(দু বছর আগে সচলে কয়েকটা কিস্তি দেয়ার পর গল্পটা নিয়ে আর বসা হয়নি। আজ শেষ করে মনে হচ্ছে ঘাড় থেকে একটা বোঝা নামলো )
এক।।
এরা মাঝে মাঝেই জানতে চায়, আমি কোথা থেকে এলাম। আমি বলি, একটা ভালব টেনে। আর সে ভালবটা ছিলো সুতোয় বাঁধা।
তখন সবাই অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, ভালব সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই এদের, সুতো জিনিসটাও অচেনা। আমি নিজেও বুঝিয়ে বলতে পারিনা, আমার কিছু মনে নেই। এদের কৌতূহল অবশ্য ওই পর্যন্তই, খুব বেশি ঘাটায় না। আমিও নিবিষ্ট মনে কাজ করে যাই।
এখানে সবার একটাই কাজ, ছাঁকনদারি করা। আমি ছাড়া আরও একশ একুশ জন ছাঁকনদার রয়েছে এই তল্লাটে। আমরা সোনালি স্রোত থেকে রুদাই সংগ্রহ করি। ছাঁকনদার শব্দটি শুনে মনে হতে পারে আমরা বুঝি সার বেঁধে ছাঁকনি হাতে দাঁড়িয়ে থাকি আর সোনালি স্রোতটা এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ি রুদাইয়ের খোঁজে। আসলে তা নয়।
আমরা থাকি সবুজ তল্লাটে। এখানকার ঘর-বাড়ি-রাস্তা-ঘাট এমনকি আমরা, সব কিছুই সবুজ রঙের। সোনালি স্রোতটা তরল নয়, অনেকটা বাষ্পের মতো, আবার ঠিক বাষ্পও নয়! কেউ জানেনা কী এর উৎস। কখনো দীর্ঘক্ষণ, কখনো অল্পক্ষণ, যখন আসে চতুর্দিক প্লাবিত করে চলে যায়। আমাদের সবুজ তল্লাট ফুলে ফুলে ওঠে রুদাইয়ের ভারে। স্রোত চলে গেলে আটকে পড়া রুদাইগুলোকে জড়ো করে বড় রাস্তাটার মোড়ে নিয়ে যাই আমরা, পৌঁছে দেই আরেকটা দলের কাছে। ওই দলে আছে একুশ জন, ওরা থাকে বাদামি তল্লাটে, যেখানে আমাদের যেতে মানা। এক দুজন যে চেষ্টা করেনি তা নয়, কোন এক বিচিত্র কারণে বড় রাস্তার মোড়টা পেরুনো যায়না।
(সতর্কতা:এই গল্পে এমন কিছু রক্তাক্ত সত্য বিবরণ আছে যা দুর্বল হৃদয়ের জন্য সহনশীল নাও হতে পারে)
দেশকালসময় সবকিছুর উর্ধে চলে যাবার পরও ক্ষীরোদরঞ্জন নাথ কিছুতেই দৃশ্যটা ভুলতে পারছেন না। নিরবালা দেবী তাঁর স্ত্রী হলেও তার মাথার উপর নিজের কাটামুণ্ডুটি এভাবে হাজির হবে ব্যাপারটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তখনো তার চক্ষু মুদে আসেনি। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছেন কয়েক সেকেণ্ডের সচেতন অচেতনের মাঝামাঝি ভাষাতীত এক মুহুর্ত ছিল সেটি। কাট্টলীর নাথ পাড়ার সবগুলো প্রাচীন বৃক্ষ, সমুদ্রের হাওয়া, চৈতালী ঝড় ক্ষীরোদরঞ্জনের সাথে একমত। তাঁর কোন অভিযোগ নেই কারো কাছে। তবে সেই ঘটনার পর থেকে তিনি শুধু ঘুরে ঘুরে সেই খুঁটিটার কাছে ফিরে আসেন। যে খুঁটির নীচে ঠেস দিয়ে বসে ছিল নিরবালা দেবী। আসলে ঠেস দেয়নি, একটা পাটের দড়িতে বাঁধা ছিল নিরবালা দেবীর শরীরটা।
চড়ুই পাখি দু’টো অনেক্ষন ধরে বালিতে গোসল করছে। বাপ্পি মুগ্ধ হয়ে দেখেছে। এই প্রথম সে চড়ুই পাখিকে গোসল করতে দেখেছে। তার আম্মু একদিন বলেছিল, চড়ুই পাখি অন্যদের মতো পানি দিয়ে গোসল করে না। বালি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করে। তার তখন বিশ্বাস হয়নি।
এক।।
“আপনি তাহলে পাথরে বিশ্বাস করেন না?”
সাইফুল সাহেবের প্রশ্ন শুনে খানিকটা থমকে গেলাম আমি। ভদ্রলোক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, মুখের উপর চট করে না বলে দিতে বাঁধছে। শুধু পাথর কেন, ভুত-পেত্নী-দত্যি-দানো-রেখা-রাশি-ঈশ্বর-এলিয়েন কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নেই আমার। হাসি চেপে মোলায়েম গলায় বললাম,
“মিছে মিছিই রেগে যাচ্ছেন সাইফুল ভাই। বিষয়টা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের নয়।”
“তাহলে কিসের, শুনি?”
[justify]মিষ্টিমুখ
সিক্রেট
মুসাররাত জাহান শ্বেতা
আমি শোষকের বংশধর, তাই চিরকালই শোষকের পক্ষে। জাতিসংঘের কোন অধিকার সনদ আমার জন্য প্রযোজ্য নয় কেননা আমি জন্মসুত্রে অধিকার প্রাপ্ত রক্তশোষক। আমার চৌদ্দ পুরুষ এমনকি চৌদ্দ লক্ষ কোটি পুরুষও রক্তশোষকই ছিল। আমাদের জাতিগত নিয়ম হলো - যেখানে জন্মাইবে সেখানকার সম্ভাব্য সকল প্রাণীর রক্ত শোষণ করিয়া মৃত্যুবরণ করিবে। জন্মের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত শিক্ষা সফরে নিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয় আমাদের অধিকারের সীমান
একটি পুকুর। সুন্দর সবুজ পানিতে টলোমলো পুকুর। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাসে ছোট ছোট ঢেউ খেলে যাওয়া পুকুর। সূর্যের সোনালী আলোয় ঝিলমিল ঝিলমিল স্বপ্নিল পরিবেশের এক পুকুর।
ব্যস্ত রাস্তার চলমান বাস ট্রাক টেম্পু অটো-বাইক সামনে এসে ডাইনে বাঁয়ে চলে যাবার পরপরই, এপার থেকে ওপারে চোখ ফেললেই, আলিশান বাড়িটার বন্ধ গেটের সামনে যে ভিড়টা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে— সেটা মানুষের। মানুষের ভিড়।
মানুষগুলো কি আমাদের ঝাঁ চকচকে সভ্য সমাজের? শরীরে ময়লা কাপড়, তেলছোঁয়াহীন রুক্ষ চুল, কোটরের গর্তে ঢুকে যাওয়া চোখ, ভাঙা বা তোবড়ানো গাল— মানুষগুলোর বেশির ভাগেরই। এপার থেকেই বোঝা যাচ্ছে।