হুমায়ূন স্যার চলে গেছেন অন্যভুবনে গত পরশু। সমগ্র জাতি শোকাহত। আমাদের প্রাণপ্রিয় কথার জাদুকর আর তাঁর কথার জাদুতে কোটি কোটি ভক্তকে বিমোহিত করবেন না। হিমু পাগলামী করবে না, মিসির আলী রহস্য খুঁজবে না, আমরা তাঁর বই পড়ে বা ছবি দেখে চোখের জলে ভাসবো না। তাঁর কলম থেমে গেছে। কিন্তু আমাদের জীবন থামেনি। সামনে আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। তাঁর এই মৃত্যু শোকের সাগরে ভাসানোর সাথে সাথে আমাদেরকে একটু খানি সচেতন হবার
১.
পশ্চিমাকাশ সূর্যহীন। হালকা লাল কমলা আভা। উর্ধ্বমুখে আকাশ পানে তাকালে নীল আকাশের পটে ধরা পড়ে ছোট ছোট কালো রঙ্গের পাখির ঝাঁক। অনেক উপর দিয়ে অস্থিরভাবে উড়ছে। কিচির মিচির তীব্র শব্দ তুলে ঘরে ফিরছে তারা। আজকের দিনের জন্য সব কাজ শেষ। নীড়ে ফিরে চোখ বুজবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।
কতগুলো কাক রাস্তার পাশের নিচু দেয়ালটায় বসে আছে। গেট থেকে বের হয়েই কাকগুলোকে দেখে আঁতকে উঠলেন আনোয়ার সাহেব। তার আঁতকে উঠাটা চোখে পড়ল বাড়ির দারোয়ানের।
“স্যার, কিছু হইছে?”
আনমনে মাথা নেড়ে অন্যমনস্ক হয়ে একটা রিকশায় চড়ে বসলেন তিনি। রিকশাটা এগিয়ে চলতে শুরু করতেই পেছনে ঘুরে আবার কাকগুলোকে একবার দেখলেন।
ও হেড স্যার! আমার আশার হইতাছে কী গতি?
আমার পোলার পড়া লেখার করেন যে ক্যান ক্ষতি!
পাঠাইছিলাম পড়তে তারে হইতে মানুষ বড়
সেদিন জিগাই, এখন অ বাপ, মিছিলটা ক্যান কর?
আপনার কাজকর্মে না কি সক্কলে বিরক্ত
আপনে সরেন, চেয়ার ছাড়েন এই বেলা, এই অক্ত।
আর সব স্যার চইল্যা যাবে যদি না যান আপনে,
যার ইশারায় চলেন বলেন সে আপনের বাপ নে?
ভাড়া কইরা টিচার আইনা ক্লাশ চালাবেন কইলেন!
২০০১ এর জুন থেকে আমি দেশান্তরী। ২০০৭ এর নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারিনি। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে জাপান। জাপান থেকে আমেরিকা। আমেরিকা থেকে কানাডা। এক দেশ থেকে আরেক দেশ। লম্বা জার্নি। জীবনটা কাটছিলো মোটামুটি দৌঁড়ের ওপর। কতো কতো প্রিয় জিনিস যে ফেলতে ফেলতে গেলাম! কতোজন যে আমার হাতছাড়া হয়ে গেলো! কতোজন যে আমার হাতটি ছেড়ে দিলো! কিন্তু একজনের সঙ্গে সম্পর্কটা আমার ছিন্ন হলো না। তিনি হুমায়ূন আহমেদ।
মৃতরা কী চায়? অদ্ভূত প্রশ্ন, কারণ জীবিতরা কী চায় এই প্রশ্নেরই উত্তর মিলে না। আর প্রশ্নটাও ঠিক অর্থপূর্ণও না। কত লোকে কত কিছু চায়। তার কী একটা উত্তর আছে? নাই। কিন্তু মৃতরা কী চায়, এমন প্রশ্নের পৃথিবীর সকল সংস্কৃতিতেই আবার একটা উত্তর পাওয়া যায়।
মৃতরা, কথিত আছে, চায় শান্তি। কিন্তু শান্তি জিনিসটাতো দৃশ্যমান না। মাপা কিংবা গোনাও যায় না। সুরতাং, বিবিধ সমাজের নিয়মনীতির দ্বারস্থ হলে জানা যাবে, মৃতরা চায় তাদের যথার্থ সৎকার হোক। নানা সমাজে নানা কালে সৎকারের বিচিত্র রীতি আছে। কিন্তু অন্তিমযাত্রা শান্তিপূর্ণ করবার দায়-দায়িত্ব মৃতর নিজস্ব সমাজের উপরই বর্তায়। প্রায় সমাজেই সাধারণত এটা সামাজিক দায়, কিন্তু আবার সমাজের সকল ব্যক্তির দায়িত্ব না। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য সংখ্যার লোক পালন করলেই চলে। 'ফর্জে-কিফায়া' বলে মুসলমানদের ব্যাকরণে।
সিলেটে আমরা যে বাসায় থাকতাম, তার বারান্দায় টবে একটা বেলি গাছ ছিলো। সেই বাসা ছেড়ে আমরা যখন চলে আসি, আমরা পেছনে ফেলে আসি চারপাশের সুপারি গাছে সারি, বারান্দার আকাশ দখল করে রাখা কৃষ্ণচূড়া, রান্নাঘরের উল্টোদিকের পেয়ারা গাছ, স-মিলের জন্যে আনা কাঁচা কাঠের ঘ্রাণ, আমাদের তেরো বছরের জীবন, শুধু বোকার মতো সঙ্গে করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম টববন্দী গাছগুলোকে। আমরা জানতাম না, ট্রাকে করে ফুলের টব দূরের শহরে আন
[justify]ঊনি ছিলেন অথবা ছিলেন না। কোন এক শৈশবে অথবা নির্জন কৈশোরে হাহাকার বিষণ্ণ পথটায় উনার প্রহচ্ছন্ন ছায়া পড়েছিল, সেই থেকে উনাকে চিনি। এ চেনা দীর্ঘ, পর্যায়যুক্ত, শূন্যতা কখনো মুগ্ধতার। উনি হয়তো আমাকে গভীর জীবনবোধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ভিতর ভেঙে চুড়ে দেন নি মাহমুদুল হকের মতো, হয়তো দীর্ঘ অথচ দৃঢ় গাঁথুনির মায়াজালে আচ্ছন্ন করেন নি ইলিয়াসের মতো এমনকি হয়তো ভাষার কারুকার্যে মোহিত করেন নি শওকত ওসমানের ম
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ,
আপনাকে নিয়ে এরকম ভাবে লিখতে হবে কখনো ভাবিনি। মৃত্যু তো খুবই একটা স্বভাবিক ব্যাপার, এমনি করে সবাই যাবে। তবুও কেউ চলে যাবে একদিন জেনেও আমরা প্রস্তুত থাকি না। অথবা আমরা এটা সচেতন ভাবে ভাবতে চাই না। তাই খুব অপ্রস্তুত অবস্থায় আপনাকে স্মরন করা যাদুকর।