জরিনাবু’কে আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে পৌষ সংক্রান্তির দিনে, পৌষ সংক্রান্তির রাতে, পৌষ সংক্রান্তির আগে-পরে কয়েকদিন। সবচেয়ে বেশি নাকি শুধু এই নির্দিষ্ট সময়েই মনে পড়ে, সে কথা খেয়াল করে ভাবিনি কখনও অবশ্য। হতেও পারে, কেবল এই সময়টাতেই আমি তার কথা ভাবি। নেহাতই ‘হিন্দুয়ানি’ উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সাথে গোলেনূর বেগমের মেয়ে জরিনাবু’ ঠিক কীভাবে জড়িয়ে গেছে, তা খোলসা করার আগে তার পরিচয়টা দেওয়া প্রয়োজন মনে হয়।
নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে একবার রক্ষা পেয়ে আবারও যাঁরা সেই মৃত্যুগুহায় ফিরে যাবার জন্য বারংবার জেদ করতে পারে এবং মৃত্যুকে নির্দ্বিধায় আলিঙ্গন করতে পারে, তেমন লোককে উন্মাদ বা আত্মঘাতী বলা যায়, কিন্তু ১৯৭১ তাঁদের বলেছে সংশপ্তক। সেই দুর্লভ সংশপ্তকদের রক্ত দিয়ে তৈরী বাংলাদেশের পতাকার লাল বৃত্তটি। তাঁদের যা দেবার তাঁরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দিয়েছেন। যা কিছু পাবার, যা কিছু লাভের, লোভের, উপভোগের সব আমাদের জন্য রেখে গেছেন। আমরা তাঁদের দেয়া বিজয় নিয়ে উল্লাস করি, দম্ভ করি, গর্ব করি, দখলবাজি করি, এমনকি তাঁদের দেয়া বিজয়ের ফুলফল নির্বিচারে বিনাশও করি। অথচ বিনিময়ে আমরা তাঁদের মর্মভেদী আত্মত্যাগের ভুলে যেতে কার্পণ্য করিনা। সেরকম একজন হোসেন ফরিদের গল্প পড়বো আজ।
কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের একটা গল্প আছে ‘সাড়ে সাতাশ’। সেখানে তিনি নতুন গল্পের খোজে পুরোনো সাতাশটি গল্পের চরিত্রগুলোকে ডেকে পাঠান। চরিত্রগুলো নিয়ে উনি নদীর পাড়ে গোল-টেবিল বৈঠকে বসেন। ভুলে যাওয়া, ছায়ার মত নিত্য সঙ্গী হয়ে যাওয়া চরিত্র থেকে শুরু করে ডোডো পাখি, কাঁঠাল পাতা কিংবা মাটির ঢেলা, কেউ বাদ যায় না। একটু একটু করে নষ্টালজিয়া নেমে আসে নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে। তেমনি, সঙ্গীতাঙ্গনে আমারও প্রিয় কিছু চরিত্
"দাঁড়াও পথিক বর যথার্থ বাঙালি যদি তুমি হও। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে। এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। এ দেশের মুক্তিদাতা, বাংলার নয়নের মণি।"
মৌলভীবাজার কলেজের কোন এক অনুষ্টান, হল ভর্তি ছাত্র, কোন কোন বক্তা দাড়িয়ে বক্তব্য রাখছেন, কিন্তু শ্রোতারা সে দিকে কান দিচ্ছে না, কথোপকথন চলছে, কেউবা খুনসুটিতে ব্যাস্ত, একদিকে বক্তা মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন, অন্যদিকে শ্রোতাদের হইহোল্লোড়, সবমিলিয়ে যা-তা অবস্থা। প্রধান অতিথি হিসেবে কোন ব্যাক্তির নাম ঘোষনা করা হলো, তখনও হইহোল্লোড় চলছেই। ঠিক সেসময় সেই প্রধান অতিথি মাইকের সামনে দাড়ালেন, প্রথমে তিনটি টোকা দি
প্রভু নামেই তাকে সবাই চেনেন। জানেন। পরিচয়ের প্রথম ক্ষণ থেকেই আমরা দেখেছি- ছোট বড়, প্রখ্যাত-অখ্যাত, জ্ঞানী-মূর্খ, রাজা-ভিখিরী সবাই তার সমান সঙ্গী। প্রভুকেও সবসময় কোলের শিশু থেকে বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাইকে ‘প্রভু’ আর ‘আপনি’- বলে সম্মোধন করে সমান সম্মান করতে দেখেছি। তার সঙ্গ আমাদের কাছে ছিল চোখের ওপর থেকে একটা পর্দা সরে যাওয়ার অভিজ্ঞতার মতন। এর ফলে জীবন এবং প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়।
বুয়েটে ভর্তির পর, প্রথম যেই টিউশানি পাই, সেইটা ছিল বাপ্পীকে পড়ানোর। কলাবাগানের স্টাফ কোয়ার্টারে ছোট্ট একটা দুই বেডরুমের বাসা, সেখানে যেয়ে আমি বাপ্পীকে পড়াতাম। বাপ্পী আমার এক বছরের ছোট, তখন তার ঢাকা কলেজে টেস্ট পরীক্ষার কিছু বাকী। প্রি-টেস্টে বা কোন একটা পরীক্ষায় প্রচন্ড খারাপ করার পরে ফিজিক্স আর ম্যাথ পড়ানোর জন্য শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পেলাম।
দুপুর বেলার চিক চিক করা রোদ্দুর আর শোঁ শোঁ হাওয়ার ভেতর দিয়ে হুলিয়া মাথায় নিয়ে একজন ছন্নছাড়া যুবক গ্রামে ফিরছে, মনে তার সহস্র প্রশ্নের ঝাঁক ঘুরছে অবিরত, কেউ তাঁকে চিনতে পারছে কি পারছে না, না কোন রাজনৈতিক নেতা, না কোন পরিচিত সাধারণ জন। সময় এতটাই পাল্টে নিয়েছে তাঁকে, বিক্ষুদ্ধ, টালমাটাল, অসাধারণ, বিস্ফোরণ্মুখ, অগ্নিঝরা, গর্ভবতী সময়। সেই অসাধারণ সময়ের এককোণে খুব সাধারণ কিছু ঘটনা ঘটছে বারহাট্টার ট্রেনে