কিছু টুকরো স্মৃতি

ধুসর জলছবি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর জলছবি [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৯/২০১৩ - ১০:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
সার্জারি ওয়ার্ড এ ইন্টার্ন করছি। এক মুরুব্বী রোগী ভর্তি , সত্তরের উপরে বয়স, যার কাছে ফলো-আপ দিতে গেলেই সকাল বিকাল সবাইকে উপদেশ শুনতে হচ্ছে। তো এক সন্ধ্যায় আমি গেলাম তার খবরাখবর নিতে। ফলো-আপের মাঝে সে আমাকে নানা প্রশ্ন করছে,
তোমাদের বাড়ি কই?
ঢাকা।
তুমি কি পাস দিয়ে ডাক্তার হয়ে গেছ না এখনও পড় ?
ডাক্তার হয়ে গেছি।
আলহামদুলিল্লাহ, তোমার বাবা মা কি করে ?
চাকরি করে।
তোমার বিয়ে হইছে?
না, হয়নি। ( এটা মোটামুটি কমন একটা প্রশ্ন, প্রতিদিন একবার করে শুনতে হত)
কেন হয়নি? তোমার বাবা মা তোমারে এত খরচা করে পড়াল, আর বিয়েটা দিল না ? (মুরুব্বী মোটামুটি বিস্ময়ে হতবাক)
আমারে কেউ বিয়া করতে চায় না। (আমি যতটা সম্ভব মুখ মলিন করে বললাম )
চিন্তা কইর না , আমি তোমার জন্য দয়া করব, তোমার অনেক বড় ঘরে বিয়ে হবে। তবে একটা কথা মনে রাখবা, এই যে ডাক্তার হইছ, এত মানুষের সেবা করতেছ, আল্লাহ অবশ্যই তোমারে সওয়াব দিবে তবে দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সওয়াব হল স্বামী সেবা করা, স্বামী রে ঠিকমত সেবা করলে বেহেস্তের রাস্তা তোমার জন্য খুইলা যাইবে।

২.
আমরা দুই বান্ধবী চর্ম ও যৌন বিভাগের আউট ডোরে ডিউটি দিচ্ছি। এক পুচকে ছেলে বড়জোর ১৫/১৬ বছর বয়স ভিতরে ঢুকে আমাদেরকে দেখেই ইতস্তত করা শুরু করল। বেচারার জন্য লজ্জা পাওয়াটা স্বাভাবিক। সবসময় আমাদের সাথে সিনিয়র এক ভাইয়া থাকে কিন্তু সেই সময়ে ভাইয়া এক ভর্তি রোগীকে দেখতে গেছে। তো বেচারা কে আমরা বললাম, লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই, আমরা মেয়ে না ডাক্তার, আপনি বলেন আপনার কি সমস্যা?
সে অনেকক্ষণ আমতা আমতা করে বলল ‘আমার বামের টা ডানের চেয়ে বড়’।
আমরা তো অবাক , কিসের বাম ডান!
কিছুক্ষণ খুঁচিয়ে প্রশ্ন করে যা বুঝলাম তা হল, তার বাম টেস্টিকলটা ডানটার চেয়ে কিছুটা বড়। এবং সে ভয়াবহ চিন্তিত। তাকে বললাম, “এটা কোন সমস্যা না, এরকম অনেকেরই থাকে”।
সে হটাৎ করে লজ্জা টজ্জা ভুলে রাগী পুরুষ মানুষ হয়ে গেল, ‘ আপনারা কি করে জানলেন অনেকেরই থাকে, এটা কোন সমস্যা না, আপনাদের আছে ?”
আসলেই তো, আমরা কী করে জানব!!!

৩.
আমাদের সাইকিয়াট্রি তে ক্লাস চলার সময় স্যার এক রোগীর হিস্ট্রি নিতে বলল। খুবই ভদ্র চেহারার শান্ত শিষ্ট এক রোগী। মধ্যবয়স্ক, সুন্দর কাপড় চোপড় পরা, আরামে বসে বসে পান চিবুচ্ছে। আমরা গিয়ে তার সাথে কথা বার্তা শুরু করলাম। কি করে , কই থাকে, কি সমস্যা, ইত্যাদি ইত্যাদি। সে জানাল তার কোন সমস্যাই নেই। তাকে তার চার বউ মিলে ষড়যন্ত্র করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। আমরা ততক্ষণে মোটামুটি একটা রহস্য গল্পের গন্ধ পেয়ে গেলাম। নানা ভাবে বের করে চেষ্টা করলাম, কেন তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র, মোটিভ কি তার বউদের? সে বার বারই বলে আমার বউ গুলো ভাল না , আমার সুখ সহ্য করতে পারে না।

কোনভাবেই যখন রহস্যের সমাধান হচ্ছে না, এমন সময় তার অল্প বয়স্ক ছোট বউ এসে পড়ল। সে এসে জানাল উনাকে এর আগেও একবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কারণ সে কিছুদিন পর পর একটা করে বিয়ে করতে চায়, না করতে দিলেই পাগল হয়ে যায়। বউ,বাচ্চাদের মারে, জিনিস পত্র ভাংচুর করে। এভাবে ৪ টা বিয়ে করার পর এখন বউরা একজোট হয়ে তাকে পাগলামি চাপলেই হাসপাতালে ভর্তি করে রাখে।

(কারও বহুবিবাহ করার খায়েশ থাকলে এই ঘটনা হতে শিক্ষা নিতে পারেন)

৪.
অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ড এ ইন্টার্ন এর সময় এক রোগীর পা অ্যাম্পুটেশন করতে হবে। আমাদের দুই জনের উপর দায়িত্ব পড়ল রোগী সহ রোগীর লোককে বুঝিয়ে বলার। আমরা রোগীর বিছানার পাশে তার বর সহ পরিবারের আরও কিছু লোককে ডেকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলাম, তার কি হয়েছে, কেন পা কেটে ফেলতে হবে, না কাটলে আরও কী কী সমস্যা হতে পারে। সব শুনে রোগী বেচারি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, চোখ ভর্তি পানি, দেখে মনে হচ্ছে, সে কাঁদবে কি কাঁদবে না সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এমন সময় হটাৎ তার স্বামী হাউমাউ করে কপাল চাপড়ে কান্না শুরু করল। আমরা তো থ। ভাবলাম বেচারা আসলে বউ কে খুবই ভালবাসে ।

আর এদিকে রোগীর শ্বশুর আর বড় ভাই এসে বরটাকে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে আর বলছে, ‘কাঁদিস না বাবা, ভেঙ্গে পরিস না, তোকে আর একটা বিয়ে করাব ।” এভাবে ছোট বেলায় আমার বাবা বলত খেলনা ভেঙে গেলে, কাঁদে না মামনি, তোকে আর একটা কিনে দিব।
মেয়েটাকে সেদিন কাউকে সান্ত্বনা দিতে দেখিনি। বাকি কয়দিন এই মেয়েটার সামনে আমি যেতে পারতাম না। গেলেই কেন যেন হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে হত।

কিছু মজার ঘটনাই লিখতে চেয়েছিলাম। লিখতে লিখতে কখন যেন মন খারাপের ঘটনায় চলে এসেছি, যা লিখতে চাই না আসলে। হাসপাতালে কাজ করতে গেলে সবসময়ই কোন না কোন দুঃখের নাটক দেখতে হয়, তার মধ্যে কিছু কিছু এত বেশি দুঃসহ যে কোন পরিচালক কখনও সিনেমা নাটকে সেটা তুলে ধরতে পারবে না, কোন অভিনেতা পারবে না অভিনয় করে ঠিকমত ফুটিয়ে তুলতে। আবার এর মাঝেই কিছু কিছু মজার ঘটনা ঘটে, কিছু বিরক্তিকর ঘটনাও ঘটে। হাসপাতালে কয়েকদিন কাটালে ধৈর্য শেখা যায়, বেঁচে থাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটা সীমাহীন হতে পারে সেটা বুঝা যায়। সবচেয়ে বেশি যেটা জানা যায়,তা হল প্রবল হতাশার মাঝেও কিছু মানুষ কত অবলীলায় হাসিমুখে যুদ্ধ করে যেতে পারে অনেক সময় জিততে পারবে না জেনেও। অনেকে বলে হাসপাতালে গেলে হতাশ লাগে, আমি বলি হাসপাতালই আসলে আশান্বিত হওয়ার, শেখার সবচেয়ে বড় জায়গা। কারও যদি বেঁচে থাকাটা কখনও খুব দুঃসহ মনে হয়, কিছুদিন গিয়ে কোন হাসপাতালে মানুষ দেখে কাটিয়ে দেখতে পারেন!


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

আপনার এই লেখাটা আর ওডিন'দার ইতিহাস্পাতাল পড়ে এক বন্ধুর এক মন্তব্য মনে গেল- পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বেশি গল্প শুনতে আর দেখতে হয় তিন ধরনের মানুষের। পুলিশ, ডাক্তার আর ল'ইয়ার।

ভাল লাগল লেখাটা।

ধুসর জলছবি এর ছবি

কথা সত্য। পুলিশ ডাক্তার আর ল'ইয়ার দের পেশার ফাকে ফাকে গল্প লেখা শুরু করা উচিত। দেঁতো হাসি ধন্যবাদ।

স্বপ্নচোরা এর ছবি

টুকরো স্মৃতিগুলো ছুয়ে গেল মনের ভিতরটা........এক উপলক্ষ্যে আমারও এক রাতের ঢামেক হাসপাতাল দর্শনটা স্পর্শকাতরই ছিল।

ধুসর জলছবি এর ছবি

লিখে ফেলুন স্মৃতিটা। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

মোটামুটি বিনা কারণেই যেসব মানুষ হতাশ হয়ে মরে যেতে চায়, তাদেরকে কিছুদিন হাসপাতালে যে কোনো একটা ডিউটিতে দেওয়া উচিত। জীবনের মানে তখন খুঁজে পাবে তারা।

বহুদিন পর তোমার লেখা পড়লাম।

ধুসর জলছবি এর ছবি

এটা আসলেই আমি বিশ্বাস করি। আসলেই খুঁজে পাবে। আমার মত আলসের আবার লেখালিখি। খাইছে তুমি নিজেও কিন্তু আলসেমির রানী। চাল্লু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। হো হো হো
২। লইজ্জা লাগে
৩। হাততালি
৪। মন খারাপ

হাসপাতালে কয়েকদিন কাটালে ধৈর্য শেখা যায়, বেঁচে থাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটা সীমাহীন হতে পারে সেটা বুঝা যায়। সবচেয়ে বেশি যেটা জানা যায়,তা হল প্রবল হতাশার মাঝেও কিছু মানুষ কত অবলীলায় হাসিমুখে যুদ্ধ করে যেতে পারে অনেক সময় জিততে পারবে না জেনেও। অনেকে বলে হাসপাতালে গেলে হতাশ লাগে, আমি বলি হাসপাতালই আসলে আশান্বিত হওয়ার, শেখার সবচেয়ে বড় জায়গা। কারও যদি বেঁচে থাকাটা কখনও খুব দুঃসহ মনে হয়, কিছুদিন গিয়ে কোন হাসপাতালে মানুষ দেখে কাটিয়ে দেখতে পারেন!

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধুসর জলছবি এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ধুসর জলছবি এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সাইদ এর ছবি

আমি বড় হইয়া ডাক্তার হইতাম চাই।

ধুসর জলছবি এর ছবি

খাইছে

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

হাসপাতালে কয়েকদিন কাটালে ধৈর্য শেখা যায়, বেঁচে থাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটা সীমাহীন হতে পারে সেটা বুঝা যায়। সবচেয়ে বেশি যেটা জানা যায়,তা হল প্রবল হতাশার মাঝেও কিছু মানুষ কত অবলীলায় হাসিমুখে যুদ্ধ করে যেতে পারে অনেক সময় জিততে পারবে না জেনেও।

চলুক

দূর্দান্ত, দূর্দান্ত, দূর্দান্ত লেখা, ধুসর জলছবি। ভীষন ভাল লাগল। লেখায় এক আকাশ তারা।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ধুসর জলছবি এর ছবি

জোহরা আপু, আপনি মানুষটাই এমন, তাই না? যাই দেন আকাশ ভরিয়ে দেন, প্রশংসা, তারা, সবই। হাসি অনেক ধন্যবাদ আপু। ভাল থাকুন অনেক।

গান্ধর্বী এর ছবি

সত্যিই কত রকম বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় হসপিটালে কাজ করতে গিয়ে!
ভাল লাগল লেখাটা পড়ে হাসি

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

তিথীডোর এর ছবি

আমি যখন একটা বিশাল তৈরিপোশাক গ্রুপের কারখানার অ্যাডমিনে কামলা দিতাম, প্রতিদিন সমাজের বিভিন্ন লেভেলের প্রায় হাজার পনেরো মানুষকে একদম কাছ থেকে দেখা হতো।
মোট ১৮ মাসের সেই কঠিনজীবনে এত মানুষ দেখেছি আর এত বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে, জীবনের আঠার বছরে সেটা দেখেছি কিংবা বাকিজীবনে দেখব কিনা সন্দেহ। বেঁচে থাকাটা এতো কঠিন একটা ব্যাপার, ঈশ্বর নামের ব্যক্তিটি যে কতটা নির্মম হতে পারেন সেটা জেনেও যে মানুষ কী সীমাহীন আগ্রহে লড়াই করে যায়....

কারও যদি বেঁচে থাকাটা কখনও খুব দুঃসহ মনে হয়, কিছুদিন গিয়ে কোন হাসপাতালে মানুষ দেখে কাটিয়ে দেখতে পারেন!

ওডিনদার পোস্টেও লিখেছিলাম, এই ফিলোসফির সঙ্গে একমত নই।

তবে লেখা ভাল্লাগলো। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ তিথী। এটা আমার ফিলোসফি অথবা উপলব্ধি, যাই বলনা কেন। এবং এই উপলব্ধি হয়েছে মানুষকে দেখেই। মানুষের দুঃখ, হতাশা আর সব কিছুর পরও যুদ্ধ করে টিকে থাকার যে চেষ্টা এসব দেখে ১০০% মানুষ হয়ত না কিন্তু অন্তত অনেক মানুষই লড়াই করার শক্তি খুঁজে পাবে, বেঁচে থাকার মানে বুঝতে পারবে। হাসি

সুমন এর ছবি

সুন্দর লেখা।
আচ্ছা হাস্পাতালে ডাক্তারদের যে এত ধরণের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং এত প্রেশার সামলাতে হয় এতে তাদের মনোজগতের উপর কি ধরণের প্রভাব পড়ে?
-সুমন

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ। তাতো পড়েই। তবে এটা একটা পেশা, যে কোন পেশাতেই চাপ আছে। একেক ক্ষেত্রে হয়ত চাপ টা একেক রকম।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

দুই নম্বরটা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ !!

ধুসর জলছবি এর ছবি

খাইছে দেঁতো হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লেখা সুস্বাদু হয়েছে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ কবি।

তাসনীম এর ছবি

চলুক

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ধুসর জলছবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

এক লহমা এর ছবি

জোহরা-দিদির মত আমিও বলি - লেখায় যত তারা আছে আকাশে। শুধু একটা জায়গায় আমি আপনার বা ওডিন-এর সাথে ভিন্ন মত-এর লোক। 'জীবনে হতাশা'-নিয়ে মলিকিউলার বায়োলজির চর্চা করে কাটিয়েছি কিছু বছর। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে জানি এটা কি ভয়ংকর জিনিষ। ডিপ্রেশন-এর অসুখ যার হয়েছে, তার লড়াই শুধু সেই জানে। অনেকেই ভাবেন কিছু চড়-থাপ্পড় কি ধমক-ধামক লাগালে কি অন্যদের দু:খ-কষ্ট দেখালে তারা সেরে যাবে। বেশীর ভাগ রোগীর ক্ষেত্রই এটি অত্যন্ত মারাত্মক ভুল ধারণা হিসেবে কাজ করে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ আপু। আপনি এক্সপার্ট মানুষ, ভাল বলতে পারবেন। আপনি এরকম একটা জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, আমাদের সহজ করে কিছু লিখে জানাচ্ছেন না কেন আপু? হতাশা আসলেই ভয়াবহ একটা ব্যপার। এ ব্যপারে আপনার লেখার জন্য অপেক্ষায় বসলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

শাব্দিক এর ছবি

শেষের ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা ঘটনা মনে পড়ল, রোমেলা বুয়া আমাদের বাড়ির পুরানো লোক ছিল। বিয়ের পর গ্রামে চলে যায়। বছর খানেক পর ফিরে এলে মা তাকে জিগ্যেস করে, কি রোমেলা তোমার স্বামী কেমন আছে। রোমেলা ভাবলেশ মুখে উত্তর দেয়, খালাম্মা হেরে তো ছাইড়া দিসি। সাসায় (চাচা) কইসে বালা দেইখা আরেকটা বিয়া দিব।

হাসপাতাল আসলেই মানুষকে জীবনের অনেক বাস্তব শিক্ষা দেয়, বইয়ে যা লেখা থাকে না। প্রায় বছর খানেক রোগীর কেয়ার গিভার হিসাবে আমার থাকতে হয়েছিল দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন হাস্পাতালে। জীবনের একটা ভিন্ন রূপ আমি ওই একটা বছরে দেখেছি, যা বাকি সারা জীবনেও দেখিনি।

এইধরনের লেখা জারি থাকুক।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ শাব্দিক। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রতিটি গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষালী মনোভাব কে তুলে ধরা হযেছে,করুনা করা হয়েছে,হয়তো ক্ষোভও ঝরেছে।তাই গল্পগুলো ভালো লেগেছে।হাসপাতালে গেলে আমার ভয় হয় ভীষন,আমি তাই পারতপক্ষে হাসপাতালে যাইনা।রক্ত আর অস্বাভাবিক কিছু দেখলে আমি সহ্য করতে পারিনা।

কারও যদি বেঁচে থাকাটা কখনও খুব দুঃসহ মনে হয়, কিছুদিন গিয়ে কোন হাসপাতালে মানুষ দেখে কাটিয়ে দেখতে পারেন!

এই তত্ত্বের সাথে আমি ঠিক একমত না,জীবন দু:সহ হয়ে উঠলে আমি মানুষকে প্রকৃতির কাছে যেতে বলবো।বিশেষ করে পাহাড়ের কাছে।পাহাড়ের বিশালতা আর সৌন্দর্য্য জীবনের দু:খ কষ্টকে ক্ষুদ্র করে দেয়,আমার যদি সাধ্য থাকতো আমি সবাইকে একবার করে হলেও সারি সারি করে দাড়িয়ে থাকা পাহাড়ের কাছে নিয়ে যেতাম বলতাম দেখো চারিদিকে কি অদ্ভুত সুন্দর,কি বিশালতা।পাহাড়ে ট্রেকিং করাও একটা শিক্ষামূলক বিষয়,অনেক ধৈর্য্য প্রয়োজন।এই ধৈর্য্য শিক্ষা আপনাকে জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করবে।প্রকৃতি হলো আমার কাছে বেচে থাকার সত্যিকারের অনুপ্রেরণা,এই অপরুপ প্রকৃতি আর দেখবোনা এর চেয়ে বড় কোন কষ্ট আমার অনুভূব হবে না পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার ক্ষনে।সুস্থ থাকুক দূরে কাছে চেনা অচেনা মানুষগুলি,বেচেু থাকুক প্রকৃতি তার চিরযৌবনা রুপ নিয়ে।

মাসুদ সজীব

ধুসর জলছবি এর ছবি

প্রতিটি গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষালী মনোভাব কে তুলে ধরা হযেছে,করুনা করা হয়েছে,হয়তো ক্ষোভও ঝরেছে।

হুম, ধরে ফেললেন।

।প্রকৃতি হলো আমার কাছে বেচে থাকার সত্যিকারের অনুপ্রেরণা,এই অপরুপ প্রকৃতি আর দেখবোনা এর চেয়ে বড় কোন কষ্ট আমার অনুভূব হবে না পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার ক্ষনে।সুস্থ থাকুক দূরে কাছে চেনা অচেনা মানুষগুলি,বেচেু থাকুক প্রকৃতি তার চিরযৌবনা রুপ নিয়ে।

চলুক

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

চমৎকার লেখা ধূসর জলছবি। আপনি নিয়মিত লেখেন না ক্যান?

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ।
কারণ আমি অলস এবং ফাঁকিবাজ। আলসেমিতে আমার সাথে পারবে এমন মানুষ দুনিয়ায় কম আছে। চাল্লু

তারেক অণু এর ছবি

অনেক দিন পর লিখলেন।

ধুসর জলছবি এর ছবি

হুম। হাসি

ব্রুনো এর ছবি

আপনি কি আর অনুবাদ-টনুবাদ করেন না?
লেখা ভালো হইছে, বিশেষ করে দুই নাম্বারটা দেঁতো হাসি

____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

ধুসর জলছবি এর ছবি

সত্যি বলতে, পারি আর না পারি অনুবাদ করার আমার আগ্রহ অনেক বেশি। কিন্তু অনুবাদ করার জন্য অনেক সময় দিতে হয়, সেই সময়টাই পাচ্ছি না ইদানীং। মন খারাপ
ধন্যবাদ। দুই নাম্বার ঘটনাটা সেই সময় আমাদের মধ্যে অনেক হিট ছিল খাইছে দেঁতো হাসি

salekin এর ছবি

আমার দাদু এবং আববার চিকিতসার জন্য হাসপাটলে ওনেক দিন ছিলাম । মানুষ যে কি বিচিতরো হতে পারে ! কেউ খুব মহান সব কাজ করে, কারও সাবাসের জন্য বসে নেই , কেউ খুব ইতরামী করে ! আসলেই জীবনকে জানতে চাইলে সবারই কিছুদিন হাসপাতালে যাওয়া দরকার ।
লেখাটা খুব ভালো লাগলো !

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

সুবোধ অবোধ এর ছবি

গ্রাজুয়েশন লাইফ কেটেছে পঙ্গু হাসপাতালে। ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস ক্লাসের সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে কষ্ট লাগত I/J ওয়ার্ডে প্লেসমেন্ট থাকলে। সবচেয়ে খারাপ কন্ডিশনের এবং ইনফেকশন ছড়াতে পারে এমন পেশেন্টদের জন্য হচ্ছে এই ওয়ার্ড। ঠিক-ই বলেছেন - ধৈর্য্য বাড়ে। আর নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়।

ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে আমার OT তে যাওয়া মোটেও বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু ইন্টার্নি করার সময় আমার ইউনিটের CA কোন ছাড় দেননি। তাই যেতে হত। একদিন একজন ইমার্জেন্সি অ্যাকসিডেন্টের পেশেন্ট এর পা হাটুর উপর থেকে অ্যাম্পুটেশনের অ্যাসিস্ট করতে গিয়ে কাটা পা টা আমাকেই বয়ে নিয়ে প্লাস্টিকের বিনে ফেলে দিতে হল। ওই শেষ,আর ওই মুখো হই নি। আপনাদের তো ছিল বাধ্যতামূলক। এমন অনেক অভিজ্ঞতা নিশ্চই আছে। আসলেই অনেক ধৈর্য্য লাগে। তা না হলে সম্ভব না।

অনেকদিন পর লিখলেন।
লেখায় চলুক

ধুসর জলছবি এর ছবি

অ্যাম্পুটেশনের সাথে জড়িত যত অভিজ্ঞতা আছে সবই ভয়াবহ, লিখতে ইচ্ছে করে না। কি হবে এত কষ্টের কথা লিখে। মন খারাপ
আমি এতদিন পর লিখলাম যে আমি ভেবেছিলাম, লেখার পর সবাই বলবে এই ধূসর জলছবি টা কে। মানুষ জন যে মনে রেখেছে সেটাই আমার ভাগ্য। হাসি হাসি ধন্যবাদ।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

ধুসর জলছবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

আশালতা এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন। ভালো লাগলো। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

ধুসর জলছবি এর ছবি

আলসে মানুষ যে দিদি। ধন্যবাদ। হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লেখাটা পড়ে কষ্ট এবং মজা দুই-ই পেয়েছি। ভালই লেগেছে। চলুক

ধুসর জলছবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

বিষন্ন বর্ষা এর ছবি

ভালো লাগলো। আমার সহধর্মিনি ও একজন ডাক্তার। অনেক কিছুই শোনা তার কাছ থেকে।

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ।

নিলয় নন্দী এর ছবি

দারুণ লেখা !
এর মধ্যে একটা পড়ে তো হাসতে হাসতে শেষ খাইছে
নিয়মিত লেখেন না কেন?

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি খাইছে সবাই দেখি একটা পড়েই বেশি মজা পাচ্ছে। আমি কোনদিনও কোনকিছুতে নিয়মিত হতে পারলাম না। মন খারাপ তবে সচলায়তনে লেখায় অনিয়মিত হলেও পড়ায় কিন্তু না। পড়ি প্রতিদিনই। হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

“হাসপাতালে কয়েকদিন কাটালে ধৈর্য শেখা যায়, বেঁচে থাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কতটা সীমাহীন হতে পারে সেটা বুঝা যায়। সবচেয়ে বেশি যেটা জানা যায়,তা হল প্রবল হতাশার মাঝেও কিছু মানুষ কত অবলীলায় হাসিমুখে যুদ্ধ করে যেতে পারে অনেক সময় জিততে পারবে না জেনেও। অনেকে বলে হাসপাতালে গেলে হতাশ লাগে, আমি বলি হাসপাতালই আসলে আশান্বিত হওয়ার, শেখার সবচেয়ে বড় জায়গা। কারও যদি বেঁচে থাকাটা কখনও খুব দুঃসহ মনে হয়, কিছুদিন গিয়ে কোন হাসপাতালে মানুষ দেখে কাটিয়ে দেখতে পারেন!” আগে আত্মীয়-বন্ধু কেউ হাসপাতালে থাকলেই আমি সাথে থাকতাম, একটা ঘটনার পর থেকে আর পারি-না কিন্তু আপনার বক্তব্যের সাথে একমত পুরোপুরি।

লেখা ভাল লাগলো হাসি

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ তানিমদা। হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। হাসি দিয়ে শুরু করে শেষে এসে মন খারাপ হলো আর রাগে গা জ্বলে যেতে থাকলো।

এরকম আরো লেখা চাই।

____________________________

ধুসর জলছবি এর ছবি

ধন্যবাদ।

রীমা মারীয়া  এর ছবি

লেখা অসাধারণ হয়েছে আপু। এরকম আরো লেখা চাই।

ধুসর জলছবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।

ফাহিম হাসান এর ছবি

ছোটবেলায় বেশ অসুখে ভুগতাম। বড় হওয়ার পরে হাসপাতালে মাঝেমাঝে ডিউটি দেই, আগ্রহী চোখে ডাক্তার, নার্স, রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের কাজ-কর্ম দেখি - আশ্চর্য দুনিয়া

ধুসর জলছবি এর ছবি

আসলেই। হাসপাতালে গেলে সেটার একটা খোলা খুলি রূপ দেখা যায়।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

গল্পগুলো দারুণ। একটু খটকা আছে ভাষা নিয়ে, সেটা জানিয়ে যাই-

সার্জারি ওয়ার্ড এ ইন্টার্ন করছি।

এবং

অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ড এ ইন্টার্ন এর সময় এক রোগীর পা অ্যাম্পুটেশন করতে হবে।

বাক্য দুটিতে কি আপনি স্বেচ্ছায় 'ইন্টার্ন' শব্দটির এমন প্রয়োগ করেছেন? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান অনুযায়ী এটা অশুদ্ধ। ইন্টার্ন শব্দটি বিশেষ্য আকারে শিক্ষানবীস চিকিৎসক বা অন্য পেশাজীবিকে বোঝায়, ক্রিয়াপদ হিসেবে যুদ্ধকালীন বা রাজনৈতিক বা সামরিক কারণে গ্রেপ্তার করা বোঝায়। আপনি বোধহয় 'ইন্টার্নশিপ' বুঝিয়েছেন!

'ইন্টার্নী' বলে যে ডাক্তারদের মধ্যে এবং সাধারণ্যে চলতি কথাটা- এমনকি বিভিন্ন সেমিনারেও ডাবল ই যুক্ত করাল বদনে শোভা পায়- উহার অর্থ রাজবন্দী।

আশা করি কিছু মনে করবেন না। লেখাটা ভালো লাগল বলেই বললাম, নইলে সময় নষ্ট করতাম না।

পেশাদারঅডাক্তারি জীবনে এমন অসংখ্য অম্ল-মধুর-তিক্ত কষায় অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু লেখার ক্ষমতাটা নেই! মন খারাপ
মানিকবাবু বা ঋত্বিকবাবু বেঁচে থাকলে এ নিয়ে দুর্দান্ত ছবি করতে পারতেন। আপাতত বাংলাদেশের মামা-চাচা বা অধ্যাপক পিতাবিহীন তরুণ ডাক্তারদের কলুর বলদের মতো দুর্বহ জীবন এবং সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতেই হাস্যকর নিম্নবেতন নিয়ে কথা বলার মত কেউ নেই। যদিও তৎসঞ্জাত কুকর্ম তথা ম্যালপ্র্যাক্সিসগুলোকে ফেনিয়ে বলার মত মিডিয়ার অভাব নেই।

লেখা চলুক।

ধুসর জলছবি এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা দেখলাম এতদিন পর। ধন্যবাদ।
আমি আসলে যেভাবে আমরা কথা বলি সেভাবেই লিখতে চেয়েছি।

ইন্টার্নী' বলে যে ডাক্তারদের মধ্যে এবং সাধারণ্যে চলতি কথাটা- এমনকি বিভিন্ন সেমিনারেও ডাবল ই যুক্ত করাল বদনে শোভা পায়- উহার অর্থ রাজবন্দী।

হায় হায় বলেন কি? নিজেদেরকে রাজবন্দি ডাকি। অ্যাঁ খাইছে তথ্য টা জানা ছিল না। এজন্য ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।