দেশে-বিদেশে

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৫/২০০৯ - ৩:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
আমার বই পড়ার অভ্যাস শুয়ে। গত দুই যুগ ধরে আমি শুয়েই বই পড়ছি। পাঠ্যের সাথে অনুপাঠ হিসেবে থাকতো মুড়িমাখা, সে-ও প্রায় দুই যুগ ধরেই। প্রবাসে হাতের নাগালে মলাটবন্দী কোন বই নেই, যা পড়ি সবই ই-বুক। সে তো আর শুয়ে পড়া যায় না। যদি জানতে চান, কেন প্রিন্টাউট নিয়ে পড়ি না, তাহলে উত্তর, হয় না। সব দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে না।

২.
মেসেঞ্জারে নোটিশ টাঙিয়েছিলাম সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার সন্ধানে। শিমুল এসে হালুম করে একটা লিঙ্ক গছিয়ে দিয়ে গেলো। গুঁতিয়ে পেলাম আলী সাহেবের কয়েকটি গল্পের স্ক্যান্ড কপি, পিডিয়েফ সংস্করণ। নামিয়ে পড়া শুরু করলাম কয়েকটি অপঠিত গল্প। শেষে পেলাম দেশে-বিদেশে-র তিনখান টুকরো।

আজ সারাদিন সেটি নিয়েই ছিলাম। পরিকল্পনা ছিলো ঘরে বসে অঙ্ক কষার, সেটি না করে পুরোটা দিন অকাতরে ব্যয় (নাকি আয়?) করলাম দেশে-বিদেশে পড়তে পড়তে। আর অনুভব করলাম, কী অমূল্য একটি গ্রন্থ অপঠিত রয়ে গিয়েছিলো এই মূর্খ জীবনে।

আমি নিজে ভ্রমন্থন আর স্মৃতিকথার খুব উৎসাহী পাঠক, যদিও তাবৎ বড় বড় লেখকের তেমনি ধারার লেখা আমার পড়া নয়। আলী সাহেবের এমন একটি সরস রচনা পাঠের আড়ালে রয়ে যাওয়া যেন পাঠকের ফৌজদারী অপরাধ।

আমি এই গ্রন্থালোচনায় কোন অংশ উদ্ধৃত করছি না আপাতত। নতুন পাঠকের আলী-আবিষ্কারের অভিজ্ঞতায় যেন বিন্দুমাত্র আঁচড় না পড়ে আমার লেখার দোষে।

৩.
দেশে-বিদেশে আলী সাহেবের কাবুলবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। বইটি শুরুই হয়েছে বাংলা ছেড়ে পেশোয়ারের দিকে ট্রেনযাত্রার বর্ণণা দিয়ে। আলী সাহেব সরস বর্ণণায় সিদ্ধহস্ত, সেই রসে পাঠককে প্রথম পাতাতেই মজতে হয়, বাকি পৃষ্ঠাগুলো সে সেই রসের ঘোরেই ওল্টায়।

পেশোয়ার থেকে কাবুল যাত্রার যে কাহিনী বইটিতে আছে, সেটি শুধু রচনাগুণেই নয়, তথ্যগুণেও অমূল্য। বাঙালির চোখে অচেনা আফগানিস্তানকে আলী সাহেব যে মুগ্ধ প্রেমিকের উচ্ছ্বাস নিয়ে এঁকেছেন, তার প্রতিধ্বনি বইটির পাতায় পাতায়। পশ্চিম ভারত আর আফগানিস্তানের শহর গ্রাম সব কাগজ-কালির বন্ধন ছাড়িয়ে পাঠককে ঘিরে ধরে একটু পর পর, এমনই মোহনীয় সেই বর্ণণা।

আফগানিস্তানের রাজত্ব নিয়ে তখন ঘোর সঙ্কটকাল, আলী সাহেব সেই সঙ্কটের প্রত্যক্ষদর্শী, আর তাঁর কলম সেই সঙ্কটদৃশ্য এঁকেছে দারুণ নৈপুণ্যের সাথে। ভারতীয় শিক্ষক হিসেবে তিনি কাবুলে কর্মরত, পাঠান আর কাবুলীদের জীবনযাত্রা নিয়ে প্রতিদিন শিখছেন কিছু না কিছু, এক একটি ঘটনা তাঁর মনে যে ছাপ ফেলেছে, সেই একই ছাপ তিনি কী অদ্ভূত দক্ষতার সাথে ফেলছেন কাগজে, পাঠকের জন্যে। কখনও যাইনি কাবুল, কিন্তু আলী সাহেবের লেখায় ফুটে ওঠা ছবিতে তাকে যেন দেখতে পাচ্ছি জানালার ওপাশেই। আফগানিস্তানের ইতিহাস ও রচনাকালীন বর্তমানকে যে স্বচ্ছ আর বর্ণিল ভাষায় আলী সাহেব তুলে ধরেছেন, তা তুলনারহিত। দুর্গম কাবুল যুদ্ধসঙ্কটাপন্ন, তিনি একা বাঙালি, নির্ভর করছেন ভাগ্য আর স্থানীয় বন্ধুদের ওপর, মুখোমুখি হচ্ছেন নির্মম ইংরেজের মাৎসর্য্যের, অনুভব করছেন পরাধীনতার তিক্ত আঁচটুকু, শুনছেন প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ, নিজে মুখোমুখি হচ্ছেন মৃত্যুর, এরই মাঝে মানুষের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন সুর আর অসুরকে। এরই আগে পরে উঠে আসছে কাবুলের জীবনযাত্রার টুকরো টুকরো ছবি, তার বাজারের কথা, সুধীজনের বাড়িতে নিমন্ত্রণের ছবি, নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় আর সে বন্ধুত্ব গাঢ় হবার গল্প। লেখার প্রতিটি মোড়েই একটি বাংলা বা ফারসী কবিতা ফুটে আছে পথের পাশের ঘাসফুলের মতো। দীর্ঘদিন আমার কৌতূহল ছিলো আলী সাহেবের ইংরেজবিদ্বেষ আর জার্মানপ্রীতি নিয়ে, এই বইটি পড়ে যেন কিছুটা উত্তর পেলাম। বেঁচে থাকলে তাঁর চরণস্পর্শ করে ধন্যবাদ জানাতাম এমন একটি গ্রন্থরচনার জন্যে।

সত্যজিৎ রায়ের লেখায় পড়েছিলাম আনপুটডাউনেবল বিশেষণটি। সৈয়দ মুজতবা আলীর এই বইটি আসলেই তাই।

৪.
কারো যদি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের আফগানিস্তান নিয়ে আগ্রহ না-ও থাকে, অন্তত আবদুর রহমানের কথা পড়তে হলেও দেশে-বিদেশে পড়ুন। আবদুর রহমান যেন বইটির আত্মাকে ধারণ করেছে নিজের মাঝে, সে যেন ফেলে আসা সময় আর দেশকে ধারণ করেছে অ্যাটলাসের মতো, যার জন্যে একটি দিন আলাদা রেখে দিনান্তে পাঠশেষে সামান্য অশ্রুপাত করা যায় সবসময়।


মন্তব্য

তানবীরা এর ছবি

বাসায় আছে, পড়া হয়নি এখনো। পড়তে হয় দেখছি। হিমু কাসেলপুরীর রেকমন্ডেশন।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তানভীর এর ছবি

খালি একা পড়লেই হবে? লিংক কই?

হিমু এর ছবি

বেআইনী জিনিস বস। লিঙ্ক দেয়াটা উচিত হবে না। মেইল করে দিতে পারি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রু [অতিথি] এর ছবি

লিন্ক অথবা পিডিএফ আপনার কাছ থেকে কিভাবে পেতে পারি?

হিমু এর ছবি
শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমিও এখনো পড়ি নাই।
পড়ে ফেলবো, মাস্ট!!! দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি

আমি মনে করি, শিক্ষাবোর্ড আর পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একটা সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া উচিত, উচ্চ মাধ্যমিকে একটা ননক্রেডিট কোর্স হিসেবে "বই পড়া"কে ঢোকানো। তাতে করে অন্তত একটা ভালো বই প্রতি বছর ছেলেমেয়েদের ধরে বেঁধে পড়ানো যাবে। দেশে-বিদেশে সেরকম একটি বই।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমার একটা বই লাগলে নগদে সেইটা আজীজ টাজিজ ঘুরে কিনে ফেলি, দোকানে না পাইলে কার কাছে আছে খোঁজ নেই। সর্বোচ্চ একদিনের নোটিশে বই হাজির হয়।

এই যেমন এখন বিণয় মজুমদার পড়তে ইচ্ছা করলো। কিন্তু জনৈক মহিলা সেইটা মেরে দিছে, তারপর আর কেনা হয় নাই। কালকেই কিনে ফেলতে পারবো। কিন্তু এক রাতের ধৈর্য ধরে না।

সেখানে আপনাদের দুঃখে সত্যিই খুব কষ্ট পাইলাম। এইজন্যই হালায়, বিদেশে যাইনা...

আলী সাহেব এক দূর্দান্ত লোক... অসাধারণ, তারে না পড়লে জীবনের আধেক্টাই মাটি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

গোয়িং ফার? এক প্রশ্নেই সব প্রশ্ন করা হয়ে যায়..

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমিও মেইলে বে-আইনী জিনিসটার লিঙ্কটা চাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শেষে এসে আব্দুর রহমান নামটা দেখেই কেমন লাগলো। মজার ব্যাপার হলো এই গল্পটার অংশ বিশেষ পড়েছিলাম স্কুলে থাকতে। আরও মজার বিষয় হলো যে গল্পটা পড়েছিলাম সেটা ছিলো মাদ্রাসা বোর্ডের (খুব সম্ভবতঃ দাখিল শ্রেণী) বইয়ে। নাম ছিলো ইনহাস্ত ওয়াতানাম (এইতো আমার জন্মভূমি)। আব্দুর রহমানকে ঘিরেই ছিলো পুরো গল্পটা। স্মৃতির ব্যাড সেক্টরে পড়ে অনেক ঘটনাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেই গল্পের। হিমুকে ধন্যবাদ নতুন করে সন্ধান দেবার জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

ধুগোদা মাদ্রাসায় পড়তেন নাকি ?
---------------------------

--------------------------------------------------------

ধুসর গোধূলি এর ছবি
হাসান মোরশেদ এর ছবি

স্কুলবেলায় পড়েছিলাম। হার্ডকাভারের বই ছিলো। এখন মনে পড়ে দূর মফস্বলের সরকারী হাইস্কুলে একটা দারুন সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিলো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

বিষন্ন এর ছবি

বাংলাতে ভাল লাগা ভ্রমণ-কাহিনীর মধ্যে সৈ্যদ সাহেবের "দেশে-বিদেশে" একদম ইউনিক একটি ধারার বই। যে না পড়েছে, তাকে এর স্বাদ বুঝাতে যাওয়া অসম্ভব। তবে মুজতবা আলীর লেখা আমার বিচারে শ্রেষ্ঠ বইটি হচ্ছে "শবনম"। প্রেম যদি করতেই হয়, তা এভাবেই করা উচিত। বিরহ যাতনা যদি পেতেই হয়, তাহলে এভাবেই পাওয়া উচিত। বেশী বলবো না আর, যদি পড়ে না থাকেন, তবে অবশ্যই পড়বেন। আহা-!

হিমু এর ছবি

শবনম আমি বহু আগে আদ্ধেকটা পড়ে আর আগাইনি। তখন অন্যরকম ছিলাম, প্রেম নিয়ে ভাবনা অন্যরকম ছিলো। দেখি ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে বাকি আদ্ধেকটাও পড়ার চেষ্টা করবো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দ্রোহী এর ছবি

দেশে বিদেশে পড়া হল। এবার শবনম পড়া না থাকলে পড়ে ফ্যালেন।

হাসিব এর ছবি

- আমার কাছে যেইটা বইটা পৈড়া যেইটা মনে হৈছে সেইটা হৈলো আফগান জাতি বর্ননা করা সময়টা থিকা এককদমও আগায় নাই । সেই একইভাবে তারা এখনও চিন্তা করে ।

- আরেকটা বিষয়ও নজরে পড়ছে । মেয়েদের চেহারাসুরত বর্ননা বিষয়ে । সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যে যুগে যুগে বদলায় এইটা বোঝা যায় সৈয়দ সাহেবের লেখায় ।

একখান ফটুক দেই দেহো -

auto

এই ছবিটা আফগান আমির আমানুল্লাহ আর তার স্ত্রীর ব্যর্লিন সফরের সময়ে তোলা । আমানুল্লাহর স্ত্রী ও তার বোনের সম্পর্কে যেই বর্ননা পাই বইতে এই ছবিতে তার নজির আমার এই একুশ শতকের চোখে ধরা পড়ে না ।

হিমু এর ছবি

মেয়েদের সৌন্দর্য নিয়ে আলী সাহেবের বক্তব্যের সাথে পাঠককে একমত হতেই হবে, এমন কোন কথা নাই। আরো উদাহরণ দিতে পারি, চিনার গাছ (ওরিয়েন্টাল প্লেইন বলে ইংরেজিতে), সেটার এক দারুণ উচ্ছ্বসিত বর্ণনা আছে, কিন্তু চিনারকে আমার এমন আহামরি সুন্দর গাছ বলে মনে হয় নাই। কিন্তু লেখকের চোখে হয়তো একটা নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিবেশে চিনারের সৌন্দর্য অন্যভাবে ধরা পড়েছিলো। আমানুল্লাহর বৌকে আমার চোখেও এমন আহামরি সুন্দরী মনে হচ্ছে না, কিন্তু কাবুলীদের চোখে হয়তো ইনিই আহামরি ছিলেন, সেটাই আলী সাহেব ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন লেখায়।

আর একটা ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না, আলী সাহেব প্রবাসে একলা ছিলেন, তখন তাঁর যুবা বয়স, কাজেই ঐ কাবুলী ময়দানে সৌন্দর্যের ব্যাপারে কিছু রাবাট তিনি নিশ্চয়ই দিয়েছেন হাসি ... ।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

মূলত পাঠক এর ছবি

যাঁরা বইটা পড়েন নাই তাঁদের জন্য ঈর্ষা রইলো। কী চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা আপনারা পেতে চলেছেন যে কী বলবো!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

জীবনে বহু বই পড়েছি। সৈয়দ মুজতবা আলী আমার দেশের লোক। তার বইও পড়েছি।

তবে বছর দুয়েক আগে যখন দেশে গিয়েছিলাম তখন বইমেলা থেকে সৈয়দ মুজতবা আলী সমগ্র কিনে হ্যান্ডলাগেজে বহন করে বিলাত পর্যন্ত এনেছি।
আমার ঘর ভর্তি কত মুজতবা আলী।
আহা! হিমুর দুর্ভাগ্যে মায়াই হচ্ছে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি

কোন টেনশন নিয়েন না বস। লন্ডন গেলে আপনাকে না বলে চেয়ে নিয়ে আসবো বইখান।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

বর্ণনাটা দারুন হইসে। পড়তে মঞ্চায়।
----------------------

--------------------------------------------------------

তুলিরেখা এর ছবি

আমার চিরকালের প্রিয় বইয়ের লিস্টের মধ্যে দেশেবিদেশে আর চাচাকাহিনি থাকবে।
সত্যি অসাধারণ লেখা।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

দিগন্ত এর ছবি

মা খু চিহল পঞ্জম হস্তম !!


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাগিব এর ছবি

দেশে বিদেশের অনেক পুরানো একটা সংস্করণ হাতে এসেছিলো একবার। মুজতবা আলীর লেখা বলে কথা, প্রচন্ড সুস্বাদু আর রসালো।

পাঠানদের রাইফেল প্রীতির কথা পড়েছো নির্ঘাত বইটাতে? রাইফেলধারী পাঠানদের ভয়ে ইংরেজরাও সে আমলে ভয়ে থাকতো।

আফগানিস্তানে যুগে যুগে যে গিয়েছে, শুরুতে জুত করতে পারলেও পরিণামে মার খেয়ে ফেরত যেতে হয়েছে।
----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

সিরাত এর ছবি

হিমু ভাই, আমাকেও একটু লিংকটা পাঠাবেন? মনওয়ার অ্যাট জিমেইল। হাসি 'monwar'.

প্রবাসে হাতের নাগালে মলাটবন্দী কোন বই নেই, যা পড়ি সবই ই-বুক। সে তো আর শুয়ে পড়া যায় না।

কন কি? আমার ল্যাপটপ তো বিছানায়ই থাকে। হাসি

রানা মেহের এর ছবি

আমার দেশে বিদেশে হারিয়ে ফেলেছি মন খারাপ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নাহার মনিকা এর ছবি

কোন একটা উপলক্ষে চেয়ে নেওয়া উপহার সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী এক থেকে এগার খন্ডের মালিক হয়ে আমি বিশেষ গর্ব বোধ করে থাকি!
সচলরা সব একটা শহরে থাকে না কেন? ভাগাভাগি করে পড়া যেত!

মণিকা রশিদ এর ছবি

আমি কিন্তু একই শহরে থাকি মনিকা আপা, এখনো ভাগ পাইনি!
_______________________________
আর সব যুদ্ধের মৃত্যুর মুখে হঠাৎ হাসির মতো ফুটে ওঠা পদ্মহাঁস
সে আমার গোপন আরাধ্য অভিলাষ!
--আবুল হাসান

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দেশে-বিদেশে'র শেষ মন্তব্যটা এখনো মনে গেঁথে আছে...।

"চারিপাশের শুভ্র তুষার- তারো চেয়ে শুভ্র আব্দুর রহমানের হৃদয়"...এটা ছিলো মনে হয়।

তবে, আমার মনে হয় আলী সাহেবের সেরা বই "চাচা-কাহিনী", খুবই ভালো লেগেছে সেটা- এখনো লাগে।

---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হিমু এবং বাকি সবার প্রতি,

যারা সৈয়দ মুজতবা আলী খুব বেশি পড়েননি বা পড়ার দরকার বোধ করেননি তারা যে বাঙালী হিসেবে জীবনে কী মিস করেছেন তা আমার পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ধার-কর্জ করে হলেও উনার "সমগ্র" কিনে ফেলুন। আপনি ঠকবেন না এটা গ্যারান্টেড। "দেশে-বিদেশে"র পর "শবনম" এবং তারপর "পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়" পড়া মাস্ট। সম্ভবতঃ অল্প বয়সের কারণে হিমু এককালে "শবনম" শেষ করতে পারেন নি। আজকের হিমুর চোখে সেখানে প্রেমকাহানীর বাইরে অনেক দরকারী জিনিষই চোখে পড়বে। বইটি আমার বিবেচনায় সুখপাঠ্যও বটে। আফগানিস্তানের ইতিহাস যতটুকু পড়েছি এবং গত ত্রিশ বৎসর ধরে মিডিয়া থেকে যা জেনেছি তাতে যে কোন কালের আফগানিস্তানকে বর্ণনা করার জন্য "পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়" এই শব্দবন্ধ যথেষ্ঠ। দেখার কেমন চোখ থাকলে সৈয়দ মুজতবা আলী এই মন্তব্য করতে পেরেছিলেন তা ভাবলেও অবাক হই।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

বিষন্ন এর ছবি

সৈ্যদ মুজতবা আলীর আসল মুন্সীয়ানা হচ্ছে যে উনি ইনফরমেশন আর রস এই দুটো জিনিসকে চমৎকার ভাবে মেশাতে পারতেন। এই দক্ষতা বাংলা সাহিত্যে আর কারো আছে কিনা তা আমার জানা নেই। আলী সাহেবের আর একখানি চমৎকার বই হচ্ছে "হিটলার"। জর্মন দেশের সচলেরা পড়ে খুবই আনন্দ পাবেন আশাকরি।

নজমুল আলবাব এর ছবি

আরেকবার পড়তে হবে। কি পড়ছিলাম কিছুই মনে করতে পারছি না।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আলী সাহেবের সমগ্র কেনার জন্য তীব্র ইচ্ছা জাগলো মনে।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

আপনার একটা উদ্ধৃতি দেই আমি-
লেখার প্রতিটি মোড়েই একটি বাংলা বা ফারসী কবিতা ফুটে আছে পথের পাশের ঘাসফুলের মতো।
চলুক
হায় রে! কিচ্ছু না পড়েই একত্রিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম!
এখন আর কবে কী করবো?!
কী নিরর্থ কী মূর্খ একটা জীবন!
কী করলাম! মন খারাপ

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, আমার কাছে ,জা লেগেছিল পান খেয়ে পিক ফেলার পর আব্দুর রহমানের অস্থিরতা, আলী সাহেব লেখেছিলেন, এরা পান চিনে না কিন্তু যক্ষা চিনে, আর সে সময়ে যক্ষার কোন চিকিৎসা ছিল না

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রেজওয়ান এর ছবি

মুজতবা সমগ্রের অনেকখন্ডই পড়েছিলাম জার্মান কালচারাল সেন্টারের লাইব্রেরী ও অন্যান্য উৎস থেকে। ঢাকার বাসায় কয়েকটি উপন্যাস আছে। এবারের টার্গেট রচনাসমগ্র। সৃতি না ঝালিয়ে নিলে কি চলে?

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

তিথীডোর এর ছবি

ভাষা আর রসবোধ, সৈয়দ মুজতবা আলী দুটোতেই অসাধারণ!!!
দেশে -বিদেশে, ধূপছায়া, শবনম, চাচাকাহিনী, পঞ্চতন্ত্র... প্রত্যেকটা বই-ই আসলে একেকটা মাস্টারপিস!
বিশেষত 'শবনম', আহ্!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মর্ম এর ছবি

ভার্সিটিতে ভর্তির পর 'শবনম' পড়েছিলাম মামার দেয়া অবশ্যপাঠ্যের লিস্টি মিলিয়ে।

আহাহাহা, অতুলনীয় স্বাদ!

দেশে বিদেশে, পঞ্চতন্ত্র, চাচাকাহিনি... নাহ! আবার পড়তে হবে, কিছুই দেখি মনে নাই!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

সৈয়দ মুজতবা আলী যখন কাবুলে যান তখন তার বয়স ছিল মাত্র তেইশ বছর। এই অল্প বয়সে কথাবার্তা এবং আচরণে তিনি যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন তা ভাবলে অবাক হতে হয়। মুজতবা আলীর আরেকটা ব্যাপার আমাকে অবাক করে সেটি হচ্ছে তার ভাষা জ্ঞ্যান। বাংলা ছাড়াও ইংরেজ়ী, জার্মান, ফরাসী, ফার্সি, আরবি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ভাষা জানতেন। এছাড়াও ভারতের কয়েকটি ভাষায় তার ভাল দখল ছিল। আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। সৈয়দ মুজতবা আলী'র রচনা সমগ্রের প্রথম চারটি খন্ড পড়েছি, বাকি খন্ডগুলাও পড়ার ইচ্ছা আমার আছে। সৈয়দ মুজতবা আলীর অসংখ্য ছোট ছোট ভ্রমণকাহিনীমূলক লেখা লিখেছেন যা কয়েক খন্ডে মুজতবা আলীর রচনা সমগ্রে আছে।

আচ্ছা, মুজতবা আলীর ছোট গল্প সচলে প্রকাশ করলে কপিরাইট আইনের কি ভঙ্গ হবে? যদি অবৈধ না হয় তাহলে মুজতবা আলীর ছোট গল্পাকারে লেখা অসাধারণ কিছু ভ্রমণকাহিনী আমি সচলে পোস্ট করতে চাই।

সত্যান্বেষী

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

১। উইট বা হিউমারের জন্য বিখ্যাত লেখকরা নাকি অনেকসময় বাস্তব জীবনে তেমন একটা বলিয়ে-কইয়ে লোক হন না। কিন্তু, অতুলনীয় উইট-এর জন্য শুধু লেখক হিসেবেই নয়, একজন প্রচন্ড বুদ্ধিদীপ্ত রসবাজ আড্ডাবাজ/মজলিশী হিসেবেও বন্ধু-স্বজন-পরিচিত পরিমন্ডলে সৈয়দ মুজতবা আলীর অসামান্য খ্যাতি ছিল। শুধু তাঁর কথা (আড্ডায়) শোনার জন্যই নাকি তাঁর বৈঠকখানায় মানুষের লাইন লেগে থাকত নিয়মিত ভিত্তিতে! এটা গুরুজনদের কাছে শোনা। তবে ঠিক এই বিষয় বা মুজতবা আলীর এই দিকটা নিয়েই কোলকাতা থেকে কিছুদিন আগে একটা বই বেরিয়েছে। এটা পড়িনি অবশ্য, নাম-টামও মনে পড়ছে না এখন।

২। হিমু সৈয়দ মুজতবা আলীর ইংরেজবিদ্বেষ ও জার্মানপ্রীতির কথা বলেছেন। দেশে-বিদেশে আমি বহুদিন আগে পড়েছি তাই এখন আর খুব একটা মনে নেই। তবে এটা পড়েছি কোথায় যেন -- আলী শিক্ষাজীবন ও পেশাজীবনে ঔপনিবেশিক সরকারের কারনে ব্যাপক বাধার সম্মুক্ষীন হয়েছিলেন। তিনি সম্ভবত শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া করেছিলেন যা তখন খুব সম্ভবত ইংরেজ-সরকার স্বীকৃত ছিল না। ফলে তাঁর উচ্চশিক্ষায় বাধার সৃষ্টি হয়। পরে উনি '২০-এর দশকে বৃত্তি পেয়ে জার্মানির একটা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চলে যান (তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বা এরকম কিছু হবে), যেখানে তখন আইনস্টাইনসহ তৎকালীন (কোনকোন ক্ষেত্রে সর্বকালেরও বটে) বিশ্বের একঝাঁক শ্রেষ্ঠতম প্রতিভা ও উজ্বলতম নক্ষত্ররা হয় পড়ছেন নয়তো পড়াচ্ছেন। মুজতবা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সান্নিধ্য/সাহচর্য কতটা পেয়েছেন জানি না, তবে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক একাডেমিক পরিবেশ ও সংস্কৃতিটা অনুমেয়। কিন্তু এমন জায়গা থেকে শিক্ষাগ্রহন করে এসেও তৎকালীন ইংরেজ-সরকারের কাছে চাকরী জীবনে পাত্তা পাননি। জার্মান ডিগ্রী বলেই হয়তো। এখানে কোথাও চাকরি না পেয়ে নিরুপায় হয়ে যেতে হয়েছে দুর্গম আফগানিস্থানে - যদ্দুর মনে পড়ে স্কুল-টিচারের চাকরি নিয়ে (?)। এসব কারনেও তার ঐ ইংরেজবিদ্বেষ ও জার্মানপ্রীতিটা হয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া আলীসাহেব ফরাসি (ফ্রেঞ্চ) ভক্তও ছিলেন।

৩। আলীসাহেব পাকিস্তানবিদ্বেষীও ছিলেন বোধহয় - অন্ততঃপক্ষে তখনকার পাকিস্তানরাজতো প্রচন্ডভাবে মুজতবা-বিদ্বেষী ছিল বটেই। দেশবিভাগের পরে একসময় পূর্ব-পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন তিনি (সিলেটি হলেও কোলকাতাতেই থাকতেন পাকাপাকি)। কিন্তু সরকারি ও পাকিস্তানপন্থীদের প্রচন্ড নিগ্রহের মুখে আবার কোলকাতাতেই ফিরে যেতে হয়। যদিও পরিবার মনে হয় এপারেই থেকে যায়। পরে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৭৪ সালে তাঁর ধানমন্ডির বাসায় মৃত্যুবরন করেন। মুজতবা রাজনীতির দিক থেকে পুরোপুরি পাকিস্তান ভাবাদর্শের বিরোধী ছিলেন (ভাষা আন্দোলনের সময় ঐ প্রেক্ষিতে বালাভাষার পক্ষে তাঁর আস্ত একটা বইও আছে), রাজনৈতিক বিশ্বাসে প্রচন্ড এন্টি-মার্শাল'ল সেকুলারিস্ট গনতন্ত্রবাদী এবং ব্যক্তিগতভাবে সম্ভবত এথেইস্ট বা এগ্নস্টিক। আর সাংস্কৃতিকভাবে খুবই পশ্চিমবঙ্গমুখি। পাকিস্তানসৃশটির পর পারিবারিক কারনে অনিচ্ছাসত্বেও এখানে একসময় ফিরে আসলেও এখানকার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল তাঁকে স্যুট করেনি। তাছাড়া তাঁর সমস্ত বন্ধুবান্ধব ছিল কোলকাতারই লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকসমাজের রথী-মহারথীরা সেই যুবা বয়স থেকেই, ওখানেই পেতেন প্রানের স্ফুর্তি বা স্বাচ্ছন্দ্য। এখানে সমমনা পরিমন্ডল বোধহয় গড়ে উঠেনি। প্রচন্ড মজলিশী ও বন্ধুবৎসল মানুষটির জন্য এটাও বোধহয় একটা বিরাট ব্যাপার ছিল। ফলে এখানে যাও বা এসেছিলেন তারপরও বারবারই ফিরে বা ছুটে যেতেন কোলকাতায়। তার এইসব ব্যাপারও সম্ভবত সেই সময়ের প্রচন্ড ভারত-বিরোধী বা পাক-ভারত যুদ্ধের যুগে অনেকের চোখে ভাল ঠেকতো না।

৩। অনেকে 'শবনম'-এর কথা বলেছেন। গুজব আছে বাস্তব জীবনেও নাকি এর খানিকটা ভিত্তি আছে - যার নায়ক নাকি আসলে লেখক নিজেই ছিলেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

১। হ্যাঁ, ওনার সঙ্গে আড্ডায় কাটানো সময় নিয়ে অনেকেই স্মৃতিচারণ করেছেন। একজনের লেখা মনে পড়ছে, তিনি বাঙালীদের মাংস (সম্ভবত) রান্না নিয়ে বলেছিলেন, "তোমরা মাংস রান্নায় এত মশলা দাও কেন বলত? এত মশলা দিয়ে রাঁধলে তো ঘাসও খেতে ভালো লাগবে!"

২। উনি খোজাদের ভাষা নিয়ে গবেষণা করতেন বোধহয়। উনি জার্মানীতে একাধিক ইউনিতে গিয়েছিলেন, সেখানে কোনো একটায় তখন আইনস্টাইনও ক্লাস নিতেন। উনি পাগলা প্রফেসরের বর্ণনা দিয়েছেন, যে আইনস্টাইন ভুলে গেছেন, কোন ক্লাসরুমে তাঁকে যেতে হবে, একেবারে শেষ মুহুর্তে কাউকে জিজ্ঞেস করে করিডোর দিয়ে সেইদিকে দৌড়াচ্ছেন, সবাইকে ধাক্কাধুক্কা মেরে আর পারদোঁ, পারদোঁ (মাফ করবেন) বলতে বলতে।

৩। আলিসাহেবের লেখা পড়ে আমার ওনাকে ইশ্বরবিশ্বাসীই মনে হয়েছে। অবশ্য, শান্তিনিকেতনে পড়ার ফল হয়ত, খানিকটা ব্রাহ্ম ধরণের অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ভগবানের আইডিয়া ছিল বোধহয় ওনার।

শবনম বেশ ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ভাল মনে নেই...

হিমু এর ছবি

মুজতবা আলী জার্মানিতে বৃত্তি পান আফগানিস্তানে সাক্ষাৎকার দিয়েই। জার্মানি থেকে পড়ে এসে আফগানিস্তান যাননি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পাবেন দেশে-বিদেশে বইটিতেই।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

তিথীডোর এর ছবি

ভাগ্যিস পুরনো পোস্টটা খুঁজেপেতে মন্তব্যটা করেছিলাম! খাইছে
আসলে সচলের বুক রিভিউয়ারদের হাতে 'শবনম' নিয়ে কিছু পড়ার ইচ্ছে ভীষণ| হিম্ভাই যদি লেখেন, তবে তো কথাই নেই!

মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনের ডিগ্রিধারি বলে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা সত্যি! কারণটা নিজেই তিনি দেশে -বিদেশে তে লিখেছেন এভাবে-- (বইটা এই মুহূর্তে হাতের নাগালে নেই, তাই হুবহু উদ্ধৃত করা গেলো না)
"রবীন্দ্রনাথ তো সবাইকেই সার্টিফিকেট দেন| এমনকি এক তেল কোম্পানিকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন যে, তাদের তেল ব্যবহার করলে নাকি চুল গজায়!"
তবে কাবুলে সম্ভবত কেবল রবিঠাকুরের সাক্ষর সংবলিত কাগজপত্র তাঁকে (কারণ কর্মক্ষেত্রের উর্দ্ধতন ব্যক্তিটি খুব রবীন্দ্রভক্ত ছিলেন) পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে আগত অন্যান্য সহকর্মীদের চাইতে আলাদা করে তুলেছিলো|

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

হিমু এর ছবি

আজ শূন্যের আট ডিগ্রি নিচে ঝোড়ো তুষারে হাঁটতে বেরিয়ে হঠাৎ অনুভব করলাম, দেশে-বিদেশে বইটিতে যে পানশিরের কথা আলীসাহেব লিখেছেন, সেই পানশির ছদ্মবেশী সিলেট। পানশিরের জন্যে আবদুর রহমানের আকুতি প্রবাসী আলীসাহেবের নিজের রোদনের ছায়ামাত্র। আবদুর রহমান এখানে আলীসাহেবেরই আত্মার প্রতিবিম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতকালে জানালার পাশে আসন পেতে হরেক রকম তুষার দেখে কাটিয়ে দেয়ার মতো পানশির লেখকের গোপন করা অশ্রুটুকুই। ঘর ছেড়ে বের হবার পর আর পুরোপুরি ঘরকাতর হওয়া যায় না, তখন কাতর হতে হয় পানশির নিয়ে, আবদুর রহমান হয়ে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ওডিন এর ছবি

কাকতালীয় কি না কে জানে, তবে বেশ আগে গিফট পাওয়া 'পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়'টাকে কয়দিন ধরে এদিকেসেদিক ঘুরাঘুরি করতে দেখছি, খপ করে ধরে নিয়ে আবারো পড়ে ফেলতে হবে। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

সাবিহ ওমর এর ছবি

দেশে-বিদেশে পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, কেউ এটা নিয়ে একটা মুভি বানায় না কেন??? লাস্ট সিনটা কল্পনা করেন খালি, প্লেন উপরে উঠছে, জানালা দিয়ে আবদুর রহমানকে দেখা যাচ্ছে, বরফের উপর দাঁড়িয়ে মর্তমান কলার মত আঙ্গুলসহ হাত নাড়ছে, ক্যামেরা মুজতবার দিকে ফিরবে, তার চোখের কোণে পানি, একবার হাত নাড়বে (বা জানালার গায়ে হাত চেপে ধরবে)। এখন প্লেন আরো উপরে উঠছে, নিচে আব্দুর রহমান ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে, চারদিকে বরফ, স্ক্রিন সাদা হয়ে আসছে...সাথে সুখসুখ করুণ একটা মিউজিক...ওফফ...

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটা আমারো ছোট থেকেই মনে হয়েছে, এইটা নিয়ে একটা হলিউডকেও চমকে দেবার মত অসাধারণ মুভি হতে পারে। (আরেকটা যে বই নিয়ে মনে হয়, সেইটা চাঁদের পাহাড়।) কাইট রানার নিয়ে পশ্চিমি মিডিয়া অনেক মাতামাতি করেছে। আমার মতে দেশে বিদেশে কাইট রানারের থেকেও অনেক রিচ একটা বই। কিন্তু আফগানিস্তানের যা অবস্থা, তাতে সেখানে শুটিং করবে কে?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

অনেকদিন আগে পড়া বইটা আবার পড়ার কথা মনে করিয়ে দিলেন। অসাধারণ একটা বই, যে পড়েনি সে নির্ঘাৎ মিস করেছে। আফগানদের সম্পর্কে অনেকের বিরূপ ধারণা থাকলেও আমার কিন্ত ওদেরকে বেশ ভালো লেগেছে। অনেকে আফগানদের সন্ত্রাসী-হেরোইনখোর বললেও আমি ওদের সারল্যে মুগ্ধ যেমন মুগ্ধ হয়েছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। বিশাল গ্যাপ হয়ে গেছে, আবার তার লেখাগুলো পড়তে হবে। ধন্যবাদ হিমু ভাই।

======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

আব্দুর রহমানকে আমি দেখেছি। হ্যাঁ, চাপা বা ঠাট্টা নয় - সত্যি ! দেঁতো হাসি
তবে কাবুলে নয়। কান্দাহারে।

আফগানিস্তান নিয়ে, মুজতবা আলীর মতো না হলেও আমারও সামান্য স্মৃতি আছে। এজন্যে দেশে-বিদেশে পড়তে গিয়ে যদ্দুর মনে পড়ে একটা অন্য রকম আনন্দ পেয়েছিলাম, যদিও আলীর দৃষ্টিশক্তি বা অনুভবশক্তির অনু-পরমানুও আমার মধ্যে নেই। তবু। আর আমার স্মৃতিগুলাও ছাড়া-ছাড়া, টুকরো-টাকরা।

মনে পড়ে কান্দাহারে কোন এক দুনিয়ার বাইর মোটেলে দেখেছিলাম সেই বিশালদেহী, মর্ত্যমান কদলীর মত আঙুল - রিলিফের ম্যাপের মত মুখ - ভাঁটার মত গনগনে চোখ - ওয়ালা মেঘ গুড়গুড় কন্ঠের আব্দুর রহমানকে। নাম মনে নেই, তবে আমার কল্পনায় সেই-ই আব্দুর রহমান। মনে হয় এক হপ্তার বাসি পোলাও আর ফুটো-ফুটো অদ্ভুত একরকম চাপাতি খেয়েছি তার কাছ থেকে।

পানশির ভ্যালি দেখিনি, তবে দেখেছি তুষার-শৃঙ্গ আফগান পর্বত। মনে পড়ে জনমানবহীণ, ধূ ধূ, পান্ডববর্জিত, নিস্পাদপ-রুক্ষ-পাথুরে, অপার্থিব দুর্গম গিরিমালার দুর্গমতর কোন এক পর্বত-কন্দরের এক গুহায় ভয়ঙ্কর পাশতুন স্মাগলারদের হাতে আটকা থাকার কথা। আলী যেই চেঙ্গিস-গুন্ডা 'বাচ্চা ই সাকাও'-র সৃষ্ট গোলোযোগের কারনে শেষমেষ চলে আসতে বাধ্য হলেন, এরা সম্ভবত তারই কোন বাচ্চা ছিল ! মনে আছে, অমন অবস্থায় অমন দুনিয়ার বাইর জায়াগাতে বসেও মৃত্যুচিন্তা করতে করতে ঘি দিয়ে সুগন্ধী বাসমতি চালের গরম ভাত খাওয়া। আমেরিকানদের বোমায় ঐ গুহা কি এখনো টিকে আছে ? জানি না। মনে আছে, হাজার-হাজার ফুট উপর দিয়ে পর্বতগাত্র ঝুলে ঝুলে যাওয়া, গায়ে কাঁটা দেয়া ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক বন্ধুর-সর্পিল পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে ট্রাকে করে যাওয়া। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত, টুকরো কিছু স্মৃতি। মনে হয় আর কোন জীবনের। বহু আগে পড়া, প্রায় ভুলে যাওয়া 'দেশে-বিদেশে' আবারো পড়তে ভীষন ইচ্ছা করছে।

হিমু এর ছবি

আপনি কি ইনটেলিজেন্সের লোক নাকি বাহে?

আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখুন সময় পেলে। আর বাচা-ই-সকাও তাজিক ছিলো, বিরাট গিয়ানজাম না ঘটে থাকলে তার বাচ্চাকাচ্চারা পশতুন কূলে থাকবে না।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

না। তবে আনইন্টেলিজেন্সের হতে পারি হয়তো বাহে। দেঁতো হাসি

আসলে, উপরের মন্তব্যটা যখন লিখছি তখনি আশঙ্কা করেছিলাম এমন একটা প্রশ্ন আসবে! চিন্তিত অবশ্য আমার ধারণা ছিল প্রশ্নটা হবে আমি তালিবান ... বা ঐরকম কিছু কিনা। এসবের একমাত্র উত্তর হলো, আফগানিস্তানের কোন গিয়াঞ্জামের কোন কিছু বা পক্ষের সাথেই আমার ভালোমন্দ কোন সম্পর্কই নাই। সমস্যা হলো, এই উত্তর আবার নতুন প্রশ্ন জন্ম দেয়। সেই প্রশ্ন হইলো, তাইলে আমি ঐ রকম জায়গায় কি করতে গেছিলাম ? হাওয়া খাইতে ? বৈকালিক ভ্রমণে ? নাকি ডায়বেটিস কন্ট্রোলে রাখার জন্য জগিং করতে ? হো হো হো

এসবেরই খুব সহজ একটা উত্তর আছে। কিন্তু আনফর্চুনেটলি, সে উত্তর বা ঐ কাহিণী আপাতত এর চেয়ে বেশি বলা যাচ্ছে না। সমস্যা অন্যখানে। সেটা যে কি, তা হয়তো আপনার জন্য একদম অননুমেয় না-ও হতে পারে। আশা করি বুঝবেন। তবে সুবিধা হলে কোন একসময় হয়তো লিখলেও লিখতে পারি।

এত কথা লিখতাম না। আশা করছিলাম আপনার প্রশ্নটার জবাব না দিলে বিষয়টা চুপেচাপে চাপা পড়ে যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আরো অনেক পাব্লিকেরই এটা নজরে পড়েছে এবং মাথা থেকে এ্যাডভেঞ্চারের প্রতি কৌতুহল আর আগ্রহের এ্যান্টেনা তড়াক করে লাফিয়ে উঠেছে ! দেঁতো হাসি তাই, তাদের সবার জন্যই এই জবাব।

আর হ্যাঁ, একটা ছোট্ট কারেকশন দরকার। আমার একটা আনইন্টেনশনাল দুর্বল বাক্যগঠনের জন্য হয়তো অনেকেরই গল্প শোনার আগ্রহের পালে একটু বেশী হাওয়া লেগে গেছে। ১ম মন্তব্যে এক জায়গায় লিখেছি "...মনে আছে, হাজার-হাজার ফুট উপর দিয়ে পর্বতগাত্র ঝুলে ঝুলে যাওয়া,..." । আবারো পড়তে গিয়ে আমার নিজেরও মনে হলো এই বাক্যাংশটা পড়লে অনেকেরই হয়তো মনে হতে পারে আমি বুঝি মাসুদ রানা বা র‍্যাম্বোর মত মাউন্টেইন ক্লাইম্বিং করেছি !!! ইয়ে, মানে... নিদেনপক্ষে সেরকম কিছু দাবী করছি। আপনার ও নীচে ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্য পড়ে সেরকমই মনে হচ্ছে। আসলে, "পর্বতগাত্র ঝুলে ঝুলে যাওয়া" বলতে আমি ঐ পাহাড়ি রাস্তাগুলিকেই বুঝিয়েছি। এই হাজার-হাজার ফুট উঁচু পার্বত্য রাস্তাগুলিকে অনেক সময় প্রায় নিঃসীম শুণ্যে ঝুলন্ত পুলসিরাত বলেই মনে হয় ওখান থেকে - যেখান দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ বুঁজে, ইষ্টনাম জপতে জপতে, নিজেকে সম্পূর্ণ ভাগ্যের হাতে সঁপে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ! তবে, আপনাদের ভুল বোঝা (বা ঠাট্টা করে বলা হলেও) আমার জন্য নিঃসন্দেহে খুবই ফ্ল্যাটারিং হয়েছে ! আই এনজয়ড ইট আ লট ! দেঁতো হাসি নিজের সম্পর্কে যা আমি মাসুদ রানার বই পড়তে পড়তেও নিজের স্বপ্নতে পর্যন্ত অনেক চেষ্টাতেও আনতে পারিনি - তাই কিনা অন্যের মুখে শুনতে পেলাম। ফ্যান্টাস্টিক ! থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। হো হো হো

তাসনীম এর ছবি

লিখে ফেলুন ঝটপট...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

সবে তো 'মরুযাত্রা' চলছে .... 'পর্বতযাত্রা' আসতে বহুত দেরি আছে হাসি
উপরে হিমু সাহেবের প্রতি-মন্তব্যের জবাবে আমার মন্তব্যটি দেখুন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মনমাঝি, আপনি ঢাকায় থাকলে একবার কেবল জায়গায় বসে আওয়াজ দেন। আপনার পিছনে ঘ্যান ঘ্যান করে মাথা খারাপ করে দিয়ে আপনার এই ক্লিফহ্যাঙ্গার - র‍্যাম্বো কাহিনী বের করার জন্য মাশ্রুমাড্ডার লুল্‌ বালকদের লেলিয়ে দেবো।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে খাইছে

ইয়ে, ষষ্ঠ পাণ্ডব ভাই, আমার না...কি বলে যেন...ইয়ে, আহেম আহেম, গলায় খুব ব্যাথা ! আওয়াজ-টাওয়াজ একদম বেরুচ্ছে না । তাছাড়া আমি এখন মঙ্গল গ্রহে শোয়ার্জেনেগারের (দাঁত ভেঙ্গে গেলরে বাবা, কি নাম!) মত দুর্ধর্ষ আন্তগ্রাহিক এ্যাডভেঞ্চারে ব্যস্ত। আমার মহাগুরুত্বপূর্ণ রেড প্ল্যানেট 'মার্স মিশন' থেকে আগে ফিরে আসি, তারপর 'মিশন কান্দাহারের' পুরনো গল্প হবে, কেমন ? ততদিন ধৈর্য ধরুন প্লিজ! ইতিমধ্যে, উপরে হিমু সাহেবের মন্তব্যের জবাবে আমার প্রতি-মন্তব্যটা পড়ে ফেলতে পারেন। দেঁতো হাসি

ও হ্যাঁ, আপনার ভাষায় এই "র‍্যাম্বো কাহিণীর" কথককে কোনদিন যদি দেখেন আর তখন যদি আপনাকে উম্মাদ অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে হয়, তাহলে কিন্তু আমারে দোষ দিয়েন না ! এখনই বলে দিলাম কিন্তু। হো হো হো

কৌস্তুভ এর ছবি

পাঠকের দাবি, হয় আপনার অভিজ্ঞতার গল্প চাই, নয়ত কল্লা। বেছে নিন। চোখ টিপি

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

কল্লা হো হো হো

উপ্রে দেখুন।

kd এর ছবি

মুজতবা আলী কাবুলে গিয়েছিলেন প্রচুর বই পুস্তক নিয়ে তার মধ্যে রবিন্দ্রনাথের দেয়া ক্লাস নোট সহ আর অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তির বই পত্র নিয়ে, কাবুলে তিনি অনেক কিছু রচনা করেছিলেন, কিন্তু ফিরবের সমইয় মাত্র ১০ পাউন্ড ওজনের জিনিশ ছাড়া সবকিছু আব্দুর রাহমান কে দিয়ে আসেন।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে এগুলো পরে উধার হয়েছিল কিনা? আপনি কি কিছু জানেন?

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

কেন আপনি জানেন না ?! অ্যাঁ

এখন যে লোকটাকে সবাই হামিদ কারজাই বলে চিনে, ও-তো আসলে আমাদের আব্দুর রহমান ! আর মুজতবা আলীর ঐসব বইপত্র সব এখন কাবুলের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরীতে সযত্নে সংরক্ষিত আছে। আপনি পড়তে চাইলে ঢাকাস্থ আফগান দূতাবাস থেকে আব্দুর রহমানের... থুক্কু... মহামান্য প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইর ফোন নাম্বারটা যোগাড় করে তাঁকে একটা ফোন করে দেখতে পারেন। মুজতবা আলীর দেশের লোক শুনলে আব্দুর রহমান...থুক্কু, প্রেসিডেন্ট খুবই খুশী হবেন।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

কোন কারনে অথবা অকারনে আমার মনটা বিষন্ন হলে আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে বইটা পড়তে শুরু করি। মনটা ভাল হয়ে যায়।
বইটা আমার কাছে আছে, এইযে দেখুন,
[img]DSCN1671[/img]

মন মাঝি এর ছবি

"দেশে-বিদেশে" লেখার ইতিহাসটার সাথে কিন্তু আলী সাহেবের জীবনের একটা করুন অভিজ্ঞতাও জড়িয়ে আছে।

মুজতবা আলীর ভাষায় সেটা এমন :-

“আমি তখন অর্থাৎ ১৯৪৮ (হবে ১৯৪৭) খ্রিষ্টাব্দে আমার এক অন্ধ্রদেশীয় বন্ধু বীরভদ্র রাওয়ের সাথে মাদ্রাজের বেলাভূমিতে নির্মিত তস্য গৃহে কাল যাপন করছি। সেখানে সমুদ্রের ওপারে চমৎকার সূর্যোদয় হয়। সূর্যাস্ত অবশ্য সমুদ্রগর্ভে হয় না। অর্থাৎ পূর্বাকাশে যে রঙে রঙে রঙিন চিত্রলেখা অঙ্কিত হয়, সেটি কারও দৃষ্টি এড়াতে পারে না।

আমি মাঝে মাঝে তারই বর্ণনা আপন ডায়েরিতে লিখি। বীরভদ্র রাওকে মাঝে মাঝে পড়ে শোনাই।
হঠাৎ, বলা নেই কওয়া নেই- সে একখান অত্যুত্তম green leaf খাতা তথা ভারী সুন্দর একটা কলম এনে দিয়ে বলল :-সূর্যোদয় সূর্যাস্তের স্কেচ অর্থাৎ বর্ণনা তো এঁকেছ বিস্তর, এবার একটা পূর্ণাঙ্গ কেতাব লেখো।

তখন মনে পড়লো – আমাদের পরিবারের প্রথম সন্তান, আমার বড় দাদার বড় মেয়ে জাহানারা একাধিক বার ব্যঙ্গ করে আমায় বলেছে:- হেঁ:! ছোট চাচার শুধু মুখে মুখে হাই জাম্প আর লঙ জাম্প। আপনি একটা বই লিখে দেখান না, আপনি কিছু একটা করতে পারেন?

আমার তখন বড্ডই গোশ্ শা হতো। তদুপরি অর্থকৃচ্ছ্রতা। তখন গত্যন্তর না পেয়ে লিখলুম – “দেশে বিদেশে”।…….. সেইটি নিয়ে চললুম সুদূর মাদ্রাজ থেকে সিলেটে। বইখানা জাহানারাকে নিজেই পড়ে শোনাবো বলে।

ওই মেয়েটিকে আমি বড়ই ভালো বাসতাম। গিয়ে দেখি, জাহানারা সিলেটে নেই। তার স্বামী কক্সবাজারে বদলী হয়েছে বলে, দুই পুত্র আর এক পাতানো ভাই সহ চাটগাঁ থেকে জাহাজ ধরেছে।

দুদিন পরে খবর এলো জাহাজডুবিতে সবাই গেছে।*
এই শোক আমার কলিজায় দগদগে ঘা হয়ে আছে। বইখানা তাই জন্নতবাসিনী জাহানারার স্মরণে উৎসর্গিত হয়েছে।”

* মুজতবার বড়ভাইর মেয়ে জাহানারা স্বামীপুত্রকন্যাসহ কক্সবাজারে ষ্টীমারডুবিতে মারা যান ১৯৪৭ য়ের ২৪ শে অক্টোবর ।

(অবিনাশ চক্রবর্তীর বই "কি করে সাহিত্যিক হলাম"-এ উল্লেখিত আকাশ বাণী কোলকাতা কেন্দ্র থেকে ৮ ই এপ্রিল ১৯৬৯ য়ে সম্প্রচারিত কথিকার টেপ থেকে অনুলিখিত)

****************************************

হিমু এর ছবি

আলীসাহেবের আরেকটা লেখায় তাঁর ছোট ভাইয়ের, যে শৈশবেই মারা যায়, শেষ দিনগুলোর বর্ণনা পড়েছিলাম। শিশুটিকে তেতো এক ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব মুজতবা নিয়েছিলেন। ঐ ওষুধ শিশুটির কাছে অসুখের চেয়েও খারাপ, সে তাই একবার সেটা চেখে দেখার পর মুজতবাকে দেখেই আঁতকে উঠতো, তাঁর কাছে ভিড়তে চাইতো না। বাঁচানো যায়নি তাকে। আলীসাহেব আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, তাঁর স্মৃতিতে অনুজের সেই আতঙ্কিত চেহারাটিই টিকে আছে। সম্ভবত সেই একই লেখায় তিনি অগণিত নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুশোকের সাথে রবীন্দ্রনাথ কী করে যুঝেছিলেন (তিনি নিজে কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী), তার মর্মন্তুদ স্মৃতিচারণ করেছিলেন।

তারেক অণু এর ছবি

এই বছরেই পানশির যাবার কথা ছিল, গেল তো সব থেমে।

'দেশে বিদেশে' আমার সবচেয়ে প্রিয় বাংলা বই।

মন মাঝি এর ছবি

তারেক অনুর কমেন্টের সূত্রে আবার ঘুরে-ফিরে এই পোস্টে এসে পড়লাম! গত কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে বর্তমান কাবুল এয়ারপোর্টে তা টিভি স্ক্রীনে দেখে দেখে আমার নিজের আর এমনই আরেকদল জীবন হাতে নিয়ে পলায়মান বাঙালির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। তাদেরও প্রায় এমনই ভয়াবহ অবস্থা পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছিল। তবে তারা আজকের আফগানদের মত নিজ দেশ থেকে পালাচ্ছিল না, বরং নিজদেশেই ফিরতে চাচ্ছিল। আরেকটা তফাৎ হল, আজকের আফগানরা বিপদ আর মৃত্যু থেকে পালাতে কাবুল চেড়ে পালাচ্ছে, কিন্তু আমরা সেদিন দুর্গম গিরি কান্তার মরুর বিপদ ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কাবুলে পৌঁছে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলাম বিপদ প্রায় কেটে গেছে ভেবে। এই আফগানরাই সেদিন একরকম আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল।

করাচি থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনির নজর এড়াতে ছদ্মবেশ ধারণ করে দুর্গম পাহাড়ি পথের ট্রেনে কোয়েটা (সেই যাত্রাপথে কারও-কারও ধরা পড়ে যাওয়া সহ), কোয়েটা থেকে পাঠান স্মাগলারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীদের চোখ ও গুলি এড়িয়ে কাভার্ড ট্রাকে করে আরও দুর্গম ও সুউচ্চ নিষ্পত্রক জনশুন্য পর্বত-সংকুল পথে বর্ডারের নো-ম্যান্সল্যান্ড দিয়ে জীবন হাতে নিয়ে কান্দাহারের পথে যাত্রা। সে যাত্রাপথেও হাজার-হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে সহযাত্রীদের ট্রাক পড়ে যাওয়া। উপর থেকে ম্যাচবক্সের মত দেখতে ট্রাক আর অনেকগুলি ভয়াবহ মৃত্যু। এই মৃত (এবং জীবিত?) বাঙালিদের ঐ পৃথিবীর বাইরের ভিনগ্রহীয় নারকীয় পরিবেশে ঐ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত কি গতি হল জানি না। তাদের দেশে থাকা স্বজনরা কেমন আছেন বা লাশগুলি পেয়েছিলেন কিনা কে জানে। তবে নির্মম সশস্ত্র স্মাগলাররা খুব হেসেছিল আমরা তাদের বাঁচাতে পারিনি বলে। পথিমধ্যে স্মাগলারদেরই গোপন পাহাড়ি গুহায় আশ্রয় নেয়া। এটাই কি পরবর্তীকালে আল কায়েদার সেই তোরাবোরা গুহা? নিশ্চয়ই না। তবে ভাবতে মজাই লাগে। সেখানে ঐ পাণ্ডববর্জিত বিজন মরুতে অবিশ্বাস্য ভাবে খেয়েছিলাম বাসমতি চালের ধুমায়িত ঘি-ভাত! তারপর অন্যপারের (আফগানিস্তানের) স্মাগলারদের কাছে ভেড়ার পালের মত হাত বদল। সেখান থেকে ট্রাক্টরে টানা খোলা গাড়ির মত আরেক উদ্ভট বাহনে (কি নাম জানি না) মরুপথ ধরে কান্দাহারের পথে। সুদীর্ঘ বিপদসংকুল যাত্রা শেষে অবশেষে কান্দাহারে পৌঁছে ধড়ে প্রাণ ফিরে পাওয়া। সেই আন্তঃনাক্ষত্রিক আউটপোস্টে একটা অদ্ভুত স্যুরিয়াল মোটেলে আশ্রয় লাভ এবং _আমেরিকান হিপিদের_ সাথে মোটেলের লনে তাঁবুর ভিতর মোলাকাত!!! এই মোটেলেই আমার সৈয়দ মুজতবা আলীর আবদুর রহমানের সাথে দেখা হয়ে যায়!!! হ্যাঁ, আবদুর রহমান ছাড়া আর কেই বা হবে সে। হা হা।।। রিলিফের ম্যাপের মত মুখ, মর্ত্যমান কদলীর মত আঙুল। তবে লাল ভাঁটার মত গনগনে চোখ - যা দেখে আমি ভয়ে সিঁটিয়ে যেতাম। এই ব্যাটার জন্যই আমার এই মোটেলের কথা মনে আছে, যেমন কিনা একটা চক্রাবক্রা শার্টের জন্য মনে আছে খোদ মুজতবাকে। এখান থেকে কাবুল। ভারতীয় দূতাবাস। ভিসা না, বরং পাসপোর্ট। তাও আবার ভারতীয় পাসপোর্ট!!! কয়েকদিনের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব। এই দলে আমি অন্তত টেকনিকালি "বাংলাদেশি" হওয়ার আগেই বোধহয় ভারতীয় হয়ে গেলাম!!! সেখান থেকে কাবুল এয়ারপোর্ট। ৭২ সালের সেই এয়ারপোর্ট কি আজকের এই এয়ারপোর্ট??? না নিশ্চয়ই। কিন্তু কতই না নিরাপদ ছিল সেদিনের সেই এয়ারপোর্ট আমাদের জন্য। আজকের এয়ারপোর্ট আজকের আফগানদের জন্য যেমন মোটেই তেমন না। দোযখের উপর দিয়ে পুলসিরাত পার হয়ে এসে আমাদের চোখে তখন দেশে ফেরার, ইথাকায় ফেরার, আমাদের প্রিয় দারুচিনি দ্বীপে ফেরার রঙিন সুখস্বপ্ন। আজকের আফগানদের মত অপেক্ষা করতে গিয়ে কোনো বোমা বিস্ফোরণে পড়ে ছিন্নভিন্ন হতে হয়নি। বর্ডার পেরুনোর সময় কোয়েটা-কান্দাহারের মাঝে কোথাও হয়তো তেমন কিছু হতে পারত এবং অন্যদের হয়েওছে। কিন্তু আমরা পৌঁছে গেছি পরম স্বস্তির নিরাপদ বন্দরে। আর একটু পরেই উড়ে যাব। ফিরে যাব আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে। ৪৯ বছর পরে কাবুল এয়ারপোর্টের বাইরে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে রক্তাক্ত আফগানদের পড়ে থাকতে দেখে খারাপ লাগছে খুব!!!

****************************************

হিমু এর ছবি

আপনার এই স্মৃতি, যদি বেশি চাপ না পড়ে, বিশদে চারণ করুন।

মন মাঝি এর ছবি

ইচ্ছে তো আছে। শুরুও করেছিলাম আগের একটা লেখায়। কিন্তু পেরে উঠছি না নানা কারনে। দেখা যাক।

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।