যা কিছু আমার মনে নেই
ফিসফিসিয়ে শীত এসেছিল, থেকেও গেল বেশ কিছুদিন। হিম কনকনে উত্তুরে হাওয়ায় কাঁপিয়ে- ঝাঁপিয়ে দিচ্ছিল, মাঝে মধ্যেই অবশ্য চলে যাচ্ছিল অন্য কোনোদিকে, অন্য কোথাও, কিন্তু আবার ফিরেও আসছিল। এবার যেন চলেই গেল দুম করে। মাঘের সবে চব্বিশ। বাঘ পালাবে কেন, শীতই পালিয়ে গেল।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে Mapple International ১৯৯৫ সালে ২০৮০০ ডলার দিয়ে একটি জাপানী নতুন টয়োটা গাড়ি কিনেছিল তখনকার লেটেস্ট মডেলের। পরের বছর বুদ্ধিমানের পরামর্শ নিয়ে ৮০০০ ডলার করে ১৬০০০ ডলারে দুটো ভারতীয় গাড়ি কিনে তৃপ্ত হয়েছিল। কেননা দুটো গাড়ি কেনার পরও নগদ সাশ্রয় ৪ হাজার ডলার!!
গায়ের রং নিয়ে তীব্র মাথাব্যথা না থাকলেও ইদানিং বিভিন্ন কারণে কেমন জানি একটা চিনচিনে অনুভুতি মনের ভিতর উঁকিঝুকি দিয়ে যাচ্ছে । এই চিনচিনে অনিুভুতিটাই হঠাৎ সেদিন কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কাজের মেয়েটার কথায় । বেশ কয়েক বছর ধরেই মেয়েটা আমাদের এখানে আছে তবে তার কোনো কিছুর জন্য আবদার খুব একটা নেই । দিন কয়েক আগে টিভি দেখছিলাম । হঠাৎ একটা বিজ্ঞাপন দেখে আমাকে বলল, আমার না খুব শখ এই জিনিসটা কেনার । আমি তার দিকে তাকালাম সে তা ভ্রুক্ষেপ করল না । কারণ গভীর মনোযোগের সাথে দৃষ্টি তার টিভির পর্দায় নিবদ্ধ ।
অবগাহন
ম্যাডোনা থেকে স্টিভ জবস কেন এসেছিলেন এ শহরে?
কিসের আশায় সকলেই এখানে ভিড় জমায়?
কেন ভূবন বিখ্যাত মানুষ গুলো এখানেই ঘুরতে আসে?
এখানে গঙ্গার পবিত্র জলে অবগাহনে কিসের শান্তি?
আমাকে সিটি অব লাইট ডাকছে। আমাকে যেতেই হবে। তাই এবারের আমার গন্তব্য বারণসী।
মগবাজারে কোন এক জায়গায় টিউলিপ বলে এক সেলুন ছিল। ওইখানে আব্বা আমাদের তিন ভাইকে চুল কাটাতে নিয়ে যেতেন যখন আমি একবারে ল্যাদাবাচ্চা। মনে আছে ওরা প্রতিবার ছোট একটা রঙিন কার্ড দিত, একপিঠে দোকানের নামধাম অন্যপিঠে ক্যালেন্ডার। আমাদের তিন ভাইতে তুমুল ফাইট চলতো ঐ মহামূল্যবান কার্ড নিয়ে। তখন স্কুলে যেতাম একটা স্টীলের পেনসিলবক্স নিয়ে, উপরে সুপারম্যানের ছবি আর হিম্যানের স্টিকারওয়ালা। ঐ পেনসিলবক্সের ভিতর জায়গা হত কার্ডের। কোনদিন ক্যালেন্ডার দিনতারিখ দেখার জন্য ব্যবহার করেছি বলে মনে পড়েনা, দিন-তারিখ দেখার তেমন দরকারও হতনা। শুধু মাথায় থাকতো স্কুল বৃহস্পতিবার হাফ আর শুক্রবার পুরো ছুটি। ওইটে জানার জন্যে বালকের ক্যালেন্ডার প্রয়োজন নেই।
সকালবেলা যেদিন ক্লাস থাকে সেদিন ভার্সিটি যাবার সময় ছোট ছোট বাচ্চাদের যখন মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতে দেখি তখন আগের দিনের এই সময়গুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, কিভাবে ১২টা বছর সকাল ৮টায় ক্লাস করতাম! অবাক লাগে ভাবতে। দেখি, ছোট ছোট মানুষ, কাঁধে বিশাল বড় বড় ব্যাগ!
বান্দরবন থেকে বের হবার আগে থেকেই প্যানপ্যান করে যাচ্ছিলো অঙ্কুর, তার প্যানপ্যানানির ঠেলায় অতিষ্ট হয়ে একবার রাদ প্রায় বলেই বসেছিলো, “তুই থাক, তোর যাওয়ার দরকার নাই|” কিন্তু চিন্তা করে বললোনা| একা একা গেস্ট হাউসে থেকে করবেই বা কি? আর ওদের ফিরতেও প্রায় দিন দশেক| এদিকে মোটা জামিল একবার দাঁত কেলিয়ে বলেছিলো, “কিরে অঙ্কুইরা, একলা থাকবি নাকি?
কমলাক্ষ মারা গ্যাছে, আমাদের বন্ধু কমলাক্ষ মারা গ্যাছে।
কমলাক্ষ খুব বেশী সিগ্রেট খেতো, সেই আমাদের সিগ্রেট খাওয়া শিখিয়েছিলো। দশমীর দিনে কমলাক্ষ মাকে নিয়ে নেমে যেতো নদীর গভীরে। ফিরে এসে বলতো, শাড়ীটা দামী ছিলোরে।
কমলাক্ষ হাতে লাটিম ঘুরাতো, চেচিয়ে বলতো, গাধা পারিসনা ক্যান, এই দ্যাখ, এমনে…। আমি তবু হাতে লাটিম ঘুরাতে পারিনা এখনো।
কমলাক্ষ জীবনকে বড় ভালোবাসতো।
অনেকদিন হল এই শহরে আর বৃষ্টি হয়না।
শহরের কি প্রাণ থাকে আমাদের মত ? ওরাও তো বেড়ে ওঠে, প্রাচীন হয় ; মাঝে মাঝে মন খারাপ করে মরে যেতে থাকে ঠিক আমাদের মত । এই শহরটারও আজ তেমনি মন খারাপ বুঝি। বহুদিন বৃষ্টির দেখা পায়না যে। টলটলে জলে তার ভেজা হয়না কতদিন। অযত্নে বেড়ে ওঠা ছেলের খড়ি ওঠা হাত পায়ের মত তার ইঁট কাঠ পাথরের পরতে পরতে ধুলো ময়লার ক্লেদ। বহুদিন হল বৃষ্টিরা ভালোবেসে কপালে চুমো আঁকেনা বলে দোয়েলের ছবি আঁকা নোটের দিকে ভিখিরির প্রতীক্ষিত চোখ নিয়ে তাকায় আকাশে আকাশে।