ছেলেবেলা থেকেই অবশ্য আর্টের প্রতি তীব্র অনুরাগ ছিল। সবাই বলত, বাহ সামিনের তো খুব ভাল আঁকে! অন্য বাচ্চারা যখন কম্পিউটারে ভিডিও গেমস, বাইরে খেলাধুলা করত, আমি একমনে এঁকে যেতাম। আর্টের যে কোন কম্পিটিশনে আমি যে ফার্স্ট হব এটা যেন নিয়মই হয়ে গিয়েছিল। আমি গ্রামের দৃশ্য আঁকতাম, কলসি নিয়ে গ্রামের বঁধু যাচ্ছে এটা ছিল আমার প্রিয় সাবজেক্ট। এছাড়া মাঝি নৌকা চালাচ্ছে, কৃষক ক্ষেতে কাজ করছে, বাচ্চারা গাছে উঠছে এগুলো আমি অনায়াসে এঁকে ফেলতাম। পেন্সিল কালার, প্যাস্টেল কালারে আমি ভাল হলেও জলরংটা একেবারেই পারতাম না। একদম ছ্যাঁড়াবেড়া করে ফেলে আর্টের মুডটা উঠে যেত, আর বসতেই ইচ্ছে করত না।
[justify]আমি প্রথমে গেটের সামনে এসে থমকে গেলাম।
পর্দা করা ফাতেমার ধাঁতে নেই। নদীতে অর্ধউলঙ্গ হয়ে গোসল করে। ঘাটেই কাপড় পাল্টায়। পরপুরুষ হলে কী হবে, বাপের বাড়ির লোক বলে কথা। কেউ বেগানা নয়। কিন্তু এখন থেকে ওসব আর চলবে না।
অবশেষে মৌলভি রাজি হয়। বাদ-যোহর পড়াবে। তবে সম্মানীটা একটু বেশি দিতে হবে। জনপ্রতি মাসিক দুশো টাকা। মেয়েছেলেরা রাজি হয়। এ যুগে দুশো টাকা খুব বেশি নয়।
পরদিন থেকেই মৌলভির ক্লাস বসে। ফাতেমার ঘরের দাওয়ায় চাটাই পেতে। মৌলভি সুর করে, ‘পড়ে আলিফ জবর আ, বে জবর বা...’। পড়াশেষে আধঘন্টা দীন ইসলামের বয়ান। ফাউ। শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী, বাবা-মার সাথে কী আচরণ করতে হবে তার তালিম দেয় মৌলভি। স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেস্ত--এ কথাটা বার বার মনে করিয়ে দেয়।
ছোট্টো সেই খাতা, প্রত্যেকটা পাতা হাতের পাতায় ধরে যায়।আর সেই কলমটি, ছিপছিপে পাতলা গাঢ় নীল রঙের কলম, গলার কাছে এক চিলতে সোনালীর ঝিকমিক।
কমলালেবুগন্ধী শীত-দুপুরের রোদে পা মেলে দিয়ে সাবধানে খুলি খাতা। পাতাগুলো জীর্ণ, পুরানো, ঝুরঝুরে। কতকাল কেটে গেল ঐ শৈশবের খেলাখেলা লেখাগুলোর পরে? কতবার সূর্যপ্রদক্ষিণ করে এলো পৃথিবী তার অন্তহীন পরিব্রজনের পথে?
১।
রুপোলী জরির মতন ফিনফিনে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে আছে আমার রাত্রি বাগানে, আকাশে ঝমঝম করে তারারা। ঝোপঝাড়ের ভিতর থেকে ঝিঁঝিঁদের সম্মিলিত অর্কেস্ট্রা। অদ্ভুত নেশা ধরানো এই সঙ্গীতসভা।
এমন রুপোজরি জ্যোৎস্নারাতেই চলে গিয়েছিল টিপু, শেষবারের মতন দেখা করে গিয়েছিল এইরকম এক রাতেই। জ্যোৎস্নারাতে বাগানে বসে থাকলেই টিপুর কথা মনে পড়ে।
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে রচিত ভিনদেশী এই গল্পগুলি স্থান-কালের সীমানা পেরিয়ে আজো আমাদের চেনা জগতের কথা বলে যায়।
আমার ছোট্টো নদীটা হারিয়ে গিয়েছিল। ওর নাম ছিল ক্ষমা, আমার পাথরঘরের কাছ দিয়ে কুলকুল করে বয়ে যেত ওর চঞ্চল ধারা। ও ছিল ছোট্টোবেলার প্রিয় খেলার সাথীর মতন, স্বচ্ছ, অনাবিল, যার মধ্যে নিবিড় শান্তি আর আনন্দ, যার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যা্য, যার কাছে সব কথা বলা যায়। মধ্যগ্রীষ্মের প্রচন্ড বালিঝড়ে একদিন নদীটা নেই হয়ে গেল ।
তোমার চোখ দুটি ভারী আশ্চর্য ছিল। কেমন যেন গভীর, অতল, একটু উঁকি দিলেই মনে হতো টুপ করে পড়ে যাবো। সেই চোখে কখনো চিকমিক করতো রোদ্দুর, কখনো বা মেঘলা হয়ে যেত, কখনও আবার তারা ঝিকমিক করতো। তবু সেই চোখের অপার রহস্যের দুয়ার কোনোদিন খুলতো না আমার কাছে।