= স্লামালাইকুম স্যার, ডেকেছিলেন?
= ওয়াইলাইকুম, ওয়াইলাইকুম আবির সাহেব, বসুন, বসুন।
= জ্বি স্যার।
= এই যে এইটা আপনার।
= কি স্যার?
= কি মানে? আপনার পথের দিশা, উন্নতির সোপান! I mean, আপনার এ্যানুয়াল টার্গেট! হেঃ হেঃ। মেইলে soft copy পাঠিয়ে দেয়েছি। গতবারের মত এবারো আপনার কাছে 100% এর বেশী achievement চাই। বুঝতে পেরেছেন?
= বুচ্ছি স্যার।
দেশ ও বৈদেশের হালহকিকত দেখি আর মনে খালি ‘বুরিদানের গাধা’র ছবি ভাসে। রকমারি ঘটনায় ঠাসা ইতিহাসের পাতায় ফরাসি যুগচিন্তক বুরিদান সাহেবের গাধাটিও নিজের জায়গা করে নিয়েছে। সে যাকগে, গাধার সঙ্গে ফরাসি সাহেবের সংযুক্তি কেমন করে ঘটলো সে প্রসঙ্গে যাবার আগে ছোট করে মূল গল্পটি বলে ফেলা যাক। গাধা নিয়ে গল্পগাছার অভাব নেই মানবসংসারে। গাধা-কাহিনীর বড়ো অংশ হাস্যরসের যোগান দেয়। নিজের গাধাটিকে নিয়ে তুরস্ক দেশের মোল্লা নাসিরউদ্দিনের সরস গল্পগাছা এখনো লোকের চিত্তবিনোদন ঘটায়। তামাশাভরা মানবজীবন নিয়ে এই স্বভাব-দার্শনিকের রঙ্গ ও সেটি উদযাপনের ভঙ্গি সেকালের মতো একালেও সমানে প্রাসঙ্গিক। মহামতি শেকসপিয়ার বলে গেছেন জীবনের নাট্যমঞ্চে মানুষ হলো অভিনেতা। মোল্লা নাসিরউদ্দিনের বোকামিঠাসা বুদ্ধিরসের ছটা সেইসঙ্গে মনে করিয়ে দেয় দুঃখ-সুখে ভরা অভিনয়মঞ্চে মানুষ আসলে নিজেকে নিয়ে হাসে ও অন্যকে হাসিয়ে মারে। বুরিদান সাহেবের গাধার গল্পটি সেদিক থেকে গুরুতর হলেও কৌতুকরস সেখানেও ঠিকরে পড়ে, যদিও সাহেবকে সেটা কৌতুকরসে না ভাসিয়ে গুরুতর এক দার্শনিক কূটপ্রশ্নের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দার্শনিকরা ভাবনা ও কথার কারবারি এবং লোকের তাতে থোড়াই কেয়ার। জগতের আমজনতার কাছে গাধা হচ্ছে চিরকালের কিংবদন্তি যার কাঁধে জীবনের কঠিন বোঝা অক্লেশে চাপানো যায় এবং গাধা সেই ভার বহনে দ্বিধা করে না।
রাজিব মাহমুদ
সৌম্য ঘুম থেকে ওঠে অনেক বেলা করে। বাইরে একেবারে ডাঁ ডাঁ রোদ। রাতে ভাষাপোকার সাথে কথোপকথনের ব্যাপারটা মনে পড়ায় নিজে নিজে হেসে নেয় কিছুক্ষণ। নিজেই বলে যে এই ক্রমাগত রাত জাগা ওর মগজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে; ওর ভালো ঘুম দরকার না হলে এরকম আরও কত অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার মাথায় চেপে বসবে কে জানে! আজ শনিবার। অফিস ছুটি।
ইদানীং ঘুম ভাঙলে অয়ন খুব আগ্রহ নিয়ে ঘরের সিলিং আর পর্দার ফাঁক গলে আলো আসা খোলা বারান্দার দিকে লোভাতুর হয়ে তাকিয়ে থাকে। খুব আপন মনে হয় সিলিংটাকে। যে ভীষণ যন্ত্রণা আর অস্থিরতায় তখন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সে, তাতে মনে হয় ঐ সিলিঙের বন্ধনে ঝুলে পড়ে আয়েশে দুলতে থাকলে একটু শান্তি মিলবে। কিংবা উঁচু বারান্দা থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় যে ক্ষণিকের মুক্তি মিলবে চিরমুক্তির আগে সেটাই বা কম কী!
ভাষাপোকা (১ম পর্ব)
রাজিব মাহমুদ
পর্ব = ৭
(পূর্ববর্তী পর্বের লিঙ্ক গল্পের শেষে)
ওরা লম্বা একটা তারের টুকরো ভেঙ্গে নিয়ে এক কোনায় লুকিয়ে রাখলো। সূখোভ কয়েকটা তক্তা পেরেক ঠুকে জুড়ে দিয়ে একটা মই বানিয়ে গপচিককে পাঠালো স্টোভের পাইপটা ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য। ছোকড়াটা একেবারে কাঠবেড়ালির মত চটপটে, তরতর করে খাম্বা বেয়ে উঠে দু-একটা পেরেক ঠুকে তার মধ্যে তার জড়িয়ে সেটা পাইপের তলা দিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নিল। সে নিজ থেকেই পাইপটার প্রান্তের কাছটায় আবার বেঁকিয়ে দিলো, ছেলেটার উৎসাহ দেখে সূখোভ আর কিছু বললো না। আজকের বাতাসের গতি খুব বেশী না হলেও কাল যে হবে না সেটাতো আর বলা যায় না, আর এই বাঁকানোটা ধোঁয়া বেরুনো রোধ করবে। ভুলে যাওয়া যাবে না যে স্টোভটা সারানো হচ্ছে ওদের সবার নিজেদের স্বার্থেই।
হরিপূর্ণ ত্রিপুরা
আতিক খুব মনোযোগ দিয়ে তার মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের মানিব্যাগ এতক্ষণ ধরে দেখার কিছু নেই, রেক্সিনের সস্তা মানিব্যাগ, জায়গায় জায়গায় রঙ চটে গেছে, ভেতরেও তেমন কিছু নেই যা এভাবে একদৃষ্টিতে দেখতে হবে। আসলে আতিক কিছুই দেখছিল না, তার ভ্রূ কুঁচকে আছে আর নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরা। যখন খুব চিন্তায় থাকে তখন ঠোঁট কামড়ে ধরা আতিকের অভ্যাস। মানিব্যাগে সব মিলিয়ে বত্রিশ টাকা আছে। তিনটা দশ টাকার নোট, একটা দুই টাক
১৯২৯ সালের এপ্রিল মাসের এক সন্ধ্যা। প্যারিসের আরসুলিন স্টুডিওর চারশো আসনের প্রেক্ষাগৃহ সেদিন কানায় কানায় পূর্ণ! আলো নিভে যেতে দর্শকরা এমন এক অনুভূতির মুখোমুখি হলেন যা এযাবৎ ছিল অনাস্বাদিত।
"একদা...
একটা ব্যালকনি। রাত। একটা লোক ব্যালকনির ধারে দাঁড়িয়ে ক্ষু্রে শান দিচ্ছে।
লোকটা জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল।