চশমাপড়া 'সিংঘ'টি, তার বেজায়রকম রাগ,
মেজাজখানি খিঁচড়ে গেলেই ডাইরিতে দেন দাগ,
নখ কেটেছেন, তাইতে কলম, ঝড় বয়ে যায় হাতে,
সকাল সকাল, ভরদুপুরে কিংবা গভীর রাতে!
'সিংঘ'টি বেশ গান শুনিয়ে, কানের ফুটোয় গুঁজে,
গান ভেজে যান গুনগুনিয়ে চক্ষুদুটি বুজে!
সিনেমাখোর গভীর রাতে আয়েশ করে শুয়ে,
দিব্যি গেলেন চলচ্ছবি আর বাকিসব থুয়ে!
ইচ্ছে হলে 'সিংঘ' গিয়ে চুলোয় আগুন জ্বালেন,
নখর দিয়ে ডেকচি ধরে তাইতে পানি ঢালেন,
দুগ্ধ মেশান আর চা/কফি, শুধান এসে কাছে,
"চিনির কিছু কম হল? না এক্কেরে ঠিক আছে!"
বর্ষকালের দিনটা একটু বড়ই হয়। বিশেষ করে যে দিন বিকেল নাগাদ একটা ঝুম বৃষ্টি হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টার ঝরঝরানি। আকাশ কালো করা মেঘ বিকেল না পেরুতেই রাত নামিয়ে দেয়। ঘড়ি ধরে গৃহস্থের দিন চলে না। বরং আকাশের গায়ে শম্বুকগতিতে গড়িয়ে চলা সূর্যের রকমফের বুঝিয়ে দেয় কখন কী করতে হবে। তবে বর্ষার দিনে তেমনটা হবার জো নেই। একটানা বৃষ্টি হলে যদিও ঘড়ি দেখে বেলা আন্দাজ করে নিতে হয়। কিন্তু যখন ‘খেকশিয়ালের বিয়ে’ টাইপের বৃষ্টি হয় তখন সময়ের মর্জি বোঝা বড় দায়। মুষল ধারের বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় হয়তো গৃহিনীরা রাতের ভাত চড়িয়ে বসে আছে, গৃহকর্তার মুখে হাসি, যাক বাঁচা গেল, আজ আর বাজারে বেরুনো যাবে না, জন-মায়েন্দারের পাওনাটা অন্তত আরো একদিন টেনে নিতে পারবে, পাওনাদার মুনিষ-চাষাদের চোখে যখন অন্ধকার ঘিরে ধরেছে, আজ রাতেও উপোষ থাকতে হবে, হাঁস-মুরগী আর গৃহপালিত পশুগুলো যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘরে ওঠার, তখনই হয়তো গৃহস্থের হাসি মুখে ঝামা ঘষে, চাষা-ভূসাদের অবয়ব উজ্জ্বল করে শেষ বিকেলের সোনারোদ ছড়িয়ে পড়ে ভেজা উঠনে, বৃষ্টিধোয়া মাঠের বুকে, ভূখা চাষিদের ভাঙা চালের ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলিয়ে। শিমুল তুলোর মতো বাতাসে উড়ে বেড়ানো ছেঁড়া ছেঁড়া শুভ্র কিছু মেঘ ছাড়া গোটা মহাকাশে নীলের হরষ। জন-মায়েন্দাররা বেরিয়ে পড়ে পাওনা আদায়ে, গৃহস্থ কাঁথার তলায় দেহটা সেধিয়ে জর-সর্দির দোহায় দিয়ে হাট কামাইয়ের অজুহাত খোঁজে, গৃহপালিতারা ছুটে বেরিয়ে পড়ে অলিতে গলিতে।
পেটের মধ্যে বিকট সাইজের জ্ঞান থাকলে তাকে বলে বিজ্ঞানী। বুঝলেন আমার জ্ঞানের কথাটা?
[justify]
ইউরোপা অপহরণ
১।
আজকের দিনটা বড্ড মনখারাপের। বাংলা দিনপঞ্জির দিকে তাকালে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে থাকে মনখারাপ করা একটি তারিখ- বাইশে শ্রাবণ। রবি বুড়ো যতই বলে যান না কেন- “তখন কে বলে গো, সেই প্রভাতে নেই আমি”, এই দিনে বুড়োর ছবির দিকে তাকালে আনমনে ঠিকই সুর বেজে ওঠে- “তুমি কি কেবলই ছবি? শুধু পটে লিখা!” যাকগে, বাংলা তারিখ দেখে উদাস মনে বুড়োর পাঁচালি গাইতে আসিনি। মন খারাপ হয়েছিল আসলে ইংরেজি ক্যালেন্ডার দেখে- যেখানে ধুলো আর ছাইয়ের পটভূমিতে জ্বলছে- ছয় আগস্ট। ১৯৪৫ সালের এই দিনটিতেই “এনোলা গে” বিমানের চালক আলতো করে ছেড়ে দিয়েছিলেন “ছোট্ট খোকা”। সৃষ্টি হয়েছিল গত শতাব্দীর ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়ের, যার অংশীদার রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত।
‘ওই দেখ না
ছন্দ-মিলের আনাগোনা-
পথের উপর নাচল কি-হে একটা চড়াই?’
“চড়ুই কোথা, একটা ময়ূর, রূপের বড়াই,
টিপ দিয়েছে টিয়ে!”
‘বল কী এ!’
“বাউণ্ডুলে ফিঙেটাকে-ও যাচ্ছে দেখা
একলাটি সে একলা একা
যাচ্ছে হেঁটে, খঞ্জনা তার পিছু পিছু--”
‘বল কী হে- এতকিছু!’
“বলছি শোনো তবে-
খুব তাকালে দেখতে পাবে
ঘুঙুর বেঁধে নাচছে ভীষণ মুনিয়া’টি;
দাঁত দু’পাটি
খুলে রেখে নাইতে গেছেন হাঁড়িচাচা,
জিউস যখন স্বর্গের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে, সব দেবতাদের রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছিলেন, সেই সময়ে পৃথিবীতে একজন মানুষ বাস করতেন, যার নাম ছিলো ডিওক্যালিয়ন। ডিওক্যালিয়ন ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তার বাবা ছিলেন অসাধারণ একজন!
কুষ্টিয়া জেলায় মানুষজন এর কথ্য ভাষা বেশ নরম। পাশাপাশি চলতে থাকা দুই রিকশায় খানিক ঠোকাঠুকির পর এক রিকশার চালক অন্যজনকে বলছে, ওগো, বেল দিচ্ছি শুনছো না যে?
একই ঘটনা বরিশালে ঘটলে আলাপচারিতার ধরন পালটে গিয়ে হত অনেকটা এরকম, হালার পো হালা, লেওড়াডা কি চোহে দিয়া রিশকা চালাও?
আমাদের ছোটবেলায় একটা দৃশ্য খুব সাধারণ ছিল। রাস্তা দিয়ে ফেরিঅলা হেঁটে যেত রকমারী বিচিত্র হাঁক দিতে, দিতে। বাংলা সাহিত্যে নানা লেখায় এই ফেরীঅলারা অমর হয়ে আছেন। অচেনা, অজানারা ক্ষতি করে রেখে যাবে - এমন আশংকায় জীবন কাটাতেন না আমাদের মা-ঠাকুমারা। এত হরেক কিসিমের ভয়ে ভয়ে বাঁচার জীবন ছিল না তখন!
এসব হালকা রোমান্টিকতায় বুড়োদের কোনো কাজ নেই।
…