মক্কা নোটসঃ রূপে রসে স্বাদে গন্ধে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৮/০৫/২০১১ - ৪:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হজ্বের পরে কোন কাল্পনিক চাকুরিদাতা আর আমার মাঝের কথপোকথনঃ
বসঃ ওই, সৌদি যাবি? কাম আছে
আমিঃ হ সার, নবীর রসুলের দেশ, যামু না কেনু যামু, কি কাম, বেতনাদি কিমুন?
বসঃ কাম কঠিক কিছু না, বেতনাদিও ভালু, কিন্তুক শর্ত আছে
আমিঃ কি শর্ত?
বসঃ কই যাবি তোর চয়েস মাগার, তিন বছরে একবারের বেশী মক্কা-মদীনা যাইবার পারবি না, অহন যাবি?
আমিঃ তাইলে সার, আল বাইক আছে এরুম যায়গায় দ্যান। অন্তত না খায়া মরুম না।

আজকের পর্ব আরবের অসাধারণ স্বাদসম্রাজ্যের ওপরে। আমার স্বাদগ্রন্থি সবসময় সবার সাথে মিলে না, তার পরেও আরবী স্বাদের রাজ্যে বিনামূল্যে ভ্রমণ গাইডে আপনি আমন্ত্রিত।


জমজমের পানির জন্য লাইন

জমজম

আরবের খাবার নিয়ে যদি ১০০ পাতা লিখতে বলা হয় আর ৯৯ পাতা যদি আপনি জমজম নিয়ে লিখে ফেলেন, আমার মনে হয়না পরীক্ষক যদি আরব হয়ে থাকেন তাহলে তিনি বিন্দুমাত্রও মনে কষ্ট পাবেন। বাড়িয়ে বলছি না, এমনি এক জাদুকরী পানি এই জমজম। বাস্তবতা হল, আজকের বিশ্বে বাংলাদেশে জমজমের স্বাদ তেমন নতুন কিছু না। প্রতি বছরই চেনা পরিচিত কেউ না কেউ হজ্ব ওমরায় যায় আর ফেরার সময় কিছু নাহলেও জমজমের পাত্র তো সাথে আনবেই। তাই বিভিন্ন সময়েই টাটকা, বাসী, বিশুদ্ধ, ট্যাপের পানিমিশ্রিত মেলাকিসিমের জমজম পান করে আসছি। কিন্তু তাজা জমজম, আল হারামের প্রাঙ্গনে সেটি একেবারেই ভিন্ন রকমের বস্তু।


জমজমের পাত্র রিফিল করা হচ্ছে।

হজ্বের আচারাদির মধ্যে প্রথমবার মক্কায় প্রবেশ করে একবার আর হজ্বের সময় একবার আর দেশে চলে আসার আগে একবার এই তিনবার কাবাঘর চক্কর দেয়া জরুরী, কিন্তু বাকি সময়টিতে অন্য যেকোন দোয়া কালামের চেয়ে তাওয়াফ করাই ছিল আমার পছন্দের কাজ। এখানে কথা হল, যারা সশরীরে গিয়েছেন তারা জানেন, তাওয়াফ বেশ ক্যালোরিখোর একটি প্রক্রিয়া। বিশাল চত্বর সাতবার প্রদক্ষিন করলে তবে এক তাওয়াফ হিসেবে গণ্য হয়, তার মাঝে আরবের রোদ আর দিনরাত যেকোন সময় লাখো মানুষের ভীড়ের কারণে একবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ৩৫-৪৫ মিনিটের মত লেগে যায়। প্রদক্ষিণ শেষ করে দুরাকাত নামাজের পরে জমজম পান করা হল রীতি। এই দৌড়ঝাঁপ করার পরে ডিহাইড্রেটেট ও ডিস্যালাইনেটেড অবস্থায় জমজমের পানি যে অদ্ভূত তৃপ্তিদায়ক, প্রশান্তিদায়ক ও বলকারক হিসেবে কাজ করে, তার তুলনা আমি এখন পর্যন্ত পাইনি। এছাড়াও মসজিদের যত্রতত্র অসংখ্য স্থানে জমজমের ঠান্ডা ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার পাত্র দেয়া আছে। মক্কায় থাকাকালীন সময়ে যখনি সুযোগ পেতাম মনের শখ মিটিয়ে জমজমের পানি খেতাম। এইরকম লোভীর মত কোন খাদ্য বা পানীয় কখনো গ্রহণ করেছি বলে মনে পড়েনা। এখানে আরেকটি মজার বিষয়, জমজমের প্রকৃত স্বাদের জন্য দয়া করে ঠান্ডা পাত্র থেকে না নিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পাত্র থেকে পান করবেন। আমি বহুবার বিভিন্ন অবস্থায় দেখেছি ঠান্ডার চেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিই তৃষ্ণা বেশী মেটাচ্ছে, যা আমার ক্ষেত্রে সাধারণত ঠান্ডা পানিতেই বেশী কাজ হয় অন্য যায়গায়। জমজমের গুণাবলীর সম্পর্কে যা শুনেছি, তার প্রায় সবই হাতেকলমে দেখলাম নিজের ওপরে। আপনারা গেলে অন্ততঃ এই বিষয়ে মোটেই কার্পণ্য করবেন না।

খেজুরঃ
আরবীদের খেজুরের সাথে সম্পর্কটা আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের ধানের মত। আমাদের শব্দভান্ডারে যেমন ধান, চাল, ভাত, চিড়া, মুড়ি, পোলাও, খিচুড়ী, পায়েস ইত্যাদি আরো গোটাদশেক শব্দ বের করে ফেলা যাবে, সেটা ইংরেজী শব্দভান্ডারে প্যাডি, রাইস, আর তার সাথে হ্যান রাইস ত্যান রাইস দিয়ে কাজ চালাতে হবে। আরবেরা নাশতার সাথে খেজুর খেয়ে নিল, খেজুর দিয়ে হালুয়া বানালো, বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে টুকটাক খেজুর চালিয়ে দিল সেইরকম। আমাদের চালের বাজারে গেলে যেমন খুদ থেকে শুরু করে কালিজিরা পর্যন্ত গোটাবিশেক ভ্যারাইটি যেকোন বাজারে পাওয়া যাবে, তেমনি আরবী খেজুরের দোকানেও ৫ রিয়াল কেজি থেকে শুরু করে ৫-৬০০ রিয়েল কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। আমার কাছে বেশ অবাক লেগেছিল একদম বিচি ছাড়া খেজুর আর পোড়া খেজুর। আমাদের মাপের ভাল খেজুরের রেঞ্জ ২০-৪০ রিয়েল। আপনার যাওয়া আর খেজুরের মৌসুম যদি একসাথে মিলে যায় তাহলে তো আর কথাই নেই। আর যেকোন দোকানে ঢুকে চাখতে চাখতে পোয়াটক খেজুর খেয়ে নিলেও দোকানদার কখনোই বিরূপ হয়না, যদিও তারপরে খেজুর না নেন।

হালওয়া

আমার বাবা যেবছর হজ্বে গেলেন, সেবার ফেরার পরে তার ব্যাগে একটা খাদ্যবস্তুর বাটি পাওয়া গেল। যথারীতি বাটি খুলে সবাই মিলে খাওয়া হল। এখন সমস্যা হল, আপনি যদি এমন কোন স্বাদের মুখোমুখি হন, যে অসম্ভব মজা, কিন্তু আপনার স্মৃতির খাদ্যপাদানের ডিকশনারীর কোনটার সাথেই সেটাকে সরাসরি মেলানো যাচ্ছেনা তাহলে বেশ একটা “কেমন যেন” ব্যাপার হয়। বাটির গায়ে লেখা আছে ‘Tema’ আর তার সাথে আরবীতে অনেকরকম হিজিবিজি। সেই থেকে আমাদের বাসায় জিনিষটা মহা হিট হয়ে গেল। পরে ম্যালা গবেষনা করে বের করলাম জিনিষটা মূলত ডাল দিয়ে তৈরি হালুয়া বিশেষ। আরব দেশে এমনিতেও খোলাবাজারে বিক্রি হয়, তেমা নামের এই প্রতিষ্টানটি সেটিকে সুদৃশ্য মোড়োকে এখন বিক্রি করছে। এখন পেশতা, চকলেট, শনপাপড়ি, খেজুর এইসব স্বাদে পাওয়া যায়। দেশে আসার সময় রীতিমত ব্যাগ বোঝাই করে আনলাম আমরা।

হালওয়ার ওয়েবসাইট খুঁজে পেলাম।

বাদামঃ
কাজু, পেশতা, আখরোট, চিনেবাদাম এর কোনটিই মূলত আরবদেশের ফলন না হলেও মনে হয় এখনকার আর্থিক স্বচ্ছলতা ও তার সাথে খাদ্যাভ্যাসের কারণে বিভিন্ন রকমের বাদাম অত্যান্ত জনপ্রিয়। একই বক্তব্য গরম মশলার ক্ষেত্রেও খাটে। আমার মায়ের বক্তব্য অনুসারে, নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে কেনাবেচা হবার কারণে সাধারণত তাজা আইটেম পাওয়া যায়। আর সাধারণত এক নম্বরী বলে দু নম্বরী জনিষ দেয়ার চল সেদেশে নাই। কোন কিছুর মান খারাপ হলে বিক্রেতা নিজেই বলে দাম কম রাখে। আমার এক আত্মীয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসলে নিয়মিত সবরকমের বাদাম কেজিখানেক এনে সবাইকে ভাগযোগ করে দেন। সব বাদামের ক্ষেত্রে উদার হলেও ‘চিলেগোজা’ নামের অতি সুস্বাদু বস্তুটির ক্ষেত্রে দেখতাম সামান্যই এনে সবাইকে এক চিমটি করে দেয়া হচ্ছে। তাই প্ল্যান ছিল যে এইবার নিজে গিয়ে ইচ্ছামত কিনে আরামসে খাব। উইকি বলছে জিনিষটা মূলত পাইনবীজ। বাদামের দোকানে গিয়ে যখন দেখলাম সব রকমের বাদামের কেজি ২০ থেকে ৫০ রিয়েল আর চিলেগোজা শুরু হয় ২২০+ থেকে। মুখ শুকনা করে ১০০ গ্রাম কিনে নিজেই চিমটি চিমটি করে খেলাম কদিন ধরে।

চকলেট
আরবের ম্যালা খানাখাদ্য নিয়ে লিখার পরিকল্পনা থাকলেও চকলেট নিয়ে আলাদা করে লিখতে হবে তা ভাবিনি। কিন্তু চকলেটের এক অনাবিষ্কৃত গুপ্তভান্ডারের সন্ধান পেলাম এই আরবের মাটিতে। আমাদের সাধারণ মানসিকতায় চকলেট হল সুস্বাদু বস্তু যার জন্য পিচ্চিকালে কান্নাকাটি করে আন্দোলন করা লাগত। আর বড়কালে বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজন আসলে তারা চকলেট নিয়ে আসেন তার কিছু ভাগ আমরা পাই। ভাল চকলেটের দামের জ্বালাতনে নিজে কিনে খাবার প্রক্রিয়া দূর্লভ। এইখানে এসে চকলেটের দোকানে গিয়ে চকলেট সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটা নতুন মাত্রাই পেলাম বলা যায়। দোকানে খোপে খোপে বিভিন্নরকমের চকলেট রাখা আছে। এইদিকের তাকের ২০ রকমের চকলেট সব ১০ রিয়েল করে কেজি, ওদিকে আরো ১৫ রকমের চকলেট ২০ রিয়েল করে কেজি। রঙ্গিন মোড়কের চকলেট যে একেবারে কেজিদরে বিক্রি হয় সেটা একেবারে ধারণার মধ্যেই ছিল না। আর দামের সাথে মানের তুলনা করলে আমি বলব বেশ সস্তা। ১৫ রিয়েল (শতিনেক টাকা) খর্চা করলে যা চকলেট পাওয়া যাবে বাংলাদেশে তার দাম হয়তো হাজারখানেক টাকা পড়বে। খোঁজ নিয়ে জানলাম চকলেটগুলো স্থানীয়ভাবে সৌদিতেই তৈরি হয়। সিরিয়াসলি পয়সা উসুল!

খেপচা

মক্কায় যেদিন প্রথম নামি, সেদিন গাইডের পক্ষ থেকে আমাদের দেয়া হল প্যাকেট বিরিয়ানি টাইপের একটা বস্তু। আমদের সাথে এক ভদ্রলোক ছিলেন যিনি একসময় আরবে চাকুরিজীবি ছিলেন। তিনি জানালেন বস্তুর নামা খেপচা, সাথে মুরগী থাকলে খেপচা দুজাজ আর ভেড়া/দুম্বা থাকলে খেপচা লাহাম। উইকি বলছে বস্তুটি বর্তমানে আরবের জাতীয় খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। আমাদের সাথে আসা অধিকাংশ বাংলাদেশীরাই খেয়ে ইয়াক থু! করার অবস্থা। আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছিল হালকা মশলায় কম তেলে রান্না করা এই বিরিয়ানি। যদিও ১-২ বারের বেশী আর খাওয়া হয়নি।

উটের গোশত
বাংলাদেশে মহিষের মাংস কখনোই স্বনামে পাবেন না আর উটের গোশত দুষ্প্রাপ্যতার কারণে পাওয়া যায় না। আরব উটের দেশ, তাই ধারণা করেছিলাম যে অন্ততঃ দিনে দুবেলা উটের টুকরো প্লেটে পাওয়া যাবে। বাস্তবতা হল, পুরো যাত্রার মধ্যে ২-৩ বারের বেশী কপালে উটের গোশত জুটেনি। মূল কারণ দাম। মুরগী ২-২৫০ টাকা, দুম্বা ৩০০ আর উটের কেজি সম্ভবত হাজারের কাছাকাছি। তাই মহার্ঘ বস্তুটি পাতে তেমন পড়েনি। তবে খেতে বেশ লেগেছিল। পরে সুযোগ পেলে আরাম করে খাবার শখ নিয়েই ফেরত এলাম।

আল-বাইক
সেই যে আল বাইক নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। আরবের আজকের ফুড সেনসেশন বলব আল বাইক। মূলত মুরগীভাজার দোকান। ইউরোপফেরত কারো জন্য ব্রোস্ট চিকেন এমন মহাবস্তু হবার কথা না, কিন্তু আল বাইক আমার ধারণা পাল্টাতে রীতিমত বাধ্য করে। মূলত সাউদি ভিত্তিক এই ফাস্টফুড চাইনের মূল আকর্ষণ হল স্পাইসি চিকেন। স্পাইসি যেকোন ধরণের আইটেমের মাংসের একেবারে ভেতরে স্তরে স্তরে মশলার আস্তর থাকে। আমি জানিনা এই ফলাফলের জন্য প্রতিটি পিসের ভেতরে ইঞ্জেকশন দিয়ে আলাদা করে মশলা ঢোকানো হয় কিনা, কিন্তু এতো সুস্বাদু মুরগীভাজা আমি অন্য কোথাও খেয়েছি বলে মনে পড়েনা। যদিও আমার যাওয়া হয়েছিল হজ্বের মওসুমে কিন্তু কাছাকাছি ম্যাক আর কেএফসির পাশাপাশি আল বাইকের দোকানে দ্বিগুণ, তিনগুন ভীড় রীতিমত চোখে পড়ার মত। আর দামের দিক থেকেও আমি বলব যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। ফ্যামিলি মিল যেটি ইয়া সাইজের ৮ পিস মুরগীর টুকরো সাথে যথেষ্ট পরিমাণে রুটিসহ দাম নেয় ২২ রিয়েল। বাংলাদেশের তুলনায়ও মান বিচার করলে আমি বলব যথেষ্ট সুলভ। যদিও হালাল নিয়ে বাছবিচারের ঝামেলা না থাকায় শখ করে কেএফসিতে খেয়েছিলাম একদিন।

জলপাই

বাংলাদেশে জলপাই হল মোটামুটি একসিজনের এক ধরণের ফল। যার টক ফল ছাড়া আর তেমন কোন প্রয়োগ নেই। জলপাই উৎপাদনকারী ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে জলপাইয়ের অবস্থা হল আমাদের আমের মত। বহু রঙ, জাত, আকার গুণের পাওয়া যায়। আর আমি ছোটবেলা থেকেই বোতলে ভরা জলপাইয়ের প্রচন্ড পোকা। আমাদের শেষ যেই বাড়িতে ছিলাম তার কাছেই ছিল নূরী বলে একটি দোকান। সেখানে গিয়ে পেলাম বিভিন্ন বাটিতে সাজানো বিভিন্ন স্বাদ, রঙ, বর্ণের জলপাই। বাংলাদেশী দোকানদারকে বলে মিক্সড ভ্যারাইটির আধা কেজি কিনে হোটেলে ফেরত গেলাম। মোটামুটি ৩৬ ঘন্টার ভেতরেই আবার দোকানে ফেরত আবার আধাকেজির জন্য। এক দুবার হবার পরে দোকানদার প্রতিবারেই আমাকে রীতিমত রয়াল ডিসকাউন্ট দেয়া শুরু করল জলপাইয়ের সেকশনে। এখনো প্রচন্ডভাবে মিস করি। বিচি সহ, বিচি ছাড়া, বিচির যায়গায় গাজর ঢোকানো, পানিতে ডোবানো, অলিভ অয়েলে ডোবানো, সবুজ, বাদামী, খয়রী, মিশকালো অপূর্ব সমারোহ।

সাবিল
হজ্বের সময় একটি চমৎকার বিষয় হল, বিভিন্ন সময়ে পথেঘাটে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এক কথায় একে সাবিল (ফী সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর ওয়াস্তে’র সংক্ষিপ্তরূপ) বলা হয়। এটি এমন হতে পারে যে ভোর চারটার সময় কাঁপতে কাঁপতে মসজিদের দিকে হাঁটছেন, এমন সময় দেখলেন কেউ একজন রাস্তার পাশে বিশাল ফ্লাস্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সবাইকে ডেকে ডেকে এক কাপ গরম চা ধরিয়ে দিচ্ছে, কখনো দুপুরে রাস্তার পাশে মাইক্রোবাসে করে রুটি, তরকারী আর ড্রিঙ্কের কম্বো পলিথিনে করে ধরিয়ে দিচ্ছে। আমাকে একবার এক আফ্রিকান তার পিকাপের পেছন থেকে বের করে প্রায় কেজি পাঁচেকের একটা খেজুরের প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছিল। আমি বিক্রেতা মনে করে অনেক মানা করার পরে পাশের একজন বুঝিয়ে দিল যে এটি উপহার, নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ কোরতে পার। পরে তাই নিলাম। এই সংক্রান্ত সবচেয়ে শকিং ঘটনা ঘটল মীনাতে থাকার সময়। তখন আমার পকেটের রিয়াল শেষ হয়ে গেল, আমি পকেটে ৫০ পাউন্ডের নোট নিয়ে ঘুরাঘুরি করছি খাবার কিনতে পারছি না। পকেটে শুধু ১০ রিয়েল ছিল সেটা নিয়ে আমার জন্য নাশতা কেনার পরেই দেখলাম পাশে ট্রাকে করে সাবিল বিলাচ্ছে। আরেক সাথীর জন্য খাবার নেয়া দরকার ছিল, তাই লাইন ধরে যখন পৌছালাম তখন যেই আরব বিলাচ্ছিল, আমাকে ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিল এই ইশারা করে, যে তোমার হাতে খাবার আছে, এই খাদ্য হল যাদের খাবারে সংস্থান নেই তাদের জন্য। জীবনে হাত পাতার অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত, আর হাত পেতে এইভাবে বিফল হাবার কোন স্মৃতি মনে পড়েনা। তাই সেবারের ধমক হজম করতে অনেক সময় লেগেছিল। এর পরে থেকে ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দিতে বহুদিন পর্যন্ত কুন্ঠিত বোধ করতাম।

একক পোস্টের তুলনায় সম্ভবত আকার ইতোমধ্যে বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই মোসাক্কা, হামুস, বাবাগানুশ ইত্যাদি আইটেম আপাতত বাদ দিচ্ছি। তবে হজ্বের জন্য যারা যান, তাদের খাবারের আয়োজন সাধারণত ট্র্যাভেল এজেন্ট কর্তৃক করা থাকে। ফলে আপনি খান আর না খান আপনার জন্য খাবার তৈরি হবেই। তাই প্রচন্ড ইচ্ছে থাকলেও খাবার নষ্ট হবে এই মর্মপীড়ায় বাইরের খাবার নিতান্তই কম খাওয়া হয়েছে। তবে দেশে ফেরার পরে দেখা গেল আমাদের বাড়ির যে দুজন গিয়েছিলাম আমাদের সুটকেসের শুধু খাবারের ওজন প্রায় ৩৫ কেজি। তসবী কেনা হয়েছে ০ টা, জায়নামাজ ০টা, টুপি নিজেরটা হারানোতে ১টা, আর বাকি যা নিয়ে গেছিলাম তাই ফেরত।

কোন একসময় পড়া এই উক্তিটি আমার বেশ পছন্দের। জান্নাতের দরজায় তিনটি বাক্য লেখা আছে।
প্রথম বাক্য কলেমা তৈয়ব/শাহাদাত (ঠিক মনে পড়ছে না)
দ্বিতীয় বাক্য যা খেয়ে আসলে তা তোমার, যা পরিধান করে পুরাতন করে আসলে তা তোমার আর যা রেখে আসলে তা সমস্যার কারণ
তৃতীয় বাক্য মানুষ অপরাধপ্রবণ আর প্রভূ ক্ষমা করতে পছন্দ করেন।

ফরিদ
বইমেলা

আগের লেখাঃ

মক্কা নোটস
মক্কা নোটসঃ মক্কা নোটসঃ মহারাজা, তোমায় সেলাম!
মক্কা নোটসঃ দি ব্লাইন্ডিং পিলারস

টেস্টি হ্যাভেন/ এরাবিয়ান ট্রীটস (বিকল্প হেডিং)


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কতখানি ভক্তি/খোদাভীতি থাকলে জমজম সর্ম্পকে এতো অতিশোয়াক্তি দেখা যায় সেটা ভাবছি। চিন্তিত

ফরিদ এর ছবি

আপনি নিজে কখনো সশরীরে এক্সপেরিয়েন্স করলে পরে আপনার অনুভূতিও ব্লগের দিতে পারবেন। আমার মনে হয় আপনিও পাংখা হয়ে যাবেন কয়দিন খাবার পরে।

শামীম এর ছবি

pH এর কারণে পানির স্বাদ তারতম্য হয়; দ্রবীভূত অক্সিজেন ছাড়াও স্বাদ ও অনুভূতির সাথে দ্রবীভূত মিনারেলসের (খনিজ পদার্থ) ভূমিকাও থাকে।

আর মিনারেলসের কারণে স্বাদ ছাড়াও খাদকের চাহিদা বা অভাবভেদে শরীরের অনেক রিয়্যাকশন পরিবর্তন হতে পারে। জাপানে শুধু পানি পরিবর্তন করে বাচ্চাদের সেকশনে প্রাপ্ত হাফ মিনারেল ডোজের পানি প্রায় ডবল দামে কিনে খাওয়া শুরু করার পর বউয়ের অনেক সমস্যার উপশম হয়েছিল।

এরপর জমজমের পানি পাইলে রহস্যভেদের জন্য সোজা ল্যাবরেটরিতে নিতে হবে মনে হচ্ছে। চিন্তিত

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখাটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। অ-নে-ক নতুন তথ্য জানলাম। লেখকের সাথে আমার চিন্তার, দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য আছে - কিন্তু যে বিষয়গুলো নিয়ে এই লেখা তা আনকোরা ও ভিন্নধর্মী হওয়াতে মজা পেলাম।

আব্দুর রহমান এর ছবি

খাদ্য বিষয়ক লেখা ভালো লাগে, বাকি খাবারগুলো নিয়ে জলদি লিখুন।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

ফরিদ এর ছবি

খাদ্য বিষয়ক সম্ভবত আর পোস্ট করা হবে না, তবে এই হজ্বের ভ্রমণ সম্পর্কিত হয়তো আরো এক পর্ব লেখা হবে কোন সময়ে। আপনিই একসময় ঘুরে আসুন না! আপনার রসনার রুচি আমরা ব্লগে ভাগাভাগি করব।

অপছন্দনীয় এর ছবি

খাবারদাবার সংক্রান্ত পোস্ট বরাবরই পছন্দ করি, আপনার বর্ণনাও সুন্দর।

বাড়িয়ে বলছি না, এমনি এক জাদুকরী পানি এই জমজম।

কিন্তু তাজা জমজম, আল হারামের প্রাঙ্গনে সেটি একেবারেই ভিন্ন রকমের বস্তু।

এই দৌড়ঝাঁপ করার পরে ডিহাইড্রেটেট ও ডিস্যালাইনেটেড অবস্থায় জমজমের পানি যে অদ্ভূত তৃপ্তিদায়ক, প্রশান্তিদায়ক ও বলকারক হিসেবে কাজ করে, তার তুলনা আমি এখন পর্যন্ত পাইনি।

জমজমের গুণাবলীর সম্পর্কে যা শুনেছি, তার প্রায় সবই হাতেকলমে দেখলাম নিজের ওপরে।

আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতি বা মতামতের প্রকাশ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, যদিও আপনার আর আমার মতামত এই ক্ষেত্রে এক নয়। নিজে আর মন্তব্য না করে এই পোস্টের পর্যবেক্ষণে থাকলাম।

ভালো থাকবেন।

দিফিও-1 এর ছবি

খাবারদাবারের কথা মজা লাগল হাসি আমি অবশ্য জমজমের পানি খেয়ে তেমন স্বাদ পাইনি--অবশ্য জমজমের পানি বলে যেটা খেয়েছি, সেটা একদম টপ কোয়ালিটি নাও হতে পারে।

সম্প্রতি মধ‌্যপ্রাচ্য আর মেডেটেরেনিয়ান খাদ্যে মজেছি, তাই আপনার পোস্টের অনেককিছু কমন পড়ল। যে শহরে থাকি, সেখানে একটা বড়সড় সংখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যীয় লোকজন আছে, তাই মোটামুটি খাঁটি "আ-লা আ-লা" খাবারদাবার ভালই পাওয়া যায় (এদেরকে আমরা গোপনে আ-লা আ-লা ডাকি, তাদের মুখে এই শব্দের আধিক্যের কারণে দেঁতো হাসি ) তবে হামুস নিয়ে না লেখায় আপনাকে মাইনাস!

এই হামুস জিনিসটা খেয়ে এতই ভাল লেগেছিল যে শেষ পর্যন্ত নিজে না বানানো পর্যন্ত শান্তি হয়নি। তিলের পেস্ট আর চানার ডাল আর অলিভ তেল সহযোগে বানানো এই বেহেশতি খানা খেয়ে অবস্থা হয়েছিল এই rap গান এর মত

আর "হালওয়া" আরবীয় দোকানে দেখেছি, দেখে অবশ্য আমাদের দেশীয় "হালুয়া"র চোরাই কপি ভেবেছিলাম! আপনি বলছেন ভাল? তাহলে একবার চেখে দেখতে হয় চিন্তিত

ফরিদ এর ছবি

হমুসের বিষয়ে বিষমভাবে কম লেখার পেছনে করুণ ইতিহাস আছে। প্রকৃতপক্ষে আমারও ভয়াবহ প্রিয় খাদ্য হল এই হমুস কিন্তু পুরো যাত্রায় মাত্র একদিন খাবার সৌভাগ্য হয়েছে। তাও এক তুর্কী দোকানে গিয়ে অন্য খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে আছি। দেখি পাশের টেবিলে ক্রেতার আইটেমগুলোর মধ্যে একটি হল হমুস। সে খাবার শেষ করার পরেও বাটিতে অর্ধেকের বেশী হমুস রয়ে গেছে। আমি মোটেই লজ্জা না করে "খাবার নষ্ট না করা"র নীতিতে হমুসের বাটি টেনে নিয়ে আমার অর্ডার করা শর্মা দিয়ে খেয়ে নিলাম। এইটা চলে আসার মাত্র দুদিন আগে, তাই পরে গিয়ে আর সাধ মিটিয়ে খাওয়া হয়নি।

দিফিও-1 এর ছবি

আপনার "চিলগোজা"র বর্ণনা শুনে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতেই বেরিয়ে পড়ল, এটারই এক নিকটাত্মীয় "পাইন নাট" ইতালীয়ান খাবারদাবারে খুব চলে, বিশেষ করে "পেস্তো" নামক ঐতিহ্যবাহী এক দুর্ধর্ষ খাবার তৈরী করতে (এইটাও হুমুসের মতই একধরনের পেস্ট!)। এবং আরবের মতই, এখানেও ভয়াবহ দাম ওঁয়া ওঁয়া । সেই পেস্তো বানাতে পাইন নাট কিনতে গিয়ে শেষে বিরস বদনে এমন্ড কিনে বাড়ি ফিরেছিলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. জমজমঃ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
২. খেজুরঃ সুগার কনটেন্ট আর স্বাদ বিবেচনা করে এই ফলটার বাংলাদেশে ব্যাপক উৎপাদন করা সম্ভব কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। খেজুরের হালুয়া/আমসত্ত্ব(!) পছন্দ।
৩. তেমাঃ খাই নাই, খাইতে চাই। তবে ওয়েবসাইটটা দেখে মনে হলো আমাদের দেশেও তো শবে বরাতে লোকে কতো রকম হালুয়া বানায়। এগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী আর বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করা গেলে ভালো হতো।
৪. বাদামঃ সকল প্রকার বাদাম (লবন দিয়ে রোস্ট করা) আমার অসম্ভব পছন্দ। অথচ আমাদের দেশে এক চীনাবাদাম ছাড়া আর কিছুই উৎপাদন করা হয় না। বাকিগুলোর উৎপাদন নিয়ে ভাবা দরকার।
৫. চকোলেটঃ দেশের বাইরে গেলে আর কিছু আনি আর না আনি, চকোলেট না আনলে দিশা ঘরে ঢুকতে দেবে না। এই জিনিশটা খুব কম দেশ ভালো বানাতে পারে।
৬. খেপচা/কেবসাঃ ঢাকার কাওরানবাজারে একটা রেস্টুরেন্ট কিছুদিন কেবসা বিক্রি করার (হোম ডেলিভারিসহ) চেষ্টা করেছিলো। পাবলিক মনে হয় পছন্দ করে নাই। পরে রেস্টুরেন্টটাই উঠে গেছে।
৭. উটের মাংসঃ আরব প্রবাসী বোন একবার মামার কাছে উটের মাংস আর রেসিপি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। কাস্টমসের ঝামেলায় দেশে রেসিপিটা পৌঁছেছিলো, মাংসটা না। একেবারে মোল্লা নাসিরুদ্দীনের অবস্থা।
৮. আল বাইকঃ ঢাকায় এই নামে ফাস্ট-ফুড শপ্‌ আছে। খাবার অতিশয় নিম্নমানের। ইজিপ্‌শিয়ানদের দোকানে মুরগী ভাজা খাবার অভিজ্ঞতা আছে। খেয়ে মনে হয়েছিলো ওরা মশলা বস্তুটা চেনে না।
৯. জলপাইঃ এটাও আমার পছন্দ। এর অন্য কোন ভ্যারাইটি বাংলাদেশে উৎপাদন সম্ভব কিনা খতিয়ে দেখা দরকার।
১০. সাবিলঃ বড়দের কাছ থেকে শোনা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা মনে পড়লো।

কিছু অংশ ছাড়া পোস্ট মজারু হয়েছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফরিদ এর ছবি

অত্যান্ত স্বাদু মন্তব্য হাসি

২/৯) বাংলাদেশের মাটি আর আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে আরবী জাতের খেজুর / জলপাই উৎপাদন সম্ভব কিনা জানি না। আমাদের দেশে যে খেজুরের রস নামের অমিয়সূধা আছে তার সাথে আরবীরা সম্ভবত পরিচিত না।

৩) স্বাদের দিক থেকে বাংলাদেশে খাওয়া যেকোন হালুয়ার চেয়ে অন্যরকম মনে হয়েছে আমার এই আরবী পণ্য। তবে দেশে কেউ বানালে আমি এক নম্বরে লাইন দেব কেনার জন্য।

৪) সব রকমের বাদাম উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ সম্ভবত আদর্শ না। তবে ভারতের উড়িষা আর গোয়া পৃথিবীর শীর্ষ কাজুবাদাম উৎপাদনকারী। বাংলাদেশেও সম্ভব হতে পারে। খুব ছোট থাকতে চট্টগ্রামের কোন একটি বনবিভাগের প্রোজক্টে গিয়েছিলাম (ক্লাস ৩-৪ এর কথা) সেখানে চাষ করে পাইন গাছ লাগানো হচ্ছে দেখেছিলাম। পাইনের কোন থেকে খোসা ছাড়লেই বীজ হল চিলেগোজা।

৫) দামের সাথে মান তুলনা করলে খুবই ভাল পণ্য বলব আমি সৌদি চকলেট। কথা সত্য পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশ এই বস্তুর ক্ষেত্রে মাত্রা সঠিক রাখতে পারে না।

৬) লোকেশন! লোকেশন! লোকেশন! দোকানটা চট্টগ্রাম বা নোয়াখালী অঞ্চলে দিলে ভাল চলত। স্বাদের সাথে স্বাদে অভ্যস্ত জিহ্বাও লাগে

৮) ধানমন্ডীর আল বাইকে সবাইকে আবশ্যই না যাবার জন্য করজোড়ে অনুরোধ করছি। একবার গিয়েছিলাম, রীতিমত বিভিষীকা।

১০) সবার বিপুল আত্মত্যাগের ফলেই আমাদের আজকের এই দেশ। এখন শুধু আমরাই যদি একটু মনুষত্বের দিকে এগুতাম।

আসলেই, নামগুলো নম্বর সহ করলে ভাল হত।

পৃথ্বী এর ছবি

১) আমি রমজান মাসে ওমরাহ করতে গিয়েছিলাম, আরব দেশের cuisine বলতে গেলে কিছুই খেতে পারি নাই। ইফতার আর সেহরীর খাবারদাবার সব চাচার বন্ধু-বান্ধব সাপ্লাই দিয়েছিল। একবার তো পোলাও-কোরমা দিয়ে সেহরী করেছিলাম! আরবদেশের খাবার বলতে শুধু আল-বাইকের মুরগীভাজা আর কেএফসিতে গিয়ে হলুদ ভাতের মধ্যে ঝোলওয়ালা মুরগী মেশানো এক অদ্ভুত খাবার খেয়েছি। আল-বাইকের মুরগীভাজা খুব একটা ভাল লাগে নাই- শুধু যে অতিরিক্ত মশলা তাই না, কেমন যেন একটু গন্ধ গন্ধও লাগে। এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম আরবরা নাকি নানা রঙের ভাত খায়, আর সবজী বলতে গেলে খায়ই না। ওদের খাদ্যাভাসের কারণে বলে ওদের স্বাস্থ্যের অবস্থাও খুব একটা ভাল না। অত্যুক্তি করেছে কিনা জানি না।

২) ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সারাদিন পানি না খেয়ে ইফতারের সময় যখন জমজমের পানি খেতাম, তখন পানিটাকে অলৌকিকই মনে হত। পানিটার মধ্যে একটা হালকা মিষ্টি স্বাদ ছিল। অবশ্য বাংলাদেশের বাংলা পানি খাইলে পৃথিবীর যেকোন দেশের পানিই ভাল লাগবে, এছাড়া বিশেষ ভক্তি না থাকলে জমজমের পানি আলাদাভাবে ভাল লাগার কোন কারণ নাই। আমার মনে আছে যখন আমরা কাবা শরীফের সামনে নামায পড়ছিলাম, তখন ভক্তিতে আমার চোখে পানি চলে আসছিল। অন্যদিকে আমার স্থপতি বাবা ওমরাহ করতে গিয়েছিল সৌদি আরবের আর্কিটেকচার দেখার জন্য, কাবা শরীফের সামনে গিয়ে তার কথাবার্তা শুনে আত্মীয়-স্বজন অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়েছিল। সবই আসলে নির্ভর করে মানুষের ভক্তির উপর।

সুমিত রহমান এর ছবি

চলুক সুন্দর বর্ণনা।

তবে দেশে ফেরার পরে দেখা গেল আমাদের বাড়ির যে দুজন গিয়েছিলাম আমাদের সুটকেসের শুধু খাবারের ওজন প্রায় ৩৫ কেজি। তসবী কেনা হয়েছে ০ টা, জায়নামাজ ০টা, টুপি নিজেরটা হারানোতে ১টা, আর বাকি যা নিয়ে গেছিলাম তাই ফেরত।

- আমারতো মনে হয় এটাই অনেক ভালো হয়েছে, তসবী, জায়নামাজতো অনেক পাওয়া যায় আমাদের দেশে, কিন্তু আমাদের দেশে পাওয়া দুষ্কর এমন কিছুই উপহার হিসেবে ভালো...... আমার পরিচিত কয়েকজন হজ্বে গিয়েছিলেন, দুঃখ আমার তারাও ঐ তসবী, জায়নামাজ...... কিছু খেজুর অবশ্য পেয়েছিলাম, এক কথায় যা কিনা অমৃত।

সাফি এর ছবি

পোস্ট ভাল লেগেছে, লেখা চালিয়ে যান। আমেরিকায় আরব দোকানে খাবার খেয়ে দেখেছিলাম তারা মসলা চেনেনা - আল বাইক এর ব্যপারে তাই তেমন স্বস্তি পাচ্ছিনা।
ঢাকায় এক ক্যাফে আল-বাইক আছে। ডেটিং করার জন্য উত্তম জায়গা। অখাদ্য খাবার খেতে কেউ যায়না বলে

জি.এম.তানিম এর ছবি

ঢাকার আল-বাইকের খাবার বীভৎস। একদিন অফিসে লাঞ্চ না পেয়ে ঢুকেছিলাম, তখন ধানমন্ডিতে অফিস। করুণ অভিজ্ঞতা। সৌদির আল-বাইকের খাবারও খেয়েছি। বেশ ভালো এবং মশলাদার, চিকেনের পিসগুলোর সাইজও ছিল মাশাল্লা। যতটা বুঝলাম ঢাকারটা কেবল নামেই, ফুড চেইনের অংশ না।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

শামীম এর ছবি

জমজমের পানি নিয়ে এর ব্যাপারটা বুঝলাম না - তবে অনুমান করতে পারছি। এর পরেরবার কারো কাছে পাইলে না খেয়ে সোজা ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যেতে হবে মনে হচ্ছে। পানির pH একটু বেশি থাকলে স্বাদ ভালো হয় বলে জানি, এর সাথে বিভিন্ন মিনারেলেরও ভূমিকা থাকা খুবই যুক্তিযুক্ত। শুধুমাত্র পানির মিনারেলের কারণে মানুষের অনেক রকম অসুস্থতা ও সুস্থতা হয় (আর্সেনিকের কথা বলছি না কিন্তু)। জাপানে দোকানের বাচ্চাদের সেকশনে বিক্রয় করা হাফ মিনারেল ডোজের পানি প্রায় দ্বিগুন দামে কিনে ব্যবহার করা শুরু করার পর বউয়ের অনেক রকম সমস্যার উপশম হয়েছিল বলে মনে পড়ে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ফরিদ এর ছবি

বৈদেশে স্প্রিংওয়াটার, বাবলি ওয়াটার, ভিটামিনওয়াটার আরো যে কতরকমের পদার্থ কিনতে পাওয়া যায়, তার কোন হিসাব আছে? লন আপাতত জেনিফার এনিস্টোনের সেক্সটেপ দেখেন ।

এর মিঠাকারক উপাদাত স্টোভিয়ার ওপরে বেশ চমৎকার নিবন্ধ আছে এখানে।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে। আজ সবগুলি পর্ব একসাথে পড়লাম। আপনার লেখার স্টাইলটি অসাধারন। প্লিজ আরো লেখেন সিরিজ হিসাবে। ধন্যবাদ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

একজন সাচ্চা মুসলমানের উচিত সৌদি থেকে আনা ৭০ কেজি খাদ্যদ্রব্য তাঁর ভাইদের সঙ্গে শেয়ার করা, খাদ্যদ্রব্য সংক্রান্ত রচনা নহে। হাসি

ফরিদ এর ছবি

আমি মনে করলাম, আমার লেখা পড়ে মোমেন বান্দারা আগামীবারে বাকসো বোঝাই করে খানাখাদ্য নিয়ে এসে আমাকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন। এইবারে তো আমার টেস্ট করতেই শেষ হয়ে গেল। দুজনে ৭০ নহে দুজন মিলে ৩৫ হয়েছিল।

হাসিব এর ছবি

জমজমের পানি স্বাদে আলাদা এতে অবাক হবার কিছু নাই দেঁতো হাসি
বিশ্বাসীদের জন্য লিংক। ভিডিওটা মনে করে দেখে নিতে হবে।

মন মাঝি এর ছবি

দারুন লোভনীয় পোস্ট !

উটের মাংস সংক্রান্ত আপনার বিবরন পড়তে গিয়ে আমার নিজের এনিয়ে একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আপনি উটের মাংস খেয়েছেন এবং আরো খেতে চেয়েছেন, আর আমি খাব না পণ করে একবার মিশরের সুয়েজ ক্যানালের মুখে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বন্দর-শহর পোর্ট সৈয়দে গরু মাংসকে রীতিমত গরু খোঁজা খুঁজেছিলাম !
পোর্ট সৈয়দে গিয়ে মনোমত খাবারের জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটা বার্গার জয়েন্ট যাও পেলাম, সাথের বাঙালী সঙ্গী ওখানে খেতে রাজি হলেন না কারন উনার সন্দেহ ওখানে বার্গারে উটের মাংস দেয় (উনি আগে এসেছিলেন এখানে)। অনেক খুঁজে শেষে একটা দোকান পেলাম যারা গরু মাংসের বটি/শীষ কাবাব বিক্রি করছে। দাম জিজ্ঞেস করতে বলে কিনা -- কয় কেজি খাবেন ? কেজির নীচে নাকি ওরা কাবাব বেচে না। অথচ আমরা মোটে দুইজন মানুষ ! হাসি

কায়রোতে রাস্তার ধারে ফুটপাথের ও অন্যান্য কিছু দোকা্নে দেখেছি ছোট ছোট প্যাকেটে হালুয়া ও সমজাতীয় হরেক রকমের দারুন সুস্বাদু শুকনো মিষ্টান্ন বিক্রি হয়। আমি কায়রোর বাইরে যাওয়ার সময় এগুলি ব্যাগ ভরে নিয়ে যেতাম। তবে যে মজার হালুয়াটা সবচেয়ে বেশি মনে আছে, সেটা মেইড ইন ইজ্রায়েল 'হেলভা'।

কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, আরবরা মশলা বুঝে না। আমি একমত হতে পারলাম না। জনামানবশুন্য সাহারা মরুভূমির গভীর গহীণে তারার আলোর নীচে বেদুইনের হাতে রান্না যে মুরগির রোস্ট খেয়েছিলাম, জীবনে এত মজার রোস্ট আমি আর খাইনি -- এমনকি হাই-প্রোফাইল টার্কিশ শেফের তৈরি কাবাবও এত ভালো লাগেনি। আমার রসনাতৃপ্তি সংক্রান্ত সেরা স্মৃতিগুলির একটি এটি।

ইত্তিহাদ এয়ারলাইন্সের প্লেনে এক ধরনের সৌদি পোলাও খেয়েছিলাম। প্লেনের খাবার আমার ভাল লাগে না। কিন্তু এটা ছিল রীতিমত দুর্ধর্ষ ! আবারো খেতে মন চায়।

****************************************

ফ্রুলিক্স.. এর ছবি

জমজমের পানি আগের মতো অবস্হায় নেই। অনেক ডিমান্ড তাই টেপের পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

হজ্জ, উমরাতে যাওয়া হয়েছে। চকলেট, বাদাম, অলিভ এগুলো ইউরোপে সস্তা, প্রতুলতা বেশী মনে হয়েছে (ভিড়ের মাঝে এতো কিছু চেকে দেখার চান্স পাইনি)। এতো ভিড় ঠেলে খাবারের কোন ইচ্ছে কোন কালেই নেই। কোনমতে জীবন বাচিয়ে ব্রেড, কলা এগুলো দিয়েই মক্কা। মদীনায় অনেক বেশী রিলাক্স ছিলাম।

মিনায় টয়লেটের ভয়ে (একটু সুচিবায়ু টাইপ) ৪/৫ দিন শুধু ব্রেড আর অলিভ খেয়েছি। অনেকের কাছ থেকে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে গিয়েছি। বিশেষ করে ফ্রী খাবার। গরমে হঠাত অর্ধসিদ্ধ খবারে পেট খারাপের সম্ভাবনা এবং ইহা বাস্তব সত্য।

খেজুর এতো মিষ্টি যে বেশী খাওয়া যায় না।

অনেক বেশী মালামালা নিয়ে আসার চান্স ছিলো। কিন্তু সবই পাওয়া যায় দেখে আনুমানিক ৪০ কিলো (পানি, খেজুর) নিয়ে এসেছিলাম (১০০ কিলো এ্যালাই ছিলো)

কৌস্তুভ এর ছবি

খাবারের প্রতি আমার লোভটা একটু বেশী। আপনার এই সিরিজটা অবশ্য শুরু থেকেই পড়ছি। আমিও বলি, বাকি রয়ে যাওয়া খাবারগুলো নিয়ে একটা পোস্ট দেন। দেখি, যখন ওখানে আমাদের আর দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ বলে গণ্য করবে না, তখন একদিন গিয়ে সব চেখে দেখব...

ফরিদ এর ছবি

এক দুটো আইটেম হয়তো এই পোস্টেই যোগ করছি। ২০% আইটেমের জন্য পূর্ণাঙ্গ লেখা তৈরি মুশকিল।

আপনার সমস্যার আপাততঃ দুটো সমাধান। ১) আরবের বাইরের আরবী দোকানে গিয়ে সাঁটিয়ে আসা। ২) জাতি হিসেবে আমাদেরই তৃতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উত্তরণ।

হাসিব এর ছবি

ফরিদ, আমাদের কী কারনে আপনার তৃতীয় শ্রেনীর জাতি মনে হয় একটু খোলাসা করবেন কি?

ফরিদ এর ছবি

কথাটা একেবারে লিটারেলি না, সাধারণ অর্থে বলছিলাম,
দূর্নীতি, রাজনৈতিক কোন্দল, স্বজনপ্রীতি, শৃংখলার অভাব এরকম আরো কিছু প্যারামিটারে আমার নিজের অভিজ্ঞতায় আমরা পৃথিবীর অনেক জাতির চেয়েই পিছিয়ে আছি। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন একজন ব্যাক্তির দিকে আঙ্গুল তোলা মুশকিল, কিন্তু এই সময়েও আমাদের স্বাক্ষরদের বড় অংশ সুশিক্ষিত না, যারা কিছুটা সুশিক্ষিত তারা প্রথম সুযোগে দেশ ছাড়ার প্রতিযোগিয়তায় ব্যাস্ত, সরকারী চাকুরিতে আমরা ঢুকিই বাম হাতের জন্য, আইন মানতে চাইলে সরকারী কর্মচারী আপনাকে আইন মানতে দিবে না, এই লম্বা তালিকা আমাদের সবারই প্রতিদিনের ছবি।
নিচের চেহারার প্রতিবিম্বের প্রতি ক্ষেদাক্তি কখনো মুখ ফুটে বের হয়ে যায়।
১০ বছর প্রবাসের পরে দেশ একই সাথে স্বর্গ ও নরকসম...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই ঝামেলাগুলো কমবেশি পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও আছে। নিজেকে বা নিজের জাতিকে হেইট করে কোনো লাভ হয় না; বরং ভালোবাসলে সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা সহজতর হয়। উন্নতি একটা প্রোসেস, একদিনে একলাফে সব সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না। জাতিগত বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তনশীল।

আপনার যদি মনের ভিতরে থাকে যে, আপনি একজন তৃতীয় শ্রেণীর জাতির মানুষ (যেটা সত্য নয়), তাহলে আপনি নিজেই হীনমণ্যতায় ভুগবেন, আপনার কাছে উন্নত জাতির আকামকেও প্রতিরোধের কোনো ক্ষমতা আপনার থাকবে না। ঘটনা কেস-বাই-কেস বিচার করবেন, জাতি দিয়ে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মন_মাঝি এর ছবি

একটা কৌতুহলঃ এই কথাগুলো কি শুধু স্বজাতির বেলাতেই প্রযোজ্য - নাকি অন্যদের বেলাতেও ? বিশেষ করে ৩য়, ৪র্থ ও সর্বশেষ বাক্যটি ?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সর্বশেষ বাক্যটা পাকি বাদে সবার জন্য প্রযোজ্য। ৩, ৪ সবার জন্য।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনি আমার বক্তব্যটা ওখানে একেবারেই ধরতে পারেন নি। আমরা যারা ধর্মগতভাবে মুসলিম নই আমি দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ বলতে তাদেরই বুঝিয়েছি। সৌদি আরবের আইনে তাদের বিরুদ্ধে বায়াসটা খুবই বেশি।

হাসিব এর ছবি

বিধর্মী বাদেও সকল বিদেশীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আরব দেশগুলোর মতো বর্বর অবস্থা পৃথিবীর কোথায় কোথায় আছে সেটা নিয়ে একটা গবেষণা হতে পারে। আপাতত পোস্ট লেখকের জবাবের অপেক্ষায় থাকি।

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক।

"বিধর্মী বাদেও সকল বিদেশীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা" - এইটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিনা। বিদেশী মুসলিম হলেও কি তাই?

ফরিদ এর ছবি

আপনার বিষয়টি সূদীর্ঘ আলোচনার অবকাশ রাখে যা এই ভিন্ন বিষয়কেন্দ্রিক পোস্টে আলোচনা করা কিছুটা দুষ্কর। একই সাথে যেখানি আমি ছিলাম সামান্য কিছুদিনের অতিথি, আর মুসলিমদের জন্য বিশেষ দুটি শহরে, সেখানে সম্পুর্ণ আরব বা শুধু সাউদিরই সম্পুর্ণ চিত্র পাওয়া মুশকিল।

তবে ২৫-৩০ লক্ষ অমুসলিম থাকে সৌদি আরবে সেখানে মানুষকে মূলত মাপা হয় চামড়ার রঙ আর পাসপোর্টের রঙ দিয়ে। একই প্রকৌশলীর চাকরীতে বাংলাদেশী ডাক্তার পাবে ১০ টাকা, সৌদি ডাক্তার পাবে ৫০ টাকা (রাজরক্ত থাকলে আরো বেশী), ধলা চামড়ার মার্কিন পাবে ৪০-৮০টাকা। তাই ফিলিপিনো খ্রীষ্টান, নেপালী হিন্দু আর মার্কিন নাস্তিক তিনজনকে তিনভাবে মাপা হবে।

কৌস্তুভ এর ছবি

সে তো হল। মাইনেতে তো সরাসরি সরকারি আইনের হাত নেই। কিন্তু একজন ভারতীয় মুসলিম আর একজন ভারতীয় হিন্দু তো সেখানের আইনে সমান অধিকার পায় না?

অপছন্দনীয় এর ছবি

অন্যের ধর্মানুভূতিতে ক্যাঁৎ করে আঘাত করে বসবেন না দয়া করে।

এখানে দেখুন বেতন না হয়ে অন্য মাত্রায় হলেও অধিকারের একখানা তুলনামূলক চিত্র পাবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটার কথা জানলেও ডিটেইলস ভুলে গেছিলাম, ফরে রেফারেন্স দিতে পারছিলাম না। ধন্যবাদ।

অপছন্দনীয় এর ছবি

বলা উচিত ছিলো অধিকার এবং আইনগত বর্বরতার।

ফরিদ এর ছবি

এই বিষয়ে সঠিক উত্তরের জন্য যতটা জানা প্রয়োজন আমি সত্যিই সেই জবাব দিতে অক্ষম। নিজের মত কিছু বানিয়ে বলা তো মুশকিল। আইনগতভাবে মুসলিম ও অমুসলিমের কিছু পার্থক্য সম্ভবত আছে, কিন্তু সবচেয়ে পীড়াদায়ক হল আইন যখন শাসকের পক্ষে শাসিতের বিপক্ষে কাজ করে।

অমুসলিম হবার কারণে বিশেষভাবে নিগৃহীত হয়েছেন তার উদাহরণ ২ টা হলে, বিদেশী হবার কারণে নিগৃহীত হবার উদাহরণ সম্ভবত ১০ টা হবে। শরিয়া আইনের প্রয়োগও আছে ম্যানিপুলেশনও আছে। বেদনাদায়ক...

হাসিব এর ছবি

পুরোটা না জেনে তাহলে নিজেদের তৃতীয় শ্রেনীতে নামিয়ে ফেলার আগে দুইবার ভাবা উচিত। বর্বরদের সাথে বাংলাদেশের তুলনা হতে পারে না।

হাসিব এর ছবি

- মাইনেতে সরকারি আইনের হাত অবশ্যই আছে। জার্মানিতে আমারে কেউ একই কাজের জন্য বিদেশী বলে কম বেতন দিলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। এখানে সরকারি কাজে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন থাকে ডিস্ক্রিমিনেশন হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে। কেউ অসুস্থ্য হলে, কারো নিরাপত্তা দরকার হলে এখানে কেউ কখনো অভিযোগ করতে পারবে না যে সে স্থানীয়দের থেকে কিছু কম সেবা পেয়েছে। আর সৌদিতে এ্যাম্বুলেন্স, পুলিশি সেবার অনেক ই-ন্টা-রে-স্টিং- কাহিনী আছে।
- আর ভারতীয় মুসলিম হলেও সে যেহেতু আরবী মুসলিম না সেহেতু সে একটু কম অধিকার পাবে। যেমন, আরবী কোন মেয়েকে বিয়ে করতে তাকে বাদশাহের অনুমতি নিতে হবে। এর থেকে অন্য দেশে হিজরত করে বিয়ে করে ফেলা সহজ।
আর ভারতীয় এবং অমুসলিম হলে - আপনি শ্যাষ। কোনক্রমে কাজ শেষ করে বমাল ভেগে যাওয়াই উত্তম কাজ।

কৌস্তুভ এর ছবি

ধন্যবাদ। ইন্টারেস্টিং কাহিনী সুযোগ পেলে শোনাবেন কখনও।

ফরিদ এর ছবি

অতিথি হিসেবে এখন মাথা চুলকাচ্ছি, ফিলাফিল! ফিলাফিলের কথা কিভাবে ভূলে গেলাম! আপাততঃ দুলাইন যোগ করে দেই

ফিলাফিলঃ
আরবের মাটিতে পা দেবার আগ পর্যন্ত ফিলাফিল সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা ছিল এই পর্যন্ত। আরবীদের ফিলাফিলের উদাহরণ আমার কাছে লাগে আমাদের দেশের সিঙ্গাড়া, সমুচার মত। একদমই অনাড়ম্বর ভাজাভুজি টাইপের খাদ্য যা দামে শস্তা, খেলে পেট ভরে আর তেমন সাইড এফেক্ট হবার সম্ভাবনা নেই। ফিলাফিল কি প্রশ্ন করলে জবাব একটু মুশকিল, এক কথায় পিঁয়াজুর বার্গার আর পিঁয়াজুর স্যান্ডউইচের মাঝামাঝি কিছু যদি বলি তাহলে মনে হয় একটু বোঝানো যাবে। আমি যেই ফিলাফিল খেয়েছি সেটি হল পিটা ব্রেড কেটে দুটুকরো করে তার মাঝখানে ১/২ টা ফিলাফিল (ডালের বড়া) ভরে, তার সাথে লেটুস, টমেটো কুচি, আচারে জারানো শশার/গাজরের টুকরো, সাথে হুমুসের পাতলা সস। হাই কার্ব, লো ফ্যাট, তৃপ্তিদায়ক খাবার হিসেবে আমার বেশ পছন্দের আইটেম। একটা খেলে খিদে মরে আর দুটো খেলে দিব্যি ভরপেট খাওয়া হয়ে যায়। হারামের একদম কাছের দোকানে ২ রিয়েল দামে কিনেছি, এমনি রাস্তাঘাটে হয়তো দাম আর কিছু কম হতে পারে। তবে বেশ শুকনো আইটেম বলে খাবার পরে ঢকঢক করে গ্লাসদুয়েক পানি খাওয়াই লাগে। আরব থেকে খাদ্যাভ্যাস আমদানী করতে হলে আমি এইটাকে একেবারে ওপরের দিকে রাখব।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই মিয়া বইওয়ালা, কি করছো এইসব? এত্তো এত্তো খানাদানা আনলা, আর একটা আওয়াজ দিলানা?!! লানত্

ফরিদ এর ছবি

নাহ! দ্যশের মানুষ সব প্রটোকল ভুইলা গেল দেখি।

হাজ্বীরা দেশে ফেরত আইলে হাতে কিছু নিয়া দেখা করবার আইবেন, সফরের গফটফ শুইনা একপিস খেজুর আর একঢোক পানি খায়া বাড়ি গিয়া শুকরিয়ার নামজ পড়বেন, তা না আজকাল অনলাইনে ফ্রী সফরনামা পাবার পরেও শিলহট থিকা খাওনের ভাগের জন্য আন্দোলন করে।

এইসব অপকর্মের কারণেই দেশের এই দুর্গতি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বছর দুয়েক আগে মক্কাফেরত আত্মীয়ের হাত ঘুরে আসা আব-ই-জমজমের পিইটি বোতলে "ইউভি ফিল্টার্ড" ট্যাগ দেখে বেদম হাসি পেয়েছিল। আরবের খানাদানা বেশ রসালো দেখছি। এতদিন তো ভেবেছি শুকনো খবুজ রুটি আর উটের নোনা মাংসই একমাত্র পাওয়া যায়, এখন দেখি রীতিমতন পাতি-মোগলাই ব্যাপার-স্যাপার। হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।