খ্রিস্ট কায়েদা!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৭/২০১১ - ১:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইসলামের সাথে সন্ত্রাস অচ্ছেদ্য হয়ে জুড়ে বসেছে অনেকদিন। সুশীল শান্তিকামী মানুষদের কিছু একটা প্রতিপক্ষ প্রয়োজন। এই সুযোগে জিহাদি জোশে বলিয়ান আল-কায়েদাকে ইসলামের আইকন সাজানোর পালা শুরু হয় নাইন ইলেভেনে। এডোয়ার্ড সায়ীদ, তালাল আসাদ, ইব্রাহিম আবু লুগদ, লীলা আবু-লুগদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ইসলামোফোবিয়া তৈরির সমালোচনা করেছেন তাঁদের অনেক লেখাতে। তাঁরা জাতি কিংবা ধর্মবৈরিতা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে চেয়েছেন। টেরোরিজমের সাথে ইসলামকে জুড়ে দেয়ার মতো বৈরি দৃষ্টিভঙ্গির একটা কাজ বিশ্বের বড়ো বড়ো মিডিয়া গত দশ বছর ধরে বিশ্বস্ততার সাথে পালন করেছে। তাই সম্প্রতি নরওয়েতে ঘটা বোমা হামলা আর শুটিং এর সাথে ইসলামিক আইকন আল-কায়েদাকে যুক্ত করতে তাদের বেশি সময় লাগেনি।

নরওয়ের বত্রিশ বছর বয়সী অ্যানডার্স ব্রেইভিক গত ২২ জুলাই উটোইয়া দ্বীপে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির নবীন রাজনৈতিক কর্মীদের একটি কর্মশিবিরে গুলি করে মেরে ফেলে ছিয়াত্তর জন নিরপরাধ মানুষকে। পরে ফেসবুক টুইটারে ব্রেইভিকের মেসেজ, তার স্বীকারোক্তি ও অনলাইন মেনিফেস্টো দেখে বোঝা যায়- তার হত্যাকাণ্ডের সাথে ইসলামের সংশ্লিষ্টতা নাই। ইসলামের প্রসারের পক্ষে তো নয়-ই বরং ইসলামের প্রসার ঠেকাতে সে এই কাজ করেছে। মিডিয়া প্রায় সাথেসাথেই তাদের আন্দাজে ঢিল ছোঁড়া সামলে নেয়। কট্টর ইসলাম-বিরোধী কিছু মিডিয়া ইসলামোফোবিয়া থেকে সরাসরি সরে না এসে ব্রেইভিকের কর্মকাণ্ড ইসলামোচিত বা জিহাদি কিংবা অ্যান্টি-জিহাদ জিহাদি বলে চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অনলাইনে মুসলিম ব্যাশিং কি বস্তু এই মন্তব্য থেকে টের পাওয়া যায়-

This Norwegian terrorist was not a Christian or a conservative. He acted contrary to the teachings of the Bible and conservatives from Burke to Madison. He was instead a jihadist, blinded by an ideology who resorted to violence rather than engaging in a public debate of ideas. He was a coward who planted bombs and killed innocent people. For him, violence was the only answer. He claimed to be fighting jihadists...but he actually became one. He didn't kill one islamist [sic] terrorist with his actions-only innocent Norwegians. Change the location, and he acted like so many jihadists in the Middle East. He became one of them.

ব্রেইভিক ঠাণ্ডা মাথায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। স্বীকারোক্তি দিয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজন আছে বলে। এতোগুলো নিরপরাধ মানুষ খুন করার পরেও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করে সে। এইসব দেখে মনে হতে পারে- তার এই হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা। জাতে খ্রিস্টান বলে কিছু বাড়তি সুবিধাও পাবেন। অচিরেই তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন আসা শুরু হবার সম্ভাবনা ও আছে। চরম উগ্রপন্থী এই লোক নিজেকে মধ্যযুগীয় ক্রুসেডের লোক বলে মনে করতো। শুটিং এর আগে তার ইন্টারনেট মেনিফেস্টোর ইমেইল গ্রাহক ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইসরায়েল, ভারত ইত্যাদি দেশে ছড়িয়েছে। তার প্রাথমিক আহ্বান ছিল ইউরোপ থেকে মুসলমানদের হটানো। ইমেইল বার্তায় তার বক্তব্য ছিল-

ইউরোপের আর ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনসমূহের নিজেদের কাজ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। পরস্পরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য আরো নির্দিষ্ট করে গড়ে তুলতে হবে।

তার ১৫০০ পৃষ্ঠার মেনিফেস্টোতে পরবর্তী কর্মপন্থা কিংবা পরিকল্পনা নিয়ে অনেক বক্তব্য আছে। এইসব দেখে ধারণা করা যায়, ব্রেভেরিকের চিন্তা বা বিশ্বাস বা পরিকল্পনা হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। তার গ্রুপ ইমেইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। এই তথ্যগুলো গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে রেখেছে বলে শুটিং এর আগে কোনো গোয়েন্দা দলের নজরেও আসেনি। ফলে নিও-নাজি গ্রুপ থেকে শুরু করে চরমপন্থী জাতিবৈরি মনোভাবাপন্ন গ্রুপের অস্তিত্ব ও তাদের কাজকারবার আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসছে।

নাইন ইলেভেনের পর বিশ্বের মিডিয়াগুলোর কল্যাণে ইসলাম ও সন্ত্রাস একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এডোয়ার্ড সায়ীদ আমেরিকার ‘ওয়ার অ্যাগেইনস্ট টেরোরিজম’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে দা অবজারভারে সেই সময়ে (১৬ সেপ্টেম্বর ২০০১) লিখেন-

সন্ত্রাসের ব্যাপারে সবচে খারাপ দিকটা হলো ইতিহাস, বোঝাবুঝি সবকিছু থেকে মুখ ঘুরিয়ে এর সাথে যুক্ত করা হয় ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দিককে। আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কাজের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতার নজির পাওয়া অসম্ভব। নিরপরাধ মানুষকে গণহত্যা করে সেটাকে জায়েজ করার জন্য কোনো কারণ, ধর্ম, কিংবা চিন্তাধারা যথেষ্ট নয়। এই কাজগুলো করে গুটিকয়েক লোক, আর তারা এইসব ঘৃণ্য কাজ করার জন্য জনতার সমর্থন নিয়ে এসেছে বলে দাবীও করে।

ইসলামোফোবিয়া ইদানীং একটা মার্কেট কমোডিটি। এই ফোবিয়ার কল্যাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটি একটা মালটি-বিলিয়ন ডলার খাত। তালেবান বা আল-কায়েদার মতো চরমপন্থীরা মিডিয়ায় সেলিব্রেটি হওয়ার সুযোগ নিয়ে কিছুদিন পর পরেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছাড়ে। ইসলামকে এভাবে প্রত্যক্ষ শত্রু করা হচ্ছে দেখে খ্রিস্টবিশ্বাসী বা ইহুদি কিংবা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্রেইন-ওয়াশ চালায় গুটি কয়েক চরমপন্থী ইসলামিক গ্রুপ। ঘৃণা জন্ম দেয় ঘৃণার। এই ডামাডোলে ইসলামভীতি ঝিমানোর সুযোগ পায় না। মিডিয়ার একচোখা দৃষ্টিতে হত্যা বা সন্ত্রাসে অন্যান্যদের খবর খুব একটা চাওড় হয় না। কারণ পাঠক এসব খবরে বেশি নজর দেয় না। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়। আল-কায়েদার বর্বরতার পাল্লায় গুজরাটে ঘটা রায়ট, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যা, বার্মায় সামরিক বাহিনীর খুন-জখম, আমেরিকান ট্রুপদের হাতে ইরাকিদের মৃত্যু ভারি ঠেকে না। ‘ইসলামোফোবিয়া অ্যান্ড ইটস্‌ কনসিকোয়ান্স অন ইয়াং পীপল্‌’ বই থেকে এ সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেই-

Islamophobia can be defined as the fear of or prejudiced viewpoint towards Islam, Muslims and matters pertaining to them. Islamophobia is not a new phenomenon but we know that today many Muslim communities in Europe are experiencing an increasingly hostile environment towards them characterised by suspicion, deep-rooted prejudice, ignorance, and, in some cases, physical and verbal harassment. Whether it takes the shape of daily forms of racism and discrimination or more violent forms, Islamophobia is a violation of human rights and a threat to social cohesion. (রাম্বার্গ ২০০৪:৬)

জিহাদকে ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ বানানো হলেও ক্রুসেড অজ্ঞাত কারণে খ্রিস্ট-বিশ্বাসীদের প্রধানতম কিছু হয়ে দাঁড়ায় না। হিরোশিমার ওপর পারমাণবিক বোমা ছাড়া, ইরাকে নিরপরাধ মানুষ মারা, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে ইরাক, আফগানিস্তানকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার সাথে তুলনা করলে টুইন টাওয়ার হামলা অনেক বেশি গুরুতর হয়। একটা শহর কিংবা দুটি রাষ্ট্র একটা স্কাইস্ক্রেপারের সাথে পাল্লা দিয়ে হেরে যায়। একজন ফিলিস্তিনি আত্মঘাতী বোমাবাজের কথা শুনে ঘৃণায় মুখে থুথু জমে ওঠে, অথচ ম্যানহাটান প্রজেক্টের একজন প্রধান ব্যক্তি রিচার্ড ফাইনম্যানের হিরোশিমাতে বোমা ছেড়ে দেয়ার খবর শুনে উল্লাসে বাদ্যি বাজানোর বর্ণনা শুনে আমরা মুচকি মুচকি হাসি। তালাল আসাদের ‘অন সুইসাইড বোম্বিং’ বই থেকে একটু কোট করি-

Western states (including Israel) have now massacred thousands of civilians and imprisoned large numbers without trial; they have abducted, tortured, and assassinated people they claim are militants and laid waste to entire countries. Their opponents, no doubt, would have done the same if they could. But this display of destruction leaves me with several worrying questions to which I have no adequate answers: (1) Is there something terrible about the mere fact of large numbers being killed, or is it the notion of dis proportionality that disturbs? (2) If the civilized Western states did not intend the large numbers of civilian deaths in the wars they have initiated, does this absolve their leaders of all culpability? (3) If the vast majority of the citizens of these democratic countries support the destructive policies of their elected governments, are they in some sense also its partial agents? (আসাদ ২০০৭:৯৪)

মানুষ তার সম্প্রদায় ভাবনা থেকে মুক্ত নয়। নিজের সম্প্রদায়কে ভালো ভেবে নিয়ে একটা কোনো প্রতিপক্ষ তৈরির ইতিহাস অনেক পুরানো। জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শনচর্চা মানুষকে এই সীমিত গণ্ডি থেকে এখনো বের করতে পারেনি। মানুষের মধ্যে থেকে যাওয়া এইসব বাতিককে উস্কে দেয় বিশেষ বিশেষ প্রোপাগান্ডা। শুভবুদ্ধিকে দূরে সরিয়ে এভাবেই শুরু হয় মানুষে মানুষ অবিশ্বাস, ঘৃণা আর জাতিবৈরিতা। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশে হিন্দু- মুসলমান রায়ট, পাকিস্তানিদের বাঙালি-বিরোধী জাতিবৈরিতা, ইহুদি বনাম খ্রিস্টান, মুসলমান বনাম ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান, সামরিক বাহিনীর বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা নিরস্ত্র মানুষ, হুটু-তুতসি থেকে শুরু করে বৈরিতার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ও কষ্টদায়ক। বর্বরতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একটা কোনো নির্দিষ্ট জাতির সাথে জুড়ে দেয়া যায় না। সীমিত সংখ্যক কিছু লোক বা গোষ্ঠীর জন্য জাতিতে জাতিতে হানাহানি-রক্তপাত শুরু হয়। ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ। এইসব গোষ্ঠী বা লোকজনকে চেনানোর দায় আমাদের সবার। পৃথিবীর তাবৎ যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচারকার্য সমাধা করে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করা যায়। মানুষের মধ্যে ঘৃণার লাগাম টানতে পারে শুদ্ধবুদ্ধির লোকজন। মিডিয়া একটা বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে। ইসলামোফোবিয়া কিংবা তথাকথিত কোনো খ্রিস্ট-কায়েদা বা কোনো উগ্রপন্থী হিন্দু দলের জন্মগ্রহণে মদদ না দিয়ে সন্ত্রাস বা টেরোরিজমের আসল চেহারা দেখানোর দায়টা ইচ্ছে থাকলে নেয়াই যায়। আর আমজনতার কাজ একটাই। নিজের মানসিকতা অসাম্প্রদায়িক করে তোলা।

সূত্র:

১। Ramberg, Ingrid, Islamophobia and its consequences on Young People, European Youth Centre Budapest, 1–6 June 2004
২। Asad, Talal, On Suicide Bombing, Columbia University Press, New York, 2007

[ড্রাফট]


মন্তব্য

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

নিজের মানসিকতা অসাম্প্রদায়িক করে তোলা।
এই দিনটার অপেক্ষায় আছি!!!!

লেখাটা খুবই ভালো হয়েছে শুভাশীষ'দা।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার বক্তব্যের সঙ্গে মোটাদাগে সহমত। The virus of faith সব রকমের মানুষকেই পাকড়াও করে। চিন্তাধারার দিক থেকে মৌলবাদী সব ধর্মেই আছে। তবে, ধর্মসঞ্জাত কারণে প্রত্যক্ষভাবে অন্যের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে মনে হয় ইসলামী মৌলবাদীরাই অগ্রগণ্য, সেটাই ইসলামোফোবিয়া জন্মের একটা কারণ হতে পারে। ভারতে হিন্দুদের গ্রামে বিবাহ-বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক ধরা পড়লে গ্রামের মাতব্বররা তাদের মাথা মুড়িয়ে সারা গ্রাম ঘোরাতে পারে। কিন্তু আরবদুনিয়ায় ধরা পড়লে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করাই নিয়ম।

মন_মাঝি এর ছবি

তবে, ধর্মসঞ্জাত কারণে প্রত্যক্ষভাবে অন্যের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে মনে হয় ইসলামী মৌলবাদীরাই অগ্রগণ্য

পরিসিংখ্যানবিদ কি এ ব্যাপারে কোন পরিসংখ্যান দিতে পারবেন ? চোখ টিপি

কৌস্তুভ এর ছবি

না, হাতের কাছে কিছু নেই, খুঁজতে হবে তাহলে। আপনি কি সত্যিই চাইছেন?

মন মাঝি এর ছবি

হ্যাঁ, সত্যিই জানতে চাই কৌস্তুভ ভাই ! হাসি না, একটা অলস মন্তব্য করে ফেলেছেন বলেই আপনাকে হিসেব দাখিল করার জন্য চেপে ধরতে হবে এমন কোন ব্যাপার নেই। আসলে আপনি বলে নয়, এমন মন্তব্য অনেকদিন ধরেই (অন্তত গত ১ দশক তো বটেই) অনেকেই করে আসছেন বলে আমার আসলেই একটা প্রায় বৈজ্ঞানিক কৌতুহলই বোধহয় জন্মে গেছে যে, আসলেই তো, গত ১৪০০ বছরে মুসলমানরা - গত ২০০০ বছর ধরে খৃষ্টানরা - আর গত (+/-) ৫০০০ বছরে হিন্দুরা (এবং আরো অন্যান্যরা) পৃথিবীতে ঠিক কত মানুষ সত্যি সত্যি হত্যা করেছে তার একটা তুলনামূলক না হোক পাশাপাশি প্রকৃত হিসাব পেলে বাস্তব চিত্রটা বুঝতে আরো সুবিধা হত। এটা বুঝলেই যে খুব হাতি-ঘোড়া লাভ হয়ে যেত তা হয়তো খুব নিশ্চিত করে বলা যাবে না, কারন ধরুন আমার অচেতনে যদি কোন বদ্ধমূল বায়াস থাকে তাহলে শত হিসাবেও হয়তো কোন লাভ হবে না। তবে কথা হল সবাই তো আর এক রকম নয় আর সবাইই আমার মত ইনকরিজিবলি বায়াসান্ধ হবে এমন কোন কথা নেই। তাদের জন্য, এবং সাধারন ভাবে বললে এক অসচেতনতা/বায়াস/বেন্ট/প্রিডিস্পজিশন ইত্যাদির বিরুদ্ধে আরেক অসচতেনতা/বায়াস/বেন্ট/প্রিডিস্পজিশন নিয়ে লাগলে (অনেকটা গোল ফুটোয় চারকোনা পেগ ঢুকানর মত) আসলে কোন লাভ হয় না বরং যে কোন আলোচনা ও বৃহত্তর পরিসরে এর কিউমিলেটিভ/স্নোবল ইফেক্টের কারনে সভ্যতা/মানবতারই ক্ষতি হয়, এই জন্য। পক্ষপাতিত্বহীন ফ্যাক্টস এন্ড ফিগারস নিষ্ঠা থাকলে এবং নিরপেক্ষ এবং সদিচ্ছুক তথ্য ও যুক্তিনিষ্ঠা থাকলে হয়তো অবস্থার কিছুটা অগ্রগতি হত। কিম্বা হয়তো শুধু তাতেও হবে না - আরো অনেক কিছু লাগবে- আমি ঠিক জানি না। তবে বাৎ কি বাৎ -এর চেয়ে অন্য সব কিছুই বোধহয় ভালো, তাই না ? তাছাড়া এই হিসাবটা যদি তর্কাতীত ভাবে 'বায়াসান্ধ মুসলমানদের' বিপক্ষেও যায়, তাহলেও সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদে এটা তাদের উপকারই করবে। যাহোক, এধরনের কমেন্টে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোন সমস্যা নেই - তবে একটা বাস্তব সমস্যা হলো কি জানেন, এখন ১ টা অমুসলমানও দুনিয়ার কোথাও মারা গেলে মানবজাতির প্রায় এক পঞ্চমাংশকে বিনাবাক্যব্যায়ে হাত-পা বেঁধে মুখে পট্টি চেপে (কারন মিডিয়া সব তাদের হাতে) টেনে-হিঁচড়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। ফিগারেটিভলি স্পিকিং। বিচার হয় সবার (তা আপনি যতই 'মৌলবাদী' ইত্যাদি বলে কোয়ালিফাই করুন না কেন)। কারন পশ্চিমা মিডিয়ার কল্যানে মুসলমান = মৌলবাদী = টেররিস্ট ধারনাটা প্রায় প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে অনেক জায়গায়। কিন্তু শয়ে শয়ে, এমনকি লাখে লাখে (ইরাক) মুসলমান মারা গেলে হয় 'দুঃখিত, ওটা অনিচ্ছাকৃত'। যেন তাতেই সাত খুন মাফ। যেন তাদের মূল্য ইঁদুর-বাদুড়ের বেশি নয়। পুরো জিনিষটাই আমাকে কেন জানি ২য় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব জার্মানির ইহুদি-সংক্রান্ত মনোভাবের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। সেসময় গোয়েবলস বা আইখম্যান কে যেন বিভৎস কিছু ইঁদুর নিয়ে 'ইঁদুর'-এর উপর একটা ভয়ঙ্কর রোমহর্ষক ডকুমেন্টারি বানিয়েছিল। এটা ইঁদুর নিয়েই ছিল, কিন্তু এর মেসেজ ছিল - এই দেখ, ইহুদি হচ্ছে আসলে এই (এর পরের ইতিহাস আমরা জানি)। শত শত বরযাত্রীসহ পুরো উৎসবমুখর বিয়েবাড়ি মিসাইল মেরে উড়িয়ে দিয়ে যখন ক্যাভালিয়ের/ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে বলা হয়, 'স্যরি...ওটা অনিচ্ছাকৃত'...এবং পরের দিনই আবার একই ঘটনা ঘটে, তখন আমার ঐ ইঁদুর-ডকুমেন্টারির কথা মনে পড়ে যায়। আচ্ছা, আম্রিকা তো অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা বা গণখুনি ডিক্টেটরশীপের জন্য দায়ী লোককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে অনেক, এখন সেসব দেশের কেউ যদি তাদের ধরার নামে এভাবে বোমা ফেলে সিভিলিয়ান মারে আম্রিকায়, তাহলে কি আপনি বা আম্রিকান সরকার সেটা নির্বিবাদে মেনে নিবেন ? কিম্বা চিন্তা করুন ইরাকের ত্রি-সীমানাতেও WMD বা আল-কায়েদা না থাকা সত্ত্বেও স্রেফ অত্যন্ত সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত, সজ্ঞান একটা মিথ্যার কারনে সেখানে লক্ষ-লক্ষ (এক হিসেবে সামগ্রিক ভাবে সম্ভবত কয়েক মিলিওন) নিরীহ মানুষকে মরতে হয়েছে, ছিন্নভিন্ন হতে হয়েছে, ভুগতে হয়েছে - হচ্ছে এখনো। অথচ বুশ বা আম্রিকার কি হয়েছে ? লাদেন/সাদ্দাম শেষ, ইরাক/আফগানিস্থান মিসমার, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-প্রদীপ নির্বাপিত বা নির্বাপিত-প্রায় -- বুশ-আম্রিকা কেন সসম্মানে, সপ্রেমে, বহাল তবিয়তেই আছে ? কেন ইরাক/আফগানিস্থান, লাদেন/সাদ্দামকে এবং শেষমেশ মানবজাতির এক-পঞ্চমাংশকে ঘিরে যে বিদ্বেষের হলাহল বা উম্মাদনা তা তাদেরকে ঘিরে নাই শতগুনে বড় হত্যাকারী হওয়া সত্ত্বেও ?

না, এসবের পেছনে আপনার কোন দায় নাই। আর আমারও এসব চর্বিত-চর্বনে আসলে কোন আগ্রহ নাই। তবে এই কথাগুলি বললাম একারনে যে, মাঝেমধ্যে কেন যেন মনে হয় উপরে যে পরিস্থিতির বর্ননা দিলাম তার জন্যে একটা নৈতিক ভাবে এনাব্লিং বা সহনশীল আবহ সৃষ্টিতে আমাদের কিছু কিছু এম্নিতে গুরুত্বহীন প্যাসিভ বায়াস/প্রেজুডিস বা যূথ-মানসিকতা শেষমেশ একরকম কিউমুলেটিভ প্রভাব সৃষ্টি করে। আমি তিলকে তাল করে ফেলছি বলে মনে করে যদি দুঃখ পান, তাহলে এখনই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনার পরিমিতি বোধ সম্পর্কে আমার একটা শ্রদ্ধা আছে। কখনো আপনাকে সচলে তিক্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তাই সাহস করেই আমার মতামত জানালাম। আর হ্যাঁ, আপনার পরিসংখ্যান হয়তো আমার বায়াসান্ধ চোখ খুলে দিবে। কে জানে।

****************************************

কৌস্তুভ এর ছবি

মনমাঝি ভাই, আপনার আলোচনার জন্য ধন্যবাদ (একটা অনুরোধ, এত বড় পারা না করে ভেঙে ভেঙে দিলে পড়তে সুবিধা হত)।

----

আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় অংশে, যাতে আপনি বলেন, একজন সাধারণ ইসলামী লোকের বিরুদ্ধেও আজকাল মানুষের বায়াস তৈরী হচ্ছে কিছু কিছু জায়গায়, এবং তা অন্যায়, তা অস্বীকার করি না। এই নিয়েই আমার একটা লেখায় একটু আলোচনাও করেছিলাম, যে "যদি সব উগ্রপন্থীই মুসলিম হয়ও বা, বেশিরভাগ মুসলিমই কিন্তু টেররিস্ট নয়।"

অন্য কথাটাতেও সহমত, যে আফগানিস্তানে অনেক নিরীহ লোক মেরেও ওরা 'কোল্যাটারাল ড্যামেজ, আমরা দুঃখিত' বলে চালিয়ে দিতে পারে। তবে সেগুলো কিন্তু মিডিয়ায় আসে, এবং মোটেই প্রশংসার সঙ্গে আসে না। বুশও যে war-monger maniac, এই ইমেজটা নিয়ে মেনস্ট্রিম মিডিয়ায় বা লোকের মনে দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। অন্তত আমার এবং সমমনস্ক আমাদের মনে, সবগুলোই সমান নিন্দনীয়।

এইবার একটা জিনিস বলেন। ইরাকে মার্কিন হানার পর তাদের বিরুদ্ধে (পতাকা-টতাকা পুড়িয়ে) অনেক মিছিল হয়েছে শুনেছি বাংলাদেশে, ভারতে, বহু লোকে তাদের সন্তানের নাম সাদ্দাম রেখেছিল বলে শোনা যায়। লণ্ডনে আণ্ডারগ্রাউণ্ড বিস্ফোরণের বা টুইন টাওয়ার ঘটনার পর কয়জন লোক ইসলামী মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে মিছিল বের করেছিল? 'মডারেট'দের নিয়ে এইটা একটা সমস্যা...

----

আপনি কিছু তথ্য চাইছেন এই ইমেজের পক্ষে/বিপক্ষে। আমি খানিক গুগল করলাম, এই একটা সাইট পেলাম, যেখানে বলছে, "প্রত্যেক বছর ইসলামী চরমপন্থীরা যত মানুষ মারে, তার সংখ্যা স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের ৩৫০ বছরে যত মানুষ মারা হয়েছে তার চেয়ে বেশি।" তাদের তথ্য বলছে, কেবল গত বছরই ইসলামী চরমপন্থীদের হাতে ৯২০০ জন মারা গেছে। ধরে নিলাম তার ৫০%-ই ভুল তথ্য। হয় ৪৬০০ জন। আর উইকির হিসাব বলছে, ওই খ্রীষ্টধর্মের শুদ্ধিকরণ যজ্ঞে মারা হয়েছে ৩০০০ জনকে (কেউ বলেন, আরো বেশি, ৩০০০-৫০০০ জন)। তাহলে দেখেন।
অথবা বলছে, 'Islamic terrorists murder more people every day than the Ku Klux Klan has in the last 50 years.'

হিন্দুধর্মের বা বৌদ্ধধর্মের কোনো তথ্য সেভাবে পেলাম না। তবে আপনারও বোধ করি মনে হয় না যে তাদের হত্যার সংখ্যা এত হবে। (হিন্দুরাজা আর বৌদ্ধরাজার মধ্যে রাজ্য-সংক্রান্ত যুদ্ধ, যেমন শশাঙ্ক আর হর্ষবর্ধন, আশা করি এই হিসাবে পড়বে না, কারণ সেখানে ধর্মটা হত্যার মূল মোটিভেশন নয়, রাজনীতি।)

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কৌস্তভদা, দুইটা বেসিক ভুল পয়েন্টআউট করি:

১) আপনার গুগোল করা উচিত ছিলো ইসলামকে সন্ত্রাসে অগ্রগণ্য বলার আগে। তথ্য থেকে সিদ্ধান্ত, সিদ্ধান্ত ম্যাচিং তথ্য নয়।

২) thereligionofpeace সাইট থেকে আপনি - খুব সফট করে বললেও - আনবায়াসড তথ্য পাবেন, এটা আশা করা ভুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের জন্য পরফেসর গোলাম আযমের বই 'জীবনে যা দেখলাম' এর মতোই হলো ব্যাপারটা।

আমাদের মনে কোনোকিছুর ইমেজ তৈরির জন্য মিডিয়া দায়ী। সবসময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ সিদ্ধান্তে আসে না। ইনফর্মেশনের সমুদ্র থেকে সঠিক ইনফো বাছাই করাও কঠিন কাজ। বায়াসড মিডিয়া এই সুযোগটা নেয়। এজন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একটু স্পষ্টভাবে চিন্তা করে নেয়া ভালো, যদিও আমরা সেটা সবসময় করতে পারি না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

১) মনমাঝি একটা বিশেষ ধরনের ডেটা চেয়েছেন, যেটা দেবার জন্য আমাকে গুগল করতে হয়েছে। আমি যে কোনো ধরনের তথ্যই আগে না নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি, এমন তো নয়।

গত এক বছর ধরে সংবাদ পড়ছি, এর মধ্যে মুসলিম জঙ্গিরা কতগুলো খুন করেছে বলে সংবাদ এসেছে, আর বৌদ্ধ জঙ্গিরা কতগুলো খুন করেছে বলে সংবাদ এসেছে, সেগুলো গুনে রাখিনি বটে, কিন্তু সে সম্পর্কে ধারণা তো আছেই। এবার কেউ চাইলে গুগল করে কাউন্টটা দিতে হবে।

আপনি বলবেন, বায়াসড মিডিয়া। আচ্ছা বেশ, কিন্তু এমন কি কোন বড় সংবাদ এসেছে যাতে মুসলিম জঙ্গির দ্বারা খুনের খবরটা মিথ্যা? আর এমন কি কোন বড় সংবাদ ছিল যাতে বৌদ্ধ জঙ্গি খুন করেছিল সেটা চেপে যাওয়া হয়েছিল?

২) প্রো-মুক্তিযুদ্ধ লোকেদের ত্রিশ লাখের হিসাবকে গোয়া-রা অস্বীকার করে। আর তাদের ত্রিশ হাজারের দাবীকে আপনারা মিথ্যা বলেন। দুটো দিকই কি ব্যালান্সড, দুটো দাবীর প্রতিই কি সমান যত্ন দেওয়া উচিত? তা তো মোটেই নয়, একটা সত্যি আর একটা মিথ্যা।

এক্ষেত্রে ওই সাইটটা বায়াসড কি না সেটার চেয়ে মূল কথা হল, তাদের দেওয়া তথ্য সত্য কি না। সেটা আমি কিছুটা হলেও যাচাই করে দেখেছি, আপনিও চাইলে দেখে নিতে পারেন। তাও আমি তর্কের খাতিরে অর্ধেক হিসাবই ভুল বলে ফেলে দিয়েছি। তাতেও তাদের স্টেটমেন্ট অবাস্তব প্রমাণিত করা যায় না। এই তো যথেষ্ট।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমি যে কোনো ধরনের তথ্যই আগে না নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি, এমন তো নয়।

আপনার প্রথম মন্তব্যের সিদ্ধান্তের জন্য গুগোল বাবাজির দ্বারস্থ ওই মন্তব্যটা করার আগেই হওয়া উচিত ছিলো।

যাক, গোলাম পরফেসরের বই নিয়া বসি, কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা যাচাই করা শুরু করে দেই। হেড কাউন্ট করে ৩০ লাখ মৃত মানুষের খুলি পাওয়া না গেলে তাদের ২৬ হাজারের হিসাব উড়িয়ে দেয়া যাবে না। একটা হেইট সাইটের তথ্য আনবায়াসড হবে কিনা, তাও যাচাই-বাছাই করার দরকার আছে বৈ কি!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

sh21 এর ছবি

অমুসলিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা হত্যা গুলো মিডিয়াতে গুরুত্ব পায় না। আমেরিকা ইরাকে বা আফগানিস্তানে গত এক বছরে কত গুল খুন করেছে তার সঠিক হিসাব কি মিডিয়াতে আসে??? আপনি নিজেও স্বীকার করলেন ইসলামের বিরুদ্ধে মিডিয়া প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, আবার তথ্যের জন্য ওই পশ্চিমাদের ওয়েবসাইট দেখে ডেটা নিলে তা মিথ্যা হতে বাধ্য।

মনোয়ার আজম এর ছবি

অমুসলিম সন্ত্রাসীরা যদি নিজেদের ধর্মের নামে হত্যাকাণ্ড চালায়, তবেই শুধু সেটা এই আলোচনায় বিবেচ্য হতে পারে। ইসলামী জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে ইসলামের নামে। পার্থক্যটা বোঝাতে পেরেছি?

মন মাঝি এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই, আমি যা ভেবেছিলাম - আপনি কিন্তু ঠিক তাই করেছেন। উইথ অল ডিউ রেসপেক্ট, আপনি কিন্তু এখান-ওখান থেকে খাবলা দিয়ে কিছু তথ্য হাজির করেছেন স্রেফ আপনার নিজের বায়াসের পক্ষে সুবিধা মত। আমি যেরকম কম্প্রিহেন্সিভ এবং আনবায়াসড ডেটা চেয়েছিলাম তা কিন্তু মোটেই দেননি। আর হ্যাঁ, এমনকি এই ডেটার মধ্যেও বিশাল শুভঙ্করের ফাঁকি রয়ে গেছে, যা এতই গ্লেয়ারিং যে সেটা আপনার চোখে ইতমধ্যেই ধরা পড়ে না থাকলে আমাকে সেটা অনেক বিতং দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে বাধ্য হয়ে - আর এই মুহূর্তে আমার সে সময় নাই (মাসখানেক পরে হতে পারে হয়তো)। তাছাড়া এই মুহুর্তে এইরকম বিতর্ক আমার কাছে বেশ খানিকটা অরুচিকরও মনে হচ্ছে। জ্বর ছাড়ার পর যেমন হয় জিহবায় অনেকটা সেরকম বিস্বাদ অনভূতি হচ্ছে।

মডারেটদের নিয়ে আপনি যে সমস্যার কথা বললেন সে সমস্যা আমি কিন্তু আপনার কমেন্টের মধ্যেই বরং দেখতে পাচ্ছি। যে প্যারায় আপনি এ মন্তব্যটা করেছেন, তার ঠিক উপরের আপনার লেখাটা প্যারাটাই আরেকবার মিলিয়ে পড়ে দেখুন না ? কোন স্ববিরোধিতা বা সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন ? না পেলে, আরো অনেক কথা বলা বাকি থেকে যায়। তবে সেসব অন্য কোন সময়ের জন্য তোলা রইল। একটা কথা শুধু বলি, এসব যুক্তি আমার কাছে মোটেই নতুন কিছু না - পশ্চিমা হেট সাইট (এবং অন্যান্য) গুলিতে এগুলি অহরহ বলে ফেনা তোলা হয়ে থাকে। তাদের সাথে এনিয়ে আমার বিস্তর আলাপও হয়েছে। টেকনিকগুলি আমার পূর্বপরিচিত।
তবে আপনাকে বরং আমি একটা প্রশ্ন করি। সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলে ইরাকের লক্ষ-লক্ষ মানুষকে হত্যা করা এবং তাদের মৃত্যুর কারন হওয়ার জন্য, দেশটাকে একদম লণ্ডভণ্ড মিসমার করে দেয়ার জন্য, আপনি কবে war-monger maniac বুশের বিরুদ্ধে লাদেনের মত করে সিলস্‌-জাতীয় কমাণ্ডো আক্রমন চালাতে যাচ্ছেন বলুন তো (ওরা ত মাত্র ৩-৪ হাজারের জন্যই এটা করেছে) ? কবে, তার বিচারের দাবীতে বিশ্বব্যাপী বা নিদেনপক্ষে আম্রিকাব্যাপী একটা গনআন্দোলন ও গনজোয়ার গড়ে তুলতে যাচ্ছেন বলুন তো দেখি ? যেদিন এরকম কোন সফল কার্যকলাপের নেতৃত্বে আপনার নামটি দেখব কোন শিরোনামে, সেদিন আপনার ঐ প্রশ্নের উত্তর দিব। আমার কাছে কোন ইকুয়াল এবং অপোজিট কাউন্টারব্যালেন্সিং মেজার দেখতে চাইলে আপনাকে একটু কশট করে এক্সাম্পল সেট করতে হবে বইকি। "সমমনস্ক" সার্কেলে নিজেদের মধ্যে কি বলাবলি করেছেন তা দিয়ে কিন্তু হবে না। মিছিলের বিপরীতে মিছিল, গাড়ি পোড়ানর বিপরীতে গাড়ি পোড়ানো - যদি দেখতে চান, আপনাকেও তাহলে যুদ্ধের বিপরীতে যুদ্ধ এবং কমাণ্ডো এ্যাসাসিনেশনের বিপরীতে কমাণ্ডো এ্যাসাসিনেশন করে এক্সাম্পল সেট করে দেখাতে হবে আগে। ইকুয়াল এবং অপোজিট কাউন্টারব্যালেন্সিং মেজার। এনিয়ে আর যে কোন আলাপ তার পরেই হবে শুধুমাত্র। 'সেকুলারিস্টদের'দের নিয়ে এইটা একটা সমস্যা... হাসি

তবে, উইথ অল ডিউ রেসপেক্ট, তথাকথিত 'সেকুলারিস্ট'দের (যারা আসলে এখনো মনের গহীন থেকে সাম্প্রদায়িকতা/প্রেজুডিস/হার্ড(herd)-মেন্টালিটি ইত্যাদি উপড়ে ফেলতে পারেননি ঠিকমত, কিন্তু তেমনটা ভাবতেই ভালবাসেন) নিয়ে একটা বিশাল সমস্যা কি জানেন ? তারাও কিন্তু সময় সময় তাঁদের কথিত ঘৃনার পাত্র মৌলবাদী/উগ্রপন্থীদের মতই যুক্তির ক্ষেত্রে সাঙ্ঘাতিক পিচ্ছিল হয়ে যান! অনেকটা এরকম যে, সালিশ মানি কিন্তু আইন-যুক্তি-অযুক্তি-জাজ-জুরি-প্রসিকিউটার-আর্গুমেন্টের ও এভিডেন্সের কোনটা এডমিসিবল আর কোনটা না - সেই স-বের তালগাছটা কিন্তু আমার! এই 'পিচ্ছিলতার' পেছনেও অবশ্য একটা বিশাল রাজনীতি আছে, এক ভয়াবহ মানবতাবিরোধী রাজনীতি। সেই রাজনীতি যা লক্ষ-লক্ষ মানুষ হত্যা করেও 'সুপারহিরো' হয়ে যায়। আর সে তুলনায় তাদের কাছে যারা দুগ্ধপোষ্য শিশু প্রায় (ফিগারেটিভলি স্পিকীং - এরাও খুনি) - তারা হয়ে যায় 'আসল ভিলেন'। আর ঐ আসল ও 'অগ্রগন্য' ভিলেন মারতে গিয়ে ফাঁকতালে আমার মত নিরস্ত্র, নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের বা তাদের প্রিয়জনদের, মা-বোন-স্ত্রী-শিশুপুত্র/কন্যার ছিন্নভিন্ন দেহ ছড়িয়েছিটিয়ে ছত্রখান হয়ে পড়ে থাকে পাড়াময় শহরময়, মগজ ছিটকে লেগে থাকে ছাদে। বেঁচে থাকলে সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হয়। আর এই রাজনীতির গোড়াতেই জল ঢালেন অনেক 'সেকুলারিস্ট'। যার একটা রূপ হচ্ছে ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানি-মার্কা কম্প্যারেটিভ এনালিসিস। যে এনালিসিসের একটা কিউমিলিটিভ রেজাল্ট হচ্ছে, ব্ল্যাঙ্কেট স্টেটমেন্ট দিলে যা হত তাই - আল্টিমেটলি আরো নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু ও হত্যার জন্য ফেভারেবল, নিদেনপক্ষে প্যাসিভ (এক্ষেত্রে প্যাসিভও ফেভারেবল) নৈতিক আবহ সৃষ্টি করা। এদিক থেকে দেখলে, বুশিজমের দায় কি এইসব সেকুলারিস্টরা পুরোপুরি এড়াতে পারেন ?? এই রাজনীতির কারনেই বর্তমানে বিশ্ব মোড়লরা এতদসংক্রান্ত সমস্ত ডিস্কোর্স সম্পূর্ন নিজেদের সুবিধামত কিছু সুনির্দিষ্ট প্যারামিটারের মধ্যে বোতলবন্দী করে ফেলতে চায়। বাকি অন্য সবকিছু আলোচনার বাইরে চলে যায় বা এড়িয়ে যাওয়া হয় বা ধামাচাপা দিয়ে দেয়া হয়। তা নইলে তাদের রাজনীতি যে টেকে না। সমস্যা হচ্ছে অনেক প্রগতিশীল/সেকুলারিস্টরাই বিশ্বমোড়লদের ও তাদের তাঁবেদার মিডিয়ার চাপিয়ে দেয়া শুভঙ্করের ফাঁকিওয়ালা যুক্তি, অযুক্তি বা কুযুক্তির পথেই হাটতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। এটা কে কতটা সচেতন ভাবে আর কতটা অসচেতন ভাবে, বা কতটা তাঁদের নিজেদের অবচেতনে থেকে যাওয়া বায়াসের ছাইচাপা আগুনে হাওয়া লাগার কারনে করেন - আমার জানা নাই। আর আমি বলছিও না আপনি এই গোত্রে। বরং আমার অনেস্টলি দৃঢ় বিশ্বাস এর উল্টোটাই আপনার ক্ষেত্রে বোধহয় সত্যি। তবে এগুলির দর্শন আমার শুধু নেটেই নয় - অত্যন্ত প্রত্যক্ষভাবেও হয়েছে অনেক। এই ঢাকাতেই। তাই বললাম। এদের মধ্যে দু'টো অত্যন্ত প্রচলিত ও জনপ্রিয় 'পিছলানো' যুক্তি (? হাসি ) হচ্ছে --

১। এগুলি তো অনেক আগে হয়েছে (ইউরোপিয়দের করা বড় ও তাদের স্বীকৃত এট্রসিটিগুলি)
২। কারণ সেখানে ধর্মটা হত্যার মূল মোটিভেশন নয়, রাজনীতি
(মজার ব্যাপার হলো, এই একই ধরনের যুক্তি মুসলিম বিতার্কিক/এ্যাপোলজিস্টরা বললে কিন্তু তারা সেটা তখন কানেই তুলেন না! চোখ টিপি )

তবে এই সর্ষের তেল মার্কা পিছলানো যুক্তি (?) নিয়ে আজকে আর আলোচনা করতে ইচ্ছা করছে না। হয়তো অন্য কোন দিন হবে। কথার পিঠে কথা এসে গেল বলে দুঃখিত। আরো বললে আরো বাড়বে। এদিক থেকে মনে হয় অছ্যুৎ বলাইর কথাটাই বোধহয় ঠিক। এসব আলোচনায় কেন জানি মনে হয় শেষমেশ ক্ষতি বৈ কোন লাভ হয় না। অন্তত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

আপাতত অনুমতি দিলে, অপ্রাসঙ্গিক হলেও আমার ব্যক্তিগত একটা গল্প বলে শেষ করতে চাই। তাহলে হয়তো বুঝতে পারবেন (বা পারবেন না) আমি কোথা থেকে কথা বলছি। আমি কিন্তু মডারেট না। আমাকে এক্সট্রিমিস্ট বলতে পারেন হয়তো। জানি না। 'এ্যাপোলজিস্ট' তো না-ই, কারন বিশ্বাসই নাই। তাছাড়া কারো হয়ে এ্যাপোলজির ধার ধারি না। আর এই বিশ্বাসটা ভালমত হারিয়েছিলাম বহু বছর আগে আমার এক বরিশাল থেকে আসা পূর্ববাংলাগত ভারতীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুর কল্যানে। আমার এই অতি প্রিয় বন্ধুটি ক্যান্সারে মারা যায়। তার ক্যান্সারের ডায়াগনসিসটাও খানিকটা আমার সহায়তার কারনেই হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ভবিতব্য রোখা যায়নি। তার মৃত্যুর পরে প্রচণ্ড ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হাল্কা হওয়ার জন্য এক বড় ভাইটাইপের কাছে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম, আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছিল 'ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নলিল্লাহে রাজেউন' ('আল্লাহর সৃষ্টি আল্লাহর কাছেই ফিরে গেছে' ?)। সাথে সাথে কড়াৎ করে এক বিশাল ধমক! এই দোয়া নাকি শুধু সদ্যমৃত মুসলমানদের জন্যই রিজার্ভড। হতচকিত অবস্থায় জিজ্ঞেস করা হয়নি - তাহলে কি হিন্দুরা 'আল্লাহর সৃষ্টি' নয়? তারা কি আল্লাহর কাছে ফিরে যায় না ? আমার প্রানপ্রিয় বন্ধুটির জন্য সন্তপ্ত হৃদয়ে এটুকু প্রার্থনাও করতে পারব না ?!! আমার প্রায় বুক ভেঙে গিয়েছিল। ঐ বড়ভাই মৌলবাদীঘেঁষা। তিনি আরও ওয়াজ ফর্মাইলেন যে, ঐ বন্ধুর জন্য দুঃখ করার কোন দরকার নাই কারন কাফের হিসাবে সে অনন্তকাল দোজখবাসী হবে (বা কথাটা আমার নিজের মনেই এসেছিল, ঠিক মনে নাই)। এই কথায় আমার এমন মানসিক আঘাত লাগল যে আমার বিশ্বাস তখনই টলে গেল। আমি স্রেফ বিশ্বাসী বলে বেহেস্তবাসী হব আর আমার প্রানপ্রিয় চমৎকার বন্ধুটি বিনাদোষে অনন্তকাল ধরে নরকের আগুনে দগ্ধ হতে থাকবে স্রেফ একটা ডেইটিকে বিশ্বাস করেনি বলে ? এ কেমন অসীম দয়াময় ও ক্ষমাশীল ঈশ্বর যে এত সামান্য হাস্যকর একটা ব্যাপারে এত বড় শাস্তি দিতে পারে ? এত সামান্য ইগোকে অতিক্রম করতে পারে না ? আরে, এর থেকে তো যে কোন মানুষ পিতা-মাতাও অনেক অ-নে-ক বেশি মহানুভব !!! তাহলে আর তাকে বিশ্বব্রম্মান্ডের পিতা/বিধাতা বলে মানি কেমনে ? সেই থেকে আমি আর বিশ্বাস ফিরে পাইনি (আরো কারন আছে অবশ্য)।

আচ্ছা, ধরুন তো এখন যদি কেউ এসে আমাকে বলে - আরে ধুর, তোমার বন্ধুতো ক্যান্সারে মারা গ্যাছে। ওটা কোন হিসাবের মধ্যেই পড়ে না। ওতো মারা গ্যাছে স্রেফ নিজের সেলের ম্যালিগন্যান্ট আচরনের বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে। এটা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। এটাকে এত ফোকাস করার কি আছে ? আমার প্রতিবেশী মারা গেছে ভাইরাল ফিভারে। এটাই বেশি ধর্তব্য, গননীয়, গুরুত্বপুর্ন, 'অগ্রগন্য' এবং আলোচনীয়। আরে থও তোমার বন্ধু, চল আমার প্রতিবেশীরে নিয়া আমরা কান্দি।

আপনার কথার টোনটা অনেকখানি এই লোকের মত। সেইসাথে বেশ কিছুটা আমার ঐ মৌলবাদীঘেষা বড়ভাইয়ের 'ইন্নালিল্লাহ...'-এর বিরুদ্ধে ধমক দেয়ার মতও লাগল।

আশা করি আমার কমেন্ট অফেন্সিভলি না নিয়ে ভেবে দেখবেন। এবিষয়ে এটাই আপাতত আমার শেষ কমেন্ট।

****************************************

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মাথা ঠিক আছে তো? আমার কাছে মন্তব্যটা বেশ অফেন্সিভ লাগলো।

মন মাঝি এর ছবি

ঠিকই আছে। তবে প্রকাশিত হওয়ার পরে পড়ে মনে হচ্ছে বাচালত্বের সমস্যা আছে। হাসি

হ্যাঁ, আমারও কিছুটা লাগল। ঘ্যাচাং করে দিতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু 'সম্পাদনা' বাটনটা দেখছি না। কৈ গেল ? এটা তো থাকে সবসময় !
---------------------------

আজব! এটার মধ্যে 'সম্পাদনা' আছে, কিন্তু উপ্রের গুলার মধ্যে নাই। আচ্ছা, আপনি বা অন্য কোন মডুরাম পারলে ঘ্যাচাং করে দিয়েন উপ্রের কমেন্টটা। আমার নিজেরই ভীষন বিরক্তি লাগছে এটা পড়তে।

****************************************

কৌস্তুভ এর ছবি

মনমাঝি ভাই, আমার কথার মধ্যে ঘাপলা থাকলে, তা বলবেন তো বলেন, না বলবেন তো না বলেন। কিন্তু 'বলতে পারি কিন্তু বলব না, নিজে নিজে খুঁজে দেখুন তো দেখি' টাইপের কথায় আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয় না।

আপনার প্রশ্নে আমার মনে হয়েছিল, মুসলিমরা অন্যদের তুলনায় ধর্মসঞ্জাত সন্ত্রাসে বেশি সক্রিয়, এটার পক্ষে আপনি কিছু তথ্য চান। তাই ওইভাবে তথ্য উপস্থাপনা করলাম। তা আমার ডেটায় বিশাল বায়াস আছে, বলে দিলেন, কিন্তু প্রমাণ করলেন না, তা হলে আর কী করতে পারি!

---

আপনি যদি বুশের আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের কথা বলেন, তার কি আমি নিন্দা করিনি এখানের আলোচনায়? ইরাকে এক লাখ মানুষ মরেছে (কোন পক্ষ কত মেরেছে সে হিসাব বাদ দিয়েই), আফগানিস্তানে, এর জন্য কি বুশকে প্রশংসা করেছি?

রাজনৈতিক কারণে হত্যা বেশি হয়েছে না ধর্মীয় কারণে, সেই বিভাজন নিয়ে তো আলাপ হচ্ছিলই না। সেই প্রসঙ্গ তুলে তারপর পিছলামির দায়ে অভিযুক্ত করলে কী করে হবে।

বুশ গোঁড়া ক্রিশ্চান, হ্যাঁ। কিন্তু সে তো 'ধর্মসংস্থাপনার্থায়' বলে ইরাক বা আফগান যুদ্ধে নামে নি। বরং উচ্চশিক্ষিত, আধুনিক আমেরিকান সমাজে আজকাল অনেকটা রিপাবলিকান-ফোবিয়া চলে এসেছেই বলা যায়, তাদের পার্টির সমর্থিত এবং সমর্থক লোকেদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্রিশ্চান এবং গোঁড়া, বুদ্ধিবিবেচনাহীন লোকেদের সংখ্যা এত বেশি হওয়ায়। সেই ফোবিয়াটার পেছনে কিন্তু ওদের পার্টির ভ্রান্ত নীতি অনেকটাই দায়ী, যেমন ইসলামোফোবিয়ার পেছনে খানিকটা দায় ইসলামী সন্ত্রাসীরা এড়াতে পারে না।

---

হঠাৎ করে আমাকে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের পুরোধা হওয়ার চ্যালেঞ্জ দেওয়ার যৌক্তিকতা কি, তাও বুঝলাম না। আমি কি লাদেনের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদী মিছিলের নেতা ছিলাম যে আমাকে 'কাউন্টারব্যালান্সিং' হিসাবে বুশের বিরুদ্ধে মিছিলে নামতে হবে? নাকি আমি কোনো কমাণ্ডো এ্যাসাসিনেশন করিয়েছি যে তার বিপরীতে কমাণ্ডো এ্যাসাসিনেশন করে এক্সাম্পল সেট করে দেখাতে হবে? ঐ অংশটা পুরোটাই অহেতুক মনে হল, দুঃখিত।

আপনার আরো কিছু বক্তব্য থাকলে এত কথার ভিড়ে খুঁজে পাইনি, সরি।

আমি আপনাকে বলিনি, বুশের আগ্রাসন ছেড়ে ইসলামী আগ্রাসনেই ফোকাস করুন। আমার বক্তব্য ছিল অন্য, ধর্মভিত্তিক আগ্রাসনের মধ্যে ইসলামি আগ্রাসন নিয়ে। তা থেকে ইসলামি আগ্রাসনের ব্যাপারটাকে তুলে এনে বুশের সঙ্গে তুলনা করে, তার কাজের দায় আমার এবং আমার মত অন্যদের উপর চাপিয়ে, তারপর আমার কথায় 'ওই লোকের' আপত্তিকর অ্যাঙ্গেলের মিল খুঁজে পেলে আমি নিরুপায়।

-----

ওই তথ্য দেওয়া সাইটটাকে হেট সাইট বলছেন? বেশ। সচলে মৃদুলদার ছড়া আর সুজনদার কার্টুনের ফলে সেটাকে হেট সাইট বলে ব্ল্যাঙ্কেট ট্যাগ করে ফেললে কিন্তু যারা সেটার লক্ষ্য তাদের পক্ষে মন্দ হয় না, তাহলে শুভাশীষদার শর্মিলা বোসের উপর তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধটাকেও একই কাতারের অপাঠ্য জিনিস বলতে কিন্তু জামাতিরা খুবই খুশি হবে।

(আপনার কমেন্টকে অফেন্সিভ বলে গায়ে টেনে নিই নি। আপনিও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আপনাকে অ্যাপলজিস্ট, পিছলা, জামাতি ইত্যাদি কিছু বলেই ট্যাগিং করব না। আপনার অনুসারে আমিও কমেন্টাদি শেষ করলাম।)

----

অফটপিকঃ সচলে বার্তা সিস্টেম হঠাৎই উঠে গেছি দেখছি দিনকয় হল। আপনার বার্তাটা আসতে দেখলেও তখন পড়ার সময় হয় নি, তারপর হারিয়ে গেল। মন খারাপ কী বলেছিলেন মনে থাকলে জিমেলে পাঠান না প্লিজ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

মনমাঝিদা, বলাইদা ও কৌস্তুভ ভাই,

এই থ্রেডে বিতর্কের সূচনায় তথ্যের কথা এসেছে। সেই সূত্রে বলছি - কৌস্তুভের প্রথম বক্তব্যটা এসেছে ব্যক্তিগত অবজার্ভেশান থেকে। এই অবজার্ভেশান বায়াসড হতেই পারে (নির্ভর করছে কৌস্তুভের পঠনের ধরন, সামাজিক মেলামেশার বৃত্ত ইত্যাদির উপর যা র‍্যান্ডম হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারন কৌস্তুভ পড়াশোনা জানা মানুষ, বাস করে বস্টনে যেখানকার জীবনযাত্রার মান গড়পরতা আম্রিকান শহর থেকে ভিন্ন ইত্যাদি)। কিন্তু এই বায়াস নেসে আমি কোন সমস্যা দেখি না। কারণ -

প্রকৃতপক্ষে কতজন মানুষ ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বা সমাজে অন্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেমন তা কৌস্তুভের পক্ষে জানা দুঃসাধ্য। কৌস্তুভ শুধু তাই দেখতে পাবে যা নির্ণয়যোগ্য। ব্যাপারটা অনেকটা latent variable এর মত। এর থ্রেশহোল্ড থেকে সিদ্ধান্তে আসলে তা ভুল না। কারণ স্কেইলটা অন্যান্য ধর্মের জন্যও একইভাবে চেইঞ্জ হচ্ছে। এটা তখনই ভুল হবে যদি কৌস্তভের অবজার্ভেশান শুধুই আম্রিকাতে সীমাবদ্ধ না থাকে বা খবর শোনার বেলায় শুধুই একটি বিশেষ চ্যানেল শুনে (আশা করি তা না দেঁতো হাসি )

এখন বলাইদার সাথে একটা প্রসঙ্গে আমি একমত - তা হল মিডিয়াতে যেই জেনারালাইজেশানটা করা হয়। লক্ষ্য করুন - এই জেনারালাইজেশানটাই কিন্তু তথ্যগত বিভ্রান্তির সূচনাকারী। এমন অসংখ্য জেনারালাইজড তথ্যের আন্তর্জালিক সংরক্ষণ দেখে অসংখ্য কৌস্তুভ এমন সিদ্ধান্তে আসবেন যার বিচ্যুতির মান গড়ের থেকে যোজন দূরে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমি কৌস্তভদাকে পারসোনালি কোনো দোষ দিচ্ছি না, উনার জেনারেলাইজেশন শিক্ষার ভুলগুলো দেখানোর চেষ্টা করেছি। যেমন, কুরআনের ওই আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা কিভাবে মিডিয়ায় করা হয়, তা একটা উদাহরণ। আমার মন্তব্যের পরে উনি যদি মনে করেন, উনার জানাটাই ঠিক, তাতেও আমার কোনো সমস্যা নেই।

ইনফ্যাক্ট, মিডিয়া আমাদেরকে কি শেখায় কৌস্তভদার মন্তব্যগুলোতে তা পরিষ্কার হওয়ার কথা। এটা অবশ্যই এই পোস্টের মেরিটকে হাতেকলমে জাস্টিফাই করে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফাহিম হাসান এর ছবি

কিন্তু বলাইদা, কোনটা "বেশিরভাগ" আর কোনটা "অতি সরলীকরণ" এই সীমারেখা টানাই তো মুশকিল। আমি নিজেও যখন খবর পড়ি, দেখি, তখন মুসলিম সন্ত্রাসিদের কর্মকান্ডই তো চোখে পড়ে বেশি। সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে যে কোন জেনারালাইজেশানই তো ভুল। শতকরার হিসেবেও যে ফাঁকি থাকে তা তো আপনিও জানেন। এখন এই প্রেক্ষিতে যদি মন্তব্য করি, "সাম্প্রতিক সময়ের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডগুলো্র বেশিভাগই ইসলাম কেন্দ্রিক " তবে কি তা ভুল হবে?

আয়াত বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না কারণ আমি নিজে এ সম্পর্কে তেমন জানি না।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইসলামকে প্রথমে কেন্দ্র হিসেবে ধরে নিলে ব্রাইভিকের ম্যাসাকারকেও ইসলামকেন্দ্রিক দেখানো যাবে। মুসলমানরা ইউরোপে এসে ইউরোপের সবকিছু গোল্লায় দিচ্ছে বলেই ব্রাইভিক হত্যাকান্ডটি করেছে! সুতরাং এর দায় মুসলমানদের->মুহাম্মাদের->কোরআনের->আল্লাহর!

আমাদের চোখের ওপরে যে টিভিস্ক্রিনটা আছে, ওটা মিডিয়ার দান। কিন্তু ওই টিভি স্ক্রিনের আশেপাশেও চোখ বুলানো দরকার, মাথা খাটানো দরকার। তাহলে চোখে আরেকটু বড়চিত্র ধরা পড়বে।

জেনারেলাইজেশন অবাস্তব জিনিস না, জেনারেলাইজেশনও বাস্তবতা এবং সত্য হতে পারে। যেমন, মানুষের ২টা হাত আছে - এটা সত্য জেনারেলাইজেশন। ইভেন অনেকের ২ টা হাত না থাকলেও। কারণ, তারা ব্যতিক্রম। কিন্তু মানুষের ২১টা আঙুল আছে, এটা ভুল জেনারেলাইজেশন। কারণ, ২১টা আঙুল থাকাই ব্যতিক্রম। 'মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী' এই জেনারেলাইজেশন ভুল, না ঠিক এটা এখন আপনি নিজেই বিচার করতে পারবেন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

ফাহিম ভাই,

মিডিয়ার ব্যাপারে আমি সামান্য চুজি। আমি ফাক্‌স নিউজ দেখব না, বা তাদের সমগোত্রীয়, piss টিভিদের। কিন্তু তা ছাড়া একাধিক দেশের একাধিক মিডিয়া ফলো করি। কিন্তু মুশকিল হল, ওই রিপাবলিকানরা যা বলে, তা অনুযায়ী উদারপন্থী হওয়াও একটা বায়াস, আমেরিকার প্রগতিশীলেরা তাদের মতে 'লিবারেল বায়াস'-এ আক্রান্ত... সেইরকম মনোভাবকে যদি কেউ বায়াস বলে মনে করে তাহলে আমাকেও বায়াসড ঠাওরানো যেতে পারে বই কি।

আর আমি শুধু মিডিয়ার শেখানো বুলিই বলি না। এটা কেউ কেউ ইঙ্গিত করছেন দেখলাম। তাহলে আর বই-রেফারেন্স ঘেঁটে আমার সাঁইবাবা বা জাতকের উপর লেখাগুলো আসত না।

ইসলামোফোবিক মিডিয়ায় যে জেনারেলাইজেশনটা করা হয়, যে মুসলিম মানেই টেররিস্ট, সেটায় আপত্তি আমিও জানিয়েছি। সেটার দায় কেউ আমার ঘাড়ে দিলে ভুল করছেন।

আমার যে স্টেটমেন্টটা নিয়ে এত জনে এত কথা বলছেন, যে ধর্মসঞ্জাত সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামি জঙ্গিরাই বর্তমান সমাজে এগিয়ে, সেটা একটা বাস্তব-তথ্য-নির্ভর স্টেটমেন্ট। সেটা জেনারেলাইজেশন নয়, এটা বোঝার মত বিবেচনা লোকেদের আছে আশা করি।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধর্মসঞ্জাত কারণে প্রত্যক্ষভাবে অন্যের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে মনে হয় ইসলামী মৌলবাদীরাই অগ্রগণ্য

বর্তমান যুগের হিসেব করলে আমারও তাই মনে হয়।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

@ কৌস্তুভ, আমার মনে হয় ইসলাম সবচেয়ে নতুন ধর্ম হিসেবে বর্তমানে তার "জিহাদ-কাল" পার করছে। যেটা একসময় খ্রিস্ট ধর্ম ক্রসেডের নামে করেছিল। একটা সময় ক্যাথলিক-চার্চ বহু অপকর্ম করেছে। এখনো গে-ইস্যু, নারী- ইস্যু ইত্যাদি বিষয়ে ভ্যাটিকান অনেক পিছিয়ে আছে। তবে ভ্যাটিকানের নির্দেশনার উপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক কমে এসেছে ধীরে ধীরে, ধর্মের নামে মানুষ হত্যাও কমে এসেছে। ইসলামেও নিশ্চই কমে আসবে, সময় দিতে হবে। একসময় চার্চের কোনরকম সমালোচনা করা মানেই মৃত্যু বা আটক হতে হত, কিন্তু এখন চার্চ অনেক সহনশীল।

আবার একই ভাবে হিন্দু ধর্মের চরমপন্থীরা একটা সময় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের উপর সাংঘাতিক নির্যাতন চালিয়েছিল। এখন ইসলাম যেই পর্যায়টা পার করছে, সেইসময় হিন্দু-ধর্ম তার "জিহাদ-কাল" পার করছিল।

প্রত্যেকটা ধর্মই এই "চরমপন্থা" কাল পার করে। ইসলাম সবচেয়ে নবীন ধর্ম বলে আমরা সরাসরি চোখে দেখছি, বাকিগুলো দেখিনি বলে মনে হচ্ছে হয়তো ইসলামই সবচেয়ে ক্ষতি করছে। কিন্তু, আমার মনে হয় প্রত্যেকটা ধর্মই মানুষের বহু ক্ষতি করেছে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিকই বলেছেন। তবে কথা হল, বর্তমান কালে, মানে আমরা যে সময়ের মধ্যে বাস করছি তাতে, ক্ষতিকর চরমপন্থায় ইসলামই সবচেয়ে এগিয়ে? সেই পরিপ্রেক্ষিত থেকেই ওই মন্তব্যটা...

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

কৌস্তুভ ভাইয়ের কথার বিপরীতে আমারও ঠিক এমনটা মনে হয়েছিল, তবে প্রয়োজনীয় উপাত্ত মাথায় বা হাতের কাছে নেই বলে গুছিয়ে লিখতে পারিনি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তবে, ধর্মসঞ্জাত কারণে প্রত্যক্ষভাবে অন্যের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে মনে হয় ইসলামী মৌলবাদীরাই অগ্রগণ্য

এই ধরনের বক্তব্য পোস্টের আলোচনাকে নষ্ট করবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

কেন?

আমার পোস্ট পড়ে মনে হয়েছে লেখক বলছেন, ইসলামোফোবিয়া সম্পূর্ণই মিডিয়ার সৃষ্টি। তাতে আমার কিছু দ্বিমত থাকায় আমি ওই মন্তব্যটা করেছি। কারণ আমার মনে হয় এর পেছনে কট্টরপন্থী মুসলিমদেরও কিছু অবদান আছে। তা সেই পথে আলোচনা গেলে সেটা পোস্টের আলোচনাকে নষ্ট করবে কেন?

দ্বিমত করার কারণটা আরো একটু ব্যাখ্যা করি। ইসলামী অভিবাসীদের মত হিন্দু বা অন্যান্য অভিবাসীরাও তো বসতি করে অনেক দেশে হাজারে হাজারে। কিন্তু তাদের কজন এরকম দাবী করে, যে আর কিছু বছরের মধ্যে সেই দেশকে ইসলামী শরিয়া-বাধ্য রাষ্ট্র করে তোলা হবে? লণ্ডনের অংশকে শরিয়া-কন্ট্রোলড জোন ঘোষণা করার মত কাজ আর কয়টা ধর্মের লোক করে? এরকম আচরণ দেখলে মিডিয়ার প্রয়োজন নেই, বাসিন্দারা নিজ বিবেচনাতেই ইসলামোফোবিক হয়ে উঠবে...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইসলামোফোবিয়া অবশ্যই মিডিয়ার সৃষ্টি। কারণ, মিডিয়া প্রকৃত ইসলামে কি আছে, সেটা হাইলাইট না করে কোনোভাবে ইসলামের সাথে রিলেট করতে পারলেই মুসলিম টেরোরিস্ট নাম দেয়। একজন টেরোরিস্টের পরিচয় সে টেরোরিস্ট, ধর্ম (বা ধর্মের বিকৃতরূপ) তার অনেকগুলো হাতিয়ারের মধ্যে একটি মাত্র, একমাত্র নয়। ইউরোপীয়ানদের কলোনিজমের আগ্রাসন আমার মতে অন্য দেশের প্রতি সবচেয়ে বড়ো আগ্রাসন। ইরাক, ভিয়েতনাম, আফ্রিকা আর বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে ইউরোপীয়ান-আমেরিকানদের আগ্রাসনের তুলনায় লন্ডনের শরিয়া-কন্ট্রোলড জোন ঘোষণা এখনো মায়ের পেটে থাকা শিশু। ইউরোপীয়ানদের এই আগ্রাসনের মধ্যে ধর্মকেও ব্যবহার করা হয়েছে পুরোদমেই। এই আগ্রাসন, এই সন্ত্রাসকে ধর্মের সাথে রিলেট করা হয় না কেন?

এই পোস্টের আলোচনা নষ্ট হবে। কারণ, আপনি ইসলামী মৌলবাদীদেরকেই আকামে 'অগ্রগণ্য' হিসেবে রায় দিচ্ছেন প্রকৃতপ্রস্তাবে তেমন কোনো তথ্য বিচার ছাড়াই। এতে করে অন্য কেউ খ্রিস্ট মৌলবাদীদেরকে 'অগ্রগণ্য' হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করবে। দুই পার্টিই যে হারামজাদা এই ফোকাস থেকে লোকজন সরে আসবে। আমার ধারণা ছিলো, এই সহজ জিনিসটা বুঝবেন।

পোস্টে মিডিয়ার একমুখী আচরণের সমালোচনা এসেছে। তারা সন্ত্রাসকে সন্ত্রাস হিসেবে না দেখে নিজেদের সুবিধামতো ধর্মের সাথে জেনারেলাইজ করার সমালোচনা এসেছে। আপনার মন্তব্যের ওই লাইনটাও এই সমালোচিত মিডিয়ার সুরেই কথা বলেছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

আচ্ছা, খুব বেশি লোকজন যখন আমার কথায় পথভ্রষ্ট হয়নি তখন আকামের কথা আরেকটু বাড়াই। ইচ্ছা না হলে উত্তর দেবেন না।

একজন টেরোরিস্ট একজন টেরোরিস্টই, কিন্তু ধর্ম যখন তার মূল মোটিভেশন (এবং এর জন্য ধর্মকে বিকৃত করার দরকারও পড়ে না, সব ধর্মেই উস্কানিমূলক কথাবার্তা যথেষ্টই আছে), তখন তাকে তো সেই ধর্মের টেররিস্টই বলতে হবে।
মানলাম, ধর্মের বইতে ঠিক কী আছে, তা তুলে তুলে মিডিয়া রেফারেন্স দেয় না। কিন্তু দিলে যে ইতরবিশেষ কিছু হত, তা তো নয়, 'আমাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম' ইত্যাদি আবজাব কথা মডারেট অ্যাপোলজিস্টরা বললেও ধর্মগ্রন্থগুলোতেই তো একে মারো ওকে মারো ইত্যাদি কথা লেখা আছে, যে মারছে সে সেগুলো পড়েই অনুপ্রানিত হয়ে করছে।

ইউরোপীয়ান কলোনিয়াল আগ্রাসন করে খ্রীষ্টধর্ম প্রচার, ইনকুইজিশন, এগুলো তো অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু বর্তমানে তো সেগুলো নেই আর (সৌভাগ্যের কথা)।

মিডিয়া কি ভিয়েতনাম বা ইরাকে আগ্রাসনের নিন্দা করেনি? পুরোদমেই করেছে। সেকুলার চিনের জবরদস্তিরও নিন্দা করেছে। কিন্তু ইরাকে আগ্রাসন তো আমেরিকা ঠিক খ্রীষ্টান ধর্মপ্রসারের জন্য করেনি, যে সেই যোগসূত্র দেখাবে। যদি আপনি বলেন, যে এমন মোটিভেশনই প্রধান ছিল আমেরিকার, তবে অনুরোধ, কিছু রেফারেন্স দিন, পড়ে জানি।

দুই পার্টিই যে হারামজাদা এই সরল সত্যটা থেকে যদি লোকজন সরে আসে, তবে তারাও সমান অবুঝ। কাউকে তেমন দেখলাম না, এটাই আশার কথা।

মিডিয়ার একমুখী আচরণের সমালোচনায় আমি সহমত। কিন্তু তাদের ঘাড়েই ১০০% দোষ চাপানোয় আমি সহমত নই বলেই মন্তব্যের ওই অংশটা, এতে যদি সুরের কিছুটা মিল পান তাহলে বিস্মিত হবার কিছু নেই। বিরক্তি জানাতেই পারেন যদি পেছনে কোনো যুক্তি না থাকে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একজন টেরোরিস্ট একজন টেরোরিস্টই, কিন্তু ধর্ম যখন তার মূল মোটিভেশন (এবং এর জন্য ধর্মকে বিকৃত করার দরকারও পড়ে না, সব ধর্মেই উস্কানিমূলক কথাবার্তা যথেষ্টই আছে), তখন তাকে তো সেই ধর্মের টেররিস্টই বলতে হবে।

এক এবং একমাত্র শব্দদুটি আলাদা এবং তাদের অর্থও আলাদা। ধর্ম মূল মোটিভেশন?? সবসময় না। মোটিভেশন তো দূরের কথা, ধর্ম সবসময় মূল 'প্রদর্শিত কারণও' না।

মানলাম, ধর্মের বইতে ঠিক কী আছে, তা তুলে তুলে মিডিয়া রেফারেন্স দেয় না। কিন্তু দিলে যে ইতরবিশেষ কিছু হত, তা তো নয়, 'আমাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম' ইত্যাদি আবজাব কথা মডারেট অ্যাপোলজিস্টরা বললেও ধর্মগ্রন্থগুলোতেই তো একে মারো ওকে মারো ইত্যাদি কথা লেখা আছে, যে মারছে সে সেগুলো পড়েই অনুপ্রানিত হয়ে করছে।

এই অংশের প্রথম লাইনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মের বইতে ঠিক কি আছে, তাতে শান্তির কথা কতোটা আর অশান্তির কথা কতোটা, শান্তিকামী ধার্মিকের বিপরীতে অশান্তিকামী ধার্মিক কতোজন এই জিনিসগুলো মিডিয়ায় এলে তখন মানুষের ওপর তার প্রভাব অন্যরকম হতো। যেমন, সারা বিশ্বে কতো কোটি মুসলমান আছে আর তার কতো % ধর্মকে টেরোরিজমের হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করে, এই পরিসংখ্যানটা কেমন হবে বলে আপনার মনে হয়? ১০০%? ৫০%? ১০%? ১%? সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা শান্তিকামী এই হিসাবটা মিডিয়ায় এলে ওই ক% এর জন্য মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট - এই ইমপ্রেশন কি সৃষ্টি হতো?

ধর্মগ্রন্থগুলোতে একে মারো, ওকে ধরোর কথা আছে কিনা, আমি সব ধর্ম সম্পর্কে জানি না, সব ধর্মকে ডিফেন্ড করার ইচ্ছা নাই। কিন্তু কোরআনে কোথায় অকারণে গায়ে পড়ে অন্যকে ধরো মারো করতে বলা হয়েছে, কয়েকটা রেফারেন্স দিবেন প্লিজ। এই পোস্টে না হলে আপনি কোরআনে অন্যকে অকারণে মারোধরোর আকাম নিয়ে স্পেসিফিক আয়াতসহ পোস্ট দেন, আলোচনা করি।

ইউরোপীয়ান কলোনিয়াল আগ্রাসন করে খ্রীষ্টধর্ম প্রচার, ইনকুইজিশন, এগুলো তো অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু বর্তমানে তো সেগুলো নেই আর (সৌভাগ্যের কথা)।

কোন স্কেলে নিন্দনীয়? লন্ডনে শরিয়াহ জোনের চেয়ে বেশি, না কম? কলোনিয়াল আগ্রাসন কি পৃথিবী থেকে গায়েব হয়ে গেছে? ভারতবর্ষের সৌভাগ্যের সাথে আফ্রিকার দেশগুলো কিংবা ফকল্যান্ডের যোগ হতে এখনো অনেক দিন লাগবে।

মিডিয়া কি ভিয়েতনাম বা ইরাকে আগ্রাসনের নিন্দা করেনি? পুরোদমেই করেছে। সেকুলার চিনের জবরদস্তিরও নিন্দা করেছে। কিন্তু ইরাকে আগ্রাসন তো আমেরিকা ঠিক খ্রীষ্টান ধর্মপ্রসারের জন্য করেনি, যে সেই যোগসূত্র দেখাবে। যদি আপনি বলেন, যে এমন মোটিভেশনই প্রধান ছিল আমেরিকার, তবে অনুরোধ, কিছু রেফারেন্স দিন, পড়ে জানি।

মিডিয়া ইরাক আগ্রাসনের নিন্দা করেছে অবুঝ ছেলে আকাম করার পরে মাথায় হাত বুলিয়ে 'দুষ্টু' বলার মতো করে, হলিউডি সিনেমায় সবচেয়ে এক্সপার্ট অ্যাকশন হিরোরা এখনও ভিয়েতনামফেরত। যাউকগা, তারা কোন লেভেলে 'নিন্দা' করেছে, সেটা বাদ দিলাম।

রেফারেন্স তো আমি দিবোনা, রেফারেন্স দিবেন আপনি। আমি তো বলছি, সন্ত্রাস != ধর্মপ্রচার, অন্যদিকে আপনি ধর্মের ঘাড়ে সন্ত্রাসকে চাপাচ্ছেন। আমেরিকা যেমন ভিয়েতনামে ধর্মপ্রসারের জন্য আক্রমণ করেনি, তেমনভাবে লাদেনও আমেরিকায় ইসলাম প্রসারের জন্য আক্রমণ করে নি। টুইন টাওয়ার ধ্বংস করলে মানুষ শ্রদ্ধায় হোক আর ভয়ে হোক, দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করবে, লাদেনবাহিনীর উদ্দেশ্য কি এটা ছিলো?

[আলোচনা নষ্টের ব্যাপারটা আবার বলি। এভাবে যদি মুসলমানরাই দুনিয়ায় সন্ত্রাসে অগ্রগণ্য -এরকম স্টেটমেন্টের ওপর বেইজ করে আপনার সাথে পালটা কথা চলতে থাকে, তাহলে পরোক্ষে আপনি ইউরোপ-আমেরিকার আগ্রাসনের পক্ষে যায়, এমন কথা বলতে শুরু করবেন, আমিও লাদেনবাহিনীর গুণকীর্তন করা শুরু করবো খুব সতর্ক না থাকলে।]

বিরক্তি জানাতেই পারেন যদি পেছনে কোনো যুক্তি না থাকে।

বুঝি নাই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

সারা বিশ্বে কতো কোটি মুসলমান আছে আর তার কতো % ধর্মকে টেরোরিজমের হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করে, এই পরিসংখ্যানটা কেমন হবে বলে আপনার মনে হয়? ১০০%? ৫০%? ১০%? ১%? সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা শান্তিকামী এই হিসাবটা মিডিয়ায় এলে ওই ক% এর জন্য মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট - এই ইমপ্রেশন কি সৃষ্টি হতো?

আপনি হয়ত আমার পোস্টটা পড়েন নি, আমি এক জায়গায় পরিসংখ্যানের ঘাপলা সংক্রান্ত আলোচনায় বলেছিলাম, "যদি সব উগ্রপন্থীই মুসলিম হয়ও বা, বেশিরভাগ মুসলিমই কিন্তু টেররিস্ট নয়।" অতএব আপনার বক্তব্যের ওই অংশের সাথে দ্বিমত দেখি না।

এইক্ষেত্রে আমার বক্তব্য, ওই বাকি ৯৯%-ই ধরলাম, তাদের কী মনোভাব? উপরে মনমাঝিকে যা বললাম, "ইরাকে মার্কিন হানার পর তাদের বিরুদ্ধে (পতাকা-টতাকা পুড়িয়ে) অনেক মিছিল হয়েছে শুনেছি বাংলাদেশে, ভারতে, বহু লোকে তাদের সন্তানের নাম সাদ্দাম রেখেছিল বলে শোনা যায়। লণ্ডনে আণ্ডারগ্রাউণ্ড বিস্ফোরণের বা টুইন টাওয়ার ঘটনার পর কয়জন লোক ইসলামী মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে মিছিল বের করেছিল? 'মডারেট'দের নিয়ে এইটা একটা সমস্যা..."
সেই তুলনায়, আমেরিকা ভিয়েতনাম আক্রমণের পর কিন্তু সে দেশেই প্রচুর প্রতিবাদ হয়েছিল...

পরোক্ষে আপনি ইউরোপ-আমেরিকার আগ্রাসনের পক্ষে যায়, এমন কথা বলতে শুরু করবেন

তা আমি কখনই বলব না, বলতে চাই না। যদি আপনার তেমন মনে হয়, নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমার উদ্দেশ্য অমন কিছু নয়। আপনার যদি ০.০০১%-ও সন্দেহ থাকে যে আমি দারা সিং বা জর্জ বুশের পক্ষে, তবে তা মুছে ফেলতে পারেন।

ধর্মের বইতে ঠিক কি আছে, তাতে শান্তির কথা কতোটা আর অশান্তির কথা কতোটা,

এ বিষয়ে এখানে এই বলা পেলামঃ

বিল ওয়ার্নার নামের এক কোরান-গবেষক হিসেব করে দেখেছেন, অমুসলিমদের উদ্দেশে রচিত ভালো আয়াতের সংখ্যা কোরানে ২৪৫টি। অর্থাৎ কোরানের ২.৬ শতাংশ জুড়ে। নেহাত কম নয়, কী বলেন?

কিন্তু কথা আছে। ২৪৫টি ভালো আয়াতের মধ্যে মাত্র ৭টি বাদে প্রতিটির বিপরীতার্থক অথাৎ অমুসলিমদের প্রতি অসহিষ্ণু বক্তব্যের আয়াত আছে সেই একই সুরায়।

এর অর্থ, প্লাস-মাইনাসে কাটাকুটি হবার পরেও ৭টি ভালো আয়াত থেকে যাচ্ছে? না, তা নয়। সেগুলো নিউট্রালাইজ করতেও কাউন্টার-আয়াত আছে কোরানেই। পরবর্তীতে।

আরও মজার কথা হচ্ছে, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রতি সদাচরণের আহ্বান কোরানে আছে বটে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা উৎকট শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রতি সহিষ্ণু আচরণ করা হবে, তবে তাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে, তাদের ধর্মগ্রন্থ বিকৃত এবং কোরানই একমাত্র সত্য ধর্মগ্রন্থ এবং মুহম্মদ হচ্ছেন ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরও নবী। অদ্ভুত কথা! এসব স্বীকার করে নিলে তো ইহুদি-খ্রিষ্টানরা তাদের নিজস্ব ধর্মচ্যুত হয়ে মুসলমান হয়ে পড়ে!

এবার দেখা যাক, অমুসলিমদের প্রতি অসহিষ্ণু ভাবধারার আয়াতের সংখ্যা কোরানে ক'টি। সাকুল্যে ৫২৭টি। অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহ্বানসম্বলিত আয়াতের সংখ্যা "মাত্র" ১০৯টি।

কোরআনে কোথায় অকারণে গায়ে পড়ে অন্যকে ধরো মারো করতে বলা হয়েছে, কয়েকটা রেফারেন্স দিবেন প্লিজ। এই পোস্টে না হলে আপনি কোরআনে অন্যকে অকারণে মারোধরোর আকাম নিয়ে স্পেসিফিক আয়াতসহ পোস্ট দেন, আলোচনা করি।

আপনার এই প্রশ্ন শুনে আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি, আপনি অভিজ্ঞ লোক, সত্যিই জানেন না কোরানে অন্যকে মারধোরের আয়াত কিছু আছে কি নেই?
ওখান থেকেই দেখলাম, বিধর্মী/অবিশ্বাসীদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে বলা রয়েছে,

And slay them wherever ye find them, and drive them out of the places whence they drove you out, for persecution is worse than slaughter. And fight not with them at the Inviolable Place of Worship until they first attack you there, but if they attack you (there) then slay them. Such is the reward of disbelievers.

And slay them wherever ye find them... Such is the reward of disbelievers. !!! অবশ্য এরপর কেউ বলতেই পারে, আউট অফ কন্টেক্সট, বিকৃত করা হয়েছে, ভুল অর্থ দেখানো হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি...

অথবা এইটা:

I will instil terror into the hearts of the Unbelievers: smite ye above their necks and smite all their finger-tips off them.

ধর্ম মূল মোটিভেশন?? সবসময় না। মোটিভেশন তো দূরের কথা, ধর্ম সবসময় মূল 'প্রদর্শিত কারণও' না।

রেফারেন্স তো আমি দিবোনা, রেফারেন্স দিবেন আপনি। আমি তো বলছি, সন্ত্রাস != ধর্মপ্রচার, অন্যদিকে আপনি ধর্মের ঘাড়ে সন্ত্রাসকে চাপাচ্ছেন।

রেফারেন্স, যে ধর্ম মূল মোটিভেশন মাঝেসাঝেই? বেশ, দিচ্ছি - হিন্দু গুণ্ডা দারা সিং দ্বারা খ্রীষ্টান ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইনসকে সপরিবার পুড়িয়ে মারা। ইসলাম ত্যাগ করে ক্রিশ্চান হওয়ায় একজনকে ওই উপরের আয়াতটা উল্লেখ করে খুন করা হয়েছে। ভারতে ইসলামি-ছাত্র-জঙ্গিসংগঠন অর্থ যোগাড় করতে ব্যাঙ্কে ডাকাতি করেছে। "সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার ‘অপরাধে’ ইউক্রেনে এক মুসলিম তরুণীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা বলেছে, ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী তার শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে।" আরো অগুন্তি...

আমেরিকা যেমন ভিয়েতনামে ধর্মপ্রসারের জন্য আক্রমণ করেনি, তেমনভাবে লাদেনও আমেরিকায় ইসলাম প্রসারের জন্য আক্রমণ করে নি। টুইন টাওয়ার ধ্বংস করলে মানুষ শ্রদ্ধায় হোক আর ভয়ে হোক, দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করবে, লাদেনবাহিনীর উদ্দেশ্য কি এটা ছিলো?

আচ্ছা, যদি এভাবে বলতে বলেন, যে ইসলামী মনোভাব থাকলেও সরাসরি ধর্মপ্রচার করার উদ্দেশ্যে লাদেনের ওই হামলাটা ছিল না, তাহলে মেনে নিয়ে বলছি, আমেরিকা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে না-ই করে থাকুক, ওদের ইরাকে, আফগানিস্তানে হানার পিছনে যে ধর্ম একটা বড় না-ই হোক, মাঝারি মোটিভেশন ছিল, তা রেফারেন্স দিয়ে দেখান। আমি রেফারেন্স তো অনেকগুলোই দিলাম, আরো দিচ্ছি, লাদেনের একটা ইন্টারভিউ থেকে, টুইন টাওয়ার হামলার আগে, যাতে সে বলছে,

I am one of the servants of Allah. We do our duty of fighting for the sake of the religion of Allah. It is also our duty to send a call to all the people of the world to enjoy this great light and to embrace Islam and experience the happiness in Islam. Our primary mission is nothing but the furthering of this religion.

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কুরআনের সন্ত্রাসী (?) আয়াতগুলো নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট দেন, সেখানে আলোচনা করি। তবে আয়াতগুলোর আগেপরে একটু পড়ে নিয়েন। যেমন, যেখানেই পাও হত্যা করোর আগের আয়াতেই আছে, " Fight in the way of Allah against those who fight against you, but begin not hostilities. Lo! Allah loveth not aggressors.[২:১৯০]" ওই আয়াতেরও পুরোটা পড়েন। প্রথমে আক্রমণ করতে এই আয়াতেও নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ আগে আক্রমণ করবে, আর তাকে বসে বসে চুম্মা দেয়া হবে - এটা আশা করা ঠিক না। কেউ আপনাকে হত্যা করতে আক্রমণ করলে, তারে হত্যা করার সমস্যা কি? নাকি নিজে ফিসাবিলিল্লাহ নিহত হওয়ার নির্দেশ না থাকাই কোরআনের দোষ?

শরীয়াহ আইন != কুরআন। আল্লাহ মানুষের তৈরি শরীয়াহ আইনের দায় নেন না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

কোরানের সন্ত্রাসী আয়াত নিয়ে পোস্ট দেবার আমার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি যে ধরনের লেখা লিখি, তা বদলে ওই লাইনে যেতে চাই না। সচলের অনেকেও ওইরকম পোস্ট আসাকে অপছন্দ করবেন।
আর যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা (সচরাচর) যাই দেখানো হোক না কেন, বিশ্বাস থেকে সরবেন না। এই নিয়ে নেটে বেশ কিছু তথ্যসূত্র আছে, যাঁরা আগ্রহী তাঁরা দেখে নিতেই পারবেন, তারপরেও প্রত্যয় না হলে তো আমার পোস্ট দিয়েও হবে না।

----

আগের আয়াতে কি লেখা আছে, তার জন্য এটার বক্তব্যটা বদলে যাবে কেন? একটা ভালো কথা আর একটা খারাপ কথা থাকলে তো খারাপ কথা নিউট্রালাইজ হয়ে যায় না। এদুটোয় তো কোথাও আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করতে নিষেধ করা হয় নি, বরং বলেছে যে যেখানেই পাও সেখানেই মারো। কেবল বলেছে যে মসজিদে আগে মারপিট শুরু করো না।

জাতকে একটা গল্পে একজন মহিলাকে ভালো বলে উপস্থাপিত হলেই, অন্য গল্পে যে 'রমণীরা কামপরায়ণা, অসতী, হেয়া ও নীচমনা' বলে জেনারেল স্টেটমেন্ট করা হয়েছে, তার দায় এড়াতে পারে না। আর জাতকের দায় 'গল্প' বলে বৌদ্ধধর্মও পাশ কাটিয়ে যেতে পারে না।

---

যারা শরীয়া আইন তৈরি করেছে তারা কিন্তু 'যথার্থ ইসলামি' হওয়ার জন্যই তা তৈরি বা অনুসরণ করে, এবং করতে বাধ্য করে। আর ইসলাম তো কোরানেই শুরু আর শেষ নয়, হাদিস-ইত্যাদি আনুষঙ্গিক সব বই, এবং তার অনুসারী সব মানুষদের মিলিত আইডিওলজি দিয়েই ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ইমেজ তৈরি।

যেমন নিজেকে খাঁটি হিন্দুধর্মের বাহন বলে ঘোষিত দারা সিং-এর কাজকর্মের দায় হিন্দুধর্ম এড়াতে পারে না, তাতে ঠিক খ্রীষ্টানদের পুড়িয়ে মারার সম্পর্কে কিছু বলা না থাকলেও।
(অপরাধ নেবেন না, একটা ব্যাপারে অবাক লাগছে, বলি। আপনিও সাধারণভাবে সব ধর্মেরই বিরোধী বলে মনে হয়েছিল। আমিও হিন্দু বৌদ্ধ ইত্যাদিদের সাধারণভাবে সমালোচনা করছি। কিন্তু আপনি এখন ইসলামকে খানিক ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে।)

---

একটা কথা, আপনি আগেও বললেন, সন্ত্রাস != ধর্মপ্রচার, এবার বলছেন, শরীয়াহ আইন != কুরআন। সে মানছি, কিন্তু != চিহ্ন দিয়েই পুরো সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায় না। আমি বলছি, সন্ত্রাসের একটা বড় সাবসেটের মোটিভেশন হচ্ছে ধর্ম, শরীয়ার একটা অংশের উৎস হচ্ছে কোরান। আপনার ভাষায় বলতে গেলে,
সন্ত্রাস ∩ ধর্ম != 0, শরীয়া ∩ কোরান != 0।

---

আপনি রেফারেন্স চাইলেন, আমি দিলাম। আপনি কিন্তু এখনও রেফারেন্স দিলেন না।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আগের আয়াতে কি লেখা আছে, তার জন্য এটার বক্তব্যটা বদলে যাবে কেন? একটা ভালো কথা আর একটা খারাপ কথা থাকলে তো খারাপ কথা নিউট্রালাইজ হয়ে যায় না। এদুটোয় তো কোথাও আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করতে নিষেধ করা হয় নি, বরং বলেছে যে যেখানেই পাও সেখানেই মারো। কেবল বলেছে যে মসজিদে আগে মারপিট শুরু করো না।

বক্তব্য বদলাচ্ছে না, বক্তব্যকে বদলানো হয়েছে আপনার ওই ডট ডটের মাঝের অংশটা বাদ দেয়ায়। ২:১৯০ যদি আগ বাড়িয়ে ঝামেলা করাকে নিষেধ না করা হয়, "but begin not hostilities. Lo! Allah loveth not aggressors." অর্থ যদি অন্যকিছু হয়, তাইলে আমার কিছু বলার নাই। আপনার ইন্টারপ্রেটেশন আপনার।

আপনি রেফারেন্স চাইলেন, আমি দিলাম। আপনি কিন্তু এখনও রেফারেন্স দিলেন না।

কারণ, আমি সন্ত্রাসের জন্য কোনো ধর্মকে দায়ী করিনি। তাই ওটার রেফারেন্সও নাই (আগেই বলেছি)। ওটার রেফারেন্স থাকলে আমার বক্তব্যও আপনার মতো হতো, ধর্মের ওপরে দোষ চাপাতাম।

লাদেনের বক্তব্য আর ইসলামের বক্তব্য এক না। ইসলামের দাওয়াত দেয়ার মধ্যে জোরজবরদস্তিই নাই, আমেরিকার টুইন-টাওয়ার ধ্বংস করে ইসলামের দাওয়াত দিতে আল্লাহ কাউকে বলে নাই। আপনি যদি এখন স্টেটমেন্ট দেন যে, "আমি কৌস্তভ অধিকারী এক্স ধর্মের প্রসারের জন্য হিরোশিমায় বোমা ফেললাম", তাইলে আপনার আকামের দায় এক্স ধর্মের ওপরে পড়ে না, যদি এক্স ধর্ম হিরোশিমায় বোমা ফেলতে না বলে। লাদেন ইসলাম প্রসারের জন্য আমেরিকায় বোমা ফেলেছে কিনা, এটা সম্পর্কে আপনার নিজস্ব মত চেয়েছিলাম। আরেকবার ভেবে দেখতে পারেন, আমেরিকায় বোমা ফেলে হত্যা করে ইসলাম প্রসার হয় কিনা।

আর যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা (সচরাচর) যাই দেখানো হোক না কেন, বিশ্বাস থেকে সরবেন না।

আমি বিশ্বাসী। সুতরাং আমার সাথে এই বিষয়ে আলোচনায় আপনার এই বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে মজা পাবেন না।

(অপরাধ নেবেন না, একটা ব্যাপারে অবাক লাগছে, বলি। আপনিও সাধারণভাবে সব ধর্মেরই বিরোধী বলে মনে হয়েছিল। আমিও হিন্দু বৌদ্ধ ইত্যাদিদের সাধারণভাবে সমালোচনা করছি। কিন্তু আপনি এখন ইসলামকে খানিক ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছেন বলে মনে হচ্ছে।)

তার কারণও বলেছি। অন্য ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান অনেক কম। ইসলাম সম্পর্কে যতোটা জানি, আপনার উক্তির (যা নির্দিষ্টভাবে ইসলাম-সম্পর্কিত) বিপরীত চিত্রই আমার জানায় পাই বলে এই 'ডিফেন্স'।

এছাড়া দেখবেন, আমি অন্যধর্ম সম্পর্কে বা ধর্মে অবিশ্বাসীদের সম্পর্কেও কোনো খারাপ কথা বলছি না। আপনি বারবার ঠেলার পরেও খ্রিস্টান ধর্মের ওপরে দায় চাপানো রেফারেন্স দিচ্ছি না। সুতরাং ট্যাগিংয়ের নেক্সট পর্যায়ে আমাকেও লাদেনবাহিনীতে ফেলা একটু কঠিন হবে। চোখ টিপি

শরীয়ার একটা অংশের উৎস হচ্ছে কোরান।

নিচে এক মন্তব্যে দেখেন, কোরআনে সংযোজন-বিয়োজন নাই। ইসলামী বিশ্বাসে কোরআন আল্লাহর কথা, আল্লাহর উপদেশ। মুসলমান হতে হলে কোরআনে বিশ্বাস রাখতে হবে, শরীয়াহর বইয়ে বিশ্বাস না রাখলে মুসলমানিত্ব চলে যাবে না। এই শরীয়াহর একটা অংশ (সম্ভবত ২/৩% বা তারও কম এবং পরোক্ষভাবে রেফার করা) কোরআন থেকে নেয়া হলেই কি শরীয়াহর দায় আল্লাহর ওপরে চাপাবো?

----------------
ইসলামকে অপব্যবহারকারী আর ইসলামের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে অনেক মিল, তাদের রেফারেন্সেও মিল। ইসলামের অপব্যবহারকারীরা বিকৃত অর্থ করে নিজেদের কথা ঢুকিয়ে ইসলামের নামে চালায়, ইসলামের বিরোধিতাকারীরাও ইসলামের ওই বিকৃতরূপকে ইসলাম বলে খপ করে ধরে। "যেখানেই পাও, হত্যা করো"র আয়াত প্রথমে দিয়েছিলো লিজেন্ডারী ব্লগার আস্তমেয়ে, সচলে মনে হয় এই প্রথম পেলাম। প্রথম ক্ষেত্রে, এটা দেখিয়ে অমুসলিমদের হত্যা করার ছাড়পত্র নেয়া হয়, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এই 'ছাড়পত্র = ইসলাম' ইকুয়েশন দেখানো হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দুর্দান্ত এর ছবি

কোরআনে সংযোজন-বিয়োজন নাই।

বস এইটা কি আপনার উপসংহার?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বস, এইটার রেফারেন্স জনাব সুমন_তুরহানের মন্তব্য।

আমার উপসংহার: কুরআন != শরীয়াহ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

আমি যখন কোট করেছি তখন পুরোটাই করেছি। তারপর ওই অংশটা হাইলাইট করেছি কারণ আয়াতের মূল অ্যাগ্রেসিভ বক্তব্যটা ওই অংশটাই প্রতিভাত করে। সরাসরি কোট করেছি, সরাসরিই অর্থ করেছি। তবে অসুবিধাজনক অংশগুলো কোট করা হলেই কেউ বলতে পারেন, বিকৃত করা হচ্ছে, এটা তো অকল্পনীয় নয়।

আবারও বলছি, একটায় যদি বলে সুযোগ পেলেই মারো, আরেকটায় যদি বলে গণ্ডগোল না হলে মেরো না, তাহলে সে-দুটো কনট্রাডিক্টরি, এবং বইয়ের অন্তর্নিহিত গণ্ডগোলকেই প্রকাশ করে। কিন্তু তাই বলে দ্বিতীয় স্টেটমেন্টটা প্রথমটাকে ক্যানসেল তো করতে পারে না। তবে আপনি এভাবে দেখতে আগ্রহী নন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। বেশ।

কোরানে দিব্যিই সংযোগ-বিয়োগ হয়েছে। মহম্মদের মৃত্যুর পর একাধিকবার তা এডিট হয়ে, কম্পাইল হয়ে আজকের ফর্মে পৌঁছেছে। বাইবেলও বহুবার হয়েছে।

আপনি এক বিশেষ ভাবধারার মুসলিম হতেই পারেন যিনি কোরান ছাড়া আর কিছু, যেমন হাদিস, পাত্তা দেন না। কিন্তু দুনিয়ার বহু মুসলিমই তাকে পাত্তা দেয়, নবীর বাণী বলে সম্মান করে। আপনি কোন বিশ্বস্বীকৃত ডেফিনিশনে তাদেরকে ভ্রান্ত মুসলিম বলবেন? কোনো সাচ্চা মুসলিম কি তাদের নবীর বাণীকে অস্বীকার করতে চাইবে?

লাদেন যা করেছে, ওই তরুণীর হত্যাকারীরা যা করেছে, তা ইসলামের বইয়ের (কোরান-হাদিস-ইত্যাদি মিলিয়ে) কথা মেনেই করেছে। অতএব তার দোষ ইসলামের উপরই পড়বে। আমি যদি আজ গীতা থেকে ধর্মযুদ্ধের শ্লোক বুকে নিয়ে ওইরকম বোমা ফেলতে যাই, তাহলে দায়টা হিন্দুধর্মেরই হবে।

(আপনাকে ট্যাগিং করার কোনো চেষ্টাই আমি করিনি। ওই প্রসঙ্গ নিষ্প্রয়োজন। তেমনই আস্তমেয়েকেও চিনি না, 'লেজেন্ডারি ব্লগার' হলেও। বুঝলাম, তুলনা করে খোঁচা দিচ্ছেন। তা আপনি সিনিয়র ব্লগার, কী আর বলি। )

যাহোক, আপনি বলে দিয়েছেন যে আপনি বিশ্বাসী। আমি এতক্ষণ আপনার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে খানিকটা স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছিলাম না, এখন পেলাম। ধন্যবাদ। আপনি যদি তেমন দৃঢ় বিশ্বাসী হন, যে আমার তরফের যুক্তিগুলো আপনার উপর তেমন প্রভাব ফেলবে না, আপনার কাছে অসার বলে মনে হবে, বিকৃত করা বলে মনে হবে, তাহলে এই বিতর্ক আর বাড়িয়ে লাভ নেই। শেষ করলাম। ভাল থাকবেন।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই বিতর্ক আর বাড়িয়ে লাভ নেই।

আমিও আপনার সাথে এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চাইছি না শুরু থেকেই।

ব্যক্তিগতভাবে, আমি নিজেকে ধন্যবাদ দেই। কারণ, আপনার ধারায় যদি খ্রিস্ট টেরোরিজমের রেফারেন্স দেওয়া শুরু করতাম, তাইলে শুভাশীষের পোস্ট অনেক আগেই মারা পড়তো। আমিও লাদেনের পক্ষে ওকালতি শুরু করতাম!

ধর্ম আমার কাছে বিশ্বাসের ব্যাপার। ঈশ্বারাস্তিত্ত্বের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। সুতরাং বিশ্বাসের ব্যাপার অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না। বিশ্বাস কেন করি? এর উত্তরও কাউকে দেয়ার দায়বদ্ধতা নেই। নিজের কাছে, মহাবিশ্বের অনেক বিষয়ই বিজ্ঞানের অজানা, বিজ্ঞান জানছে, বিজ্ঞান জানবে, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ থাকাও বিচিত্র কিছু না। ইসলামে কেন বিশ্বাস করি? কারণ, কোরআনটা যতোদূর পড়েছি, বাস্তবসম্মত এবং পারফেক্ট মনে হয়েছে। এটাও নিজের অনুভূতির ব্যাপার। কারো কাছে জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা নেই।

আপনি ইসলামের ওপর সন্ত্রাসের দোষ চাপাচ্ছেন। ইসলামের বই না পড়ার কারণে দোষ দেয়া না হলেও ইসলামের নামে সিংহভাগ মানুষ অন্যের পাছায় আঙুল না দেয়ার পরেও সেই ইসলামের ঘাড়েই দোষটা চাপাতে হবে কিনা, ভাবুন। আর সেই ফাঁক গলে প্রকৃত অপরাধীদের ইসলামকে, বা ইন জেনারেল ধর্মকে, ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে সহযোগিতা করছেন কিনা, ভাবুন। নিজে ভাবলেই চলবে, ভেবে যে সিদ্ধান্ত পাবেন, তাও আপনার নিজের। সিদ্ধান্তটা আমার ওপরে চাপাতে গেলেই প্রবলেম।

এই প্রবলেমের কাজটা অনেকে বিশ্বাসের নামেও করে, অনেকে অবিশ্বাসের নামেও করে। ভালো মানুষ হতে হলে ধর্মে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কোনো বাধা না। কেউ যদি ধর্মে বিশ্বাস করে ভালো মানুষ হতে পারে, সো বি ইট, কেউ ঈশ্বরাস্তিত্ত্বে বিশ্বাস না করে ভালো মানুষ হতে পারলে, কোনো প্রবলেম নাই। একইভাবে ধর্মে বিশ্বাস করলেই যুক্তিহীন ট্যাগিংটা অবান্তর। এই ট্যাগিংটা করে নিজেকে বেশি যৌক্তিক মনে হওয়া শুরু হলে, সেটা নেহাতই নির্বুদ্ধিতা। কারণ, তখন নিজের যুক্তির দুর্বলতাগুলো চোখে পড়বে না। যেমন, যদি ২টা বাক্য থাকে "অযথা গন্ডগোল কইরো না যদি অপর পক্ষ গন্ডগোল না বাধায়। গন্ডগোলে তাদেরকে পিটানি দাও।" তাইলে বাক্য ২টা পরস্পরবিরোধীই মনে হবে।

ভালো থাকবেন।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা আমি দরকারমতো কপিপেস্ট করব। খুবই পছন্দ হয়েছে। আশা করি কপিরাইটভংগের দায়ে ধরবেন না চোখ টিপি

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী! এর ছবি

চলুক

sh21 এর ছবি

কোরানে দিব্যিই সংযোগ-বিয়োগ হয়েছে। মহম্মদের মৃত্যুর পর একাধিকবার তা এডিট হয়ে, কম্পাইল হয়ে আজকের ফর্মে পৌঁছেছে।

কয়েকটা রেফারেন্স দিন তো।।।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঘ্যাচাং

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

জনাব ৌস্তভ,
ইসলামের দন্ডবিধি আরও শুনলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাকে প্রশ্ন করি, এই শাস্তি প্রয়গ করলে সমাজের অপরাধ বেড়ে যাবে, কমে যাবে নাকি একই থাকবে।

দয়া করে চিন্তা ভাবনা করে উত্তরটা দেবেন।

ইতি,
বায়েজিদ

কৌস্তুভ এর ছবি

কমে যাবে কিনা সেটা আমার কাছে মূল প্রশ্ন নয়। এটা অমানবিক, সেই প্রাচীন বর্বর সময়ের রেলিক, সেটাই আমার প্রধান আপত্তি। আমার সন্তান যদি আমার পকেট থেকে টাকা চুরি করে, সেই অপরাধের জন্য যদি আমি তার মুন্ডুটা কেটে ফেলি, তাহলে সে শুধু ওই অপরাধ কেন আর কোনো অপরাধই করতে পারবে না। কিন্তু সেটা কি ঠিক পন্থা, তাকে শাসন করবার? অথচ ঠিক এই জিনিসই কিন্তু অনেক (ইসলামী) পরিবার করে থাকে, সন্তান ভিন্নধর্মে প্রেম বা বিয়ে করলে, যাকে বলে অনার কিলিং।

mmh এর ছবি

অনার কিলিং এর সাথে ধর্মের যোগাযোগ দেখানোটা ঠিক যৌক্তিক হলো না কৌস্তভ, এটাকে বরং আপনি একটা বিশেষ এলাকার সামাজিক সমস্যা বলতে পারতেন; উদাহরণ দিইঃ বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান হওয়া সত্বেও এরকম ঘটনা এখানে শোনা যায় না, অথচ পাঞ্জাবে অনেক হিন্দু/শিখ পরিবারে (অন্য গোত্রীয় বিয়ের জন্য) এমনটি ঘটে। NDTV তে এরকম খবর আমি কয়েকবার ই পড়েছি।

কৌস্তুভ এর ছবি

অনার কিলিং-টা বর্বর প্রচলনের উদাহরণ হিসাবে এসেছে। তবে ধর্মের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বইকি, আপনি এমন কোনো উদারপন্থী বা নাস্তিক পরিবার পাবেন কি যেখানে অনার কিলিং করা হয়? ভারতের গোঁড়া জাতপাত-প্রেমী হিন্দুদের মধ্যে, বা মধ্যপ্রাচ্যের গোঁড়া ইসলামী লোকজন... এমন গোঁড়া ধর্মপ্রাণ সমাজের বাইরে তো অনার কিলিং পাবেন না।

তানিম এহসান এর ছবি

দারুন আগ্রহ নিয়ে পড়ে গেলাম, টানটান লেখা মনোযোগ ধরেও রেখেছে। আপনার লেখা প্রথম থেকেই আমাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। কিছু মনে করবেন না, বহুদূর টেনে নিয়ে যাবার পর মনে হলো তৈরী হয়ে যাওয়া সাধারন একটা উপসংহারে পৌছে গেলেন। আপনার কাছ থেকে আরো বেশী কিছু পাওয়ার যে প্রত্যাশা তৈরী হয়েছে তা আপনার হাত ধরে পূরণ হবে - এই আশাবাদ রেখে বলছি - তৈরী হয়ে পরা উপসংহারগুলো আপনার হাতে ঝাকুনি খেতে থাকুক! নিরন্তর শুভেচ্ছা,

মুস্তাফিজ এর ছবি

ইসলামোফোবিয়া কিংবা তথাকথিত কোনো খ্রিস্ট-কায়িদা বা কোনো উগ্রপন্থী হিন্দু দলের জন্মগ্রহণে মদদ না দিয়ে সন্ত্রাস বা টেরোরিজমের আসল চেহারা দেখানোর দায়টা ইচ্ছে থাকলে নেয়াই যায়। আর আমজনতার কাজ একটাই। নিজের মানসিকতা অসাম্প্রদায়িক করে তোলা।

সহমত।

মৃতের সংখ্যা ৯২ না হয়ে ৭৬ হবে মনে হয়।

...........................
Every Picture Tells a Story

জ়াতির বিবেক এর ছবি

পুরোপুরি সহমত । চলুক

মাহমুদ ..  এর ছবি

খুব চমতকার লেখা। দারুণ দামী কিছু অবজার্ভেশন পেলাম ভাইয়া!
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

hasshokor এর ছবি

মৃতের সংখ্যা কমে গেছে।আপডেট করে নিনি

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

চমৎকার লেখা, শুভাশীষদা। আমি রেগুলার বিবিসি দেখি। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে ওয়স্টোর্ণ মিডিয়া'র আল-কায়েদা তথা মুসলিম চরমপন্থিদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ শুরূ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু, বুশ যে ক্রুসেড শুরূ করেছিলেন তাতে শামিল হওয়া ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র নরওয়েতে এই ক্রুসেডার বেরিয়ে এসেছে তাদের মধ্য থেকেই। এটা-ই ট্রাজেডী।
শুভাশীষদাকে সুন্দর লেখার জন্য আবার শুভাশীষ জানিয়ে শেষ করছি।
ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ

সাইফ জুয়েল এর ছবি

স্বল্প পরিসরে চমৎকার উপস্থাপন। পাকিস্থানীদের জাতিবৈরিতার ফ্যাক্টরগুলোকে আড়াল করতে শর্মিলা মুখার্জির প্রহমনমূলক গবেষনাটিকে আপনি যেভাবে তথ্যনির্ভর লিখনি দিয়ে সমালোচনা করেছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার সুযোগ খুঁজছিলাম। তাই প্রথমে সেটার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বিশ্বব‌্যাপি চলমান জাতিবৈরিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুগের মার্কিন নেতৃত্বাধীন উত্তর উপনিবেশিক আগ্রাসনের ফলাফল।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলে পৃথিবীর সব জাতিবৈরিতা বা রেসিজমের উৎসটা মনে হয় আমাদের বুকের গভীরে আগলে রাখা ধর্মবাদী চেতনাটুকুই, যা আমরা কখনোই যুক্তির এন্টিভাইরাসে রিফাইন করি না বা করতে চাই না। সমস্ত সমস্যা ও গুজর লুকিয়ে আছে এই না-চাওয়ার মধ্যেই। আমাদের শিক্ষা দীক্ষা মানবিক-ভণ্ডামি কেন যেন অচল হয়ে যায় সেখানে !

ভালো লেখা যথারীতি। ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্বাধীন এর ছবি

এই বিষয়টা নিয়ে সচলে লেখা দেওয়ায় অনেক ধন্যবাদ জানাই শুভাশীষকে চলুক

নুর-নবী-দুলাল এর ছবি

এই মহুর্তের প্রয়োজনীয় অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ এই পোষ্টটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গত তিন দিন ধরে এই বিষয়ের ওপর মিডিয়ার কাজকাম দেখে যা মনে আসছিলো, পোস্টে একদম টু দ্য পয়েন্ট সেই জিনিসগুলোই এসেছে।

মিডিয়া ইতোমধ্যে আনদর্শ ব্রাইভিককে 'ম্যানিয়াক' বলে প্রচার শুরু করেছে। ঘটনা ঘটানোর সময় সে যে ড্রাগ নিয়েছিলো, সেটাকে হাইলাইট করছে। এর আগে সে হত্যাকান্ড স্বীকার করলেও নিজেকে যে অপরাধী ভাবছে না এবং কালচারাল মার্ক্সিজম ও মুসলিম আগ্রাসনই তার কাজের পেছনের মোটিভেশন, সেটাকেও যত্নের সাথে তুলে ধরেছে। লাদেন কেসে ইসলাম ধর্মের সাথে অ্যাসোসিয়েট করতে সময় নেয় না; কিন্তু এক্ষেত্রে এটাকে 'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা হিসেবে দেখানোর একটা চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ধর্মের সাথে এটার যোগসূত্র আছে কিনা, সে ব্যাপারটা মোটেই দেখানো হচ্ছে না।

যুগে যুগে ধর্মকে ব্যবহার করে আকাম করেছে অনেকেই। প্রত্যেক ধর্মই এভাবে অপব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এখন মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট - এই ধারণা সৃষ্টির পেছনে মিডিয়ার ক্রেডিট পুরোটা।

মিডিয়া (অন্তত আমার দেখা টিভি চ্যানেলগুলো) সিকিউরিটি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো করছে না। পুলিশ ক্রেডিট দাবি করেছে যে তারা দ্বীপে যাওয়ার ২ মিনিটের মাথায়ই ব্রাইভিককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। (সে আসলে গ্রেফতার হতেই চাইছিলো।) কিন্তু ওই দ্বীপে যেতে তাদের দেড় ঘন্টা সময় লাগলো কেন, সে বিষয়টা টিভিতে হাইলাইটেড হচ্ছে না। মিডিয়ার কল্যাণে মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট - এই ধারণা সিকিউরিটি সিস্টেমের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। তাদের রাডারে আল-কায়েদা ছাড়া আর কেউই নেই মনে হয়। ব্রাইভিকের সারের দোকানদার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিলো সে বেশি পরিমাণ সার কেনার কারণে। পুলিশ সেটাকে কতোটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, এই দুর্ঘটনা এক অর্থে তার প্রমাণ।

নরওয়ের লোকজন ফ্যানটাস্টিক। কিন্তু এদের বুরোক্রাসির সাথে বাংলাদেশের অনেক মিল আছে। অসলো থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে যেতে তাদের দেড় ঘন্টা সময় লাগা বিচিত্র কিছু না। দ্বীপটা মেইন ল্যান্ড থেকে মাত্র ৫০০ মিটারের মতো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

মিডিয়া ইতোমধ্যে আনদর্শ ব্রাইভিককে 'ম্যানিয়াক' বলে প্রচার শুরু করেছে। ঘটনা ঘটানোর সময় সে যে ড্রাগ নিয়েছিলো, সেটাকে হাইলাইট করছে। এর আগে সে হত্যাকান্ড স্বীকার করলেও নিজেকে যে অপরাধী ভাবছে না এবং কালচারাল মার্ক্সিজম ও মুসলিম আগ্রাসনই তার কাজের পেছনের মোটিভেশন, সেটাকেও যত্নের সাথে তুলে ধরেছে। লাদেন কেসে ইসলাম ধর্মের সাথে অ্যাসোসিয়েট করতে সময় নেয় না; কিন্তু এক্ষেত্রে এটাকে 'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা হিসেবে দেখানোর একটা চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ধর্মের সাথে এটার যোগসূত্র আছে কিনা, সে ব্যাপারটা মোটেই দেখানো হচ্ছে না।

চলুক

মিডিয়া (অন্তত আমার দেখা টিভি চ্যানেলগুলো) সিকিউরিটি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো করছে না। পুলিশ ক্রেডিট দাবি করেছে যে তারা দ্বীপে যাওয়ার ২ মিনিটের মাথায়ই ব্রাইভিককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। (সে আসলে গ্রেফতার হতেই চাইছিলো।) কিন্তু ওই দ্বীপে যেতে তাদের দেড় ঘন্টা সময় লাগলো কেন, সে বিষয়টা টিভিতে হাইলাইটেড হচ্ছে না। মিডিয়ার কল্যাণে মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট - এই ধারণা সিকিউরিটি সিস্টেমের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। তাদের রাডারে আল-কায়েদা ছাড়া আর কেউই নেই মনে হয়। ব্রাইভিকের সারের দোকানদার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিলো সে বেশি পরিমাণ সার কেনার কারণে। পুলিশ সেটাকে কতোটা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, এই দুর্ঘটনা এক অর্থে তার প্রমাণ।

এ নিয়ে প্রায় কিছুই জানি না, তবে যা বলছেন তা যদি হয়, তবে ওদের পুলিশ/স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে বুদ্ধু বলতে হবে। নিও-নাজি সমস্যা জার্মানিতে আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা দেখে কি তারা হুঁশিয়ার হয় না? আচ্ছা, সুইডেনে যে ব্লাস্টগুলো হল, তার পেছনে কারা আছে তা কি জানা গেছে?

মিডিয়ার দায় ১০০% বলে আমার কেন মনে হয় না, এই নিয়ে আপনার প্রতিমন্তব্যে উপরে বললাম একটুখানি।

পাঠক42 এর ছবি

মিডিয়া ইতোমধ্যে আনদর্শ ব্রাইভিককে 'ম্যানিয়াক' বলে প্রচার শুরু করেছে। ঘটনা ঘটানোর সময় সে যে ড্রাগ নিয়েছিলো, সেটাকে হাইলাইট করছে। এর আগে সে হত্যাকান্ড স্বীকার করলেও নিজেকে যে অপরাধী ভাবছে না এবং কালচারাল মার্ক্সিজম ও মুসলিম আগ্রাসনই তার কাজের পেছনের মোটিভেশন, সেটাকেও যত্নের সাথে তুলে ধরেছে। লাদেন কেসে ইসলাম ধর্মের সাথে অ্যাসোসিয়েট করতে সময় নেয় না; কিন্তু এক্ষেত্রে এটাকে 'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা হিসেবে দেখানোর একটা চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ধর্মের সাথে এটার যোগসূত্র আছে কিনা, সে ব্যাপারটা মোটেই দেখানো হচ্ছে না।

No true Scotsman

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঠিক। ব্রাইভিককে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখানোর জন্য এটা দরকার। তবে সত্যের আলামত ভিন্ন। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটা গুলি করা যেতে পারে, ১৫০০ পৃষ্ঠার বই লেখা যায় না, কয়েক লাখ ইউরো খরচ করা যায় না। আজ নিউজে দেখলাম ইংল্যান্ডের কিছু সমমনা গ্রুপের সাথে তার যোগাযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন_তুরহান এর ছবি

'ইসলামাতঙ্ক সম্পূর্ণরূপে গণমাধ্যমের সৃষ্টি'- এটি বলা মানে হলো ইসলামের মূল সমস্যাটাকে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রেখে দেয়া। ইসলামাতঙ্ক সৃষ্টির পেছনে গণমাধ্যমের চেয়ে মুসলমান-মানসকেই আমি বেশী দায়ী করবো। অল্প কথায় আমার বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি, তবে তার আগে আসুন নিজেকে কিছু প্রশ্ন করি:

১। ধরুন আপনি একটি বাসে বসে আছেন, বাস ভর্তি সাধারণ মানুষ, শিশু-নারী। একজন লোক হুড়মুড় করে সেই বাসে ঢুকে চিৎকার করে কিছু ধর্মীয় শ্লোক উচ্চারণ করলো - তারপর নিজের বুকের সাথে বাঁধা জ্যাকেট-বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সে নিজেকে হত্যা করলো, সেই সা থে হত্যা করলো সকল আরোহীকে। চোখ বুজে অনুমান করুন তো এই লোকটি কোন ধর্মের অনুসারী?

২। একটি মেয়ে ভালোবেসে পালিয়ে গেছে তার প্রিয়তম পুরুষটির সাথে। দুইরাত একসাথে কাটানোর পর ধরা পড়ে তারা। গুরুজনরা সকলের সামনে বিচার করে বললেন অবৈধ সঙ্গমের অপরাধে ছেলেটিকে কোমর পর্যন্ত পুঁতে এবং মেয়েটিকে বুক পর্যন্ত পুঁতে পাথর ছুঁড়ে মারা হোক। চোখ বুজে অনুমান করুন তো এই গুরুজনরা কোন ধর্মের অনুসারী?

৩। মনে করুন আপনি বাস করছেন পশ্চিমের কোনো উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে মানুষের তৈরি আইন অনুসারে সকলের রয়েছে মত প্রকাশের অধিকার, নারী-পুরুষ উভয়েই যেখানে উপভোগ করে সমানাধিকার। হঠাৎ শুনলেন অভিবাসী হয়ে আসা একটি গোত্র দাবি করছে যে তারা মানুষের তৈরি আইন সরিয়ে বিধাতার আইন প্রয়োগ করতে চায়। তারা চায় পুরুষের বহুবিবাহের অধিকার, নারীকে চলমান তাঁবুতে ঢেকে রাখার অধিকার। চোখ বুজে অনুমান করুন তো এই অভিবাসী গোত্রটি কোন ধর্মের অনুসারী?

৪। কল্পনা করুন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন নিউইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে। আপনার হাতে গিটার - আপনি গান গেয়ে গেয়ে বলছেন 'জেসাস ছিলো পুরুষত্বহীন, তাই সে কখনো করেনি বিয়ে ...'। লোকজন আপনার দিকে কৌতুহলউদ্দীপক চোখে তাকাচ্ছে। এবার কল্পনা করুন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কোলকাতার একটি পূজামন্ডপে, কথাপ্রসঙ্গে আপনি বললেন আপনার ধার্মিক হিন্দু বন্ধুটিকে - 'আপনাদের শ্রীকৃষ্ণ তো বিরাট নারীলোভী ছিলেন মশাই!' আপনি মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এই কথাটি বলেও আপনি অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারবেন। কারন হিন্দুরা (সাধারণত) মূর্তিপূজারী হলেও ভাবমূর্তিপূজারী নয়। এবার কল্পনা করুন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন তেহরানের একটি জনবহুল স্ক্যোয়ারে। আপনি সেখানে দাঁড়িয়ে এক প্রবর্তকের সম্পর্কে বললেন - "আমাদের প্রবর্তক এতোগুলো বিয়ে কেনো করেছিলেন? নিজের পালিতপুত্রের স্ত্রীকে তিনি বিয়ে করলেন কী ভেবে? নিজের বন্ধুর শিশুকন্যাকে তিনি বিয়ে করলেন কী ভেবে? বানু কোরাইজার বাসিন্দাদের নির্বিচারে হত্যার আদেশ কেনো দিয়েছিলেন আমাদের প্রবর্তক? আমাদের প্রবর্তকের চরিত্রে রয়েছে এমন অনেক খুঁত এবং আমি তাঁকে মহৎ বলে মানি না।" স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অপরাধে আপনাকে প্রকাশ্যে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হলো চৌরাস্তায় উত্তেজিত জনতার সামনে । এবার অনুমান করুন তো, যে ভাবমূর্তিপূজারীরা আপনাকে খুন করলো তারা কোন শান্তির ধর্মের অনুসারী?

সহমত শুভাশীষ'দার সাথে যে, এই হিংসার চক্রবুহ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অসাম্প্রদায়িক হওয়াটা সবচেয়ে জরুরি । কিন্তু একজন বিশ্বাসী মুসলমান, যতোই প্রগতিশীল এবং উদার হোক না কেনো, চিরকালই বিশ্বাস করবে যে সব হিন্দুর জন্যে অপেক্ষা করছে দোজখের ক্ষুধার্ত আগুন, এবং সব অমুসলিমরাই বিপথগামী। এটা তাকে বিশ্বাস করতেই হবে, নইলে সে ‘মুসলমান’ বলে দাবি করতে পারে না নিজেকে। প্রগতিশীল এবং উদার মুসলমানরাও এই টানাপোড়নে ভুগেন এবং অস্বস্তি বোধ করেন। (এই টানাপোড়নে আমিও ভুগেছি। আমার ছোটবেলার এক প্রিয় শিক্ষক, যিনি হিন্দুধর্মাবলম্বী ছিলেন, তাঁকে দেখে আমার হতো - করুণাময় বিধাতা এই অসাধারণ ভালো মানুষটিকে কেনো দোজখে পাঠাবেন! ) একইভাবে একজন বিশ্বাসী হিন্দুর কাছেও একজন অ-হিন্দু বিপথগামী। এই জাতীয় বিশ্বাস ভেতরে রেখে আমরা কি করে হয়ে উঠতে পারি সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক? অ-সাম্প্রদায়িক হতে হলে তো আমাদের উচিৎ হবে সম্প্রদায়ের বাইরে বেরিয়ে আসা, হয়ে ওঠা সম্পূর্ণরূপে ইহজাগতিক।

পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম, প্রবর্তকদের উদ্ভাবিত বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব, ধর্মীয় বিধিবিধান আমার কাছে হাস্যকর, শোচনীয় এবং সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার বলেই মনে হয়। কিন্তু সব ধর্মকে সমানভাবে ক্ষতিকর বা বিপদজনক বলে মনে করি না। একজন জৈন ধর্মাবলম্বীর পক্ষে ধর্মের নামে মানুষ খুন করা প্রায়-অসম্ভব বলে মনে করি। কিন্তু ইসলামের পুরো ইতিহাসই মুক্তচিন্তক আর বিধর্মীদের রক্তে রক্তাক্ত। মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো গোত্র নিজেদের ধর্মগ্রন্থকে চিরশাশ্বত, চিরঅপরির্বতনীয়, বিধাতার আক্ষরিক কিতাব বলে মনে করে না। আর কোনো গোত্র কথায় কথায় 'ভাবমূর্তিতে আঘাত' লাগার কথা বলে না। মুসলমানদের মধ্যে যারা ইসলামে কোনো প্রকার সংস্কারের বিরোধী , পশ্চিমের পায়ে যারা শরিয়ার শেকল পরাতে চান, আত্মসমালোচনায় যাদের আগ্রহ নেই - ইসলামাতঙ্কের পেছনে তাদের দায় পশ্চিমের গণমাধ্যমের চেয়ে বেশী বলে মনে করি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভাই, 'চোখ বুজে' এই 'অনুমান' করতেও মিডিয়া শেখাচ্ছে। নরওয়ের কেসেও চোখ বুজেই অনুমান করা হয়েছিলো আল-কায়েদার কাজ। চোখ খুললে সন্ত্রাসের কারণ একটু অন্যরকম মনে হবে।

মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো গোত্র নিজেদের ধর্মগ্রন্থকে চিরশাশ্বত, চিরঅপরির্বতনীয়, বিধাতার আক্ষরিক কিতাব বলে মনে করে না।

এর একটা ভালো দিক হলো, কেউ চাইলেও নিজের সুবিধামতো ইসলামের নামে নিজের কথা চালিয়ে দিতে গেলে আল্লাহ তার দায়িত্ব নেন না। আপনার কাছে এটাকে খারাপ মনে হচ্ছে, আমার কাছে বরং এটাই হওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে। শরীয়াহকেই উদাহরণ হিসেবে নেন। শরীয়াহ != কুরআন। শরীয়ায় কুরআন থেকে কতোভাগ 'জিনিস' এসেছে আর কতোভাগ মানুষের সংযোজন-বিয়োজন, একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন, বিকৃতিরোধ করা কেন প্রয়োজন। মানুষ এই সংযোজনগুলো না করলে শরীয়ার ঝামেলাই থাকতো না। মানুষের এই সংযোজনগুলোর দায়িত্ব আল্লাহ নেন না, ইসলাম নেয় না।

মুহাম্মাদ পালিতপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করছেন কেন - এ প্রশ্ন আপনার মনে এলে আপনি করুন, প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন, তার জন্য আপনার মুন্ডুপাত করার অধিকার আল্লাহ কাউকে দেয় নাই। 'আল্লাহ একটা চুদানির পুয়া' বলে গালি দেন, তার জন্য আপনার মাথার মূল্য ধার্য করার অধিকারও আল্লাহ কোনো মুসলমানকে দেয় নি। ইসলামের বিশ্বাসে মানুষের প্রত্যেকের হিসাব তার আর আল্লাহর সাথে। সুতরাং, কেউ এজন্য আপনাকে গালি দিলে সেটা তার প্রবলেম, ইসলামের প্রবলেম না।

এর বাইরে, ইচ্ছামতো অন্যের মায়রে বাপ করা যায় না, "তুই শালা একটা খাটাশ, কারণ তুই ভুয়া আল্লায় বিশ্বাস করোস, বা ভুয়া ভগবানে বিশ্বাস করোস, বা যীশুরে ঈশ্বরের পুত্র বলোস, বা ঈশ্বরে বিশ্বাসই করোস না" - এইগুলা সমাজের নর্মের ওপরে নির্ভর করে, এর জন্য ধর্ম পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নাই, ঈশ্বর বা আল্লাহর অস্তিত্ব আছে কি নেই, সে প্রমাণেও যাওয়া লাগে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আর্য এর ছবি

এর একটা ভালো দিক হলো, কেউ চাইলেও নিজের সুবিধামতো ইসলামের নামে নিজের কথা চালিয়ে দিতে গেলে আল্লাহ তার দায়িত্ব নেন না। আপনার কাছে এটাকে খারাপ মনে হচ্ছে, আমার কাছে বরং এটাই হওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে। শরীয়াহকেই উদাহরণ হিসেবে নেন। শরীয়াহ != কুরআন। শরীয়ায় কুরআন থেকে কতোভাগ 'জিনিস' এসেছে আর কতোভাগ মানুষের সংযোজন-বিয়োজন, একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন, বিকৃতিরোধ করা কেন প্রয়োজন। মানুষ এই সংযোজনগুলো না করলে শরীয়ার ঝামেলাই থাকতো না। মানুষের এই সংযোজনগুলোর দায়িত্ব আল্লাহ নেন না, ইসলাম নেয় না।

ভাই, একটা সাধারন কথার উত্তর চাই, আল্লাহ দায়িত্ব নেন কি নেন না, তা দিয়ে আমার কিছু কি আসে যায়? ইসলাম ধর্মগ্রন্থে কি আছে না আছে, তা পড়ে দেখাটা কি আমার দায়িত্ব নাকি তা প্রমান করাটা মুসলিমদের দায়িত্ব? যখন একটা আম গাছ থেকে টক আম পাওয়া যায়, তখন কি আমরা তাও ওই আম খেতে থাকি কারন ওই গাছটার আসলে ভাল আম দেবার কথা ছিল, নাকি টক বলে খাওয়া বন্ধ করে দেই? একটা কথা আছে না, "বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়।", সেটা মনে হয় এক্ষেত্রে বেশ প্রযোজ্য। অন্য ধর্মের মানুষের এত সময় নেই যে তারা ইসলাম ধর্ম পড়ে, আল্লাহ দায়িত্ব নিবেন কি নিবেন না তা বিচার করবে। তারা চোখের সামনে মুসলমানদের যা করতে দেখবে, তাকেই ইসলাম বলে ধরে নেবে। এটাই স্বাভাবিক। এটাই হয়ে থাকে।

 বি এর ছবি

ভাই আর্য, প্রথমেই বলি আপনার সাথে দ্বিমত করছি না। কিন্তু স্বাভাবিক (বা হয়ে থাকে) বলেই যে তা সঠিক হবে এটা নিশ্চয়ই সবসময় ঠিক না। আপনি নিশ্চয়ই আওয়ামি লীগের পত্রিকায় বিএনপির গুণগান আশা করেন না (এবং উল্টোটা)। কেউ যদি এখন শুধু আওয়ামি লীগের পত্রিকাই দেখে, তাহলে বিপ্লবের ফাঁসি যে মাফ হয়ে গেছে এটা হয়তো জানতেও পারবে না। তাই বলে সত্যটা তো আর বদলে যায় না, তাই না?

বি

আর্য এর ছবি

ভাই বি, হয়ে থাকে বলেই যে সব কিছু ঠিক হবে তা তো না বটেই, কিন্তু সবাই তো এখানে মানুষ, আর মানুষ তো রোবট না যে সব সময় যুক্তি মেনে সব কাজ করবে। এটা মানুষের চিরন্তন ধর্ম যে মানুষ generalize করে। কয়েকজন ভারতীয় ব্যবসায়ী বাংলাদেশকে সঠিক পণ্য রফতানি করতে দিচ্ছে না, বা কয়েকজন বি এস এফ আমাদের মানুষ মারছে দেখে কি আমরা গলা ফুলিয়ে বলি না যে ভারতীয়রা বদ? এই generalization করতে কিন্তু আমাদের এক মিনিট সময় ও লাগে না। তাহলে অন্যরা এটা করলে আমরা আবার চিত্কার করি কেন?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অন্য ধর্মের মানুষের এত সময় নেই যে তারা ইসলাম ধর্ম পড়ে, আল্লাহ দায়িত্ব নিবেন কি নিবেন না তা বিচার করবে। তারা চোখের সামনে মুসলমানদের যা করতে দেখবে, তাকেই ইসলাম বলে ধরে নেবে। এটাই স্বাভাবিক।

একদম ঠিক। ধর্মগ্রন্থে কি আছে না আছে, তা পড়ে দেখতে কেউ বাধ্য না।

এটাই হয়ে থাকে।

না, এটাই হয়ে থাকে না। কারণ, মুসলমান (বা অন্য ধর্মের অনুসারী)দের অধিকাংশই সন্ত্রাসী না। সুতরাং জাজমেন্টটা চোখের সামনে মুসলমানদের বা খ্রিস্টানদের কাজ দেখে হয় না, মিডিয়া যা খাওয়ায়, সেটাই খাওয়া হয়। মিডিয়ার জাজমেন্টের স্যাম্পলে প্রথমে সন্ত্রাসীকে নেয়া হয়। এরপর তার সাথে ধর্মকে অ্যাসোসিয়েট করে ধর্মের ওপর দোষ চাপানো হয়।

আমার মতে, সন্ত্রাসের মূল কারণ অর্থনৈতিক। সেটা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সন্ত্রাস হোক বা টুইন টাওয়ারে লাদেনের হামলা হোক বা ব্রাইভিকের ম্যাসাকার হোক। ধর্মের ঘাড়ে দোষ চাপালে সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যায়। যেমন ধরেন, আপনি যদি বলেন, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী (যদিও ৯৯% মুসলিমই সন্ত্রাসের সাথে জড়িত না), কোরআন মানেই আরেকজনের মাথায় বাড়ি দেয়ার নির্দেশ, তাহলে তাদেরকে সন্ত্রাস সমর্থনে ফোর্স করা হয়। মিডিয়ার কল্যাণে নামের আগে মুহাম্মাদ বা মুখে দাড়ি থাকা যদি 'সন্ত্রাসী'র পরিচয় হয় এবং সে অনুযায়ী কেউ অন্যায় আচরণের শিকার হওয়া শুরু করে, তাইলে তাকেও সন্ত্রাসের সমর্থন করতে ফোর্স করা হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আর্য এর ছবি

না, এটাই হয়ে থাকে না। কারণ, মুসলমান (বা অন্য ধর্মের অনুসারী)দের অধিকাংশই সন্ত্রাসী না। সুতরাং জাজমেন্টটা চোখের সামনে মুসলমানদের বা খ্রিস্টানদের কাজ দেখে হয় না, মিডিয়া যা খাওয়ায়, সেটাই খাওয়া হয়।

কথাটা সম্পূর্ণ সত্য না, আমি প্রচুর শিক্ষিত মুসলমানের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি, থেকেছি, এবং বেশ বড় একটা অংশকে দেখেছি তাদের মানসিকতা খুব বেশি সংকীর্ণ। সব সময় হয়ত সেটা দেখা যায় না, ভদ্রতার আড়ালে ঢাকা থাকে। কিন্তু সময় সময় ঠিক বের হয়ে আসে। আমি অবশ্য তাদের দোষ দেই না, আমি দোষ দেই বেড়ে ওঠার। খুব ছোটবেলায়, যখন মনটা থাকে এক তাল কাদামাটির মত, তখন যদি একটা অশিক্ষিত হুজুর এসে কানের কাছে বলতে থাকে বিধর্মী মানেই খারাপ, বিধর্মী মানেই মেরে ফেল, তাইলে মানসিকতা ওভাবেই বেড়ে ওঠার কথা। আর আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ইসলাম ধর্মে প্রায় সব কিছুই মুসলিম আর অমুসলিম-এ বিভক্ত। কেবল মানুষের কথা বলা হচ্ছে এরকম তো দেখি না বেশি। এজন্যই কি মানুষের নিজের পরিচয় ছাপিয়ে সে কি মুসলিম না অমুসলিম সেটাই প্রধান হয়ে ওঠে? যখন খুব উচ্চশিক্ষিত মানুষজন এসে বলে যে রবীন্দ্রনাথ এ নজরুলকে বিষ খাওয়াইছে যাতে সে নোবেল না পায়, বা নজরুলকে তার হিন্দু বউ মেরে ফেলছে যাতে সে রবীন্দ্রনাথ এর চেয়ে বড় না হতে পারে, তখন এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করতে ইচ্ছা করে না, আর এরকম একটা দুটো না, অসংখ্য আছে।

সুমন_তুরহান ভাইয়ের মন্তব্য অনেক ভালো লেগেছে। আসলেই নিজেকে ওই প্রশ্নগুলো করুন, আর নিজেকে অন্য সংস্কৃতির একজন মানুষের জুতোয় চিন্তা করুন, আপনার তখন কেমন লাগবে? খুব কম সংখ্যক মুসলমান হয়ত এগুলা সরাসরি করে, কিন্তু খুব বেশি সংখ্যক কিন্তু মনে মনে এগুলো সমর্থন করে। অস্বীকার করতে পারবেন কি?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার স্বীকার-অস্বীকারে আপনার সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

জেনারালাইজেশন থাকলেও মোটাদাগে সহমত

নীড় সন্ধানী এর ছবি

৯/১১ এর বছর দুই তিন পরে Fortune বা NewsWeek ম্যাগাজিনের এক সংখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা নিয়ে একটা জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ লিখেছিলেন একজন নামকরা পশ্চিমা বুদ্ধিজীবি। নামটা এমুহুর্তে মনে আসছে না, কিন্তু তিনি এডওয়ার্ড সাঈদের প্রতিপক্ষ বুদ্ধিজীবিদের একজন, এটুকু মনে আছে।

তিনি বলেছেন শিল্পবিপ্লবের পরপর খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে এবং ইসলাম অধিভুক্ত দেশগুলো গরীব হয়ে যেতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই পার্থক্যটা আরো প্রকট হয়ে ওঠে যখন আমেরিকা একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে উদ্ভুত হয়, সেই হিংসায় মুসলমানদের আরব অংশটা আমেরিকা বা তার মিত্রদেশগুলোর প্রতি বৈরী হয়ে ওঠে, সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তোলে ইয়াসির আরাফাত যার অন্যতম নেতা। ইনতিফাদা যাদের অন্যতম কর্মসূচী। পশ্চিমাদের গাড়িতে, সম্পদে বোমা মেরে, ঢিল মেরে তাদের ঈর্ষা জানান দেয়। বক্তব্যের সূচনাটুকু মোটামুটি এরকম।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটা পত্রিকায় যখন এরকম প্রবন্ধকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রচ্ছদ প্রবন্ধ হিসেবে ছাপানো হয় তখন বুঝতে বাকী থাকে না মধ্যপ্রাচ্য বা ইসলাম নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার জ্ঞানের দৌড় কতটুকু।

আল-কায়েদার মতো সংগঠনগুলো মুসলমানদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আল কায়েদাকে তার শক্তির চেয়েও শতগুন শক্তিমান বানাবার দায় পশ্চিমা মিডিয়ার, যারা যে কোন সন্ত্রাসী ঘটনার ক্রেডিট আল কায়েদার উপর চাপিয়ে স্বস্তি পায়। সাদ্দাম হোসেনের সাথে যে আলকায়েদার কোন সম্পর্ক নেই, সেটা দুধের শিশুও জানে, তবু ইরাকে হামলা করার সময় সাদ্দামকে আল-কায়েদার সাথে সম্পর্কযুক্তও দেখানো হয় অন্যান্য অপরাধের সাথে। কিন্তু যেসব অজুহাতে ইরাকে হামলা হলো, তার একটিও প্রমাণ করতে পারেনি আমেরিকা, এত বড় একটা মানবিক অপরাধ করার পরেও কোন পশ্চিমা মিডিয়া ইরাকী জনগনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেনি। এখনো ইরাকে বোমা ফাটে, আগেও ফেটেছে, কেন ফাটে আমরা জানি না, কিন্তু মরছে মানুষ। একেকটা হামলায় ৫০/৬০ মরে। নিজেরা নিজেদের মারছে। আগে প্রতিদিন আত্মঘাতি হামলার ঘটনা ঘটতো। বছরের কোন একটা দিন খালি থাকতো না। এই মৃত্যুগুলো কোন খবর হিসেবেও পাত্তা পায় না। কারন তারা সবাই ইরাকী, এবং মুসলমান। এই মৃত্যুগুলো গুরুত্ব হারিয়েছে, সুলভতার কারণেই।

নরওয়ের ঘটনাটা হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এটা একটা বিশাল ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে, কারণ যে ঘটিয়েছে সে মুসলমান না। সে সন্ত্রাসীও না। তার মাথায় সাময়িক গন্ডগোলের কারণে সে নির্বিচার হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আদালতে তাই প্রমান হবে। তার সাথে কোন খ্রিষ্ট লাদেনের সম্পর্ক খোঁজা হবে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

Gypsy এর ছবি

Except short term Taliban rule) No Muslim terrorist get any support/patronization from any state or govt. But Hindu/Zew/Christian extremists get huge support and patronization from their government and other states to torture / kill Muslims. They even get patronization from muslim rulers… For Example-India-Guzrat, Israel, Bosnia, etc…As states/governments are very powerful, it is very easy for them to spread negative image of Muslims using their powerful media…

দ্রোহী এর ছবি

Religion: the root of all evil

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

না।

কৌস্তুভ এর ছবি

জানি। ওটাকে একটা রেফারেন্স হিসাবে নিয়ে সহমত বলেছি। কারণ সেই ডকু-টায় আমরা যা আলোচনা করছি তার সপক্ষে অনেক উদাহরণ/যুক্তি আছে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

মেম্বর, আপনার মতো করে এক লাইনে আমিও হয়তো বলতে পারি-

student of DU: চুতিয়ার একশেষ

আশাকরি, আমার এই এক লাইনের বাণী চিরন্তনীও আপনি গর্ব ভরে প্রকাশ করতে পারবেন ভবিষ্যতে।

দ্রোহী এর ছবি

হের মনির হোশেন, মানব সভ্যতার আদি থেকে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি, মর্মনরা ধর্মের নামে কত খুনাখুনি করেছে একটা জেনারেলাইজ হিসাব করেন দেখি।

এবার হিসাব করেন ধার্মিকদের দলে টানতে না পেরে কয়জন নাস্তিক কয়টা খুন করেছে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

জেনারালাইজের মায়রে বাপ মেম্বর। অত হিসাব কিতাবে যাইতে পারুম না। আপনে আমার বাণী চিরন্তনীরে আত্মস্থঃ করছেন কি-না আগে তাই কন!

দ্রোহী এর ছবি

হ। 'মেম্বর লোকটা চরম সুদানী!'

কিন্তু মেম্বর লোকটা সুদানী হইলেও লোক খারাপ না। বাকি সব বাদ দেন; শুধুমাত্র ক্রুসেডে খ্রিস্টান-মুসলমান পোন্দাপুন্দি করে কত মারা গেছে হিসাব করেন? ধর্মবিদ্বেষ ছাড়া এই পোন্দাপুন্দির উৎস কী?

ধর্ম বিশ্বাস মূলত বেড়ে ওঠার কালে মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া আজগুবি গল্প। কার গল্প সত্য আর কারটা মিথ্যা সেইটা নিয়া তর্ক করতে গিয়া মুসলিম-ইহুদি-খ্রিস্টানেরা কোপাকুপি করতে করতে শ্যাষ।

নীল নদ ফাঁক (বানান খিয়াল কইরা) করা, পানির উপর দিয়ে হাঁটা, মৃতকে জিন্দা করা, আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত করা এইসব আজগুবি গল্প শিশুকালে এমনভাবে গিলিয়ে দেয়া হয় যে থিওরেটিক্যাল ফিজিক্সে পিএইচডি করার পরেও মাথা থেকে সেই ভূত বের করা সম্ভব হয় না।

নবীর বাহন বোরাককে বিশ্বাস করতে হয় কিন্তু গ্রীক পূরাণের পেগাসাসের গল্প শুনে আজগুবি বলে হেসে উড়ায়ে দিতে হয়। এই হচ্ছে ধর্মবিশ্বাস।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

এইসব বালছাল ওয়াজ করা বাদ দেন। এইখানে যারাই মন্তব্য করছে, তারা আমার ধারণা সবাই এই বালছাল জানে।

আমার কথা হইলো, আমি যে কথাটা (student of DU: চুতিয়ার একশেষ) কইলাম, সেইটারে আপনে গ্রহণ করতে এবং প্রকাশ করতে রাজী আছেন কিনা! লন, কথা কম কই বেশি দিন বাঁচি!

দ্রোহী এর ছবি

বালছাল বলে এড়ায়ে যাওয়া পক্ষান্তরে সম্মতি দেয়ারই সামিল। দেঁতো হাসি

ঢাবির পোলাপাইন আসলেই চুতিয়ার একশেষ। আমারে এতদিন ধরে দেইখ্যাও শিখতে পারলেন না? দুঃখ পাইলাম। ওঁয়া ওঁয়া

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গুড, এইবার এখন থাইকা ঢাবি'র স্টুডেন্ট মানেই যে চুতিয়ার একশেষ- এই এক লাইনের মন্তব্যখানাও যেখানে সেখানে সাঁটাইয়া দিয়েন।

বাংলাদেশের মানুষঃ সব 'বাঞ্চোৎ'- এই রকম বাণী প্রকাশ না করেন, কোথাও শুনলেও বুড়া আঙুল দেখায়া আইসেন।

দুঃখ কইরেন না, উপরের দুই ক্ষেত্রেই আপনার তরিকায় ওয়াজ ফরমানো যাবে।
ওভার এন্ড আউট...

অবাঞ্ছিত এর ছবি

চলুক দ্রোহীদার কমেন্টে উত্তম জাঝা!

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

ফাহিম হাসান এর ছবি

দ্রোহীভাই, আপনার সাথে একমত নই। সব কু এর মূলেই আছে ধর্ম - এমন সরলীকরণ অযৌক্তিক।

দ্রোহী এর ছবি

সব "কু" না হলেও বেশিরভাগ "কু" এর মূলেই ধর্মবিদ্ধেষ অন্যতম কারণ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আংরেজি 'all' এর বাংলা কবে থেকে 'বেশিরভাগ' হয়ে গেলো মেম্বর? আপনিও দেখি ক্ষেত্র বিশেষে পাল্টি মারা ধরলেন। সক্রিয় রাজনীতিতে নামছেন নাকি সামনে?

দ্রোহী এর ছবি

হুদাই ত্যানা প্যাঁচায়া লাভ আছে? ধর্মবিদ্বেষের কারণে একজন মানুষ খুন হইলেও সেইটার দায়ও ধর্মের গায়েই পড়ে।

কোনদিন শুনছেন কোন নাস্তিক/নিরীশ্বরবাদি গোষ্ঠি বা ব্যক্তি শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিন্নতার কারণে একজন আরেকজনরে খুন করছে?

আরেকটা কথা। আমার প্রথম জেনারেলাইজড কমেন্ট "The root of all evil" মূলত The God Delusion বইয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা ডকুমেন্টারি। সময় পেলে 'খোলা মনে' বইটা পড়ে দেইখেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

অতো পড়েও যদি 'মন খোলা' না হয়, যদি তারপরেও জেনারালাইজড মন্তব্যই করতে হয়, তাইলে আর অতো পড়ার ফায়দা কী মেম্বর? দ্য গড ডিল্যুশন পড়ছি, কিন্তু আপনার উল্লিখিত তথাকথিত 'খোলা মন'এর অধিকারী হতে পারি নাই এখনো যে হুট করে এক লাইনের একটা দায়িত্বহীন মন্তব্য করে আবার সেইটা আঁকড়ে ধরে বসে থাকবো।

আপনে যাইহোক, এখন আপনের বাণী চিরন্তনীরে ডিফেন্ড করতে গিয়া পুরা টেক্সটাইল মিলস্ খুইলা বসছেন। গুড লাক।

দ্রোহী এর ছবি

তাইলে আর কী! বোরাকে চইড়া বসেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ধন্যবাদ। বোরাক কিংবা টেক্সটাইল মিলস্- দুইটার কোনোটাতেই কোনো আগ্রহ নাই।

দ্রোহী এর ছবি

আগ্রহ নাই কিন্তু ধর্ম বিশ্বাসের ভুলভ্রান্তি নিয়ে সমালোচনা সইতে পারেন না। যখন যৌক্তিক কিছু জিগাই তখন "বালছাল" বলে এড়ায়ে যান। দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ঠিক। রাস্তায় গর্ত দেখলেই হাগতে বইসা পড়তে আমার আপত্তি আছে। হাগোনের জন্য আলাদা, নির্দিষ্ট জায়গা আছে, এইটা আমি বিশ্বাস করি। এখন আমার এই যত্রতত্র না হাগতে চাওয়াটারে আপনে আমার কষা রোগ বলেও মনে করতে পারেন, আপনে স্বাধীন। আমি আপনেরে ডায়রিয়ার রোগী কমু না।

যাউকগা, আপনের লগে এইখানে কথা বাড়ানের যেই কারণ সেইটারে ধর্মবিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সুগার কোট লাগানোর কোনো দরকার নাই। বালছাল ওয়াজ কইরা মোল্লাগো মতো এদিক ঐদিক দৌড় পাইরেন না।

এক জায়গায় জেনারালাইজেশনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করবেন, আরেক জায়গায় গিয়া নিজেই জেনারালাইজ মন্তব্য মোবারক প্রসব করবেন, এই ধরণের পাকনামী দেখতে বা করতে আপনের আনন্দ লাগতে পারে, সবার হয়তো না।

আর আপনের যেইটা বিরক্ত লাগছে সেইটা হলো, মোল্লাগো মতো আপনেও সুবিধামতো শব্দের অর্থ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই পাল্টিটা শুরুতেই করলে এতো কথা খরচ করতে হতো না। এইরকম মওদূদের মতো হরহামেশা পাল্টাপাল্টি করলে দ্য গড ডিল্যুশন আর 'খোলা মন' কি কোনো কাজে আসবে মেম্বর?

দ্রোহী এর ছবি

আমি কোন জায়গায় জেনারেলাইজেশনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলাম?

কিন্তু ধর্মরে কিছু কইলেই আপনে চ্যাতেন কেন? পারলে যুক্তি দেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

হ, চ‌্যাতি ক্যান! চিন্তিত

একটা গ্রহণযোগ্য কারণ হইলো, আমি আগামিতে পয়গম্বর ইলেকশনে নামতাছি কিতাব-কুতাব লৈয়া। আপনে আমার পয়গম্বর ব্যবসার পেডে লাত্থি মারবেন, আমি চ্যাতুম না!

এইডা ছাড়া আপনেরে দেওনের মতো আর কোনো যুক্তি খুঁইজা পাইলাম না মেম্বর।

দ্রোহী এর ছবি

হে হে হে। আমার ভোট লিচ্চিত পাইবেন।

পয়গম্বর ব্যবসা খুব ভাল ব্যবসা। মূলধন লাগে না। আমারে শেয়ারে লইয়েন। দুর্নীতির পার্টটুকু আমি সামলামু।

দ্রোহী এর ছবি

খাইছে! কী বাটে ফালাইলেন! আইনস্টাইনের ছবি প্রোফাইলে লাগাইতে যদি ধার্মিক হইতে হয় তাহলে তো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ইহুদি-নাছাড়া হওয়া লাগবো।

তবে আপনার তথ্যে ভুল আছে। আইনস্টাইন গোঁড়া ধার্মিক ছিলেন না। নিউটন ছিলেন গোঁড়া ধার্মিক। আর "গোরা ধার্মিক" বলে কিছু নাই। শব্দটা "গোঁড়া ধার্মিক"। দেঁতো হাসি

ইন্টারনেট ঢুঁড়ে দেখা যাক ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আইনস্টাইন নিজে কী বলে গেছেন:

“It was, of course, a lie what you read about my religious convictions, a lie which is being systematically repeated. I do not believe in a personal God and I have never denied this but have expressed it clearly. If something is in me which can be called religious then it is the unbounded admiration for the structure of the world so far as our science can reveal it.”

সূত্র: Albert Einstein, in a letter March 24, 1954; from Albert Einstein the Human Side, Helen Dukas and Banesh Hoffman, eds., Princeton, New Jersey: Princeton University Press, 1981, p. 43.

আরেকটা দেখা যাক:

“I am a deeply religious nonbeliever.… This is a somewhat new kind of religion.”

সূত্র: Albert Einstein, in a letter to Hans Muehsam, March 30, 1954; Einstein Archive 38-434; from Alice Calaprice, ed., The Expanded Quotable Einstein, Princeton, NJ: Princeton University Press, 2000, p. 218.

দেঁতো হাসি

sh21 এর ছবি

আপনার এই কথা বলার আগে প্রোফাইল পিকচার থেকে আইনস্টাইনের ছবিটা সরিয়ে ফেলুন।।উনি গোরা ধার্মিক ছিলেন।

এমরান খান এর ছবি

ভাই, এই বাক্যের শেষে একটা জিজ্ঞাসাচিহ্ন আছে - http://en.wikipedia.org/wiki/The_Root_of_All_Evil%3F

আপনার সাথে একমত যে, সব না, অধিকাংশ ইভলের মূল ধর্ম। এটা বুঝতে রকেটবিজ্ঞানী হতে হয় না। সেটা মনে মনে বোঝেও সবাই, কিন্তু স্বীকার করে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

Religion: the root of all evil

এর প্রেক্ষিতে পরবর্তী মন্তব্যসমূহ মন দিয়ে পড়লাম।

আমি একটা জিনিস জানতে চাইছিলাম -
শুভাশীষদায়ের এই পোস্টে অন্যান্য religion নিয়ে আলাপ নেই। মূল টপিক, বিশ্ব মিডিয়া যে টেরোরিজমের নতুন ডেফিনিশন ইসলাম করে ফেলছে/ফেলেছে সেই ব্যাপারটা নিয়ে আপনার মতামতটা কি?

p.s: নিচে কোলবার্টের একটা ফানি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করছি, দেইখেন। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

এমরান খান এর ছবি

"বিশ্ব মিডিয়া যে টেরোরিজমের নতুন ডেফিনিশন ইসলাম করে ফেলছে/ফেলেছে"

মন্তব্যটা পড়ে মনে হচ্ছে, বিশ্ব মিডিয়া জোট বেঁধে ইসলামকে ধরে বেঁধে টেরোরিজমনের সমার্থক বানিয়ে ফেলছে বা ফেলেছে। যেন ইসলামী সন্ত্রাসীরা কোনো ভিত্তি দেয় নি। যেন তারা বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত। আর তাই সবই মিডিয়ার ষড়যন্ত্র। মিডিয়ার সৃষ্টি। অথচ গত ১৫-২০ বছরে ধর্মের নামে যত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তার কত শতাংশ অমুসলিমদের ঘটানো? সঠিক তথ্য হয়তো কেউই দিতে পারবে না, তবে ইসলামী সন্ত্রাসীরা যে এখানে সম্পূর্ণভাবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, এ নিয়েও কি কারো সংশয় আছে? থাকলে বলতেই হয়, হায়, দেখেও না দেখতে চাইলে দেখানো তো সম্ভব নয়।

কোলবার্টের একটি ভিডিও দিলেন বটে, তবে তাঁরই বানানো ইসলাম ও ইসলামী সন্ত্রাসী নিয়ে রঙ্গসনিকতা করা ভিডিওগুলোওর কয়েকটা দিলে মন্দ হত না মনে হয়। নাকি তাঁর সেই ভিডিওগুলো সেই মিডিয়া ষড়যন্ত্রের অংশ?

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

অথচ গত ১৫-২০ বছরে ধর্মের নামে যত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তার কত শতাংশ অমুসলিমদের ঘটানো? সঠিক তথ্য হয়তো কেউই দিতে পারবে না, তবে ইসলামী সন্ত্রাসীরা যে এখানে সম্পূর্ণভাবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, এ নিয়েও কি কারো সংশয় আছে?

অনেকেরই। না, ঠিক সংশয়ও না, তাঁরা নিঃসংশয়, যে আপনি যা বলছেন তা মিথ্যা। মন খারাপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অথচ গত ১৫-২০ বছরে ধর্মের নামে যত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তার কত শতাংশ অমুসলিমদের ঘটানো? সঠিক তথ্য হয়তো কেউই দিতে পারবে না, তবে ইসলামী সন্ত্রাসীরা যে এখানে সম্পূর্ণভাবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, এ নিয়েও কি কারো সংশয় আছে?

বিশ্বাস আর সংশয় দুইটাই খুব খারাপ জিনিস! ঠিক কিনা? নাকি কোনোকিছুতে বিশ্বাস থাকা মানে পশু, একই বিষয়ে সংশয় থাকা মানে মানুষ?

যাউকগা, একটা গল্প শুনাই। বিদেশে আসার পরে আমার এক দোস্ত ক্লাসে টিচারের একটা প্রশ্নের জবাব পারে নাই। মোটামুটি মানসম্মান নিয়া টানাটানি পরিস্থিতি। এরপর টিচার তারে জিজ্ঞেস করেছে, কোন দেশের লোক। সে কোনোরকম ইতস্তত না কইরা কইয়া দিছে পাকিস্তান! মোটিভেশন: মানসম্মান গেলে পাকিস্তানের যাবে।

ইসলামকে সন্ত্রাস হিসেবে দেখানোর কাজটা ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাস করে, তারাও করে, ইসলামের পুন্দে বাঁশ দেয়ার জন্য যারা হ্যাজাক লাইট হাতে নিয়া ঘুরে, তারাও করে। এই দুইদলেরই কাম ইসলামের পুন্দে বাঁশ দেয়া। সুতরাং লাদেনবাহিনী যে ইসলামের দুর্ণামের জন্য আকাম করে না, তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?

ইসলামে বিশ্বাসী বেশিরভাগ মানুষই অন্যের পাছায় হুদাকামে ইসলামের নির্দেশ মনে করে আঙুল দিয়ে বেড়ায় না। আঙুল দেয়া ইসলামের কাজ হলে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বাংলাদেশের সব 'হিন্দুর মাইয়া'ও গণিমতের মালের মতো ভাগ হইয়া যাইতো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

এমরান খান এর ছবি

"কোনোকিছুতে বিশ্বাস থাকা মানে পশু, একই বিষয়ে সংশয় থাকা মানে মানুষ?"

প্রথমতঃ বিতর্ককে বাঁকা পথে না নেওয়াটাই বোধহয় ভাল হবে। এখানে তো কেউ কাউকে অমানুষ বা পশু বলে সম্বোধন করছে না।

দ্বিতীয়তঃ কোনেকিছুর সলিড ফ্যাক্ট, প্রমাণ, সাক্ষ্য থাকলে সেখানে সংশয়ের প্রশ্ন থাকে না। তবে সেটাতে বিশ্বাস স্থাপন করা আর অপ্রমাণিত বা কল্পিত কিছুতে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্যে বিশাল তফাত আছে। প্রথমটা কনফিডেন্স, দ্বিতীয়টা ফেইথ।

যুগে যুগে কিছু মানুষ ফেইথে ও প্রচলিত চিন্তাধারায় সংশয় করে এসেছে বলেই পৃথিবী এগিয়েছে, সভ্যতা এগিয়েছে। পৃথিবী সমতল ও তার চারপাশে সূর্য ঘুরছে নামের প্রাচীন বিশ্বাস নিয়ে পড়ে থাকলে খুব ভাল হত?

অপ্রমাণিত কোনোকিছুতে সংশয়ই অগ্রগতির চালিকাশক্তি।

পূর্ব প্রসঙ্গে বলি, সাম্প্রতিককালে ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসে ইসলামী জঙ্গিদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কথা যদি আপনি অস্বীকার করেন, তাহলে বিতর্ক এখানেই থামিয়ে দেওয়া উচিৎ। আর একটি কথা বলেই শেষ করি, এই বিতর্কে কেউ কোথাও একবারও দাবি করে নি যে মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী। তাই বারবার এই প্রসঙ্গের অবতারণা রেড হেরিং বলে মনে হচ্ছে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভাইরে, আমার স্বীকার-অস্বীকারে কি আপনার 'বিশ্বাস' পালটাবে?

আঁকাবাঁকা পথ মনে হলে আরেকটু শর্টকাট করি। মনে করেন, আপনার মনে খায়েশ জাগলো ওবামা বাংলাদেশ ভিজিটের সময় তার গাড়িতে বোমা মারবেন। আপনি 'আল্লাহু আকবর' কইয়া মাইরা দিলেন। আপনার নামটাও মাশাল্লাহ খানদানি 'ইসলামী' নাম। আপনারে কি এক্ষেত্রে 'ইসলামী সন্ত্রাসী' কওন যাইবো? আপনার বোমা মারনটাকে কি 'ইসলামী সন্ত্রাস' ডাকা যাবে?

এই উদাহরণে আমি দায়টা দিচ্ছি যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আকামটা করছে, তার ওপর। মিডিয়া বা আপনি 'ইসলামী জঙ্গি' ট্যাগিং করে দোষটা দিচ্ছেন ইসলামের ওপর। এতে সমস্যা হলো প্রকৃত অপরাধী ইসলামের নামে একটা ঢাল পেয়ে যায়, আকাম করে তার মুক্তি পাওয়াটা সহজ হয়। ইসলামকে ঢাল হিসেবে সেও অপব্যবহার করছে, আপনিও সেই অপব্যবহারের ভিত্তিতে ইসলামকে দায়ী করছেন, যদিও ইসলাম পালনকারী সিংহভাগ মানুষই আকাম করছে না।

আরেকটা রিলেটেড উদাহরণ দিয়ে আপনার সাথে আলোচনা শেষ করি। একাত্তরে পাকিস্তানীরা আমাদেরকে হত্যা-ধর্ষণ করেছিলো 'সাচ্চা মুসলমান' বানানোর জন্য। এটার দায়ও কি ইসলামের? বাংলাদেশের মানুষ কি আসলেই সাচ্চা মুসলমান ছিলো না!

উত্তর না দিলেও চলবে। চিন্তাভাবনা করলেই যথেষ্ট।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

এমরান খান এর ছবি

কথা আর বাড়াতে চাইছিলাম না। কিন্তু দু'টি কথা আবারও বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার মন্তব্যের কারণে। আপনার যেটা বিশ্বাস, সেটা ফেইথ। প্রমাণ, যুক্তি সেটা পাল্টাতে পারে না। আর আমার 'বিশ্বাস' বলে যে খোঁচাটা দিতে চাইলেন, সেটা তথ্য, প্রমাণ ও বাস্তবতা থেকে পাওয়া কনফিডেন্স (এটার বাংলাও 'বিশ্বাস' হতে পারে, তবে সেটা ফেইথের বিশ্বাসের সঙ্গে কেনোভাবেই মেলে না)।

যখন কোনো ব্যক্তি ধর্মের নাম নিয়ে অপকর্ম করে এবং ধর্মগ্রন্থ তার কাজকে ন্যায্যতা দেয়, সেখানে আমি ধর্মের দোষই দেখবো। কিন্তু ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন কুকর্মের ক্ষেত্রে অপরাধীর ধর্ম আমার কাছে একেবারেই বিচার্য নয়। একজন মুসলমান চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বা খুন করল বলেই সেখানে ইসলাম দায়ী, সে কথা কখনো মাথায় আসে না।

একাত্তরের প্রসঙ্গ তুললেন যখন, বলি। একাত্তরের গণহত্যা তারা যদি ইসলামের নামে করেও থাকে, সেটার কোরানীয় বা হাদিসীয় ভিত্তি নেই বলে সেখানে ইসলামকে দায়ী করা নির্বুদ্ধিতা। কিন্তু বাঙালি মেয়েদেরকে গণিমতের মাল ঘোষণা দেওয়ার ভিত্তি কিন্তু তারা ইসলামেই পেয়েছে।

আপনার কথাটাই আপনাকে ফিরিয়ে দিই - উত্তর না দিলেও চলবে। চিন্তাভাবনা করলেই যথেষ্ট।

দুর্দান্ত এর ছবি

সুতরাং লাদেনবাহিনী যে ইসলামের দুর্ণামের জন্য আকাম করে না, তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?

বেশ মজা পাইলাম!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

কোলবার্টও ওয়েস্টার্ন, আর তার সব কিছুই মনোমুগ্ধকর এটা বলেছি তো মনে হয় না। এই ভিডিওতে তার সারকাজম উইটি লেগেছে, শেয়ার করেছি। সেই সত্য ধ্রুব বাকি সব মিথ্যা বুজরুকি এইটা প্রচার করতে মাঠে নামি নাই, আমাকে পয়সাও দেয় নাই অ্যাডভার্টাইজ করতে। আর ঐখানে বলেওছি, অ্যাগ্রি বা ডিজাগ্রি করতেই পারেন কেউ, আমার কাছে এন্টারটেইনিং মনে হয়েছে ক্লিপটা, দ্যাটস অল।

আর আমার প্রশ্নটা দ্রোহী'দাকে ছিল। আপনাকে প্রতিমন্তব্য করতে চাচ্ছি না, তাতে করে উপরে নিচে যত তর্ক হয়েছে, সবকিছু পুনরায় রিপিটের সম্ভাবনা দেখছি, সেটা একটা চরম সিস্টেম লস হবে অন্তত আমার জন্যে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। ভালো থাকবেন।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দিহানের শেষ পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় আর এই পোস্টে একই মন্তব্যকারী(দে)র মন্তব্যের ভিন্নসুর দেখে ধারণা করছি নিশ্চয়ই আমরা ভ্রান্তির মধ্যে আছি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পিপিদা, কোন পোস্ট?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটার কথা বলছেন মনে হয়।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

থ্যাংক্স।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ব্লগে পুরানো হয়ে যাওয়ার সমস্যা হলো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়। তবে আশা করি এই কনফ্লিক্ট ব্লগেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ব্যক্তিগত জীবনে যেন না আসে। দিহানের আগের কয়েকটা পোস্টও পড়ে দেখতে পারেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

পিপিদা, এই কথা বললেন? এই দেখেন, আমি এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছি বলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট এড়াতে এটার কোনো কমেন্ট মডারেট করিনি। কিন্তু আপনি এখানে কমেন্ট করা সত্ত্বেও এটায় আমার পক্ষে আসা প্রতিটা কমেন্ট নিজেহাতে ঘ্যাচাং করেছেন, আমি মড-লগে দেখেছি। এটা কি ঠিক হল? আসছে মডু-মিটিংয়ে আপনাকে ইমপীচ করার কথা তুলতেই হবে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

একেবারে, এই কথাটাই আমার মাথায় ঘুরছিলো আজকে সকাল থেকে। সেখানে দেখলাম জেনারালাইজেশন নিয়ে তোলপাড় অবস্থা। কৌস্তুভকেও মনেহলো দেখলাম সেখানে জেনারালাইজেশনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে, অথচ এখানে দেখছি সে নিজেই জেনারালাইজ করে মন্তব্য দিচ্ছে। নীতিবোধ ক্ষেত্র বিশেষে একশ আশি ডিগ্রিতে ঘুরে গেলে তো ব্যাপক সমস্যা।

বাসার এর ছবি

দুর্দান্ত আলোচনা। ভাল লাগলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সবাইকে আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।

একটু স্পষ্ট করি। মার্ক্সের কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললেই বোঝা যাবে-

আ স্পেক্‌টার ইজ হান্টিং আমেরিকা, দা স্পেক্‌টার অব ইসলাম।

যেকোনো ফোবিয়াই খারাপ। আর এই ইসলামোফোবিয়ার সৃষ্টির পেছনে মূল অবদান মিডিয়া আর আমেরিকান অ্যাকাডেমিয়ার খ্যাতনামা কিছু লোকজনের।

স্যামুয়েল হান্টিংটন আর বার্নাড লুইসের কথা নিশ্চয় জানেন। মনগড়া কথাবার্তা সাজিয়ে হান্টিংটন ‘দা ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন’ বই ফেঁদে বসেন। বইয়ের নাম চোথা মারা লুইসের একটা আর্টিকেল থেকে। বার্নাড লুইস বিশাল ব্যানারের লোক। প্রিন্সটনের এমারিটাস প্রফেসর। খ্যাতনামা প্রাচ্য বিশারদ নামে পরিচিত। ইসলাম, আরব, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর অনেক বই। তাঁর গবেষণা আনবায়াসড্‌- এটা বলা যাবে না। ইসলামের ভালো কথাগুলো কিছু কিছু বললেও এই ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে প্রচারে তাঁর কিছুটা ভূমিকা আছে। তাঁর এই বাতচিতের ফাঁক-ফোকর নানা জায়গায় ধরে ধরে দেখিয়েছেন এডোয়ার্ড সায়ীদ তাঁর নানা লেখায়। জানিয়ে রাখা ভালো, বার্নাড বুশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পলিসিমেকার ছিলেন। ইরাক যুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড ও তিনি। এমনকি ভবিষ্যতের ইরান হামলারও। সন্ত্রাসে মুসলমান চরমপন্থীরা সবার চাইতে এগিয়ে- সরাসরি এই প্রায়-রেইসিস্ট কথা তিনি বলেন না। টুইস্ট করেন। যেমন-


Lewis, Bernard, The Crisis of Islam: Holy War and Unholy Terror, Random House Trade Paperbacks, March 2, 2004, pp. 137

হান্টিংটনের লেখালেখির ফোকরগুলোও সায়ীদ ধরিয়ে দিয়েছেন। এই লেখা থেকে একটু কোট করি-

We can leave to one side the fact that, between them, Europe and the US account for by far the largest number of violent deaths during the 20th century, and the Islamic world hardly a fraction of it. And behind all of that specious unscientific nonsense about wrong and right civilizations, there is the grotesque shadow of the great false prophet Samuel Huntington who has led a lot of people to believe that the world can be divided into distinct civilizations battling against each other forever. On the contrary, Huntington is dead wrong on every point he makes. No culture or civilization exists by itself; none is made up of things like individuality and enlightenment that are completely exclusive to it; and none exists without the basic human attributes of community, love, value for life and all the others. To suggest otherwise as he does is the purest invidious racism of the same stripe as people who argue that Africans have naturally inferior brains, or that Asians are really born for servitude, or that Europeans are a naturally superior race. This is a sort of parody of Hitlerian science directed uniquely today against Arab and Muslims, and we must be very firm as to not even go through the motions of arguing against it. It is the purest drivel.

কৌস্তুভ এর ছবি

যেকোনো ফোবিয়াই খারাপ।

phobia: a persistent, irrational fear of a specific object. সহমত।

মন_মাঝি এর ছবি

সন্ত্রাসে মুসলমান চরমপন্থীরা সবার চাইতে এগিয়ে- সরাসরি এই প্রায়-রেইসিস্ট কথা তিনি বলেন না

চলুক

কৌস্তুভ এর ছবি

এই স্টেটমেন্টটাকে যে (প্রায়)রেসিস্ট বলা হয়েছে, সেটা আগে দেখলেও আপনি হাইলাইট করায়ই মনে হল যে উত্তর দেওয়া যেতে পারে। তা রেস-সম্পর্কে সত্যি কথা বললেই যে সেটা রেসিজম হয়ে যায় না, সেটা আপনার প্রতিমন্তব্যেই একটু বলি।

"আফ্রিকান কালোদের IQ কম, সাদাদের তুলনায়।" - সাতোশি কানাজাওয়া।

"(আফ্রিকান-আমেরিকান) কালোদের মধ্যে HIV-র হার অনেক বেশি, সাদাদের তুলনায়।" আমেরিকা সরকারের পরিসংখ্যান।

দুটোই কিন্তু কালোদের রেস-এর সম্পর্কে নেগেটিভ তথ্যগত মন্তব্য। তফাতের মধ্যে, প্রথমটা অপ-রিসার্চ (ফলে মিথ্যে), দ্বিতীয়টা সত্যি। দুটোকেই যদি (প্রায়)রেসিস্ট কমেন্ট বলে একই কাতারে ফেলতে চান, তাহলে সেটা দুঃখজনক।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

গোছানো একটা লেখা শুভাশীষদা। দেরি করে পড়া হলো। শেয়ার করলাম।

খানিক আগেই ফেসবুকে কিছু বন্ধুদের শেয়ার করা Stephen Colbert-এর The Colbert Report এর একটা সাম্প্রতিক ক্লিপ দেখলাম, শেয়ার করি এইখানে। সবাইকে এবং যাঁরা উত্তপ্ত আলোচনা করেছেন উপরে তাঁদেরকে, বিশেষত কৌস্তুভকেও দেখার অনুরোধ রইলো। অ্যাগ্রি করুন আর ডিস্যাগ্রি, ক্লিপটা অন্তত এন্টারটেইনিং

খুব বেশি রেলেভ্যান্ট না হলেও একটা টেড টকও শেয়ার করি এইখানে, কারণ ইওরোপ, টেররিজমের নতুন ঘাঁটি আর টেরোরিজমের অর্থায়ন নিয়ে টকটা অতটা ইরিলেভ্যান্টও না - Loretta Napoleoni: The intricate economics of terrorism, এটা আবার খুব অল্প যে কিছু বাংলায় সাবটাইটেল আলা টেড টক আছে এ পর্যন্ত তার একটা!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ফাহিম হাসান এর ছবি
এমরান খান এর ছবি

কোলবার্টের ভিডিও সম্পর্কে উপরে মন্তব্য করেছি। দয়া করে পড়ে নেবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

দারুণ ভিডিও। ধন্যবাদ। কোলবার্টকে আমার বেশ পছন্দ। আর সে কিন্তু মেনস্ট্রিম আমেরিকান মিডিয়ারই অংশ। এটাই দেখ, যে ইসলামীদের ১০০% যেমন সন্ত্রাসবাদী নয়, তেমনই মিডিয়ার ১০০%-ও ইসলামোফোবিক নয়। আর তারা ওই -ফোবিক অংশটাকে প্রায়ই সমালোচিত করে।

এই নরওয়ে উগ্রবাদের উপর আরো একটা ভিডিও, যেটার সাথে আমি অনেকটাই সহমত (মাল্টিকালচারিজম নিয়ে বিশেষ জানিনা বলে ওই অংশটা বাদে)

আর আলোচনার সঙ্গে আংশিক প্রাসঙ্গিক হিসাবে আরো একটা ভিডিও (তুমি দুইটা দিয়েছ বলে আমিও দুইটা দিলাম খাইছে )

আচ্ছা, অফটপিক, টেডটকের কথায় - একটা টক ট্রান্সলেট করে বউনি করলাম, সেটা এখন মডারেশনের (রিভিউয়ের) অপেক্ষায়। আর প্রকাশিত হওয়া দুয়েকটা খুঁটিয়ে দেখছিলাম, বানান বা বাক্যগঠনে কিন্তু ব্যাথা আছে। ফীডব্যাক দিতে হবে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ভায়োলেন্স যে কোন কিছুর সলুশন না সেই ব্যাপারটা শান্তিপ্রিয় প্রতিটা মানুষেরই বোঝার কথা, মানার কথা। সেই বাণী প্রচারের সাথে সাথেই আবার "Islam is still a totalitarian ideology that actively threatens our freedom" ... জাতীয় কথা চলে আসাটা আবার বেশ এক্ট্রিম, ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কোন বিষয় নিয়েই এক্সট্রিমিজম অপছন্দ করি!! আচ্ছা, এই ভদ্রলোক কে সেটা জানি না, খুঁজেও পেলাম না ভিডিও থেকে।

দ্বিতীয় ভিডিও প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি। কে কেন ধর্ম পালন করবেন, বা কেন করবেন না সেগুলো সম্পূর্ণ তার ব্যাপার। বিজ্ঞানী হয়েও পূজো করবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, আর কে উচ্চশিক্ষিত হয়েও দুনিয়ার যে যা খুশি ধর্ম বা কালচার বা রীতিনীতি ফলো করুক তা নিয়ে ওপেন মাইন্ড রাখতে পারবে না, সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, এবং আমার অবজেকশনের কারণ হতে পারে না যতক্ষণ না তারা অন্যান্য মানুষকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আহত করছে। As that very person in the first video said - freedom of speech is what is needed to be defended for change for the greater good. আর এই কে, কী করবে, বা কেন করবে বা কেন করবে না, সেটা নিয়ে ব্যাক্তি আমি মাথা ঘামাতে রাজি নই। কাওকে জোরাজুরি করতে, সে ভুল সেটা প্রমাণ করতে, বা আমার পয়েন্ট অফ ভিউই ঠিক, সেটা প্রমাণ করতে পারতপক্ষে সময় খরচ করতে রাজি নই। আমার দিনটা ৩৬ ঘন্টার না, নিজের কাজ শেষ করতেই অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়, সময়ের অপচয়ের জন্যে একটা অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা দেখে নেবনি বরং! তবে অন্যের মতের প্রতি বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা রেখে তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে বর্তমান শিক্ষিত আধুনিক বিশ্বের কাছে একটু যেন কঠিন হয়ে পড়ছে দেখছি দিন দিন। ব্যাপারটা আসলেই শেখার, জানার, বোঝার। এটাও ঠিক পরিচিত উচ্চ শিক্ষিত বা প্রচুর পড়ালেখা করেন বা বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ রাখেন, এমন ইওরোপিয়ান ও আমেরিকান বন্ধু আছেন যারা অসম্ভব সহনশীল আর শ্রদ্ধা রাখেন সবার ধর্মীয় আদর্শের প্রতিও।

এমনিতে তোমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যদি শুধু ক্যাচাল প্রিয় মুসলিম, আর মূর্খ মওলানাদেরই দেখে থাকো তাহলে তোমার জন্যে দুঃখ বোধ করছি। বিশ্বের অধিকাংশ সাধারণ মুসলমানই আসলে বেশ শান্তিপ্রিয় নীরিহ টাইপের, সেটা নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। এরা নিজেরা ভালো মতন পড়ালেখা করে মূর্খ মোল্লাদের জায়গাটা দখল করে নেয় না বলেই মূর্খদের ফতোয়াই বেশি প্রচার প্রসার পায়। আবার একই কথা সত্য বিশ্বের অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর অংশের জন্যেও, এটাও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ইসলাম শব্দটার অর্থ শিখেছিলাম 'শান্তি', আর ইসলাম ভায়োলেন্স আর এক্সট্রিমিজম দুইই অপছন্দ করে, এইটাও ছোটকালে শিখেছিলাম। ইসলামের নাম নিয়ে যারা নীরিহ মানুষ হত্যা আর সম্পদ ধ্বংস করতে পারে, তার আর যাই হোক ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না, মুসলিম তো নয়ই, এইটা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি। 'জিহাদ'-এর একটা রূপ কিন্তু ব্যক্তি জীবনের রিপুরর বিরদ্ধেও, সেটা কি জানো? কিন্তু ইসলামের নামে সন্ত্রাসের কারণে বিশ্বব্যাপী 'জিহাদ' শব্দটার পার্টিকুলার একটা বিশেষ অর্থ হয়ে গেছে। মুশকিল হলো জার্নালিস্টরা কিন্তু ভালোমত রিসার্চ করছেন না একেকটা বিষয় নিয়ে, তা সে ইসলাম বা সন্ত্রাস হোক, আর অন্য কোথাও অন্য কোন কিছু। কারণ এখন প্রতি মূহুর্তে কী ঘটছে সেটা কভার করে, চটকদারভাবে খবর পরিবেশন করে অন্য চ্যানেল থেকে নিজেদের চ্যানেলে দর্শক ধরে রাখাটাই মুখ্য হয়ে পড়েছে। আর সেই ব্যাপারটাই এই পোস্টের সাথে রেলেভ্যান্ট একটা আলোচনা মনে হচ্ছে।

টেড টকের ব্যাপারে - অনুবাদের পুরা কাজটাই ভলান্টারি। একজন অনুবাদ করে সেটা রিভিউয়ের জন্যে জমা দিয়ে বহুদিন বসে থাকতে হতে পারে কারন আরেকজন ভলান্টিয়ারের যতক্ষণ না ঐটা রিভিউয়ের ইচ্ছা হচ্ছে, ততক্ষণ হবে না কাজটা। কাজেই এক্ষেত্রে একজন পার্টনার রিভিউয়ার সাথে নিয়ে করলে দ্রুত হয়, সুবিধাও হয়। তবে সবাই মিলে অনুবাদে অংশ নেয়া দরকার, বাংলায় অনুবাদ খুব কম অন্যান্য ভাষার তুলনায়, আর বেশিরভাগটাই পরিচিত দুই একজন ছাড়া তেমন কেউই করছেন না।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

কৌস্তুভ এর ছবি

প্রথম ভিডিওয় ব্যক্তি প্যাট্রিক কন্ডেল

আমার অনুমানই ছিল যে আমার বক্তব্যের প্রতি খানিকটা মিল থাকা ভিডিওগুলোর সাথে তুমি সহমত হবে না। তোমার প্রতিমন্তব্যের কোন অংশগুলোর সাথে আমি সহমত নই সেটা তুমিও সহজেই বুঝতে পারবে। অতএব এই পর্যন্তই থাক, রিফিউট করার চেষ্টায় গেলে আবার প্রচুর কথা বাড়বে।

নিরীহ ধর্মানুরাগী? দুনিয়ায় কই আর... তোমার উপর ভরসা ছিল, তুমিও মাইর দেবার স্লট বুকিং করার পর থেকে... মন খারাপ খাইছে

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সবাই সবকিছুতে সহমত হলে সমস্যা।
আর দুনিয়ায় কারো উপরই ভরসা রাখার কোন দরকার নাই, নিজের উপর ছাড়া।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

এমরান খান এর ছবি

"বিশ্বের অধিকাংশ সাধারণ মুসলমানই আসলে বেশ শান্তিপ্রিয় নীরিহ টাইপের" - এই কথায় এক বিন্দু দ্বিমত নেই। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় "সব মুসলমান টেররিস্ট নয়, তবে প্রায় সব টেররিস্টই মুসলমান" বলে (এখানে ধর্মের নামে করা সন্ত্রাসের কথা বলা হচ্ছে)।

"ইসলাম শব্দটার অর্থ শিখেছিলাম 'শান্তি'- তাই কি? ইসলাম মানে তো সাবমিশন। অন্তত আমি সেটাই জানি। "সালাম" শব্দের মানে শান্তি।

"ইসলাম ভায়োলেন্স আর এক্সট্রিমিজম দুইই অপছন্দ করে, এইটাও ছোটকালে শিখেছিলাম।" - আমিও তাই শিখেছিলাম। মানে বলা হয়েছিল, আমি বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু পরে কোরানে প্রচুর অশান্তিসূচক (কখনও কখনও রীতিমত আপত্তিকর ও অমানবিক) আয়াতের সন্ধান পেয়ে বুঝে গিয়েছিলাম, আমাকে ঠিক শেখানো হয়নি। অনেক সময়ই কিছু ভিত্তিহীন কথা রটে গিয়ে সত্য হিসেবে টিকে থাকে। যেমন, শিক্ষার্জনের জন্য সূদুর চীন পর্যন্ত যাওয়ার কথা নবী কোথায় বলেছেন, সেটার উৎস আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। কোরান বা হাদিসের কোথাও নেই। অথচ কথাটা বিশ্বজুড়েই মুসলিমদের ভেতরে প্রচলিত।

"ইসলামের নাম নিয়ে যারা নীরিহ মানুষ হত্যা আর সম্পদ ধ্বংস করতে পারে, তার আর যাই হোক ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না" - বুঝতে পারি, এটা আপনার ভাবতে ভার লাগে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ওপরে কৌস্তুভের দেওয়া লিংকেই কিছু নমুনা পাওয়া যাবে। অমুসলিদেরকে হত্যার কথা (তারা তো নিরীহও হতে পারে), তাদের ধনসম্পদ লুটের কথা কোরান-হাদিস ঘাঁটলেই পাবেন। আরও পাবেন মুসলমানদেরই রচিত ইসলামের ইতিহাস পড়লে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (অফ্লাইন) এর ছবি

ঠিকাছে। তালগাছটা আপনাকে দিলাম

সুমন_তুরহান এর ছবি

সহমত। তাছাড়া বেশীর ভাগ মুসলিম সন্ত্রাসীরাই আরব বংশোদ্ভুত, কাজেই তারা ইসলাম বা কোরান ঠিকমতো বোঝে না, জানে না - মডরেটদের এই জাতীয় যুক্তি খুবই করুণ শোনায়। 'ইসলাম শান্তির ধর্ম', 'ইসলাম নারীকে দিয়েছে সমানাধিকার' - এগুলো ছোটবেলায় খুব মুখস্ত করেছি, এবং ইদানীং খুব শুনছি মডারেট মুসলিমদের মুখে। একটু বড়ো হয়ে যখন সুরা নিসা বাংলায় পড়েছি তখন টের পেয়েছি কেমন নারী অধিকার দিয়েছে ইসলাম।

আরেকটা জিনিস মজার সাথে লক্ষ্য করেছি, এইসব ব্যাপারে আরব মোল্লাদের কথাবার্তায় অনেক মডারেটরাই অস্বস্তিতে ভোগেন। তখন ইসলামের ভাবমূর্তি বাঁচাতে গিয়ে তাদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, 'আরে অমুক মোল্লা নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা দিচ্ছে, কোরানে কোথাও বউ পেটানোর কথা বলে নাই, কোরানে কোথাও চার বিয়ে করার কথা বলে নাই'!

তাহলে কি এই মোল্লা কিংবা এই মোল্লা কিংবা এই মোল্লা নিজের মাতৃভাষা আরবিতে লেখা ধর্মগ্রন্থের/ইসলামি বিধানের ভুল অর্থ করছে? বিন লাদেন আরবি জানতো না? [url=Ibn Taymiyyah]ইবনে তামিয়াহ[/url], [url=Sayyid Qutb]সৈয়দ কুতুব[/url], [url=Muhammad ibn Abd al-Wahhab]আব্দুল ওয়াহাব[/url], [url=Hassan al-Turabi]হাসান-আল তুরাবি[/url] - এরা সবাই কোরানের ভুল অর্থ করেছে? ইবনে ইসহাকের লেখা মুহাম্মদের জীবনীও ভুয়া?

বেশ।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (অফ্লাইন) এর ছবি

এটাও ঠিকাছে।
ইন ফ্যাক্ট এখানে আমি বেশ অনেকটাই সহমত। তবে আমার ইসলামিক জ্ঞান (কুরআন আর হাদীস নিয়েও) এবং ধর্মের আইডিয়া কেন ঠিক না এই সংক্রান্ত পড়ালেখা, দুই ব্যাপারেই ধারণা কম, আর স্মরণশক্তি চরম বাজে বলে যা জানাশোনা আছে তারও রেফারেন্স দিতে পারি না ঠিকমত, তাই আমি তর্ক করতে যাই না।

তবে আমি মডারেটর না কট্টর, অ্যান্টিধর্ম্পাট্টি নাকি চরমধর্ম্পাট্টি, আর আমার কী ভাবতে 'ভালো' লাগে, সেটার আলোকপাত অন্যের কাছ থেকে শুনতে একদমই ভালো লাগে না। হাসি
কেউ আমাকে আম্র থেকে ভালো জানার কথা না। আর আমার নিজের ধর্মীয় বিষয়সমূহের ব্যাখ্যা ধার্মিক/বিধার্মিক কোন পক্ষরই তেমন পছন্দ হয় না, সেটা শুরু করলে এইখানে আলোচনা আরও অন্যখাতে ঘুরে যাবে। কাজেই থাক।

এখানে ইতিমধ্যে ১৩১টা মন্তব্য হচ্ছে আমার নিজেরটা দিয়ে। আমার অবজারভেশন বলে কোন পোস্টে ১০০+ মন্তব্য থাকা মানেই সেখানে একই কথার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ভাবছিলাম জার্নালিজমের একাল-সেকাল, এথিকস, রিসার্চ নিয়ে কিছু ভালো আলোচনা পাবো টাবো, তো মন্তব্যসূত্র একেবারেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে, হয়েই যাচ্ছে, মনে হয় কন্টিনিউ করবে।

কাজেই আমি বিদায় জানাই। এখানে আর ঢুকছি না। আদিউ! হাসি

বইখাতা এর ছবি

আসলে এ ধরনের আলোচনা শেষ হবার নয়। তাই এ নিয়ে কথা বাড়িয়েও লাভ নেই। আমরা সবাই যথেষ্ট বুঝদার, ব্লগে আসি অর্থ্যাৎ কিঞ্চিৎ পড়াশোনাও আছে। নিজের নিজের বুঝ আমরা একে অপরকে সহজে ছেড়ে দেবোনা। তাই এ নিয়ে বরং কথা আর না বাড়াই। কারণ তাতে আসল শয়তানেরা নিজের লক্ষ্য পূরণে কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে, আর আমরা এসব নিয়ে তর্ক করতেই থাকবো। কেউ যদি মনে করে ধর্মই সকল শয়তানির মূলে, ধার্মিকেরা খোলা মনের নন, তারা নিজের বিবেক/চিন্তার ক্ষমতা শত শত বছর আগের কোনো মানুষের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছে, মুসলিমদের মতো সন্ত্রাস আর কেউ করেনা/করেনি, তো ঠিক আছে। যতক্ষন পর্যন্ত না কোনো ধার্মিক (যেকোনো ধর্মের) তাকে কোনো সমস্যা/ক্ষতি না করছে ততক্ষণ এই ব্যক্তিগত চিন্তা/ধারণা নিজের মধ্যেই রাখি নাহয়। যে কোনো সমস্যা করছে না তাকে এইসব চিন্তাভাবনা শুনিয়ে বা তার ধর্মকে দোষ চাপিয়ে তাকে কিছু না বলি। সমস্যা/ক্ষতি যে করছে এবং তাকে সাপোর্ট করছে যারা, শুধু তাদেরকেই দোষারোপ করি। জেনরেলাইজ না করি। কারণ এই ব্যাপারটা খুব সেনসিটিভ। অল্পেই অনর্থক মনোমালিন্য আর ভুল বোঝাবুঝির সূচনা করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মগ্রন্থ যিনি পড়ছেন, শুধু তার ওপরই নির্ভর করছে তিনি এই গ্রন্থের কথাগুলোকে কীভাবে নেবেন, কী রকম ব্যাখ্যা দেবেন। আমার ব্যাখ্যা আমি অন্য কাউকে (খুব সম্ভবত) বোঝাতে পারবো না। আবার অন্যের ব্যাখ্যা আমার কাছে হয়তো গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে এইসব ব্যাখ্যা নিয়ে কথার পিঠে কথা আসতেই থাকবে, কথা আর শেষ হবে না। শেষ হলে তা হবে খুব সম্ভবত (সাময়িক হলেও) তিক্ততায়/মন কষাকষিতে। তাই মনটা আরেকটু 'খোলা ' রাখার চেষ্টা করি সবাই। শয়তানিটা যে করছে, সে মুসলিম বা হিন্দু বা খ্রিস্টান যাই হোক না কেন, দোষারোপটা শুধু তাকেই করি, তার অন্ধত্বের সমালোচনা করি। সরলীকরণ করে সেই ধর্মের মানুষদের বা সেই ধর্মকে সমালোচনা না করি, তাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে না রাখি। কারণ সেই ধর্মের নিরীহ একজন মানুষ তাতে আহত বোধ করতে পারেন। একইভাবে আমরা আমাদের ধর্মে অবিশ্বাসী/সংশয়ী বন্ধুটিকে ধর্মে অবিশ্বাস নিয়ে আমাদের নেগেটিভ চিন্তাভাবনার কথা (যদি কারো এমনটা থাকে) বলে অযথা উত্যক্ত/বিরক্ত না করি। এমন আচরণে সে আহত বোধ করতে পারে। আমরা যারা নিজেদের মুক্তমনা/খোলা মনের/ বিবেকবান/মানবিক ভাবতে চাই, তারা নিশ্চয়ই এটা চাইবো না, তাই না? - এটা পুরোপুরি আমার নিজের মতামত। অন্য কেউ এতে একমত নাও হতে পারেন।

ধর্ম পালন করি বা না করি, ধর্মকে খারাপ মনে করি বা না করি - এসব নিজের ব্যক্তিগত গন্ডির মধ্যে রাখতে পারলে কত সমস্যা যে এড়ানো যায়!

যেকোনো ধর্মেরই বেশিরভাগ ধার্মিক মানুষ আসলে নিরীহ। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। যাদের এ অভিজ্ঞতা নেই তাদের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।

'মডারেট মুসলিম' শব্দটা আমার কাছে নতুন। এর চেয়ে 'সাধারণ মুসলিম' শব্দটা আমার কাছে বেশি শোভন মনে হয়। যাইহোক, ব্যাপার না।

সুবর্না এর ছবি

একদম হক কথা, গত কবছর ধরে দুনিয়াব্যাপি ইসলামী বোমাবাজীর যত নিউজ পড়েছি,ছবি দেখেছি সবগুলা মিডিয়ার তৈরি ভুয়া নিউজ । ইসলামের বিরুদ্বে ষড়যন্ত্র ।

এমরান খান এর ছবি

একদম হক কথা! আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত জ্ঞাপন করে এই খ্রেডে আলোচনা শেষ করছি।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গোপাল ভাঁড় একবার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে প্রমাণসহ দেখিয়েছিলো, জগতে চিকিৎসাবিদ অর্থাৎ ডাক্তারের সংখ্যা বেশি। সেই দিন পাল্টেছে। এখন আর ডাক্তাররা ভাত পায় না। চারদিকে দেখি সব বিভিন্ন কালারের মুফতি'র ছড়াছড়ি। সবাই মুফতি আজকাল। সবাই সবাত্তে বেশি বুঝে!

সিরাত এর ছবি

আলোচনা ভাল্লাগসে।

জহির  আহমাদ এর ছবি

ভালই লাগল ।

---- “মনটা আরেকটু 'খোলা ' রাখার চেষ্টা করি সবাই। শয়তানিটা যে করছে, সে মুসলিম বা হিন্দু বা খ্রিস্টান যাই হোক না কেন, দোষারোপটা শুধু তাকেই করি, তার অন্ধত্বের সমালোচনা করি। সরলীকরণ করে সেই ধর্মের মানুষদের বা সেই ধর্মকে সমালোচনা না করি, তাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে না রাখি। কারণ সেই ধর্মের নিরীহ একজন মানুষ তাতে আহত বোধ করতে পারেন। একইভাবে আমরা আমাদের ধর্মে অবিশ্বাসী/সংশয়ী বন্ধুটিকে ধর্মে অবিশ্বাস নিয়ে আমাদের নেগেটিভ চিন্তাভাবনার কথা (যদি কারো এমনটা থাকে) বলে অযথা উত্যক্ত/বিরক্ত না করি। এমন আচরণে সে আহত বোধ করতে পারে। আমরা যারা নিজেদের মুক্তমনা/খোলা মনের/ বিবেকবান/মানবিক ভাবতে চাই, তারা নিশ্চয়ই এটা চাইবো না, তাই না? - এটা পুরোপুরি আমার নিজের মতামত। অন্য কেউ এতে একমত নাও হতে পারেন।

ধর্ম পালন করি বা না করি, ধর্মকে খারাপ মনে করি বা না করি - এসব নিজের ব্যক্তিগত গন্ডির মধ্যে রাখতে পারলে কত সমস্যা যে এড়ানো যায়!

যেকোনো ধর্মেরই বেশিরভাগ ধার্মিক মানুষ আসলে নিরীহ। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। যাদের এ অভিজ্ঞতা নেই তাদের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।

'মডারেট মুসলিম' শব্দটা আমার কাছে নতুন। এর চেয়ে 'সাধারণ মুসলিম' শব্দটা আমার কাছে বেশি শোভন মনে হয়। যাইহোক, ব্যাপার না।"----------
সহমত! শুধু এইটুক যদি আমরা ঠিকঠাকমত বুঝি আর......

------- “চারদিকে দেখি সব বিভিন্ন কালারের মুফতি'র ছড়াছড়ি। সবাই মুফতি আজকাল। সবাই সবাত্তে বেশি বুঝে!” ---
........আর যদি সবাই আরেকটু কম বুঝত,

........আর মুফতির কাজ মুফতিরে, ডাক্তারের কাজ ডাক্তারগো করতে দিত তাইলে দুইদিনের দুইন্নায় এত ক্যাচাল থাকত বলে তো মনে হয় না । শুধু কষ্ট কইরা আসল-নকল, হক-নাহক, ঠিক-বেঠিক যাচাই-বাছাই করে নিতে পারলেই হইত ।

----ডাক্তার ওহাব যেমন বড় মেডিকেলে বসে চিকিৎসা করলেও ডাক্তার না, মুফতি হান্নানও জিহাদের নামে বোমাবাজী কইরা বেড়াইলেই মুফতি না । অহন ওহাইব্বার লাইগ্যা যেমন মেডিকেল শাস্ত্র পুরাই ধান্দাবাজী হয়া যায় না তেমনি হান্নাইন্নার লাইগ্যা ইসলামরে সন্ত্রাস কওয়া যায় না ।

বাকীটা যদি এইরহম হয় যে,আমিই সব বুঝি, কারো চায়া কী কম বুঝি, তাইলে অসুখ হইলে নিজেই যেন নিজের চিকিৎসা করাই আর বাসায় বইস্যা টিভিতে “ঝাঁকির নায়ক এর বয়ান” দেইখ্যা আর “মওদুদীর জমাতি তর্জমা” পইড়া নিজে নিজেই ফতোয়া দিতে শুরু করি ।

আল্লাহ সবাইরে হেদায়েত দান করুক--আমিন !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।