ছেলেটি ছিলো চাবুক, মেয়েটি মেঘ। ছেলেটির চোখে জ্বলতো মস্কো থেকে হাভানা, মেয়েটি বেলতো ফুলকো লুচি। ছেলেটি শ্লোগানে কাঁপাতো জারুল-শিরীষ-হাবিলদার-বর্ষায়টানারিকশারপর্দা, মেয়েটি খন্দকার ফারুক আহমেদের কণ্ঠের সন্ধানে রেডিওর নব ঘোরাতো আলগোছে। ছেলেটি আউরেলিয়ানো বুয়েনদিয়ার স্পর্ধা আড়চোখে নিয়ে চাইতো মেয়েটির দিকে, মেয়েটি সরল চোখ তুলে বলতো, পিষে ফ্যালো মনজুরুল।
এমনই কোনো এক শীতের রাতে শহীদুল জহির চলে গিয়েছিলেন। আমি দেখি এই হাওয়া-বাতাসের রাতে আচমকা আজ জহির ঢুকে পড়েছেন আমার বেডরুমে। শোনাচ্ছেন এক আশ্চর্য শৃগালের কথা। কোনো-কোনো পূর্ণিমার রাতে সেই চতুর শৃগাল কেমন করে তাঁর লেখায় শব্দ জুড়ে দিয়ে যেত! কিংবা তাঁর স্বপ্নের ভেতর আটকা পড়া মানুষগুলো, যারা অতীত থেকে ভবিষ্যতে, ভবিষ্যত থেকে অতীতের দিকে তেড়ে যেতে-যেতে যে বিভ্রম তৈরী করতো সেসব কথা।
এপ্রিলের দুই তারিখে আমার পুত্রের জন্ম। আর সেই এপ্রিলের তিন তারিখে মেজোমামা চলে গেলেন। যেই কথাগুলো তাঁকে বলা দরকার ছিল, তা আর কোনদিন বলা হল না।
১০ জানুয়ারি, ১৯৭২। প্রিয়ংকা গান্ধি অপেক্ষা করছে। তখনও তার নাম প্রিয়ংকা হয় নি। সে যে কে, তা তখনও কেউ জানে না। এমনকী তার মা সোনিয়া গান্ধিও। তিনি শুধু অস্তিত্বের মধ্যে টের পাচ্ছেন কেউ আছে। বড় হচ্ছে। আর এখন তার সময় হয়েছে।
আমার তখন দশ বছর বয়স। গ্রীষ্মকাল- স্কুল বন্ধ, বন্ধুরা সব যে যার দেশের বাড়ি। দুপুর বেলায় খা খা করে আমাদের পাড়া। আমি তিন নম্বর সাইজের একটা ফুটবল নিয়ে গলির ভেতর একা একা ঘুরে বেড়াই, লাথি মেরে পাঠিয়ে দেই গলির মাথায়, তারপর দৌড়ে গিয়ে আবার উল্টো লাথি। একা একা আর কত খেলা যায়!
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিককার ঢাকা শহরের এক বৃষ্টিস্নাত সকাল ৷ আমি বসে আসি রাস্তার পাশের এক খুপড়ি চায়ের দোকানে ৷ কিন্তু চায়ের দোকানে চা ও সিগারেটের তেষ্টা মেটাবো এরকম উদেশ্যে আমার বসা নয় ৷ আসল কারণ হচ্ছে নিজেকে একটু ভদ্রস্থ করার চেষ্টা ৷ দোকান হতে টিস্যু পেপার কিনে তা একটু পানিতে ভিজিয়ে তাই আমার কাদা মাখা জুতা জোড়া পরিষ্কার করার কাজে লেগে গেলাম ৷ টিস্যু প্যাকেটটা প্রায় শেষ হয়ে আসছে তবু
[justify]
জানুয়ারি, ১৯১৩ সাল
ভুসুকপাদের লজ্জা
চর্যাপদের কবি ভুসুকপাদ। এখনো যেমন কেউ কবিতা-টবিতা তেমন একটা কিনে পড়ে না, বারোশো বছর আগেও কেউ কিনে পড়তো না। পেটের দায়ে তাই ভুসুকপাদকে পাড়ি দিতে হয় দূর-দূরান্তে, পিছনে রেখে যেতে হয় বউকে। ফিরে এসে ভুসুকপাদ দেখতে পান তাঁর বউ আর তাঁর নেই, অবস্থাসম্পন্ন কোন চণ্ডালের হাত ধরে সে চলে গেছে। অনেক লজ্জা আর খেদ নিয়ে ভুসুক লিখেন,
আজি ভুসুক বঙ্গালী ভইলি
নিঅ ঘরিণী চণ্ডালে লেলি
পাঁচ
রন্টু ভাইকে অনি যত দেখে তত ভালো লাগে। রন্টু ভাইয়ের গিটারটা আরো বেশি ভালো লাগে। অনির ভালোলাগা আর আগ্রহের দৃষ্টি পরিমাপ করে রন্টু অনিকে ডাক দেয়,
-অতো দূরে বসেছিস কেন? কাছে আয়। ধরবি গিটার? তোকে তো বলেছি ধীরে ধীরে সব শিখিয়ে দিবো। সপ্তাহে একদিন সময় ম্যানেজ করে চলে আসলেই হবে।
মর্মর পাথরের মূর্তিটা অনেকদিন ছিল আমাদের শহরে। খুব বড়সড় কোন ভাস্কর্য নয়, একটা আবক্ষ মূর্তি। পথের ধারের এই মূর্তিটা রাজশাহী শহরে আসা যে কারো চোখে পড়েই যেত, কেননা এটা রাখা ছিল একেবারে রাজশাহীর হৃৎকেন্দ্র অর্থাৎ সাহেববাজারের ঠিক মোড়ের উপর।রাজশাহী শহরের নানা ভাঙ্গা গড়া, নানা পরিবর্তনের মধ্যে মূর্তিটা অনেক সময়ই বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সব সময়ই মূর্তিটা ছিল সোনাদীঘির মোড়ের উপরেই। আমা