ব্লগরব্লগর

[justify]আমার আম্মা বরাবরই খুব রসিক মানুষ। কথায় কথায় হেসে গড়িয়ে পড়েন। উনাকে দেখলে দুঃখ বা কষ্ট বোধ টের পাওয়া যায়না। অনেক বড় বড় ঘটনাতেও উনাকে খুব শান্ত ভাবে হাসি মুখে ঘটনার মুখোমুখি হতে দেখেছি। ছোট থেকে দেখি আম্মা কখনও খাবার নষ্ট করেননা, সব খাবারই নাকি উনার কাছে খুব সুস্বাদু মনে হয়। আমি মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম। সব খাবারই মজা, তাই কি আর হতে পারে?

“নজরুল-শরৎচন্দ্রের কোনো দরকার নাই তো আমার! ক্লাস ফাইভের অঙ্ক পরীক্ষায় সতের পেয়ে ফেল মারেন, তারপর আবার পড়া ফেলে ‘সাহিত্যচর্চা’?! লজ্জা করে না?! বেশরম! বেহায়া! যাহ্!”

খাতাটা ছুড়ে মারলেন বাবা, দশ-বারো হাত দূরে। তুলে আনার আর সাহস পেলাম না।

ঘোর শীতের দিনে ভ্রমণে বেরোতে হলো একবার, ঠিক মুক্ত ভ্রমণ নয়, মাধুকরীতে বেরোতে হলো বলা যায়। ঘটনাচক্রে থাকতে হলো উত্তরের এক শহরে, সেখানে তখন অবিরাম তুষার ঝরছে।

মাসুদ রানা বাংলাদেশে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। একা। টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায়- অবিচার-অত্যাচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে-পদে তার বিপদ-শিহরন-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি।

তার পোলা যদি তার পোলার মায়ায় আটকাইয়া যায় তবে সবকিছু ভেসে যাবে তার। তাই ভীমেরে সংসারছাড়া কইরা কুন্তী পলায়। কই যাইব কোথায় যাইব কিছু ভাবে নাই; বিদুরের লগেও যোগাযোগ বন্ধ বহুদিন... কিন্তু কোনো একজন মানুষের পরামর্শ এখন দরকার তার। আর এই জঙ্গলে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ছাড়া কোনো বান্ধব নাই কুন্তীর...

বন বদলাইয়া কুন্তী গিয়া হাজির হয় শ্বশুর দ্বৈপায়নরে ডেরায়- পিতা। বড়োবেশি বেচইন আছি সবকিছু নিয়া...

দেশ থেকে ফেরত আসার একদিন পরেই মাঝরাতে বরের সাথে ঝগড়া হয়ে গেলো। ভুক্তভোগী মাত্রই জিজ্ঞাসা করবেন না কেন। ১৮-১৯ দিন বাবা-মা আত্নীয়স্বজনের সামনে আদর্শ দম্পতির মূর্ত প্রতীক হিসেবে অভিনয় করার পর এইটা অপ্রতিরোধ্য কন্সিকোয়েন্স। এতো দীর্ঘ সময় ঝগড়া না করে থাকা দাম্পত্যজীবনের জন্য খুবই অস্বাস্থ্যকর। আসল প্রশ্ন হল মাঝরাতে কেন?

শ্বেতশুভ্র চুল-দাড়ির বর্ষীয়ান মানুষটি তাকিয়ে আছেন জানালার বাইরে। হালকা শীতের সকালে সামনের গাছটায় ছোট্ট দুটো চড়ুই পাখির ঝগড়া। ঠান্ডা বাতাসে একটু একটু করে কাঁপে গাছের শুকনো পাতা। রাস্তা দিয়ে রোজকার মতো আজকেও ব্যতিব্যস্ত মানুষের দল ছুটে চলে অনির্দিষ্ট পথে। এসব কিছুই তাঁর ধ্যানভঙ্গ করতে পারেনা আজকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি শুধু ভাবেন, ভেবে চলেন, মাথার ভেতরে অজস্র স্মৃতিরা যুদ্ধ করে, ফিরে ফিরে আসে। নিজের অজান্তেই একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস মিশে যায় যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলমুখরতায়।

[justify]

আমি গল্প লিখছিনা দুবছরের অধিক কাল। শেষ গল্প বোধ হয় লিখেছিলাম যে বছর দেশে ফিরে আসি সে বছরের শেষের দিকে, বিদেশ বিভুঁয়ে বসে- দেশের গল্পই। দেশে ফিরে আর দেশের গল্প হয়নি, বিদেশের ও না।
তবে দেশে ফিরে ঘুরাঘুরি হয়েছে বেশ। আমি যে শহরে থাকি তাকে উত্তর পূর্ব থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে ঘিরে রেখেছে বেশ দীর্ঘ এক পাহাড় শ্রেনী। একেবারে উত্তর-পুর্বে শুরু জৈন্তিয়া পাহাড়, এটি এসে মিশেছে পূর্ব খাসিয়া পাহাড়, পূর্ব এসে মিশেছে পশ্চিম পাহাড়ে, সেই পশ্চিম শেষ হতে হতে গারো পাহাড়ের শুরু। বিচ্ছিন্নভাবে পশ্চিম খাসিয়া পাহাড়ের নীচ থেকে গারো পাহাড়ের দিকে ঘুরেছি কিন্তু অবিচ্ছিন্নভাবে জৈন্তিয়া পাহাড়ের নীচ থেকে পাশ্চিম খাসিয়া পাহাড়ের শুরু পর্যন্ত পুরোটাই ঘুরা হয়েছে পায়ে হেঁটে।

কিছুটা নৈবেদ্য জেনেছে ভিড়, আর কিছু অবয়ব নীরবতা,
ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জমা আরও কিছু স্থিরতা
তবু রয়ে গেছে বাকি, এই ভালো- স্থিরতার কাছাকাছি থাকা;
একদিন সবদিন একা রাখা,
প্রতিদিন হতে পারে প্রতিরাতে এঁকে ফেলা নিজ নিজ প্রত্যয়ে প্রত্যয়ী সময় --
চাইলেই হয়ে যায় দেখেছি, হয়!

হতে পারে আমাদের প্রাচীন শিকলে জুটেছে আরও বেশি শ্যাওলা চতুর, বিকল্প মরীচিকা;

আমরা যারা গান বাঁধি গিটারের তারে,
আমরা যারা নির্ঘুম রাত কাটাই
মোক্ষম একটি কবিতার লাইনের খোঁজে,
আমরা যারা নিখুঁত তুলির এক টানে
প্রতিমার চোখ আঁকি বোধনের রাতে,

আমরা যারা সঁপে দেই দিনান্তের ঘরে ফেরা
টলমল পায়ের শিশুর বাড়ানো দুই হাতে,
আমরা যারা মাথা নোয়াই
অশীতিপর জননীর আশীর্বাদ কাঁপা করতলে,
আমরা যারা ভালবাসা খুঁজি
প্রেয়সীর প্রগাঢ় চুম্বনে,

আমরা যারা আকুল প্রার্থনায় -
হাঁটু ভাঁজ করি