয়েন্টে হিস্টরিকাল প্রবাহ বিশ্লেষণ করে বন্টন চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তিতে সাধারতন ক্লজ রাখা হয় যাতে বন্টন পয়েন্টে ঐ পরিমান পানি চুক্তির পরও আসে। যেমন গঙ্গা চুক্তিতে দুটি ক্লজ লক্ষ্য করুনঃ

ধারাঃ ২) উপরে অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ১ এ উল্লেখিত ‘সংযুক্তি ২ এর নির্দেশক সময়সুচী’ ফারাক্কায় ৪০ বছরের (১৯৪৮-১৯৮৮) ‘১০ দিন ভিত্তিক’ গড় প্রাপ্ত প্রবাহের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত। ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে।

ধারাঃ ৩) যেকোন ‘১০ দিন ভিত্তিক’ সময়ের মধ্যে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৫০,০০০ কিউসেক এর থেকে কমে গেলে দুই সরকার তাৎক্ষনিক ভাবে আলোচনা করে জরুরী ভিত্তিতে পানি বন্টনের উপযোজন করবে (এডজাস্টমেন্ট) তবে তা হবে পক্ষপাত বিহীন ও সাম্যতা প্রসুত এবং যেন কোন পক্ষেরই ক্ষতি না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

অর্থাৎ এক্ষেত্রে ফারাক্কার উজানে যেন অতিরিক্ত পানি অপসারণ না করা হয় চুক্তির পরে তার সম্পর্কে নীতিমালা লেখা আছে। আর যেহেতু যৌথ নদী কমিশনের কাছে দুই পয়েন্টের ডাটাই থাকে তাই এখানে লুকোচুরির অবকাশ কম।

এখন তিস্তা চুক্তি হবার আগেই যদি নতুন কোন ব্যারেজ অনুমোদন পেয়ে যায় তাহলে ঐসবের জন্যও পানি ছাড় দেবার দায়ভার ভারত সরকারের উপর চলে আসবে। আর চুক্তি হবার পরে এবং সেই চুক্তিতে গঙ্গা চুক্তির মত যদি ঐরকম ক্লজ থাকে সেক্ষেত্রে জানে পানি প্রত্যাহার করা চুক্তির লংঘন বলে শামিল হবে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অধমের কথা এর ছবি

হুম,ভালো লাগল। গুরু গুরু অনেক কিছু ক্লিয়ার হলো লেখাটা পড়ে। ধন্যবাদ। কিন্তু ক্লিয়ার না হয়েও যদি চুক্তিটা হয়ে যেত তাহলে আরো ভালো লাগত হাসি

এখন ওদের গোলা ধানে ভরবে আর কচু খেয়ে থাকব, এটাই বস্তবতা। মন খারাপ

.................................অধম

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দেরি করে পড়া হলো, অনেক ধন্যবাদ এত গুছিয়ে লেখার জন্যে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সচল জাহিদ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।