জুবায়ের: জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি – শেষ পর্ব

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৯/২০০৯ - ৬:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব


১০ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮

আজ অর্ণবের জন্মদিন। ওকে আগেই বোঝানো হয়েছে, এবার ওর জন্মদিনে কিছু করা হবে না। বাবা বাসায় আসবার পর এবং আপু অস্টিন থেকে ফিরবার পর ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হবে। অর্ণব তখন খুব সহজেই রাজি হয়েছিলো।

কিন্ত শিমুল ফোন করে জানালো, আজ সকালে ও খুব মন খারাপ করে চোখ মুছতে মুছতে স্কুলে গিয়েছে। জন্মদিনের পার্টিটা উইকএন্ডে হয় বলে সাধারনত আমরা অর্ণবের জন্মদিনের উইশ করি ভোরবেলাতে ওর ঘুম ভাঙিয়ে। বার্থডে বয়-এর জন্য থাকে ম্যাকডোনাল্ড বা এই ধরনের অন্য কোনো দোকানের ব্রেকফাস্ট। ওর জন্য কেনা উপহারগুলোও সকালবেলাতেই দেয়া হয়। কিন্ত এবার ব্যতিক্রম, ওকে উইশ করার জন্য ওর পাশে বাবা, আম্মু, আপু কেউ নেই। বাচ্চা মানুষ, খারাপ তো লাগবেই।

জুবায়ের সব শুনে বললো, "প্লিজ, ওর বন্ধুদের নিয়ে একটা কিছু করো। হয় মুভি দেখতে নিয়ে যাও, অথবা Chucky Cheese-এ নিয়ে যাও। যাও, এক্ষুনি গিয়ে সব ব্যবস্হা করো।"

গতকাল রাত্রে জুবায়েরকে খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে কাজে ফিরে গিয়েছি রাত সাড়ে বারোটারও পরে। আজ ভোর সাতটায় কাজ থেকে off হয়ে সোজা এখানে এসেছি। ওকে মুখ ধুইয়ে একটু প্রটিন শেক খাওয়ানো শেষ না হতেই ডাক্তার এলো। ডাক্তারের সাথে অনেকক্ষণ বকবক করে আমার শরীরে আর এক ফোঁটা শক্তিও অবশিষ্ট থাকলো না। ওর এই রুমে একটা বড় সোফা আছে, ওটাতে টান টান হয়ে শুয়ে বললাম, "আমি এখন ঘুমাবো, তুমিও ঘুমাও। ঘুম থেকে ওঠার পর ঠিক করবো, অর্ণবের জন্মদিনে কী করা হবে।"

আরো কতক্ষণ ঘুমাতাম কে জানে, কিন্ত নার্সের পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। জুবায়েরকে এখন ব্রিদিং ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে। ঘুম ভেঙে দেখি আমার মাথার নিচে বালিশ ও গায়ে একটা চাদর।
"এগুলো কোথা থেকে আসলো?"
জুবায়ের বললো," নার্সকে দিয়ে আনিয়েছি।"
"তুমি ঘুমাওনি?"
"না, তোমার নাক ডাকানোর শব্দে ঘুমাতে পারিনি।"
এমন লজ্জা লাগলো! “ছিঃ, জুবায়ের! কেন আমাকে ডেকে দিলে না?”
ও হেসে বললো, "আমার নাক ডাকানোর জন্য তুমি তো আমার সাথে ঘুমাতে চাও না, তাই বুঝতে চেষ্টা করছিলাম নাক ডাকানোর শব্দে ঘুমানো যায় কি না।"

ব্রিদিং ট্রিটমেন্ট দেওয়ার পর ও গোসল করতে চাইলো। জুবায়েরের এ বেলার নার্সের নাম সিনথিয়া, কিন্ত আমি কোথাও তাকে খুঁজে পেলাম না। পুরো ইমিডিয়েট কেয়ারে মাত্র একজন নার্স পেলাম, তাও সে আবার অন্য রোগীকে অ্যাটেন্ড করছে। ওর শরীরের মেশিনপত্রসহ কীভাবে বাথরুমে নিয়ে যাবো! তাই ওয়াশ বেসিনে গরম পানি নিয়ে তোয়ালে ভিজিয়ে ভিজিয়ে যতটুকু সম্ভব মাথা, গা, হাত, পা ধুয়ে দিলাম। ওর কাপড় ভিজে গিয়েছিলো, বদলানো দরকার, কিন্ত বেল টিপে টিপে হয়রান হয়ে গেলাম; কেউ এলো না। আমি ICU-তে গিয়ে ওখানকার নার্সের কাছে একটা গাউন চেয়ে নিয়ে এসে ওর কাপড় বদলিয়ে দিলাম। হাতে পায়ে লোশন লাগিয়ে দিলাম। তারপর ও একটু আপেল জুস খেলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে একটা মেশিন কেন যেন পিক-পিক করে শব্দ করছে। কী ব্যাপার, কিছুই বুঝতে পারছি না। কেউ নেই যে একটু জিজ্ঞেস করবো। রাগে আমার শরীর জ্বলছিলো। কিন্ত ওকে একা রেখে আর এক মাথায় সুপারভাইজারের রুমে গিয়ে কমপ্লেইন করতে সাহস পাচ্ছিলাম না।

এই সময় ওচ্চু ভাই এলেন শিমুলকে নিয়ে। ওদেরকে রেখে আমি সুপারভাইজারের রুমে গিয়ে দেখলাম, সুপারভাইজারও রুমে নেই, লাঞ্চে গেছে। ওর টেবিলের ওপর থেকে একটা কাগজ নিয়ে লিখিত কমপ্লেইন করে আসলাম। জুবায়েরের খাবার দিয়ে গেছে, কিন্ত ও এখনই খেতে চাইলো না। আরো আধঘন্টা খানেক পর অবশেষে সিনথিয়া বেগম হেলতে দুলতে এসে হাজির হলেন। ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে বয়স, বিশালদেহী কালো মহিলা। আর সাজের কী বাহার! যেন হাসপাতালে ডিউটি না, ডেট করতে এসেছে! এসেই ক্যাটক্যাট শুরু করলো, আমরা আজকে শর্ট হ্যান্ডেড, আমার একা ছয়জন রোগী। তোমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে, আমি মেশিন না ইত্যাদি ইত্যাদি।

তারপরেই তার সেল ফোন বেজে উঠলো এবং বেগম সাহেবা একহাতে সেল ফোন ধরে কোন এক স্যাম-এর গুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে আর এক হাত দিয়ে জুবায়েরের মেশিন ঠিক করতে গিয়ে কী করলো কে জানে, পাওয়ার অফ হয়ে গেলো সব কয়টা মেশিনের। কিন্ত আশ্চর্য! সিনথিয়ার কোনো বিকারই নেই। ও ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। তারপর একবার এটা টেপে, একবার ওটা টেপে, ঠিক আর করতে পারে না। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ও সব ঠিকঠাক কারতে পারলো। ওচ্চু ভাইয়ের মেজাজ আমার চেয়েও কয়েক ডিগ্রি বেশি গরম। তিনি রেগেমেগে খাস সিলেটি ভাষায় গালি দিতে দিতে সিনথিয়াকে বললেন, “চলো বাইরে যাই, তোমার সাথে কথা আছে।" বলে এক রকম জোর করেই সিনথিয়াকে বাইরে নিয়ে গেলেন।

আমি জুবায়েরের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, ভীষণ অপছন্দ করছে ও ব্যাপারটা। কোন রকম ঝামেলা, চিল্লাচিল্লি বা কনফ্লিক্টে যাওয়া ও এক্কেবারেই পছন্দ করে না। তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা চাপা দেবার জন্য বললাম, “আমি যাই, অর্ণবকে স্কুল থেকে ওঠাতে হবে তিনটার সময়।" শিমুলকে বললাম জুবায়েরকে যেন জোর করে হলেও একটু খাওয়ায়।

বাইরে এসে দেখি ওচ্চুভাই আর সিনথিয়ার তর্কাতর্কি লেগে গেছে। আমি বললাম, “ওকে বলে কী হবে? সুপারভাইজারের কাছে কমপ্লেইন করতে হবে।" বের হবার পথে আবার সুপারভাইজারের রুমে উঁকি দিলাম। এবারও পেলাম না। তারপর নিচে অ্যাডমিন অফিসে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা বললাম, "তোমরা শর্ট হ্যান্ডেড, সেটা নান অভ মাই বিজনেস। আমি চাই, তোমরা আমার হাসবেন্ডকে প্রপার কেয়ার দেবে সব সময়ের জন্য। A nurse should not answer a personal phone call when she is on duty. It is completely unexpected. আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি, ফিরে আসবার পর ওর মুখ আর দেখতে চাই না। যদি সেটা না হয়, তাহলে তোমরা যাতে করে আমার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে একটা পয়সাও না পাও, সে ব্যবস্হা আমি করবো।"

বুধবার অর্ণবের হোমওয়ার্ক ডে। ওকে হোমওয়ার্ক করিয়ে তৈরি করে বের হতে হতে সাড়ে চারটা, তারপর পড়লাম ট্রাফিক জ্যামে। হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা। ওর রুমে এসে দেখি ও একা, কেউ নেই। শিমুল নামাজ পড়তে গেছে। অর্ণবকে দেখে ও হাত বাড়িয়ে দিলো। অর্ণব বাবাকে জড়িয়ে ধরলে জুবায়ের উইশ করলো, "হ্যাপি বার্থডে, বিগ বয়।"

আমি কার্ডটা জুবায়েরের হাতে দিলাম। (বাসায় ফেরার পথে কিনেছিলাম) ও কার্ডটা পড়লো। তারপর অর্ণবের হাতে দিলো। অর্ণব মুখ ভার করে খুব শুকনো একটা ধন্যবাদ দিলো। মুহূর্তের মধ্যে জুবায়েরের মুখটা কেমন বদলে গেলো। অসহায় ও অপরাধ বোধ, বেদনা ও আশা ভঙ্গ, সব মিলে মিশে সে যে কেমন, তা আমি ঠিক বর্ণনা করতে পারবো না। আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ওর মন ভালো করার জন্য রিটন ভাইকে ফোন করে ওকে ধরিয়ে দিলাম। কেন ওর অসুখের খবর প্রচার করা হয়েছে, এই নিয়ে অনুযোগ করতে শুনলাম। তারপর নাসিম ভাই ও ডোরার সাথে কথা বললো। শিমুল আসবার পর নামাজ পড়া নিয়ে শিমুলের সাথে একটু হাসাহাসি করলো।

ছয়টার সময় এদের শিফট বদল হয়। নতুন নার্সটার নাম লী ন'ইয়ং। ভিয়েতনামি। খুব ভালো, খুব এফিসিয়েন্ট। এটা ওদের প্যাস ডাউনের সময়, রোগীকে চেঞ্জ আপ করবে এখন, তাই আমরা বাইরে চলে এলাম।

বাইরে এসে অর্ণব গোমড়া মুখ করে লবিতে বসে রইলো। শিমুলকে বললাম অর্ণবকে ক্যাফেটেরিয়া থেকে খাওয়ায়ে নিয়ে আসতে, কারণ সাড়ে ছয়টায় ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্ত অর্ণব কিছুতেই যাবে না, ওর নাকি খিদে নেই। আমি জোরাজুরি করাতে ফোঁপাতে শুরু করলো। আসলে ওর মন খারাপ সেই সকাল থেকেই। স্কুল থেকে ওঠানোর সময় আবদার করেছিলো, "Would you please invite my friend over, so I can have some good time?” তা যে এখন সম্ভব নয় সেটা ভালো করে বোঝাবার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও চুপ করে গিয়েছিলো। হোমওয়ার্কের প্রেশারে আর আমার ক্রমাগত “তাড়াতাড়ি করো”-র তাগাদায় বেচারা খাওয়া শেষ করতে পারেনি। বলেছিলো হাসপাতালে যাবার সময় ওকে যেন Scotty P থেকে বার্গার কিনে দেই। Free way-তে আমি ছিলাম extreme left লাইনে। ট্রাফিকের ঝামেলার মধ্যে পড়ে রাইট লাইনে এসে exit নিতে পারলাম না। সুতরাং এই আবদারটাও আমি রাখতে পারিনি। হয়ত ওর মনে মনে আশা ছিলো, “রক ব্যান্ড টু গেমটা” দিয়ে বাবা ওকে সারপ্রাইজ দেবে। সেটাও হয়নি। ওর এই দশ বছরের জীবনে এত অবহেলা আর তো কখনো পায়নি!

অনেক সময় নিয়ে শিমুল জুবায়েরকে একটু একটু করে রাতের খাবার খাওয়ালো। তখনও তো জানি না যে, এটাই ছিলো ওর last supper বা শেষ খাওয়া! আজ রাতে আমি জুবায়েরের সাথে থাকবো। ইফতারের পরপরই কেউ না কেউ আসে জুবায়েরকে দেখতে। ঠিক করে রেখেছিলাম, ওদের কা‌উকে বলবো শিমুল ও অর্ণবকে বাসায় পৌঁছে দিতে। কিন্ত এমনই কপাল আজ! রাত প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে, এখনো কেউ এলো না। এখন অর্ণবের বাসায় যাওয়া দরকার। কাল সকালে স্কুল। এদিকে একই জায়গায় বসে কাঁদতে কাঁদতে অর্ণবের হেঁচকি উঠে গেছে, চেষ্টা করেও আর কান্না থামাতে পারছে না। এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত খাওয়াতে পারলাম না ওকে।

বারে বারে জুবায়ের জানতে চাচ্ছিলো অর্ণব কোথায়? অর্ণবকে ডাকো। বাধ্য হয়ে বলতে হলো পুরো ঘটনা। চুপ করে সব শোনার পর, একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর যেন নিজেকেই শোনাচ্ছে এই ভাবে আস্তে আস্তে বললো, "আমার সব চেয়ে দুঃখ কী, জানো? আমি না থাকলে ওদের কী হবে, সেটা আমাকে বেঁচে থেকেই দেখে যেতে হলো। কেমন করে পারো তুমি এতো হৃদয়হীন হতে? আমার ছেলেকে কাঁদিয়ে আমার সেবা করলে আমি খুশি হবো? এতদিনে এই চিনলে আমাকে? একটা কথা দেবে? যতক্ষণ পর্যন্ত আমি বেঁচে আছি, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন ওদের চোখের পানি আমাকে আর না দেখতে হয়।"

কী উত্তর দেবো? এর কী কোনো উত্তর হয়? বললে তো মহাভারত বলা যায়। কিন্ত এই কি তার সময়! আমি কিছু বলার আগেই শিমুল বললো, "সেজাপু, তুমি অর্ণবকে নিয়ে বাসায় চলে যাও, আমি থাকি জুবায়ের ভাইয়ের কাছে।"
জুবায়ের বললো, "প্লিজ, শিমুল, তোমরা সবাই চলে যাও। কাউকে থাকতে হবেনা। আমাকে একা থাকতে দাও।"
আমি শুধু বললাম, “ঠিক আছে, ওদেরকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসছি।"
“প্লিজ ডোন্ট! স্টে উইথ হিম!" জুবায়ের দৃঢ়কণ্ঠে বললো।
কী আর করবো? এখন মনে হয়, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করলাম। ওকে একা রেখে বাসায় চলে এলাম। কেন যে সে রাতে জোর করে থেকে গেলাম না। তাহলে অন্তত জানতে পারতাম, কী হয়েছিলো সে রাতে ! কেন একদম ভালো হয়ে যাওয়া মানুষটা মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আগের চেয়েও বেশি অসুস্হ হয়ে পড়লো, যেখান থেকে আর সে ফিরে এলো না?

আমার ফোন নাম্বার লিখে নার্স লীকে দিয়ে বললাম, “প্লিজ, একটু খেয়াল রেখো, আর কিছু হলে আমাকে ফোন করো।"
লী বললো, “ডোন্ট ওয়ারী, আর একবার ব্রিদিং ট্রিটমেন্ট দেবার পর আমি ওকে ঘুমের ওষুধ দেবো। ও সারারাত ঘুমাবে।"


১১ থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮

এর পরের সমস্ত ঘটনা আমার স্মৃতিতে অগোছালো অবস্থায়। ঘটনা-পরম্পরা আমি কিছুতেই সাজাতে পারি না। ডিটেইল কিছু মনেও নেই। শিমুলের বা অনান্যদের বর্ণনার সাথে আমারটা মেলে না। আমার তখন চিন্তা করার, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ছিলো না। যে যা বলতো, তা-ই করতাম। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম হয়ত।

রাত আড়াইটায় লীর ফোনে ঘুম ভাঙলো। আমাকে জানানো হলো, হাই ফিভারের জন্য জুবায়েরকে আবার ICU-তে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতদিন ধরে ও অসুস্হ, কখনো হাই ফিভারের কথা শুনিনি। হাই ফিভার হলে কেউ কি ICU-তে থাকে? হাসপাতালে পৌঁছবার পর অনেকক্ষণ আমাকে বাইরে বসে থাকতে হলো। ওদের নাকি কাজই শেষ হয় না। আমার কান্নাকাটি ও জোরাজুরির ঠ্যালায় বাধ্য হয়ে অবশেষে পারমিশন দিলো। আবার যখন রুম নাম্বার ২-তে গেলাম, তখন ৫ই সেপ্টেম্বরের জুবায়েরকেই দেখলাম। মাঝখানের এই কয়েকটা দিন কি তাহলে স্বপ্ন ছিল? তখন যতটা আশা ছিলো ওকে ফিরে পাবার, এখন ঠিক ততটাই হতাশা ওকে হারিয়ে ফেলবার। ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম, একদম ঠাণ্ডা কপাল, জ্বরের কোনো লক্ষণ নেই। কী হয়েছিলো জিজ্ঞেস করায় মাথা নেড়ে জুবায়ের বললো, জানে না। ওর মুখে আবার অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, কথা বলতে পারছে না। ইশারায় মাস্ক সরাতে বললো, মাস্ক সরাবার পর যা বললো, তা হলো – ও ঘুমাচ্ছিলো। ঘুম থেকে উঠিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। জ্বর ছিলো কি না, ও জানে না।

সকাল হতে না হতেই ডাক্তার-নার্সরা his condition is critical, he is very sick, he is very sick বলে জিকির করতে লাগলো। কেউ পরিষ্কার করে কিছু বলে না। Dr Gaman রাউন্ডে আসার পর আমি তাঁকে সবকিছু বলে অভিযোগ করলাম। জ্বর নয়, ওর অক্সিজেন লেবেল কমে যাওয়াতে ওকে ICU-তে মুভ করা হয়েছে। তাহলে জ্বরের কথা বলা হলো কেন? কেউ জানে না। তিনি অভয় দিয়ে বললেন, ভয় পাবার কিছু নেই, ওর একটু কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছে, এই ধরনের অসুখে এমন আপ-ডাউন হয়েই থাকে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্ত জুবায়ের নিজেই এই হাসপাতালে আর থাকতে চাইছিলো না। আমরা অনেক চেষ্টা করলাম জুবায়েরকে ওই হাসপাতাল থেকে মুভ করে পার্ক লেন বা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে। Lawyer পর্যন্ত ধরলাম, কিন্ত পারলাম না। জুবায়েরের এই অবস্হায় ডাক্তাররা কিছুতেই তাকে মুভ করার পারমিশন দিলো না। আমরা জোর করে ওকে নিয়ে যেতে পারি, কিন্ত ডাক্তার ওর রিলিজ অর্ডারে সাইন করবে না। রিলিজ অর্ডার না থাকলে অন্য হাসপাতাল ওকে নেবে না। যে-মেশিনের সাহায্য ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারে না, তাকে আমরা কোথায় নিয়ে যাবো।

জুবায়ের বাসায় ফিরবার জন্য পাগল হয়ে গেলো। বলতো, “আমি বাসায় গেলে ঠিক হয়ে যাবো।" বাচ্চাদের মতো জেদ করতো, ভীষণ রেস্টলেস হয়ে গিয়েছিলো, বকাবকি করতো, সবকিছু টেনে খুলে ফেলে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যেত। একফোঁটা ঘুমাতো না। ওর বোধ হয় খুব কষ্ট হতো, নাক দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে খাওয়ানো হতো বলে। সেই টিউবটা খুলে ফেলবার জন্য টানাটানি করতো। বাধ্য হয়ে ওকে বিছানার সাথে বেঁধে রাখা হলো।

তারপর হঠাৎ করে একদিন একদম চুপ হয়ে গেলো। আর কোন অভিযোগ করতো না। কষ্ট হচ্ছে কি না বা খারাপ লাগছে কি না, জিজ্ঞেস করলে মাথা নেড়ে না বলতো। এরপর সময় বয়ে যেতে লাগলো উলটো দিকে। ওর অবস্হা ক্রমেই খারাপ হতে থাকলো। শেষে এসে আমাদের হাতে অপশন থাকলো মাত্র দু’টো – এক: ছোট্ট একটা সার্জারি করে ফুসফুস থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে দেখা, অসুখটা কতটুকু ছড়িয়েছে (Which is really not an option), দুই: প্রতিদিন ১০০০ cc করে তিনদিন তিনটা স্টেরয়েড ডোজ দেওয়া। শান্টু ভাইয়ের পরার্মশ নিয়ে দ্বিতীয়টা শুরু হলো। কোন উন্নতি হলো না। খারাপ যেটা হলো, ওর ব্লাড সুগার বেড়ে হলো ৪৩০। শুরু হলো প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওকে ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া। বেচারার দশটা আঙুল ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলো। কিন্ত মুখে ওর এতটুকু অভিযোগ ছিলো না। একটা মিনিটের জন্যও ঘুমাতো না, শুধু চুপচাপ খালি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকতো। নার্স আসবার সঙ্গে সঙ্গে হাতটা বাড়িয়ে দিতো। ব্লাড নিতে দেবার জন্য। তিনদিন পর আবার আর একদফা তিনদিনের কোর্স শুরু হলো।
এখন আমি কী করবো? কোথায় যাবো? যে যা বলতো, তা-ই করতাম। মেক্সিকান চার্চে মোমবাতি জ্বালালে নাকি জানের বদলে জান পাওয়া যায়। একদিন গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে আসলাম। আমাদের এখানকার হালাকা পার্টিরা বললো, কোন দেশ থেকে যেন একদল তাবলীগ জামাতের লোক এসেছে ওরা হাসপাতলে এসে খাস দিলে জুবায়েরের জন্য দোয়া করলে ইনশাল্লাহ জুবায়ের ভালো হয়ে যাবে। আমি ভয়ে ভয়ে ওর কাছে প্রস্তাবটা করলাম।
শুনে ও চোখ পাকিয়ে প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়ে প্রস্তাব নাকচ করে দিলো। যতোই বোঝাই, ও কিছুতেই রাজি হয় না। শেষে ওর পা ধরে কাঁদতে শুরু করলাম। “শুধু আমার জন্য, শুধু আমার জন্য একবার রাজি হও।" শেষে বাধ্য হয়ে শুধু আমার মুখ চেয়ে ও নিমরাজি হলো। কিন্তু তারা ওর রুমে আসতে পারবে না। আঙুল তুলে ইশারায় দেখালো, বাইরে যেন দোয়া করে। সেদিন দুপুরে ১১/১২ জন হুজুর এসে ওর জন্য দোয়া করে গেলো।
বুধবার ১৭ই সেপ্টেম্বর ভোরবেলা ফজরের নামাজের পর আমি ওর মাথার কাছে বসে বসে একটা খতম পড়ছিলাম। খতমটা শুরু করার একটু পরেই জুবায়ের ঘুমিয়ে পড়লো। কী গভীর ঘুম, কতদিন পর! খতমটা শেষ করতে আমার প্রায় চারঘণ্টার মতো লাগলো। এই পুরো সময়টা ও ঘুমিয়ে কাটালো। ঘুম থেকে উঠে হাত দিয়ে মাস্কটা খুলতে চেষ্টা করতেই আমি ওটা খুলে দিলাম। পানি খেতে চাইলো, চামচ দিয়ে কয়েকবার পানি খাওয়ালাম। কী বার জানতে চাইলো। বললো, “ভালো লাগছে, কিন্ত মাথাটা ভার হয়ে আছে, গোসল করতে পারলে ভালো লাগতো।"

এটাই ওর সাথে আমার শেষ কথা।

বেলা আড়াইটার দিকে যেতে হলো অর্ণবকে স্কুল থেকে ওঠানোর জন্য। আসার আগ পর্যন্ত ওকে ভালোই দেখে এসেছিলাম। শুধু পালস রেট কম ছিলো।

অর্ণবকে নিয়ে বাসায় ঢুকবার ১০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ফোন এলো যে, ওকে আবার intubate করা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, ওরা কী বলছে। কী হলো এই ৪৫ মিনিটের মধ্যে যে ওকে দ্বিতীয়বারের মত এটা করতে হলো। আসবার আগে নার্স কেন তাহলে বললো, he is stable?

ফোনে আমি বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম, “ইনটিউবেট করে ফেলেছো না করবে?" বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, ওদের কথা। আর আমার বিনা অনুমতিতে ওরা এটা কীভাবে করলো? এরপর আমি আর আমার মাঝে ছিলাম না, মনে হয় মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, না হলে কেন অর্ণবকে মারতে যাবো! ফোন রেখেই অর্ণবকে মারতে শুরু করলাম, "তোর জন্য শুধু তোর জন্য আমি তোর বাবার কাছে থাকতে পারলাম না, আর সুযোগ পেয়ে ওই শকুনগুলো তোর বাবাকে মেরে ফেললো।"

শিমুল দৌড়ে এসে অর্ণবকে আড়াল করে দাঁড়ালো। "কী হয়েছে, সেজাপু? কী করছো পাগলের মতো? জুবায়ের ভায়ের কী হয়েছে?"
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হতে গেলাম। শিমুল অর্ণবকে ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, "না, আমি তোমাকে কিছুতেই যেতে দেবো না, তুমি অ্যাকসিডেন্ট করবে।"

শিমুলের দেখাদেখি অর্ণবও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এতক্ষণে আমি আমার মাঝে ফিরে এলাম। অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে কান্নার ভারে ওখানেই বসে পড়লাম, "আমি স্যরি, বাবা, আমাকে মাফ করে দে। I don't mean it." বলে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদতে শুরু করলাম। আমার মন আমাকে বলে দিলো, জুবায়ের আর ফিরবে না। জুবায়ের মারা যাবার পর আমি আর কারো সামনে শব্দ করে কাঁদিনি। ওই একবারেই নিজেকে সামলাতে পারিনি।

শিমুল এরপর হাসপাতালে ফোন করে সব ডিটেল শুনলো। মুকুল ভাইকে ফোন করে সব জানালো। কিছুক্ষণ পর মুকুল ভাই এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ওর রুমে গিয়ে দেখলাম, কেমন যেন বেকায়দায় ঘাড়টা কাত করে শুয়ে আছে, মুখের ভেতর টিউবটা ঢোকানো। ওটা আটকানোর জন্য খুব টাইট করে মুখের চারিদিকে পেঁচিয়ে সার্জিক্যাল টেপ লাগিয়ে দিয়েছে, তাই ঠোঁটটা বাকা হয়ে আছে। ঠোঁটের একপাশে একটু কেটে গেছে, বাম গালে নুন-ছাল উঠে গেছে। ও যে খুব ধস্তাধস্তি করেছে, সেটা দেখেই বোঝা যায়।

না, আমরা এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিইনি, আমরা ফাইট করেছি with all our source and power. কিন্ত জুবায়ের অসুখটাই এমন যে, কাউকেই কনভিন্স করতে পারিনি, এমনকি শান্টুভাইকেও না। এখন পর্যন্ত নাকি যা করা হয়েছে, ওকে বাঁচানোর জন্যই করা হয়েছে। হাসপাতালের কাগজপত্রও ওদের পক্ষে। আমরা আর কী করতে পারি? এরপরের দিনগুলির কথা আমি আর মনে করতে চাই না। তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু একটু একটু করে ওর চলে যাওয়া দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না।

এই সময়টার কথা লেখার মতো মন-মানসিকতা আমি এখনো অর্জন করতে পারিনি। কোনদিন পারবো বলেও মনে হয় না। শুধু রাতের দুঃসপ্নের মাঝে সেইদিনগুলির সম্মুখীন হবো।

জুবায়ের মারা গেল ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। ঠিক ইফতারের আগে আগে। ওই সময়টা নাকি রোজাদারের দোয়া-কবুল হবার সময়? আমি দোয়া করেছিলাম, আমার স্বামীকে তোমার হাতে তুলে দিলাম, খোদা। মৃত্যুর পরে কী আছে, আমি জানি না। ও কোথায় যাচ্ছে, তাও আমি জানি না। He is all alone. Stay with him. Please, stay with him wherever he goes.


* লেখায় রেটিং না দেয়ার অনুরোধ রইলো।


মন্তব্য

মৃত্তিকা এর ছবি

আপনার কষ্টের মাত্রা পুরোটা না বুঝলেও, যতোটুকু বুঝেছি তাতেই ভীষণ খারাপ লাগছে। সান্তনা দেবার ভাষা নেই আমার কাছে। শুধু দোয়া করি, জুবায়ের ভাই এর আত্নার শান্তির জন্য, আর আপনাদের সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য। জুবায়ের ভাই বেঁচে থাকবেন এই সচলায়তনের মাঝেই।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

মৃত্তিকা, আপনার দোয়া আমাদের সাথে থাকবে। ধন্যবাদ।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

......................................................

স্নিগ্ধা এর ছবি

..............................

জিফরান খালেদ এর ছবি

ঘুরে ফিরে জুবায়ের ভাই-এর করা মন্তব্যগুলি খুঁজি মাঝে মাঝে, লিখাগুলো... হিমু ভাইয়ের বা অরূপ ভাইয়ের দু'টো লিখা ছিলো...

এই পর্বটা পরেও আসলে তেমনভাবে কিছু বলবার নেই। কি বলবো...

আমি খুব অপেক্ষা করে আছি কোনো একদিনের যখন কারো মৃত্যুতে আমি কষ্ট পাবো না...

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটা পরার জন্য।

পরী [অতিথি] এর ছবি

..............

আহমেদুর রশীদ [অতিথি] এর ছবি

...............

তুলিরেখা এর ছবি

..............................

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রেশনুভা এর ছবি

ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ ........................

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ।

রেনেট এর ছবি

অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করলাম কিছু একটা বলতে। পারলাম না।

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

অনেক সময় কিছু না বলে ও, অনেক কথা বলা হয়ে যায়।

অনিকেত এর ছবি

.............................................

মামুন হক এর ছবি

..................................................

_প্রজাপতি এর ছবি

আসলেও কোন ভাষা নেই সান্তনা দেওয়ার, শুধু দোয়া করি জুবায়ের ভাই যেখানেই আছেন
ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন।

-------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

আপনারাও ভালো থাকুন।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

.....................................................

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

দময়ন্তী এর ছবি

......

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আশ্চর্য! লেখাটা পড়ার পরে আমার এতটুকুও খারাপ লাগছেনা। এতটুকুও মনে হচ্ছেনা জুবায়ের ভাই নেই। আশ্চর্য, খুবই আশ্চর্য, কিন্তু এটাই সত্যি মনে হচ্ছে। জুবায়ের ভাই আছেন, আমাদের মাঝেই আছেন। ভাবী আপনার মধ্যেই হয়তো আমরা জুবায়ের ভাইকে পাবো।

জুবায়ের ভাইকে হয়তো বলতে সাহস পেতাম না, তাই আপনাকে বলি: মানুষ মারা যাওয়ার পরে তার পূণ্য বা পাপ করার সুযোগ থাকেনা। তবে সওয়াব পাওয়ার দুটো পথ আছে (১) রাইটিয়াস চাইল্ড (বাংলা কি পূণ্যবান সন্তান হবে?) (২) সাদাকায়ে জারিয়া (যেমন- তার নামে দান খয়রাত করা, পুকুর খনন করে দেয়া, গাছ লাগানো ইত্যাদি)

ইনশাল্লাহ আপনার সন্তানেরা অনেক বড় হবেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকবেন। জুবায়ের ভাইকে আমরা কোনদিনই ভুলবোনা। তিনি থাকবেন আমাদের দোয়ায় ও ভালোবাসায়।

সংসারে এক সন্ন্যাসী [অতিথি] এর ছবি

ভাবীর কাছ থেকে এই মন্তব্যের মধ্যম প্যারাটির কথা শুনে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে পারলাম না।

ঈশ্বর আর ধর্মে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস ছিলো না ভাইয়ের। নাস্তিক ছিলো সে আমুণ্ডুনখাগ্র। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অটল ছিলো সেই অবিশ্বাসে। ঘোরতম দুঃসময়ও তাকে অবস্থানচ্যুত করতে পারেনি। ধর্মীয় রীতিতে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হোক, তা সে কখনওই চায়নি। বরং মৃত্যুর পর তার দেহ ডোনেট করা হোক, এমন ইচ্ছেই প্রকাশ করেছে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও। তবু তার ইচ্ছেপূরণ করা সম্ভব হয়নি কাগজপত্র বিষয়ক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ভাবীর মানসিক অবস্থার কারণে।

আপনার মন্তব্যটি পড়ে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম খানিকক্ষণ। ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলেই তার বিশ্বাস বা অবিশ্বাস মূল্যহীন হয়ে পড়বে? ঘোর নাস্তিক হয়েও স্ত্রীর ধর্মকর্মে সামান্যতম বাধা তো সে কোনওদিন দেয়নি! আর তাই ধর্ম বিষয়ে তার দর্শন অবজ্ঞা করে তার পরকালীন শান্তির জন্য তার স্ত্রীকে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া পালনের পরামর্শ দেয়াটা ঠিক শোভন হয়নি বলে আমার মনে হয়েছে। তেমন কিছু কেউ করতে চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে করতেই পারে। তাতে অসুবিধে নেই কোনও।

ভাইয়ের মৃত্যুর পর ভাবীর জীবনে অনাহুতের মতো আবির্ভাব হয় আগ্রাসী মোল্লাগোষ্ঠীর। ভাইয়ের জীবদ্দশায় যারা বাড়ির ত্রিসীমানা মাড়াতে সাহস করতো না, তারা পেয়ে বসলো অবলা ভাবীকে। ভাবীর ভাষায়, “জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছিল মোল্লারা”। শহরের তাবলিগ পার্টি এবং পেশাদার ও সৌখিন মোল্লারা ভাবীকে হেদায়েত করতে উঠে-পড়ে লেগেছিল। হাল ছাড়েনি তারা এখনও। কীভাবে চলতে হবে, কী করতে হবে, কী করা তার জন্যে নিষিদ্ধ, কোথায় যাওয়া যাবে না, কোন পোশাক পরা যাবে আর কোনটা যাবে না থেকে শুরু করে একেবারে অতীব ব্যক্তিগত প্রসঙ্গেও নসিহত করার অবিরাম প্রচেষ্টা একদা ধর্মে-বিশ্বাসী ভাবীকে ধর্মবিমুখই করে তুলেছে শুধু। তার লেখা কয়েকটি মন্তব্য থেকে তা আঁচ করা শ্রমসাধ্য নয়।

কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাসে আমি কোনও সমস্যা দেখি না যতোক্ষণ পর্যন্ত না তা অন্যের ওপর চাপানো হয় বা চাপানোর চেষ্টা করা হয়।

মন্তব্যটি ভাবীর সম্মতি নিয়ে প্রকাশিত। তবু রূঢ় মনে হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার মন্তব্যে খুবই বিব্রত এবং লজ্জাবোধ করছি। শুধু এটুকুই বলি আপনি যেভাবে ব্যাপারটা দেখছেন সেভাবে আমি দেখিনি। আপনার বা কারো অধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞাও করিনি যেমনটা সচলায়তনে অনেকেই করে থাকেন (আপনিও তাঁদের একজন)। কারো উপরে কিছু চাপানোর প্রসঙ্গ কিভাবে আসলো সেটাও আমি বুঝতে পারছিনা। লাইন ধরে ধরে ব্যাখ্যা দেয়ার মতো মনের অবস্থাও নেই। খুবই লজ্জা পেলাম। এই পোস্টে ফিরে না এলেই ভালো করতাম। এতটা লজ্জা আমি সচলায়তনে কখনোই পাইনি। খুবই ছোট মনে হচ্ছে নিজেকে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী [অতিথি] এর ছবি

আপনার বা কারো অধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞাও করিনি যেমনটা সচলায়তনে অনেকেই করে থাকেন (আপনিও তাঁদের একজন)

কারুর ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করে সচলায়তনে কখনও কিছু লিখিনি, সেটা নিশ্চিত। প্রসঙ্গ উঠলে ধর্ম বিষয়ে অনেক বিতর্কে অংশ নিয়েছি, সেটা সত্য। ধর্মের নানান অসঙ্গতি নিয়ে অনেক কথাও লিখেছি। সেটা আমার ব্যক্তিগত অবস্থান। কিন্তু ধর্মবিরোধী অবস্থান মানেই কি ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করা? তাহলে আমি কি বলবো যে, আপনার ধর্ম-সপক্ষীয় অবস্থানের মাধ্যমে আপনি আমার অবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করছেন? আমার তো তা মনে হয় না!

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ভাই, আপনার মন্তব্য পড়ে আমার নিজেরই এমন লজ্জা লাগছে! আমাকে উপলক্ষ্য করে আপনাকে এমন একটা লজ্জা ও বিব্ব্রতকর অবস্থায় পরতে হলো!! এটা জেনে আমার নিজেকে খুবই অপরাধি মনে হচ্ছে। আপনি বিশ্বাস করুন, কাউকে কষ্ট দিতে নয়। বরং আমার কষ্টকে আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে আমার এখানে আসা। আমি দুঃখিত।
নিজের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে শুধু এটুকু বলবো যে, আগে ধর্মের উপর ছিলো আমার অন্ধবিশ্বাস আর এখন বিশ্বাসটা হয়েছে যুক্তি নির্ভর। এখন আমি বিশ্বাস করি মানুষের জন্য ধর্ম। ধর্মের জন্য মানুষ নয়। যে ধর্মের বিধি নিষেধ মানুষকে অষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে, শ্বাস নেবার অবকাশ টুকু পর্যন্ত দেয় না। সে ধর্ম আর যার হয় হোক, সেটা আমার নয়। আপনার জন্য শুভকামনা।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ভাগ্যিস আপনি লেখার মতো শক্তি খুজে পেয়েছেন, নইলে কি করে পড়া হতো এই সব মানবিক গল্প!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কিছুই বলার নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

তাই!

তানভীর এর ছবি

অনেক দিন পর আমার আগের পোস্টটা দেখলাম আজকে। নয় থেকে ষোলই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন আপডেট নেই (এ সময় আনিস মাহমুদ মন্তব্যের ঘরে আপডেট দিয়েছেন)। ওই সময় হারিকেন আইকের কবলে পড়ে পরিবারসহ নিজের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। সত্যি বলতে কী এ সময় জুবায়ের ভাইয়ের কথাও প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম! পনের বা ষোল তারিখ উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিতে ডালাস আসি। একটু সুস্থির হয়ে সতের তারিখ যাই জুবায়ের ভাইকে হাসপাতালে দেখতে। আপনি দুপুরে যখন অর্ণবকে আনতে গিয়েছিলেন তখন গিয়েছিলাম তিনটার দিকে। "রুম নাম্বার টু"- এখনো মনে আছে। আমি তখন জুবায়ের ভাইকে বেশ ভালো অবস্থাতেই দেখেছি। চব্বিশ তারিখ ইফতার করতে গিয়েছিলাম রিচার্ডসন মসজিদে। নামাজে দাঁড়িয়েছি, ঐ সময় জালাল ভাইয়ের ফোন। আমি এই সময় সাধারণত ফোন ধরি না। কিন্তু মনে কুডাক দিলো। হাসপাতাল সেদিন ছিলো লোকে লোকারণ্য। আমি একটু করে কেবিনে গিয়ে দেখে এলাম জুবায়ের ভাইকে; কেমন শান্ত, সমাহিতভাবে শুয়ে আছেন। অসুস্থ ফুটবলার নান্নুকে নিয়ে তিনি একবার একটা পোস্ট দিয়েছিলেন- 'প্রস্থানোদ্যত আমাদের কালের একজন নায়ক'। নান্নুর মৃত্যুতে তিনি লিখলেন, 'আর প্রস্থানোদ্যত নন, তিনি প্রস্থান করলেন'। তখন ভাবছিলাম, কী আশ্চর্যজনকভাবেই না কিছুদিন পরে সেটা তাঁর নিজের জীবনের সাথে মিলে গেল!

আপনারা ভালো থাকবেন।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

কতক্ষন ছিলেন সেদিন? আপনারও মনে হয়েছিলো ও ভালো হয়ে যাবে। অথচ.......। সেই ৪৫ মিনিটের মিমাংসা আর হলো না।

কীর্তিনাশা এর ছবি

.........................

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

আজ ঝাপসা চোখটাকে সামলাতে পারলাম না। দু এক ফোটা অশ্রু নীরবে পরেছে কিনা জানি না। তবে অনেক কষ্ট নিয়ে লেখাটা পড়া শেষ করলাম। আল্লাহ জুবায়ের ভাইকে শান্তিতে রেখো। এছাড়া আর কীবা বলতে পারি।

দলছুট।

==============
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

আন্তরিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মুস্তাফিজ এর ছবি

ভালো থাকবেন

...........................
Every Picture Tells a Story

মেহ্বুবা জুবায়ের এর ছবি

আপনিও।

অরুণ চৌধুরী, ঢাকা এর ছবি

মেহবুবা,
সচল-সদস্য বেলজিয়ামের তানবিরা আর ঢাকা'র নজরুল ইসলামের(আমার নাট্যকার), এ দুজনের প্ররোচণায কেন যে এই ব্লগে ঢুকেছিলাম!!
খুব অন্যায় হয়েছে আমার।
আমার বন্ধু মারা গেছে, এইটুকু খবর নিয়েই এতদিন স্বার্থপরের মতো ভালো ছিলাম, ব্লগে ঢুকে শুরুতেই আপনার জীবন-থেকে-পাোয়া বেদনার্ত লেখাটি পড়া শেষ করে অসুস্হবোধ করছি।

ভালো থাকবেন।
অরুণ চেৌধুরী, ঢাকা

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

উপলক্ষ্য যাই হোক না কেন, আপনি সচলে এসেছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এবং আপনার মতো একজন ব্যক্তিত্বকে সচলে নিয়ে আসবার জন্য তানবিরা ও নজরুল ইসলামকে আরো বেশী ধন্যবাদ। শুধু মন্তব্য নয়, আপনার লেখা দেখতে চাই।

আপনারা সবাই আমাকে, আমাদেরকে ভালো থাকতে বলছেন! যে ঘটনার বিবরণ শুনেই আপনারা মানষিক ভাবে এতটা বিপর্যস্ত!! সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে আমরা বেঁচে আছি!!!

তবুও গত এই একবছরে আমি কি জেনেছি জানেন? জেনেছি ,জীবন বড় নিষ্ঠুর। সে তার প্রয়োজন কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নেয়। মন ভালো নাই বা কিচ্ছু ভালো লাগেনা, জীবন এসব ভাবালুতার মুল্য দেয় না। তাই আমাদের বেঁচে থাকবার জন্য ভালো থাকতে হবে।
আপনিও খুব ভালো থাকবেন।

রেজওয়ান এর ছবি

সব পর্বই পড়েছি এবং মন্তব্য করার মত সাহস পাইনি। ধন্যবাদ কষ্টগুলো ভাগ করে নেয়ার জন্যে। ইশ্বর আপনাদের শক্তি দিন এবং জুবায়ের ভাই আপনাদের আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

রেজওয়ান, আপনি লেখাটা পড়েছেন এবং সঙ্গে আছেন জেনে ভালো লাগলো।

নিবিড় এর ছবি

......................................................


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অমিত এর ছবি

...

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধুই দীর্ঘশ্বাস......

প্রীতম সাহা

এনকিদু এর ছবি

...
অর্ণব এখন কেমন আছে ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ভালো আছে। ওর টিচার ওকে বলেছে, ও এখন "ম্যন ওফ দা হাউস"। সুতরং এই নতুন ভুমিকায় ভালো করবার জন্য খুব চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে গেলেও বেশীর ভাগ সময়ই ওকে পাশ মার্ক দেওয়া হয়।

সমুদ্র এর ছবি

...................................

"Life happens while we are busy planning it"

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

উনি আর নেই। তবুও জুবায়ের ভাই ঠিকই আছেন আমাদের মাঝে। এখনো ওনার ভারী গলা কানে বাজে। একটু স্থির হলেই ওনার ঠাটটা আর সিরিয়াস উপদেশ শুনতে পাই। ওনার নাম্বারটাও আর ফোন থেকে মোছা হয়নি। কি দরকার? কাছে ধারেই তো আছেন কোথাও।

আপনি ভালো থাকবেন ভাবী। ইচ্ছা আছে সামনের বছর আবার যাবার। কপালে থাকলে নিশ্চয়ই দেখা হবে। পিচ্চি দুটোকে ভালোবাসা। আপনার মেয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন আর জিগ্গাসা সেই সময় বিপুল ধৈর্য ধরে উত্তর দিয়েছিল। ওকে আর ধন্যবাদ জানানো হয়নি। আইরিস বাপ কা বেটি হবে এই কামনা করি, আর অর্ণবও অনেক বড় মানুষ হবে ইনশাল্লাহ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

"আইরিস বাপ কা বেটি " সেই ছোট্টবেলা থেকেই। আমার ঘরে তিনজন জুবায়ের ছিলো। এখন দুজন আছে।
সামনের বছর যদি বেঁচে থাকি তাহলে দেখা হবে। দেখি তোমাদের সনন্যসীকে আনা যায় কিনা। যদিও সনন্যসীরা গৃহে কদাচিৎপর্দারপন করেন। তবুও ভক্তের ডাকে যদি দয়া হয়......।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই সব শোকগুলো বয়ে নিয়ে যাই নিরন্তর।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

কিছু বলার নেই।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

................................................
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

প্রথম দুটো পর্ব পড়ে এতো কষ্ট লেগেছিল যে তৃতীয়টা আর পড়িনি। কিন্তু জুবায়ের ভাইকে নিয়ে লেখা। না পড়েও থাকতে পারলাম না। কেমন যেন টানছিল লেখাটা। তৃতীয় পর্ব আর এটা, একসাথে পড়লাম। আসলে বলার কিছুই নেই। আমি তাঁকে সেভাবে না চিনে না জেনে এতদূরে বসে শুধু লেখা পড়ে কষ্ট পাচ্ছি, চোখে পানি চলে আসছে, তাহলে আপনি, আপনারা কতোটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, সেটা কল্পনা করারও সাহসও করি না।

ভালো থাকবেন। বা ভালো থাকার চেষ্টা অন্তত করবেন। অর্ণব-ডোরাকে একইসাথে বাবা ও মায়ের ভালোবাসায় আগলে রাখবেন। অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা রইল।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

জবাব দেবার জনয় জবাব দিচছি না, আপনার মন্তব্য মন ছুয়ে গেলো। জুবায়ের জানতো শারীরিক ও মানষিক ভাবে আমি কত দুর্বল! তারপরেও...........। মাঝে মাঝে মনে হয় দুই বাচ্চার হাত ধরে আমি চৌরাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে আছি। কোনদিকে যাবো কি করবো দিশা পাইনা।
যদিও জুবায়েরের ভালোবাসা রিপ্লেস করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও চেষ্টা করছি ।

s-s এর ছবি

সব শেষ.... ... .... ...? জানিনা, কি বলবো!

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

সব শেষ! তাই কি?

রণদীপম বসু এর ছবি

.....................

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভালো থাকবেন আপনি। বাচ্চাদের ভালো রাখবেন।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

চেষ্টা করবো যতদুর সম্ভব।

সচল জাহিদ এর ছবি

শ্রদ্ধা

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তানবীরা এর ছবি

---------------------
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সৌরভ এর ছবি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

স্বাধীন এর ছবি

......................................................।

রানা মেহের এর ছবি

এই পর্বটা অবিশ্বাস্য কষ্টের
ভেতরটা কেমন ভেঙে দেয়া
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

কষ্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, রানা মেহের।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

"২ বার পঠিত" অবস্থায় লেখাটা পড়েছিলাম। এই "৩১৯ বার পঠিত"-তে এসেও কোনো মন্তব্য রেখে যাওয়ার শক্তি সঞ্চয় করতে পারলাম না বলে দুঃখিত, ভাবী।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

মন্তব্য লিখতেই হবে, এমন কোনো কথা তো নেই, ইশতিয়াক! বারে বারে আমার লেখাটায় ঘুরে ফিরে আসছেন, জেনে ভালোলাগলো। ভালো থাকবেন।

নিঘাত তিথি এর ছবি

গতকাল মন্তব্য করেছিলাম...আবার মুছে দিয়েছি সাথে সাথেই, কি মানে যা লিখেছিলাম সেসবের?
আজ আবার এসেছি শুধু এটুকু বলতে, আপনার দুঃখের সংগী আমরাও...যেখানে যতটুকু অবলম্বন খুঁজে পান তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করুন। স্বজন হারানোয় একমাত্র অবলম্বন আরেক স্বজন, তাদের ভালোবাসা, তাদের জন্য ভাবনা...
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

স্বজনরাই বাঁচিয়ে রেখেছে, তিথি। আর সচলদেরকেও আমি স্বজনই মনে করি। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

মেহবুবা ভাবী,
ভালো থাকুন সারাক্ষণ, সারাজীবন।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ।

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনাদের জন্যে এই শোকাহত সময়েও নিগুঢ় সমবেদনা জানাই।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

সমব্যথী কাউকে পেলে দুঃখ অনেকটাই লাঘব হয়। ধন্যবাদ, তীরন্দাজ।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভালোবাসা রইলো, আপনাদের জন্য। ভালো থাকুন।

---------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনি ও ভালো থাকবেন।

সাধু এর ছবি

যুবায়ের-এর কর্মময় জীবনের তত্পরতা ও পরিধী নিয়ে বিস্তারিত কিছু কি এই ব্লগে এসেছে? তার কর্মের মূল্যায়ন স হ বিস্তারিত কি কেউ জানাবেন এখানে, আমি খুবই আগ্রহী তার নাতিদীর্ঘ জীবন সম্পর্কে জানতে ।
সাধু ।
ইমেইল :

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

আমার মনে হয়, সচলায়তনের নীড়পাতার বামদিকে ওপরের কোণের লিংকটি (মুহম্মদ জুবায়ের বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝেই) ক্লিক করে দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ।

আসমানী-মডু এর ছবি

মুহম্মদ জুবায়েরের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা অটুট রেখে, নীড়পাতার বৈচিত্র্য রক্ষায় এই পোস্টটির স্টিকি সরানো হল।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব কাছের কারোর এই পরিণতি সা হলে হয়তো কারোর পক্ষে প্রকৃত অনুভূতি বোঝা সম্ভব নয়। ভাল থাকার চেষ্টা করুন। ছেলে-মেয়ের জন্য হলেও...

(অর্ণব)

অতিথি লেখক এর ছবি

চোখ থেকে কষ্টমিশ্রিত পানি ঝরে পড়া ছাড়া, আর কিছু লিখতে পারছি না।
-- শফকত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।