হাসতে নাকি জানেনা কেউ-১৫

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৪/২০১০ - ৩:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
এক হাড়-কিপটের গল্প শোনাই। একবার হাট থেকে সেই কিপটে লোকটা একশ টাকা দিয়ে একটি পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে আসল। সেই পাঞ্জাবি পরে সে বড় বড় দাওয়াতে যায়, আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যায়, ব্যাবসার কাজে গঞ্জে যায়। এভাবে দুই তিন বছর পরতে পরতে পাঞ্জাবির হাতা গেল ছিঁড়ে। লোকটি অগত্যা সেই পাঞ্জাবির হাতা কেটে ওটাকে মোটামুটি ফতুয়া বানিয়ে ফেলল। ফতুয়া বছর খানিক পড়ার পরে সেটার অবস্থাও যখন শোচনীয় হলো তখন কিপটে লোকটি ওটাকে কেটে ছেঁটে স্যান্ডো গেঞ্জির মত বানিয়ে নিল। সেই স্যান্ডো আরো কয়েক মাস পড়ার পরে যখন ছিঁড়ে গেল সেটাকে কেটে একটা রুমাল বানালো। চলল আরো কয়েক মাস। রুমালটিও যখন আর ব্যবহার করার উপায় থাকলনা তখন সেটাকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে সেই কয়লা দিয়ে দাঁত মেজে কুলি করে নদীর জলে মুখ ধুয়ার পড়ে আক্ষেপ করে বলল,

'ইস্‌ আমার একশটা টাকাই জলে গেল'

২.

কী? হাসি আসছেনা? ঠিক আছে তাহলে আরেকটা কৌতুক শোনাই, একটু সুড়সুড়ানি আছে এতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহপাঠীর মধ্যে ভাল বন্ধুত্ত্ব। এর মধ্যে একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। মেয়েটি একটু পাগলা কিসিমের, রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকেনা, উল্টা পাল্টা কথা বার্তা বলে। তো একবার ছেলেটির কি একটা কথায় মেয়েটি বলে উঠে,

'তোর চোখ গালিয়ে দিব।'

ছেলেটি মেয়েটিকে আরেকটু ক্ষ্যাপানোর জন্য মিটিমিটি হাসতে থাকে। মেয়েটির পরের ঝাড়ি,

'তোর নাক ফাটিয়ে দিব।'

ছেলেটি এবারো নির্বাক, শুধু চোখে মিটিমিটি হাসি।

'তোর গলা চেপে ধরব।'

ছেলেটি আগের মতই থাকে।

'তোর ভুঁড়ি গালিয়ে দিব।'

এইবারে ছেলেটি মুখ খুলে,

' দোহাই তোর, ভুঁড়ি পর্যন্তই থাক, আর নিচে নামিসনা !!'

৩.

কী? এবারো হাসতে পারলেননা নাকি? ঠিক আছে আমি থেমে যাচ্ছি, কিন্তু যাবার আগে একটি খবর শুনে যান। খবরটি বিস্তারিত জানতে পারবেন এইখান থেকে

"দুদকের ক্ষমতা খর্বঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দুদক আইন, ২০০৪ অনুমোদন করেছে সরকার। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।"

২০০৯ এর এপ্রিলে দুদকের হাসান মশহুদ চৌধুরীর চাপের মুখে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ ছিল সবে নবযৌবন পাওয়া দুদকের উপর প্রথম আঘাত। এর পরে গত অক্টোবরে (২০০৯) দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দুদককে দন্তহীন বাঘের সাথে তুলনা করে বলেছিলেন এর শুধুমাত্র থাবাটিই অবশিষ্ট আছে। তিনি আশঙ্কা করছিলেন যেভাবে দুদককে নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে তাতে অচিরেই এর নখগুলিও কেটে ফেলা হবে যাতে এর থাবাটিও অকার্যকর হয়ে যায়। অবশেষে তাই হলো দুদকের উপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন আসল, স্বাধীন দূর্নীতি দমন কমিশন সত্যিকারের কাগুজে বাঘে পরিণত হলো। অপেক্ষায় আছি সামনে আরো কী হয় তা দেখার।

শুধু একটা অনুরোধ করি, দুদককে কয়লা বানিয়ে কুলি করে নদীর জলে ফেলে দেবার আগেই নিস্তার দিন, দয়া করে আর নিচে নামায়েননা।


***************************************************

এই সিরিজের আগের লেখাগুলিঃ

১৪১৩১২১১১০০৯০৮০৭০৬০৫০৪০৩০২০১


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি ভাবছিলাম আপনি এইটা নিয়ে লিখবেন। খবরটা পড়ার পরই আপনার কথা ভেবেছিলাম।

সচল জাহিদ এর ছবি

বস ঐডাও চোখে পড়ছে, দুইটাই এক কাহিনীর ধারাবাহিক খবর বলে শুধু এইটার লিঙ্কই দিয়েছি।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই সরকার দেশবাসিকে হাসাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আপনিও এইদফায় পারলেন না। নামবদল, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এগুলো তো সব পুরোনো আমলের জোক। পাবলিক আর খায়না। উই আর লুকিং ফর শত্রুজ কিংবা আল্লার মাল ধরণের ইনোভেটিভ কিংবা আইরনিক জোক না শুনালে পাবলিক আর সরকারকে রি-একশান দেখাবেনা, খালি চেয়ে চেয়ে দেখবে।

নহক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আজকে দেখলাম জিয়া সার কারখানার নাম বদলিয়ে ফেলেছে। সরকারের কাছে এগুলোই মনে হয় প্রায়োরিটি।

সচল জাহিদ এর ছবি

মন্তব্যে উত্তম জাঝা!

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

জাঝা! লুল।

এবার হাসাইতে পারছেন। খাইছে

নাশতারান এর ছবি

হাসতে পারলাম না। আইনের নামে এই রং-তামাশা আর কত? সাফ সাফ বলে দিলেই হয় তারা আরামসে দুর্নীতি করতে চান। আমরা তো জানিই।

|| শব্দালাপ ||

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সচল জাহিদ এর ছবি

হাসি আসলেই আসেনা। বানানের জন্য ধন্যবাদ বুনোহাঁস।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নৈষাদ এর ছবি

বাংলা একাডেমীর অভিধানে দুর্নীতি শব্দটাই হয়ত আলাদা করে দরকার হবে না ভবিষ্যতে...।

সচল জাহিদ এর ছবি

খারাপ লাগে এটা ভেবে যে এরা দুর্নীতি আয়েশে করার জন্য আইন করে পথ পরিষ্কার করছে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

লীন এর ছবি

হুম, আর হাসি পায় না... মন খারাপ

______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

সচল জাহিদ এর ছবি

সহমত।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এত টাকা খরচা কইরা নির্বাচনে গেছে এমপিরা। ৫ বছরেই তো উসুল করতে হইবো তাই না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

হ পরের পাঁচ বছর যদি বইসা থাকতে হয় সেই ব্যবস্থাত আগে ভাগেই করতে হবে তাই না !!

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দুর্দান্ত এর ছবি

একই সাথে বিদ্যুত খাতে পিপিআর ও পিপিএ রহিত করা হয়েছে। গত সপ্তাতেই বিনা টেন্ডারে ১২ হাজার কোটি টাকার কাজ দিয়ে দেয়া হয়েছে মোটামুটি যাকে ইচ্ছা তাকে ভিত্তিতে। তাও ২০০১ এর প্রায় ৪গুন বেশী দামধরে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে বড় প্রকল্পের খরচ নিম্নগামী নয়তো সমতলে, সেখানে আমরা দিচ্ছি ৪গুন বেশী দাম, তাও আবার টার্ন কি ভিত্তিতে।
দুদকের থাবায় নখ থাকলে তো সমস্যা রে ভাই।
আপনারা বড়ই বেরসিক।

সচল জাহিদ এর ছবি

সত্যই আমরা বেরসিক। আমার দুই দুইডা কৌতুক জলে গেল!!

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সচল জাহিদ এর ছবি

সেইডাই, আমরা আবার ফরথম হইতাম ছাই ।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।