সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের কর্নেল সিরিজের একটা বইয়ে কাক সম্পর্কে দারুণ এক তথ্য পেয়েছিলাম। কাক নাকি তার বাসায় নানা ধরনের টুকিটাকি জিনিস জড়ো করে। যেমন-- ভাঙা চুড়ি, কাঁচের টুকরো, ছোট-খাটো নাট-বল্টু। বইটা যখন পড়ছি তার কিছু দিন আগে খুব কাছ থেকে কাকের বাসার কিছু ছবি তুলেছিলাম। বইটা পড়ার সময় মনে হলো, দেখি না আমার ছবিতে এমন কিছু আছে কিনা। ছবি দেখে তাজ্জব! সত্যিই আমার এই প্রতিবেশী কাক মামারও তাদের বাসায় আজব একটা জিনিস সংগ্রহ করেছেন। পাঠক ছবিতে চোখ বুলিয়ে দেখুন, একটা পেঁচানো ইলেট্রিক তার অবহেলায় পড়ে রয়েছে কাকের বাসায়।
এককালে এসএসসি, এইচএসসি দিয়েছিলাম। গোল্ডেন কোনটাতেই পাইনি, দুক্ষেত্রেই দুটো করে মিস গিয়েছিলো। ইন্টারে আবার ইংরেজিতে এ-প্লাস তো অনেকদূর, এ মাইনাস পেয়েছিলাম। এখনকার কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে! পরে কিন্তু জিআরই ভার্বাল আর আইএলটিএসে খারাপ করিনি (আর আমার এ-প্লাস পাওয়া বন্ধুগণ কি করেছে, সে নাহয় নাই বললাম)
কোনমতে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম, ১৮ দরকার ছিল, পরীক্ষা দিতে বসতে, আমার ছিলো সাড়ে আঠারো। আজকাল ভাবলেই মনে হয়, বিরাট বাঁচা বেচে গেছি! এখন যে পরিমাণ এ-প্লাসের ছড়াছড়ি, তাও আবার গোল্ডেন!
আমার সময়ের গোল্ডেন-ওয়ালারা কোথায়? আমি বলতে পারি, ৫০% বুয়েট-মেডিকেলে পড়ে, খেয়ে-পরে ভালই আছে। আর বাকি ৫০%? আমার কোন ধারণা নেই, তারা কই গেছে কে জানে। সেই ১০-১২ বছর আগের সেই নাক-উঁচু গোল্ডেন এ-প্লাসরাই যদি হারিয়ে যেতে পারে, তাহলে আজকের কাঁচকি মাছের ঝাঁকে ঝাঁকে মত এ-প্লাসেরা কই যাবে?
দুবাইয়ের দুবাই হয়ে উঠার পিছনে যেটির সবচেয়ে বড় অবদান তা হলো দুবাই ক্রিক (খোর দুবাই)। আমাদের দেশের ছোট খাটো একটা খালের মতই হবে এর বিস্তৃতি - কিন্তু এই খাল বা খাড়ি তিল তিল করে গড়ে তুলেছে এই শহরকে। আরব সাগর থেকে বাঁক খেয়ে দুবাইতে ঢুকে প্রায় ১৫-২০ মাইলের মত এই ক্রিক বা খাড়িকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল দুবাইয়ের সব ব্যবসা - এখনো চলছে।
বাঙ্গালি বিদেশ যাওয়ার সুযোগ খুব বেশি পায় না। যারা পায় তাদের বৃহদাংশের (বাঙালি শ্রমিক গোষ্ঠী) মনের জমে থাকা কথাগুলো কেউ শোনে না, শুনতে চায় না, শুনতে ভালোও না। যাদের কথা/ অভিজ্ঞতা আমরা শুনি, তারা সমাজের সৌভাগ্যবান অংশটুকুর প্রতিনিধিত্ব করে। আরেকদলের মুখে বিদেশের ভাল ভাল কথা খুব শুনি, তারা হচ্ছে আদমবেপারি।
এদের দুইদলের কাছেই, বৈদেশ হলো স্বর্গ। সেখানে মানুষের পকেট চুইয়ে চুইয়ে টাকা পরে, রাস্তা দিয়ে দুধের (আর মদের) নহর বহে, আকাশ হতে স্বর্ণমুদ্রা ঝরে! এরা বিদেশের গুণগান গাইতে গাইতে মুখের ফেনা তুলে ফেলে।
তো বিদেশ আসলে কেমন? বেশিদিন হলো আমি আসিনি বাইরে, যা দেখেছি, তা দেখেই এ লেখার চেষ্টা। অবশ্যই বিদেশ ভালো, অনেক অনেক ভালো। কিন্তু বিদেশে কি ট্রেন-বাস লেট করে না, দুর্ঘটনা হয় না, মারামারি হয় না, রাস্তায় জ্যাম পরে না? সবকিছুই কি স্বপ্নের মত?
ভদ্র সমাজের সুশীলেরা বিদেশে আসে, বিদেশীদের কাছে দেশের বদনাম তো করেই, দেশে ফিরে যেয়েও বলতে থাকলাম, বিদেশে কি দেখে আসলাম! আর দেশে কি অবস্থা, ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা! এই দেশে মানুষ থাকতে পারে?
খুব ছোটবেলায় বাংলাদেশ প্রবাসী এক নরওয়েজিয়ান পরিবারের আমার বয়সী এক পিচ্চি মেয়ের ডল-হাউজ দেখে খুব শখ হয়েছিলো আমারও একটা ওরকম থাকা দরকার। পুতুলের জন্যে ঠিক তার নিজের বিছানার মতো কাঁথা-বালিশ-বেডকভার সহ রট-আয়রনের ডিজাইন করা খাটও ছিলো। দুই বালিকার ভাষা এক ছিলো না, কিন্তু খেলতে সমস্যা হয়নি। শুধু রাতে নিজের বিছানায় ঘুমাবার সময়ে বাবা-মাকে ঐরকমের পুতুলের ঘর দেয়া যাবে কিনা, খাট সহ, জানতে চেয়েছিলাম। খুব বেশি ক্লান্ত থাকায় সেরাতে বা পরবর্তীতে ব্যাপারটা নিয়ে আর ঘ্যান ঘ্যান করার সুযোগ হয়নি। আর একটু বড় হলে খেয়াল করতে পারতাম, যে আমার বাবা-মা নিজেদের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় করছেন, ওরকম দামী খেলনা দেয়ার সাধ্য তাদের নাই ভেবে।
১.
এক সহকর্মীর ছেলের গল্প শুনি মাঝে মধ্যেই। তার বয়স দুই বছর। সে একদিন তার বাবার মোবাইল চার্জার নিয়ে তার পেনিসের মাথায় ঢুকানোর চেস্টায় ব্যাস্ত। বাসার লোকজন তো সব অবাক।
কি করছ তুমি?
কেন, আমি তো তার্জ( চার্জ ) দেই।
২.
দুই আত্মীয় পিচ্চিকে নিয়ে খাচ্ছি। একজনের বয়স ১৮, অপরজন সাড়ে তিন । হটাৎ পিচ্চিটা খাওয়া থামিয়ে বড় কাজিনকে বলছে
তোমাকে তো দেখিনি কোনদিন।
দুবাই – মরুর বুকে এক স্বর্ণ নগরী। কারো স্বপ্নের শহর – আবার কারো স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনার শহর।
আলো ঝলমলে এই শহরের আনন্দ বেদনার গল্প বলা শুরু করলে আরব্য রজনীর দশ ভলিউম এও কুলাবে না। আর আমার মত আদার বেপারীর জাহাজের খবর দিয়ে কোনো লাভ নেই। বরং চলুন আপনাদের এই শহর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরব কিছু জায়গায় ঘুরিয়ে আনি।
ভেনিশিয়ান পর্যটক নিকোলাই মানুচ্চি আমাদের ইন্টারেস্টিং একটা গল্প বলে গেছেন। ১৬৬০ সালের কথা, আওরঙ্গজেব তখন সদ্য গদিতে। পিতা শাজাহান জেলের পুলাউ খাচ্ছেন শুকনা মুখে। পূর্বপুরুষ আকবর বাদশা একটা অলিখিত নিয়ম করে গিয়েছিলেন যে পারস্য থেকে বিপদে পড়ে কেউ দিল্লীতে আসলে তাকে তাড়িয়ে দেয়া চলবে না, আদর করে মনসবদার টাইটেল দেওয়া হবে আর কাশ্মীরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তার পিতা হুমায়ূন ভারত থেকে শের শা এর লাথি খেয়ে পারস্যে পালিয়ে কিছু আদর সোহাগ পেয়েছিলেন বলে সম্ভবত পুত্র আকবরের এই পাল্টি ব্যবস্থা।
আওরঙ্গজেব গদিতে আসতে আসতে কাশ্মীরে এইসব মনসবদারের বাজার বসে গিয়েছে। চতুর্দিকে রেফ্যুজি মনসবদার। নিজেদের কেউ অক্কা পেলে বাকী সকলে নাকি তার পয়সা মেরে খেত। সরকারকা মাল টাইপ ব্যাপার। এই সব দেখে আওরঙ্গজেব হাত তুলে কইলেন, ওকে অডিট টাইম। কাশ্মীরে কে কে আছ মনসবদার আমার দরবারে এসে চেহারা দেখাও, নইলে মনসবদারী খুদাপেজ।
একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে উল্টোযাত্রা। কোথায় ছেলেমেয়েরা জ্ঞানের আলোর মুখ দেখবে, সেখানে তাদের হাতছানি দিয়ে পিছু ডাকছে আদিম অন্ধকার। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবকালেই ধর্ম একটা ফ্যাক্টর। আজও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কবে ঘটবে তাও কেউ বলতে পারে না। অ্যালেক্স রাদারফোর্ডেও লেখা ‘মুঘল’ সিরিজগুলো পড়ে বোঝা যায়, সেই পঞ্চদশ শতাব্দীতে মানুষ ধর্মটাকে যত সহজভ