গুটেনবার্গ থেকে শাইলক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৪/২০১০ - ১০:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


প্রকাশনাশিল্পের জনক হিসেবে সুবিদিত ইয়োহানেস গুটেনবার্গের নাম সবাই জানেন। তাঁর কল্যাণে পঞ্চবিংশ শতাব্দিতে মুদ্রণশিল্পে বৈপ্লবিক উন্নতি আসে, শুরু হয় ছাপাখানার যাত্রা। গুটেনবার্গ অগ্রপথিক ছিলেন, পরহিতৈষী নয়। তাঁর কাছ থেকে এমনতর প্রত্যাশাও ছিলো না কারও। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি নিজের উদ্ভাবনকে ব্যবসায়িক ভাবে প্রয়োগের প্রয়াস পেয়েছেন, এবং সে কারণে তাঁকে কেউ কটাক্ষ করে না। তাঁর ব্যবসার জন্য যা মঙ্গল, সর্বসাধারণের জন্যও তা মঙ্গল ছিলো। বাংলা প্রকাশনাজগতে মোস্তফা জব্বার ও বিজয় নিয়েও একই কথা বলা যায়।

কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার প্রণয়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর আগে-পরে অনেকেই বাংলা কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু তাঁর মাপের সাফল্য তেমন কেউ অর্জন করতে পারেননি। তিনি মুদ্রণ জগতে বাংলার প্রচলনে ভূমিকা রেখেছেন, বাংলা লে-আউট প্রণয়ন করেছেন, বিভিন্ন গ্রাফিক্স সফটওয়্যারে বাংলা ব্যবহার সহজ করেছেন, কম্পিউটার আমদানিকে শুল্কমুক্ত করতে দেনদরবার করেছেন। ছিদ্রান্বেষণ করতে চাইলে অনেক কিছু বলা যায়, কিন্তু তাঁর এই অবদানগুলোর আলোকে তাঁকে কেউ বাংলাদেশের গুটেনবার্গ ডেকে থাকলে তা খুব অন্যায্য আচরণ হবে না। তিনি কত লাইন কোড লিখেছেন কিংবা কোন বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন, তা অবান্তর। তিনি দীর্ঘকাল ধরে বাংলা কম্পিউটিং-এর অন্যতম পুরোধা ব্যাক্তিত্ব ছিলেন, এটাই বিবেচ্য।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এই উচ্চাসন থেকে মোস্তফা জব্বারের পতন হয়েছে। ‘অভ্র বনাম বিজয়’ বিতর্ক অনেক দূর এগিয়েছে এই কদিনে। চোখ-কান খোলা আছে, এমন সবাই জানেন এ কথা। শুরুটা বেশ স্পষ্ট – দৈনিক জনকণ্ঠে মোস্তফা জব্বারের একটি লেখা। তবে ঘটনাপ্রবাহে আজকে দ্বন্দ্বের মূল জায়গাটি অস্পষ্ট হয়ে গেছে কিছুটা, কারণ এই বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ আগুন ধরিয়েছে ছড়িয়ে থাকা অনেক রকম বারুদে। মুদ্রণ জগত বনাম আন্তর্জাল, প্রবীণ বনাম নবীন, ব্যবসায়িক বনাম অলাভজনক উদ্যোগ, ফিক্সড বনাম ফোনেটিক, ইত্যাদি অনেক দ্বন্দ্বের মাঝে মূল বিষয়টি হারিয়ে গেছে। ভিন্ন মত বা পথের সন্ধান দিলেই বার্ধক্যের প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় প্রচলিত প্রতিষ্ঠানাদি তথা হাইকোর্ট দেখানো। প্রবীণ প্রজন্মের সদস্যরা সেই পথে হাঁটছেন, পত্রিকার পাতায় অভ্র টিমের প্রতীক মেহদী হাসান খান পাচ্ছেন “চোর”, “দস্যু” ও “ডাকাত”-এর অভিধা। পক্ষান্তরে, তারুণ্যের সব অনুভূতিই নিরেট, নিখাদ, সমসত্ত্ব। কিছু ক্ষেত্রে এই সমসত্ত্বতা যুক্তি ও বিবেক বিসর্জন দিয়ে আবেগের দেবতার কাছে সমর্পণ করে। এরই ফলশ্রুতিতে আন্তর্জালের প্রতিবাদগুলো এক পর্যায়ে উদ্ভাবনী না হয়ে অমার্জিত হচ্ছে বেশি। ফেসবুক কিংবা পত্রিকার ওয়েব পাতায় কেউ তাঁর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছেন, কেউ তাঁকে বিবিধ প্রাণীর খাবার হিসেবে পরিবেশন করছেন। কিছু ছাগসমাজের-অর্জুন এই সুযোগে নিজেদের বিলুপ্ত সফটওয়্যারকে প্রচলিত করার বাসনায় রটাচ্ছেন যে অভ্র নিকট ভবিষ্যতে আর বিনামূল্য থাকছে না, ইত্যাদি।

এই ডামাডোলে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে যারা পরস্পরের কোনো অবদানই স্বীকার করে না। সে কারণেই আবারও স্পষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন, বিজয় কিংবা লে-আউট নিয়ে নয়, ক্ষোভের কারণ অভ্র ও মেহদীর বিরুদ্ধে একের পর এক পত্রিকায় মোস্তফা জব্বারের আক্রমণাত্মক প্রচারণা।

আক্রমণের ধারা থেকে ধারণা করা যায়, ‘বিজয়’ ব্যবসায়িক ভাবে বিপণ্ন বোধ করছে প্রতিযোগী একটি লে-আউটের কারণে। মোস্তফা জব্বার কারণ দেখাচ্ছেন, অভ্রের কারণে তাঁর ৫ কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থান ইউএনডিপি এর সাথে জড়িত, অভ্র ব্যবহার করার কারণে জেলায় জেলায় কম্পিউটার হ্যাকিং হচ্ছে, ইত্যাদি। শেষ অভিযোগটি মূর্খতার নামান্তর, তাই সেই প্রসঙ্গ থেকে বিরত থাকছি। মূল প্রশ্ন হলো, এত বছর পর আজ কেন মোস্তফা জব্বার এতটা আতংকিত? এর পেছনে মেধাস্বত্ব নয়, আছে ব্যবসায়িক অভিলাষ। কারিগরি কচকচি নয়, এই দিকটি স্পষ্ট করে দেওয়াই এই লেখার প্রতিপাদ্য।

মোস্তফা জব্বার আগ বাড়িয়ে কিছু অভিযোগ এনেছেন অভ্রের নামে। সেখানেই নেটিজেনদের আপত্তি শুরু। অভ্র একটি বিনামূল্য সফটওয়্যার হওয়ায় এর প্রচার অনেক, ব্যবহারবান্ধব হওয়ায় এর অনুরাগী প্রচুর, এবং অভ্রের ডেভেলপাররা অনুকরণীয় মাত্রায় নির্বিরোধ হওয়ায় তাঁদের হয়ে অনেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবাদী হয়েছেন। প্রতিবাদ বাড়তে থাকলে মোস্তফা জব্বার ক্রমে আবেগী কথাবার্তায় সরে আসেন, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য বিষয় তুলে আনেন, ৫ কোটি টাকার কথা বেমালুম চেপে গিয়ে একে “কিছু টাকা” লেখেন। সবশেষে তিনি আসেন আইনি লড়াইয়ের প্রসঙ্গে। এই লড়াইয়ে আইন সম্পূর্ণ তাঁর পক্ষে নয় বলেই তিনি গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেন নাম ধরে মেহদী হাসান খানকে দস্যুবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।

যুক্তি, নীতিমালা, ও আইনের বিচারের জন্য পৃথক পৃথক গোষ্ঠী আছেন। অনলাইনে ছড়িয়ে যাওয়া প্রতিবিজয় দাবানল নেভানোর উপায় একটাই – গণমাধ্যমে মোস্তফা জব্বার তাঁর ভুল স্বীকার করে নেওয়া, বিনা উসকানিতে পুত্রতুল্য বয়সি একটি ছেলে সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। সাময়িক ভাবে চাপা থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে সঞ্চিত ক্ষোভ চলে যাওয়ার নয়। তিনি যেকোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিতে গেলেই এই ক্ষোভ আবার সম্মুখসারিতে চলে আসবে।

পানি যতদূর গড়িয়েছে, তাতে উল্লেখিত পথে কোনো সমাধান আশা করা একটু বেশিই উচ্চাকাঙ্ক্ষা হয়ে যায়। সে কারণেই যৌক্তিক ও আইনি কাঠামোতে অভিযোগগুলোর বিবেচনা প্রাসঙ্গিক।

কপিরাইট-সংরক্ষিত ও প্যাটেন্টকৃত হওয়ায় মোস্তফা জব্বার অভিযোগ করছেন যে তাঁর সফটওয়্যারের “আংশিক বা পূর্ণ” অনুকরণ আইনত নিষিদ্ধ। তিনি আরও দাবি করছেন যে অভ্রে ব্যবহৃত ইউনিবিজয় লে-আউটের সাথে বিজয় লে-আউটের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকায় তা কপিরাইটের লঙ্ঘন। ইউনিবিজয় তৈরির প্রক্রিয়াকে তিনি “চোখে ধুলো দেওয়া” বলেছেন, অভ্রের সাথে এর বাজারজাতকরণকে বলেছেন “পাইরেসি” বা দস্যুতা। অভিযোগনামায় কিছু শব্দ ভুল ভাবে প্রযুক্ত হয়েছে। অভিযোগ ও প্রতিবাদের নির্যাসে যাওয়ার পূর্বে এই ভুলগুলো নিয়ে আলোকপাত প্রয়োজন।

উদাহরণ হিসেবে প্রখ্যাত ফুটবলার ডেভিড বেকহাম এবং তাঁর বাঁকানো ফ্রি-কিক ও ক্রসগুলোর কথা ধরা যাক। বাঁকানো ক্রস একটি ধারণা, যা বাস্তবায়নের জন্য নানান রকম প্রক্রিয়া আছে। অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় বেকহামের প্রক্রিয়াটি উন্নত। তিনি বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে একে “বেন্ড ইট লাইক বেকহাম” নাম দিতে পারেন। এটি তাঁর কপিরাইট, কেউ এই নামটি ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না। আইনের বইগুলো অনেক বিস্তারিত ও বিরক্তিকর হওয়ার একটি মূল কারণ হলো, আইনের ভাষা খুব সংকীর্ণ। এতে কোনো ধরনের অনুভবগ্রাহ্যতা নেই, আছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কিছু সংকীর্ণ সংজ্ঞা। ফলস্বরূপ, অন্য কেউ “বেন্ড ইট লাইক বেকহাম” নামটি ব্যবহার করতে না পারলেও এরূপ নামকরণের ধারণাটি কাজে লাগাতে পারেন নির্বিঘ্নে। এই কারণেই “স্বামী কেন আসামী”র অনুকরণে “বাবা কেন চাকর” নামকরণ করলে তা কপিরাইট লঙ্ঘন হয় না। একই ভাবে “বেন্ড ইট লাইক বেকহাম”-এর অনুকরণে “টুইস্ট ইট লাইক আলফাজ”, “ডক্টর পেপার”-এর অনুকরণে “মিস্টার পিব”, কিংবা “বিজয়”-এর অনুকরণে “ইউনিবিজয়” লিখলে তাতে কপিরাইট লঙ্ঘন হয় না। সমার্থক ও সমোচ্চারিত হাজারো নাম কপিরাইট-সংরক্ষিত করা হলেও লখিন্দরের বাসরের মতো কোনো না কোনো ফাঁক গলে প্রতিযোগী একটি নাম এসে পড়ে। সেই অবস্থায় অনুযোগ না করে প্রতিযোগিতায় মনোনিবেশই বুদ্ধিমানের কাজ।

এবার আসা যাক প্যাটেন্ট প্রসঙ্গে। ধরা যাক বেকহাম তাঁর বাঁকানো ফ্রি-কিক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি বাজারজাত করতে চাইছেন। বাজার মানেই হাজারও ঠগের আস্তানা। নিজের উদ্ভাবনকে বাজারে নিয়ে গেলে তাই চুরির ভয় আছে। এ অবস্থায় উদ্যোক্তার কিছু নিরাপত্তা প্রয়োজন, ঠগদের দূরে রাখার মতো একটি ‘বড় ভাই’ প্রয়োজন। বৃহত্তর স্বার্থে রাষ্ট্র এই সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। উদ্ভাবক তাঁর সৃষ্টির পেছনের রহস্য রাষ্ট্রের কাছে উন্মুক্ত করে দেন, বিনিময়ে রাষ্ট্র ঐ উদ্যোক্তাকে প্যাটেন্টকৃত পণ্য বাজারজাতকরণের পূর্ণ অধিকার দেয়। অতএব, বাঁকানো ফ্রি-কিকের বিপণন করতে হলে রাষ্ট্রের কাছে বেকহাম প্রকাশ করতে বাধ্য যে খেলার আগে দুখানা ডিম না খেলে তাঁর ফ্রি-কিকগুলো ঠিকঠাক বাঁক নেয় না।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্র এখানে শুধুই অনুমতি দেয় না, নিরপেক্ষ তুলনাও করে থাকে। ধরা যাক শেখ মোহাম্মদ আসলাম হুবহু একই রকম বাঁকানো ফ্রি-কিক নিতে পারেন, এবং তিনিও তাঁর এই প্রক্রিয়াকে বাজারজাত করতে চান “আসলামপুর” নামে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র খতিয়ে দেখবে আসলামও দুখানা ডিম খেয়ে এই ফ্রি-কিক নিয়ে থাকেন কি না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাবে উদ্ভাবিত হওয়ার পরও আসলাম তাঁর ফ্রি-কিকের স্বত্ব পাবেন না। বাজারজাতকরণের জন্য তাঁকে অন্য কোনো কিছু তৈরি করতে হবে। পক্ষান্তরে, যদি রাষ্ট্র খতিয়ে দেখে যে আসলামের এই বাঁকানো ফ্রি-কিকের মূলে আছে লাইফবয় সাবান, তাহলে আসলাম তাঁর পণ্য বাজারজাত করতে পারেন। বাহ্যত দেখতে অভিন্ন হলেও তাঁর অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া ভিন্ন। যদিওবা বাঁকানো ফ্রি-কিকের ধারণা তিনি বেকহামকে দেখে পেয়ে থাকেন, তবুও তাঁর নিজস্ব প্রক্রিয়া স্বীকৃতি পাবে প্যাটেন্ট করবার সময়। অতএব, অভ্রকে বিজয় বা এর কোনো অংশের অনুকরণ বলে দাবি করলে রাষ্ট্র খুব সহজেই দুইয়ের সোর্স কোড ঘেঁটে মিলের পরিমাণ অনুসন্ধান করতে পারে।

এই তুচ্ছ উদাহরণের উদ্দেশ্য ছিলো অভ্রের বিরুদ্ধে একটি মুখ্য অভিযোগ সম্পর্কে আলোকপাতের পটভূমি তৈরি করা। অভিযোগটি হলো, বিজয়ের তুলনায় অভ্রে যথেষ্ট পরিমাণ পার্থক্য নেই। মেহদী হাসান খান জানিয়েছেন যে বিজয়ের তুলনায় অভ্রের ইউনিবিজয়ে ৮টি পার্থক্য আছে। মোস্তফা জব্বার দাবি করছেন যে এই পরিবর্তন যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন হলো, আইনের চোখে পার্থক্য কিংবা পরিবর্তনের সংজ্ঞা কী?

যেকোনো প্রযুক্তি বা প্রক্রিয়া প্যাটেন্ট করতে গেলে তা খুব সংকীর্ণ ও বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করতে হয়। প্যাটেন্ট যেমন এক উদ্ভাবকের সৃষ্টিকে নিরাপত্তা দেয়, তেমনি অন্য উদ্ভাবকের পথ বন্ধ করে দেওয়াও রোধ করে। সে কারণেই কেউ চাইলেই বাংলা ভাষার সকল শব্দ নিজের নামে কপিরাইট করতে পারেন না, কিংবা বাংলা বর্ণমালার সকল রকম সম্ভাব্য বিন্যাসকে কুক্ষিগত করতে পারেন না। বিজয়ের সাথে বাহ্য সাদৃশ্য থাকলেই তাই অন্য কোনো লে-আউট চুরির মাল হয়ে যায় না। খুব নির্দিষ্ট একটি লে-আউট ‘বিজয়’ নামে প্যাটেন্টকৃত। এর তুলনায় চুল পরিমাণ ভিন্নতা থাকলেও তা নতুন, যদি না নির্দিষ্ট ঐ লে-আউটটিও মোস্তফা জব্বারের প্যাটেন্ট করা থেকে থাকে। স্রেফ আপাত-সাদৃশ্যের দোহাই দিয়ে বর্ণমালার সকল সম্ভাব্য বিন্যাসকে রুদ্ধ করে রাখা সম্ভব নয়।

বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গে উন্নতি একটি ক্রমযোজিত ধারণা। অতএব, “সম্পূর্ণ বা আংশিক” অনুকরণের নামে পূর্বের কাজকে বাতিল করা যায় না, বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে দেওয়াল তুলে দেওয়া যায় না। এই কারণেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, উদ্ভাবনকে গতিশীল রাখতে হয়, পরিবর্তনকে শতাংশ দিয়ে বিচার করে ভবিষ্যতের দ্বার রুদ্ধ করে রাখা যায় না। শতাংশের বিচারে পরিবর্তন কতটা অচল ধারণা, তা বোঝাতে দুটি ছোট উদাহরণ দেওয়া যায়। অধমের ধর্মপত্নী বানরের এইডস নিয়ে কাজ করে। কাঠখোট্টা ভাষায় বললে সিমিয়ান ইমিউনো ডেফিশিয়েনসি ভাইরাস। অধমকে লেখা এক লাইনের একটি চিঠিতে বৌ লিখেছিলো – “বানর আর মানুষের ডিএনএ-তে ৯৫% মিল আছে, তবে আমি তবুও ভালোবাসি তোমাকে”। হায়, আস্ত ৫ শতাংশ ভিন্নতা সত্বেও মাফ পেলাম না।

অন্য উদাহরণটি পত্রিকায় পাতায় পেশকৃত একটি অভিযোগের আলোকে দিচ্ছি। প্রশ্ন করা হয়েছে, নজরুলে কবিতায় একটা লাইন নিজে থেকে জুড়ে দিলেই কি তা নিজের হয়ে যাবে? এই প্রসঙ্গে শ্রদ্ধেয় রিটন ভাইয়ের লেখা “আলো আমার আলো” কবিতাটি স্মরণ করা যায়। রবি ঠাকুরের লেখা লাইনগুলোর সাথে নিজের লাইন জুড়ে তিনি বুনেছিলেন তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

“আলো, আমার আলো, ওগো আলো ভুবন ভরা
সেই আলোতে গান কবিতা গল্প ছবি ছড়া।

আলো নয়ন-ধোওয়া আমার আলো হৃদয়হরা
রবির আলোয় উদ্ভাসিত প্রিয় বসুন্ধরা

নাচে আলো নাচে -- ওভাই আমার প্রাণের কাছে,
নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে আমার রবীন্দ্রনাথ আছে।”

এই কবিতার স্বত্ব লুৎফর রহমান রিটনের এবং এতে তিনি রবি ঠাকুরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন কবিতাটির ধারণার জন্য। অভ্রও কি বিজয়কে অনুরূপ স্বীকৃতি দেয়নি ইউনিবিজয় প্রবর্তনের ক্ষেত্রে? সেখানে কি অনুরূপ ভিন্নতা নেই? যদি তা-ও যথেষ্ট না হয়, তবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায় প্যাটেন্ট আইনেরই আরেকটি দিক সম্পর্কে, যা সাধারণ জ্ঞানলব্ধ কোনো কিছুকে কুক্ষিগত করা প্রতিহত করে। ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সি বিচারে কি-বোর্ড লে-আউট প্রবর্তন একটি শতবর্ষপুরনো ধারণা, যার প্রয়োগ প্রচলিত সব কি-বোর্ডেই বিদ্যমান।

আইনের কচকচিতে যেতে চাইলে আরও একটি বিষয় তুলে আনা যায়। বিজয় লে-আউট প্রাথমিক অবস্থায় কপিরাইট-সংরক্ষিত করা হয়েছিলো “সাহিত্য” হিসেবে। সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীত, বা মূল্যবোধের মতো নিরাবয়ব বস্তুকে আইনের শাসনে বন্দী করা দুষ্কর। দ্বিতীয়ত, সেই সময় প্যাটেন্টকৃত হলেও তা ২০ বছর পর কার্যকর থাকতো না। আরও বলা যায়, বিসিসি কর্তৃক প্রণীত ‘জাতীয়’ লে-আউটের সাথেও কিন্তু ইউনিবিজয়ের মিল একই পরিমাণ, কারণ বিজয় ও জাতীয় লে-আউট দুটোয় স্রেফ ইংরেজি এফ এবং জে বাটনদ্বয়ের স্থানান্তর হয়েছে।

এই বিষয়গুলো মোস্তফা জব্বারেরও অজানা নয়। আইনি লড়াইয়ের পথে অনেক বাধা, তাই তিনি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমে কুৎসা রটনায় নেমেছেন। বিনা প্রমাণে এমনতর কটূক্তি ছড়ানো বরং আইনত দণ্ডনীয়। মূল গাত্রদাহ তাই কপিরাইটে নয়, নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকা বাগাতে না পারা। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের সংবাদে তিনি ব্যবসার সুযোগ দেখেন, সামান্য লে-আউটের জন্য কম্পিউটারপ্রতি ৫০০০ টাকা হেঁকে বসেন। মুক্তবাজারের কথা এসেছে মোস্তফা জব্বারের বিভিন্ন লেখায়। পশ্চিমা যেকোনো দেশে এমনটি করলে তিনি প্রাইস-গাউজিং, ম্যালপ্র্যাকটিস, কিংবা অ্যান্টিট্রাস্টের দায়ে ফেঁসে যেতেন। খোলা বাজারে আজ উইন্ডোজ-৭ কিনতে পাওয়া যায় এর চেয়ে কম দামে। পাশাপাশি তিনি হার্ডওয়্যার বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করতেন, করেছেন। এক কালের গুটেনবার্গ এভাবেই দশকের পর দশক ধরে অর্জিত সহানুভূতি বিকিয়ে দিয়ে শাইলক হয়ে গেছেন।

৮টি বর্ণে ভিন্নতাকে যদি মোস্তফা জব্বার “চোখে ধুলো দেওয়া” ভেবে থাকেন তবে তা-ই। তাঁর এই দাবিতে অনুযোগ করার মতো সত্য আছে, নেই অভিযোগ করার মতো আইনি জোর। তিনি শাইলকের মতো আমাদের বাংলা লেখার অধিকারের হৃদপিণ্ড থেকে “পাউন্ড অফ ফ্লেশ” চেয়েছেন, এই ৮টি বর্ণ তাঁর শাইলকসুলভ আচরণ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। মাংসের তুলনায় রক্ত বড় তুচ্ছ, বর্গীয় বর্ণের তুলনায় খণ্ড-ত থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত বর্ণগুলোও তাই। তবু এই ক্ষুদ্র বর্ণগুলোই উপকারী গুটেনবার্গ থেকে স্বার্থান্বেষী শাইলক হয়ে যাওয়া মোস্তফা জব্বারের হাত থেকে অভ্রকে চূড়ান্ত নিরাপত্তা দিয়েছে।

বাংলা কম্পিউটিং-এর পথিকৃত হিসেবে মোস্তফা জব্বারের উপলব্ধির সময় এসেছে যে স্রেফ উচ্চমূল্যে লে-আউট বিক্রি করে তিনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। বাংলা কম্পিউটিং-কে এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে তাঁর। সেদিকেই মনোনিবেশ করা জরুরি। তাঁর ‘বিজয়’ লে-আউটে অনেকেই অভ্যস্ত। এই যুক্তি খুবই ঠিক যে ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা কখনও সম্মানজনক সমাধান হতে পারে না। ফোনেটিক লে-আউট অনভ্যস্ত প্রজন্মের জন্য একটি স্টপ-গ্যাপ সমাধান মাত্র। তিনি তাঁর বিজয় লে-আউটকে উন্মুক্ত করে দিতে পারেন, যাতে আগামী প্রজন্ম তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। একটি অভ্যস্ত গ্রাহকগোষ্ঠী থাকলে তাঁর ব্যবসাও উপকৃত হবে।

ইউনিকোডের যুগে আমাদের আসকিতে আটকে না রেখে তিনি নিজেও এতে পদার্পণ করতে পারেন। অভ্র এক্ষেত্রে তাঁর পথ আগলে রাখবে না, বরং স্বাগত জানাবে। বিজয়ের আছে অগণিত দারুণ ফন্ট। বাংলা প্রকাশনা জগতকে ইউনিকোডে নিয়ে আসতে তিনি অগ্রণী হতে পারেন। বিজয়ের ফন্টগুলো ইউনিকোডে রূপান্তরিত করে (যৌক্তিক দামে) বাজারজাত করতে পারেন। বহুকাল ধরে প্রকাশনাশিল্পে ব্যবহৃত হওয়ায় বিজয়ে ব্যবহার্য বাংলা অভিধান ও স্পেলচেকার তৈরি হয়ে আছে। সেগুলো তিনি ইউনিকোডে রূপান্তরিত করে (যৌক্তিক দামে) বাজারজাত করতে পারেন। বাংলা ভাষাকে টিকে থাকতে হলে এর ব্যাকরণকেও টিকে থাকতে হবে। ফোনেটিক কি-বোর্ড ব্যবহার করলে ব্যাকরণ না জেনেও “শুদ্ধ” বাংলা লেখা যায়। ব্যাকরণ জেনে শুদ্ধ বাংলা লেখা প্রচলিত করতে একটি নিজস্ব কি-বোর্ড প্রয়োজন। বিজয় এক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী স্থান গড়ে নিতে পারে।

যেই শক্তি তিনি অহেতুক অপচয় করছেন অভ্রকে গালমন্দ করে, তা গঠনমূলক কোনো কাজে ব্যবহার করলে এখনও সুযোগ আছে স্বীয় সম্মান ধরে রাখার। নয়তো উঠতি প্রজন্ম হেলাভরে “খুদাপেজ” দিয়ে দেবে দ্বিতীয় চিন্তা না করেই।

ভাষা উন্মুক্ত হবেই।


মন্তব্য

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চমৎকার লেখা একটা। তোমার যুক্তি আর পরিমিতিবোধ থেকে আমাদের সবার অনেক কিছু শেখার আছে। সাম্প্রতিক মোস্তফা জব্বার-অভ্র প্রসঙ্গে এইটা আমার পড়া সেরা লেখা।

সমস্যা একটাই, মোজ-র মতো কুপমণ্ডুকতায় আক্রান্ত মানুষদের এতেও বোধোদয় হয়তো হবে না। হলে ভালোই হতো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

চমৎকার চমৎকার একটা লেখা
একেবারে আবেগহীন এবং বিস্তৃত

ফরিদ এর ছবি

ওরেএএএএএএএ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ। এটা সবার জানার, কাজে লাগার মত একটা পোস্ট। কপিরাইট-পেটেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো বোঝার জন্যতো বটেই, সমালোচনার ভাষা কেমন হওয়া উচিত সেটা বোঝার জন্যও।

পোস্টটি স্টিকি করার অনুরোধ করছি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এই বিতর্কের সেরা লেখা

...........................
Every Picture Tells a Story

সাফি এর ছবি

বাহ চমৎকার লেখা। বিরক্ত লাগে টেকি শিক্ষিত লোকজন যখন বন্ধুত্বের খাতিরে অভ্র সম্পর্কে উলটো পালটা ক্লেইম করে এর পর পিছলাতে থাকে!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলুক

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সুচিন্তিত কথাগুলো শুনে ভালো লাগল...

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেকদিন পরে লিখলে ইশতি। অসাধারণ তথ্য আর বিশ্লেষণে ভরা একটা লেখা। লেখাটি দৈনিক পত্রিকায় ছাপার দাবী রাখে। নজু ভাই কিংবা আরিফ জেবতিক ভাই এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

বিবেকহীন বিবেক এর ছবি

সেলাম ভাই! অসাধারণ যুক্তি উপস্থাপনা, অসাধারণ লেখা। ভাই আপনি কি অতীতে বিতর্ক করতেন?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তা করতাম টুকটাক। এখনও বিতর্কের গন্ধ যায়নি? হাসি

গৌতম এর ছবি

মোস্তফা জব্বার নিজেই নিজের পতন ডেকে আনলেন। নন্দিত থেকে হয়ে গেলেন নিন্দিত।
চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

নিতান্ত অফটপিক মন্তব্যঃ দ্যাটস হোয়াই, আই এম এ ফ্যান অফ ইশতিয়াক রউফ...

_________________________________________

সেরিওজা

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

মি টু! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

টিউলিপ এর ছবি

চলুক
___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

স্বাধীন এর ছবি

সুন্দর বিশ্লেষণ। লেখাটি পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করা হলে আংকেলের একটি মোক্ষম জবাব হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ইশতি এখন নিয়মিত হবে তার লেখা দিয়ে এই প্রত্যাশা করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ সিরিজ অনেকদিন ধরে খেলাপী হয়ে আছে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো, ইশতি!! তোমার এই বাড়াবাড়ি না করার ব্যাপারটা আমি খুবই পছন্দ করি, শ্রদ্ধাও হাসি

(হে হে, ৫% এর ব্যাপারটা তো মারাত্মক!!)

অমিত এর ছবি

চলুক

পলাশ রঞ্জন সান্যাল [অতিথি] এর ছবি

আপনার লেখা এই প্রথম আমি পড়লাম। পড়ে খুবই ভালো লাগলো। চমৎকার একটা লেখা। উদাহরণগুলো সুন্দর। আশা করি ভবিষ্যতেও আপনার লেখা পড়তে পারব।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

নুসায়ের এর ছবি

ভাষা উন্মুক্ত হবেই

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

খুবই ভাল লাগল পড়ে।
সুচিন্তিত এবং যুক্তিনির্ভর লেখা। সবারই পড়া উচিত। খোমাখাতায় শেয়ার করলাম।

তাসনীম এর ছবি

শ্লেষ, অশ্লীল মন্তব্য এবং মাত্রাহীন আবেগ মূল বক্তব্যকে দূরে ঠেলে দেয়। এই লেখাটা এই অভ্র বিতর্কের সেরা লেখা, যুক্তিপূর্ণ এবং একদম নৈর্বক্তিক। এই বিতর্কের সেরা লেখা এইটা।

অসাধারণ কাজ করেছেন আপনি ইশতি।

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

হিমু এর ছবি

মোস্তফা জব্বারের এই কুৎসারটনার অভিযান কিন্তু বিপণনেরই একটি অংশ। নির্বাচন কমিশনই শেষ বড় প্রকল্প নয়, ভবিষ্যতেও বাংলা ভাষায় তথ্যযোগের নানা সরকারি-বেসরকারি কাজ হবে। মোস্তফা জব্বার যা করছেন, তা হচ্ছে অভ্রের দুর্নাম করে একে প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে রাখার একটি প্রিয়েমটিভ মেজার নিচ্ছেন। যেহেতু অভ্র বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে, এটি যে কোনো সুস্থমস্তিষ্ক ও দেশপ্রেমিক কর্তৃপক্ষের প্রথম পছন্দ হওয়া স্বাভাবিক। একে হটানোর একমাত্র অস্ত্র কুৎসা, সেটিই প্রয়োগ করে বেড়াচ্ছেন বাংলার কাগুটেনবের্গ।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অন্যরকম ধ্রুব এর ছবি

কাগুটেনবার্গ!!! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

এক্সোডাস [অতিথি] এর ছবি

এই হাঁউমাঁউয়ের মধ্যেও কেউ যে মাথা ঠাণ্ডা রাখছে সেটা দেখে অনেক ভাল লাগল। হাসি

নাহিদ পারভেজ এর ছবি

আপনার এই লেখাটা ফেসবুকে শেয়ার করলে আশা করি পাইরেসি হবে না??
পুনশ্চ :- কেঁচো খুড়তে সাপ টা যদি বের হয় ?
বহু বছর আগে শুনেছিলাম বিজয়ের জন্মদাতা আর বিজয়ের পিতৃপরিচয় ভিন্ন । এ জিনিসটা নিয়ে কথা বলাটা অশিষ্ট হলেও ভদ্রলোকের শাস্তি প্রাপ্য শুধু তার সাম্প্রতিক কাজের জন্য ।

মর্ম এর ছবি

চমত্‍কার সমালোচনা।

অভ্রের পক্ষে একটি অন্যতম শক্তিশালী লেখা।
ভাষা উন্মুক্ত হচ্ছে, হবেই।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

সৌরভ [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ... ভাষা উন্মুক্ত হবেই... :-bd

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ!

সিয়াম এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর বিশ্লেষণ! অব্যর্থ নিশানা।
বানরের এইডস-এর ব্যাপারটা জানা ছিলনা। দেঁতো হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সুন্দর লেখা ইশতি! আপনার লেখার মতোই।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গে উন্নতি একটি ক্রমযোজিত ধারণা। অতএব, “সম্পূর্ণ বা আংশিক” অনুকরণের নামে পূর্বের কাজকে বাতিল করা যায় না, বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে দেওয়াল তুলে দেওয়া যায় না। এ-কারণেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, উদ্ভাবনকে গতিশীল রাখতে হয়, পরিবর্তনকে শতাংশ দিয়ে বিচার করে ভবিষ্যতের দ্বার রুদ্ধ করে রাখা যায় না।

চমৎকার আবেগ বিবর্জিত যুক্তির উপস্থাপনা । কারুর অবদানকে ছোট না করেও যে তার ভুল ধরিয়ে দেয়া যায় এই লেখাটি তার সমুজ্জ্বল প্রমান । বিতর্কের ভাষা মার্জিত হলে যে কতটা শানিত হয় এটি তার উৎকৃষ্ট প্রমান ।

কম্পিউটারে বাংলা ভাষার ক্রমাগত প্রসার ও উৎকর্ষ সাধনের পথ চলা হোক নির্বিঘ্ন । প্রবীন ও নবীন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাক, সকল বাংলাভাষীর এটাই প্রত্যাশা ।

চমৎকার লিখেছ অভি । অভিবাদন তোমাকে ।
.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। হাসি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

বাহ! এটা এ পর্যন্ত পড়া অভ্র সম্পর্কে সেরা লেখার মাঝে থাকবেই! [ আর কী বল্বো খুঁজে পাচ্ছিনা! সবাইতো বলেই দিয়েছে সবকিছু! ইয়ে, মানে... ]

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শুধু অভ্র/বিজয় সংক্রান্ত বিতর্কের জন্য নয়, লেখাটি সাহিত্যাঙ্গনে সচলায়তনের সেরা অবদানগুলোর একটা .... ....

চম‌‌ত্কৃত হলাম এবং যুক্তির শক্তিকে আরেকবার হারে হারে অনুভব করলাম।

সাবিহ ওমর এর ছবি

ভাইয়া আপনি লিখতে এত সময় না নিলে অনেক মানুষের অনেক (আজাইরা) কথা বেঁচে যায়। কিংবা হয়ত এরকম পরিষ্কার করে সবকিছু বুঝে নিতে এতটুকু সময় লাগেই। সবাই যেন বড় হয়ে আপনার মত লিখতে শিখে হাসি

রাহিন হায়দার এর ছবি

ভাইয়া আপনি লিখতে এত সময় না নিলে অনেক মানুষের অনেক (আজাইরা) কথা বেঁচে যায়।

সহমত!
________________________________
মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো...

পল্লব এর ছবি

ইশতি, অনেকদিন পরে তোর লেখা পাইলাম। এত সুন্দর করে গুছায়ে লিখিস কেমনে?!

লেখাটা আসলেই পত্রিকায় যাওয়া উচিত।

একটা কথা, কুক্ষীগত হবে? না কুক্ষিগত?

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখা!

ভালো লেগেছে চমত্কার যুক্তিপূর্ন সাবলীল বিশ্লেষন।

সবার অংশগ্রহনে এগিয়ে যাক বাংলা কম্পিউটিং।
ব্যবসায়িক শৃংখল থেকে বেরিয়ে ভাষা হোক উন্মুক্ত!
ভাষা উন্মুক্ত হবেই!!

---
bibornosomoy[এট]gmail.com

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এত দীর্ঘ লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে। বিবিধ ব্যস্ততায় ইদানীং ব্লগে বেশ অনিয়মিত। সিমেস্টার শেষ হই-হই করেও আরও কিছুটা বাকি। খেলাপী অনেক লেখাই জমে আছে। সুযোগ হলে হাত দেবো। অনভ্যাসজনিত কারণে বানানের অবস্থা কাহিল। মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি সে-কারণে।

আশা করছি অভ্র সম্পর্কে কুৎসা রটনা বন্ধ হবে।

ভাষাহতাশ এর ছবি

"একই ভাবে “বেন্ড ইট লাইক বেকহাম”-এর অনুকরণে “টুইস্ট ইট লাইক আলফাজ”, “ডক্টর পেপার”-এর অনুকরণে “মিস্টার পিব”, কিংবা “বিজয়”-এর অনুকরণে “ইউনিবিজয়” লিখলে তাতে কপিরাইট লঙ্ঘন হয় না।"

ইউএসএ-তে ফিলকো নামের একটা কোম্পানি থাকায় ফিলিপ্‌স্‌ তাদের নাম ইউএসএ-তে নোরেলকো করতে বাধ্য হয়। এ বিষয়টি লেখকের এ-মন্তব্যকে সমর্থন করে না। (http://en.wikipedia.org/wiki/Norelco)

বেন্ড ইট লাইক বেকহাম এর অনুকরণে টু্ইস্ট ইট লাইক বেকহাম, ডক্টর পেপার -এর অনুকরণে ইঞ্জিনিয়ার পেপার - এই উদাহরণগুলো বেশি প্রযোজ্য হতো।

লেখকের বাকি অংশের সাথে একমত। সচলায়তনের "অমুক" ও "ইউনি" - বেশ লেগেছে।

খুব খারাপ লাগে যখন দেখি আমাদের কোন জাতীয় অবস্থান নেই এ বিষয়ে। ইনস্ক্রিপ্ট দিয়ে ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সরকার জাতীয় কিবোর্ড নিয়ে কেন কিছু করে না? এমনকি ইউনিকোড-ও ভারতীয় সরকারের ISCII থেকে অনেকখানি নেওয়া। আমাদের সরকারের/দেশের কোন প্রতিনিধি খুঁজে পেলাম না। খুব হতাশ লাগে যখন দেখি ইউনিকোড কনসর্টিয়ামে ভারতীয় সরকার সদস্য, পশ্চিমবঙ্গের এনএলটিআর সদস্য, কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কিছু নেই। এর মানে কি এই, যে আমরা হয় বিজয়কাকার "সমাধান" দিয়ে অথবা ফোনেটিকে এবং/অথবা কিবোর্ড হুক করে বাংলা লিখতে থাকবো? কোন একটা প্রমিত সমাধান থাকা দরকার...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

'ফিলকো' এবং 'ফিলিপ্স' খুব কাছাকাছি নাম। বিশেষত শুরুর অংশ দেখে ভুল বুঝবার অবকাশ আছে যে ঐ কোম্পানিরই একটি ব্রাঞ্চ কিনা। একই কারণে "টুইস্ট ইট লাইক বেকহাম" বললে বেকহামের নাম ব্যবহার হয়, যা কপিরাইট লংঘন। কারণ এক্ষেত্রে বেকহামের সুনাম ব্যবহার করছে অন্য কেউ।

"মিস্টার পিব" ব্যবহার করেছি এই নামে একটি ড্রিংক থাকায়। "ডক্টর পেপার" কোকাকোলা কোম্পানির, "মিস্টার পিব" পেপসি কোম্পানির।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

কিছু ছাগসমাজের-অর্জুন এই সুযোগে নিজেদের বিলুপ্ত সফটওয়্যারকে প্রচলিত করার বাসনায় রটাচ্ছেন যে অভ্র নিকট ভবিষ্যতে আর বিনামূল্য থাকছে না, ইত্যাদি।

এই লাইনটার জন্য আলাদা করে জাঝা দিয়ে গেলাম ... কান্ট স্টপ লাফিং দেঁতো হাসি

বাকি লেখা নিয়ে কিছু বলার নাই, বাকিরা বলে দিসে ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

শরতশিশির এর ছবি

আমিও! আমরা তো সব ফাইট করলাম না কয়দিন ধরে এই আসাদ-জিয়া-নিউটন ত্রয়ীর সাথে, তো আশা করি, তারা এ লেখাটি পড়ছেন এবং কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন আমরা কী বলছিলাম। চোখ টিপি

সাথে জাকারিয়া স্বপন আর অন্যরাও - যারা আগে কিছু না বলে এখন 'মেসিয়াহ' হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন, আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি যে, আপনারা মোস্তফা জব্বার-কে বরং বুঝান, ওনার তরফ থেকে হয় একটা জেনারেল স্টেইটমেন্ট, ক্ষমা প্রার্থনাসহ ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাতে আসুক। ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, তাইলে আমরা এটাও বুঝবো যে উনি আসলেই বড় মনের মানুষ। আর সম্ভব হলে মেহদীর সাথেও উনি কথা বলুক। তাইলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যায়।

আর যদি এরপরেও তিনি না দমে আরও এরকম অহেতুক লেখা পত্রিকায় ছাপাতে থাকেন, তাহলে এই ফাইট চলবেই এবং ব্যাপারটা হয়তো বিশ্রী একটা মোড় নিতে পারে। সেটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

বল এখন জনাব জব্বার-এর কোর্টে। আমরা আশা করবো, জনাব জব্বার বুঝে-শুনে ঠিক পথেই এগুবেন।

ইশতি, আগেও বলেছি, খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লেখেছো। এটার দরকার ছিলো। এই কথাগুলোই তুমি-আমি-আমরা সবাই বলে এসেছি দিনের পর দিন। আশা করি, এখন কারও কারও ''সুমতি'' হবে। আমিন।

আসুন, আমরা সবাই এই লেখাটি ছড়িয়ে দেই সবখানে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আপনারা মোস্তফা জব্বার-কে বরং বুঝান, ওনার তরফ থেকে হয় একটা জেনারেল স্টেইটমেন্ট, ক্ষমা প্রার্থনাসহ ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাতে আসুক। ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, তাইলে আমরা এটাও বুঝবো যে উনি আসলেই বড় মনের মানুষ। আর সম্ভব হলে মেহদীর সাথেও উনি কথা বলুক।

আপু, আপনার কি মাথা ঠিক আছে? মোজব তো 'মেহদী' লিখতে পারেন না, প্রতিবারই ভুল নামের বানান দিয়ে অপ-প্রচার করে চলেছেন, মনে হয় না উনার মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে না দেওয়া পর্যন্ত উনার ভাষার পরিবর্তন হবে। মোজব কাউকে সম্মান করতে শিখে নাই, তার কাছে থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা কিভাবে আশা করেন। আপনে বরং ভোরের কাগজে উনার দেওয়া লেখার ভাষা আবার পড়ে দেখেন, যেকোন এক প্যারা পড়লেই থুতুতে আমার মুখ ভরে আসে।

ব্যাপারটা হয়তো বিশ্রী একটা মোড় নিতে পারে।

বিশ্রী কাজগুলোতো কাগুরই মুখ নি:সৃত বানী, ঢিল মেরেছেন, এখন পাটকেল খাবেনই ;)। আমার মতে যথেষ্ট বিশ্রী ভাষায় প্রতিবাদ আসে নাই এখনো।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ইয়ে, সবাইকে ভুল ধরিয়ে দিতে দিতে এক পর্যায়ে আমি নিজেই ভুল বানানটা লিখে ফেলেছিলাম। লেখার প্রথম ভার্শন দেখে রাফি সেই ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলো।

কাকুল কায়েশ এর ছবি

চলুক
খুব সুন্দর আলোচনা তথা সমালোচনা! চমৎকার বিশ্লেষন - যুক্তিগুলো সহজ ও সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে আপনার লেখাতে!

ভাষা উম্মুক্ত হবেই!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ!

এই লেখার সবচেয়ে চমৎকার অংশ হচ্ছে ডিম খেয়ে বাঁকানো ফ্রি কিক নেবার আইডিয়াটা।

দেঁতো হাসি

সাবিহ ওমর এর ছবি

হ্যাহ, ইশ্তিয়াক ভাই ডিম না খেয়েই বাঁকাতে পারে... (কী বাঁকাতে পারে বলি নাই কিন্তু খাইছে )

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কী বলিবো দুঃখের কথা... একবার ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম। মূল প্লেয়ার দেখি খেলার মাঠে ঝিমায়। শেষে তাকে তরতাজা করতে এক হালি ডিম সেদ্ধ আনানো হলো এক ভাবিকে দিয়ে। দুইটা ডিম ও একটা কলা খেয়ে উনি এক গোল দিলেন এরপর। খেলা হেরেছিলাম ১-৮ গোলে অবশ্য। এই দুঃখের স্মৃতি থেকেই ঐ অংশটুকু।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার লেখা। চমৎকার বিশ্লেষণ।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা। আবারো পড়তে ইচ্ছা করছে।

ভাষা উন্মুক্ত হবেই !!!
--------------------------------------------------------

--------------------------------------------------------

লীন এর ছবি

ইশতিয়াক রউফ লিখেছেন:

ফলশ্রুতিতে আন্তর্জালের প্রতিবাদগুলো এক পর্যায়ে উদ্ভাবনী না হয়ে অমার্জিত হচ্ছে বেশি।...

...আবারও স্পষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন, বিজয় কিংবা লে-আউট নিয়ে নয়, ক্ষোভের কারণ অভ্র ও মেহদীর বিরুদ্ধে একের পর এক পত্রিকায় মোস্তফা জব্বারের আক্রমণাত্মক প্রচারণা।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি লাইন। এই কথাটি আমি কাউকেই বুঝাতে পারছিলাম না। ইশতি ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর ভাষায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সবকিছু বর্ণনা করার জন্য।

______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

বোহেমিয়ান এর ছবি

সেই রকম একটা লেখা ।
আবেগহীন যৌক্তিক চলুক

_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

গঙ্গাফড়িং [অতিথি] এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো। চমৎকার সব যুক্তি। এই কথা অবশ্যই ঠিক যে 'বিজয়' এর অবদান কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। প্রিন্ট মিডিয়াতে 'বিজয়' এখনো অপরিহার্য।
"খেলার আগে দু’খানা ডিম না খেলে তাঁর ফ্রি-কিকগুলো ঠিকঠাক বাঁক নেয় না।" এইটুক পড়ে খুব মজা পেলাম। ৫-:

গঙ্গাফড়িং [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা। পড়ে খুব ভালো লাগলো। খুব সুন্দর যুক্তি। এই কথা অবশ্যই ঠিক যে 'বিজয়' এর কথা কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। আমারও বাংলা টাইপিং এর হাতেখড়ি 'বিজয়' দিয়েই হয়েছিল, তখন ইউনিকোড এর প্রচলনই হয় নি। বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়াতে 'বিজয়' এখনো অপরিহার্য। কিন্তু একটা কিবোর্ড লে আউটকে কুক্ষিগত করে পুরো ভাষাকে নিয়েই ব্যবসা করার চেষ্টা খুবই নিচু মানসিকতার পরিচায়ক।

"খেলার আগে দু’খানা ডিম না খেলে তাঁর ফ্রি-কিকগুলো ঠিকঠাক বাঁক নেয় না।" এইটুকু পড়ে খুব মজা পেলাম।

এম. এম. আর. জালাল এর ছবি

নিতান্ত অফটপিক মন্তব্যঃ দ্যাটস হোয়াই, আই এম এ ফ্যান অফ ইশতিয়াক রউফ...

চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।


এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"


এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"

শামীম এর ছবি

লেখা ভালো হয় নাই চোখ টিপি

... ... কারণ যুদ্ধ আর প্রেমে কোনো ভালমানুষি বা নীতি নাই বলে শুনেছিলাম। উনি যুদ্ধ চেয়েছেন ... ... যুদ্ধ পেয়েছেন; কিন্তু এখন ডিজিটাল গণপিটুনি খেয়েছেন বলে মরাকান্না জুড়েছেন।

এই সুযোগে কেউ কেউ আবার আলু পুড়িয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছে।

তাছাড়া নির্বোধ প্রাণীদের জন্য যুক্তি-ফুক্তির দরকার নাই। ওদের দরকার ভিন্ন জিনিষ।

====
এবার শালীন ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করি একটু:

আমাদের প্রযুক্তি ফোরামের লেখার ইঞ্জিনে ইউনিজয় আছে/ছিল। জনাব মোস্তফা জব্বার এর অ্যাডমিনকে ফোন করে র‍্যাব লেলিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এজন্য কিছুদিন ওখান থেকে ইউনিজয় বাদ দিয়ে রাখা হয়েছিলো।

জনাব মোস্তফা জব্বার বলেছিলেন:
Shut down this web site or I will notify RAB.

লিংক

এটা ঐ সময়ে ফোরামগুলোতে বেশ আলোড়ন তুলেছিলো। মানচুমাহারা (সবুজ) এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সাইটেও পোস্ট দিয়েছিলেন, যেটাতে সাড়া পড়েছিলো। প্রজন্ম ফোরামে এর লিংক

সুতরাং আজকের যে যুদ্ধের ওংকার উনি দিয়েছিলেন (উনিই লিখেছেন: সাইবার যুদ্ধের প্রথম পা) ... তার প্রতিক্রিয়াতে মানুষ এমনি এমনি সমর্থন দেয়নি। এটা তাঁর দীর্ঘদিনের কুকর্মের প্রতিবাদ।

আই.টি. বিষয়ক ম্যাগাজিনগুলো আগে নিয়মিত ক্রয় করতাম। ওগুলোতেও উনি নিয়মিতভাবে আবোল তাবোল বকে থাকেন। নিজস্ব প্রতিবাদ হিসেবে ওনার লেখা দেখলে এখন আর ঐ পত্রিকা কিনি না ...

===
লেখা আমাকে খুশি না করতে পারলেও এতে একটা বিপ্লব দিলাম। খাইছে
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই আস্ফালন ঠেকানোর চূড়ান্ত উপায় হলো বিজয়-সংশ্লিষ্ট যেকোনো কিছুকে ছুঁড়ে ফেলা। একেকটা হুংকারের জন্য একটু করে ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে, তখন মোস্তফা জব্বার ক্ষান্ত দেবেন। আমাদের উচিত প্রকাশনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার্য কিছু বিনামূল্য সুবিধা তৈরি করা, যাতে বিজয়কে প্রতিস্থাপন সহজ হয়। ইউনিবিজয় ব্যবহারকারীদের জাতীয় লে-আউটে অভ্যস্ত করাটাও একটা পদক্ষেপ হতে পারে।

অগ্নিবীণা এর ছবি

এতো পরিশীলিত ভাষা! শুধু "চমৎকার" কথাটি এর জন্য যথেষ্ট নয়! লেখকের জন্য অভিবাদন!

আবদুল এর ছবি

ইশতিয়াক রউফকে ধন্যবাদ এমন একটা বিশ্লেষণধর্মী লেখার জন্য । ধন্যবাদ জাকারিয়া স্বপনকে এটা ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য ।

কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, “চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী” এ প্রবাদটি, অর্থাৎ যাকে উদ্দেশ্য করে ইশতিয়াকের এই লেখা সেই মোস্তাফা জব্বারের নিকট থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে না বলে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি ।

অনিন্দ্য এর ছবি

এটা খুবই অসাধারণ লেখা হয়েছে।এটার সাথে তুলনা হতে পারে শুধু এই লেখাটিরঃ
http://www.sachalayatan.com/mukit_tohoku/31714

অবশ্য মেহদী ভাই এর লেখাটাও অসাধারণ ছিল।এমন প্রতিবাদই দরকার।

স্পর্শ এর ছবি

চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সুজন [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার লেখা।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

গুল্লি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নিদ্রালু [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ!!!!!!!!!!!!!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অসাধারণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

Mostafa Hasan এর ছবি

ভাইরা আমি মোস্তফা হাসান । ভাইবেন না আবার মোস্তফা জব্বার এর ভাই-বেরাদার। নামে নামে নাকি যমে টানে । যাইহোক দোয়া করি মো.জ. এর শুভবুদ্ধি উদয় হোক । আর " ভাষা হোক উন্মুক্ত " শ্লোগানটি যদি উনিও নিজের অন্তরে ধারন করতে পারেন (বাহিরে প্রকাশ না করলেও চলবে) , তাহলে আশা করি এখনো সময় আছে উনি দেশকে আরও কিছু দিতে পারবেন।

সাবিহ ওমর এর ছবি

জব্বারের জায়গায় হাসান, এইটা কোন বড় পরিবর্তন না। আপনার পিতামাতা মোজ আঙ্কেলের পিতামাতার নামকরণের লেআউট (মোস্তফা+লাস্ট নেম) চুরি করেছেন। অতএব আপনার নাম পাইরেটেড। এখন আপনাকে এটা প্রমাণ করতে হবে যে আপনার নামটা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে বা যে যুক্তিতে রাখা হয়েছে, তা মোজ আঙ্কেলেরটার চেয়ে ভিন্ন। নচেৎ... খাইছে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দূর্দান্ত, ইশতি! চলুক

মেহদী হাসান খান এর ছবি

অসাধারণ ইশতি ভাই! চলুক

নাশতারান এর ছবি

জরুরি কথাগুলো কী চমৎকারভাবেই না বললেন! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

পুরো ঘটনায় আমার যা মনে হচ্ছিলো তা হলো, জব্বার সাহেব নিজের মূর্খতাবশত ফেঁসে গেছেন, ধরা পড়ে মুখরক্ষা করার আশায় কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে নিজেকে আরো ছোটো করেছেন। তাতেও কাজ হচ্ছে না ভেবে মরাকান্না জুড়ে দিয়ে নিজেকে হাস্যোস্পদ করেছেন। তাঁর সুমতি হোক। অন্যকে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে তিনি নিজের মর্যাদা রক্ষা করুন এটাই আশা করি।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রানা মেহের এর ছবি

এরকম একটা লেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
খুব ভালো কাজ হয়েছে ইশতি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নিভৃত সহচর [অতিথি] এর ছবি

লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে। যথার্থ এবং যৌক্তিক। আবেগতাড়িত হয়ে অনেকেই সমস্যার সূত্রপাত থেকে সরে খালি মোস্তফা জব্বারের পিন্ডি চটকে যাচ্ছিলেন (সে দোষে আমিও কিছুটা দোষী), কিন্তু তোর লেখাটা আবার সবাইকে মূল কারণটা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে। অভ্র-র পক্ষে এটি একটি মূল্যবান লেখা যা প্রতিপক্ষরা চট করে ফেলে দিতে পারবেনা আর যাদের এখনো জানতে বাকি আছে তাদেরও পরিস্থিতিটা বুঝতে সুবিধা হবে। লেখাটা আসলেই কোন পত্রিকায় ছাপা হলে ভালো হত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অনেক ভালো লেখা।

-----------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব সুন্দর আলোচনা। এই ধরনের লেখাগুলো পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া দরকার, যাতে লোকে কাগুর একতরফা হাঁকডাকে বিভ্রান্ত না হয়।

কৌস্তুভ

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখা।

তবে,

বহুকাল ধরে প্রকাশনাশিল্পে ব্যবহৃত হওয়ায় বিজয়ে ব্যবহার্য বাংলা অভিধান ও স্পেলচেকার তৈরি হয়ে আছে।

কে বলে?

গত প্রায় দশ বছর ধরে বিজয় ব্যবহার করছি। এই জিনিস তো কোথাও পেলাম না!!!

---মহাস্থবির---

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিজয় কর্তৃক বাজারজাতকৃত অর্থে বলিনি। বিজয় ব্যবহারকারীরা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ পত্রিকাগুলোর কথা বলা যায়। শ্রদ্ধেয় লীলেনদা' বলেছিলেন তাঁর কাছে বেশ সমৃদ্ধ একটি স্পেলচেকার থাকার কথা। এই বিচ্ছিন্ন প্রয়াসগুলো সমন্বিত করলে আনন্দ কম্পিউটার্স খুব সহজেই বিজয়/ইউনিকোডের জন্য একটি বাংলা স্পেলচেকার বাজারে আনতে পারে।

আলমগীর এর ছবি

চমৎকার লেখা ইশতি। বাকী কথা রেস্ট্রিক্ট করে দিচ্ছি:

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাইয়া।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

চমৎকার লেখা, বিতর্কের সবগুলো দিক কাভার করেছে লেখাটি।
চলুক

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

রণদীপম বসু এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সবাইকে আবারও ধন্যবাদ। ব্লগে জ্বীনের বাদশা, মেহদী হাসান খান, অভ্রনীল, হিমু ভাই, এবং অন্যান্যরা অভ্রের হয়ে লিখেছেন, বিভিন্ন কারিগরি দিক ধরিয়ে দিয়েছেন। ব্লগে ফাহিম, শরতশিশির, প্রমুখ অভ্রের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার শক্ত ভাবে দমন করেছেন। ধন্যবাদ তাঁদের সবাইকে। মডুদের ধন্যবাদ এত দীর্ঘ সময় ধরে লেখাটি স্টিকি করে রাখার জন্য।

ভাষা উন্মুক্ত হবেই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।