১.
দিনটা ছিল বোশেখের এক রৌদ্রতপ্ত দুপুর, এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে। খাওয়ার সময় দুদন্ড জিরিয়ে নেওয়ার আগে আলগোছে হাতে তুলে নিয়েছিলাম বইটি। এরপরের ঘন্টাখানেক আমি আক্ষরিক অর্থেই বুঁদ হয়ে ছিলাম, মুহুর্তের জন্যও চোখ সরাইনি(বা বলা ভাল সরাতে পারিনি) বইয়ের পাতা থেকে । চোখের কোনায় পানি চকচক করেছিল কিনা মনে নেই, তবে পড়া শেষে ভেতরটা ভীষণরকম কুঁকড়ে গিয়েছিল, সেটা দিব্যি দিয়েই বলা যায়। রাশেদের সাথে আমার পয়লা মোলাকাত হল এভাবেই, আর প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আমার বন্ধু রাশেদ চলে গেল প্রিয় বইগুলোর ছোট্ট তালিকার কাতারে।
অপু ভাই’র কথা বলছিলাম, যে কারণে ওনাকে আমার প্রকাশক হিসেবে চাইছিলাম না সেই কারণটা একদম সোজাসাপ্টা, তা হলো- ঊনি মানুষ বেজায় ভাল!
আরে, জানি রে ভাই জানি, আপনারা বলবেন এই তো আগের লেখাতেই না বললাম অপু ভাই লুক খ্রাপ? হু, তা বলেছি, তো একজন লুক খ্রাপ হলেই যে ভাল মানুষ হবে না এইটা কোন কথা হলো? দুনিয়া থেকে কি ইনসাফ উঠে গেছে? নাহ, উঠে নাই।
তো, এই ভাল মানুষ অপু ভাই’র সাথে সম্পর্কটা আমার ঠিক লেখক-প্রকাশকসুলভ নয়, অর্থ্যাৎ কি না, পেশাদারিত্বের লেশমাত্র নেই। আমার ঠিক এ ব্যাপারটাতেই ঘোর আপত্তি ছিল।
বিদেশে আসার পর কিছু কিছু দিন আসে যখন কোন কিছুতে মন বসাতে পারি না। চোখের সামনে উজ্জ্বল মনিটরে খুলে রাখা গবেষনা নিবন্ধ মস্তিষ্কে কোন আলোড়ন সৃষ্টি করে না। শরীর জুড়ে একটু পর পর একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। ফেসবুক খুলে পুরনো ছবিগুলো দেখতে থাকি বারবার। মনের পর্দায় হাজার মাইল দূরের প্রিয় ঢাকা শহর। পহেলা বৈশাখ সেরকমই একটা দিন।
আচ্ছা, সাধারণ একজন মানুষ যখন বোঝে সে খুবই সাধারণ তখন তার মানসিকতা কেমন হয়?
অসহায়ত্বের??তুচ্ছত্বের?নাকি অসন্তুষ্টির?কিংবা সুখের?
অনেককিছুই হতে পারে।
আমি প্রায়ই এ অনুভূতিগুলোর শিকার হই।
প্রথম প্রথম নিজেকে প্রবোধ দিতাম, “আরে ও কিছু না। সবার মাঝেই কিছু না কিছু লুকানো থাকে।তোরও আছে। অপেক্ষায় থাক।”
কিন্তু নিজের দীনতাকে ঢাকবার চেষ্টা স্ববিরোধী তো বটেই কেমন যেন একটু কষ্টের। পীড়া শুরু হল।
ডনোভান চমকে পাওয়েলের দিকে তাকালো, “বাজি ধরে বলতে পারি এই মাথানষ্ট লোহার জঞ্জালটা এনার্জি কনভার্টারের কথা বলছে।”
পাওয়েল হাসি সামলাতে পারলো না, “সত্যি নাকি, কিউ টি?”
“আমি প্রভুর কথা বলছি”, শান্ত, তীক্ষ্ণ উত্তর এলো।
মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড়। সে হিসেবে এখন আমার শিশুসম অবস্থা, যদিও কালে কালে বয়স আটাশ পেরিয়ে গেছে। বেঁচে থাকলে মানুষ বারে বারে বদলায়, আর সেইসাথে স্বপ্নের পরিধি ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বকীয় তত্তের মতন পাক খেয়ে একটা ক্ষুদ্র বিন্দুতে চলে আসে।
চল্লিশ বছর ধরে যে মানুষটা একটা ছবি লেমিনেটিং করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে, কেউ তার কথা শুনেনি, স্বীকৃতি মিলেনি প্রবাসের প্রথম পতাক সৈনিক মিছির আলির। ১৪ ডিসেম্বর বার্মিংহাম শহরের মিষ্টি দেশ রেস্তোরায় মিছির আলীর সাথে প্রথম দেখা। চ্যানেল আই'র ইউকে ও ইউরোপের এমডি শোয়েব ভাই, আমি, আমার সহকর্মী শুভ ভাই আর জামান ভাই আমরা চারজন আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি সৈয়দ নাসিরের আমন্ত্রনে বামিংহাম প্রবাসী সুধিজন
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসে ডেভিড ব্রুকসের একটি প্রবন্ধ পড়ে edge.org এর সাথে পরিচিত হলাম। তারপর গত কয়দিন ধরে রাত-বিরাত ওটাই পড়ছি।
পাওয়েলের চেহারায় এবার খুশির আভাস ফুটে উঠল।
“বাকিটা তো খুব সোজা। এই স্পেস স্টেশনগুলো প্রথমে তৈরি হয়েছিল ছোট বিন্দু, মানে গ্রহগুলোর শক্তির চাহিদা মেটাতে। তখন মানুষ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। কিন্তু প্রখর তাপ, তেজস্ক্রিয়তা আর ইলেকট্রন ঝড়ের কারণে এখানে কাজ করা যে কোন মানুষের জন্য বিপদজনক। তাই মানুষের জায়গায় রোবোট দিয়ে কাজ চালানোর কথা চিন্তা করা হয়। মাত্র দুজন মানুষ এখন এই পুরো স্টেশনটার তদারকি করছে, বাকি সব কাজ রোবট দিয়ে হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি এই দুজন মানুষও যেন দরকার না হয়। এজন্যই তোমার মতো রোবট প্রোটোটাইপ, যে কি না যুক্তি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তৈরি করা হয়েছে। তুমি যদি এই স্টেশন একা সামলাতে পারো, তাহলে মাঝে মধ্যে মেরামতের জন্য কিছু জিনিস আনা ছাড়া মানুষের আর এখানে আসার দরকার পড়বে না।”