এক: মর্মান্তিক এক ফিকশন যেন
১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ : রাত ২.৪৫মিনিট - ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
ডিজিএফআই(প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা) প্রধান ব্রিগেডিয়ার রউফের কাছে একটা বিশেষ খবর নিয়ে এলেন ডিএমআই(সেনা গোয়েন্দা) প্রধান কর্নেল সালাহউদ্দিন।
খবরটা খুব খারাপ। আজ ভোরে মারাত্মক কিছু একটা হতে যাচ্ছে দেশে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রাকে ট্রাকে সৈন্য আর আর্টিলারী ট্যাংক বহর বেরিয়ে গেছে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর প্রেসিডেন্টের বাড়ির দিকে। ভয়ংকর ব্যাপার। খবরটা সেনাপ্রধানকে জানানো উচিত।
ঘর থেকে বের হয়ে আক্ষরিক অর্থেই দু’গলি পার হয়ে বাস স্টপের সামনে দাঁড়াতে প্রথমেই মনে হল নিশ্চয়ই বড়সড় কোন পুণ্য করে বেরিয়েছি। কিন্তু নিজেকে যতটুকু জানি, তাতে গত দু-চার বছরে তেমন কোন পূণ্য টুণ্য করার কথা না যাতে বাস স্টপেজে এসে দাঁড়াতেই দুজন সুন্দরী সামারিক (সামরিক নয়) পোষাক পরিহিত মেয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বলবে, “মে আই ঠক ঠু ইউ স্যার?”। পাঁচ ফিটের চেয়ে সামান্য বেশি উচ্চতা আর একশ ছুঁই ছুঁই ওজন নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম আর ফ্রেশ সাবান ব্যবহার করার পরেও, নিজের ব্যপারে যথেষ্ট উচ্চধারণা পোষন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা স্বত্ত্বেও নিজেকে ‘স্যার’ পর্যায়ে নিজেই কখনও উন্নীত করতে পারিনি, সেখানে মেঘ না চাইতেই জল তো বটেই একেবারে জমাট আইস্ক্রীমের মত দু’জন এসে কিনা বলছে, “মে আই ঠক ঠু ইউ স্যার, ফর আ সেকেন্ড?”
ইসরাইল-ফিলিস্তিন খুনোখুনি চলছিলো কিছুদিন আগেই, এখনো চলছে। তবে, এখন কেন জানি সব ঝিমিয়ে গেছে, হ্যাশট্যাগ দেখি না, স্ট্যাটাস দেখি না, কান্নাকাটিও চোখে পরে না। আমি ফেসবুক দেখে মানুষের আবেগটা যদি বোঝার চেষ্টা করি, তবে যা যা পাবোঃ
১। হ্যাশট্যাগ
২। স্ট্যাটাস
৩। বাংলার বুকে ফিলিস্তিনি ভাইদের নিয়ে আসার জন্যে কান্না (সাথে রোহিঙ্গাদের কেন ঢুকতে দেইনা, চিপায় বলে নেয়া)
৪। যুদ্ধে যাবো, জিহাদি হবো (এইটা ফেবুতে বেশি, কাজে কম)
৫। কিভাবে সাহায্য করা যায়, সে উপায় বের করা ইত্যাদি ইত্যাদি
আমি পঞ্চম ব্যাপারটি নিয়ে আগ্রহী, কারণ ওটি সবচেয়ে কার্যকরী হতো এবং কোনভাবে কি সম্ভব?
...
তখনো কি জানতাম-
একজোড়া ঠোঁট মানে একরাশ নিঃসঙ্গতা শুধু !
১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারীর রাত। তুর্কি বিমান সংস্থা বার্গেন এয়ারের অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৫৭ সিরিজের যাত্রীবাহী বিমানটি (ফ্লাইট ৩০১) ডোমিনিকান রিপাবলিকের রাজধানী পুয়ের্তো প্লাটো থেকে জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিল। যাত্রীদের প্রায় সবাই জার্মান পর্যটক যারা ক্যারিবীয় দ্বীপ-দেশটিতে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন।
[justify]প্লেনের ছোট্ট জানালা গলে আসা রোদের ছটায় ঘুম ভেঙ্গে গেছে কিছুক্ষণ আগেই।এয়ারক্রুরা ট্রলিতে খাবার নিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট দিতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে।এলোমেলো ভাবে ঘুমানোতে ঘাড়, হাত পা কেমন যেন ধরে এসেছে, ঘুম ভেঙ্গে ভিভিয়ানের কথা মনে হতেই মন খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা এখন নিশ্চয় ফ্রাঙ্কফুর্টের ফ্লাইটে, একা একা না জানি কি করছে। যাচ্ছি আবুধাবি থেকে জার্মানির ডাশেলডর্ফ। এত লম্বা প্লেন জার্নি এর আগে করেছি বলে মনে পড়েনা, সব মিলিয়ে সাড়ে একত্রিশ ঘণ্টা। সস্তায় টিকেট কাটতে গিয়ে, সিঙ্গাপুর থেকে আবুধাবি আর ডাশেলডোর্ফ হয়ে নিউ ইউর্ক যেতে হচ্ছে। সীমার জন্য এই প্রথম এত বড় জার্নি, এশিয়া থেকে ইউরোপের উপর দিয়ে আমেরিকা মহাদেশের দিকে যাওয়া। একটু টেনশন লাগছিল টিকেট কেটে ফেলার পর, তবে ওর স্ট্যামিনা বেশ ভালো, সমস্যা হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলাম।
দেখতে দেখতে লোকজনে ঘর ভরে উঠতে লাগলো, গোল করে পাকানো ডায়াগ্রামের তাড়া নিয়ে সেমিনার দিতে আসা ছাত্রছাত্রীরা, সঙ্গে তাদের গাইড শিক্ষকরা বা শিক্ষিকারা, তাছাড়া এমনি দর্শক, শ্রোতা, ছাত্রছাত্রীরাও আসছে। জাজেরাও শোনা গেল এসে গিয়েছেন, তবে তাঁরা তখন অন্য ঘরে বিশ্রাম করছেন আর টিফিন খাচ্ছেন।
অন্বেষার মুখ আরো খানিক ভয়-ভয় হয়ে গিয়েছে, আমি কিছু জোকস বলে খানিকটা হাসি হাসি করে দিলাম ওকে।
আমি এখন বড় হয়েছি, বেড়ে উঠেছি,
জ্ঞান বুদ্ধি পাকা হয়েছে, এইতো বেশ করে খাচ্ছি,
আমি এখন অনেক কিছু বুঝতে পারি, মা।
জানো? আমি অনেক অনেক বই পড়েছি, গান শুনেছি।
তোমার কথা এখন আমার খুব বেশি আর মনে পড়ে না।
আমার এখন অনেক কিছু করার আছে, বুঝবে না মা।
অনেক কিছু বুঝছি বলেই, জানছি বলেই,
বিশ্ব এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তাঁদের কথা ভাবতে হবে।
তুমি এসব বুঝবে না, মা।
-এইডা কেমায় সম্ভব, আমার মাথায় খ্যালে না, বাবা!
বৃদ্ধ মাথা নাড়াতে থাকে, ক্রম-পুঞ্জিভূত বিস্ময়ের ভার সইতে না পেরে কেমন বিহ্বল দেখায় তাকে! আশ্চর্য, এই বয়সেও শিশুর মত করে বিস্মিত হতে পারে সে!
পাশেই বসা কুড়িতে পড়া ছেলের বউ এদিকে হাসতে হাসতে শ্যাষ! কত ঢং যে জানে বুইড়া তার বুইড়া হয়ুরে!