[সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ একটি বই পড়ার পর আমার কাছে যা মনে হয় পাঠ প্রতিক্রিয়ায় আমি তা অকপটে লেখার চেষ্টা করি। বইয়ের বেচাবিক্রির কথা বিবেচনা করে বা অতিসংবেদনশীল পাঠকের অনুভূতি বিচার করে ‘বাকিটুকু রূপালী পর্দায় দেখুন’ ধাঁচের প্রতিক্রিয়া লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়; অমন কিছু লেখার ইচ্ছাও নেই। সুতরাং যারা স্পয়লারের ভয়ে রিভিউ পড়তে আগ্রহী নন্ তাদের পক্ষে এই পোস্টে না ঢোকাই শ্রেয়।]
মদ্র দেশের নিঃসন্তান রাজা-রানী, অশ্বপতি এবং মালবী সন্তানের আশায় সূর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সাবিত্রীর নামে পুজো দিয়ে এক কন্যা সন্তান লাভ করেন। দেবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে মেয়ের নামকরণ হয় 'সাবিত্রী'। কালক্রমে সেই মেয়ে নিজের সতীত্বের বিশাল ব্যাপক নজির রাখেন। যেকারণে হিন্দু পুরাণে তিনি 'সতী সাবিত্রী' হিসেবে খ্যাত। হাসান আজিজুল হকের দ্বিতীয় উপন্যাস "সাবিত্রী উপাখ্যান" এর কেন্দ্রিয় চরিত্র সাবিত্রী'র নামকরণ সেই দেবী কিংবা রাজকন্যার নামানুসারে হয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে সূর্যের আলো কিংবা তথাকথিত সতীত্বের অহংকারের ঠিক বিপরীতে চরিত্রটির নির্জীব অবস্হান। এই অবস্হান নিয়তি নির্ধারিত ছিল না। কিছু পশুর অধম মানুষ আর বিকলাঙ্গ সমাজ সাবিত্রীর পরিণতির জন্য দায়ী। যে কারণে, পরবর্তীতে আলোহীনতার মাঝে সাবিত্রীর স্বস্তি খুঁজে ফেরা। বিকারগ্রস্হ হয়ে মৃতপ্রায় একটা কিশোরী জীবন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া মর্মান্তিক বার্ধ্যকের দিকে(পঁচাশি বছর বেঁচে ছিলেন সাবিত্রী)।
মণীন্দ্র গুপ্ত, 'অক্ষয় মালবেরি' নামে যে জীবনী গ্রন্থটি লিখেছিলেন তাকে সচরাচর লিখিত জীবনী গ্রন্থের নিয়মিত ছাঁচে ফেলার উপায় তিনি রাখেন নি। এই আকরগ্রন্থটি আক্ষরিকই আকর। ম্যাজিকের তুকতাকের মতো বিশেষ কিছু। এর গাম্ভীর্যে, এর অঙ্গসৌষ্ঠবে কোনো ভারিক্কি ভাব নেই রয়েছে পীতচন্দনের মতো শোভা, যেটি বড়োই মনোহর।
প্রিয় সচল, অতিথি লেখক, ও পাঠকবৃন্দ,
চিঙ্গিজ আইৎমাতভের "পাহাড় ও স্তেপের আখ্যান" প্রথম যখন পড়ি, তখন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তাম। এই বইয়ের দ্বিতীয় গল্পটি ছিল "প্রথম শিক্ষক"। জানি না সেই বয়সে কতটা বুঝতে পেরেছিলাম কাহিনি, কিন্তু মুগ্ধ, আবিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম কির্গিজিয়ার পাহাড়ী গাঁয়ের সেই আশ্চর্য গল্পটি পড়ে। গল্পের সেই মেয়েটি, আলতিনাই, তার সঙ্গে যেন পা মিলিয়ে দৌড়ে চলেছিলাম চড়াই উৎরাই। পাঠিকা হিসেবে আমার যা বয়স তখন, গল্পের আলতিনাইয়ের বয়সও তা
লেখক -
চিঙ্গিস আইতমাতভ
বরং বলি, চিঙ্গিস টোরেকুলোভিচ আইতমাতভ, টোরেকুলপুত্র চিঙ্গিস আইতমাতভ।
স্তালিন জমানায় দেশের শত্রুদের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় খুনীবাহিনী এন কে ভি ডি-র হাতে নিহত সোভিয়েত কর্মী টোরেকুল আইতমাতভের ছেলে চিঙ্গিস আইতমাতভ - যিনি বাবাকে কখনো ভোলেননি।
‘যন্ত্র-বিশারদ’ আইতমাত কিম্বিলদিয়েভ এর ছেলে সমাজতন্ত্রী টোরেকুল -এর ছেলে যাঁর পাহাড় ও স্তেপ-এর আখ্যান নামে গল্প-ত্রয় পেয়েছিল লেনিন পুরস্কার- সেই চিঙ্গিস আইতমাতভ।
চিঙ্গিস আইৎমাতভের আলোড়ন তোলা সাহিত্যকর্ম হিসেবে যে নাম পাঠক মনে ভালোবাসায় জেগে থাকে, নিঃসন্দেহে সেটি 'জামিলা’। আইৎমাতভের সুবিখ্যাত এ সৃষ্টির প্রথম প্রকাশ ঘটে রাশান ভাষার মাসিক পত্রিকা 'Novyj Mir' এর ৮ম সংখ্যায়। প্রকাশের সাল ১৯৫৮। ওই একই বছরে কিরগিজ ভাষী পত্রিকা 'Ala-Too' এর দশম সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়, তবে ভিন্ন নামে। কিরগিজ পত্রিকা 'আলা টু’ তে নভেলাটি 'মেলোডি(Melody)' নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৯ সালে ‘জামিলা’ রুশ-কিরগিজ দু'ভাষাতে মলাটবন্দী হয়ে পাঠকের হাতে ধরা দেয়। ফরাসি সাহিত্যিক লুই আহাগঅঁ(Louis Aragon) 'জামিলা' পাঠে দারুণ মুগ্ধ হয়ে ১৯৫৯ সালেই বইটি ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করেন। লুই আহাগঅঁ মতে, ‘জামিলা ''বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রেমের গল্প"।
দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা, আরোপিত দুর্ভিক্ষ, আজাদ হিন্দ ফৌজ, সুভাষ বসুর অন্তর্ধান, ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে প্রচুর বইপত্র লেখালেখি হয়েছে উপমহাদেশে। তা সত্ত্বেও নতুন নতুন বাস্তবতার আবিষ্কারে চমকিত হয় পাঠক। সুলেখক শাহীন আখতারের 'অসুখী দিন' পড়ে তেমন এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হলো। দেশভাগের প্রাক্কালে শিলং অঞ্চলে বাঙালী খাসিয়ার দ্বন্দ্বটি আঞ্চলিক বৈরী সম্পর্কের বিষয়টি অনেকেরই অজানা।
সবার শৈশবের ইনিংসটা দুধেভাতের সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয় না। আমরা অনেকেই দূরে চলে যাওয়া শৈশবকে আহ্লাদে ভেসে গিয়ে কাছে ডাকতে চাই। অনেকেই হয়ত তাদের শৈশবের বুকে বেশ করে ইরেজার ঘষে লোপাট করে দেয়া যেতো যদি, এমন আক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস চাপেন। আমাদের ভাবনায় যে শৈশব আছে মলিনতাহীন, নিটোল এক সুন্দরের সরোবর হয়ে; অনেকের কাছে সেটা কেবলি সীমাহীন দুঃখের। সৌভাগ্যবশত আমরা যারা দারুণ শৈশবকে মুঠোবন্দী করতে সক্ষম হয়েছি, তারা ফেলে আসা চিররঙিন দিনগুলোর প্রতি সবটুকু ভালোবাসা মেখে বলতে চাই 'ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।' অন্যদিকে কষ্টময় শৈশবের মানুষটি তখন বয়ান করেন তার তিক্ত জন্ম ইতিহাস, 'একহাতে ফুলের গন্ধ, আরেক হাতে নরকের দুর্গন্ধ মেখে আমার জন্ম।'