১।
''মন হারিয়ে গেছে' কথাটি গেল বছর দেশে গিয়ে শুনেছিলাম। খুব পুরাতন এবং বহুল ব্যবহৃত একটি কথাই অন্য রকম করে বলা। বড়দির বাসার গৃহকর্মী মেয়েটি গারো পাহাড় থেকে আসা। এদের হতদরিদ্র পরিবারটিতে তিন বা চারটি বোন, বাবা নেই। মা একাই মেয়েদের দেখাশোনা করেছেন এতদিন। মেয়েরা বড় হোয়ে উঠায় আর পেরে উঠছেন না বলেই বড়দির কাছে দিয়েছেন ওকে। প্রথম দিকে বেশ মন খারাপ করে থাকত শুনেছি, তবে এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছে বলেই মনে হোল। টিভির নেশাটা ধরেছে ওকে ভীষণ রকম করে, সেটাও মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে বলে মনে হয়। মেয়েটি এমনিতে বেশ চুপচাপ, ওর ভাষা বাংলা নয়। ওকে নিয়মিত বাংলা শেখায় আমার বড় ভাগ্নি। ওর উচ্চারণে সমস্যা তেমন নেই, কিন্তু বাক্য গঠন এবং শব্দ চয়ন বেশ অদ্ভুত। আমার সামান্য সময়ে 'সব করবার প্রজেক্ট' ওর সাথে খুব একটা গল্প-কথা হয়নি। শুধু এই কথাটা খুব মনে গেঁথে আছে, কিছু ভুলে গেলে 'আমি ভুলে গেছি' না বলে ও বলে, 'আমার মন হারিয়ে গেছে'। কথাটাইয় কেমন একটা আদুরে ভাব আছে, মিষ্টি লেগেছিল শুনতে আমার।
খুব সামান্য সংক্রমণ আর সাধারণ রোগেও এখন মানুষ মরে যাবে। যেমন হতো ৫০ বছর আগে। যেসব সাধারণ রোগকে আমরা পাত্তা দিতে শিখিনি, খুব অবাক হয়ে এখন আবিষ্কার করব সেইসব রোগেই আমাদের প্রিয়জনেরা মরে যাচ্ছে!
হেনরিয়েটা অসাধারণ কিছু করে বসে অমর হননি। ওনার কেবল একটা রোগ হয়েছিল। ক্যান্সার। জরায়ু মুখে। জরায়ুর মুখকে যদি একটা দেয়াল ঘড়ির সঙ্গে তুলনা করা যায় তাহলে হেনরিয়েটার প্রাথমিক টিউমারটি ছিল চারের কাঁটার কাছাকাছি।
“শনিবারেও আমি ছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকার একজন অখ্যাত সার্জন। আর পরদিন আমি হয়ে গেলাম বিশ্ববিখ্যাত একজন মানুষ।”
[জিএম এবং বিটি নিয়ে পাঠকদের মধ্যে কিছু অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করলাম আগের পর্বে। সে জন্য এই আলোচনার আগে বিষয়টা একটু বলে নেই। আমার তথ্যসূত্র জার্মান ভাষা থেকে নেয়া, কাজেই ইংরেজী উচ্চারণ এবং বানানে হেরফের হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রতিবছরই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নদের স্ট্রাইক পরিলক্ষিত হয়। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইন্টার্নদের স্ট্রাইকের কারণ “কর্তব্যরত চিকিৎসকদের লাঞ্ছনা এবং নিরাপত্তার অভাব।” আমাদের দেশের মিডিয়া সবসময়ই অত্যন্ত একপেশেভাবে এই স্ট্রাইকের খবর দেয় এবং প্রায় সবসময়ই ডাক্তারদের খলনায়ক বানিয়ে রোগীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরার একটা জনপ্রিয় প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এটা প্রায় কখনোই লেখা হয় না য
আটসকালে ওয়ার্ডে ঢুকেই বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে গেল অমানুষের। রোগীদের তুতো স্বজনবৃন্দ গিজগিজ করছে পুরো রুম জুড়ে। প্রতিদিনের মত ষাঁড়সুলভ মিনিটখানেক চ্যাঁচানোর পর একটু ফাঁকা হল রুমটা। স্টেথোটাকে হাতে নিয়ে প্রথমেই পাঁচ নম্বর বেডের দিকে এগুলো সে। ইস্কেমিক স্ট্রোকের রোগী, একটা পা প্যারালাইজড। কয়েক ডিগ্রি বেশি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে রোগীর স্বামী। কিছুই জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হল না, ভদ্রলোক নিজেই জানালো গতকাল
দেখুন যে এপ্রন পড়ে আমরা রোগী বাঁচানোর শপথ নেই তা আজ জানোয়ারদের হামলায় রক্তাক্ত।
ঘরটা অন্ধকার। এর দেয়াল কাঁচের। এর ভিতর যে বসে আছে সে কিছু দেখছে না। কাঁচের অপর পাশে যারা বসে আছে তারা তাকে দেখছে। দেখছে ৩৫ বছর বয়সী এক লোক বসে রয়েছে কাঁচ ঘেরা ঘরের ভিতর। সুঠাম দেহ। চোখ দেখলে মনে হয় সেখানে রয়েছে এক অদ্ভুত শীতলতা। কোন দয়ামায়া নাই সেখানে। আসলেই তাই। এই লোকটা একটা ঠাণ্ডা মাথার খুনি। এ পর্যন্ত ৪৭ জনকে হত্যা করেছে সে। তার টার্গেট একাকী পথিক। রাস্তার পাশ থেকে তুলে নিয়ে তাদের তিল তিল করে নির্যাতন করে হত্যা করে এবং তাদের রান্না খেয়ে ফেলত।
ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের একজন ছাত্র হবার। আমার মামা ডাক্তার। আমার খালা ডাক্তার। তাদেরকে মানুষ যেভাবে সম্মান করত একটা জিনিসই ভাবতাম সমাজে আর্থিক এবং সামাজিকভাবে সচ্ছল হতে গেলে চিকিৎসক হতে হবে। একজন চিকিৎসক সৎ ভাবে জীবন যাপন করেও সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারেন। অবশ্য সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি যেভাবে প্রবেশ করেছে সে ক্ষেত্রে এই পেশার ভিতরেও প্রভাব পড়েছে। অস্বীকার করে উপায় নাই অনেকে