পাঠকচরিতমানস

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: শনি, ১৩/১০/২০১২ - ১২:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাইরের দুনিয়াটাকে দরজার বাইরেই আটকে রাখা খুব কঠিন একটা কাজ। বিশেষ করে আজকালকার এই ইন্টারনেট, অনলাইন মিডিয়া, সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর যুগে। আপনি না চাইলেও নাছোড়বান্দা দুনিয়াটা ঠিকই আপনার দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করবে। এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারবেন না। দরজাটা একটু ফাঁক করামাত্রই প্রথমে মাথা, তারপরে গলা, তারপরে কাঁধ গলিয়ে আপনাকে বলতে গেলে ধাক্কা দিয়েই ঘরে ঢুকে পড়বে। তারপরে কোনকিছুর তোয়াক্কা না করেই আপনার প্রিয় জানালার ধারের প্রিয় কোনার প্রিয় ডিভানটায় বসে বকরবকর শুরু করবে। আপনি ইচ্ছে করলেও ওকে ইগনোর করতে পারবেন না।

যতক্ষণ না আপনি আপনার প্রিয় একটা বই খুলে বসছেন। এই একট কাজ করতে পারলেই হলো। বিরক্তিকর দুনিয়ার গাল ফুলিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। দরজার বাইরের দুনিয়াকে ঢিট করার সবচে মোক্ষম উপায় হলো এইটা। আমি সবসময়েই এইটা করে এসেছি। সেই পিচ্চিকাল থেকেই শুরু। ঝামেলা এড়াতে হলেই চোখের সামনে কিছু একটা খুলে ধরে বসে থাকতাম। সাইকোলজিস্টরা অবশ্য এইটাকে অন্যভাবে ব্যাখা করবেন, বলবেন এসকেপিস্ট মেন্টালিটি, কিন্তু কি আর করা।

এটা স্বীকার করতেই হবে, অনেকের থেকেই ভালো শৈশব আর কৈশোর কেটেছে আমার। খুব বড়লোক না হলেও আমাদের পরিবার অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ছিলো। কাপড় বা খেলনার অভাব কখনো হয় নি। বরং এখনকার দিনের বাচ্চাদের তুলনায় আমার খেলনা অনেক বেশিই ছিলো । উনিশশো নব্বই সালে ঢাকা শহরের কয়টা বাচ্চার ট্রান্সফরমারের খেলনা ছিলো? আপনাদের কারো ছিলো কপালের স্প্রিং পাওয়ারড মিসাইল পড থেকে মিসাইল ছুড়তে পারে- এইরকম হাঁটতে পারা রোবট?

আরেকটু বড় হলে পরে, বই বা কমিকস কিনে দেয়ার ব্যপারেও আমার বাবা মা উদার ছিলেন। তবে একটা যাকে বলে আইনের শাসন বজায় রাখতেন আরকি। মাসে একটা কমিকস, কিশোরপত্রিকা (তা ওইটা তো মাসে একটাই বের হতো) বা একটা তিন গোয়েন্দা। এর থেকে বেশি কক্ষণো না। ধানমন্ডি বয়েজের উল্টোদিকে আইসক্রিম পাওয়া যেতো, ওইটার জন্য খুবই অনিয়মিতভাবে চার কি পাঁচদিন পর পর পাঁচ টাকার একটা নোট বরাদ্দ ছিলো। উনিশশো অস্টাশি-নব্বই এর দিকে পাঁচ টাকা ছিলো অনেক টাকা। ততদিনে বইয়ের নেশায় পেয়ে গেছে আমাকে। আমি আইসক্রিম খেতাম না। দুই তিনজন সাথে মিলে চলে যেতাম সোবহানবাগের লাল মসজিদের নিচের জ্ঞানকোষে। একটা কিশোর ক্লাসিক বা তিন গোয়েন্দা কিনে ফেলা যেতো দুই তিন হপ্তা আইসক্রিম না খেলেই।

স্ট্যাম্প জমানো শুরু করি ওই সময়েই। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও পরে অসহ্য হয়ে যায়। পুরোপুরি বাদ দিই ক্লাশ সিক্সের পর- বরিশাল চলে যাওয়ার পরে। মাঝে মাঝে ব্যাটম্যান এর স্টিকার কিনে একটা খাতায় সেঁটে রাখতাম। (এই কাজটা এখনো করি। একটু আগেই পিসির কেসিং এর গায়ে একটা অ্যাংগ্রী বার্ডস এর স্টিকার সাঁটলাম খাইছে )

তারপরেও হতাশা কিছু থাকতোই। বাবার হাত ধরে জ্ঞানকোষ বা ইসলামিয়া লাইব্রেরীতে গেলেও চকচকে অ্যাসটেরিক্সগুলো কেনার মতো বরাদ্দ কখনোই যথেষ্ট থাকতো না। আমাকে চিন্তায় ফেলে দিতেন বাবা- একটা অ্যাসটেরিক্স নিবো- নাকি এই ছয় সাতটা ম্যানড্রেক এর কমিকস। ওই বয়সেই কি জটিল সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যপার!

এখনো মনে আছে- আমার প্রথম টিনটিন- তিব্বতে টিনটিন কেনার প্রায় সাত বছর পরে দ্বিতীয়, তৃতীয় আর চতুর্থ টিনটিন একবারে কিনি, ক্লাশ টেনের প্রিটেস্ট পরীক্ষার পরে বরিশালের বুক ভিলা থেকে। সেরা সত্যজিত আর আরো সত্যজিতের পুরো সেটটা অবশ্য আরো আগেই পেয়েছিলাম। ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া ছিলো অনেকটা স্বর্গ থেকে পতনের মতো (মানে প্রথম প্রথম তাই ভেবেছিলাম আরকি- পরে অবশ্য দেখা গেলো আমি আরেকটা অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে ঢুকে গেছি)। ঢাকা শহরের লালনীল বাত্তির মায়া ছেড়ে এসে মন ভয়াবহ খারাপ। আমার মন ভালো করার জন্য সদর রোডের সেই বুক ভিলা থেকেই কিনে দেয়া হলো মহামূল্যবান সেই লাল আর নীল মলাটের বাঁধাই করা ঢাউস বইদুটো। ফেলুদা শঙ্কু এদের সাথেদেখা হলেও তখনো তারিণীখুড়োর সাথে পরিচয় হয়নি। তুরীয় আনন্দে কাটলো কয়টা দিন।

এইরকম চলতেই থাকলো। বই কেনা হয় ঠিকই- কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু একেবারে নাগালের বাইরেই থেকে যায়। হাহুতাশ করি- ইশ যদি কিনতে পারতাম।

উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র নানা'র আনুকূল্যে হাতে আসে। হতাশা একটু কমে। কিন্তু একই সাথে আবার আফসোস আবারো বাড়তে থাকে সন্দেশের বাঁধানো খন্ডগুলো দেখে। ওরিয়েন্টাল বুক ডিপোর আঙ্কেল আমার স্কুলের সহপাঠির বাবা। কিন্তু উনি ওইটা ছেলের হাতেও ছাড়তে রাজি হন না। এটা লাইব্রেরী না, ধারের কারবার নাই। বই কিনতে হবে।

সাতানব্বই এর দিকে, কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় কলাবাগানের ওয়ার্ল্ড বুক ডিস্ট্রিবিউশানে শার্লক হোমসের একটা তিনখন্ডের কালেকশানে প্রায়ই হাত বুলিয়ে আসতাম। দারুন ছাপা আর বাঁধাই, অরিজিনাল স্ট্রান্ড ম্যাগাজিনের টাইপফেসে- সিডনি পেজেটের আসল ইলাস্ট্রেশনসহ। মারাত্মক দুর্দান্ত একটা কালেকশন। আমার কাছে আটশ টাকা থাকতো, নয়শো টাকা থাকতো। কিন্তু বারোশ টাকা তো আর থাকতো না কখনো। বারোশ টাকা থাকে না আসলে- ওই দোকানটায় গেলেই কোন না কোনভাবে খরচ হয়ে যায়। ক্রাইটনের 'কঙ্গো' কিনে নিয়ে আসি। জনাব শার্লক হোমস আর আমার সাথে বাসায় ফেরেন না।

এখন 'দিনবদল' বেশ ভালো মতোই হয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব শক্ত না হলেও যথেষ্ট ভালো। বইয়ের দোকান থেকে 'সাধারণতঃ' হতাশা নিয়ে ফিরতে হয় না। যা চাই, সেইটা বগলদাবা করেই ফিরি। তবে সামাজিক আর পারিবারিক অবস্থা খুব বেশি পরিবর্তন হয় নি। 'বেশি' বই কেনার ওপর চোখ রাঙানো না থাকলেও ভ্রু কোঁচকানো একটু রয়েই গেছে। তবে আমি আমার ট্রেডমার্ক ইডিয়টিক হাসিটা দিয়ে এড়িয়ে যাই।

গুরুজনেরা হতাশ হন। তবে এখন আর কিছু বলেন না। অনেক আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন ওঁরা। এইবারের জন্মদিনে আমাকে একটা আলমারি উপহার দেয়া হয়েছে- শুধুমাত্র আমার ঘরের মেঝেতে আর চেয়ারে রাখা বইগুলো রাখার জন্য। কিন্ত ঘরের অবস্থা এখন আবার পূনর্মুষিক ভব। বাইরে গেলে ব্যাগ ছাড়া কোথাও যাই না, লুকিয়ে বই আনতে সুবিধে হয়। তারপরেও ঝামেলায় যে পড়ি না, তা না। দিনদশেক আগে দার্জিলিং গেলাম অনেকটা হুট করে বেড়াতে। ওইখানের অক্সফোর্ড বুকশপে অনেকটা সাধ মিটিয়ে বই কিনলাম। তবে বাড়িতে ফিরে পড়লাম বিপদে। দরজার পাশে ময়লা ব্যাকপ্যাকটা রেখে ওইটা খুলে বইগুলো বের করে তাড়াতাড়ি কোনমতে ঘরে দিকে যাওয়ার পথেই পড়ে গেলাম আব্বাহুজুরের সামনে। উনি বাকরুদ্ধ হয়ে কোন কিছু বলতে পারলেন না। অবশ্য একটা ষাট লিটারের নর্থফেইস ব্যাকপ্যাক থেকে সুবাসিত দার্জিলিং চা এর বদলে ময়লা টিশার্টে মোড়ানো এগারোটা নানান সাইজের বই বের হতে দেখলে যে কেউ বাকরুদ্ধ হবে।

কয়েকদিন আগে আজিজে উইন্ডোশপিং করতে গিয়ে 'ক' দোকানে নজরে পড়লো ছাব্বিশ খন্ডের হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী। এই কালেকশনটার দিকে কুনজর দিয়েছি বহুত দিন আগেই, ধানমন্ডির জ্ঞানকোষে মনে হয় অনেকবছর ধরেই ছিলো, কিন্তু সাড়ে চার হাজার টাকা দাম শুনে আর তাকানোর সাহসও হতো না। আর এর থেকেও বড় ব্যপার হল এতগুলো বই একসাথে নিয়ে বাসায় ঢুকলে পিট্টি খাওয়ার সাথে সাথেই তাজ্যপুত্র হবারও একটা সম্ভাবনা থাকে। আমার বাপ মা আমার অনেক আজব কাজকর্ম সহ্য করলেও সবকিছুরই একটা সীমা আছে। ওঁনাদের এমনিতেই অনেক যন্ত্রণা দিই- তাই একে আপাতত চিন্তা বাইরেই রেখেছিলাম। কিন্তু 'ক' দোকানের দাম দেখলাম কম, তিনহাজার ষাট টাকা লিখে রেখেছে। এইদিকে বাবামা দেশের বাইরে গেছেন কিছুদিনের জন্য। পাঁচহাজার টাকা দিয়ে গেছেন হাতখরচ আর সম্ভব হলে পূজোর জন্য জামাকাপড় কিনে ফেলতে। ভাবলাম পূজোর শপিং (!) শুরু করেই ফেলি। হাসি

তাই এক শুভদিন দেখে বই কিনতে চলে গেলাম আজিজ মার্কেটের 'ক" দোকানে। আগে কখনো এইখান থেকে বই কিনি নাই, তাই ছাব্বিশটা বই উলটেপাল্টে দেখলাম, কোন ঝামেলা আছে না কি। বললাম সহজে যাতে নেয়া যায় এমনভাবে প্যাকেট করে দিতে। কিন্তু সেলসম্যান ভাইয়া ওইরকম পাত্তা দিলেন না। উনি গভীর মনোযোগে সলিটায়ার খেলছেন কাউন্টারের কম্পিউটারে। বললেন দুইটা ব্যাগে দিচ্ছি, নিয়ে যান। আমি বললাম যদি ছিঁড়েটিড়ে যায়? কোন সমস্যা হবে না, বললেন উনি, স্ক্রীণ থেকে চোখ না সরিয়েই। দাম দেয়ার সময় আমি তিন হাজার টাকা দিতে চাইলে উনি বললেন- পুরো তিন হাজার ষাট টাকাই দিতে হবে।

আমার কাছে ছিলো আর বিশ টাকা। আমি বললাম তিন হাজার টাকাই রাখেন না, এতগু্লো বই কিনলাম। নাহ- পুরোটাই দিতে হবে। আমি আবার ওয়ালেট বের করতে করতে বললাম- ভাইয়া কি মতিকন্ঠ পড়েন নিশ্চয়ই? ক্যামন লাগে?

সলিটায়ার খেলা বন্ধ হয়ে গেলো। আমার দিকে কিছুক্ষণ দেখে আমাকে জরিপ করার চেষ্টাই করলেন মনে হয়। আমি আরেকটু মিষ্টি হেসে বললাম- 'আমি কিন্ত ওইখানে লিখি মাঝে মাঝে।'

উনি নড়েচড়ে উঠলেন। বইগুলো ভালমতো বললেন প্যাকেট করে দিতে। 'ভাইয়ের সাথে কি গাড়ি আছে'? আজকে ছিলো। 'ওই কে আছিস, যা ভাইয়ার বইগুলো গাড়িতে তুলে দিয়ে আয়'। আমি মনে মনে বললাম - 'লাইনে আসো বাবারা' হাসি

হেমেন্দ্রকুমার রচনাবলী গাড়িতে উঠে পড়লো।

তবে তারপরেও রেহাই ছিলো না। বাবা মা বাসায় নেই, কিন্তু আমাকে, ছোটভাই আর সদ্য ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া মাসতুতো ভাইকে পাহারা দেয়ার জন্য আমার মাসিমা আমাদের গৃহে বিরাজমান আছেন। দরজা উনিই খুললেন। আমার হাতে তিনটে বড় বড় প্যাকেট দেখে একটা জিজ্ঞাসাপূর্ণ দৃষ্টি দিলেন। কিন্তু তার পরেই হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করলেন। প্যাকেটে কি আছে বুঝতে পেরে উনি হতাশ।

'আর কতো বই কিনবি রে, ছেলে? দুনিয়ার সব বই কিনতে পারলেও মনে হয় তোর শান্তি হবে না? '

আমি আজকাল লোকজনকে বিভ্রান্ত করার জন্য মাঝে মাঝেই সংস্কৃত বা ল্যাটিন আউড়াই। এইবার খুব উদাসভাবে লাতিন আউড়ালাম।

Orbis non sufficit
দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ ।

হাসি

____________________________________________________
বারোই অক্টোবর, রাত সাড়ে এগারোটা

শিরোনাম কৃতজ্ঞতা - সতীনাথ ভাদুড়ী ও মুখফোড় হাসি


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

১. ইতিহাসপাতাল কই?
২. Quando ibis ad banglabajar?

ওডিন এর ছবি

১ ইতিহাসপাতাল আসবে। আজকে ফেসবুকে আড্ডা মারতে মারতে মনে হলো এইরকম কিছু একটা লিখে ফেলি
২ সোমবারের মধ্যে একটা খবর জানাতে পারব বলে আশা রাখি। দেরির জন্য লজ্জিত হিমু ভাই লইজ্জা লাগে

হিমু এর ছবি

ইতিহাসপাতাল বেশি ঝুলায়েন না। একটা চৌধুরীর গল্প লিক্তেছি আপনাদের নিয়ে।

Fuero perfora vestra amphora, aqua erit permano!

ওডিন এর ছবি

কলসি ফুটার গপ্পো নাকি? চোখ টিপি

খেকশিয়াল এর ছবি

চৌধুরীঈঈঈঈঈঈঈঈ!!!!! দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

ইয়ো ম্যান- আমাদের দেবদাস চুনিলাল প্রজেক্টের কথা ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু। এইটা নিয়ে একদিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসা দর্কার। চিন্তিত

খেকশিয়াল এর ছবি

অবশ্যই! খ্রাড়াউ অচিরেই আওয়াজ দিতেছি!

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তাসনীম এর ছবি

বরিশালের বুক ভিলার ঢাকা নিউমার্কেটে একটা শাখা আছে, রাইট? নিউমার্কেটে সবচেয়ে ভালো কালেকশন ওদের।

হেমেন্দ্র কুমার দুই হাতে লিখতেন, দোষটা ওনার, একটু কম লিখলে জামা-কাপড় কেনার টাকা অবশিষ্ট থাকতো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ওডিন এর ছবি

বুকওয়েব মনে হয়।

[এডিট নোটঃ বুকভিউ। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেলো]

হেমেন্দ্রকুমার রায়ের সব লেখা যে খুব ভালো তা কিন্তু না, আর অনেকগুলোই ইংরিজি গল্পের অনুবাদ। কিন্তু ছোটবেলায় ওঁর লেখা গোগ্রাসে গিলতাম। এই কালেকশন দেখে আর পকেটে পয়সা থাকায় আর লোভ সামলাতে পারি নাই। ছোটবেলার শখ এখন মিটিয়ে নিচ্ছি আরকি দেঁতো হাসি

আর কাপড়জামা। তুচ্ছ নশ্বর সব জিনিসপত্র। দুই দিনের দুনিয়ায় দুই পয়সার পাঞ্জাবির মূল্যই বা আর কি।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুক ভিলার চেয়ে তরুন লাইব্রেরীতে বেশি যেতাম। কারণ ওখানে কমিশন একটু বেশি দিত, আর কালেকশনও ভাল ছিল। তিন গোয়েন্দা, রহস্য পত্রিকা, অনুবাদ, মাসুদ রানা, আর ওয়েস্টার্নের বিশাল ভাণ্ডার। টিফিনের টাকা জমে ২১ টাকা হলেই চলে যেতাম আর তিন টাকা কমিশনে একটা তিন গোয়েন্দা। কিশোরবেলার সেই বইগুলো আর পড়া হয় না বা সুযোগও হয় না, শুধু বাড়িতে গেলে উল্টে পাল্টে দেখি বের করে, ঘ্রান নেই, ফিরে যাই দুরন্ত কৈশোরে।
-রানা

ওডিন এর ছবি

আমি যদি কখনো অটোবায়োগ্রাফি লিখি (লিখবো তো অবশ্যই চোখ টিপি - একটা চ্যাপ্টারই বরাদ্দ থাকবে তরুণ লাইব্রেরি জন্য। হাসি

বুক ভিলায় যেতাম বই দেখতে- আর তরুন লাইব্রেরীতে বই কিনতে। কত যে স্মৃতি! সাতানব্বই এর পরে আর ফেরা হয় নি বরিশালে। কোন একদিন ফিরবো হয়তো স্মৃতির শহরে।

তাপস শর্মা এর ছবি

অনেক কিছু কইতে পারতাম। কিন্তু একটা কথাও না কইয়া দীর্ঘশ্বাস রাইখ্যা গেলাম। দেইখেন একদিন আমিও...

ওডিন এর ছবি

আরে এই কাজটা ছোটোবেলায় কতো করেছি।

দোকানে শেলফভর্তি খেলনা বই আর চকলেট দেখতাম আর ভুরু কুঁচকে ভাবতাম- একদিন আমিও মন খারাপ

ফাহিম হাসান এর ছবি

আহা! বই কেনা নিয়ে এরকম লেখার মধ্যে সহজেই ডুবে যেতে পারি।

সোবাহানবাগের জ্ঞানকোষের দোকানটা অসহ্য লাগত - হাত দিয়ে বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ খুব কম। ধানমণ্ডি চার নাম্বারের দোকানটা বরং বেশি ভাল। আর কাছেই নীলক্ষেত। পকেটে টাকা কম থাকলে সোজা ম্যাগাজিন কর্নারের চিপা গলি-ঘুপচির মধ্যে বিকাল-সন্ধ্যা কাটিয়ে দেওয়া যায়। আমার ন্যাট জিও, বেটার ফটোগ্রাফি - সব কালেকশান ওখান থেকেই কেনা। এছাড়াও প্রায়ই পেঙ্গুইন ক্লাসিকস এর পেপারব্যাক বইগুলো সস্তায় (২০-২৫টাকায়) পাওয়া যায়।

আজিজে বিদিত, জনান্তিক এর কালেকশান মোটামুটি ভালোই বলা যায় - তবে নতুন বইয়ের যা দাম! তখন নটরডেমে আমার এক পড়ুয়া বন্ধু ছিল। মাঝে মাঝে দুইজন মিলে একটা বই কিনতে হত। তারপর দখল নিয়ে মারামারি লেগে যাওয়ার মত অবস্থা!

প্রথমার মত বেশ কিছু দোকান আগে নিউমার্কেটে ছিল। এখন মনে হয় বেশিরভাগই উঠে গিয়েছে মন খারাপ

ওডিন এর ছবি

সোবাহানবাগের জ্ঞানকোষে ছোটবেলা থেকেই যেতাম তো, এখনো একটু মায়া আছে আরকি। আর আমি যেহেতু চার নম্বরের জ্ঞানকোষের পেছনেই থাকি বলতে গেলে- আমা বেশিরভাগ বাংলা বই আর কমিক্স ওইখান থেকেই কেনা। আর যেতাম বেইলি রোডের সাগরে।

একটু বড় হওয়ার পরে আজিজে যাওয়া শুরু করলাম। আমার নিয়মিত জায়গা হলো বিদিত। ফোন করে বই বেছে রাখা যায়, বাইরে অর্ডার করেও বই আনিয়েছি।

এমনিতে এখন বইয়ের দোকানের দুঃসময় চলছে। কাঁটাবনের কনকর্ডে কিছু ভাল দোকান হয়েছে, মধ্যমার মতন। আর এমনিতে বই বিচিত্রার অনেকগুলো ব্রাঞ্চ খুলেছে- ধানমন্ডিতে দুইটা, বনানীতে একটা দেখলাম। গুলশানেও শুনেছি আছে। ওরা মেইনলি পাঠ্যবই বেসড হলেও অন্যান্য বইয়ের কালেকশন ভালোই। আর দোকানগুলো বড় আছে- নেড়েচেড়ে বই দেখা যায়

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ব্যাটা, সারাদিন পড়িস ভারীভারী ডাক্তারি বই- আর গোটা কয় হেমেন কিনে ঢ্যাঁড়া পিটীয়ে জানাচ্ছিস মন খারাপ

- লেখায় চলুক

ওডিন এর ছবি

আরে বুঝতে হবে। আমি কি আসলেই এতো পড়ি নাকি? বইয়ের ফ্ল্যাপ দেখে আর গুগল বুকস দেখে কয়টা বইয়ের সারাংশ মুখস্ত করেই না এতো ভাব নিয়ে থাকতে পারি চাল্লু

খেকশিয়াল এর ছবি

বেশি বই কিনলে বকাটা মা-ই দিতো। এখন আর দেয় না। ঐ তোমার মতই হাল ছেড়ে দিছে। বই কিনে বাসায় লুকিয়ে আনাটা একটা আর্ট। ব্যাগ তো থাকে না আমার সাথে, আমি মাঝে মাঝে বই এনে বাসায় ঢোকার আগে প্যান্টে গুঁজে ফেলতাম (কম বই থাকলে) দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

প্যান্টে বই গুঁজে বাসায় ঢুকে নাই টা কে কমরেড?

তবে আমি একবার ধরা খাইছিলাম। খেলতে গিয়ে তিন গোয়েন্দার স্পেনের জাদুকর কিনে ফেলেছিলাম, কোমরে গুঁজে বাসায় ঢোকার সময় মাতৃদেবীর কাছে ধরা খাইছে

খেকশিয়াল এর ছবি

আহারে ব্যাডা, মোরে তো এই বয়সেও প্যান্টে বই গোজতে হয় মন খারাপ

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

আমিও এহোই পথের পথিক গো মনু। কালকা তুমগো লগে আলাপ হরতে হরতেই তো এইয়া ল্যাখলাম ভাইডি।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। নস্টালজিকও হলাম।

ওডিন এর ছবি

এই আধঘন্টার আবজাব লেখায় মুগ্ধ হবার জন্য ধন্যবাদ রাজামশাই হাসি

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ হে ভ্রাত, পারলে ১০তারা দিতাম, কত কথা মনে পড়ল,।
কিন্তু আপনার সাথে এই জিনিসটা বেশ মিলে গেল, ভাবছিলাম বই কেনা নিয়ে একটা লেখা ঝাড়তে হবে, আপনিই দিয়ে দিলেন! খুব আপন লাগল কোলাকুলি

ওডিন এর ছবি

এইটা কালকে ফেসবুকে আপনাদের সাথে গিয়ানজাম করতে করতে লেখা হইছে- আপনি একটা ঠিকঠাকমতো লিখে পোস্ট করেন তো। লইজ্জা লাগে

সত্যপীর এর ছবি

পূজার শপিং পছন্দৈসে। আমিও ঈদের শপিং করতে বাইর হমু ভাবতেসি চিন্তিত

লেখায় উত্তম জাঝা!

..................................................................
#Banshibir.

ওডিন এর ছবি

হেহেহেহেহে তবে ভাবি জানে তো? চিন্তিত

আর শুভশপিং কোলাকুলি

শিশিরকণা এর ছবি

কপালের স্প্রিং পাওয়ারড মিসাইল পড থেকে মিসাইল ছুড়তে পারে- এইরকম হাঁটতে পারা রোবট

- মিলে গেছে। অবশ্য ভ্রাতার সাথে শেয়ার করতে হতো।

তখন নিউ মার্কেটের ফুটপাতে রাশিয়ান ছবিওলা গল্পের বই এর অনুবাদ পাওয়া যেত। এগুলা খুব মিস করি। এইসব বই ছাড়া বাচ্চা কাচ্চা বড় হয় কেমনে?

কতদিন যে আব্বার সাথে বইমেলায় যাই না। ফেব্রুয়ারিতে একদিন পুরো পরিবার ছালা বস্তা যা আছে সব নিয়ে বেরোতাম, এক একজন কুজা হয়ে বাসায় ফিরতাম। যেসব বাপ মা বই কেনা নিয়ে ভুরু কুঁচকায় না, তারাই শ্রেষ্ঠ বাবা মা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ওডিন এর ছবি

এইটা আবার আমারসাথে মিলে গেলো

ফেব্রুয়ারিতে একদিন পুরো পরিবার ছালা বস্তা যা আছে সব নিয়ে বেরোতাম, এক একজন কুজা হয়ে বাসায় ফিরতাম।

বাবার সাথে যখন বইমেলায় যেতাম- বোঁচকা ভরে বই কিনে আনা ছিলো রুটিন, আসলে বছরে ওই একবারই যথেচ্ছা বই কেনার সুযোগ পেতাম। আর ওইসময় বাংলা একাডেমির বাইরেও মেলা বসতো- ওইখানে আরো হাবিজাবি জিনিসের সাথে চাইনিজ আর রাশান কমিকসগুলোও পাওয়া যেতো। পেইচিং প্রকাশন আর চলন্তিকা বইঘরের কোলাবরেশনের বানররাজ সুন উখোং এর কয়েকটা মোটা মোটা কমিকস এখনো আছে আমার কাছে হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নামটা বোধকরি পেইচিং প্রকাশন না, 'বিদেশী ভাষায় সাহিত্য প্রকাশন'। এদের প্রথম কোলাবরেশন ছিল ঝিনুক পুস্তিকার সাথে, পরে সেটা চলন্তিকার কাছে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

আচ্ছা।

আসলে ছুড ছিলাম তো, অতসব খেয়াল নাই হাসি

ইশতিয়াক এর ছবি

দারুন লেখা!!
বরিশালের কই ছিলেন আপনি?

ওডিন এর ছবি

শহরেই এদিক সেদিক। জর্ডন রোড, সদর রোড। শেষে মেডিকেল কোয়ার্টারে। হাসি

সবজান্তা এর ছবি

হে হে ... মতিকণ্ঠের নাম মাস্তানি করলেন খাইছে

ওডিন এর ছবি

ব্যাটার মেজাজ খারাপ করে দিছিলো। আর দোকানের নাম দেখে আমার অনেকদিনের শখ ছিলো এই কাজটা করার। সুযোগটা নিলাম আরকি শয়তানী হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বই কেনার গল্পের বদলে আমি বরং একটু বই না কেনার কথা বলি। যে সব বই/পত্রিকা আমি জীবনেও কিনে পড়িনিঃ

১। টিনটিন, অ্যাস্টেরিক্স থেকে শুরু করে যাবতীয় ইংরেজী ও বাংলা কমিক
২। উন্মাদ, কার্টুন, ম্যাড জাতীয় যাবতীয় স্যাটায়ার ম্যাগাজিন
৩। তিন গোয়েন্দা, ওয়েস্টার্ন, মাসুদ রানা, কুয়াশা সিরিজ
৪। বাংলা যত স্পাই থ্রিলার (দস্যু বনহুর, দস্যু বাহ্‌রাম, দস্যু পাঞ্জা, বায়োনিক মেহেদী, ক্যাপ্টেন রাজ, ভয়াল ইত্যাদি)
৫। ফেলুদা, তারিণী খুড়ো, প্রফেসর শঙ্কু সিরিজ
৬। আয়ান ফ্লেমিং, আগাথা ক্রিস্টি'র বই
৭। নীহাররঞ্জন, নিমাই, আশুতোষ, ফাল্গুনী, শঙ্করের বই
৮। সুনীল, শীর্ষেন্দু'র যাবতীয় কিশোর উপন্যাস
৯। হুমায়ুন আহমেদ-এর যাবতীয় বই
১০। নতুন রিডার্স ডাইজেস্ট, টাইমস্‌, নিউজউইক
১১। রহস্য পত্রিকা, কিশোর পত্রিকা, ছোটদের কাগজ, আসন্ন
১২। যে কোন ধর্মপুস্তক
১৩। গুপ্তযুগের বই
১৪। সানন্দা, আনন্দলোক, মনোরমা
১৫। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, জুলভার্ন, আইজাক আসিমভের বই

থাক্‌ লিস্টি আর বড় করলাম না, মামলা-টামলা খেয়ে যেতে পারি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অ অ অ বুজছি। আপনে পড়ার মত বই ১ টা ও কিনেন নাই। খালি শেলফ সাজানোর বই কিনসেন। দেঁতো হাসি

- কাজী

ওডিন এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ একটা লিস্ট। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
হুমায়ুন আহমেদের বই কিনেছি সম্ভবতো একটা, 'ছায়াসঙ্গী' (উপহার দেওয়ার জন্যে হুমায়ুন আহমেদের বেশ কয়েকটা শিশুতোষ বই ও ভ্রমণ কাহিনী কিনতে হয়েছে, যেগুলির নাম ঠিক মনে নেই )। ধর্মের বই কিনেছি দুটি মাত্র। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের 'কোরানসূত্র' ও ইমাম গাজ্জালীর 'চিঠি'।
তালিকার বাকিগুলির কয়েকটা পড়িনি, তবে কিনতে যে হয়নি এটা নিশ্চিত।

সৌরভ কবীর

ওডিন এর ছবি

হুম হাসি

১। টিনটিন, অ্যাস্টেরিক্স থেকে শুরু করে যাবতীয় ইংরেজী ও বাংলা কমিক- সব কিনেছি
২। উন্মাদ, কার্টুন, ম্যাড জাতীয় যাবতীয় স্যাটায়ার ম্যাগাজিন- মাঝে মাঝে কিনতাম, বেশিরভাগই অবশ্য ধার করে পড়া হাসি
৩। তিন গোয়েন্দা- কিনতাম। , ওয়েস্টার্ন, মাসুদ রানা, কুয়াশা সিরিজ- খুব একটা পড়তাম না। পড়লেও ধার করে।
৪। বাংলা যত স্পাই থ্রিলার- কিস্যু পড়ি নাই ইয়ে, মানে...
৫। ফেলুদা, তারিণী খুড়ো, প্রফেসর শঙ্কু সিরিজ- মুহাহাহাহাহা সব আছে শয়তানী হাসি
৬। আয়ান ফ্লেমিং, আগাথা ক্রিস্টি'র বই- বুড়ির বই কিছু পড়েছি- সব গিফট পাওয়া হাসি
৭। নীহাররঞ্জন- পড়া- ধার করে, নিমাই- কিস্যু পড়ি নাই, আশুতোষ, ফাল্গুনী- পড়ি নাই। শঙ্করের বই- চৌরঙ্গী আর ঘরের মধ্যে ঘর পড়েছি।
৮। সুনীল, শীর্ষেন্দু'র যাবতীয় কিশোর উপন্যাস- অনেকগুলোই আছে। তবে আই হেইট কাকাবাবু রেগে টং
৯। হুমায়ুন আহমেদ-এর যাবতীয় বই- সব পড়ি নাই। যা আছে বেশিরভাগ গিফট। সায়েন্স ফিকশন- যেমন অনন্ত নক্ষত্রবীথি আর তোমাদের জন্য ভালবাসা- কেনা হাসি
১০। নতুন রিডার্স ডাইজেস্ট, টাইমস্‌, নিউজউইক- সব ধার করে পড়া।
১১। রহস্য পত্রিকা, কিশোর পত্রিকা, ছোটদের কাগজ, আসন্ন- সব কিনেছি মুহুহুহু। আমি আসন্ন'র ডাকগ্রাহক ছিলুম
১২। যে কোন ধর্মপুস্তক- অনেক কেনা হইছে। ধর্মকর্ম না করলেও থিওলজি আর ধর্মীয় মিথোলজি আমার প্রিয় বিষয়।
১৩। গুপ্তযুগের বই- পড়ি নাই খাইছে , আ'ম ঠ্যু কুল ফর দ্যাট
১৪। সানন্দা, আনন্দলোক, মনোরমা- আমি এইগুলা পড়ে কি করুম অ্যাঁ
১৫। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, জুলভার্ন, আইজাক আসিমভের বই- বেশিরভাগই কিনেছি : চাল্লু

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তাহলে বুঝতেই পারছো নর্সদেব, যে আমি তোমার মতো 'বই কিনিয়ে' লোকজনের সাথে বন্ধুত্ব করতাম। আমার সীমার মধ্যে থাকা এমন কোন পাঠাগার নেই যেখান থেকে আমি বই পড়িনি। এভাবে অনেক পড়া হয়েছে। পত্রিকা বিক্রির স্টলে বা বইমেলাতে দাঁড়িয়ে, বসে অনেক বই/পত্রিকা পড়েছি। লোকে এইভাবে বিনিপয়সায় উন্মাদ পড়ে বলে উন্মাদক একবার এই ব্যাপারে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন। এককালে একটু আর্ট-কালচারের লাইনে থাকায় সেখানকার নানা প্রতিযোগিতায় পাওয়া বই বা অন্য প্রতিযোগীদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পড়া বইয়ের সংখ্যাও অনেক। ভাঙারীদের কাছ থেকে বার্টার পদ্ধতিতেও অনেক বই জোগাড় করেছি। আর এখন তো দুষ্টলোকেরা অনেক বই স্ক্যান করে আপলোড করে দেয়। সুতরাং পড়ার ইচ্ছে থাকলে নানা উপায়ে বই পড়ার সুযোগ আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ওডিন এর ছবি

তাতো অবশ্যই। আর সত্যি বলতে কি আজকাল কিন্ডল নুক এর যুগে বই যোগাড় করে পড়া আসলেই সহজ হয়ে গেছে। তারপরেও অনেক বই বিশেষ করে বাংলাগুলো না পাওয়ার জন্য আফসোস থেকেই যায়।

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনি যে বইএর পোকা, সেটি ঝরঝরে লেখার ঈর্ষণীয় হাত দেখলেই বোঝা যায়।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ওডিন এর ছবি

'ঝরঝরে লেখার ঈর্ষণীয় হাত' অ্যাঁ

'বইয়ের পোকা'- এইটা ঠিক আছে হাসি

জুন এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

ওডিন এর ছবি

কাইন্দেন না মিয়াভাই। একটা বই পড়েন নাহয় কোলাকুলি

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

ওডিন এর ছবি
অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

গান বিষয়ক একইরকমের লেখা পড়ুম হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ওডিন এর ছবি

দ্যাট, মাই ম্যান, উইল বি মাই অটোবায়োগ্রাফি চাল্লু

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক
সাথে মতিকন্ঠের টুকরো ঘটনা - বাহ বাহ! দেঁতো হাসি

ওডিন এর ছবি

বহুদ্দিনের শখ ছিলো এইরকম কিছু করবো, সুযোগ নিলাম আরকি শয়তানী হাসি

সুরঞ্জনা এর ছবি

ছোটবেলায় বাবা মা কে একটু হিসাব করেই চলতে হোতো, একই বই বহুবার পড়ার অভ্যাস হয়েছিল তাই।
স্কুল থেকে ফিরে পিছনের বারান্দায় গিয়ে আগে ঠিক করতাম, আজকে কোন বই রিভিশন দিব। দেঁতো হাসি

সবচেয়ে বেশিবার পড়া বই 'একাত্তরের দিনগুলি', ক্লাস থ্রি থেকে সিক্স পর্যন্ত প্রতিবছরে দশবার অন্তত পড়া হয়েছে।
এর পরেই আছে 'সোনার কেল্লা'। হাসি

যাক গিয়ে, যা বুঝলাম আমার এই জন্মদিনে আপনার উপহার দিতে আর কষ্ট করতে হবে না, দশ-বারোটা বই তো হেসেখেলে দিয়েই দিবেন! আগাম ধন্যবাদ!! মু হা হা হা হা!!! চাল্লু

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ওডিন এর ছবি

দুঃস্থ বেকার গরীব ফেলটুশ ভাইয়ের কাছে গিফট চায়। কি নিষ্ঠুর একটা মানুষ ওঁয়া ওঁয়া

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

কমিক্স ছাড়া আমার জীবনের প্রথম বই দীপু নাম্বার টু। সেটা পড়ার পরে বই কেনার জন্যে বাপ মা এর কাছে মেলা ঘ্যান ঘ্যান করা লাগতো। বইমেলার বরাদ্দ থাকতো ৩০০ টাকার মত আর স্কুলে প্রতি পরীক্ষা শেষ হলে ১৫০-২০০টাকার বই কিনে দিতো।
ফেলুদার সাথে প্রথম পরিচয় চাচাতো বোনদের থেকে। তাদের কাছ থেকে প্রথম নিয়ে আসি গোরস্থানে সাবধান! আর টিনটিন প্রথম দেখি স্কুলের এক ছেলের কাছে। ওর কাছে জাফর ইকবালের বই এর বদলে টিনটিন ধার চাইলে সে যেই পার্ট নিছিলো জীবনেও ভুলবো না! পরে একটু একটু করে সব টিনটিনই পড়ে ফেলছিলাম। কয়েকমাস আগে টিনটিনের হার্ড কভার কালেকশনটা মালয়শিয়াতে দেখে কিনতে হাত নিশপিশ করছিল কিন্তু দাম মাত্র ১৩হাজার টাকা! সাইজটাও সেইরকম! আর কেনা হলো না। মন খারাপ

---------------------
আমার ফ্লিকার

ওডিন এর ছবি

আমিও অনেকের কাছে বই ধার চেয়ে অনেক অপদস্থ হইছি। আমাদের সবার গল্পই মনে হয় অনেকটা একই রকম।

আমার প্রথম পড়া ফেলুদা ছিলো রয়েল বেঙ্গল রহস্য! 'সন্ধানে ধন্ধায় নবাবে'- আমি নিজেই তব্দা খায়া গেছিলাম। তখন ক্লাশ ফাইভে মনে হয়। হাসি

ওসিরিস এর ছবি

এ বাপু, নিজেকে একদম 'মতিকৈরী' বানিয়ে দিলেন !!

লেখায় গুরু গুরু

ওডিন এর ছবি

ইনি আবার কিনি, চিনলাম না তো চোখ টিপি

তানিম এহসান এর ছবি

বরিশালের বুকভিলা দোকানটা এখন পর্যন্ত বইপ্রেমী’দের খোরাক মিটিয়ে যাচ্ছে একা। আপনার লেখা সবসময়ই ঝরঝরে। বই হলে আর কিছু লাগেনা আসলে।

ওডিন এর ছবি

তরুন লাইব্রেরী কি এখনো আছে তানিম ভাই? জানেন? কি যে প্রিয় জায়গা ছিলো আমার।

কতদিন বরিশালে যাই না। সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মুখ, রাস্তা, গাছ। স্মৃতিগুলো মনে হয় অন্য আরেকটা জন্মের

নিবিড় এর ছবি

হে মহামান্য ওডিন, জেনে রাখুন বই যারা পড়ে আর বই যারা কিনে উভয়ে সমান বোকা দেঁতো হাসি

ওডিন এর ছবি

নিবির্ভাই, আপনে কি চামে দিয়া বামে আমারে বুকা কইলেন ওঁয়া ওঁয়া

অফটপিকঃ
আমরা একজন আরেকজনের লেখায় একই সময়ে কমেন্ট করছি, দুষ্টুলোকেরা তো এইটাকেই বলবে পারষ্পরিক পিঠ চুলকানো শয়তানী হাসি

স্যাম এর ছবি

পিঠ চুলকানো এমন লেখায় ফরজ হাসি

ওডিন এর ছবি
মুস্তাফিজ এর ছবি

আমার একটা নুতন অভ্যাস হয়েছে। খুঁজে খুঁজে ডকুমেন্টারী দেখা। ভ্যাঙ্কুউভারে আসার পর আর কিছু না হোক গত একবছরে শ তিনেকের উপর ডকু দেখে ফেলেছি। বাসার পাশেই পাবলিক লাইব্রেরীটা বেশ বড়ই বলতে হবে। এরপরও কিছু না পাওয়া গেলে অর্ডার দিলেই যোগাড় করে দেয়।

...........................
Every Picture Tells a Story

ওডিন এর ছবি

যে অল্পকয়টা কারণের জন্য আমি প্রবাসীদের ইর্ষা করি তারমধ্যে এই লাইব্রেরী একটা। বাংলাদেশে লাইব্রেরীর নাম কয়দিন পরে পুলাপান খালি ডিকশনারিতেই পড়বে মন খারাপ

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

কমন পড়ছে রে :শয়তানী হাসিহাসি
এ যেন আমার গল্প, খুব খুব ভালো লাগলো !
অসাধারন ।

ওডিন এর ছবি

হাহাহাহাহা এইটা আমাদের সবারই গল্প যে, শুধু একটু এদিক আর ওদিক আরকি

কড়িকাঠুরে এর ছবি

লেখা -গুড়- হয়েছে

ওডিন এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আহা এমন করে যদি লেখা যেত! অসাধারণ লাগলো।

অমি_বন্যা

ওডিন এর ছবি

আরে এইভাবে লেখা খুব সোজা। সচলে অতিথি লেখক হিসেবে লগইন করে 'ব্লগ লিখুন' অপশনটা খুলবেন। তারপরে ফেসবুকের ওয়ালের 'হোয়াটস অন ইওর মাইন্ড' কথাটা মনে করে মনে যা আসে সেইটা লিখে ফেলবেন। এরপরে একবার চোখ বুলিয়ে বানান আর প্যারাগ্রাফ ঠিক করবেন। তারপরে 'সংরক্ষণ করুন' বাটনে চিপি দেবেন। ব্যস দেঁতো হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

সচলে ইদানিং লোকজন দেখি খালি বই নিয়ে লেখা দিচ্ছে। এরকম এক একটা লেখা পড়ি আর মেজাজ গরম আর মন খারাপ হইতে থাকে। কিছুই পড়া হইল না জীবনে মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ওডিন এর ছবি

কিছুই পড়া হয় নাই? বিনয় করতেছেন কবিসাহেব! আমি তো দোকানের সাইনবোর্ডও পড়ি শয়তানী হাসি

ক্রেসিডা এর ছবি

কেউ কি বই ভাড়া করে পড়ে নাই? আমাদের পাশের এলাকায় পা্ওয়া যেত, সেবার বই ২ টাকা আর অন্য বই ৪ টাকা করে ভাড়া।

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

শিশিরকণা এর ছবি

একসময় বই ভাড়া দিতাম। বই এর পৃষ্ঠা প্রতি ১ পয়সা/ দিন হারে ক্লাসের বন্ধুদের কাছে ভাড়া দিতাম। মাস শেষে সেই টাকা দিয়ে আরো ২-৩টা বই কিনে ফেলা যেত। খুবই লাভজনক ব্যবসা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ক্রেসিডা এর ছবি

উমমম.. ভাড়া দেই নাই! তবে ক্লাসে কিছু পোলাপান ছিল, যাদের সাজেশনের প্রতি খুব লোভ, রিয়মর ছড়ানো হতো যে, আমার কাছে বা তমুকের কাছে অব্যর্থ সাজেশন আছে.. বিনিময়ে ২/৩ টা বই হো হো হো

অবশেষে রাত জেগে নিজে নিজে সাজেশন বানানো আর ক্লাশে বই হাতানো দেঁতো হাসি

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

শিশিরকণা এর ছবি

বাপরে, পুরা আঁতেল সভা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ওডিন এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আহা - আমার কৈশোরের কথা মনে পড়ে গেলো - বই কিনে বাসায় ঢুকলেই বাবার অন্ধকার মুখ, আবার বাসায় অতিথি এলে সেই বাবাই তাঁদেরকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গর্বভরে দেখাতেন আমার বইয়ের কালেকশন। এই নিয়ে কতদিন মায়ের কাছে অভিযোগের ডালি মেলে ধরেছি।
ভালো লাগলো লেখাটা।

-অয়ন

ওডিন এর ছবি

হেহেহেহেহেহে এইটা আমার সাথে মিলে গেলো। বাবা সারাক্ষণ চিল্লাপাল্লা করেন, কিন্তু কাকতালীয়ভাবে আজকে বিকেলেই পাশের বাসার আঙ্কেলকে মনে হয় গল্প করছিলেন। উনি আমাকে ডেকে নিয়ে কয়দিন আগে কেনা মার্ক টালির একটা বই নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেন হাসি

দ্রোহী এর ছবি

আমি আগেই সন্দ করছিলাম আপনে মতিকণ্ঠ! চিন্তিত

ওডিন এর ছবি

শয়তানী হাসি ধরা পড়ে গেলাম তাইলে এইবার

কি কমু, অনেকদিনের সাধ ছিলো ওই দোকানের লোকগুলোর ওপরে ইট্টু প্রয়োগ করি, এইবার ঝোপ বুঝে কোপ মারলাম আরকি খাইছে

|জণারন্যে নিঃসঙ্গ পথিক| এর ছবি

প্যান্টে বই গুঁজে বাসায় ঢুকে নাই টা কে কমরেড?

হাসি :)

ওডিন এর ছবি

সেইটাই তো! দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।