নিল আর্মস্ট্রং-এর একমাত্র স্বীকৃত জীবনীগ্রন্থ- ফার্স্ট ম্যান

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শুক্র, ০৩/০২/২০১২ - ৮:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিল আর্মস্ট্রং কে?

উত্তর সবারই জানা, চাঁদে পা দেওয়া প্রথম মানব।

কিন্তু জেমস আর হ্যানসেনের লেখা নিল আর্মস্ট্রং-এর একমাত্র স্বীকৃত জীবনীগ্রন্থ ফার্স্ট ম্যান পড়ে মনে হল খুব সহজেই নিলের আরেকটি পরিচয় হতে পারে বিশ্বের নির্লোভতম মানুষ বা মানুষদের একজন। যে ব্যক্তি প্রতিদিন বিকালের কফিপানের সময় মাত্র ২ ঘণ্টা সাক্ষর দিয়ে ( অটোগ্রাফ) ১ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করতে পারেন ( বছরের ৩৬৫ দিনই) কিন্তু বিশেষ ব্যক্তিগত কারণে করেন না, এবং সেই কারণটি হচ্ছে চাঁদে নিল আর্মস্ট্রং-এর পা দেবার পিছনে তার কোন একক অবদান আছে বলে তিনি মনে করেন না, বরং সেই বিশাল সাফল্য এক দলের যার অন্তর্গত যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রজেক্টের সাথে যুক্ত সবাই, সেই বিশেষ ব্যক্তিটিকে নির্লোভতম না বলে উপায় থাকে না।

প্রায় ৮০০ পাতার থান ইটের মত বইটির শুরু অবশ্য বেশ ম্যাড়মেড়ে, লেখক চলে গেছেন ১৩০০ সালের স্কটল্যান্ডে আর্মস্ট্রং নামটির পিছনের রহস্য উদঘাটন করতে, শেষমেশ জানতে পারলেন এর মানে স্ট্রং আর্ম বা বলিষ্ঠ বাহু ! এরপরে কি করে তার পরদাদাদের আমেরিকায় আগমন ঘটল তার বিশাল ফিরিস্তি, এমনকি নিলের বাবা-মার জীবনের নিখুঁত বর্ণনা এবং তার নামকরণের পিছনের কারণ পর্যন্ত লেখক খুঁড়ে বাহির করেছেন একজন সত্যিকারের অনুসন্ধিৎসুর দৃষ্টি নিয়ে, যদিও তার খুব দরকার ছিল বলে মনে হয় নি আপাত দৃষ্টিতে। গেইলিক ভাষার স্কটিশ আবহে নিল শব্দের মানে চ্যাম্পিয়ন!

এরপরে নানা অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে নিলের ১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়া, তরুণ বাবা-মার প্রথম সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠার বর্ণনা, তার বই প্রীতি, ধর্মবিশ্বাস থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া, স্কুলের বন্ধুরা।
নিছক শখ থেকে নেশাতে পরিণত হয়ে ওঠে তার বিমান চালানো, ১৯৪৬সালের ৫ আগস্ট মাত্র ১৬ বছর বয়সে, গাড়ী চালাবার লাইসেন্স পাবার আগেই ক্ষুদে বিমান চালাবার অনুমতিপত্র মিলে যায় তার!

এরপরে তার অ্যারোন্টিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠার কাহিনী, কোরিয়া যুদ্ধ, জীবনের নানা বাঁক। ১৯৫২ সালে নেভী ছেড়ে যাওয়া , পুনরায় পারডিউ বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ছাত্র জীবন, প্রথম বিবাহ, প্রথম কন্যার অকাল মৃত্যু এবং অবশেষে তার নাসার অধীনে চাকরি করার পর্যায়ে মহাকাশচারী হয়ে ওঠার প্রচেষ্টার গল্পগাথা।

অবশেষে ১৯৬২ সালে সেপ্টেম্বরে নাসা মহাকাশ যাত্রার জন্য যে নয়জন মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করে তাতে ঠাই পান নিল। মহা কষ্টকর জঙ্গল ট্রেনিং-এর সময় পানামার বনে তার সাথী হিসেবে ছিলে আরেক কিংবদন্তী জন গ্লেন ( শূন্যে পৃথিবী প্রদিক্ষন করা প্রথম মার্কিন এবং সেই সাথে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ হিসেবে মহাশূন্যে যাবার গৌরবের অধিকারী)। এরপরই আসে জেমিনি মিশনের সাতকাহন, অনেক ভিতরের খবর।

অবশেষে একজন মহাকাশচারী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর সাড়ে তিন বছর পর (১২৭৭ দিন) নিল ৩৫ বছর বয়সে প্রথম বারের মত রকেটে বসে মহাকাশযাত্রা শুরু করেন, ঐতিহাসিক সেই রকেটের নাম জেমিনি-৮, তার সঙ্গী ছিলেন ডেভিড স্কট, ১৯৬৬ সালের ১৬ মার্চ। এরপরে বেশ কয় পাতা জুড়ে মহাকাশ থেকে তাদের নীল গ্রহ অবলোকনের বিস্ময় ভরা কথোপকথন এবং হিউস্টনের সাথে বার্তা বিনিময়ের প্রতিলিপি।

শুরু হয় সারা বিশ্বকে প্রতীক্ষায় রাখা, প্রেসিডেন্ট কেনেডির প্রতিশ্রুত চাঁদে মানুষ পদার্পণের মিশন অ্যাপোলো। সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাপোলো-১, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন বিখ্যাত মহাকাশচারী গ্যাস গ্রিসসম, রজার চ্যাফে এবং এড হোয়াইট। পিছিয়ে যায় অনেক পরিকল্পনা, সেই সাথে জল্পনা কল্পনা চলতেই থাকে চাঁদে প্রথম নামবে অ্যাপোলোর কোন রকেটটি এবং সেখানে প্রথম পা রাখবেন কোন জন !

এরপরে কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে চলতে থাকে একের পর এক অ্যাপোলো মিশন, অ্যাপোলো-৮ এর ব্যাকআপ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন নিল। অবশেষে রাষ্ট্রীয় ভাবে ঘোষণা করা হয় অ্যাপোলো-১১ চেষ্টা করবে চাঁদের পিঠে অবতরণের, নানা নাটকীয়তার পর, অনেক যাচাই বাছাই করে অবশেষে তিনজন ক্রু নেয়া হল সেই মহা গুরুত্বপূর্ণ মিশনের জন্য - নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন, মাইকেল কলিন্স। কিন্তু চাঁদে প্রথম নামবে কোন জন এর উত্তর তখনো জানা নেই।

এদিকে নানা পত্রপত্রিকায় নাসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিবৃতি দিয়ে জানালো হল, চাঁদে মানুষের প্রথম পদচিহ্ন এক দিতে যাচ্ছেন অলড্রিন, নিজের আত্মজীবনী রিটার্ন টু আর্থ-এ অলড্রিন নিজেও স্বীকার করেছেন ১৯৬৯-এর প্রথম কয়েক মাস পর্যন্ত তিনি জানতেন সেই গৌরবটা তারই হবে। অন্য দিকে নিল সবসময় বলে এসেছিলেন মিশনের সাফল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটার জন্য যেটা করা দরকার নাসা সেটাই করবে, এবং চাঁদের ভূমিতে দুই মহাকাশচারীর প্রতিটি পদক্ষেপই থাকবে পৃথিবীতে করা চুলচেরা হিসাব মোতাবেক।

অবশেষে জানা যায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিল আর্মস্ট্রং প্রথম মানব হিসেবে চাঁদে পদার্পণ করবেন কারণ তিনি সামরিক বাহিনীর সদস্য নন, একজন সিভিলিয়ান ( যেহেতু নেভীর সাথে সকল সম্পর্ক নিল অনেক আগেই ছিন্ন করেছেন) । সেই চরম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে ও পরে নিল ও অলড্রিনের মানসিক অবস্থার চিত্রায়ন করেছেন লেখক বাস্তবতার নিরিখে, রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে দুই বন্ধুর, দুই সহঅভিযাত্রীর মধ্যকার সম্পর্ককে।

সেই সাথে এই অলড্রিন এও বলেন কমান্ডার হিসেবে নিল থাকবে ঈগল খেয়াযানের বাম দিকে, যেখানে থাকবে বেরিয়া যাবার হ্যাচ ( ঢাকনা) আর আমি থাকব ডান দিকে পাইলট হিসেবে। কাজেই চাঁদে অবতরণের পর সেই স্বল্প পরিসরের মাঝে আমরা আবার স্থান পরিবর্তন করব কেবল আমার চাঁদে নামার জন্য, এই ধারণা পুরোই অকেজো! নাসার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।

সবচেয়ে অবাক ব্যাপার ছিল এই ব্যাপার জানার পরও নিলের নিঃস্পৃহতা, এমনকি তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথেও এই নিয়ে কথা বলেন নি। পরবর্তীতে তার বাবা পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন আমি তো জানতাম অলড্রিন প্রথম চাঁদে নামবে, কারণ নিল তো সেই মিশনের কমান্ডার!

এরপরে চলতে থাকে অন্যান্য মহাযজ্ঞ, ঠিক করা হয় চাঁদে তারা রেখে আসবেন তিনটি বস্ত, যার মধ্যে একটি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা। এই নিয়ে নিল বলেন, আলোচনা চলছিল আমরা জাতিসংঘের পতাকা নিয়ে যাব কিনা, অথবা অনেকগুলো দেশের পতাকা! কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যেহেতু চন্দ্রগমন সম্পূর্ণ আমেরিকার অর্থায়নের বাস্তবায়িত কাজেই আমরা আমেরিকার পতাকা নিয়েই যাব, কোন দাবী নিয়ে নয়, কেবল বিশ্বকে জানাবার জন্য যে আমরা সেখানে গিয়েছি।

সেই সাথে সবাই জানতে চাইছিল চাঁদে পা রাখার পর নিল প্রথম কোন কথাটি বলবেন, এই নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে নিল বলতেন- চিন্তা করছি এখনো! এমনকি রকেটে যাত্রাকালীন সময়েও কলিন্স ও অলড্রিন এই নিয়ে প্রশ্ন করলে একই উত্তর দিতেন তিনি।

অবশেষে শুরু হল চাঁদে অভিযান, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে বইটিকে, সেই সাথে আছে সেই রহস্যময় ফ্লাইং সসার দর্শন নিয়ে তাদের কথামালা।
কলম্বিয়ার সাথে বিচ্ছিন্ন হবার পর ঈগলের অবতরণের আগ পর্যন্ত তাদের বাক্য বিনিময়, হিউস্টনের সাথে আলাপ সবই সংরক্ষিত আছে পাতার পর পাতা জুড়ে আর আছে নিলের চাঁদের মাটিতে পা দিয়ে বলা প্রথম কথা -
Thats one small step for man,
one giant leap for mankind

অমর হয়ে যাওয়া এই বাক্যটিতে for a man হবার কথা ছিল, তাড়াহুড়োয় নিল a বলেন নি, এবং পরে তিনি বলেছেন চাঁদে আমাদের অবস্থানের সময়কার ভিডিওটেপ দেখার সময় খেয়াল করলেই শুনবেন আমার কথায় অনেক গ্রামার বিচ্যুত হয়েছে, কিন্তু সেই সময়ে হয়ত এটাই স্বাভাবিক ছিল। আর বিখ্যাত সেই বাক্য নিয়ে তার চাছাছোলা মন্তব্য- এটি সেই সময়ে আমার মনে এসেছিল, অবশ্যই আমি যাই বলে থাকে এটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, কিন্তু মিডিয়ার কারণে সমগ্র মানব জাতির কাছে এটা মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল!

সেই সাথে অ্যাপোলো-১১ এ একটা ট্র্যাজেডি হয়ে থাকে চাঁদে পদার্পণকারি প্রথম মানুষের চাঁদে কোন সরাসরি আলোকচিত্র না থাকায় ( এমন ৫ টা মাত্র ছবি আছে যেখানে নিলের উপস্থিতি বোঝা যায়)! কারণ নিলের কাছেই সবসময় ক্যামেরাটি ছিল, আর তার তোলা বিখ্যাত যে ছবিগুলো আমরা দেখি সেখানে সর্বদাই বর্তমান অলড্রিন! আসলে এই ব্যাপারটি ধরা পরে পৃথিবীতে এসে সমস্ত ছবি প্রিন্ট করার পরে! ( এইখানে কেন জানি প্রথম এভারেস্ট আরোহী এডমুন্ড হিলারির কথা মনে পড়ে, উনারও এভারেস্ট শৃঙ্গে কোন ছবি নেই, আছে উনারই তোলা তেনজিং নোরগের ছবি) ।

অবশেষে ২৭.১ কিলোগ্রাম চাঁদের নুড়ি পাথর নিয়ে তারা নিরাপদের ফিরে আসেন নীল গ্রহে, তাদের উদ্ধার পর্বের রয়েছে বিস্তারিত বর্ণনা, যা সবারই কম বেশী জানা।
এবং এর পরপরই তাদের বিশ্ব ভ্রমণের কাহিনী( যখন তারা ঢাকাতেও পদার্পণ করেছিলেন)।

এর পরপরই আসে মহা বিখ্যাত চন্দ্রমানবে পরিণত হবার পর তার পরিবর্তিত জীবনের গল্প, যেখানে তিনি এড়িয়ে চলেন মিডিয়া, দেন না কোন সাক্ষাৎকার, কারণ হিসেবে বলেন আমাদের অ্যাপোলো মিশনে হাজার হাজার মানুষ সুচারু ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার ফলেই এটি সফল হয়েছে। যে মানুষটি প্রতিদিন বাথরুমের মেঝে পরিষ্কার করত তার অবদানও আমার চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। আর এত মানুষের অবদান অগ্রাহ্য করে কেবল মাত্র রাষ্ট্র আমাকে এই কাজে বেছে নিয়েছিল বলে আমিই ক্যামেরার সমানে গৌরবের ভাগীদার হব, এমনটা আমি কখনোই পারব না।

অন্য দিকে অলড্রিন এবং কলিন্স কিন্তু একের পর এক টিভিশোতে উপস্থিত হয়েছেন, মোটা টাকার বিনিময়ে সাক্ষাৎকার দিয়েই যাচ্ছেন এখনো, লেখালেখি চালাচ্ছেন, এই ব্যাপারে মৃদুভাষী নিলে উত্তর- ব্যক্তিগত ব্যাপার!
এক পর্যায়ে শুরু হয়ে যায় নিলের ব্যবহৃত যে কোন দ্রব্য , এমনকি তার ভিজিটিং কার্ড নিয়ে পর্যন্ত মোটা টাকার বাণিজ্য, বাধ্য হয়ে অটোগ্রাফ দেওয়া বন্ধ করেন তিনি।

সেই সাথে বার বার এসেছে নিলের বিখ্যাত হয়ে ওঠার পরে তাকে নিয়ে অনেকের বাণিজ্য করবার বা মিথ্যা কথনের ব্যাপারটা। যেমন তার বেড়ে ওঠা যে শহরে, সেই শহরের একমাত্র মানমন্দিরের এক কর্মকর্তা ১৯৬৯ সালে বার বার বলেছেন ছোট নিল তার কাছেই টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথম চাঁদকে ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল, এমনকি সেই নিলের মাথায় চাঁদ ব্যাপারটা ঢুকিয়ে ছিল! নানা পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়ে ছিল তার সাক্ষাৎকার, স্বভাবসুলভ ভাবেই নিল এর বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলেন নি, কিন্তু লেখকের কাছে জানিয়েছেন এগুলো সবই রটনা !

এর পরপরই আসল ধর্ম প্রচারকরা, প্রথমের তারা প্রচার করতে চাইল চাঁদের বুকে পা দেওয়া প্রথম মানুষটি একজন খ্রিস্টান, যা এক প্রবল গর্বের ব্যাপার। কিন্তু এই ব্যাপারে নিল কোন উচ্চ্যবাচ্য না করাই তারা দমে যেয়ে চাঁদে অভিযান নিয়ে নানা কুৎসা রটনা করে, যেমন চাঁদ থেকে যে ফোন নম্বর দিয়ে তারা সরাসরি মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলে সেই নম্বর ছিল ৬৬৬-৬৬৬৬ , যা খ্রিষ্ট বিরোধী! সেই সাথে অলড্রিনের কাধে ম্যাসন পতাকা পরিবহনেরও নিন্দা জানায় তারা।

সবচেয়ে বড় গুজবটি ঘটে মুসলিম বিশ্বে, বেশ কিছু দেশে প্রচার করা হয় নিল চাঁদে যেয়ে আযান শুনেছেন এবং পরবর্তীতে এক ইসলামিক রাষ্ট্র ভ্রমণের সময় একই ধ্বনি শুনতে পেয়ে অনুসন্ধান করে জানেন তা আসছে ইসলামিক উপাসনালয় মসজিদ থেকে তাই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মসুলমান হয়ে যান। এই গল্পের অবশ্য কিছু পরিবর্তিত ভার্সন আছে, কোথাও বলে চাঁদে ফাটল দেখা বা মক্কা থেকে নির্গত রেডিয়শনের প্রমাণ পেয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এই গুজবটি এতই বিস্তৃত হয় যে ১৯৮৩ সালের মার্চে নিল কোন ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে অত্যন্ত বিনীত ভাবে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানান- তিনি কোন সময়ই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন নি এবং অদূর ভবিষ্যতেও তার এমন কোন ইচ্ছা নেই।

লেখকের সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে এই ব্যাপার নিল তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিশ্ব- বিদ্যালয়ের এক আরব ছাত্র তাকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসে, প্রফেসর আর্মস্ট্রং, আপনি কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন? নিল সরাসরি বলেন – না । তখন সেই ছাত্র আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি তার সাথে আমার নিজেকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলছি!!

এরপরে নিলকে গ্রহান্তরের আগন্তক তত্ত্বের জনক সুইস নাগরিক এরিক ফন দানিকেনও ইকুয়েডরের এক গুহাতে প্রাপ্ত বস্তসমূহের মাধ্যমে তার তত্ত্ব প্রমাণের কাজে ব্যবহারের চেষ্টা চালান, অতি ভদ্রলোক নিল কেবল চিঠি দিয়ে তার কল্যাণ কামনা করে সেই যাত্রা এড়িয়ে যান।

কিন্তু মুদ্রার অন্য পিঠও আছে, এভাবেই একদিন নিল আর্মস্ট্রং আমাদের মানব সমাজের অন্যতম নির্লোভ মানুষ এডমুণ্ড হিলারির সাথে উত্তর মেরু ভ্রমণ করেন। পান বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মানুষের নিঃশর্ত ভালবাসা। এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তার জীবনের সেরা প্রেম- বিমান চালানো!!

নিল আর্মস্ট্রংকে নিয়ে মানুষের উৎসাহের শেষ নেয় এখনো, তাকে নিয়ে বাজারে যে কত বই প্রকাশিত হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই, কিন্তু এই বইটিই একমাত্র বই যার প্রতিটি লাইন নিল প্রকাশের আগে পড়ে তারপরেই অনুমোদন করেছেন। ২০০৫ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

9780743492324_PI

( নিল আর্মস্ট্রং আমাদের গর্ব, কেবল চাঁদে যাওয়া প্রথম মানুষ হিসেবে নন, তার সমগ্র জীবনবোধের কারণে।

আমি অত্যন্ত সন্তুষ্টি অনুভব করি যে তার মত মহান চরিত্রের একজন মানুষ প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছেন।

আমি জানি, গত দশকে মানুষ চাঁদে আসলেই গিয়েছে নাকি, নিলদের এই অর্জন আমেরিকায় এরিয়া-৫১ এ করা কিনা, চাঁদে বাতাস নেই তো পতাকা উড়ল কেন এই নিয়ে খামোখা জল ঘোলা করে কিছু মহল অনেক টাকা কামিয়ে নিয়েছে ফালতু বই লিখে আর ডকুমেন্টরি বানিয়ে। আশা রাখি কোন সচল পাঠক তাদের ফাঁদে পা দিবেন না এবং সেই বিরক্তিকর ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। )


মন্তব্য

মামুন এর ছবি

দারুন লিখেছেন তনু ভাই। অনেক তথ্য। আমেরিকাতে কাব স্কাউট - বয়স্কাউটরা proud feel করে কারন নিল ছিল একজন ঈগল স্কাউট। আমেরিকাতে বয়স্কাউট এর সবচেয়ে বড় পদবি।

তারেক অণু এর ছবি

বইটাতে তার সেই স্কাউট জীবনের ছবি আছে।

স্বাধীন এর ছবি

চমৎকার লেখা। অনেক কিছুই জানতে পারলাম। চলুক

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ। তার পারিবারিক জীবন নিয়ে এখানে আর লিখি নাই, অনেক বেশী তথ্য বইটাতে।

সাত্যকি. এর ছবি

দারুণ। আপনার হাত আপনার পায়ের মতই চলে অণুদা।

পরীক্ষা সমাগত হলে সব আউটবুক, সব সিনেমাই অবশ্য অসাধারণ লাগে। মনে হয়, ইস, কি জিনিস থুয়ে কি জিনিস গিলছি !

তারেক অণু এর ছবি

হাসি
কথা সইত্য, পরীক্ষার সময় রুটিন করে গল্পের বই পড়া বেড়ে যেত।

ফাহিম হাসান এর ছবি

অণু ভাই, আপনার সিনেমা ও গ্রন্থালোচনা বিষয়ক লেখাগুলোর স্বাদ ভ্রমণ কাহিনির চেয়ে বেশি। যদিও ভ্রমণের পোস্টে মজাটা অন্যরকম, ছবি-টবি সহ নানা অজানা জায়গার কথা থাকে। যাই হোক, লেখা চলুক আপন গতিতে।

---------

আরেকটা কথা - নীল আর্মস্ট্রং এর স্বভাবসুলভ বিনয় আমার খুব ভাল লাগে। মানুষটাকে সহজ-সাধারণ-কাছের একজন মনে হয়

তারেক অণু এর ছবি

নিল খুব অন্য ধরনের। আমারও সবসময় খুব কাছের মানুষ মনে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

মাঝে মাঝে এই যে অন্য স্বাদের লেখাগুলো দেন সেগুলোও ভালো লাগে বেশ।

তারেক অণু এর ছবি

আপনি উধাও দেখি ! সাত পাকে বাঁধা পড়লেন নাকি !

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ওনারে বাঁধতে কি আর পাক দেয়া লাগে! উনি তো এমনিতেই পাকানো! চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি

হো হো হো , রতন ভাইডি আমার রসের হাড়ি পুরা!

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার আলোচনা। হয়ত 'থান ইটের' সাইজের বইটা এমনিতে পড়া হত না,এখন পড়ার ইচ্ছা হচ্ছে!

তারেক অণু এর ছবি

শুনে ভাল লাগল, পড়েই ফেলেন !

আশফাক আহমেদ এর ছবি

দারুণ।
অণুদা, বইটা অনুবাদ করে ফেলেন না। বাংলায় ভালো অনুবাদ বইয়ের খুব অভাব

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তারেক অণু এর ছবি

ভাইরে, একটা আলাদা তাক করেছিলাম, সেখানে যে বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করার সুদুর প্রসারী ইচ্ছা আছে সেগুলো থাকবে। এখন তাক ভরে গেছে প্রায়, আমার কিছুই করা হয় নি !

আশফাক আহমেদ এর ছবি

হাসি
হবে। হবে। কোন এক বইয়ের ১ চ্যাপ্টার লিখে সচলে দেন। বাকিগুলো আপনে আপ হয়ে যাবে

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তারেক অণু এর ছবি

হে হে ! মাথা চুলকাচ্ছি!

অন্যকেউ এর ছবি

চমৎকার লাগলো লেখাটা।
নিল আর্মস্ট্রং সম্পর্কে জানতে পারাটা ভালো হোল। যত বিনয়ীই তিনি হোন না কেন, মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনাগুলোর একটিতে উপস্থিত থেকে ইতিহাসে তিনি অবশ্যই অন্য সবার চেয়ে আলাদা একটা স্থান পেয়ে গিয়েছেন। আর সত্যিই, এমন মানুষেরই আসলে এরকম স্থান প্রাপ্য।
আপনার শিরোনাম দেখেই আশা করছিলাম, কাঁঠালপাতাখেকোদের কথাও আপনি রাখবেন- আশা পূর্ণ হোল। তবে কিনা, চোর এখন ধর্মের কাহিনী শোনে কেবল, সত্যিকথা শুনলেই তেড়ে আসে!

লেখার জন্য অনেক অনেক (গুড়) ।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

তারেক অণু এর ছবি

তেড়ে আসলেই তো সত্য মিথ্যা হয়ে যায় না ! তাদের জন্য শেষ ঔষধ গ্যালিলিও--

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এরকম লেখা আরও লিখেন অনু ভাই। ঝানু আর পরিচিত শেফের হাতে ভিন্ন স্বাদের খাবারের মজাই আলাদা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তারেক অণু এর ছবি

শেফ বানানেই ছাড়লেন, দাঁড়ান আসি একবার কানাডার সামারে---

মুহিত হাসান এর ছবি

গুরু গুরু আরো বই আলোচনা দেবেন ভাই হাসি

তারেক অণু এর ছবি

দিব, হাতে ৩টার চিন্তা আছে, কবে দিব কেবল সেইটাই বলতে পারি না ইয়ে, মানে...

guesr_writer rajkonya এর ছবি

অনেক কিছু জানতে পারলাম। এধরনের লেখা আরো চাই।

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা, ইচ্ছে তো করে অনেক লিখতে! এরপরে প্রিয় ভ্রমণকাহিনীর বইটা নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে--

ধূসর জলছবি এর ছবি

চাদে প্রথম পা রাখার জন্য নিল আ্মস্ট্রং ই সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন, তার পরবর্তী নির্লোভ আচরণ ই তার প্রমান। চাঁদে পা রেখে উনি বড় হন নি , মানুষ হিসেবে বড় মাপের বলেই উনি চাদে প্রথম পা রাখতে পেরেছেন। তার কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই। ধন্যবাদ আপনাকে বই টার খোঁজ দেয়ার জন্য। হাসি চলুক হাততালি

তারেক অণু এর ছবি

একদম খাঁটি কথা বলেছেন--- চাঁদে পা রেখে উনি বড় হন নি , মানুষ হিসেবে বড় মাপের বলেই উনি চাঁদে প্রথম পা রাখতে পেরেছেন। অ্যাপোলো মিশনের অনেক মহাকাশচারীর জীবনী পড়ে দেখেছি, অনেকের মাঝেই ইগো জিনিসটা কাজ করত খুব নিল ছিলেন অদ্ভুত ধরনের ব্যতিক্রম।

জালিস এর ছবি

তালগাছটা আপনাকে দিলাম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাসি

তারেক অণু এর ছবি
সুমন চৌধুরী এর ছবি

চলুক

নীলু তাইলে ফাডাফুডা দ‌্যাখে নাই আপ্নে শিউর?

তারেক অণু এর ছবি

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি থাকলে তো দেখবে!
আর একটা ব্যাপার, চাঁদ কিন্তু গ্রহের সাথে আকার অনুযায়ী আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ, কারণ তার আকৃতি পৃথিবীর ৫০ ভাগের ৩ ভাগ। যদিও বৃহস্পতি ও শনির অনেক বড় বড় উপগ্রহ আছে যারা আকার আমাদের গ্রহটির চেয়েও বড়, কিন্তু তাদের নিজ গ্রহের সাথে তুলনা করলে তারা অতি পুঁচকে।

এখন চাঁদে যদি সেই রূপকথার ফাটল থাকতও তাহলে ঐ অল্প মাইল খানেক জায়গায় হাঁটাহাঁটি করে মহাকাশচারীরা কি বিশাল চাঁদের ফাটল সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতেন! যেন, আমি গ্রান্ড ক্যানিয়ন দেখেই বললাম, আরে সারা পৃথিবীতো ফাটলে ভরা! সব ধর্মের মোল্লারাই এমন কাঁচা মিথ্যা কথা তৈরি করে, প্রমাণ চাইলে আরো কাঁচা মিথ্যা বলে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

সব ধর্মের মোল্লারাই এমন কাঁচা মিথ্যা কথা তৈরি করে, প্রমাণ চাইলে আরো কাঁচা মিথ্যা বলে।

চলুক

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

তারেক অণু এর ছবি
অরফিয়াস এর ছবি

গুরু গুরু

চাঁন্দে তাইলে ফাডা নাই, আমি তো ঘরের বাইরে বাইর হইলেই ডরে থাকি, কহন পুরা ফাইডা মাথায় পড়ে... দেঁতো হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

হু, খুপ খিয়াল কইরা! নাইলে থাডা পড়ব!

তানভীর এর ছবি

চলুক

আর্মস্ট্রং-এর নাম নিয়ে খোঁজাখুঁজির অংশটা পড়ে মজা পেলাম। আমার পরিচিত একজনের নাম বিগারস্টাফ দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

হা হা, সেদিন একজনের মাঝের নাম দেখি স্কাইওয়াকার !!

চরম উদাস এর ছবি

হুম। বলতে চান তাইলে, নিল আর্মস্ট্রং ঢাকার হাজামের কাছে খৎনা করে যে মুসলমান হইছে এই খবর ভুয়া??
যাই হোক, আপনি কবে যাচ্ছেন?

তারেক অণু এর ছবি

আমি তো চাঁদেই! মানে চাঁদের অংশ পৃথিবীতে!
খৎনা কি কেবল মসুলমানদেরই হয়, আমি তো জানি এটা ইহুদী সংস্কৃতি! আরবরা চামে নিজেদের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে!

চরম উদাস এর ছবি

ইহুদীদের খৎনা হয় এইটা আপনে ক্যামনে দেখলেন? চিন্তিত

তারেক অণু এর ছবি

যেমন ভাবে নিল যে চাঁদে গেছে জানছি! বেশী ঠাণ্ডা পড়ছে রে ভাই্‌ এর মাঝে প্যাঁচায়েন না তো!

অতিথি লেখক এর ছবি

খৎনা আসলে যতোনা ধর্মীয়, তার চেয়ে বেশি ভৌগলিক ব্যাপার। মিডল ইস্টে পানির খুব অভাব। পুরুষেরা নিয়মিত প্রিপিউসের নিচে পরিষ্কার না করলে ফাংগাস সংক্রমণ হয়। পানির অভাবে নিয়মিত পরিষ্কার করাও ঝামেলা। তাই ওদের মাঝে প্রিপিউস ফেলে দেওয়ার রীতি চালু হয়। আর যেহেতু ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের প্রচলন মধ্যপ্রাচ্যে, তাই খৎনা করা ধর্মীয় অনুষঙ্গ হিসাবেই ঢুকে গেছে।

- সুচিন্তিত ভুল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এইটা দারুণ একটা লেখা হয়েছে। খুবই দারুণ।

... নানারকম অপপ্রচারের মুছে ছাই পড়ুক। নীলমাধব বাহুবলীন্দ্রকে স্যালুট। এরকম নির্লোভ মানুষ খুবই বিরল।

তারেক অণু এর ছবি

নীলমাধব বাহুবলীন্দ্র!!

আপনি একটা কোপাও মামা...

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আরে, এটা আমার না তো !! সুনীলের অরিন্দম চক্কোত্তি, মানে কাকাবাবুর জোজো মারফত পাওয়া হাসি

তারেক অণু এর ছবি

তাও ভাল, ফেলুদার এক গল্পে ছিল না সন্ধ্যা শশী বন্ধু !

নিটোল এর ছবি

দারুণ লাগল। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

তারেক অণু এর ছবি
তাপস শর্মা এর ছবি

অনেক ধোঁয়াশার আবসান ঘটল মন থেকে। এখন মনে হচ্ছে মন থেকে একটা চাপ কমল। নিলকে নিয়ে অনেক জট ছিল মনের মধ্যে। আজ মনে হচ্ছে সেই সমাধান সূত্র পেলাম। বইটি অবশ্যই কিনছি এইবারের বইমেলা থেকে, পড়তেই হচ্ছে। চমৎকার একটা কাজ করেছ অণু, ধন্যবাদ তোমায় চলুক

তারেক অণু এর ছবি

পড়ে জানিয়েন কেমন লাগল !

মন মাঝি এর ছবি

--- ডুপ্লি হইলে ঘ্যাচাং যোগ্য --

চাঁদ জয়ের পর নীল আর্মস্ট্রংরা তাঁদের বিশ্বসফরের অংশ হিসেবে তৎকালিণ পাকিস্তানে এসেছিলেন। আমার বড় ভাই খুব গর্ব করে বলত সেসময় নাকি তার সাথে হ্যান্ডশেকও করেছে।

সবচেয়ে বড় গুজবটি ঘটে মুসলিম বিশ্বে, বেশ কিছু দেশে প্রচার করা হয় নিল চাঁদে যেয়ে আযান শুনেছেন.... তাই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মসুলমান হয়ে যান।

এর্শাদামলে বিটিভি-তে "উজ্জীবন" নামের একটা বেশ জনপ্রিয় স্বঘোষিত "বিজ্ঞানমনষ্ক ধর্মীয়" ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে এইরকম একটা দাবী করা হয়। পরে দর্শকদের চাপে তারা তাদের দাবী প্রমান করতে নীলকে চিঠি লেখে সত্য জানার বা সম্মতিমূলক জবাব পাবার জন্য। তারা মনে হয় ধরেই নিয়েছিল ঘটনা সত্য (স্রেফ ইয়াহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্রের কারনে তা প্রচার পাচ্ছে না, এমনকি নীলকেও এ্যাকসেস করা যাচ্ছে না তাদের ষড়যন্ত্রমূলক বাধার কারনে) আর নীলকে চিঠি লেখা মাত্র তিনি নাচতে নাচতে তাঁর মুসলিম উম্মাহ্‌র বেরাদরদের সমর্থনে ছুটে আসবেন এবং বিগলিতচিত্তে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর দিয়ে "উজ্জীবনের" বিজ্ঞানমনষ্ক-ইসলামিক-ক্রেডিবিলিটি বাঁচিয়ে ধন্য হবেন। কিন্তু নীলের কাছ থেকে কোন জবাব আসে না। তখন তারা মনে হয় কোন আমেরিকা প্রবাসীর মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাতেও যথা পূর্বং তথা পরং - কোন জবাব নেই। এভাবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ যায়, এপিসোডের পর এপিসোড - উজ্জীবনও যোগাযোগের প্রোগ্রেস রিপোর্ট আর শীঘ্রই প্রত্যাশিত ফললাভের প্রায়-নিশ্চিত আশ্বাস দিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু কোন ফল হয় না... খালি তাদের বড় মুখ ছোট হতে থাকে, বাঘের মত কণ্ঠ শেষের দিকে মিনমিন করতে করতে একসময় কোথায় মিলিয়ে যায়, এখন আর মনে নেই।

****************************************

হিমু এর ছবি

উজ্জীবন আর জীবনের আলো, একটা রাত্রে একটা সন্ধ্যায়। আহারে, জোকার নায়েকের তোড়ে এরা কোথায় হারায় গেলো। ইসলাম নিয়ে মিডিয়ায় দুইটা ভাবের কথা বলার বাজারও ভারত দখল করে ফেলেছে।

তারেক অণু এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি , ধন্যবাদ হিম্ভাই, এই হিমের মাঝে হাসানোর জন্য--- আজকের দিনটাই আলাদা !

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

জোকার নায়েক ! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ লাগলো। বইটা পড়ে ফেলতে হবে।
তবে এতো বড় বই অনেক চেপেচুপে লিখেছেন বোঝা যায়!

নিলের প্রতি শ্রদ্ধা। তিনি একজন সত্যিকারের মানুষ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই, একজন খাঁটি মানুষ।

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার।

সৌভাগ্যক্রমে আমি একজন নভোচারীর সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলাম। ভদ্রলোকের নাম ছিল রিক হাজবেন্ড। আমার অ্যাডভাইজরের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার দিতে এসেছিলেন। ওনার কাছে নাসার স্পেস ট্রেইনিং এর গল্প শুনেছিলাম।

২০০৩ সালে রিএন্ট্রির সময়ে বিধ্বস্ত স্পেস শাটাল কলাম্বিয়ার কমান্ডার ছিলেন রিক। এ বড় বিপদজ্জনক পেশা।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তারেক অণু এর ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক পেশা হয়ত, কিন্তু এই সুযোগ পেলে সবার আগে লাইনে দাঁড়াব।

বিপ্লব এর ছবি

বইটি মেলায় কোন স্টলে পাওয়া যাবে একটু জানাবেন কি???

তারেক অণু এর ছবি

এটা তো ভাই বলতে পারছি না, আমাজনে দেখতে পারেন নেটের মাধ্যমে।

তারানা_শব্দ এর ছবি

বাহ দারুণ!!!
তবে শিরোনাম দেখে তো ভেবেছিলাম এবার বুঝি চাঁদে গেলেন !! দেঁতো হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

তারেক অণু এর ছবি

বেশী ট্যাড়ানা করেন না কিন্তু, তয়লে চান্দেই যামু গা !

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! জীবনি পড়তে তেমন ভালো লাগে না আমার। যদিও স্টিভ জবসের বইটা লাইব্রেরীতে রিকোয়েস্ট জানিয়ে রেখেছি। এটা তালিকায় রাখলাম তবু।

তারেক অণু এর ছবি

এটির সাহিত্যিক মূল্য তেমন নেই, কিন্তু চুল চেরা নিখুঁত তথ্য অনেক।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দু:খের কতা আর কী বলি, আমি যে চাঁদে গিয়েছিলাম তা কে বিশ্বাস করবে! আমার ছবি নাই, কিন্তু আমার ক্যামেরায় তোলা অন্য অভিযাত্রীদের ছবি আছে। দেখলে বিশ্বাস করবেন?

তারেক অণু এর ছবি

ভিডিও !

গ্রেগরীয়ান বালক এর ছবি

অনেক কিছুই অজানা ছিল। রামস্টিনের আমেরিকার গানটাতে আমেরিকারে যেভাবে দেখাইছে তার ও উত্তর অনুর এই লেখাতে পাইলাম। আবার ভিডিও টাও দেখতে ইচ্ছা করলো তাই ভিডিও টাও দেখলাম। ভালো লেগেছে।

তারেক অণু এর ছবি

দেখি নাই তো! দেখব আজকে, ধন্যবাদ---

নুভান এর ছবি

কিন্তুক র‍্যামাস্টেইনের ওই মিউজিক ভিডিওর শেষে চাঁদের দৃশ্য স্ট্যুডিওতে ধারন করাটা দেখানো কিন্তু আবার অন্য কিছু মিন করে চোখ টিপি

দিলরুবা সুলতানা এর ছবি

খুবই সুন্দর লেখা। তবে লেখা আরও একটু দীর্ঘ হলে সকলে আরও একটু জানতে পারত।
সুন্দর লেখার জন্য ধনবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

ঐটুকু লিখতে গেলেই ৫০০০ শব্দ হয়ে যেত!

যুমার এর ছবি

উই, হাডল দেহা যায়!

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তারেক অণু এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি
নুভান এর ছবি

চমৎকার পোষ্ট। সাংবাদিক আর কাঠমোল্লাদের কথা আর কি কমু? কোন এক বাংলাদেশী পত্রিকায় দেখছিলাম (নাম মনে নাই), নিল আর্মস্ট্রং নাকি একবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন যে চাঁদে যাওয়ার মিশন নাকি পুরোটাই ভাঁওতাবাজী আর বানোয়াট। এরপর নাকি নিল তার কাছে থাকা চাঁদের একটি প্রস্তর খন্ড ঢিল মেরে বাইরে ফেলে দেন উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে। পরে রেফারেন্স-এ দেখি দ্যাওনিয়ন(ডট)কম এর ঠিকানা দেয়া গড়াগড়ি দিয়া হাসি সংবাদটা আবার পত্রিকার বিজ্ঞানের পাতায় বেশ বড় করে ছাপানো হয়েছিলো! বলদ খালি ঘানি টানতেই পারে না, পত্রিকায় আর্টিকেলও লিখতে পারে। আর গাধা খালি বোঝা বইতেও পারেনা, পত্রিকা সম্পাদনাও করতে পারে! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তারেক অণু এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি সম্পাদনাও করতে পারে। এক বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা মনে পড়েছে, আপাতত চেপে যায়।
তবে নিলের ঢিল ছুড়ে ফেলা টা তুলনাহীন বানিয়েছে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

মেঘদূত_মেঘ এর ছবি

গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
মুস্তাফিজ এর ছবি

ঢাকায় থাকতে কতবার যে চাঁদে ঘুরে এসেছি। তবে কিভাবে তা এখানে বলা যাবেনা। হাসি

...........................
Every Picture Tells a Story

তারেক অণু এর ছবি
এরিক এর ছবি

নিল আর্মস্ট্রং এর মৃত্যুর পরেই লেখাটা দেখলাম । আসলে ইনারা অন্য মানুষ ।
শ্রদ্ধা ছাড়া দেবার কিছুই নেই ।

-- এরিক

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে।

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

নীল আর্মস্ট্রংকে নিয়ে প্রচলিত এই গুজবের স্বীকার হয়েছিলাম আমিও। আমি ছোটবেলায় আমার গ্রামের "ইসলামী একাডেমী" নামের একটা স্কুলে পড়তাম। সেই স্কুলের সিলেবাসে সরকারি কারিক্যুলামের বই পড়ানো হতো না। "ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি" নামের একটা সংঘের বই পড়ানো হতো। সেখানেও বিজ্ঞান ছিলো, এবং বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায় থাকতো বিজ্ঞানময় গ্রন্থ ক্বোরান, সব ক্লাসেই। সেখানে কীভাবে ক্বোরানে সমস্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সার-বক্তব্য লেখা আছে, তার নানাবিধ বর্ণনা থাকতো।
আর মানুষের চন্দ্রাভিযানের বর্ণনায় লেখা ছিলো নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে চাঁদের আগাগোড়া বিস্তৃত একটি ফাটল দেখতে পান আর বিচিত্র একটি সুর শুনতে পান। পৃথিবীতে এসে সেই সুর সম্বন্ধে অনুসন্ধানে জানতে পারেন যে এটা আজানের ধ্বনি, তাই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আসলে চাঁদের ফাটলের এই কারণ মহানবী (সা) আরবদের নিজের মোজেজা দেখাতে ইশারায় চাঁদকে দ্বিবিভাজিত করেন। চাঁদে সেই মোজেজার চিহ্ণ আজও আছে এবং সেই চিহ্ণের পবিত্রতায় সেখানে সর্বদাই আজান ধ্বনিত হয়। (হ্যা, এটা তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর বিজ্ঞান বইতে লেখা!!!)

আমার এই ভুল ধারণা টিকেছিলো অনেক দিন। তারপর একদিন টিভিতে নীল আর্মস্ট্রংকে দেখে খটকা লাগলো। দাঁড়ি নাই ক্যান! আবার নামও বদলাইয়া মোহাম্মদ করে নাই! পরে খোঁজ খবর নিয়েই তো গোমর ফাঁক।

আমরা আজ আস্ফালন চালাই মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের জন্য। ভুল বিজ্ঞান অজ্ঞতার চেয়ে মারাত্মক। আমাদের দাবি যেন শুধু বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার না হয়, তা হতে হবে প্রকৃত বিজ্ঞান।

- সুচিন্তিত ভুল

তারেক অণু এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

লেখাটা নাহয় একবছর পড়েই পড়লাম ! তাতে ক্ষতি কী ! পড়লাম তো !
ধন্যবাদ অণু।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি

আহা, তখন নিল বেঁচে ছিল! মন খারাপ

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

চলুক

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

এমন মহান মানুষ সম্পর্কে পড়েও আনন্দ ! চিরবিনয়ী নিল আর্মস্ট্রং'র মৃত্যুর পর এক পারিবারিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে তাঁর কাজ, সাফল্য আর বিনয়কে সম্মান জানানোর মাধ্যমেই তাঁকে সম্মান জানানো সম্ভব । "and the next time you walk outside on a clear night and see the moon smiling down at you, think of Neil Armstrong and give him a wink."
শ্রদ্ধা

তারেক অণু এর ছবি

"and the next time you walk outside on a clear night and see the moon smiling down at you, think of Neil Armstrong and give him a wink."

রাত-প্রহরী এর ছবি

গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

এপোলো মিশনে নিল আর্মষ্ট্রং যখন চাঁদে পা রাখেন তার বিখ্যাত উক্তি ছিল “One Small Step for Man, One Giant Leap for Mankind" এর সাথে উনি নাকি আরো বেশ কিছু রিমার্কেবল মন্তব্য করেছিলেন। এর মাঝে সবচেয়ে হেঁয়ালিপূর্ণ মন্তব্য ছিল “Good luck, Mr. Gorsky."

নাসার অনেকে মনে করেছিল এটা মনে হয় আমাদের প্রতিদন্ধী রাশিয়ার মহাকাশ গবেষনা সংস্থা নিয়ে নিল আর্মষ্ট্রং এর কোন কেজুয়াল মন্তব্য। কিন্তু পরে চেক করে দেখা হল এই মিঃ গর্স্কী নামে কোন বৈজ্ঞানিক রাশিয়া কি এমনকি নাসাতেও কাজ করে না। তাহলে নিল আর্মস্ট্রং কাকে উইশ করেছিলেন।

জুলাই ৫, ১৯৯৫ তে ফ্লোরিডার Tampa Bay নামক এক পত্রিকার রিপোর্টার এ নিয়ে প্রশ্ন করলে নিল অবশেষে জবাব দেন। মিঃ গর্স্কী মারা গেছেন। সো নিল আর্মষ্ট্রঙ্গের এই নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে আর সমস্যা নেই।

ঘটনাটা ছিল নিল আর্মষ্ট্রং এর ছোটবেলায়। উনি উনার ভাইয়ের সাথে বাসার ব্যাকইয়ার্ডে বেইসবল খেলছেন। হটাৎ বল গিয়ে উনাদের প্রতিবেশী মিঃ গর্স্কীর বেডরুমের জানালার কাছে গিয়ে পরল। নিল গিয়েছেন সেই বল কুড়িয়ে আনতে। তখন তিনি শুনেন মিসেস গর্স্কী মিঃ গর্স্কীকে চেচিয়ে বলছেনঃ “Oral sex? Oral sex you want? You’ll get oral sex when the kid next door walks on the moon!"

এই কাহীনির সত্যতা এখানে

~সায়ন

একটা লোক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।